Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"একটুখানি ভালোবাসাএকটুখানি ভালোবাসা পর্ব-১২+১৩

একটুখানি ভালোবাসা পর্ব-১২+১৩

#একটুখানি ভালোবাসা
#পর্ব_১২_১৩
#লেখনীতে_মুগ্ধ_ইসলাম_স্পর্শ
‘- ” ভালোবাসি মায়াবতী রাণী ”
সঙ্গে সঙ্গে মাধবীলতা চোখ খুলে তাকায়। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। মুখটা অতিসত্বর আমার বুকে লুকিয়ে ফেলে৷ সাপটে জড়িয়ে ধরলো আমায়।
মাধবীলতা হয়তো কল্পনাও করেনি যে তাকে শাস্তি দেওয়ার নাম করে এরকম ভাবে চমকে দেব।
এভাবেই মাধবীলতা আরো কিছুক্ষণ আমার বুকে মাথা লুকিয়ে রাখল। মাধবীলতা যখন আমার বুকে মাথা রাখে সেই মুহুর্তের অনুভূতিটা নিখুঁতভাবে আমার মনে গেঁথে যায়।
আমি মাধবীলতা’কে আমার বুক থেকে সরিয়ে বললাম,
‘- তোমাকে আমার শুরু থেকেই ভালো লাগতো। এখন সুযোগ যখন পেয়েছি তোমাকে ভালোবাসার তখন সেটাকে মিস করি কীভাবে?
আমার মুখ থেকে তুমি শব্দটা শুনে হয়তো মাধবীলতা অনেকটাই অবাক হয়েছে।
‘- অবাক হওয়ার মতো কিছু হয়নি এখন থেকে তোমাকে তুমি বলে ডাকবো। আর তুমি আমার অনেকটাই ছোট। আমি শুধু মানবতার খাতিরে তোমাকে আপনি বলে ডাকতাম।
মাধবীলতা মাথা নড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।
‘- তোমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার এনেছি।
মাধবীলতা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ব্যাগ থেকে জুয়েলারির বক্স বের করলাম। বক্স টা খুলে একটা নেকলেস বের করে মাধবীলতার গলায় পড়িয়ে দিলাম।
মাধবীলতা হাত নাড়িয়ে বলল,
‘ এসবের কি দরকার ছিল?
আমি মাধবীলতার আরেকটু কাছে গিয়ে বললাম,
‘ দরকার তো ছিলনা! তবে আজ আমি আমার মনের অনুভূতি প্রকাশ করতাম। সেজন্যই ছোট্ট একটা উপহার নিয়ে এসেছি।
মাধবীলতা দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে রাগী দিষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো। তারপর হাত নাড়িয়ে বলতে থাকলো,
‘ এটা আপনার কাছে ছোট মনে হলো। আমি সারাবছরের উপার্জন দিয়েও এমন একটা নেকলেস কিনতে পারবো না।
‘ উফফ বাদ দাও না। এবার একটা কফি নিয়ে এসো না প্লিজ।
মাধবীলতা আর কিছু না বলে মুচকি হেঁসে নিচে চলে যায়। কফি বানাতে বানাতে ভাবছে,
‘ পাগলটার কফিতে কী সত্যিই মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে দেবো? কাজটা কী ঠিক হবে? অফিসে কাজের ফাঁকি দিলে তো যেকোনো স্যার’ই রেগে যায়। আর উনি তো আমাকে বাড়িতে কখনো বকেও না পর্যন্ত। আসলে মানুষটা উপরে দেখতে যতটা রাগী ভিতরে ততটাই কোমল।
এদিকে আমি আকাশ পানে চাইলাম। নিজের মনকে বললাম,
‘ কী আজব দুনিয়া! হুট করে অজানা, অচেনা, অপরিচিত একটা মানুষের সাথে পরিচয় হয়। আবার সেই মানুষটাই নিজের দুর্বলতা হয়। জীবনে কিছু অনুভূতির এভাবেই আবির্ভাব ঘটে। আবার হুট করেই কত পরিচিত মানুষ, চিরচেনা সেই মুখগুলো হঠাৎই অচেনা হয়ে যায়। চেনা মানুষের মুখে নতুন মুখোশ আমাদের একেবারেই ভেঙে দেয়। আসলে সময় তো বদলায়। তাদের আর কী দোষ?
