আমার শহরে তুমি পর্ব-২৫

0
1577

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২৫
,,,,,,
,,,,,,
৩মাস দেখতে দেখতে কেটে গেলো রাত আর সাবিহার বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে এসেছে আসলেই সময় কারোও জন্য অপেক্ষা করে না বাবার মৃত্যুর পর মা অনেকটাই ভেঙে পরেছিল কিন্তু এখন ততটাই সে নিজেকে মজবুত করে নিয়েছে।হয়তো আমাদের কথা ভেবে সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে মায়ের সাথে রোজই কথা হয় ভালোমন্দ সবই মা এখন দেখছে।
সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আমরা সবাইকে রাতের সিদ্ধান্ত জানাই।সবাই অনেকটা খুশি হয় দাদীমা অনেক বেশি খুশি হয়েছে ইদানিং আমি সাহারা রায়জাদাকে মা বলে ডাকা শুরু করে দিয়েছি সে তো রাতের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে শেষ।কিন্তু রাত strictly বলে দিয়েছে সে কোনো আয়োজন চায় না তার বিয়েতে শুধুমাত্র কয়েকজন কবুল পরিয়ে সাবিহাকে বাসায় নিয়ে আসবে যদি এরকম না হয় তাহলে সে বিয়ে করবে না। আমরা সবাই তার কথায় রাজি হয়ে যাই কিন্তু সাবিহার বাবা কোনো ক্রমেই মেনে নিতে চাননি সাবিহা বুঝানোর পর সে রাজি হয়েছে।সারার বিয়ে হয়ে গেছে প্রতীকের সাথে সে আমাদের বাসায়ও এসেছিল রাত তাদের সাথে ভালো মতো কথা বলেছে কারো ভিতরই কোনো জড়তা ছিল না।
রক্তিম তার ভার্সিটি নিয়ে একটু ব্যস্ত কারণ ভাইয়ের বিয়ে বলে সে লম্বা ছুটি নিবে শুধু রাতের বিয়ের জন্যই না রক্তিম আমাকে নিয়ে পাহাড়ের রাজ্যে যেতে চায় রাতের বিয়ের পরই আমরা সেই ভ্রমনে বের হবো।

এসবের মধ্যে একটা কথা হচ্ছে ইদানিং আমার শরীরটা বেশ খারাপ যাচ্ছে মাথা ঘোরা,বমি হওয়া কোনো কিছু খেলে বমি হয়ে যায়।কেন জানি মনে হচ্ছে সুখবর আসতে যাচ্ছে তাইতো এসবের লক্ষণ দেখে শাশুড়ী মা আর মা দুজনই ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চায়।আমি রক্তিমকে কিছু বলে নি উনি তো আমাকে প্রথমদিনই ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছেন আমিই যাইনি আর তাকে তো সারপ্রাইজ দিবো।
হঠাৎ রক্তিম আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই আমি নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসি।সে আমাকে বললো,
~কী ভাবছো এতো?
আমি বললাম,
~এইতো কিছু না।
রক্তিম বললো,
~গত ৭দিন ধরে তোমার শরীরটা ভালো না।ডক্টরের কাছে যেতে প্রবলেম কী?
আমি বললাম,
~যাবো তো পরে এখন আপনি যান ভার্সিটি।দেরি হচ্ছে না আপনার
রক্তিম বললো,
~হুমম আজকে পরীক্ষার খাতা জমা দিতে হবে। আজ থেকে ফ্রী হয়ে যাবো রাতের বিয়েরও মাত্র ২দিন বাকি।
আমি বললাম,
~হুম।
রক্তিম ভার্সিটির জন্য বের হয়ে যেতেই আমি, মা,আর শাশুড়ী মা বের হয়ে গেলাম ডক্টরের ক্লিনিকের জন্য।
প্রায় ২০মিনিট পর ক্লিনিকে পৌছালাম ডক্টরের সাথে দেখা করে নিজের সব প্রবলেম বললাম সে কিছু টেস্ট দিয়ে দিলো তা করিয়েই আমরা বাসায় চলে আসলাম।রির্পোট কালকে দিবে বাসায় গিয়ে দেখি আমার দুইভাই হাজির। আরিফ জারিফ কে দেখে আমি বললাম,
~তোরা এখানে?
আরিফ বললো,
~আপু ২দিন এখানে থাকবো।
আমি অনেক খুশি হয়ে গেলাম কতোদিন পর আবার সবাই একসাথে।আর আমি যেটা ভাবছি যদি সেটা হয় তাহলে তো আরো বেশি খুশি হয়ে যাবো।ওদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা মেরে রুমে এসে পরলাম মাথাটা ভার হয়ে আছে ঘুমের প্রয়োজন আমি ফ্রেশ হয়ে একটা আপেল খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

রক্তিম ভার্সিটির সবকাজ শেষ করে চলে যায় শপিং করতে অধরার জন্য সে নিজ পছন্দরের শাড়ি কিনে,তার সাথে ম্যাচিং করে চুড়ি, কানের দুল সবকিছুর বিল পে করে সে রওনা হলো বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় পৌছে দেখতে পায় সোফার রুমে আড্ডার জলসা সবাইকে দেখে রক্তিম অনেক খুশি হয় সে সবার সাথে কুশলাদি করে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সে অধরাকে খুজে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ আরিফ বললো,
~দুলাভাই,আপু তো উপরে এভাবে চারপাশ খুজে লাভ নেই।
আরিফের কথা শুনে রাত আর জারিফ হো হো করে হেসে দেয় আর বড়রা মুখ টিপে হাসছে। রক্তিম উঠে দাড়িয়ে বিনা লজ্জায় বললো,
~শালাবাবু নিজের বউকে খোজা কোনো অপরাধ না আর তোমার আপু ছাড়া আমার আবার চলে না তাই আমি উপরে চলে যাচ্ছি পরে কথা হবে।
রক্তিম কথা শেষ করে উপরের দিকে চলে গেলো বাকি সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার পাণে।
রক্তিম ঘরে ঢুকে দেখে অধরা গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রক্তিম মুচকি হেসে কার্বাড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে সে অধরার পাশে শুয়ে পরলো তারপর অধরার দিকে ঘুরে একদৃষ্টিতে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।এভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর রক্তিম অধরার গালে তার ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো।ঘুমের মধ্যেই অধরা কপাল কুচকে বুঝালো তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে তা দেখে রক্তিমের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে।অধরার চোখ পিটপিট করে খুলে রক্তিমকে এভাবে দেখে অবাক হয় পরক্ষনেই সে নিজেকে সামলে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।

ঘুমের মধ্যে গালে স্পর্শ পেয়ে চোখ পিটপিট করে খুলে দেখি রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাকে দেখে আমি বললাম,
~আপনি কখন আসলেন?
রক্তিম বললো,
~এইতো মাত্র আসলাম।তোমার শরীর কী বেশি খারাপ লাগছে।
আমি হেসে বললাম,
~না এখন ঠিক আছি।আজ আপনি একটু বেশিই ক্লান্ত তাই না?
রক্তিম বললো,
~তাতো বটেই।তোমার জন্য একটা শাড়ি এনেছি দেখেতো পছন্দ হয় নাকি?
বলেঔ আলমারি থেকে দুটো শপিং ব্যাগ বের করে আমার সামনে রেখে দিলো আমি শাড়ি বের করে দেখলাম।আসলেই শাড়িটা অনেক সুন্দর আমি ঠোঁটের হাসিটা আরো চওড়া করে বললাম,
~অনেক সুন্দর।
রক্তিম গর্বের ভঙ্গিতে বললেন,
~দেখতে হবে না পছন্দটা কার?
তার কথা শুনে আমি হেসে উঠলাম।রক্তিম আমার হাসি দেখে নিজেও হেসে উঠলো রাতের খাবারের পর যে যার ঘরে চলে গেলো আমি আর রক্তিম রুমে এসেই শুয়ে পরলাম আমি ভাবছি আগামীকাল রিপোর্টে কী আসবে?আমি কী সত্যিই মা হতে চলেছি একথাটি ভাবতেই আমার হাত পেটে চলে যায়।আগামীকালের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম

সকালে রেডি হচ্ছি রিপোর্ট আনতে যেতে হবে।রক্তিমকে সাথে করে নিয়ে যাবো সারপ্রাইজটা কীভাবে নিবে কে জানে?আমি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে ঘুরে দেখলাম রক্তিম মোবাইল হাতে বসে আছে আমাকে দেখেই বললো,
~আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমি বললাম,
~গেলেই তো দেখতে পাবেন।
রক্তিম আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হলো আমিও তার পিছে পিছে বের হয়ে আসলাম যাওয়ার আগে আমার মা আর শাশুড়ি মা দুজনই বললেন সাবধানে যেতে।
আমি আর রক্তিম গাড়ির পিছনের সীটে বসে পরলাম গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে।কিছুক্ষন পর আমরা ক্লিনিকের সামনে চলে আসলাম রক্তিম অবাক হয়ে বললেন,
~এখানে কেন?
আমি বললাম,
~একদম চুপ।
আমি আর রক্তিম ডক্টরের সামনে বসে আছি তার হাতে আমার রিপোর্ট রক্তিম কিছু না বলে অবাক নয়নে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে।ডক্টর রির্পোট চেক করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললেন,
~Congratulation mrs Odhora.you are pregnant
ডক্টরের এতটুকু কথায় আমার শরীরের পুরো রক্ত হিম হয়ে গেলো সত্যিই আমি মা হতে চলেছি ছোট এক অস্তিত্ব আমার মাঝে বেড়ে উঠছে আমাকে কেউ মা বলে ডাকবে।ভাবতেই তো কতো ভালো লাগে বাস্তবে যখন হবে তখন আমি কী করবো?
আমার সুখের মাঝে আমি রক্তিমের কথা ভুলে গেছি রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখি সে চুপচাপ বসে আছে।তাকে নীরব দেখে আমি বললাম,
~কী হয়েছে?
রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~বাসায় যেতে হবে অধরা সবাই অপেক্ষা করছে।
বলেই আমার হাত ধরে অতিসাবধানে গাড়িতে গিয়ে বসিয়ে দিলো।ড্রাইভারকে কিছু টাকা দিয়ে চলে যেতে বললো আর নিজে ড্রাইভ করতে শুরু করলো।রক্তিমের এমন নীরবতা আমার ভিতরে ভয় সৃষ্টি করছে সে কী এই বাচ্চা চায়না একথা ভাবতেই তো আমার আত্মা কেঁপে উঠে।রক্তিম একধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে তার মনে যে তুফান চলছে তা আর কেউ জানে না এই তুফান খুশীর তুফান বাবা হবে সে ছোট একটা প্রাণ তাকে বাবা বাবা বলে ডাকবে উফফ এই দৃশ্য ভাবতেই তো তার সুখের ঢেউ শুরু হয়ে যায়।রক্তিম গাড়িটা একজায়গায় দ্বার কড়িয়ে সীটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,
~অধরা,ধন্যবাদ এতো বড় একটা উপহার তুমি আমায় দিচ্ছো।কোনো দিন ভাবিনি তোমায় পাবো কিন্তু এখন দেখো তুমি আমার সন্তানে মা হতে যাচ্ছো।
এতটুকু বলে চোখ খুলে অধরার দিকে তাকিয়ে অধরার চোখ দিয়ে পানি পরেই যাচ্ছে রক্তিমের প্রতিটা কথা তার মনকে ছুয়ে দিয়েছে।
রক্তিম তার দুইহাত প্রসারিত করে বললো,
~একটু বুকে আসো তো।
অধরা অপেক্ষা না করে ঝাপিয়ে পরে রক্তিমের বুকে অধরাকে পরম আবেশে তার বাহুডরে আবদ্ধ করে।

বাসায় আসতেই সবাই আমাদের দিকে অদ্ভুত নয়নে তাকিয়ে আছে।আমি তাদের অবস্থা দেখে মুচকি হেসে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম সবাই বুঝে গেলো আমার কথা রক্তিম আর আমাকে অনেক অভিনন্দন জানালো।তারপর নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে পরি।অনেকটা ক্লান্ত লাগছে ক্ষুধাও লেগেছে তাই ফ্রেশ হতে চলে গেলাম শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখি রক্তিম টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে আমাকে দেখে সে বললো,
~খাবারটা খেয়ে নেও।
আমি খাবার শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেম রক্তিম আমার পাশে শুয়ে বললো,
~রাতের বিয়েতে কোনো প্রকার দৌড়াদৌড়ি করবে না।যদি দেখেছি এখান থেকে সেখানে গেতে তোমার খবর আছে।
রক্তিমের থ্রেড শুনে আমি অসহায় মুখে মাথাদুলালাম সারাদিন আমার এভাবেই কেটে গেলো কেউ আমাকে কোনো কাজ করতে দিলো না আমি শুধু চেয়ে দেখলাম।

পরেরদিন সকালে সবাই ব্যস্ত রাতের বিয়ের জন্য আমি রুমে বসে বসে হাই তুলছি।শাশুড়ি মা এসে বললো,
~অধরা ক্ষুধা লেগেছে?খাবার আনবো?
আমি বললাম,
~আর কতো খাবো?পেট ফুলে যাবে
শাশুড়ি মা হেসে বললো,
~এই সময় বেশি বেশি খাবার খেতে হবে। শক্তি বাড়ে ফল বেশি করে খেতে হবে
আমি শুধু মাথাদুলালাম।
রাতে আমি রক্তিমের দেওয়া শাড়িটা পরে রেডি হয়ে বসে আছি।তখনই রাতের ঘরে যাওয়ার জন্য ডাক পরলো আমি আস্তে ধীরে উঠে রাতের ঘরে চলে গেলাম।রাত বরবেসে দাড়িয়ে আছে তাকে ঘিরে সবাই দাড়িয়ে আছে রাত আমাকে দেখে বললো,

চলবে।।।

( বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে