#ঋতুর_স্মৃতি
#পর্ব_০৫
#Jechi_Jahan
১৭ দিন পরঃ-
আজ আমি খুব অসস্তি ফিল করছি জানিনা কেনো।কিন্তু এমন মনে হচ্ছে যেনো কিছু একটা হবে যা হয়তো কল্পনা করার মতো নয়।
আমি-বাবা রাহাত কখন আসবে?
বাবা-এইতো চলে আসবে মনে হয়।
আমি-তো এখনো আসছেনা কেনো?(অস্থির হয়ে)
বাবা-আচ্ছা দাঁড়া আমি ওকে ফোন দিচ্ছি।
বাবা রাহাতকে ফোন দেওয়ার সাথেই রিসিভ করে
বাবা-কি হয়েছে রাহাত আসছোনা কেনো?
রাহাত-একটু ব্যস্ত আছি বাবা।
বাবা-কি এমন ব্যস্ততা আছে তোমার যে আজ ডিভোর্সের দিনেই তোমাকে লেট হতে হবে।
রাহাত-বাবা রিহাকে হসপিটালে এডমিন করাচ্ছি। ওর আজকে সকালে পেইন উঠেছিলো।
বাবা-ঠিক আছে!রিহাকে এনমিন করিয়ে সাথে সাথে এখানে চলে আসো।আমরা ওয়েট করছি।
রাহাত-বাবা যদি আজ একটু সময় দিতেন।
বাবা-কেনো সময় দিবো?তোমরা যখন আমার মেয়ে টাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলে তখন এটা মনে হয়নি যে ঋতুকে সময় নেয়ার দরকার ছিলো,সময় দেয়ার দরকার ছিলো।(রেগে গিয়ে)
রাহান-কিন্তু এখনের পরিস্থিতিতো আলাদা।
বাবা-মোটেও আলাদা না বুঝেছো।আচ্ছা কিভাবে এতো পাষাণ হতে পারলে তোমরা।আর বলি হারি যখন শুনেছো আমার মেয়েটা মা হতে চলেছে ঠিক তখনই নিজের বংশধর এর জন্য আমার মেয়েকেও মেনে নিয়েছো।(রেগে গিয়ে)
রাহাত-আচ্ছা আমি আসছি।
বাবা রেগে কলটা কেটে আমার দিকে তাকায়ঃ-
বাবা-আমি তোর জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছি না।
আমি-দূর আমার জীবন ঠিকই আছে।
বাবা-পাগলী।
আমি আর বাবা রাহাতরের জন্য অপেক্ষা করছি।
বেশ কিছুক্ষণ পর রাহাত কোর্টে আসে।
বাবা-অবশেষে এলে চলো ভেতরে চলো।
রাহাত-বাবা আমি ঋতুর সাথে কথা বলতে চাই।
বাবা-ঋতু তুই।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে রাহাতকে নিয়ে বাইরে এসে একটা জায়গায় পাশাপাশি বসলাম।
রাহাত-তুমি ঠিক আছো?
আমি-হুম,তুমি?
রাহাত-আছি কোনোরকম।ঋতু কিছু কথা বলি?
আমি-হুম বলো।
রাহাত-জানো আজ আমি হয়ে যাব কিন্তু আমার মাঝে না কোনো ফিলিং নেই।আচ্ছা ঋতু তুমি বলোতো আমি পারবো ভালো বাবা হতে।
আমি-হুম।
রাহাত-ঋতু তখন আমার তোমার সাথে এমনটা করা উচিত হয়নি মানে বাড়ী থেকে বের করে দেওয়া তাইনা?
আমি-চুপ করে আছি।
রাহাত-আসলেই ঠিক হয়নি এমন করাটা।জানিনা আমার কাছে কেনো ঠিক মনে হয়েছে।আমি তোমার কাছে যত ক্ষমাই চাইনা কেনো আমি আসলে ক্ষমার যোগ্য না।তবুও যদি পারো ক্ষমা করে দিয়ো আর মাঝেমাঝে দেখে আসিও বন্ধু।সাথে #ঋতুর_স্মৃতি টাকেও নিয়ে আসিও।
(মুচকি হেসে)
আমি-হুম
আমি আর রাহাত আবার ভেতরে গেলাম।পেপার দিলে দুজনেই সাইন করে দিই।অবশেষে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম।বাইরে বের হলে দেখি রাহাত আজকে ওর গাড়িটা আনেনি তাই বলি।
আমি-রাহাত তুমি আমাদের সাথে চলো।
রাহাত-আরে না আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে।
বাবা-আমরাও ওখানেই যাবো আসো।
রাহাত,আমি আর বাবা হাসপাতালের ভেতরে গেলাম।ভেতরে গিয়ে দেখি রাহাতের মা-বাবা সহ রিহার মা-বাবাও কাঁদছে।
রাহাত-মা কি হয়েছে তোমরা কাঁদছো কেনো?
