Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এক মুঠো প্রেম রঙ্গনাএক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-৩৪

এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-৩৪

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
[২য় পরিচ্ছেদ ]

৩৪.
–“শুনলাম সারিফার সাথে যেই মেয়েটা ছিলো সে নাকি পালিয়েছে? তুই কী কিছু জানিস?”

মায়ের এরূপ উক্তিতে ইরা’দ ক্ষণিকের জন্যে আনমনে হয়ে গেলো। অতঃপর ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
–“আমার কানে তো এসব আসেনি। তোমাকে এসব আবোল-তাবোল বললো কে শুনি?”

মৌসুমি মুখশ্রী গম্ভীর করলেন। ছেলেকে পর্যবেক্ষণ করে থমথমে সুরে বললেন,
–“আবোল-তাবোল বলছি? তুই জানিস ভেতরের খবর? মেয়েটাকে তো তোর নানুর মোটেই পছন্দ না। আমারও কেমন যেন লাগে। আর…”
মৌসুমির কথায় ব্যঘাত ঘটিয়ে ইরা’দ বলে ওঠে,
–“অন্যের মেয়েকে নিয়ে এত চিন্তা করে লাভ কী মা? ছেলের বউ তো বানাবা না। তাই চুপ করে নিজের কাজে যাও। আমার কানের সামনে ওকে নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করিও না!”

মৌসুমি তেঁতে ওঠলেন ছেলের এরূপ পতিক্রিয়ায়। ক্ষিপ্ত স্বরে বলে ওঠে,
–“বউয়ের কথা মাথাতেও আনিস নে। আমি তোর বড়ো ঘরে বিয়ে দিবো। অনেক ভালো আর সুন্দরী বউ এনে দিবো তোকে। দেখবি সে আমার ঘর আলো করে রাখবে। ভালো কথা…”

ইরা’দ এবার বিরক্তিতে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের করলো। মৌসুমি ইরা’দকে তোয়াক্কা না করে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
–“গতকাল একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে। মেয়ে নাকি অনেক ভালো ঘরের। দেখতেও চাঁদ সুন্দরী। কাল দেখতে যাবো! তুই আমার সাথে যাবি ব্যাস!”

বলেই ইরা’দকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মৌসুমি গুণগুণিয়ে গান গাইতে গাইতে ভেতরে চলে গেলো। ইরা’দ মায়ের যাওয়ার পানে চেয়ে হেসে বললো,
–“তোমার ছেলে তো বিয়ে করেই ফেলেছে মা। আর কত বিয়ে দিবে।”
———————
–“ফটকি বেগম তুমি কই?”

লতিফা থতমত খেয়ে ড্রইংরুমের দিকে তাকালো। মন বললো নিদ্র তাকেই যেন এই নামে ডাকলো। হাতে পেঁয়াজ এবং ছুঁ! রি। গোল গোল চোখে নিদ্রের অবস্থান বুঝতে পেরে ভাবলো মনের ভুল। আবার কাজে মনোযোগ দিতে গেলে নিদ্র রান্নাঘরে চলে আসলো। দেয়ালের সাথে দেহ হেলিয়ে সুঁচ নজরে লতিফার দিকে চেয়ে বললো,
–“ফটকি বেগম, আমার ডাক কী শুনতে পাওনি?”

পিচ্চি ছেলের মুখে এমন ব্যক্ত শুনে লতিফা ঘাড় কাত করে চাইলো নিদ্র’র দিকে। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
–“বি!য়াদ!ব! বড়োগো এমনে নাম ধইরা ডাকে? সম্মানবোধ নাই?”
–“তুমি নৌরি ফুলের সামনে কোন রেকর্ড ছড়িয়েছো সত্যি করে বলো!”

লতিফা অপ্রস্তুত হয়ে ঢোঁক গিললো। আমতা আমতা করে বললো,
–“মা..মানে?”
–“মানে বুঝো না? কচি খুঁকি নাকি?”
–“এমনে কিছু কইলে আমি আপার কাছে বিচার দিমু!”
–“দাও। আমিও বলবো তুমি নৌরি ফুলের নামে কী কী বলে বেরিয়েছো!”
–“এখান দিকে ভাগ! আসছে কামে ফোড়ন কাটতে!”

