#আড়ালে তুমি
পর্ব ৬
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল
আমি শিলার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম।আমার পাঁ হাত যেনো অবশ হয়ে গেছে। আমি তার কথার কি উত্তর দিবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারণ শিলা যা বলেছিলো
শিলাঃ দেখো নীল আমি আজকে ঘুরিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা। আমি সোজাসুজি বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই প্রথম দেখার পর থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলামনা। তবে আমার আবেগ না বিবেক খাটিয়ে সব করা লাগবে। তারপরও আমিও তো ওকে ভালোবাসি। কিন্তু ওকে কিভাবে বুঝাব আমার মতো পরিচয়হীনকে ওদের পরিবারের কেউ মেনে নিবেনা।
আমিঃ শিলা দেখো এটা হয়না। আমার কোনো পরিচয় নেই। তাছাড়া কেবল অনার্স ১ম বর্ষে উঠলাম৷ ক্যারিয়ার ঠিক করতে পারলে একটা কথা ছিলো। কিন্তু আমার তো ক্যারিয়ারের কিছুই হয়নি৷ আর সবচেয়ে বড় কথা কোন পরিচয়ে তোমাকে ভালোবাসবো বলো?
শিলাঃ আমাকে তুমি তোমার পরিচয়ে ভালোবাসবে। তুমি কেনো বুঝতে পারোনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিসের জন্য তোমার এতো কেয়ার করি আমি? কিসের জন্য আমি কারও সাথে কথা বলিনা? কিসের জন্য কোনো মেয়ের সাথে তোমাকে কথা বলতে দেইনা? তুমি কি একটুও বোঝার চেষ্টা করোনা? আমি শুধু তোমার পরিচয়ে থাকতে চাই। তোমাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।
আমিঃ তোমার বাবাকে যদি একথা বলো তোমার বাবা একটাই কথা বলবে যে আমি সম্পদের লোভে পড়ে তোমাকে ফাসাচ্ছি। কিন্তু সেই মিথ্যা অপবাদ আমি সহ্য করতে পারবোনা। এমনিতেই তুমি আমার জন্য যা করেছো তার জন্য আমি জীবন দিয়ে দিতে পারি। তবে আমাদের ভালোবাসা কেউ মেনে নিবেনা। জানো আমিও না তোমাকো অনেক বেশি ভালোবাসি। তবে আমাদের এই ভালোবাসার কোনো ভবিষ্যৎ নেই শুধু কষ্ট ছাড়া।
শিলাঃ তুমি আমাকে ভালোবাসো আগে বলোনি কেনো?
আমিঃ বামন হয়ে কিভাবে চাঁদের দিকে হাত বাড়াবো বলো?
শিলাঃ তুমি আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দাও আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে যদি তোমার বাবা এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে মেনে না নেয় তখন?
শিলাঃ ওটা আমি ম্যানেজ করবো।
আমিঃ আমিও যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। জানিনা তোমাকে ছাড়া আমার কি হবে তবে তোমাকে আমি ভালোবাসি।
শিলাঃ আমিও তোমাকে ভালোবাসি। অনে বেশি। তোমার থেকে ২ গুন বেশি। ( জড়িয়ে ধরে)
এভাবেই শুরু হয়েছিলো আমার আর শিলার ভালোবাসা। জানিনা মেয়েটা আমার মাঝে কি পেয়েছিলো তবে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। আগে কেয়ার করতো এখন আরও বেশি কেয়ার করে। আমিও তার এই পাগলামির মাঝে গভীর ভালোবাসা খুজে পেতাম।
এভাবেই ১ম বর্ষ শেষ করলাম। তবে আমাদের এই ভালোবাসা যে অন্য এক মোড় নিবে তা বুঝিনি। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। তবে ১ম বর্ষে উঠার কিছুদিন পর ঠিক সেইদিনের মতো শিলা আমাকে ডেকে পাঠায় যেদিন আমাদের ভালোবাসা শুরু হয়। আমি গিয়ে দেখি ও একা বসে আছে।
আমিঃ শিলা
শিলা আমার দিকে ফিরেতই দেখি ওর চোখগুলো রক্তলাল হয়ে আছে। সাথে চোখগুলো ফুলে আছে। আমি তাকে দেখে অনেক বেশি ঘাবরে গেলাম
আমিঃ কি হয়েছে শিলা? তুমি কাঁদছো কেনো?
