ঋতুর_স্মৃতি পর্ব_০৪

0
3370

#ঋতুর_স্মৃতি
#পর্ব_০৪
#Jechi_Jahan

আমার আর রাহাতের দিনগুলো ভালো চলছিল।কিন্তু ৫ বছর পর যখন সবাই খেয়াল করে আমার কোনো বেবি হচ্ছেনা তখন আমাকে ডক্টর এর কাছে নেয় আর টেস্ট করায়।কিন্তু ডক্টর সবাইকে বলে যে আমি নাকি কোনোদিন মাই হবোনা।কিন্তু তখন সবাই কিছু না বললেও পরে ঠিকই বলে।যে ওনাদের বংশধর লাগবে।আমার শ্বশুর আমাকে কিছু বলেনি উল্টো মায়ের সাথে এই ব্যাপার নিয়ে ঋগড়াও করে।তখন রাহাত বলে বাচ্ছা এডপ্ট করবে কিন্তু মা মানেনা।সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাহাত যেন আবার বিয়ে করে।রাহাত এতে রাজি ছিলনা আমি বলায় ও ওর মায়ের সব কথা শুনে আর এতোই শুনে যে মায়ের কথায় আমায় বাড়ী থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়।এরপর আর ভাবতে পারলাম না তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।

+++সকালে+++

আমি সবার সাথে বসে আছি আর ভাবছি কি করা উচিত আমার।হঠাৎ আমার চোখ গেলো রাহাতের আব্বুর দিকে।আমি উঠে গিয়ে রাহাতের আব্বুর সামনে মেঝেতে বসে ওনার হাত ধরলাম।

রাহাতের আব্বু-কি হয়েছে ঋতু?

আমি-তোমাকে খুব মিস করবো আব্বু।

রাহাতের আব্বু-কেনো তুইতো এখানে আছিস।

আমি-না আব্বু আমার এখানে থাকার আর কোন অধিকার নেই ওটাতো অনেক আগেই চলে গেছে।

রাহাতের আব্বু-এমন কেনো মনে হচ্ছে তোর?

আমি-না মনে হওয়ার কি আছে বলোতো।

রাহাতের আব্বু-___________

আমি-জানো আমার ছোট থেকে শখ ছিলো শুধু বাবার কাছেই থাকবো।তাই আমাকে যখনই কেও বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তার নামে আমি কেস করে দিতাম।আমার এমন অবস্থা দেখে বাবা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে।যখন দেখতে আসো আমাকে সেদিন আমি রাহাতকে বলে
ছিলাম আমি হাউজ ওয়াইফ হবোনা পড়ালেখা করবো। আর রাহাত ও মেনে নিয়েছে জানিনা কেনো সেদিন মেনে নিয়েছিলো।আর অবশেষে বিয়ে হওয়ার পর সবসময়ই ভাবতাম আমিতো কোনো দিন কল্পনাও করিনি যে এতো বড় ঘরের বউ হব।তোমাদের সবার মতো আপনজন পাবো।
(কেঁদে কেঁদে)

আব্বু-তাহলে এখন কি মনে হয়?

আমি-বিয়ের ৫ বছর পর সব বদলে যায়।সবার একটা ভুল বুঝাবুঝির কারণে আমার সংসারটা ভেঙ্গে যায়।হ্যাঁ আমি মানছি যে আমিই রাহাতকে বলেছি মায়ের সব কথা শুনতে।কিন্তু ও কি পারতো না মায়ের সাথে একমত না হতে।কিন্তু তখন রাহাত ও বেবিই চেয়েছিলো নিশ্চই।যেদিন রাহাতের বিয়ে হয় সেদিন রাতে আমি একা এখানে মেঝেতে বসে ছিলাম।কিন্তু সেদিন রাতে কেও আমার কাছে আসেনি তুমিও আসোনি।এটার জন্য আমি কাওকে ক্ষমা করবোনা।
(কেঁদে কেঁদে)

রাহাতের আব্বু-সরি আম্মুনি।

আমি-সেদিন কেও আমায় একটু সান্ত্বনা পর্যন্ত দেয়নি।সবাই রাহাতের পাশে ছিলো আমার পাশে কেও ছিলোনা।তবুও তোমরা কিভাবে আশা করো যে আমি আবার ওর কাছে ফিরে আসি।মুভ অন শুধু রাহাত করতে পারবে আমি করতে পারবোনা।
(কেঁদে কেঁদে)