নিদ্র নাক ফুলিয়ে চেয়ে রইলো লতিফার দিকে। পরে কী মনে করে নিদ্র চলে গেলো। নিদ্রকে চলে যেতে দেখে লতিফা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বিড়বিড়িয়ে বললো,
–“ভাগ্যিস চইলা গেছে।”

লতিফা পেঁয়াজ কে!টে গেলো ময়দার বড়ো ডিব্বাটা কেবিনেট থেকে নিতে। দুর্ভাগ্যবশত সেই ময়দার মুখটা খোলা ছিলো। এটা নিদ্র খেয়াল করেছে এবং এখনো করছে। ফ্রিজের পেছনে লুকিয়ে লতিফার কার্য নজরে রাখছে সে। কোলে আছে ফ্রিশা। সেও চোখ বড়ো বড়ো করে সবটা লক্ষ্য করছে। লতিফার দিকে তাকিয়ে নিদ্র ফ্রিশাকে কোল থেকে নিচে নামিয়ে দিয়ে বললো,
–“ফ্রিশা যা। লতিফার শাড়ির কুচিতে গিয়ে লুকোচুরি খেলে আয়। খেলতে পারলে তোকে আমার ভাগের চকলেট দিয়ে দিবো। যাহ!”

ফ্রিশা তাই করলো। লতিফার পা ঘেঁষে বেড়ালো। লতিফা অত্যাধিক সুঁড়সুঁড়ি পেলে টাল সামলাতে না পেরে ময়দার পুরোটা লতিফার মাথা বরাবর পরলো। যার ফলে লতিফা শুভ্র ভূতে পরিণত হলো। বেসিনে ভাতের পাতিলে কল থেকে পানি পরছিলো। ভেতরে চাল। এরূপ ঘটনায় লতিফা চিৎকার দিয়ে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করতেই সেই পাতিলে হাত লেগে বিকট শব্দে মেঝেতে পরে গেলো। ফ্রিশা আগেই পালিয়েছে সাথে নিদ্রও। হাসিটা খুব কষ্টে চেপে পালিয়েছে। নয়তো কেলেঙ্কারি বেঁধে যেত। রান্নাঘরে ঘনঘন এটা ওটা পরার শব্দে একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেলো। লতিফা আর্তনাদ করে উঠলো।

———
–“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন?”
–“ওয়া আলাইকুম আসসালাম। হ্যাঁ ভালো। কিন্তু তুমি কে?”
–“তা আপনি চিনবেন না আন্টি। আমি আসলে…”

নিখিল ইরা’দের দিকে তাকালো। ইরা’দ নিখিলের গাল টেনে আশ্বাস দেয়।
–“হ্যাঁ, বলো..”
–“আমি আসলে পুঞ্জির বয়ফ্রেন্ড!”
মৌসুমি যেন আকাশ থেকে পরলেন! অবাক হয়ে বললো,
–“সে কী! তুমি আমাকে কল করেছো কেন?”
–“সাবধান করতে।”
–“সাবধান?”
–“হ্যাঁ আন্টি। পুঞ্জি আর আমি একে অপরকে খুব ভালোবাসি। আপনি প্লিজ তাকে পছন্দ করবেন না।”

মৌসুমি অবাক হয়ে গেলো। পরমুহূর্তে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
–“মজা নিচ্ছো আমার সাথে? কে তুমি? সত্যি করে বলো, কে তুমি? পুঞ্জি মোটেও এমন মেয়ে নয়!”
–“কী যে বলেন না আন্টি। আমি মজাও নিচ্ছি না, মিথ্যেও বলছি না। কতগুলো বছর ধরে একসাথে আছি। পুঞ্জির নিঃশ্বাসের সাথে আমার নিঃশ্বাস মিশে গেলো। কী করে ভুল বলবো বলেন!”

বলেই করুণ নজরে তাকালো নিখিল। ইরা’দের তখন দূরে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরার মতোন অবস্থা। নিখিলের বলা শেষোক্ত বাক্যে মৌসুমি যেন হুমড়ি খেয়ে পরলেন। অবাক সুরে বললেন,
–“মানে?”
–“আপনি এত বড়ো, কী করে আপনাকে খুলে বলবো। শুধু বলবো আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। ঘনিষ্ঠ বুঝেছেন? বড়োলোকের মেয়ে তো। এসব ওদের জন্যে কমন। বুঝলেন আন্টি। এখন আপনি কী চাইছেন আপনার ছেলের বউ আমার পুঞ্জিকে করতে?”
–“তুমি মিথ্যে বলছো!”
–“আপনাকে মিথ্যে বলে আমার লাভ কী?”

মৌসুমি চুপসে রইলো। নিজের জেদ অনুযায়ী আজ-ই সে পুঞ্জি নামের মেয়েটিকে দেখে এসেছেন। মেয়েটি খুব সুন্দরী এবং অভিজাত্য পরিবারের মেয়ে। ছেলে যায়নি দেখে জেদ ধরে একাই চলে গেলেন। পছন্দও করলেন মেয়েকে। সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলেন যে পুঞ্জি-ই হবে তাঁর ছেলের বউ। তাইতো বিকালে ছেলেকে বললেন বেশ কয়েক কেজি মিষ্টি আনতে। কিন্তু রাতে এই ধরণের বক্তব্যে মৌসুমির প্রেসার হাই হওয়ার পথে। সে খট করে কল কেটে দিয়ে কপালে হাত দিয়ে বসে রইলো। অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“মাবুদ, মাফ করো!”

কল কাটতেই ইরা’দের হাসির শব্দ বেড়ে গেলো। নিখিল ধাম করে ইরা’দের পিঠে কিল বসিয়ে বলে ওঠে,
–“শা!*** দুনিয়ার আইডিয়া থাকতে কমন আইডিয়া দিয়ে আমায় ফাঁসিয়ে দিলি! তোরে তো ইচ্ছা করছে এখানেই আ!ছা!ড় মা!রতে। ইয়াক! জীবনেও যা করিনি তা নিয়ে মিথ্যা বলতে হচ্ছে। এই, হাসি থামা! থামা বলছি। চুপ!”

নিখিল এত ধমকানোর পরেও ইরা’দের হাসি থামছে না। হাসি বজায় রেখে বললো,
–“বিষয়টা কমন হলেও আমার মায়ের জন্যে সেরা ডোজ। আমার মা আবার এসবে ভালো করেই পটে। এখন বাসায় যাই! মায়ের রিয়েকশন তো দেখতে হবে!”

ইরা’দ যেতে নিলো নিখিল পিছু ডাক দিলো। ইরা’দকে থামালে ইরা’দ পিছু ফিরে বলে,
–“বন্ধুদের থ্যাংকস দিলে কঠিন ব্যাধি হয়! তোর এদিকে কী? যা বাড়ি। মাসি মা ওয়েট করছে!”

বলেই হাসতে হাসতে ইরা’দ চলে গেলো। নিখিল চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
–“এত কষ্ট করলাম আর তুই আমারে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাগছিস? উপরওয়ালা বিচার করবে ইরা’দ। শা** অকৃতজ্ঞ মা****!”

®লাবিবা ওয়াহিদ
———————
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
[২য় পরিচ্ছেদ]

৩৪.[বর্ধিতাংশ]
–“কী হলো মা? কপালে হাত দিয়ে বসে আছো কেন? আমি তো ভাবলাম বিয়েই শানাই বাজছে তোমার কন্ঠে।”

বিদ্রুপ করতে করতে-ই ইরা’দ জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালছে। হাসি আড়াল করে গ্লাসের দিকেই চেয়ে আছে ইরা’দ। তাঁর ভাবার চেয়েও মায়ের ভঙ্গি বেশি হাস্যকর। কেমন শান্তি, শান্তিও অনুভব হচ্ছে তাঁর। যাক, এবারের যাত্রায় বিয়ের ঘ্যানঘ্যান থেকে নিস্তার পেলো সে। মৌসুমি কপাল চাপড়িয়ে বলে,
–“কিসের বিয়ে!? বিয়ে ক্যান্সেল! এমন চরিত্রহীনা মেয়ের সাথে আমি তোর বিয়ে দিব না!”

ইরা’দ অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বলে,
–“মানে?”
–“মানে পুঞ্জি বাদ। মেয়েটা আমার ভাবনার উল্টোটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখ না, এখনই মেয়েটার ওই প্রেমিক ফোন করেছে। কিসব বলেছে ছিঃ! থুঁ থুঁ ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।”

ইরা’দ ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
–“আরও যাও সুন্দরী মেয়ে খুঁজতে। তুমি খুঁজলে তো এমনই হবে!”
ফুঁসে উঠলেন মৌসুমি। ক্ষিপ্ত স্বরে বলে ওঠে,
–“কী বলতে চাইছিস তুই? আমি অন্ধ? মেয়ে চেনার ক্ষমতা আমার নেই?”
–“তোমার ক্ষমতা তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি না। আ’ম সো প্রাউড অফ ইয়্যু!”
মৌসুমি চুপসে গেলেন। ছেলের সামনে এভাবে সম্মানহানি হবেন বুঝতে তা মৌসুমি পারেননি। তাই নীরব থাকাকেই তিনি শ্রেয় মনে করলেন। ক্ষণিক সময় পর ইরা’দ আবার বলে ওঠে,
–“এসব বাদ দাও মা। ভালো বউ যেহেতু চাও, সেহেতু আরেকটু ধৈর্য ধরো। সঠিক সময় আসলে আল্লাহ্ ভালোটাই মিলিয়ে দিবেন। তোমার এত গলিতে গলিতে মেয়ে খুঁজতে হবে না। আপাতত নিজেও শান্তিতে থাকো, আমাকেও থাকতে দাও। ফর গড সেক!”

ইরা’দ নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। মৌসুমির কপালের হাত ততক্ষণে গালে গিয়ে ঠেকেছে।

——————
চলন্ত গাড়িতে ইরা’দ আনমনে জুম করে নওরির ছবি দেখতে ব্যস্ত। মুখ-ভঙ্গি তাঁর ভীষণ গম্ভীর। তাঁর পাশেই নওরি বসে আছে নাক লাল করে। তাঁর নাক লাল কষ্টে হয়েছে নাকি রাগে, তা বড়োই চিন্তার বিষয়। নওরি ইরা’দের কান্ড দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অভিমানের সাথে বিড়বিড়ায়,
–“আস্ত মানুষটা পাশে থাকা সত্ত্বেও সে ফোনে ছবি দেখতে ব্যস্ত। ঢং যেন বেয়ে বেয়ে পরে!”
ইরা’দ পাশ ফিরে তাকালো। হঠাৎ নওরির গাল টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,
–“এতই যখন আমার চিন্তা তাহলে ওই ছেলের সাথে কথা বলতে গেছিলে কেন? বলতে পারলে না তুমি বিবাহিতা? মুখে বলতে না পারলে নাকের নথ কেন দেখালে না?”

নওরি ইরা’দের থেকে নিজের গাল ছাড়িয়ে, গালে হাত বুলাতে বুলাতে ভাঙা স্বরে বলে,
–“নথ তো আমার নিকাবের নিচে ছিলো। এখন আপনার জন্যে কী নিকাব উঠিয়ে দেখাবো, যে দেখেন আমার নাকে নথ, মানে হচ্ছে আমি বিবাহিতা? এ-ই চাইছিলেন আপনি? এসব অদ্ভুত ভাবনা আসে কোথা থেকে আপনার?”
ইরা’দ সরু চোখে নওরির দিকে পর্যবেক্ষণ করে হাতের ফোন রেখে দিলো। অতঃপর নওরির মুখের নিকাব টেনে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে,
–“খবরদার এই মুখখানা আমি ব্যতীত কাউকে দেখিয়েছো তো! এটা আমার তৃষ্ণা মেটানোর, প্রাণ হারানোর সম্পদ। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আমার-ই!”

নওরি ইরা’দকে উপেক্ষা করে অন্যদিকে ফিরে গেলো। সে কী দেখিয়েছে নাকি ছেলেটাকে নিজের মুখ? সে তো সেধেও ছেলেটার সাথে কথা বলতে যায়নি। ডাক দিয়েছে কিছু নোট’স নেওয়ার জন্যে। এখন নোট’স দিতে গিয়ে টুকটাক কথা হয়েছে এতেই এত হাইপার? পড়ার কথা ছাড়া তো আর কোনো কথাই হয়নি।

বড্ড অভিমান হয়েছে আজ মানুষটার উপর। এখন অভিমান না দেখালে চলে? একজন-ই যে প্রিয় মানুষ নওরির। তাকে ব্যতীত আর কাকে অভিমান দেখাবে শুনি? কিছু সময় অতিবাহিত হলো। কারো মুখে কোনো টু-শব্দও নেই। হঠাৎ ইরা’দ নওরিকে টেনে নিজের বুকে আগলে নিলো। আকস্মিক ইরা’দ কাছে টানায় নওরির ভেতরে শিহরণের স্রোত খেলে গেলো। শিরশির করে উঠলো সর্বাঙ্গ। পরমুহূর্তে ইরা’দের বুকে নিজের ঠাই পেয়ে নওরির আবেশে চোখ বুজে এলো। ইরা’দ ফিচেল হাসি দিয়ে বলে,
–“আচ্ছা, ওকে। আর বকবো না। এখন থেকে ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে, ঠিক আছে? বউদের এত অভিমান করতে নেই। শুনেছি বউ’রা অভিমান করলে চুলোয় হাড়ি উঠে না। তুমি আবার ওদের মতো ধানিলংকা রূপ নিও না নৌরি পাখি। স্বামীদের অভুক্ত রাখতে নেই।”

নওরির এবার অভিমান হলো না। বরং ইরা’দের বক্তব্যে চাপা স্বরে হেসে উঠলো। হাসি চাপা হলেও বেশ প্রাণখোলা। বউকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখে ইরা’দের অধরেও তৃপ্তির হাসি ফুটলো।

————-
নিদ্র এবং ফ্রিশা অপরাধীর মতো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্র’র নজর মাটিতে হলেও ফ্রিশা মাথা উঁচু করে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে। তাদের সামনেই নূরজাহান ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে বসে আছে। লতিফা পাশেই দাঁড়িয়ে ন্যাকা কান্না করে নূরজাহানের কান ভারী করতে ব্যস্ত। এখনো সে বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। নিদ্র ফ্রিশার ভাব দেখে মিনমিন করে আওড়ালো,
–“আমার আজ ফ্রিশার মতো বিড়াল হচ্ছে ইচ্ছে করছে। ওয় তো শা!স্তি পাবে না, বরং ডাবল শা!স্তি আমি-ই পাবো! পালাতে পারতাম, ধ্যাত!”

নূরজাহান সব শুনতেই তাঁর চোখ দিয়ে আ!গুন বের হওয়ার উপক্রম। কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে,
–“নিদ্র! কান ধর এক্ষুণি!”

নিদ্র মায়ের বাধ্য ছেলের মতো কান ধরলো। নূরজাহান দ্রুত ভেতরের রুম থেকে বিছানার শলা নিয়ে আসলো। নিদ্র’র দিকে সেটা তাক করে হু!ংকার ছেড়ে বললো,
–“এসব কী? তোকে বাসায় রেখে গিয়েছি কী এসব করতে? ফাজিল ছেলে! কেন করেছিস এসব? দিনকে দিন বাঁদড় হচ্ছিস শুধু তাই না? আজ তোর বাঁদরামি ছুটাবো!”

নিদ্র কান ধরেই বলে ওঠে,
–“ফটকি বেগম আ…”
–“চুপ! সম্মান দিয়ে ডাক!”
নিদ্র জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে বলে,
–“লতিফা খালা বাজে কথা ছড়িয়েছে নওরি ফুলের নামে আম্মু।”
মুহূর্তের জন্যে থমকে গেলেন নূরজাহান। বলা বাহুল্য, এক প্রকার তব্দা খেলেন। একপলক লতিফার দিকে তাকালেন। লতিফা তখন ঘাবড়ে গুটিশুটি মে!রে দাঁড়িয়ে। নূরজাহান তাকালে লতিফা অপ্রস্তুত হয়। আমতা আমতা করে বলে,
–“মিছা কথা আপা। আমি কেন বলতে যামু?”
এবার নিদ্র তীব্র প্রতিবাদ জানালো। কান ছেড়ে উঁচু গলায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলে,
–“আমি মিথ্যা বলি না। তুমি মাজেদা নানুকে আর উপরতলার প্রথম ফ্ল্যাটের আন্টিকে বলেছো আমার নৌরি ফুল ছেলেদের সাথে পালিয়েছে।”

এবার চরম বিপাকে পরলো লতিফা। ক্ষণে ক্ষণে শুকনো ঢোঁক গিলছে সে। ইরা’দ এবং নওরি দুজনই মাত্র সদর দরজা দিয়ে ঢুকছিলো। নিদ্র’র প্রতিটি কথাই ওরা শুনেছে। এই কথাটি শুনে নওরির চোখের কোণ ভিঁজে এলো। এজন্যই বুঝি গত দু’দিন ধরে যে-ই তাঁর আশেপাশে পরেছে সেই তাকে কোণা দৃষ্টি দিচ্ছে? নওরি কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। তাঁর পিছু নিলো ফ্রিশা। নওরি এবং ইরা’দকে দেখে লতিফার তো ভয়ে হৃদপিন্ডটা বেরিয়ে আসার উপক্রম। ভয়ে, আশঙ্কায় কখন না জানি স্ট্রোক করে বসে সে।

®লাবিবা ওয়াহিদ
—————————–
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