শিলাঃ নীল আমার বাবা আমাকে না জানিয়েই তার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। ( ফুঁপিয়ে কান্না করছে)
আমি কি বলবো তখন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।সেইদিন যেমন আমি শক পেয়েছিলাম, আজেও শক পেলাম। তবে আজকের শক আমার হৃদয়ে আঘাত করলো। মনে হাজার কষ্ট চাপা দিয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম
আমিঃ ওহ। তা তুমি কি রাজি?
শিলা এবার আমাকে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।
শিলাঃ এতোদিনে এই চিনলে আমাকে? আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কারও হবো এটা তুমি ভাবলে কিভাবে? এই ভাবার আগেও আমি আত্মহত্যা করবো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
আমিঃ কিন্তু তোমার বাবা তো তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে
শিলাঃ ঠিক করলেই বিয়ে করতে হবে? আমি পারবোনা।
আমিঃ তাহলে কি করবে বলো?
শিলাঃ আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নীল।
আমিঃ কি সিদ্ধান্ত?
শিলাঃ আমি আর তুমি এই মূহুর্তেই কাজি অফিস গিয়ে বিয়ে করবো।
আমিঃ কি বলছো তুমি? তোমার মাথা ঠিক আছে?
শিলাঃ হ্যাঁ আমার মাথা ঠিক আছে। আর তুমি এখম আমার সাথে যাবা এটাই ফাইনাল।
আমিঃ আমি পারবোনা এই কাজ করতে।
শিলাঃ ও আচ্ছা তাহলে ৭ দিন পর আমার বিয়ে। বিয়ের দিন আমার জানাযা পড়তে চলে এসো।
কথাটা বলেই ও দৌড়ে চলে গেলো। আমি ওকে অনেকবার ডাকলেও ও আর ফিরে তাকালোনা। আমি যানি ও যেটা বললো সেটাই করবে তাই আমার অনেক ভয় হতে লাগলো। আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমি ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবোনা৷ তবে ওকে নিয়ে ওকে ভালো রাখতেও পারবোনা। রুমে এসে কান্না করছি। তখন দেখলাম আদিবা ফোন দিয়েছে
আমিঃহ্যাঁ আদিবা বলো।
আদিবাঃ কি বলবো তোমাকো? তুমিকে ওকে ফিরিয়ে দিলো কেনো?
আমিঃ আমি কি করবো বলো? আমি নিজেই কোনো রকমে দিন কাটাই। ওকে কিভাবে ভালো রাখবো? তাছাড়া ও বিলাসিতার জীবন ছেড়ে বস্তিতে থাকতে পারবেনা।
আদিবাঃ তুমি কোনোদিন ওকে বিলাসিতা করতে দেখেছো? ও যদি তোমার সাথে ভালো থাকে তাহলে ওকে মেনে নিতে তোমার সমস্যা কি?
আমিঃ দেখো তুমি বুঝতে পারছোনা।
আদিবাঃ আমি সব বুঝছি। তুমি কি চাও বলো তো? ও তোমার সাথে খুশি থাকবে নাকি নিজেকে শেষ করে দিবে?
আমিঃ আমি ওর সুখের জন্যই পিছনে ফিরে যাচ্ছি। ওকে ছাড়া আমিও ভালো থাকতে পারবোনা। তবে আমি তো শিকলে বাধা।
আদিবাঃ আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা৷ তুমি কালকে ওকে কাজী অফিসে বিয়ে করবে আর নাহয় ওর মৃত্যুর জন্য দায়ি থাকবে।
আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো। আমি বুঝতে পারছিনা কিছুই। তবে ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবোনা এটা আমি বুঝে গেছি। আচ্ছা শিলাতো আমার জন্য অনেক কিছু করেছে এবার নাহয় আমি ওর জন্য এতটুকু করি? ডিসিশন ফাইনাল ওকে আমি কালকেই বিয়ে করবো
আমি আর কোনো কিছু চিন্তা না করেই শিলাকে ফোন করলাম। প্রথমবার ও কল রিসিভ করলোনা।তারপর কল দিতে সাথে সাথে রিসিভ করলো।
আমিঃ শিলা।
শিলাঃ চুপ করে কাঁদছে
আমিঃ আমি রাজি।
শিলার যেতো দেহে প্রাণ ফিরে এসেছে। ওর এবার বলে উঠলো
শিলাঃ সত্যি? সত্যি বলছো?
আমিঃ হ্যাঁ। আমিও যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। তবে আমার সাথে থাকতে হলে তোমাকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
শিলাঃ কি রকম?
আমিঃ আমি তোমাকে আলিশান বাড়িতে রাখতে পারবোনা। আমার সাথে ছোট বাড়িতে থাকতে হবে৷ তিন বেলা মাছ মাংস খেতে খাওয়াতে পারবোনা, বেশিরভাগ সময় ডাল ভাত খেতে হবে। আমি দামি পোশাক কিনে দিতে পারবোনা। এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারবে?
শিলাঃ তোমার জন্য এতটুকু করতে পারবোনা? শুধু আমাকে ভালোবাসা দিও তাহলেই হবে।
আমিঃ তাহলে কাল সকাল ১০ টায় কাজি অফিস চলে আসবে। ও হ্যাঁ সাক্ষী ও লাগবে তো?
শিলাঃ ওটা নিয়ে তুমি টেনসন করিও না। তুমি কাল সময় মতো চলে আসবে
আমিঃ আচ্ছা।
জানিনা কি হবে পরে তবে ওকে নিজের করে পাওয়াটাই এখন আমার লক্ষ। পরের দিন সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে আমি কাজি অফিসে হাজির। এখনও ওরা আসছেনা। ১০ টা পেরিয়ে ১০ঃ৩০ বেজে গেলো তাও এলোনা। তবে এসব ভাবতে ভাবতেই একটা কার প্রবেশ করলো। দেখি ভিতর থেকে শিলা, আদিবা আর ওর হাসবেন্ড সাথে তৃপ্তি ও আছে। আমি এদের সবাইকে দেখে অনেক অবাক হয়েছি। ওরা আমার কাছে আসলো।
আমিঃ তোমরা সবাই এখানে?
আদিবাঃ কেনো আমাদের ব বান্ধবীর বিয়ে আর আমরা আসবোনা?
আমিঃ তুমি তো পাশেই আছো। কিন্তু তৃপ্তি?
তৃপ্তিঃ বারে বান্ধবীর বিয়ে আর আমি আসবোনা? পড়াশোনা তো পরেও করতে পারবো তবে বান্ধবীর বিয়ে তো আর বারবার আসবেনা।
নাহিদ ভাইঃ আরে ভাই কথা পরে বলা যাবে আগে চলে শুভ কাজটা শেষ করে দ। ( নাহিদ ভাই হলো আদিবার হাসবেন্ড)
তারপর সবাই মিলে কাজি অফিসে ঢুকলাম। আদিবা আজকেও সাধারণ লুকেই এসেছে। যাইহোক সব ঝামেলা শেষ করে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। সবাই মিলে একটু হালকা খাবার খেয়ে নিলাম। শিলা আমার হাত ধরে আছে। একটু পর আমাকে নাহিদ ভাই আড়ালে নিয়ে এলেন
নাহিদ ভাইঃ দেখো নীল তোমাদের বিয়েটা যেভাবে হলো তাতে একটু সমস্যা হতেই পারে। তবে মানিয়ে নিও। একটু কথা শুনতে হলে শুনে নিও৷ শিলা আপু তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আর বড় ভাই হিসেবে তোমাকে একটা কথা বলবো?
আমিঃ ভাই আপনি অনুমতি নিচ্ছেন কেনো? বললেন তো বড় ভাই। বড় ভাই আবার অনুমতি নেয়?
নাহিদ ভাইঃ শোনো তোমার সংসারে যদি কোনো সমস্যা হয় মানে আর্থিক সমস্যা তবে তুমি বিনা সংকোচে আমাকে বলবে। একজন বড় ভাই হিসেবে আমি তোমাকে কথাগুলো বললাম।
আমিঃ আপনি আমাদের জন্য যা করলেন তাতেই তো আপনার কাছে ঋণি হয়ে গেলাম। তারপরও যখন আপনি আমাকে ভাই বলেছেন তার জন্য আমিও আপনার কথাটা রাখবো। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই জানাবো আপনাকে।
আসলে মানুষটা অনেক ভালো আর সহজ সরল৷ এরকম মানুষ পাওয়া সত্যি অনেক দুর্লভ। আমার জন্য এতো কিছু করেও তিনি আমাকে ভাই বললেন।
যাইহোক বিয়ে তো হলো এখন? দেখি শিলাকে জিজ্ঞেস করে ও কি বলে।
আমিঃ শিলা এখম আমরা থাকবো কোথায়?
শিলাঃ এখন আমরা বাবার কাছে যাবো। যদি তিনি সবটা মেনে নেন তাহলে আমাদের আর কোনো সমস্যা থাকবেনা৷ তবে না মানলে আমার একাউন্টে কিছু টাকা আছে ওটা দিয়ে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা সংসার সাজাবো।
আমিঃ সারাজীবন আমাকে এভাবে ভালোবাসবে তো?
শিলাঃ পাগল একটা। তুমি এখন আমার সব৷ মরণ ছাড়া আমি তোমাকে ছাড়ছিনা।
আমরা একটু পর ওদের বাসায় গেলাম৷ বাইরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি তবে ভিতরে ঢুকার সাহস হচ্ছেনা। আগ বাড়িয়ে শিলা বেল বাজালো। একটু পর ওর মা দরজা খুলে দিলো।
শিলার মাঃ কিরে শিলা এই ছেলেটা কে?
শিলাঃ মা এটা তোমার জামাই। আমরা আজকে বিয়ে করে নিয়েছি?
শিলার মাঃ এটা তুই কি করলি শিলা? সামনে সপ্তাহে তোর বিয়ে আর তুই এসব কি করে বসলি?
শিলাঃ মা আমি ওকে ভালোবাসি আর ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারতাম না। তাই আজকে বিয়ে করে নিয়েছি।
শিলার মাঃ তোর বাবা বাড়িতেই আছে তোর কথা শুনলে যে কি করবে ও আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
এমন সময় শিলার বাবা পিছন থেকে বলে উঠলেন।
শিলার বাবাঃ এই কার সাথে কথা বলছো তুমি? ও শিলা তুই এসেছিস? বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেনো?
শিলাঃ ( চুপ করে মাথা নিচু করে আছে)
শিলার বাবাঃ কি ব্যাপার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছিস যে? আর এই ছেলেটা কে?
শিলাঃ ববব বাবা ওওও ততত তোমার জামাই। আমরা আজকে বিয়ে করেছি।( তোতলাতে তোতলাতে বললো)
শিলার বাবাঃ বিয়ে করেছিস মানে? এটা কোন ধরনের ফাজলামি শিলা? ( রেগে)
শিলাঃ বাবা আমি সত্যি ওকে বিয়ে করে নিয়েছি।
শিলার মাঃ দেখো তুমি শান্ত হও। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো।
শিলার বাবাঃ ৬ দিন বাদে তোর বিয়ে আর আজকে এসব কি নাটক শুরু করেছিস? ( চিৎকার করে)
শিলাঃ বাবা আমি ওকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি আর কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।
শিলার বাবাঃ এই দিন দেখার জন্য তোকে বড় করলাম? আমার মান সম্মানের কথা না ভেবেই তুই কাজটা করে বসলি? আমি এখন ওদের কি জবাব দিবো আমি? আর এই ছেলে কে তুমি?
আমিঃ চুপ
শিলার বাবাঃ এই তোমার মুখে কথা নাই? চুপ করে আছো কেনো বলো? ( রাগে চিৎকার করে)
আমিঃ আমি শাহরিয়ার কবির নীল।
শিলার বাবাঃ তোমার নাম দিয়ে আমি ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবো? তোমার পরিচয় দাও।
আমিঃ চুপ
শিলাঃ বাবা ও আমার সাথে পড়ে।
শিলার বাবাঃ তার মানে একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করলি? একটুও বিবেকে বাধা দিলোনা? নাকি আমার সম্পদ পাবার জন্য তোকে ফাসিয়েছে?
শিলাঃ বাবা আমাদের সম্পদের প্রতি ওর কোনো লোভ নেই।
শিলার বাবাঃ তোমার মা বাবা কি করে?
শিলাঃ ওর মা বাবা কেউ নেই।
শিলার বাবাঃ নেই মানে? শেষ পর্যন্ত তুই একটা এতিমের ফাঁদে পাঁ দিলি? যার কিনা পরিচয় নাই তাকে বিয়ে করলি? আমি এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নিবোনা। শিলা তুই ঘরে আই। আর এই ছেলে চলে যাও আর কখনও ওর ধারের কাছে আসবেনা। আমি তোদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি।
শিলাঃ না বাবা আমি নীলকে ছাড়তে পারবোনা। ওকে ছাড়ার কথা বললে আমি নিজের জীবন দিয়ে দিবো।
শিলার বাবাঃ তাহলে আমার বাড়িতে আজ থেকে তোর কোনো জায়গা নেই৷ চলে যা যেদিকে তোর দুই চোখ যায়। তুই আজ থেকে আমার কাছে মৃত।
শিলার মাঃ কি বলছো এসব? ভুল করে কাজটা করে ফেলেছে। তুমি ওদের মেনে নাও প্লিজ
শিলার বাবাঃ আমার শেষ কথা ও যদি এই বাড়িতে থাকে তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। আজকে এখন আর এই মুহূর্তে আমি ওকে তাজ্য পুত্রি করলাম।
শিলা মাথা নিচু করে কান্না করছে। শিলার মা বার বার শিলার বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। তবে তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটুট। শিলার মা এখন চাইলেও আর কিছু করতে পারবেনা। একটু পর শিলা বললো
শিলাঃ বাবা তুমি না সব সময় বলতে আমার সুখই তোমার জন্য সব? তাহলে আজ কেনো আমার সুখের দিকে দেখলেনা? আমি চলে যাচ্ছি বাবা। আর কোনোদিন আসবোনা৷ তবে আমার জন্য দোয়া করবে। মা তুমি বাবার খেয়াল রাখবে। আমি আমার স্বামীকে ছাড়তে পারলাম না। চলে গেলাম বাবা ভালো থাকবে। ( কাঁদতে কাঁদতে বললো)
শিলা চলে আসার সময় ওকে ওর মা আটকানোর অনেক চেষ্টা করলো। তবে সব কিছুতেই তিনি ব্যর্থ হলেন। আমরাও সেখান থেকে চলে এলাম। বাসা থেকে বের হয়ে এসে আমি শিলাকে বললাম
আমিঃ শিলা তুমি আমার জন্য কোনো সবকিছু ছেড়ে দিলে? আজ আমার নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে।
শিলাঃ পাগল তুমি এখন আমার স্বামী তোমাকে কিবাবে ছাড়ব আমি বলো? বাবার রাগ কমলে বাবা ঠিকই আমাদের মেনে নিবেন। মা অবশ্যই চেষ্টা করবে বাবাকে মানানোর।
আমিঃ জানিনা আমি তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারবো কিনা তবে মরার আগ পর্যন্ত তোমার দুটি হাত আমি ছাড়বোনা।
শিলাঃ এতেই আমার সুখ। আচ্ছা চলো একটা বাসা খুজতে হবে। আর সংসারের জন্য জিনিসপত্র কিনতে হবে। চলো আমরা তাড়াতাড়ি সব কিছু খুজে নেই। আর টাকা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। আমার কাছে ৩ লক্ষ টাকা আছে। এই দিয়েই অনেকদিন চলে যাবে। আর পড়াশোনা শেষ করে আমরা চাকরি করবো।
আমি কিছু বললাম না শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওর ভিতরটা যে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি। তবে তাও ও হাসিমুখে সব বলছে।