রাহাতের আব্বু-তুমি অবশ্যই মুভ অন করবে।

আমি-আমি রাহাতকে দেখলে মনে শুধু অভিমান
জাগে।আর আমি যদি রাহাতের সাথে থাকি তাহলেতো ও আমার কাছে আরো ঘৃণার পাত্র হবে আর এটা আমি চাইনা।আমি আমার বাচ্চা নিয়ে সারাজীবন থাকতে পারবো আব্বু।ঋগড়া আমাদের,ভালোবাসা আমাদের,কষ্টও আমাদের এটাতো আমি আর আমার বাচ্চাকে ভাগ দিতে পারবোনা।রাহাত হলে হয়তো আমার বাচ্চাকে খুব ভালোবাসতো আমিও বাসবো আরো বেশি।

বাবা-তুমি এসব দ্বারা কি বলতে চাও ঋতু।

আমি-বাবা আমি কালকে এমন কিছু দেখেছি যার জন্য আজ আমার মনে জমিয়ে রাখা কথাগুলো বলেছি।

রাহাতের আব্বু-কি দেখেছো তুমি?

আমি-আমি এটা দেখেছি।(রিপোর্টটা বের করে)

রাহাত-এটা কার?

আমি-রিহার!!!

রাহাত-কি আছে এতে?

আমি-এতে লেখা আছে যে রিহার কোনো সমস্যা নেই।ওর বেবি হওয়ার সময় ও মরবে না।

আব্বু-কি??? তাহলে রাহাত যে বললো।

রাহাত-রিহাতো আমাকে বলেছে এটা সত্যি।

আমি-রিহা এবার সত্যি টা বলো।

রিহা-কোন সত্যি বলবো।

আমি-যা মিথ্যা বলেছো তার সত্যিটা।

রিহা-ঋতু তুমি জানলে তুমি বলো।

আমি-ওকে আমি বলছি রিহা আমাকে এবাড়িতে আনার জন্য সবাইকে মিথ্যা বলেছে।কারণ ও জানতো যে আমি এ বাড়ীতে কোনোদিন আসতাম না।তাই এই কথাটা বলেছে যাতে আমি আসি।

বাবা-আচ্ছা ঋতুকে এনে তোমার কি লাভ হতো।

রিহা-আমি চেয়েছিলাম আমরা একসাথেই থাকি।

আমি-তুমি চাইলেও তা আর সম্ভব না রিহা।কারণ আমি আজ চলে যাচ্ছি।আর এমনিও কিছুদিন পর আমি রাহাতকে ডিভোর্স দিবো।

রাহাতের আম্মু-তুই সত্যি চলে যাচ্ছিস।

আমি-এটাই তোমার সারপ্রাইজ।

রাহাতের আম্মু-আমিতো এমন সারপ্রাইজ চাইনা।

আমি-কিন্তু আমি এমন সারপ্রাইজই দিবো।

এবার আমি রাহাতের সামনে দাঁড়াই আর বলি

আমি-রাহাত আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি ঠিকই কিন্তু কোনদিন তোমার কাছে ফিরে আসতে পারবোনা।

রাহাত-মায়ের কথা শুনাটা হয়তো আমার কোনো বাহানা ছিলো।হয়তো আমিও তোমার কাছে শুধু আমার বেবিই চেয়েছিলাম।(কেঁদে কেঁদে)

আমি-কোর্টে দেখা হবে আজ আসি।বাবা চলো।

বাবা-তুমি যাও আমি আসছি।

আমি বাড়ী থেকে কাঁদতে কাঁদতেই বের হই।আমি গাড়ীতে বসে বাবা এসে গাড়ীতে আমার জিনিস গুলো ধরিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে।

আমি-এগুলো কেনো এনেছো বাবা?

বাবা-আমি এই বাড়ীতে আমার #ঋতুর_স্মৃতি রাখবোনা এবং আমার মেয়েকেও না।

আমি বাবার কথা শুনে মুচকি হাসলাম।

-চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে