ঋতুর_স্মৃতি
#সিজন_২
#পর্ব_০১
#Jechi_Jahan
আজকে পুরো স্কুল খুঁজেও রনিকে কোথাও পেলাম না।রনিকে এভাবে না পাওয়ায় আমার খুব টেনশন হচ্ছে।যদি আমার ছেলেটার কিছু হয়ে তখন আমি কি করবো।আমার বাঁচার সম্বল তো রনি।আর চিন্তা না করে আবার খুঁজতে লাগলাম।
বেশ কিছুক্ষণ চারিপাশে খোঁজার পর হঠাৎ দেখি একটা ফুচকা দোকানের সামনে রনির হাত ধরে কেও দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওখানে গেলাম।
আমি-রনি।
রনি-আম্মু!!(কোলে উঠে)
আমি-তুমি আমাকে না বলে কেনো এলে?
রনি-সরি আম্মু!!!
আমি-আর এইযে আপনি।(লোকটাকে উদ্দেশ্য করে)আপনার কোনো বোধবুদ্ধি নেই।এরকম অন্য একজনের ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে এলেন।আরে আপনার তো নিশ্চয়ই বুঝা উচিত যে ছেলে-মেয়েকে না পেলে কেমন টেনশন হয়।
ছেলেটা-ও তো আমারও ছেলে ঋতু।(মুখ ঘুরিয়ে)
আমি-রাহাত তুমি?
রাহাত-হুম!!!
আমি-তুমি যেই হ কেন আনবে আমার ছেলেকে?
রাহাত-আমি আমার ছেলেকে আনতে পারিনা?
আমি-না পারোনা কারণ রনি শুধুমাত্র আমার ছেলে তোমার না বুঝেছো।আর নেক্সট টাইম ওকে যেনো তুমি কোথাও না নিয়ে যাও।
রাহাত-আমি না নিলে কে নিবে?
আমি-তুমি তোমার নিজের মেয়ে রানিকে নিয়েই বাইরে যাও।আমার ছেলেকে ওর বাবাই বাইরে নিয়ে যাবে তোমার দরকার নেই।(রেগে)
রাহাত-বাবা?
রনি-হুম আঙ্কেল আমার বাবা আছেতো।
রাহাত-ঋতু তুমি বিয়ে?
আমি-হ্যাঁ করেছি।কেনো তুমি করতে পারো আমি করতে পারিনা বুঝি।তাই আমিও করেছি।
রাহাত-তাহলে ওদিন মিথ্যা কেনো বললে?
আমি-সেদিন আমি তোমার কষ্টের কথা ভেবে ছিলাম তাই সত্যিটা বলিনি।কিন্তু পরে মনে হলো যেই লোকটা আমার কষ্ট বুঝেনি তার কষ্ট আমি কেনো বুঝবো।তাই আজ বলে দিলাম।আসি!!!
বলে রাহাত এর সামনে থেকে চলে এলাম।আজ এমন করার কারণ হচ্ছে ও রনিকে না বলে নিয়ে আসার জন্য।আমি আর রনি বাড়ীতে আসি।
রনি-বাবা!!!
রবিন-রনি তুমি এসেছো?
রনি-হুম এসে গেছি।(রবিনকে জরিয়ে ধরে)
রবিন-তা আজ কি কি করেছো স্কুলে?
রনি-জানো বাবা আজ আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি।আমার বেষ্টির বাবা আজ আমাকে অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে।
রবিন-ওহ তাই।ওকে নানা ভাইয়ের কাছে যাও।
রনি-ওকে!(নানার রুমের দিকে গিয়ে)
রবিন-ঋতু কি হয়েছে তোমার?তোমাকে হঠাৎ এমন দেখাচ্ছে কেনো?
আমি-আমার খুব ভয় হচ্ছে?
রবিন-ভয় হচ্ছে কিন্তু কেন?
আমি-জানো রাহাতই আজকে রনিকে ঘুরিয়েছে।
রবিন-কিহ?ও রনিকে পেলো কোথায়?
আমি-রনি ওর স্কুলে পড়ে?
রবিন-হুম কিন্তু রাহাত না আগে ব্যবসা করতো?
আমি-হয়তো কাজে যোগ হয়েছে।
রবিন-ঋতু তুমি কি ওর কাছে ফিরে যেতে চাও?
আমি-রবিন এমন কখনো বলোনা।আমি ওর কাছে যেতে পারবোনা।আমার রনি জন্ম হওয়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাবা ছাড়া একমাত্র তুমিই আমার পাশে থেকেছো।আমি যাবোনা।
রবিন-ওকে।
—ওদিকে—
রাহাত বাড়ীতে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।কারোর কোনো কথাই শুনলো না।রানি এতোবার করে ডাকলো তাও কোনো জবাব দিলোনা।আর অন্য সময় হলে কোলে নিয়ে নিত।
রাহাত-ঋতু তুমি ঠিক করেছো বিয়েটা করে।তোমার তো বাঁচার অধিকার আছে আর আমিতো সেটা নিয়ে নিতে পারিনা।আসলে আমি একটা স্বার্থপর।বিয়ের পর বেবি না হওয়ার কারণে তোমায় অবহেলা করছি।এতোই অবহেলা করেছি যে তুমি এখন আমাকে দেখলেই কষ্ট পাও।ঋতু আমি এখনো স্বার্থপরই রয়ে গেছি জানো।তোমার সাথে এতো কিছু করার পরও এই আশাটা রাখি যে তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে।এটাতো একটা স্বার্থপরেরই কাজ তাইনা ঋতু।(ঋতু আর ওর বিয়ের চবির দিকে তাকিয়ে কান্না করে করেই কথাগুলো বলছে রাহাত)
রানি-বাবা তুমি কার সাথে কথা বলছো?
রাহাত-কারোর সাথে না।(চোখের পানি মুছে)
বাবার কাছে আসো রানি।
রানি-বলো(রাহাতের কাছে গিয়ে)
রাহাত-নতুন বাসা কেমন লাগছে?(কোলে নিয়ে)
রানি-বোরিং(নীচের দিকে তাকিয়ে)
রাহাত-কেনো কেনো?(রানির মাথা উঁচু করে)
রানি-এখানে আসার সাথে সাথেই স্কুলে যেতে দাওনি।বাসায় আমি একা একটা মেয়ে কিভাবে থাকি।আমার আজ খুব বোরিং লেগেছে।
রাহাত-ওমা তাই!ওকে কালকে থেকে স্কুলে যেও।আর আজকে আমরা পার্কে যাবো।
রানি-সত্যি, ইয়াহু!!!
—এদিকে—
রনি-বাবা!!
রবিন-না।
রনি-বাবা প্লিজ।
রবিন-না না।
রনি-বাবা প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
রবিন-বললামতো না না না।
রনি-তোমার থেকে আমার ওই আঙ্কেলটা ভালো আমাকে আজ কত জায়গায় ঘুরিয়েছে।আর তুমি আমার বাবা হয়েও আমাকে ঘুরাও না।(রেগে)
রবিন-ঋতু!!!!(চিৎকার করে)
রনি-ওই তুমি মাকে একদম ডাকবে না।
রবিন-ঋতু!!!!
আমি-কি!!!কাজ করিনা।(রেগে)
রবিন-রনি আজকে পার্কে যেতে চাইছে।
আমি-তো আমি কি করবো?
রবিন-কি বলবো ওকে?
আমি-যাবো বলেই তো হয় গাধা।
রবিন-ইয়াহু আজকে আমরা পার্কে যাবো।
++বিকালে++
*রাহাতের বাড়ীতে*
রাহাত-মা রানিকে রেডি করিয়েছো?
রাহাতের মা-হুম করিয়েছি।
রাহাত-রানি আসো দেরি হয়ে যাবে তো মা।
রানি-বাবা চোখ বন্ধ করো।
রাহাত-ওকে(চোখ বন্ধ করে)
রানি-এবার খুলো।(রাহাতের সামনে দাঁড়িয়ে)
রাহাত-ওয়াও আমার সামনে তো একটা প্রিন্সেস
দাঁড়িয়ে আছে।তা তুমি কোথায় থেকে এসেছো?
(চোখ খুলার সাথে সাথে)
রানি-জানিনা।
রাহাত-ওরে আমার মা টা চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। (রানিকে কোলে নিয়ে বাড়ীর বাইরে চলে গেলো।আর গাড়ীতে উঠে পার্কের উদ্দেশ্য রওনা দিলো)
*ঋতুর বাড়ীতে*
রবিন-ঋতু,রনি হয়েছে?
রনি-বাবা।
রবিন-হুম (রনির দিকে তাকিয়ে)
রনি-লাগছেনা একেবারে তোমার হিরো।(বিভিন্ন ভাবে স্টাইল দিয়ে দেখিয়ে)
রবিন-তোমার স্টাইল গুলো একেবারে সেই।
আমি-দেরি হয়ে যাবে চলো।(এবার আমরাও গাড়ীতে উঠে পার্কের দিকে রওনা দিলাম)
***পার্কে***
পার্কে আমি,রবিন আর রনি একে অপরের হাত ধরে হাঁটছিলাম।হঠাৎ সামনে থাকা দুটো মানুষের সাথে আমাদের চোখাচোখি হওয়ায় আমি কেমন যেনো ভয় পেয়ে যাই আর ঢোক গিলতে থাকি।