নিজের আপনমনে নিজের সাথে কথা বলছিলাম। মাধবীলতা কফি নিয়ে হাজির।
কফির কাপে চুমুক দিয়ে মাধবীলতাকে ধন্যবাদ দিলাম।
‘ তোমার হাতের কফি অন্যরকম হয়। তুমি যেমন অনন্য! তোমার হাতের রান্নাও তেমনি সুন্দর।
আমি মাধবীলতার কাছে গিয়ে কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলাম। মাধবীলতাকে আরেকটু কাছে এনে আমার ঠোঁট দু’টো তার কপালে ছুঁয়ে দিলাম। মাধবীলতা তার কপালে আমার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে শিউরে ওঠে।
‘ এখন ঘুমোতে চলো।
কেটে যায় দু’টো মাস৷ এই কয়েকদিনে মাধবীলতা আর আমি একে-অপরকে অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছি।
আজ অফিসে গিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য বললাম,
‘- আজ অফিস শেষে সবাই থাকবেন। কিছু কথা রয়েছে আমাদের সাথে। বিকেলবেলা নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে সবার সামনে গেলাম। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে! সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
‘ অফিসের কাজে আমাদের কিছুদিনের জন্য বাইরে যেতে হবে। আর তাছাড়াও আজ অনেক বছর হয়ে গেল আমরা কোথাও ঘুরতে যাই না। তাই ভেবে রেখেছি যে আগামী সপ্তাহে আমরা সবাই ঘুরতে যাব সাথে কাজও হয়ে যাবে। আপনারা সবাই কী বলেন?
আমার প্রস্তাব শুনে সবার সারাদিনের ক্লান্তিতে কাটানো মলিন হয়ে যাওয়া মুখটা হাস্যজ্জল হয়ে ওঠে। সাগর এগিয়ে এসে বলল,
‘ এ’তো অনেক ভালো কথা স্যার। আজ অনেক বছর হয়ে গেল আমরা কোথাও ঘুরতে যাই না। সারাদিন অফিসে কাজ করে বোর হয়ে যাযই আর সারারাত তো বাড়িতেই কাটাতে হয়। মাঝেমধ্যে একটু বাইরে না বেরোলে মন মেজাজ ভালো থাকে না।
সুবর্ণা এগিয়ে এসে বলল,
‘ আমরা এবার কোথায় যাচ্ছি স্যার?
‘ এবার আমরা যাচ্ছি রাঙামাটি। পাহাড়ি অঞ্চল! কাজ শেষ করে আমরা সবাই পাহাড়ে ঘুরবো।
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও একটি সপ্তাহ।
অফিসের গাড়িতেই আমরা সবাই রওনা হলাম রাঙামাটির উদ্দেশ্যে।
আমার গাড়ি আমি নিজেই ড্রাইভ করি৷ আমার পাশের সিটে মাধবীলতা। পিছনে সুবর্ণা আর আরো একটি মেয়ে। আর অন্য গাড়িতে বাকি সবাই।
‘ স্যার আমরা বিয়ের দাওয়াত কবে পাচ্ছি?
সুবর্ণার প্রশ্ন শুনে মাধবীলতার দিকে চাইলাম।
‘ কিসের বিয়ে? আর কার বিয়ের কথা বলছো তুমি?
‘ স্যার একদম না বুঝার ভান করবেন না।
‘ আরে কী আশ্চর্য না বললে বুঝবো কীভাবে বলো তো?
‘- আপনার আর মাধবীলতা আপুর বিয়ের কথা বলছি আমি! আমি নিশ্চয়ই আমার বিয়ের কথা বলছি না।
সুবর্ণার করে জোরেশোরেই হেঁসে দিলাম।
‘ আমরা নিজেরাই জানি না বিয়ে কবে। নানু ভাই যখন বলবে তখন বিয়েটা হবে
তখন অবশ্যই তোমরাও সবাই থাকবে সেখানে। তোমরা সবাই তো আমার পরিবার। তোমাদের ছাড়া আমি একা কী করে কী করি বলো?
এভাবেই গল্প করতে করতে অর্ধেক রাস্তা চলে আসি।
একটা রেস্তোরাঁয় থেমে সবাই খাবার খেয়ে নিলাম। আবারও চলতে শুরু করলাম সবাই। দীর্ঘ সময় জার্নি করে পৌঁছে গেলাম রাঙামাটি। একটা রিসোর্টে তিনটা রুম নিলাম। একটাতে আমি, একটাতে সব মেয়েরা আর একটাতে ছেলেরা।
শরীর ক্লান্ত থাকায় সেদিন ঘুমিয়ে পড়ি সকলে। পরদিন সকালে উঠে সবাই একসাথে নাশতা করতে বেরোলাম। নাশতা খেতে খেতে সবাইকে বললাম,
‘- তোমরা সবাই আশেপাশেই কোথাও ঘুরতে থাকো আমি মিটিং টা শেষ করে আসছি।
খাওয়া শেষ করে আমি আর আবীর গাড়িতে উঠবো মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য। এমন সময় হাতে টান পড়লো। পিছনে তাকিয়ে দেখি মাধবীলতা। আমি মাধবীলতার দিকে ঘুরে বললাম,
‘ কিছু বলবে?
মাধবীলতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।
‘ বলো কী বলতে চাও!
‘ আমিও আপনি সঙ্গে যাব।
‘ আরে ছোট্ট একটা মিটিং। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ করে আসছি। তুমি বরং সবার সাথে ঘোরাঘুরি করো।
চলে এলাম। আসার সময় মাধবীলতার মুখের চাহনি দেখে বুঝলাম পাগলিটা বেশ মন খারাপ করেছে।
ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে রয়েছি। হঠাৎ গাড়ির জানালার পাশে একজন এসে বলল,
‘ তোর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। আজ তুই মাটির উপরে রয়েছিস তো কাল থাকবি মাটির নিচে।
লোকটার এমন আচমকা আগমনের ফলে আমি চমকে উঠি। লোকটার হাতে লম্বা একটা লাঠি, কাঁধে ঝোলানো একটা পুটলি, পড়নে ফকিরের পোশাক। সম্ভবত কোনো দরবেশ হবে।
আমি সিগন্যালের দিকে তাকালাম। জানালার গ্লাস তুলে দিয়ে স্টার্ট করে চলে এলাম।
‘ ভাইয়া লোকটা কী আপনাকে চিনে বা আপনি তাকে চিনেন?
‘ আগে তো কখনো দেখিনি।
‘ তাহলে হঠাৎ এসে এসব কথা বলল কেনো?
‘ আরে আবীর ছাড়ো এসব। এগুলো ভণ্ডামি ছাড়া কিছু না। কাজ পায় না তাই লোক ঠকিয়ে খায়।
মিটিং শেষ করতে প্রায় রাত হয়ে গেলো। এদিকে মাধবীলতা রেগে আগুন হয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য আসার কথা বলে রাত করে ফেললাম। রিসোর্টে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম। মাধবীলতার রাগ ভাঙিয়ে ঘরে এলাম। কিন্তু ঘরের মধ্যে তেমন একটা ভালো লাগছে। তাই ভাবলাম রিসোর্টের সামনের বাগান থেকে ঘুরে আসি। আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে বাগানে এলাম৷ বাগানের এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটি করছি৷ হঠাৎ কোথাও থেকে কারো কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। এতো রাতে এখানে আবার কে কথা বলবে? কৌতূহলী হয়ে আশেপাশে খুঁজতে শুরু করি। হঠাৎ বাগানের এক কোণে নজর পড়লো। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। পিছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে মাধবীলতা। কিন্তু মাধবীলতা তো কথা বলতে পারে না। তাহলে সে কে? কৌতূহল মেটাতে এগিয়ে গেলাম মেয়েটার দিকে। গুটিগুটি পায়ে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
‘ কে আপনি? এতো রাতে এখানে কী করছেন?
পিছন থেকে কারো কণ্ঠস্বর শুনে মেয়েটি পিছন ফিরে তাকায়।
মেয়েটিকে দেখে প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেলাম।
‘ মাধবীলতা তুমি?
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,

#একটুখানি_ভালোবাসা
#পর্ব_১৩
#লেখনীতে_মুগ্ধ_ইসলাম_স্পর্শ
‘ মাধবীলতা তুমি? কার সাথে কথা বলছো তুমি? তুমি নিজের মুখ দিয়ে কথা বলছো?
আমি প্রচণ্ডভাবে অবাক হলাম। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি যে মাধবীলতার মুখ দিয়ে কথা শুনতে পারবো।
সঙ্গে সঙ্গে মাধবীলতা মুঠোফোনটি বন্ধ করে ফেলে।
মাধবীলতা আমাকে দেখে বরফ হয়ে গেল। কিছু মুহূর্তের জন্য মাধবীলতার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিল। মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আমি আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,
‘ তুমি কী কোনোভাবে আমাকে মিথ্যে বলে ঠকাচ্ছ?
