#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ৯
নিরব:আমি জিজ্ঞেস করেছি তুমি এখানে কেনো এসেছো? (বেশ জোড়ে কথাটা বলে)
মহিলাটি:নিরব,আমি তোর মা।তোর সঙ্গে দেখা করার জন্য কি আমার কোনো কারণ দেখাতে হ…
নিরব:ওয়েট ওয়েট! কি বললে তুমি?তুমি আমার কে?
মহিলা:আ আমি তোর মা…
নিরব:হা হা হা হা,মা মা মা…কে মা হ্যা?কিসের মা?কোন দিক দিয়ে নিজেকে আমার মা দাবি করেন মিসেস মৌমিতা আফরোজা?
মৌমিতা:তুই এসব বলতে পারিস না নিরব।আমি তোকে ন মাস গর্ভে ধারণ করেছি আর ত..
নিরব:শুধু জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায়?
মৌমিতা:নিশ্চুপ..
নিরব:বলুন!এখন চুপ করে আছেন কেনো?মা হওয়ার কোন দায়িত্ব টা পালন করেছেন আপনি? মাদার্স ডে তে যখন সবাই মায়ের হাত ধরে স্কুল এ যেতো তখন আপনি কোথায় ছিলেন?তখন মনে পরেনি নিজের ছেলের কথা?না না,মনে পরবে কেনো?তখন তো আপনি লাইফ ইনজয় করতে ব্যাস্ত।জ্বর হলে যখন মায়েরা সন্তানদের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।আপনি কোথায় ছিলেন যখন আপনার সন্তান জ্বরের ঘোড়ে বারবার মা কে ডেকেছে?হাহ,আপনি এখন আমার কাছে এসেছেন মায়ের অধিকার নিয়ে?লজ্জা করে না আপনার?
শাড়ির আচল মুখে চেপে ধিরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে মৌমিতা।তবে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে,তবে তাতে নিরব এর কিছু যায় আসেনা।মৌমিতা নিরব এর সামনে এসে ওর দু হাত নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে অনুরোধ এর স্বরে বলে,
মৌমিতা:এমন ভাবে বলিস না বাবা।আমি আর সজ্য করিতে পারছিনা।
নিরব এক ঝটকায় মৌমিতার হাত ছাড়িয়ে আঙুল উঠিয়ে বলে,
নিরব:এখন আপনি সজ্য করতে পারছেন না তাইতো?তাহলে আমি কি করে সজ্য করেছি?
ছাড়ুন তো আপনি,আপনার সাথে এসব কথা বলার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার।কেনো এসেছেন সেটা বলুন
মৌমিতা:আমি যা করেছি তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি কিন্তু তুই আমায় ফিরিয়ে দিস না বাবা।
নিরব:হাহ,কেনো?আপনার ছেলে বুঝি খোজ রাখেনা?আর আপনার হাজবেন্ড?
মৌমিতা:ও এ একজন খুনি।একজন খারাপ মানুষ ও।আমি আর থাকতে চাই না ওর কাছে।তুই আমায় তোর কাছে নিয়ে আয় বাবা।
নিরব:ওহ হো তাহলে এই ব্যাপার।কিন্তু আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে মা বলে স্বিকার করে নেবো তবে সেটা আপনার ভুল ধারণা।চলে যান এখান থেকে।আমি আর আপনাকে চোখের সামনে দেখতে চাইনা।গেট আউট ফ্রম হেয়ার। (ধমকের স্বরে বলে কথাটা)
মৌমিতা আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।আঁচলে মুখ গুজে কাদতে কাদতে বেড়িয়ে যায় কলেজ থেকে।
নিরব এর চোখ দুটো ইতিমধ্যে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।কপালের শিরাগুলো ফুলে উঠেছে খানিকটা।রেগে গিয়ে হাত মুঠি করে সজোরে গাছের সাথে ঘুষি মারে।খানিকটা ছিলে যায় হাতটা।সেসবে পরোয়া না করে স্থান ত্যাগ করে নিরব।
এতক্ষণ ধরে আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো প্রভা।দেখতে পেলেও কোনো কথাই শুনতে পারেনি। তবে মহিলাটিকে খুব চেনা চেনা লাগছিলো তার,কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিলো না।কিন্তু পরিশেষে নিরব এর এমন রূপ দেখে সে অবাক হয়ে গেছে।এর আগে নিরব কে কখনো এমন অবস্থায় দেখেনি সে।নিজের অজান্তেই বুকের মাঝে ধক করে ওঠে প্রভার।
কাধে কারোর স্পর্শ টের পেয়ে পিছন ঘুড়তেই দেখে অঙ্কিত দাঁড়িয়ে আছে।পরক্ষনেই মাথায় আসে অঙ্কিত তো নিরব এর বেস্ট ফ্রেন্ড। ও নিশ্চই ওর ব্যাপারে সব কিছু জানে।
প্রভা:ভাইয়া ঐ মহিলাটি..
অঙ্কিত:নিরবের মা
প্রভা:মা!
অঙ্কিত:হুম মা।
প্রভা:ত তবে মা হলে ওভাবে রেগে কথা বললেন কেনো?আর
অঙ্কিত:উনি শুধু নামেই মা,তবে নিরব ওনাকে মা বলে মানেনা।
প্রভা:কিন্তু কেনো?
অঙ্কিত:তোর নিরব এর ব্যাপারে এতো জানার আগ্রহ কেনো বল তো?
প্রভা এবার থতমত খেয়ে যায়।কাপা কাপা গলায় বলতে থাকে,
প্রভা:আব না ম মানে।
অঙ্কিত:হয়েছে আর বলতে হবেনা।জানতে যেহেতু চেয়েছিস বলবো তোকে।তবে আজ না,অন্য একদিন।আজ আমি আসি,ভালো থাকিস।
।।
অঙ্কিত ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি।মুখে তার একরাশ অভিমান বিদ্যমান। দুজনের মাঝের নিরবতা ভেঙে অঙ্কিত বলে ওঠে,
অঙ্কিত:আব আমার তোমাকে কিছু বলাদ ছিলো।
সুপ্তি:ওহ,আরো কিছু বলা বাকি আছে বুঝি?
অঙ্কিত:দেখো তুমি আমাকে ভুল..
সুপ্তি:ব্যাস অনেক হয়েছে।আগেরদিন আপনি বলেছিলেন আজ আমি বলবো আর আপনি শুনবেন
অঙ্কিত:নিশ্চুপ…
সুপ্তি:সেদিন আমি আপনার কাছে প্রেম নিবেদন দিতে আসিনি ভাইয়া।এসেছিলাম সোহা আপুর ব্যাপারে সব সত্তিটা জানাতে।তবে আপনি কি করলেন?হাজারো জ্ঞান শুনিয়ে দিলেন আমায়। ভালোবাসলেই যে তাকে কাছে পেতে হয় এমন কোনো কথা নেই ভাইয়া।হ্যা আমি স্বিকার করছি আপনার প্রতি আমার আলাদা অনুভুতি রয়েছে, ভালোবাসি আমি আপনাকে।কিন্তু আমি কখনো আপনার কাছে তার দাবি চাইতে যেতাম না, কখনো না।কিন্তু আপনি তো আমার কোনো কথাই শুনলেন না।
অঙ্কিত:সেদিনের কথার জন্য আম রিয়ালি সরি। কিন্তু আজ আমি যা বলবো সেটাও তোমায় শুনতে হবে।
সুপ্তি:নিশ্চুপ
অঙ্কিত:আমি হয়তো সোহা ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা।
সুপ্তির মুখটা মলিন হয়ে যায়।যেটুকু আশার আলো দেখেছিলো সেটুকু ও নিভে যায়।
অঙ্কিত:আমি সোহাকে কখনো ভুলতে পারবোনা। ওর জায়গাটা আমি কাউকেই দিতে পারবোনা।তবে আমি চাই কেউ নতুন করে নিজের জায়গা তৈরি করে নিক।
সুপ্তি অবাক হয়ে তাকায় অঙ্কিত এর পানে।
অঙ্কিত:সেটা আর কেউ নয় সুপ্তি।সেটা তুমি।হ্যা তুমি,আমি চাই তুমি নতুন করে নিজের জায়গা তৈরি করে নাও।নিজের ভালোবাসা দিয়ে আমার ভালোবাসা অর্জন করে নাও।আমি জানি তুমি পারবে।তাই তো আমি পাশে চাই তোমাকে।জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমার তোমাকে পাশে চাই সুপ্তি।থাকবে?আমার পাশে।
সুপ্তির চোখ টলমল করছে।যেনো এখনি জল গড়িয়ে পরবে।অঙ্কিত কিছুক্ষন থেমে আবার বলে,
অঙ্কিত:আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই সুপ্তি। বিয়ে করবে আমায়?
চোখে জমে থাকা এবার গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে। এ দুঃখের অশ্রু নয়,এ যে সুখের অশ্রু।নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার খুশি যে কোনো ভাবেই প্রকাশ করা যায় না।
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সুপ্তি,ঝাঁপিয়ে পরে অঙ্কিত এর বুকে।অঙ্কিত সজত্নে হাত বুলিয়ে দেয় তার মাথায়।সুপ্তি কাদতে কাদিতে বলে,
–হ হ্যা,থাকবো আমি,থাকবো আপনার পাশে।সারাজীবন আপনার পাশে থাকতে চাই আমি অঙ্কিত,থাকতে চাই..
দূর থেকে সবটা দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো প্রভা।পরক্ষনেই একরাশ ভয় এসে কাবু করলো তাকে।সুপ্তি তো তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেলো কিন্তু রোদেলা?তার কি হবে!
দেখতে দেখতে কেটে গেলো সাত টে দিন।যতই দিন যাচ্ছে ধীরেধীরে প্রভা নিরব এর প্রতি দূর্বল হয়ে পরছে।তাদের ঝগড়ার পরিমাণ ও আগের থেকে বেশ কিছুটা কমেছে তবে এখনো প্রতিদিন ই তাদের ঝগড়া চলে।
আজ রোদেলার বিয়ে।কনে সেজে নিজের ঘড়ে বসে আছে রোদেলা।চোখ থেকে টুপটুপ করে জল গড়িয়ে পরছে তার।রোদেলার বিয়ে এটা জানার পর ও রোদ্দুর একটিবার এর জন্য তার সাথে যোগাযোগ করেনি।
“”ভেঙে গেলো বিশ্বাস,হেরে গেলো আমার ভালোবাসার জোড়,পারলামনা আমি তোমার মনে জায়গা করে নিতে।আর মাত্র কিছুক্ষণ। তারপর আমি অন্যকারো।সারা জীবন এর জন্য হারিয়ে ফেলবো তোমায়।শেষ করে দিলে রোদ্দুর,সব কিছু শেষ করে দিলে তুমি।আমার বিশ্বাস কে ভেঙে চুরমার করে দিলে তুমি।তবুও তুমি ভালো থেকো।আমি নাহয় তোমাকে আড়ালেই অনুভব করে যাবো””(মনে মনে বললো রোদেলা)
অন্যদিকে,,,,,,
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট এর ধোয়া ওরাচ্ছে রোদ্দুর।প্রকৃতি টা আজ বড্ড শান্ত হলেও শান্ত নেই তার মন।
“”আর মাত্র কিছুক্ষন।তারপর তুমি অন্যকারো।অবশ্য আমি এতো ভাবছি কেনো বলতো?আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে?কেনো মনে হচ্ছে,কেউ আমার হৃদয় ধাড়ালো ছুরি দ্বারা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে?
আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।চাইনি তো তোমায় আমার জীবনে জড়াতে।আজ তো আমার ইচ্ছায় পূরণ হচ্ছে,আমার তো খুশি হওয়া উচিৎ!তবে কেনো আমি খুশি হতে পারছিনা?
হাহ,প্রতিটা উত্তর ই আমার কাছে আছে।তবে সেই উত্তর গুলো নাহয় শুধু আমার মনেই থেকে যাক। ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় রোদপাখি।তোমার পাগলামি আমায় বাধ্য করেছে।তবে আমি চাইনা তোমাকে,চাইনা তোমাকে নিজের করে পেতে, চাইনা তোমায় নিজের জীবনের সঙ্গে জড়াতে। তুমি নাহয় দূড়ে থেকেই ভালো থেকো।আমি তোমায় আড়ালেই অনুভব করে গেলাম””
#চলবে