আড়ালে তুমি পর্ব – ৩

0
1088

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৩
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

অফিস শেষ করে আমি রিফাতকে আনতে গেলাম। গিয়ে দেখি রিফাতকে কোলে নিয়ে বসে আছে এক বোরকা পরা মেয়ে। ভালোভাবে লক্ষ করে দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম এটা তো শিলা ম্যাম। তিনি এখানে কি করছেন। আমি দ্রুত গেলাম ওনার কাছে।

আমিঃ আরে ম্যাম আপনি এখানে কি করছেন?

শিলা ম্যামঃ আসলে এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তখন মনে পড়ল আপনি তো আপনার ছেলেকে চাইল্ড কেয়ারে রেখে গেছেন৷ তাই একটু খোজ নিতে এসেছিলাম।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম এসবের কি প্রয়োজন আছে? মা হারা ছেলেকে যদি এভাবে স্নেহ করেন তাহলে কখন আমার মায়ের কথা বলে বসে কে জানে। আর আমি এসব সহ্য করতে পারবোনা।

শিলা ম্যামঃ কিছু হবেনা। তাছাড়া একটু আদর করলো সমস্যা কোথায়?

আমিঃ আদর করতে করতে তার ভিতর মায়ের জন্য ভালোবাসা জেগে উঠবে। তখন মায়ের জন্য মন খারাপ করবে। আর ওর মন খারাপ থাকলে আমি সহ্য করতে পারবোনা।

শিলা ম্যামঃ তাহলে একটা বিয়ে করে ওর জন্য মা নিয়ে আসুন। আর কতদিন এভাবে ছেলেকে এভাবে রাখবেন। আর বয়স তো আপনার অনেক কম।

আমিঃ একবার আবেগ জড়িয়ে যে ভুল করেছি তা আর করতে চাইনা। একটা ভুল আবেগে জড়িয়ে আজ তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছি। ছেলেটাও কষ্ট পাচ্ছে। আমি আর চাইনা কারও মিথ্যা আবেগে জড়াতে। নিজের ছেলেটাকে মানুষ করতে চাই।

শিলা ম্যামঃ কি হয়েছে আপনার সাথে খুলে বলবেন?

আমিঃ থাকনা ম্যাম এসব কথা শুনে কি লাভ? আমার ক্ষতটা আবার জাগিয়ে তুলার দরকার নাই।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা থাক। আচ্ছা নীল সাহেব আমি গেলাম আমার কিছু কাজ আছে।

আমিঃ আচ্ছা ম্যাম।

ম্যাম চলে যাবার পর আমি রিফাতকে নিয়ে বাড়ি গেলাম। রাতে আমি রিফাত, রফিক ভাই একসাথে খেয়ে ভাই নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেলেন।

রিফাতকে নিয়ে শুয়ে আছি আর বলছি

আমিঃ বাবা তোমার যে আন্টি তোমার সাথে দেখা করে উনি কি বলেন তোমাকে?

রিফাতঃ কিছুনা বাবা। কিন্তু চকলেট নিয়ে আসেন আমার জন্য আর আমাকে আদর করেন।

আমিঃ বাবা আজ থেকে অপরিচিত কারও কোনো জিনিস নিবেনা।

রিফাতঃ কেনো বাবা? আন্টি তো খুব ভালো।

আমিঃ নিবেনা বলছি নিবেনা। ( একটু কড়া গলায়)

রিফাতঃ আচ্ছা বাবা।

আমিঃ তোমার স্কুল কেমন লাগছে?

রিফাতঃ তোমাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগেনা বাবা।

আমিঃ সবার সাথে মিলেমিশে খেলবে কেমন? তাহলে দেখবে তোমার অনেক ভালো লাগবে।

রিফাতঃ আচ্ছা বাবা সবার সাথে খেলব।

আমিঃ আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

যাক বুঝাতে পেরেছি তাহলে। ছেলেটা ছোট হলেও সব বুঝে। আমিতো ভেবেছিলাম অনেক কষ্ট করতে হবে ওকে মানিয়ে নিতে তবে দেখলাম না সমস্যা নাই। যাক একটু স্বস্তি পেলাম।

সকালে উঠে রিফাতকে রেখে আবার অফিস গেলাম। আজ ম্যাম তার কেবিনে ডাকেনি তাই সরাসরি এসে রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ বুঝিয়ে নিলাম।

আমার পাশের ডেস্ক ফাঁকা দেখি তবে আজকে কাজ করার সময় দেখলাম একটা মেয়ে বসে আছে সেখানে। আমার থেকে ২ বছরের বড় হবে মনেহয়। যাই হোক সেদিকে মন না দিয়ে আমি কাজে মনোযোগ দিলাম। লাঞ্চ টাইমে রফিক ভাইয়ের সাথে খেয়ে আসলাম৷ নতুন মেয়েটা কারও সাথে কথা বলছেনা আর কাজও নিজে নিজেই করছে। হয়তো আগে কোথাও কাজ করতো তাই অভিজ্ঞতা আছে।

বিকালে কাজ শেষ হলো। ছুটির এখনও ১ ঘন্টা বাকি। তাই বসে বসে মোবাইল টিপছিলাম। তখন পাশের ডেস্কের মেয়েটি বললো

মেয়েটিঃ হ্যালো।

আমিঃ হাই।

মেয়েটিঃ আমি তাসলিমা আক্তার বর্না।

আমিঃ আমি শাহরিয়ার কবির নীল

মেয়েটিঃ তা কেমন আছেন আপনি?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা আপু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

মেয়েটিঃ করুন।

আমিঃ আপনি কি কোনো জায়গায় আগে কাজ করতেন?

বর্নাঃ হুম আগে একটা অফিসে কাজ করতাম৷ এই কোম্পানিতে সার্কুলার দেখে আবেদন করেছিলাম৷ জব হয়ে গেছে তাই এখানে এসেছি।

আমিঃ তাহলে আমি ঠিক ধরেছি।

বর্নাঃ হুম৷ আজ থেকে ফ্রেন্ডস?

আমিঃ ওকে

বর্নাঃ তুমি করে বলতে হবে কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা।

একটুপর রফিক ভাই আসলেন।

রফিক ভাইঃ নীল কাজ শেষ হয়েছে তোর? গল্প করছিস যে?

আমিঃ ভাই আসলে আমাদের নতুন কলিগের সাথে কথা বলছিলাম৷ আর আমার কাজও শেষ।

রফিক ভাইঃ হাই আমি রফিক মাহমুদ।

বর্নাঃ আমি তাসলিমা আক্তার বর্না।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা তোমার সাথে পরে কথা হবে। আর নীল তোর ফাইলগুলো দে।

আমি ফাইলগুলো রফিক ভাইকে দিলাম৷ ভাই নিয়ে চলে গেলেন। সেইদিনের মতো কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসলাম।

এইভাবে দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে গেলো। আমি এখন বড় কাজও করতে পারি। আমার কাজের দক্ষতা আর মনোযোগ দেখে সবাই অনেক খুশি। শিলা ম্যাম এখনও রিফাতের সাথে দেখা করতে যায়। তবে কিছু বলিনা। এমনিতেই তো বস। বেশি কথা বলিনা তার সাথে।

এদিকে রফিক ভাই আর বর্নাও অনেক ক্লোজ হয়ে গেছে। আমরা তিনজনই এখন ভালো বন্ধু। তবে রফিক মনেহয় বর্নাকে পচ্ছন্দ করে। আমি জানি যে তার অক্ষমতার জন্য তিনি কিছু বলতে পারেন না।

আজকেও যথা নিয়মে অফিস এলাম। কিছুক্ষন পর দেখি একজন মধ্য বয়স্ক লোক অফিসে এলেন। তাকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন। আমিও তাদের দেখাদেখি দাঁড়িয়ে গেলাম তবে ব্যাপারটা বুঝলাম না।

আমিঃ রফিক ভাই?

রফিক ভাইঃ বল।

আমিঃ এই মধ্যবয়স্ক লোকটা কে?

রফিক ভাইঃ আরে ইনি তো এই কোম্পানির মালিক।

আমিঃ মানে?

রফিক ভাইঃ এই কোম্পানির আরও আরও ২টা শাখা আছে। ম্যাডাম এই কোম্পানি দেখাশোনা করেন। আর স্যার সিলেটের কোম্পানি দেখাশুনা করেন। আরেকটা ওনার জামাই দেখাশোনা করেন।

আমিঃ ম্যামের বাবা ইনি?

রফিক ভাইঃ না। ম্যামের সম্পর্কে আমরা সেইরকম কিছু জানিনা। ম্যাম আগে সিনিয়র অফিসার হিসেবে জয়েন করেছিলো। তারপর ১ বছর দেখাশোনা করার পর স্যার সিলেটে শিফট করেন আর এই কোম্পানির দায়িত্ব ম্যামকে দিয়ে যান৷ আর সিফাত ভাই ম্যানেজার ছিলেন তিনিই আছেন। প্রথমে ম্যামকে বসের দায়িত্ব দেওয়াতে সবাই অবাক হয়েছিলাম। পরে উনার কাজ আর ওনার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হয়েছি।

আমিঃ আচ্ছা।

বর্নাঃ কি নিয়ে কথা বলছো তোমরা?

আমিঃ কিছু না আপু ( বর্নাকে আমি এখন আপু বলে ডাকি)

বর্নাঃ চলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। সবাই মিলে খেয়ে আসি।

আমিঃ চলো

তারপর আমরা তিনজন গিয়ে খাবার খেয়ে এলাম। আজে স্যার অফিসেই ছিলেন। অফিস ছুটি হবার আগে তিনি কেবিন থেকে বাইরে আসেন। তারপর সবার উদ্দেশ্য বলেন

স্যারঃ সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আমি আজকে অফিস এসেছি একটা জরুরি ঘোষনা দেওয়ার জন্য। আসলে আমার মেয়ের কালকে ৩য় বিবাহ বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে আমি একটা পার্টির আয়োজন করেছি আমাদের বাসায়। অফিসের সকলকে আসার জন্য অনুরোধ করছি। আর প্রতিবার অনুষ্ঠান এখানে করার কারণ হচ্ছে আমি শুরু করেছিলাম এই অফিস থেকে তাই এখানে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ৩ দিন পর অনুষ্টান হবে আপনারা সকলেই আমন্ত্রিত। আর সেই সাথে আমার ঘরে নতুন সদস্যও আসতে চলেছে তাই এই খুশি আমি সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই।

আমরা সকলে স্যারকে অভিনন্দন জানালাম। একটু পর সবাই নিজের ডেস্কে চলে গেলো। অফিস ছুটির ১০ মিনিট আগে স্যার আমার ডেস্কে আসলেন। আমি ওনাকে আমার ডেস্কে দেখে অনেকটা অবাক হলাম।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।

স্যারঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো ইয়াং ম্যান?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ স্যার৷ আপনি কেমন আছেন?

স্যারঃ আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি আর অনেক খুশিও। তা তোমার কাজ কেমন চলছে?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ স্যার ভালোই চলছে।

স্যারঃ আমি অফিসের সকলের রিপোর্ট দেখেছি। তবে তোমার রিপোর্ট আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এতো কম সময়ে কাজ শিখে নিয়েছো। Well done young man.

আমিঃ ধন্যবাদ স্যার। দোয়া করবেন।

স্যারঃ তোমাদের সকলের জন্য আমার দোয়া আছে।
আচ্ছা সময় শেষ হয়ে এলো। আমি যায়। আর পার্টিতে পুরো ফ্যামিলি নিয়ে আসবে কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা স্যার।

স্যারঃ Good bye young man.

এই বলে স্যার চলে গেলেন৷ বড়ই অমায়িক মানুষ তিনি। একজন কর্মচারীর সাথে এইরকম আচারন সত্যি প্রশংসনীয়। আর এদের ব্যবহারের কারণেই হয়তো আল্লাহ এদের এতো সফলতা দিয়েছেন।

কাজ শেষ করে রিফাতকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম৷ রিফাত এখন পুরোপুরি মানিয়ে নিয়েছে আর আগের তুলনায় একটু চঞ্চল হয়েছে৷ এতে ভালোই হয়েছে আমার।

রাতে খাবার খেতে গিয়ে রফিক ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন

রফিক ভাইঃ কিরে নীল স্যার আজকে তোকে কি বললো?

