Sunday, October 5, 2025







উড়ো পার্সেল পর্ব -৫

গল্প :#উড়ো পার্সেল (পর্ব -৫)
লেখা:#নাজিফা_তাবাসসুম।
মাঝরাতে নিশাতের ঘুম ভাঙ্গে গেলো তীব্র চিৎকারের শব্দে। সে হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে পড়লো। আচমকা এভাবে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে তার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। সে আবিষ্কার করলো চিৎকারের শব্দটি তাদের বাসায় নিচ থেকে আসছে। নিশাত বিছানা থেকে নেমে পড়ল। ঈশিতাকে তার পাশে দেখতে না পেয়ে নিশাত তাকে ডাকতে লাগলো। ঈশিতার কণ্ঠস্বর বারান্দা থেকে ভেসে আসলো। নিশাত বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে দেখলো, সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে কিছু একটা দেখছে। নিশাত তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

– কি দেখছিস ঈশিতা? আর নিচে এত শব্দ কিসের? কেউ চিৎকার করছিল আর মনে হল!!
– আমাদের কেয়ারটেকার নাকি বাসার সামনে দিয়ে একটি চোরকে যেতে দেখেছে। তাই সে চেঁচিয়ে উঠেছে।
-তুই কিভাবে জানলি?
– নিচে দেখলাম.. এতক্ষণ ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো।
– তুই এখনো ঘুমাসনি? কি করছিলি এতক্ষণ? বারান্দায় বসেছিলি নাকি?
– এত প্রশ্ন একসাথে করো না তো… উত্তর দিতে পারছি না।
– ঈশিতা তোর আবার কি হলো?এমন করছিস কেন?

ঈশিতা নিশাতের কথার কোন প্রকার উত্তর না দিয়ে নিজেদের ঘরে ঘুমানোর জন্য চলে গেল। নিশাত তার ছোটবোনের এমন আচরণের ভীষণ বিস্মিত হল। তার বাচাল বোনটার হঠাৎ করে কি এমন হল? এত নিশ্চুপ হয়ে গেল কেন!

আজ বাসায় ঈশিতা আর নিশাত ছাড়া কেউ নেই। বাবা-মা এখনো হসপিটালে আছে। আগামীকালকে হয়তো মাকে রিলিজ দেওয়া হবে। পুরো বাসায়
মা-বাবা না থাকার কারণে বাসার ভেতর নিশাতের চলাফেরা করতে গা ছমছম করতেই লাগলো।

নিশাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাত তিনটা বাজে। এখন আর রাস্তা থেকে তেমন শোরগোলের শব্দ শোনা যাচ্ছে না। সে এবারে বেশ কৌতুহলী হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

রাস্তায় কিছু সংখ্যক মানুষের জটলা বেঁধে আছে। তাদের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু একটু আগে তারা একটি চোরকে চুরি করে পালিয়ে যেতে দেখেছে। চোরের সমস্ত শরীর কালো কাপড় দিয়ে মোড়া ছিল সেই জন্য চোরের চেহারা দেখা যায়নি।
নিশাতদের বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার বেশ রসিয়ে রসিয়ে রসিয়ে অতিরঞ্জিত করে ঘটনাটির বর্ণনা আশেপাশের মানুষজনের কাছে করছে। এসব দেখে সে প্রচন্ড বিরক্ত হলো।
নিশাত জানে এই লোকের স্বভাব চরিত্র এরকমই। সাধারণ একটা বিষয়কে ডালপালা লাগিয়ে এমন ভাবে মানুষের কাছে বর্ণনা করবে.. যেন রূপকথার কাহিনী রচনা করতে বসেছে।

নিশাত বেশ বিরক্তি নিয়ে আবার ঘুমোতে গেল। কিন্তু তার আর ঘুম আসছে না। সে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় উঠে পড়ল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে তিনটা বাজে। সে বুঝে গেল আজ রাতটাও তার অনিদ্রায় যাবে। একবার যখন ঘুম ভেঙে যায় তার তখন দ্বিতীয়বার আর ঘুম আসে না।

নিশাত প্রথমে রান্নাঘরে গিয়ে একমগ কফি বানিয়ে নিলো। তারপর সে বসার ঘরের সোফায় বসে টিভি চালু করলো। কফি খেতে খেতে সে টিভি দেখছে।
এমন সময় নিশাতের ফোনে টুং করে মেসেজ আসার শব্দ হলো। নিশাত ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে তার কাছে মেসেজ এসেছ।

মেসেজে লেখা, “নিশাত তোমার কি ঘুম আসছে না”?

মেসেজটি দেখে নিশাত প্রচন্ড অবাক হলো। তবে সে বুঝতে পারছে, মেসেজটি তাকে জায়ান নামের সেই যুবক ছাড়া আর কেউ করেনি। তারপরও সে না বোঝার মত ভাব করলো।

সে সেই মেসেজের প্রত্যুত্তরে লিখল, “আপনি কে”?

প্রায় সাথে সাথেই রিপ্লাই চলে আসলো। নিশাত বেশ আগ্রহ সহকারে সেখানের লেখাটি পড়ল,

“চিনতে পেরে ও না চেনার ভাব করছ কেন”?

নিশাত এবার মেসেজের রিপ্লাই দিলো না; সে মোবাইলটা তার পাশে রেখে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পর আরও একটি মেসেজ আসলো। সে এবারে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল,সেখানে লেখা নিশাত তুমি তো এখনো উত্তর দাওনি; তুমি কি আমার সাথে দেখা করবে?

নিশাত কোন উত্তর দেবে না… চিন্তা করেও কিছুক্ষণ পর সে রিপ্লাই দিয়ে বসলো ‌। নিশাত লিখলো, আমি ভেবেচিন্তে দেখবো।
মেসেজে নিশাত এটা লিখলেও নিজ মনে সে প্রচন্ড কৌতূহলী এই মানুষটিকে একবার দেখার জন্য। তবে সে তার কৌতূহলকে মাটিতে চাপা দিয়ে, সে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল।

ভোরের দিকে নিশাতের ঘুম আসলো। বেশ বেলা করে দুপুরের দিকে দরজার তালা খোলার শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে নিশাত বেশ অবাক হয়ে গেল এখন সাড়ে বারোটা বাজে। সে বাসায় ঈশিতাকে দেখতে পেল না। ঈশিতা তাকে না বলে কোথায় গেল? এমন সময় বাসায় সে মা-বাবা এবং ঈশিতাকে ঢুকতে দেখলো।

ঈশিতা তাকে তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল, আপু, তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে ডাকিনি। আমি গিয়েই বাবা-মাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছি। বাইরের দরজা কেমন তালা মেরে আমি হসপিটালে গিয়েছিলাম।

নিশাত বিষয়টা বুঝতে পেরে তার ছোট বোনের দিকে বিস্মিত হয়ে তাকালো। তার ছোট বোনটি কবে থেকে আবার এতটা দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে গেল! সব কিছু এভাবে বুঝতে শিখলো!

নিশাতের মা রাহেলা বেগম বেশ আনন্দ করেই ঘরের ভেতর ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
আর ক্ষণে ক্ষণে মন খারাপ করে গলায় বললেন, আমি নেই তাই ঘরের একি অবস্থা? ঘরটা ভালো করে পরিষ্কার করিসনি? মেঝেতে এত ময়লা কেন? ঘর পরিষ্কার করতে পারিস না! ইশ্.. রান্না ঘরের কি অবস্থা?

মায়ের হাজারো অভিযোগ শুনেও নিশাতের বুকের মধ্যে আনন্দ ঝড় বয়ে যাচ্ছে‌। অন্য সময় হলে সে ভীষণ বিরক্ত হত মায়ের এসব কথাবার্তায়। তবে মাকে সুস্থ দেখে এসব কথা যেন তার কান দিয়ে ঢুকছেই না।

নিশাত শুধু তার মাকে বলল, মা তুমি একদন্ড বসো।
বিশ্রাম নাও। সবে হসপিটাল থেকে আসলে, এখনই এত পরিশ্রম করবে না। তোমার কিন্তু আবার শরীর খারাপ হয়ে যাবে।
রাহেলা বেগম তার বড় মেয়ের কথায় কান না দিয়ে, ঘরের কোথায় কোন ময়লাটা সে পরিষ্কার করেনি সেই অভিযোগগুলো করতে থাকলো এবং নিজে ঝাড়ু নিয়ে এসে ঘর ঝাড়ু দিতে থাকলো।

নিশাত অসহায় দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ঈশিতা তার পাশে এসে কানে কানে বলল, মাকে হাজার নিষেধ করলেও সে এখন কিছুই শুনবে না।

ইকবাল হোসেন তার স্ত্রীকে বাসায় রেখে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।‌ যা যা ওষুধ পত্র প্রয়োজন ছিল সবকিছুই তিনি তার মেয়েদের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন এবং কোনটা কোন সময় খাওয়াতে হবে সেটাও বলে দিয়ে গেলেন।

বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেছে,

এ কয়েকদিন আর তেমন কোন উড়ো পার্সেল নিশাতের কাছে আসেনি। এসব নিয়ে ভাবার ফুসরত নিশাতের মেলেনি। সে ভীষণ ব্যস্ত পড়াশোনা নিয়ে। ঈশিতা ও এত বেশি বাড়াবাড়ি করছে না। সামনে তার ফাইনাল পরীক্ষা।সেও পড়াশোনা নিয়ে অতি ব্যস্ত দিন পার করছে। সারা বছরের পড়াশোনা যেন তার এখন এসে বেঁধেছে।

তবে জায়ানের সাথে নিশাতের নিয়মিতই কথা হয় মেসেজে। তার সাথে নিশাতের একটা বেশ ভালই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে। অবশ্য কখনো তার সাথে ফোনে কথা হয়নি তার।
এমনই এক দিন নিশাতের হঠাৎ করেই তার অচেনা বন্ধুটির সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করলো। সে কিভাবে জায়ানকে বলবে বুঝতে পারল না।
তবে অনেক কিছু ভেবেচিন্তে সে জায়ানকে একটি মেসেজ পাঠিয়ে দিল,
“আপনার সাথে দেখা চাই”! জায়ান!!

বিকেলের ঠিক একটু আগে জায়ান মেসেজটি দেখতে পেল, এক ধরনের অন্যরকম আনন্দ তাকে ছুঁয়ে গেল। কিন্তু; সে এতদিন যে দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিল সেদিনটি আজ চলে আসলো , সে ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড নার্ভাস অনুভব করতে লাগলো। কোনো এক অজানা কারণে তার নিশাতের সামনে তার যেতে ইচ্ছা করছে না।
সে চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করতে পারছে না, তার কি করা উচিত? সে কি যাবে দেখা করতে নিশাতের সাথে ? তাকে উচিত হবে?
কিন্তু, সেইতো প্রথমে অতি আগ্রহী ছিল নিশাতের সাথে দেখা করার জন্য। নিশাতই মূলত প্রথমে রাজি ছিল না। এখন সে রাজি হয়েছে । তার কি এখন উচিত না… নিশাতের সাথে দেখা করতে যাওয়া!

অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে জায়ান সিদ্ধান্ত নিতে পারল না তার এখন কি করা উচিত…. সে তার বন্ধু হিমেল কে ফোন দেওয়ার চিন্তা করল। কারণ একমাত্র হিমেলই নিশাতের সম্পর্কে জানে। এই মুহূর্তে হিমেলের সাথে আলোচনা করাটাই তার কাছে বেশি শ্রেয় মনে হলো। তাই সে কোন কিছু চিন্তা না করেই হিমেলকে কল দিল। প্রথম কয়েক বার রিং হওয়ার পর হিমেল ফোন ধরল না। পরক্ষণে সেই জায়ানকে কল করলো।

– হ্যালো?
-হ্যালো জায়ান?
-হ্যাঁ।
-কি ব্যাপার হঠাৎ ফোন দিলি যে। নিশাতের কোন ঘটনা ঘটেছে নাকি?
– না তেমন কিছু না। ও আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। আমার যাওয়া উচিত হবে?
– কি বলছিস তুই!! যাওয়া উচিত হবে না মানে? গত দেড় বছর ধরে তুমি ওর সাথে দেখা করতে চাচ্ছিস। শেষ পর্যন্ত ওই তোর সাথে দেখা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে আর তুই দেখা করবি না!!

– আমি চিন্তা করছি, নিশাতকে আমার সম্পর্কে সব সত্যি কথা বলে দেবো।
– কেন এত তাড়াতাড়ি বলার কী আছে? আসতে ধীরে বলবি। প্রথম দেখাটা সবচেয়ে স্পেশাল হতে হয়। এখনই এসব কিছু বলার কি দরকার।

– আমি জানিনা… আমার নিজের কাছে খুবই অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি ওকে ঠকাচ্ছি।
আমি যে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো নই এটা নিশাতের জানার দরকার।

– তুই এভাবে বলছিস কেন? এমন কোনো অস্বাভাবিক কিছুই তোর মধ্যে নেই, যে তুই নিজেকে অন্যভাবে চিন্তা করিস। এসব নেগেটিভ চিন্তা বাদ দে। ও যখন তোর সাথে দেখা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, ওকে সুযোগটা তুই দে। দেখা কর সাথে।

কথাগুলো বলেই হিমেল ফট করে কল কেটে দিল।
জায়ান বেশ অস্বস্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে, নিশাতকে মেসেজ দিয়ে বলতে যাবে , হ্যাঁ সে দেখা করতে চায়।
কিন্তু তার আগেই নিশাত তাকে মেসেজ দিল, “আমি আসলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত”। “আজকে আমি দেখা করতে যেতে পারছি না”, একটু কাজ পড়ে গেছে।

সে যেন নিশাতের মেসেজটা দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। বুকের উপর থেকে যেন শক্ত হয়ে চেপে থাকা পাথরটা সরে গেল। জায়ান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিছুটা সময় পাওয়া গেল নিশাতের সাথে দেখা করার আগে।এটাই বা কম কি!!
তবে নিশাত হঠাৎ করে দেখা করতে না করল কেন? তার কি কোন সমস্যা হয়েছে?

অন্যদিকে নিশাতের বেশ মন খারাপ লাগলো, আজকে তার সাথে দেখা হলো না। হবেই বা কি করে… হঠাৎ করেই দুপুরে বড় ফুপু তাদের বাসায় চলে এসেছে। এসে তিনি যা সাধারণত করে থাকেন তাই শুরু করে দিলেন। নিশাতের বিয়ে নিয়ে যত ধরনের ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব সবগুলো একটা একটা করে করতে থাকতেন।

নিশাতকে দেখে তিমি প্রথমেই বললেন, তোর এই কি অবস্থা? গায়ের চামড়া তো পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে বিয়ে হবে কিভাবে? কালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে? প্রতিদিন চন্দন মাটি মাখবি। কাঁচা হলুদ মাখলে তো চামড়ার রং একটু সাদা হয়।
বিয়ের বাজার এখন এমনিতেই ভালো না। তুই তো এমনিই জন্মগত শ্যামলা। এখন যদি আরো কালো হয়ে যাস, তবে বিয়ে হবে কি করে তোর?

কথাগুলো শুনে নিশাতের রাগে শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল। তাও সে ফুপুর কথার কোন উত্তর দিল না। সে মুখে হাসি এনে বলার চেষ্টা করল, এ কয়েকদিন মা অসুস্থ ছিল। রান্না বান্নার সব কাজ আমিই করেছি। সেই জন্যই হয়তো একটু কালো দেখাচ্ছে আমাকে।

ফুপু যেন তার এই কথাটির জন্য অপেক্ষা করছিল। নিশাতের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই.. তিনি ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলেন, কেন রান্নাবান্না কি তুই শুধু একা করিস? রুমি করেনা? রাকিবের বউ একা হাতে সব রান্না করে। আবার নিজের যত্নও করে। প্রতিদিন কত কিছু মাখে। ভাগ্য করে এমন একটা বৌমা পেয়েছি। রাকিব তো ওর বউকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে ভুলেও তাকায় না। এরকম একটা ছেলের বউ হলে ছেলেরা কখনো বউয়ের আঁচলের তল থেকে সরে না।

নিশাত তার ফুপুর কথার কোন উত্তর দিল না। সে জানে, ফুফুকে যে উত্তরই দেওয়া হোক না কেন… সেই উত্তরটিকেই তিনি খারাপ ভাবে উপস্থাপন করে; নিজের টাকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরবেন।

তার সাথে কথাবার্তা বলাই বৃথা। এ ধরনের মানুষের সাথে যে কথাই বলা হবে না কেন… সেই কথাই ভুল প্রমাণিত হবে। তাই বৃথা সময় নষ্ট না করে নিশাত তার কাজের বাহানা দেখিয়ে ফুপুর কাছ থেকে সরে নিজের ঘরে চলে আসলো।

ঘরে আগে থেকে বসে ঈশিতা বসে আছে। সে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু ফুপুর কথাগুলো তার কান এড়িয়ে যায়নি। ঈশিতার মন ভীষন খারাপ হয়ে গেল, সে ছোটবেলা থেকেই তার বড় বোনের সাথে এমনটা হয়ে আসতে দেখছে। ফুপু সব সময় তাকে এবং তার বোনকে আলাদা করে দেখে। ঈশিতার গায়ের রং একটি উজ্জ্বল হওয়ায় ফুপু সবসময় তাকে আলাদা নজরে দেখে। এ বিষয়টি তার কাছে খুবই খারাপ লাগে।

সে নিশাতের দিকে তাকিয়ে আপন মনে বলল, ফুপুকে আমি পছন্দ করি এটা সত্যি। তবে আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। হয়তো কখনো প্রকাশ করি না। তোমার জন্য আমার ভালোবাসা কখনোই কম ছিল না আপু। কিন্তু নিশাত আপু, তোমার কষ্ট আমার দেখতে ভালো লাগে না।
তোমাকে যে কষ্ট দিবে তাকে আমি কখনো আনন্দ পেতে দিব না। ফুপু আজকেই বুঝবে এই ঈশিতার বড় বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করার সাজা কি!!

ঈশিতার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। এই মুহূর্তে তার মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধির ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই তার মুখের হাসি বেঁকে যেতে লাগলো।

নিশাত পড়তে বসেছিল। হঠাৎ বসার ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ তার কানে ভেসে আসলো। নিশাত বই বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।
দ্রুত পা চালিয়ে এসে বসার ঘর এসে দেখলো, ফুপু চিৎকার করে তার ছেলের বউকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে, এবং কপাল চাপড়াচ্ছে।

এমন দৃশ্য দেখে নিশাত বিস্মিত হল, সে কিছুই বুঝতে পারল না। কিন্তু ফুফুর এরকম অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতে সাহস হলো না।

ঈশিতাকে তার পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসতে দেখে, নিশাতের সন্দেহ হলো। ফুপুর এ ধরনের ঘটনা ঈশিতার আবার কোন হাত নেই তো?

– ঈশিতা, তুই কিছু করেছিস নাকি?
– না আপু। করতে তো চেয়েছিলামই , তবে সেটার আর সুযোগ হলো কই? প্রকৃতিই তো ফুপুকে তার অন্যায়ের সাজা দিয়ে দিয়েছে।
– কি হয়েছে?
ঈশিতা বেশ হাসি হাসি মুখে তাকে উত্তর দিল, আপু টিভির দিকে তাকিয়ে দেখো।

নিশাত টিভিতে দেখতে পেল, একটি টিভি চ্যানেলে কোন একটা নিউজ পুনঃপ্রচার হচ্ছিল। নিউজটা আর কারোর না তার বড় ফুপুর একমাত্র গুণধরপুত্র রাকিবের। নিউজে দেখানো হচ্ছে, একটি আবাসিক হোটেল পুলিশ রেড চালিয়ে হোটেলে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বেশ কিছু মানুষকে এরেস্ট করছে। সেখানে রাকিব এবং একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে।
মেয়েটিকে দেখে নিশাত চিনতে পারল। মেয়েটি রাকিব ভাইয়ের প্রাক্তন প্রেমিকা!

নিশাতের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে গেল। সে চাপা গলায় ঈশিতাকে প্রশ্ন করল, যদি ঘটনা এটাই হয় তাহলে তো রাকিব ভাইতো আসল দোষী, তাহলে ফুপু রুমি ভাবীকে কেন দোষারোপ করছে?

ঈশিতা সহজ গলায় উত্তর দিল, কারণ… রুমি ভাবি, রাকিব ভাইকে তার শাড়ির আঁচলের সাথে বেঁধে রাখতে পারেনি তাই!!

ফুপুর মরাকান্নায় তাদের বাসা কাঁপতে থাকলো। নিশাত কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে, তার মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রাহেলা বেগম নিশাতকে বললেন, তোর বাবাকে একটা ফোন দে তো…

নিশাত তোর বাবাকে ফোন দেওয়ার উদ্দেশ্যে মোবাইলটা হাতে তুলে নিতেই… তার ফোনে জায়ানের একটি মেসেজ আসলো।
মেসেজের লেখা,
নিশাত, ‘কেমন লাগলো এই নাটক’? তোমার ফুপু কিন্তু তার উচিত শিক্ষা পেয়ে গেছে। “অহংকার পতনের মূল”। এখন থেকে তার পতন শুরু হল।

নিশাত জায়ানকে মেসেজ করল, “আপনিই কি এসব করেছেন? কিভাবে করলেন”?
প্রায় সাথে সাথেই জায়ানের নাম্বার থেকে ফিরতে মেসেজ আসলো।

সবকিছু যদি জানতে চাও…. তবে আগামী কাল রাত আটটায় তোমার বাসার সামনের “আলো- ছায়া” ক্যাফেতে চলে আসো।
“আমাদের প্রথম দেখার সাথে সাথে…. তোমার জমে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। হয়তোবা আমাকে ঘিরে থাকা রহস্য একটু হলেও উন্মোচন করতে পারবে”!!

চলবে,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