দুপুরে একটা হোটেলে খেয়ে বাসা খুজতে লাগলাম। বিকালের দিকে একটা বাসা পেলাম ভার্সিটি থেকে একটু দূরে। ভাড়া ৬০০০ টাকা। দুটো রুম, একটা বাথরুম আর রান্না ঘর। রাতের মধ্যে দুটো খাট নিয়ে আপাতত রাতটা পার করার মতো একটা ব্যবস্থা করলাম। আজকে আমাদের বাসর রাত হলেও কিছুই করা হয়নি।
পরেরদিন সকালে আদিবা, নাহিদ ভাই হাজির। সংসারের জন্য যা যা লাগে সব কিছু সেট করে দিলেন উনি। আমরা ছোট করে আমাদের সংসারটা গুছিয়ে নিলাম। রাতে আদিবা আর নাহিদ ভাই আমাদের বাসর সাজালেন। রাত ১০ টায় ওনারা আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলেন৷ আমি মেইন দরজা লাগিয়ে রুমে গেলাম৷ দেখি শিলা বিছানার উপর ঘোমরা দিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে এসে সালাম করতে যাবে তার আগেই আমি ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম
আমিঃ তুমি সবসময় আমার বুকে থাকবে পাঁয়ে নয়।
শিলাঃ আমি সব সময় তোমার বুকটাতেই থাকতে চাই৷
আমিঃ আচ্ছা ওযু আছে তোমার?
শিলাঃ হুম।
আমিঃ চলো আমাদের সম্পর্কটাকে নফল নামায দিয়ে শুরু করি।
তারপর আমি ও শিলা নামায পরে ওকে নিয়ে বিছানায় বসলাম। আমি ও হাত দুটো নিজের দখলে নিলাম।
আমিঃ এই হাতদুটো আমি কোনোদিন ছাড়বোনা প্রীয় কথা দিলাম তোমাকে।
শিলাঃ আমিও কথা দিলাম এভাবেই তোমার কাছে নিজেকে আবদ্ধ রাখবো।
আমিঃ চলো ঘুমিয়ে পড়ি তুমি অনেক ক্লান্ত।
শিলাঃ আজকে আমাদের বাসর রাত আর তুমি ঘুমানোর কথা বলছো?
আমিঃ তো কি করবো?
শিলাঃ আমি এখন তোমার পরিপূর্ণ ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই।
আমিঃ আজকে না হলে হয়না?
শিলা আর আমাকে একটা শব্দ করার সুযোগ না দিয়েই আমাকে ভালোবাসার পরশ দিতে লাগলো। আমিও ওকে সেদিন নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে ছিলাম৷
পরদিন সকালে উঠে দেখি ও আমার পাশে নেই৷ ওকে ডাক দিতেই দেখি ও শাড়ি পড়ে চুল মুছতে মুছতে ভিতরে এলো
শিলাঃ তুমি উঠে গিয়েছো? যাও গোসল করে নাও।আমি খাবার রেডি করছি।
আমিঃ আগে একটা পাপ্পি দিয়ে যাও।
শিলা এসে আমার কপালে একটা পাপ্পি দিলো আর আমি গোসল করে গেলাম। গোসল করে বেরিয়ে রুমে এসে দেখি শিলার নম্বরে একটা মেসেজ এলো। আমি চেক করতে গিয়ে দেখি মেসেজে লিখা
” Your account has been debited 10 lakh taka from ac *********. Your total balance 13 lakh. ”
আমি তো অবাক। কে ওকে এতোগুলো টাকা দিলো? আমি তৎক্ষনাৎ ওকে রুমে ডাকলাম।
শিলাঃ কি হয়েছে গো?
আমিঃ তোমার ফোনে একটা মেসেজ এলো। দেখোতো কিসের।
শিলা দেখলো দেখে একটু মুচকি হাসলো। আমি তখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম
আমিঃ কি ব্যাপার শিলা? এতো টাকা তোমাকে কে দিলো?
শিলাঃ আরে পাগল আমার মা পাঠিয়েছে। আমার যাতে কোনো সমস্যা না হয় তাই তিনি এটা করলেন।
আমিঃ আমার মনেহয় কি ওনাকে একবার ফোন করা দরকার।
শিলাঃ ঠিক বলেছো। আচ্ছা আমি চুলায় মাংস চড়িয়েছি তুমি একটু দেখো গিয়ে আমি কথা বলি।
আমি রান্না ঘরে চলে গেলাম আর শিলা ওর মায়ের সাথে কথা বলছিলো। শিলার মা সবটা মেনে নিলেও ওনার হাসবেন্ডের জন্য কিছু করেতে পারছেন না। ১০ মিনিট পর শিলা আসলো।
আমিঃ মা কি বললেন?
শিলাঃ মা সবটা মেনে নিয়েছেন। মা বললো প্রতিদিন ফোন দিবে আর বাবা দেশের বাইরে গেলে আমাদের এখানে এসে থাকবেন। ( অনেক খুশি হয়ে)
আমিঃ তোমার বাবা ব্যাপারটা মেনে নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
শিলাঃ বাবাও জলদি মেনে নিবেন। আচ্ছা চলো কথা বাদ দিয়ে খেয়ে নিই। তারপর কিছু কিনে নিয়ে আসত হবে।
আমিঃ কি কিনতে হবে আর?
শিলাঃ একটা ফ্রিজ নিবো, একটা মাইক্রোওভেন, ইলেক্ট্রিক চুলা আর জামা একটা ওয়ারড্রব নিবো আর ড্রেসিং নিবো।
আমিঃ এতো কিছুর দরকার আছে?
শিলাঃ হুম। আমার সংসার আমি আমার মতো করে গুছিয়ে নিবো। সাথে তোমাকেও ( একটা হাসি দিয়ে)
আমরা খেয়ে মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে আনলাম। পরবর্তী দুই দিনে আমাদের ছোট একটা সংসার জীবন শুরু হলো। শিলা এখন আর আমাকে কাজ করতে দেইনা। বিয়ের পর স্বামীরা স্ত্রীর দায়িত্ব নেয় আর আমার ক্ষেত্রে আমার স্ত্রী আমার দায়িত্ব নিলো।
আমরা আবারও আমাদের পড়াশোনা শুরু করলাম। আমরা একসাথে যাই, একসাথে আসি আর সংসাদের সব কাজ দুজন মিলেই করি। এতে আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হলো।
দেখতে দেখতে চলে গেলো ২ মাস৷ আজকে ছুটি তাই বাড়িতেই ছিলাম। দুজনে বসে গল্প করছিলাম। এক পর্যায়ে শিলা বললো
শিলাঃ নীল বাজার থেকে গরুর মাংস, পালাওয়ের চাল, দই নিয়ে আসো তো।
আমিঃ আজকে এতো আয়োজন?
শিলাঃ ছুটির দিন তাই একটু আয়োজন করবো আরকি।
আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি।
আমি বাজার গিয়ে সব কিছু নিয়ে আসলাম। তবে বাড়িতে এসেই দেখি শিলা যেনে কার সাথে কথা বলছে। রুমি গিয়ে দেখি একি এটাতে আমার শাশুড়ী। আমি ব্যাগ গুলো রেখে ওনাকে সালাম করতে গেলাম।
শাশুড়ীঃ আরে বাবা কি করছো তুমি? এসব কেউ করে?
আমিঃ না মা আসলে আপনি তো আমার গুরুজন।
শাশুড়ীঃ তোমাদের দেখে আমি অনেক খুশি হলাম৷ এতো সুন্দর ভাবে তোমরা সবকিছু সাজিয়ে নিয়েছো দেখে অনেক ভালো লাগছে। আমার মেয়ের অন্য কোথাও বিয়ে হলে হয়তো এতোটা সুখে থাকতোনা। বাহ বাড়িটা ছোট হলেও কত সুন্দর ভাবে সাজানো। আমি খুব বেশি খুশি হয়েছি।
আমিঃ আমাদের জন্য দোয়া করবেন মা।
শাশুড়ীঃ পাগল ছেলে। ছেলেমেয়ের জন্য মা দোয়া করবেনা তো কে করবে?
আমিঃ বাবা কি বাইরে গেছেন?
শাশুড়ীঃ হুম ও ১৫ দিনের জন্য দেশের বাইরে গেছে। আমি বাড়ির সব কাজের লোকদের শিখিয়ে দিয়ে এসেছি। কয়েকদিন আমি তোমাদের এই সুখের সংসারে থাকবো। তোমাদের সমস্যা হবেনা তো?
আমিঃ মা আপনি এসব কেনো বলছেন? আমার মা নেই। আপনি যখন আমার মাথায় হাত রাখলেন তখন আমি অনেক খুশি হয়েছি। পারলে আপনাকে আমি এখানেই থেকে যেতে বলতাম।
শাশুড়ীঃ চিন্তা করবেনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
শিলাঃ মা তুমি একটু আরাম করো। চলো নীল আমরা গিয়ে রান্না করি।
শাশুড়ীঃ পাগলি মেয়ে আজকে আমি রান্না করবো।
শিলাঃ মা সারাজীবন তো তোমার হাতের রান্না খেয়েছি। আজকে নাহয় তোমাকে খাওয়াই?
শাশুড়ীঃ বাহ আমার মেয়েটাতো অনেক বড় হয়ে গেছে। আচ্ছা মা আজকে আমি আমার মেয়ের হাতের রান্না খাবো।
শিলাঃ তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও
আমি আর শিলা দুজন মিলে রান্না করতে গেলাম। শিলা সব কিছু করে আর আমি ওকে সাহায্য করি। ওকে সবকিছু এগিয়ে দিয়ে আমি একটু রুমে গেলমা। গিয়ে দেখি রুমে একটা টিভি। কিন্তু টিভি কোথা থেকে আসলো? তাও যেই সেই টিভি না Samsung OLED 4k. যেটা কম করে হলেও ৬০ হাজার টাকা হবে। আমি শিলার কাছে গিয়ে বললাম
আমিঃ শিলা এতো দামি টিভি তুমি কিনেছো?
শিলাঃ না মা আসার সময় নিয়ে এসেছে।
আমিঃ এসবের তো দরকার ছিলোনা।
শিলাঃ মা নিয়ে এসেছে মাকে কিভাবে না করি? তাছাড়া ফ্রী টাইমে দুইজন মিলে রোমান্টিক মুভি দেখবো। ( হাসি দিয়ে)
আমিঃ সব তো ঠিক আছে তবে আমাকে জানাও নি কেনো মা আসবে?
শিলাঃ এতোক্ষনে এই কথা বলছো?
আমিঃ কাজের জন্য আর খুশিতে কিছু বলতে পারিনি।
শিলাঃ আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে কিছু বলিনি।
আমিঃ জানো আজ আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি।
শিলাঃ তার জন্যই তো কিছু বলিনি।
রান্না শেষে একসাথে খেতে বসলাম। খাওয়ার সময় দেখলাম আমার শাশুড়ীর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। শিলা ব্যাপারটা দেখে শাশুীকে বললো
শিলাঃ মা কি হয়েছে তোমার? কাদছো কেনো?
শাশুড়ীঃ আমার ছোট মেয়েটা আজ কত বড় হয়ে গেলো। আমাকে রান্না করে খাওয়াচ্ছে। খুব ভালো হয়েছে মা রান্না।
শিলাঃ হয়েছে মা এখন চুপচাপ খেয়ে নাও তো।
খাওয়া শেষে শাশুড়ী আর শিলা অন্যরুমে গিয়ে গল্প করছে আর আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
১০ দিন কেটে গেলো। আজকে ভার্সিটিতে এসেছি ক্লাস করতে। তবে শিলা আসেনি। ক্লাসের মাঝে দেখি ফোন বাজছে। আমি একবার কাটলে আবার ফোন আসে। জরুরি ভেবে ধরতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম৷
শিলার ফোন থেকে আমার শাশুড়ী ফোন দিয়েছিলো। তবে ফোন করে তিনি যা বললেন তা শুনে আমার হাত পাঁ কাঁপতে লাগলো। মূহুর্তের মধ্যেই যেনো আমি আমার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলালম। কারণ আমার শাশুড়ী আমাকে যা বললেন…………………….
চলবে……………….