আমিঃ তেমন কিছুনা।

রফিক ভাইঃ আরে বলনা।

আমিঃ আসলে আমার কাজ নাকি তার অনেক ভালো লেগেছে। কম সময়ের মধ্যেই কাজ শিখে নিয়েছি তাই একটু তারিফ করলেন আরকি।

রফিক ভাইঃ আসলেই তো তুই অনেক তাড়াতাড়ি কাজ শিখে নিয়েছিস। এভাবে কাজ করলে আমি সিওর ৬ মাসের মধ্যে প্রমোশন পাবি।

আমিঃ এখনই ভালো আছি ভাই। তবে পেলেও খারাপ হয়না।

রফিক ভাইঃ আমাকে প্রমোশন পেতে ১.৫ বছর লেগেছে। আর অনেকেই ৩ বছর ধরে অফিসার পদেই কাজ করছে।

আমিঃ সবাই এক রকম হলে তো সমস্যা হয়ে যেতো।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা তুই কি পার্টিতে যাবি?

আমিঃ যাবো তো ভাবছি। স্যার আবার বলে গেছেন। না গেলে খারাপ ভাবতে পারেন। কেনো তুমি যাবেনা?

রফিক ভাইঃ তুই যখন যাচ্ছিস আমিও যাবো।

আমিঃ স্যার তো নাকি এখানেই পার্টি করেন।এর আগে যাওনি?

রফিক ভাইঃ নারে। প্রতিবার কাজের বাহানায় এড়িয়ে গিয়েছি। তবে তুই যখন যাবি আমিও যাবো।

আমিঃ আচ্ছা। চলো খেয়ে নি।

খাওয়া দাওয়া করে আমি রিফাতকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন অফিস গেলাম। কাজ করছিলাম এমন সময় পিয়ন এসে বললো ম্যাডাম নাকি আমাকে ডাকছে। আমি দেরি না করে ম্যামের কেবিনে গেলাম।

আমিঃ ম্যাম আসতে পারি?

শিলা ম্যামঃ ও নীল সাহেব আসুন।

ভিতরে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে আর ম্যামের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

আমিঃ ম্যাম কোনো কাজ ছিলো?

শিলা ম্যামঃ হ্যাঁ একটা কাজ আছে। ( বলে একটা ফাইল এগিয়ে দিলেন) এই ফাইলটা নাও আর ৭ দিনের মধ্যে এটা কমপ্লিট করে দিবা।

আমিঃ আচ্ছা ম্যাম।

শিলা ম্যামঃ আর ইনি হলেন আমাদের বসের মেয়ে।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম ম্যাম৷

বসের মেয়েঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমাকে ম্যাম বলছেন কেনো?

আমিঃ আপনি তো বসের মেয়ে তাই ম্যাম বলছি।

বসের মেয়েঃ আমি ফরজানা চৌধুরী নিরা। আর আমি আপনার ছোট হবো তাই ম্যাম না বলে নাম ধরেই ডাকবেন।

আমিঃ কি যে বলেন না। আমি আপু বলবো আপনাকে।

নিরাঃ আচ্ছা এটাও চলবে।

আমিঃ আচ্ছা আপু আসি। আমার কাজ পড়ে আছে।

নিরাঃ আচ্ছা ভাইয়া। আর পরশু অবশ্যই আসবেন কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা আপু।

ম্যামের কেবিন থেকে বের হয়ে গেলাম। গিয়ে ফাইল চেক করছি। কাজটা আমার করা কাজগুলোর মধ্যে অনেক বেশি কঠিন। যদিও এটা করতে ৪ দিন লাগবপ আমার আর ম্যাম ৭ দিন সময় দিয়েছে। যাক ভালোই হলো। রিল্যাক্স হয়ে কাজ করতে পারবো।
হাতে একটা ছোট কাজ আছে৷ আজকে শেষ করে বাসায় গিয়ে এই কাজটা শুরু করবো। আর ছোট কাজ গুলো করার পাশাপাশি এই কাজটা করবো।

সেদিনের মতো অফিস শেষ করলাম। কাল বাদ পরশু পার্টি আছে। তাই আজকে রিফাতকে নিয়ে মার্কেট গেলাম ওর জন্য জামা কাপড় কিনতে। কিনা শেষে বাসায় আসলাম।

রাতে রফিক ভাইয়ের সাথে ক্ষেতে বসে রফিক ভাই বললেন

রফিক ভাইঃ নীল আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলবি?

আমিঃ কি কথা?

রফিক ভাইঃ আসলে তোর জীবনে কি কি ঘটেছে আমাকে বলবি?

আমিঃ শুনা খুব জরুরি?

রফিক ভাইঃ না আসলে আমি জানতে চাই।

আমিঃ আচ্ছা তুমি যখন জানতে চেয়েছো তখন আমি বলবো। তবে হাতের কাজটা আর শেষ করি। যদিও আমার পুরোনো ক্ষতটা জেগে উঠবে তবে তোমাকে বলবো আমি৷

রফিক ভাইঃ আচ্ছা সমস্যা নাই।

হায় আল্লাহ এখন আবার আমার অতীত খুলে বলতে হবে৷ ইচ্ছা বা থাকলেও আমি রফিক ভাইকে না করতে পারবোনা৷ ছোট ভাইয়ের মতোই উনি আমাকে ভালোবাসেন। যাক বলেই দিবো।

আজ অফিসে গিয়ে সেরকম কাজ ছিলোনা আমার তাই হাতের কাজটাই শুরু করলাম। এর মাঝে একটা কাজ এসেছিলো তবে ১ ঘন্টায় ওটা শেষ করে আবার কাজে হাত দিয়েছি।। দুই দিনেই অর্ধেক শেষ। একটু পর ম্যামের ডাক পেলাম।

আমিঃ ম্যাম আসবো?

শিলা ম্যামঃ আসুন। বাকি সবাইকে তো ঠিকই বোন ভাই ডাকছেন তাহলে আমাকে শুধু ম্যাম বলেন কেনো?

আমিঃ আপনি তো আমার বস।

শিলা ম্যামঃ বস হয়েছি বলেই কি আমি সবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছি নাকি?

আমিঃ না আসলে তা নায়।

শিলা ম্যামঃ এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবে৷

আমিঃ আচ্ছা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা তোমার কাজ কিরকম চলছে?

আমিঃ ভালোই চলছে।

শিলা ম্যামঃ সময়ের আগে শেষ করতে পারবা?

আমিঃ সমস্যা নাই। আমি যথা সময়ে শেষ করে তোমার হাতে তুলে দিবো।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে একটু সাবধানে করবা।

আমিঃ আচ্ছা৷

শিলা ম্যামঃ আর কালকে পার্টিতে যাবেনা?

আমিঃ হুম যাবোতো। কেনো তুমি যাবেনা?

শিলা ম্যামঃ যাবো। এই ব্যাগটা রাখো। ( আমার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললেন)।

আমিঃ কিসের ব্যাগ ম্যাম?

শিলা ম্যামঃ তোমার আর রিফাতের জন্য পাঞ্জাবি আছে এতে।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম এসবের কোনো দরকার নেই তো।

শিলা ম্যামঃ প্লিজ ফিরিয়ে দিওনা।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম এসবের কি দরকার ছিলো?