রাহাতের মা কিছু না বলে কাঁদতেই আছে।
এবার আমি রাহাতের আব্বুর দিকে এগিয়ে গেলাম।আর ওনার পাশে গিয়ে বসলাম।
আমি-আব্বু কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
রাহাতের আব্বু-রিহার মেয়ে হওয়ার….
আমি-মেয়ে হয়েছে এটা তো ভালো কথা।তাও তোমরা সবাই এভাবে কাঁদছো কেনো?
রাহাতের আব্বু-নারে মা রিহা তার মেয়েকে জন্ম দেওয়ার সময় মারা গেছে।(কাঁদতে কাঁদতে)
এটা শুনে আমার কেনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।হ্যাঁ আমি মানছি যে ও আমার সাথে অন্যায় করেছে কিন্তু তাই বলে আমি এটা চাইনি যে ও মারা যাক।
রাহাত-ঋতু আমার মেয়েটাকে দেখবে না।
আমি রাহাতের কথায় পেছনে তাকালাম।দেখলাম ও ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি এবার ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
আমি-ও কিন্তু দেখতে রিহার মত হয়েছে।
রাহাত-হুম কিন্তু ওর মা তো আর নেই।
আমি-তুমিতো আছো তুমিই ওর মা আর বাবা।
রাহাত-মায়ের মতো ভালোবাসলে তো আর মা হয়ে যায়না তাইনা।ঋতু আমার মেয়েটা যখন বড় হবে তখন হয়তো আমাকে জিজ্ঞেস করবে যে মা কোথায়?তখন হয়তো আমি বলবো আমি আর তোমার মা আরেকটা মায়ের মনে খুব কষ্ট দিয়েছি তাই তোমার মাকে আল্লাহ নিয়ে গেছে আর আমাকে একা করে দিয়েছে।(কাঁদতে কাঁদতে)
আমি রাহাতের এসব কথা আর শুনতে পারছিনা তাই হাসপাতাল থেকে কেঁদে কেঁদে বের হয়ে যাই।
৫ বছর পরঃ-
আজ আমি আমার ছেলে রনির স্কুলে এসেছি একটা অনুষ্ঠানের কারণে।ও হ্যাঁ আমি ঋতুই আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে আমার ছেলে রনি জন্ম নেয়।তবে এই পাঁচ বছরেও আমার সাথে রাহাতের একটুও যোগাযোগ হয়নি জানিনা এখন কেমন আছে।হঠাৎ রনি আমাকে টেনে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।সামনে একটা লোক ওদিকে ফিরে তার মেয়েকে পুচকা খাওয়াচ্ছে।
রনি-স্যার স্যার আমাকে খাওয়াবে না?(তুতলিয়ে)
রনির কথা শুনে লোকটা এবার সামনে তাকায়।লোকটাকে দেখে আমি রীতিমতো শকড খাই।সেই পাঁচ বছর আগে দেখা রাহাতের চেহারা।
রাহাত-আরে ঋতু তুমি এখানে?
আমি-আগে বলো তুমি এখানে কি করছো?
রাহাত-আমি এই স্কুলের প্রিন্সিপাল।সবসময় আসিনা মাঝেমাঝেই আসি।
আমি-ওহ!!! আর আমি এখানে আছি কারণ আমার ছেলে এই স্কুলের স্টুডেন্ট।
(রনিকে দেখিয়ে)
রাহাত-ও তাহলে তুমিই #ঋতুর_স্মৃতি।
আমি-তোমার মেয়ে কোথায়?
রানি-আমি এখানে আন্টি।আমাকে ডেকেছো।
রাহাত-ওকে ও হচ্ছে রিহার স্মৃতি।
আমি-বিয়ে করোনি?
রাহাত-ভেবেছি সেক্রিফাইস শুধু তুমিই কেনো করবে আমিও একটু করি তাই বিয়ে করিনি।
আমি ওর কথা শুনে মুচকি হাসলাম।
রাহাত রনিকে কোলে নিয়ে আদর করে দেয় আর আমিও রানিকে কোলে আদর করে দিই।এবার আমি আর রাহাত একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে যে যার রাস্তায় চলে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ রাহাত পেছন থেকে বলে উঠে।
রাহাত-মাঝেমাঝে আমাদের দেখে আসিও বন্ধু।সাথে আমার #ঋতুর_স্মৃতি টাকেও নিয়ে এসো।
(জোরে জোরে মুচকি হেসে)
আমি-হুম।(জোরে)
এখনো আমরা আলাদাই থাকি কিন্তু বন্ধু হয়ে।
#সমাপ্ত