মাধবীলতা পুনরায় হাতের ইশারায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
‘ দাঁড়াও। তুমি তো কথা বলতে পারো তাহলে এখন কেনো হাতের ইশারা দিচ্ছ?
মাধবীলতা আবারও ইশারা দিয়ে বলল,
‘- আমি কেনো কথা বলবো? আমি তো ফোনে খবর শুনছিলাম। আসলে দূর থেকে ঠিকমতো শোনা যাচ্ছিল না তাই ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে শুনছিলাম।
যাক মাধবীলতার কথা শুনে স্বস্তি পেলাম।
‘ কিন্তু তুমি এতো রাতে এখানে কী করছো?
‘ ঘরে ভালো লাগছিল না তাই। আর তাছাড়াও ঘরের ভিতর নেটওয়ার্ক পাচ্ছিল না তাই বাইরে চলে আসলাম। আর খবরটাও একটু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটা মেয়ে তার স্বামীকে নিজ হাতে খুন করেছে।
‘ আচ্ছা এখন ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে ঘুরতে যাব পাহাড়ে।
মাধবীলতা একদম কাছে এসে বুকে মাথা পেতে দিল। মাধবীলতা যখন আমার বুকে মাথা রাখে তখন এক অন্যরকম শান্তির অস্তিত্ব মেলে আমার মনে।
‘ আপনি কী আমাকে সন্দেহ করেছেন?
‘ আরে তা নয়। আসলে এতো রাতে বাগানে কারো কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে মনে কৌতূহল জাগে। তাই এগিয়ে গেলাম। কিন্তু তোমাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যাই। একমুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম তুমি কথা বলতে পারো। কিন্তু পরে যখন বললে খবর শুনছিলে আর আমি সেই খবরের উপস্থাপিকার কথা শুনছিলাম তখন ভয়টা কেটে যায়। আর তোমাকে তো আমি অনেক বেশি বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা কোরো না কখনো।
মাধবীলতা আমার হাত দু’টো শক্ত করে ধরে বলে,
‘ কখনো ভাঙবো এই বিশ্বাসের মর্যাদা। এখন যদি আমি একটু ভালোবাসা পাই তাহলে গিয়ে ঘুমোতে সুবিধা হোতো!
বুঝলাম আমার মায়াবতী কী বুঝাতে চাইছে। কিন্তু আমি একটু মজার ছলে বললাম,
‘ ভালো তো আমি তোমাকে প্রতিটি মুহূর্তে বাসি। তা দিয়ে কী হয়না তোমার? এখন আবার নতুন করে কীভাবে ভালোবাসবো শুনি?
আমার বাক্যে মাধবীলতা রাগ হয়। তাই রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ লাগবে না কারো ভালোবাসা। আমি যাচ্ছি।
মাধবীলতা রেগে চলে যাওয়ার জন্য দু’কদম এগোতেই ওকে টান দিয়ে নিজের সামনে নিয়ে এলাম। কপাল থেকে চুল সরিয়ে নিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। মাধবীলতা আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমায়। এবার আমিও মায়াবতীকে শক্ত করে বুকে আগলে নিলাম।
মাধবীলতা যেভাবে বারবার আমার বুকে হামলে পড়ে। তাতে আমার বোধগম্য হয় যে আমার বুক মাধবীলতার কতটা সুখের জায়গা। যদি সম্ভব হতো তাহলে আমার বুক চিঁড়ে ভিতরে ঢুকে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রাখতো নিজেকে সারাটি জীবনের জন্য।
মাধবীলতাকে বুকে জড়িয়ে রাখা অবস্থাতেই বললাম,
‘ এই’যে আমার মায়াবতী! বললাম তো কাল সকালে ঘুরতে যাব। এখন এতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে কাল ঘুম থেকে উঠতে দেরি হবে। তখন আবার আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিতে পারবে যে আমি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাইনি। এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
মাধবীলতা আর কথা না বাড়িয়ে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলো।
আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবারও মাধবীলতার কথা বলার বিষয়’টা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। মাধবীলতা সত্যিই বোধহয় খবর শুনছিল। হয়তো আমারি ভুল হয়েছে শুনতে।
মাধবীলতার সঙ্গে দেখা হয়ে মন’টা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। তাই সোজা ঘুমোতে চলে গেলাম।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ শেষ করে হাঁটতে বের হলাম। আশেপাশেই তাকালেই দেখা যায় সব বড়ো উঁচু পাহাড়ের চূড়া। মন আমার অশান্ত হয়ে ওঠে। বারবার যেন পাখি হয়ে উড়াল দিতে চাইছে সেই উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। যদি পাখি হতাম? তাহলে সারাটা’দিন উড়ে বেড়াতাম। প্রতিটি গাছের সব মিষ্টি ফলের স্বাদে রাঙিয়ে তুলতাম মুখটাকে।
আকাশ’পানে তাকাতেই দেখা মিলল এক মনোরম দৃশ্যের। একঝাঁক পাখি কিচিরমিচির শব্দ করে উড়াল দিয়ে চলে গেলো। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে শরীর’টা প্রতিবার শিউরে ওঠে। এভাবেই অনেকটা সময় ধরে প্রকৃতির সাথে ভালোবাসা বিনিময় করলাম।
রিসোর্টে ফিরে সবাইকে ডেকে দিলাম। নাশতা করে সবাই বের হলাম পাহাড় দেখতে। গাড়ি নিয়ে বের হলাম সবাই। অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হবে তাই গাড়ি নেওয়া।
আমি আপনমনে গাড়ি চালাচ্ছি। আর পিছন থেকে সুবর্ণা একনাগাড়ে কথা বলেই চলেছে৷ মেয়েরা পারেও বটে।
আর থাকা গেলো না। সুবর্ণাকে খোঁচা দিয়ে বললাম,
‘ ইশ বেচারা সুবর্ণার জামাই যে কীভাবে জীবন’টা কাটাবে? বড়ো আফসোস হচ্ছে তার কথা ভেবে?
সঙ্গে সঙ্গে সুবর্ণার টনক নড়ে উঠলো।
‘ কেনো, কেনো? আমার জামাই কেনো আফসোস করতে যাবে স্যার? আর আমার তো এখনো বিয়েই হয়নি? তাহলে জামাই কীভাবে আফসোস করবে?
‘ কেনো আবার! আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। তুমি তোমার জামাইয়ের মাথা চিবিয়ে খাবে। এতো কথা বললে কী বেচারার মাথা ঠিক থাকবে?
‘ স্যার আপনি আমার কথা বলা নিয়ে খোঁটা দিলেন 😥? আমি আর কথাই বলব না হু।
‘ আপাতত তোমাকে আর আমার সাথে কথা বলতে হবে না। এসে গেছি। বাকি কথা নাহয় বাকি লোকদের সাথে বলবে। এখন সবাই নামো।
গাড়ি পার্ক করে সবাই পাহাড়ের উপরে উঠতে শুরু করি।
মাধবীলতা আমাকে শক্ত করে ধরে হাঁটছে।
ফিসফিস করে বললাম,
‘ কী ম্যাডাম এখনি এভাবে আমার সঙ্গে আঠার মতো চিপকে থাকলে হবে? সবাই কী ভাববে বলো তো? নাকি পা’য়ে শক্তি নেই হাঁটবার মতো?
‘ আমার বরের হাত ধরে আমি হাঁটবো। কে কী ভাবছে তাতে আমার কী হুহ? আর কে বলেছে আমার পা’য়ে শক্তি নেই হাঁটবার মতো? আমি তো আপনাকে সাপোর্ট করছি। যদি পা পিছলে যায় আপনার।
বুঝো কাণ্ড। আমার উপর ভর দিয়ে সে উপরে উঠছে আর আমাকেই বলছে কি’না আমাকে নাকি সে সাপোর্ট দিচ্ছে।
আস্তে আস্তে উঁচুতে উঠে পড়লাম।
সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
‘ তোমরা এদিকে ঘুরো আমরা ওদিকে ঘুরে আসি।
সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে ‘ ঠিক আছে স্যার!
আমি আর মাধবীলতা সবার থেকে আলাদা হয়ে গেলাম।
হাঁটার সময় মাধবীলতা আমাকে থামিয়ে দিয়ে ইশারা করল,
‘ আচ্ছা আপনি তো বলেছিলেন কোনো একদিন আমার আপনার মা বাবার গল্প’টা ভাগাভাগি করবেন। আজ কী সেই গল্প শুনতে পারি?
মাধবীলতার মুখের দিকে চাইলাম।
‘ শুনবে?
মাধবীলতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
‘ আচ্ছা বলব। তবে এখন না। ঘুরতে এসেছি। আপাতত ঘোরাঘুরিতে মনোনিবেশ করি। ফেরার পথে নাহয় বলব।
মাধবীলতা সম্মতি দিলো। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।
‘ মায়াবতী দেখো কত সুন্দর একটা ফলের গাছ। এরকম ফল তো আগে কখনো দেখিনি। তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি দু’টো ফল পেড়ে নিয়ে আসছি।
মাধবীলতাকে রেখে আমি দু’টো ফল পেড়ে নিলাম। পিছন ফিরে দেখি মাধবীলতা নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম মাধবীলতা পাহাড়ের একদম শেষ প্রান্তে গিয়ে দু’হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই মাধবীলতা সোজা নিচে পড়ে যাবে। আমি সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে মাধবীলতাকে সরিয়ে নিয়ে এলাম৷
‘ পাগল হয়ে গেছো তুমি? এতটা কর্নারে কেউ আসে। যদি নিচে পড়ে যেতে তাহলে কী হতো? খুব সাহস বেড়েছে তাই না? একবার বাড়ি চলো তারপর তোমার সাহস আমি বের করছি।
আজ আর আমার বকা শুনে মাধবীলতার মুখে ভয়ের ছাপ লেপ্টে নেই। ঠোঁটের কার্নিশে মুচকি হাসির প্রলেপ ফুটে উঠেছে। চোখ দুটো ছোট্ট করে তাকিয়ে রয়েছে। হয়তো আমার মিষ্টি বকাগুলো উপভোগ করলো।
মাধবীলতা আর একমুহূর্ত অবিলম্ব না করে সটান আমার বুকে মাথা লুকায়৷ বুঝে আসে না আমার! এই মেয়ে আমার বুকে পেয়েছে টা কী?
‘ আচ্ছা মায়াবতী তোমাকে একটা কথা বলব?
বুক থেকেই মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
‘ তুমি আমার বুকে যখনই সুযোগ পাও তখনই মাথা রাখো। আমার বুকে এমন কী রয়েছে যে বারবার এই বুকে হামলে পড়ো?
মাধবীলতা এবার একটু পিছিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে দিল।
‘ আপনার বুকেই লুকিয়ে রয়েছে আমার সমস্ত সুখের সূচনা যখন আপনার বুকে মাথা লুকোই তখন মনে হয় আমি সবচেয়ে শান্তির জায়গায় রয়েছি। আপনার বুকে মাথা রাখলে আমার মনে হয় কোনো বিপদ আমাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না।
মাধবীলতার মিষ্টি হাতের ইশারা আমার মুগ্ধ করে তোলে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। সবাই আবারো গাড়ির কাছে এলাম। গাড়িতে ওঠার পর মাধবীলতা মনে করিয়ে দিল সেই গল্পের কথা। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে যখনি বলতে শুরু করব তখনি আমার গাড়ি’টা থেমে যায়। স্টার্ট দিলাম কিন্তু কজ হলো। নষ্ট হয়ে গেছে। এই অসময়ে গাড়ি’টা নষ্ট হওয়ার জায়গা পেলো না। সবাই গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে হাঁটাহাটি শুরু করল। তবে মাধবীলতা গাড়িতে থেকে যায়।
আবীর কল করে মেকানিক’কে ডেকে পাঠায়। এদিকে আমি রাস্তার একপাশে বসে পাখপাখালির খেলা দেখায় মগ্ন ছিলাম। তৎক্ষনাৎ কারো চিৎকারের শব্দ পেলাম। আবীর চিৎকার করে বলছে,
‘ ভাইয়া সরে আসুন। আপনার দিকে গাড়ি ছুটে আসছে।
আবীরের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ডান দিকে তাকালাম। একটা ট্রাক পাগলের মতো ছুটে আসছে আমার দিকে। আর অল্প কিছুটা দুরত্ব। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার নিচে নেমে গেলাম। ট্রাকটি আমাকে ধাক্কা দিতে না পেরে সজোরে ব্রেক কষে। কিন্তু ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। সোজা গিয়ে আমার গাড়িতে ধাক্কা মেরে দেয়৷ ব্রেক ধরার কারণে তেমন একটা জোরে লাগেনি। কিন্তু আমার গাড়িটা সোজা খাদে পড়ে যায়।
মুহূর্তের মধ্যে এটা ভেবে থমকে গেলাম যে গাড়িতে তো মাধবীলতা ছিল? তাহলে কী মাধবীলতা,,,,,? এক মুহূর্তের জন্য আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিল।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