শিলা ম্যামঃ আমার মনে হয়েছে আমি দিয়েছি। ( একটু রেগে)

আমিঃ আচ্ছা নিলাম।

শিলা ম্যামঃ এগুলো পরে পার্টিতে আসবে কিন্তু।

আমিঃ আচ্ছা আসবো।।

ম্যামের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম। মনে মনে ভাবছি ম্যাম এতোকিছু করছে কেনো? ম্যাম কি দয়া দেখাচ্ছেন? না মন থেকে দিচ্ছেন? যাই হোক মন থেকে ঝেড়ে ফেললাম আর আবার কাজে মন দিলাম।

অফিস শেষ হবার আগে শিলা সবাইকে বলে দিলো যে আগামীকাল অফিস ছুটি থাকবে তবে পার্টিতে আসতেই হবে। যাক বাবা কালকে বৃহস্পতিবার আর পরশু শুক্রবার টানা দুই দিন কড়া করে একটা ঘুম দিবো।

অফিস শেষে বের হয়ে গেটের সামনে বর্না আর রফিক ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওদের কাছে গিয়ে বললাম

আমিঃ কি ব্যাপার আপু বাসায় যাবেনা?

বর্নাঃ যাবো তবে কালকের জন্য একটা শাড়ি কিনতে যাবো তাই রফিককে সাথে নিলাম। তুমিও চলো।

আমিঃ না আপু আমি রিফাতকে আনতে যাবো। তুমি রফিক ভাইয়ের সাথে চলে যাও।

বর্নাঃ আচ্ছা। কালকে পার্টিতে দেখা হবে তাহলে।

আমিঃ আচ্ছা।

রফিক ভাই আর বর্না চলে গেলো। যাক ভালোই চলছে ওদের কেমিস্ট্রি। আমিও চাই ওদের মিল হোক। আমি জানি রফিক ভাই বর্নাকে পচ্ছন্দ করে। তবে তিনি বাবা হতে পারবেন না তাই হয়তো বলতে ভয় পান। কারণ সব মেয়েই মা হতে চাই৷

আমি রিফাতকে নিয়ে বাসায় এলাম। রাতে খাবার পর সাহস করে রফিক ভাইকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম বর্নার ব্যাপারে।

আমিঃ একটা কথা বলবা? সত্যি করে বলতে হবে।

রফিক ভাইঃ কি কথা?

আমিঃ আচ্ছা তুমি কি বর্না আপুকে ভালোবাসো?

রফিক ভাইঃ কি বলছিস? আমি কেনো ওকে ভালোবাসতে যাবো?

আমিঃ সত্যিটা আমি বুঝি।

রফিক ভাইঃ কচু বুঝিস।

আমিঃ আমার মাথায় হাত দিয়ে বলো তাহলে।

রফিক ভাি একবার একটু ঘাবরে গেলেন।

রফিক ভাইঃ ইয়ে মানে মানে

আমিঃ লজ্জার কিছু নেই বলে ফেলো।

রফিক ভাইঃ হ্যাঁরে। ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে আমার কিছু করার নেই। আমি তো কোনোদিন বাবা হতে পারবোনা

আমিঃ বলেও তো দেখতে পারো। রিজেক্ট করলে করবে।

রফিক ভাইঃ তখন যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট করে?

আমিঃ ওটা আমি দেখে নিবো।

রফিক ভাইঃ তবে আমি কিছু বলতে পারবোনা।

আমিঃ আচ্ছা আচ্ছা আমিই কালকে পার্টিতে আপুকে বলবো।

রফিক ভাইঃ বলে দেখিস।

তারপর রফিক ভাই চলে গেলো। আমি রুমে গিয়ে কিছুক্ষন কাজ করে রিফাতকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ছুটি থাকায় দেরি করে উঠালাম। উঠে নাস্তা করে কাজ করতে বসলাম। সন্ধ্যায় পার্টিতে যেত হবে তার আগে একটু কাজ করে রাখি। কাজ করতে বসালম।
দুপুরে খেয়ে আবার ছোট করে একটা ঘুম দিলাম।

পার্টিতে যাবার আগে একটু সেভ করে নিলাম। রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। আমি রিফাতকে রেড়ি করার জন্য ওর পাঞ্জাবি আনতে গেলাম। একটু ভাঁজ পরে আছে দেখে ইস্ত্রি করলাম।

ওকে রেডি করতে এসে যা দেখলাম তা দেখে আমার হাসি বেরিয়ে গেলো।
আমি দেখলাম রিফাত…………………

চলবে……………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে