#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ১৮
মৌমিতা:দয়া করে ছেড়ে দাও আমায়।আমি তো ইচ্ছে করে কিছু করিনি।আহহহ..
দীর্ঘ ৩০ মিনিট ধরে আশরাফ এবং কাব্যের হাতে বাজেভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে মৌমিতা।অনেক মিনুতি করেও তাদের থামাতে পারছে না।
আশরাফ:তোর ঐ ছেলের জন্য আমি আজ প্রভা কে পেলাম না।আর তুই বলছিস তোকে ছেড়ে দেবো?
মৌমিতা:আ আমি তো নিরব কে কিছু জানাইনি।আহহ
কাব্য:কিসের প্রমাণ আছে তুই ওকে কিছু জানাসনি?তোর জন্য আমি প্রভা কে ছেলের বউ করতে পারলামনা।আমার কতো বড় লস হলো তুই জানিস!যাহ,তোর দুই দিনের খাওয়া বন্ধ।
কথাটা বলেই ঠাস করে রুমের দড়জা আটকে দিয়ে চলে যায় আশরাফ আর কাব্য।মৌমিতা আহত শরীর নিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে যায় মাটিতে।
বর্তমান—
হুট করে গাড়ি থেমে যাওয়ায় চমকে ওঠে ইশা। ভাবলো হসপিটাল বোধ হয় এসে গেছে।তবে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলো এখনো আসেনি।
ইশা:এখানে গাড়ি থামালে কেনো?
উজ্জ্বল:থামাইনি।মেবি টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে।তুমি একটু বসো আমি দেখছি।
উজ্জ্বল এবার নেমে গেলো।ইশা চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলো কতোই না সুখের দিন ছিলো সেগুলো।
কিছুক্ষন পর উজ্জ্বল আবারো গাড়িতে এসে বসে এবং গাড়ি স্টার্ট দেয়।ইশা বরাবরের মতো জানালার দিকে মাথা ঠেকিয়ে দেয়।চোখ বন্ধ করে আবারো ডুব দেয় ভাবনায়।
৫ বছর আগে——
প্রভা আর নিরব এর বিয়ের প্রায় তিন মাস কেটে গেছে।এই তিন মাসে নিরব প্রতিটা মুহূর্তে প্রমাণ করেছে সে তার দিয়াপাখিকে কতটা ভালোবাসে। কিন্তু ইদানিং প্রায় সাত দিন ধরে সবটা কেমন যেনো বদলে যাচ্ছে।সিনথিয়া আগেও আসতো এ বাড়িতে তবে খুব একটা সময় পেতো না।সেখানে সিনথিয়া এখন প্রায় প্রতিদিন আসে এখানে। আর নিরব যখন বাড়িতে থাকে তখন ই।প্রভার সাথে কথা না বলেই সোজা নিরব এর রুমে চলে যায়। প্রথম প্রথম প্রভার মনে কিছু খারাপ চিন্তা বাসা বাধলেও সে তা সরিয়ে ফেলে।ভেবে নেয় যে শালিরা তো দুলাভাই এর সঙ্গে হাসি তামাসা করবেই।
কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু আরো বারতে থাকে। গত ১০ দিন ধরে তো সিনথিয়া বাসায় ই যায় না, এখানেই থাকে।প্রভার সঙ্গে থাকে তেমন টা নয়। বরং প্রভা একটু গল্প করতে চাইলে দে বিরক্ত হয়। প্রভা ক্লাস এর ফাকে নিরব এর সঙ্গে কেবিনে দেখা করতে গেলেও দেখে সিনথিয়া সেখানে বসে আছে।বাধ্য হয়ে ফিরে আসে সেখান থেকে।
,,
ক্লাস শেষ করে মাত্র বাড়িতে এলো প্রভা।নিরব এর বাবা ব্যাবসার সূত্রে বাহিরেই থাকে।বাসায় এসে কোথাও খুজে পেলোনা সিনথিয়া কে।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে ডাইনিং টেবিল এর সামনে গিয়ে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
সঙ্গে সঙ্গেই তার ফোনে একটা কল আসলো। রিসিভ করতেই দেখলো এটা তাদের পাশের বাড়ির প্রিয়াঙ্কা আন্টি।
প্রভা:আসসালামু আলাইকু আন্টি।কেমন আছেন?
প্রিয়াঙ্কা:আছি ভালোই।তা তুমি কেমন আছো বলো?
প্রভা:আলহামদুলিল্লাহ আন্টি।বেশ ভালো আছি।
প্রিয়াঙ্কা:তা নাহয় বুঝলাম।কিন্তু সিনথিয়া কে তো ইদানিং বাড়িতেই দেখিনা।আবার সেদিন রাস্তায় দেখলাম তোমার জামাই এর সঙ্গে।সব ঠিক আছে তো?
প্রভা:আ আন্টি আপনি কি বলতে চাইছেন?সব তো ঠিক ই আছে।আর সিনথু তো আমার এখানেই থাকে।
প্রিয়াঙ্কা:দেখো মা,আমি তোমার মায়ের মতো তাই বলছি।পুরুষ মানুষের কোনো ভরসা নেই,একটু দেখেশুনে রেখো কেমন?তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাইছি?
প্রভা:আন্টি আপনি এসব কি বলছেন।নিরব তেমন ছেলেই নয়।আমার ওর উপর পুড়ো ভরসা আছে।
প্রিয়াঙ্কা:দেখো বাবু আমরা বাইরের মানুষজন তোমাদের ভিতরের খবর আর কি করেই বা রাখবো।সাবধান করলাম শুধু।কথায় আছে না, সত্য কথা বললে মানুষের গায়ে লাগে।
প্রভা:আন্টি আমি রাখছি।
প্রিয়াঙ্কা:হ্যা হ্যা রাখো।তবে আবারো বলছি, নিজের স্বামীকে নিজের কাছে বেধে রাখতে শেখো।নাহলে পরে পস্তাবে।এই আমি বলে রাখলাম,হুহ..
কথাটা বলেই ফোন টা কেটে দিলেন প্রিয়াঙ্কা। এদিকে প্রভা শত চেষ্টা করেও প্রিয়াঙ্কার বলা কথাটা ভুলতে পারছে না।
ঠিক তখনি কলিং বেল টা বেজে ওঠে।প্রভা গিয়ে দড়জা খুলতেই দেখে সিনিথিয়া আর নিরব একসঙ্গে ভিতরে আসছে।বাকিদিনের মতোই নিরব প্রভা কে পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে যায়।সিনথিয়া চলে।প্রভা ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।গাল বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরে তার।কগে তো নিরব হসপিটাল থেকে ফিরেই প্রথমে ওকে জড়িয়ে ধরতো আর এখন!
গত এক মাসে নিরব ওকে একদিনের জন্য ও রাতে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে বলে মনে পরেনা প্রভার।আর তার আগে তো প্রভা কে ছাড়া তার ঘুম ই আসতোনা।
প্রভা আর ভাবেনা।সোজা চলে যায় রুমের দিকে। আজ নিরব এর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করতেই হবে।
দড়জার সামনে জেতেই আবারো ঝটকা খায় প্রভা।দু পা পিছিয়ে রেলিং এর সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়।পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে তার।ভিতরে সিনথিয়া নিরব কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।নিরব ও কোনো বাধা দিচ্ছে না।
প্রভা ছুটে চলে যায় সেখান থেকে।সিনথিয়া যেই ঘড়ে থাকে সেখানে গিয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠে। মুখ চেপে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করে সে।পরক্ষনে আবারো চোখ মুছে নেয় সে।এখনো নিরব কে অবিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
পরিকল্পনা করে সিনথিয়ার সঙ্গে কথা বলবে।
প্রায় ৫ মিনিট পর সিনথিয়া রুমে আসলো। প্রভা কে রুমে দেখে সামান্য ভ্রু কুচকালো সে।
সিনথিয়া:আপু তুই এখানে কি করছিস?
প্রভা:তোর সঙ্গে আমার কথা আছে।
সিনথিয়া:দেখ আমি খুব টায়ার্ড।তুই সর তো এখান থেকে।
প্রভা:তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো সিনথু?আগে তো বলতিস না?
সিনথিয়া:এখন আমি কিভাবে কথা বলবো তা কি তোর থেকে শিখতে হবে?
প্রভা:আমি কঅথা বাড়াতে চাচ্ছি না সিনথু।আমি তোকে এটাই জিজ্ঞেস করতে চাই,তুই বাড়ি যাচ্ছিস না কেনো?
সিনথিয়া:হোয়াট!তুই এখন আমাকে এই প্রশ্ন করছিস?
প্রভা:দেখ সিনথু,আমি ভেবে চিন্তেই বলছি।তুই এখানে থাকলে বাহিরের মানুষ অনেকে নানান ধরণের কথা বলে।তুই জানিস আজকে প্রি..
সিনথিয়া:জাস্ট স্টপ ইট!তোর সাহস কি করে হয় আমাকে এই বাড়ি থেকে বেরোতে বলার।মনে রাখিস,বাড়ি টা কিন্তু তোর না।বাড়িটা নিরব ভাইয়ার।
প্রভা:সিনথুউউউ….
নিরব:সিনথু তো ঠিক ই বলেছে।তুমি কোন সাহসে ওকে চলে যেতে বলো।বাড়িটা আমার।তাই এ বাড়িতে কাকে রাখবো না রাখবো সেটা সম্পূর্নই আমার ব্যাপার। (দড়জা থেকে ভিতরে ঢুকে বললো নিরব)
প্রভা:নির তুমি ওর জন্য আমায় ধমকাচ্ছো?
নিরব:নিশ্চুপ
প্রভা:কি হলো চুপ করে আছো কেনো?নাকি আমি এখন পুড়োনো হয়ে গেছি? (নিরব এর কলার চেপে ধরে কান্নারত হয়ে বলে)
নিরব:প্রভায়ায়া..
প্রভা:আমি এখন দিয়া থেকে প্রভা হয়ে গেলাম? (মলীন কণ্ঠে বলে প্রভা)
নিরব চুপ করে থাকে।প্রভা কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে যায়।না খেয়েই শিয়ে পরে বিছানায়।কিছুক্ষন পর নিরব ও এসে শুয়ে পরে। প্রভা এখনো ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।যেই মানুষটা এক ফোটা চোখের জল সজ্য কররে পারতো না সে আজ ওকে এভাবে কাদতে দেখেও কিচ্ছুটি বলছে না।কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরে প্রভা।
কিন্তু পরের সকালটা ছিলো অন্যরকম।কানে ধুক ধুক আওয়াজ আসতেই ঘুম টা ভেঙে যায় প্রভার।চোখ খুলতেই ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে প্রভার।খুশিতে চোখের কার্ণিশে জল এসে ভীর জমায়।নিরব তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আজ প্রায় এক মাস পর সে তাকে জড়িয়ে ধরলো।প্রভার মন থেকে সকল ভয় কেটে যেতে লাগলো।বরং নিজের ই খারাপ লাগছে।কাল নিরব এর সঙ্গে ওভাবে ব্যাবহার করা উচিৎ হয়নি।আজ অবশ্যই সরি বলে নিতে হবে।
একবার উঠে যাওয়ার চিন্তা করেও উঠলো না প্রভা।সেই শান্তির স্থলে,তার প্রেমিক পুরুষের বক্ষে আবারো ঘুমিয়ে পরলো।
কিন্তু পরবির্তিতে ঘুম ভাঙতেই দেখলো নিরব তার পাশে নেই।তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে পুড়ো বাড়ি খুজলো কিন্তু কোথাও পেলো না, সিনথু কেও না।আজ শুক্রবার তবুও কই গেলো দুজন।
বেশি কিছু না ভেবে রুমে চলে গেলো।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়।কারণ বিছানায় একজন লোক শুয়ে আছে।প্রভা ভয় পেয়ে যায়।
প্রভা:আ আপনি কে?আমার ঘড়ে কি করছেন?
নিরব:তা তো তোমার ভালো জানার কথা। (রক্তচক্ষু নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো নিরব)
প্রভা:ন নিরব এ এই লোকটা কে? (দৌড়ে গিয়ে নিরব কে জড়িয়ে ধরে বলে)
নিরব:(এক ঝটকায় প্রভা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে)তোর সাহস কি করে হয় আমার বাড়িতে থেকে অন্য একজনের সাথে পরিকিয়া করার?
প্রভা:নিরব এসব কই বলছো তুমি?আমি এই লোকটাকে চিনিও না।আ আপনি বলুন,আপনি এখানে কি করছেন?
লোকটি:টেনশন করোনা জান,তোমার এতো ভয় পেতে হবেনা।তুমি ওনাকে সত্তিটা বলে দাও। আমরা এখান থেকে দূড়ে চলে যাবো।
প্রভা:(ঠাস করে লোকটার গালে চড় মারে) কি আবোল তাবোল বলছেন আপনি?
নিরব:একদম মিথ্যে কথা বলবি না।আর ওনার নাটক করে কি লাভ?
প্রভা:নিরব তুমি আমায় বিশ্বাস করোনা?
নিরব:বিশ্বাস করতাম।তবে এখন আর করিনা।
প্রভা:নিরববব…
নিরব কিছু না বলে সোজা আলমারির কাছে চলে যায়।একটা কাগজ বের করে প্রভার সামনে এসে ছুড়ে মারে ওর মুখের উপর।
নিরব:নেহ,ডিভোর্স পেপার।আমি সাইন করে দিয়েছি।নিজেও সাইন করে নিস,ভেবেছিলাম তোকে পরে বলবো।কিন্তু আর এক মুহূর্ত ও নয়। বেড়িয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার।
বর্তমান—-
গাড়ি ব্রেক করায় হকচকিয়ে উঠলো ইশা।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো হসপিটাল এসে গেছে।তড়িঘড়ি করে উজ্জ্বল এর আড়ালে চোখের কার্নিশে জমে থাকা জল মুছে নিলো সে।অতঃপর দুজন একসাথে প্রবেশ করলো হসপিটাল এর ভিতরে।
যতটা সামনে যাচ্ছে ইশার বুকের ভিতর ধুক ধুক করছে।হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।যেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
লিফট এ চার তলায় উঠে যায় প্রভা আর নিরব। লিফট থেকে বেড়িয়ে আনমনে কিছুটা সামনে এগোতেই হঠাত করে একটা বাচ্চা ছেলের সাথে সামান্য ধাক্কা খায়।
#চলছে
[অতীত শেষ করলাম অবশেষে😑 এখন থেকে বর্তমান এই থাকবো।জানি সবার কাছে কিছুটা কনফিউশন এখনো আছে।সেটা নেক্সট পার্ট এ মিটে যাবে।]