আমার শহরে তুমি পর্ব-২৩

0
1271

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২৩
,,,,,
,,,,,
রক্তিম বিছানায় শুয়ে আছে মূলত সে অধরার জন্য অপেক্ষা করছে। রাতের খাবারের পর রক্তিম রুমে আসলেও অধরা তার মাকে সাহায্য করবে বলে রান্নাঘরে চলে যায়।রক্তিম এভাবে শুয়ে থাকতে অনেক boring লাগছে তাই সে অধরার study table এর চেয়ারে বসে পরলো তারপর অধরার একেকটা পুরোনো খাতা দেখতে লাগলো অধরার লেখা দেখে রক্তিম মনে মনে বললো,
~এই মেয়ের লেখা তো দিনের দিন খারাপ হচ্ছে।কী যে করি এটাকে নিয়ে
এসব ভাবছিল তখনই কেউ রক্তিমের হাত থেকে খাতা টেনে নেয় রক্তিম মাথা উঁচু করে দেখে অধরা খাতা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে তার মুখে রাগ স্পষ্ট।
রক্তিম বললো,
~কী হয়েছে এমন মুখ করে রেখেছো কেন?
রক্তিমের প্রশ্ন শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমার খাতা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে আর আমাকেই বলছে কী হয়েছে আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,
~আপনি আমার খাতা কেন দেখছিলেন?
রক্তিম বললো,
~মনের সুখে দেখছিলাম আর তোমার লেখনী দেখে তো মন পুরো দুঃখে ভরে গেলো।ছি ছি কী অবস্থা?আমার অনেক ভালো একটা ছাত্রী আছে তার হাতের লেখা অনেক সুন্দর চাইলে তার থেকে ট্রেনিং নিতে পারো।
রক্তিমের কথায় আমার গা পিত্তি সব জ্বলে গেলো আমি রেগে গিয়ে তাকে কিছি না বলে খাতা টেবিলে রেখে চলে গেলাম বিছানায় অন্যপাশে মুখ করে শুয়ে পরলাম।অনেক কষ্ট লাগছে সে কীভাবে পারলো আরেকজনের সাথে আমাকে তুলনা করতে ব্যাটা খচ্চর কোনোদিন কথা বলবোনা।আমার চোখে পানি চলে আসলো।আসলে কেউই নিজের প্রিয় মানুষের মুখে অন্যজনের প্রশংসা শুনতে চায় না।কান্নার ফলে আমি বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছি
রক্তিম বুঝতে পেরেছে আজ তার মজাটা একদম ভুল পথে গিয়েছে তার প্রিয়তমা একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে।রক্তিম ধীরপায়ে অধরার পাশে শুয়ে পরলো তারপর তাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে তার কানে ফিসফিস করে বললো,
~হয়েছে তো আর কান্না করো না ভুল হয়েছে আমার
রক্তিম আমাকে এসে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কথা বলছেন আমি তার সাথে কথা বলবো না যা করার করে নেক।
রক্তিম আমাকে কোমড় জড়িয়ে ধরে তার দিকল ফিরাতে চেষ্টা করে কিন্তু আমার জন্য তা করতে পারছেন না অনেক চেষ্টার পর আমাকে তার দিকে ফিরাতে সক্ষম হলেন।আমি চোখ বন্ধ করে আছি দুচোখ দিয়ে পানি পরেই যাচ্ছে রক্তিম আমার দুচোখে ঠোঁট ছুয়িয়ে পানি গুলো মুছে দিয়ে বললো,
~আর কান্না করো না আমি ভুল করেছি। আর কোনো দিন এমন করবো না
আমি কোনো কথায় বলছি না তাই সে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে রাখলো আমি তাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলে সে আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
~কেন এমন করছো প্রিয়তমা?তুমি কী জানো না তোমার এই অধম যে তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না।
আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললাম,
~আপনি অন্য একজন মেয়ের সাথে আমার কীভাবে তুলনা করতে পারলেন?
রক্তিম বললো,
~আর করবো না সরি ময়না পাখি।
আমি আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম ঘুম প্রয়োজন আমার।রক্তিম আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো
দুজনই ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো এই বাসার সবাই সুখের ঘুম দিতে ব্যস্ত কিন্তু এই সুখের ঘুমের পর যে বিষাদের সকাল অপেক্ষা করছে তা হয়তো কেউ জানে না।

,,,,,
,,,,,,
ফজরের আযান কানে আসতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।রক্তিমকে সরিয়ে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে জায়নামাজ নিয়ে দাড়িয়ে পরি নামাজে।নামাজ শেষ করে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তিম উবু হয়ে ঘুমিয়ে আছে।জায়নামাজ ঠিক জায়গায় রেখে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম রুমে ভালো লাগছিল না মা মনে হয় রান্নঘরে তাই রান্নাঘরে ছুটলাম কিন্তু মাকে কোথাও দেখলাম না। মা তো সবসময় নামাজ পরেই ভাইদের ডাকাডাকি করে তাহলে আজ কেন?আমি মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলাম ভিতর থেকে কোনো আওয়াজ আসলো না হয়তো ঘুম থেকে এখনি উঠে নাই।আমি দরজার সামনে থেকে সরে আসতে নিবো তখনই দরজা খোলার আওয়াজ শুনে পিছে ঘুরতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।মায়ের কান্না দেখে আমার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো আমি বললাম,
~মা কী হয়েছে?
মা কোনো কথা না বলে কান্না করছে আমি মাকে ছাড়িয়ে ভিতরে গিয়ে দেখি বাবা চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছেন কোনো হেলদোল নেই আমি কাঁপা কাঁপা হাতে বাবার হাত ধরলাম একদম ঠান্ডা আমি চিৎকার দিয়ে বললাম,
~মা আরিফ জারিফকে ডাকো বাবাকে হাসপাতালে নিতে হবে।
মা বললো,
~দেরি হয়ে গেছে অধরা,তোর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
বলেই ফ্লোরে বসে সে কান্না শুরু করলো আমি সেখানেই স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম বাবার হাতটা আমার হাতে রেখে বাবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম দুচোখ বেয়ে পানির বন্যা জড়ছে।
রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গলো কারো চাপা কান্নার আওয়াজে সে ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলো খেয়াল করলো রুমের দরজা খোলা এরমানে অধরা বাহিরে রক্তিম আর অপেক্ষা না করে বাহিরে চলে গেলো।বাহিরে এসে দেখতে পেলো অধরার বাবার ঘরের মেঝেতে বসে অধরার মা কান্না করছে।রক্তিম দেরি না করে রুমের ভিতর গিয়ে দেখে অধরা তার বাবার হাত ধরে বিছানার কাছে বসে।রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে বললো,
~অধরা কী হয়েছে?
অধরা রক্তিমের দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বললো,
~আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ আজ আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেলো।
রক্তিমের আর বুঝতে বাকি রইলো না অধরার বাবা আর নেই।সে অধরাকে আগলিয়ে নিলো তখনই অধরার দুইভাই এসে হাজির তারা মায়ের কান্না আর বোনের স্তব্ধতা দেখে অনেক অবাক পরক্ষনেই বিছানার দিকে তাকাতে তাদের বুকে কেউ ছুরি ঢুকিয়ে দিলো বাবার লাশটাই হয়তো তার মা-বোনের কান্নার কারণ।আরিফ আর জারিফকে দেখে তার মায়ের কান্না আরো বেড়ে গেলো।ছেলেদের বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আজ সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হয়।তাই তাড়াহুরা করে হাত-মুখ ধুয়ে যেই তোর বাবাকে ডাক দিতে যাবো তখনই দেখি তোর বাবার শরীর ঠান্ডা নিঃশ্বাস চেক করে দেখি তো তোর বাবা নেই।
এতটুকু বলে সে ঢুকরে কেঁদে উঠে মায়ের কান্না অধরাকে আরো কষ্ট দিচ্ছে সে একধ্যানে তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো এখনই চোখ খুলে ঠোঁট নাড়িয়ে বলবে,
~এই বোকারা তোরা কাদঁছিস কেন?
কিন্তু সেটা হয়তো আর হবে না কারণ একবার যে চলে যায় সে আর ফিরে আসে না।

,,,,,,,,
,,,,,,,,
আমি চোখ মুছে রক্তিমকে বললো,
~বাবাকে একদম নিষ্পাপ লাগছে তাই না?
রক্তিম বললো,
~অধরা নিজেকে সামলাও।তুমি বড় সন্তান তাদের দুভাইয়ের বড় বোন যদি তুমিই দূর্বল হও তাহলে কীভাবে হবে?
আমি কান্নারত অবস্থায় বললাম,
~কেন নিজেকে সামলাবো রক্তিম?ছোট থেকে এক কথা শুনে এসেছি তুমি বড় সন্তান তোমার দূর্বল হলে চলবে না কঠোর হতে হবে।আজ নিজেকে কীভাবে সামলাবো আপনি একটু বলবেন আমায়।
এতটুকু বলে আমি রক্তিমকে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলাম রক্তিম আমাকে বললো,
~এভাবে কান্না করতে হয় না এভাবে আহাজারি করো না আল্লাহ তা আলা নারাজ হবে।তুমি বাবার জন্য নামাজ পরে দোয়া করো এর থেকে ভালো আর কিছুই হবে না।
আমি রক্তিমের কথায় মাথাদুলালাম।রক্তিম আমাকে রেখে জারিফ আর আরিফকে সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আস্তে আস্তে বাবার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরতে লাগলো এলাকাবাসী আত্মীয়স্বজন সবাই চলে এসেছে।বাবার গোসল হয়ে গিয়েছে তাকে সাদা কাপড়ে আবদ্ধ করা হয়েছে একবার দেখার সৌভাগ্য হলো আমার বাবাকে।আর কোনো দিন বাবা বলে ডাকা হবে না এই চেহারাটা আর দেখে হবে না সেই নির্জন মাটির ঘরে তাকে রেখে আসবে।সবাই কান্না করছে এই কান্নার কোনো ফল নেই আমার বাবা ফিরে আসবে না।
বাবাকে নিয়ে যাওয়ার সময় হলো খাটিয়াতে তাকে সুন্দর করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে রক্তিম,আরিফ জারিফ আর রাত বাবার খাটিয়া কাঁধে তুলে রওনা হলো গোরস্তানের পথে বাবা আর কোনোদিন এই রাস্তা দিয়ে ফিরে আসবে না আমি তাদের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলাম শেষ দেখা বাবার সাথে আমার।
বাসার ভিতরে ডুকে দেখি সবাই মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে আমি ঢুলুঢুলু পায়ে মায়ের কাছে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলাম মা নিষ্প্রাণ ভাবে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ আমার মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমি মাথা তুলে দেখি সাহারা রায়জাদা আমার হাত রেখে আছে সে আমার পাশেই বসে আছে।
তাকে দেখে মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বসে পরলাম।সাহারা রায়জাদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~অধরা,নিজেকে সামলাও বাবা হারানোর যন্ত্রণা অনেক তা আমি জানি কিন্তু তোমার মাকেও তো সামলাতে হবে।
আমি তার বুকে মাথা রেখে হুহু করে কেঁদে উঠলাম।সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো

,,,,,,,,,
,,,,,,,,
সবাই চলে গেছে নিজ নিজ বাসায় আমি সোফার ঘরের ফ্লোরে বসে আছি বাবাকে কবর দিয়ে এসে রক্তিমও গোসল করে আমার পাশে বসে আছে।
রক্তিম আমার হাতের উপর তার হাত রেখে বললেন,
~দুপুর ৩টা বাজে কিছু খাবে না?
আমি ভাবলেশহীন ভাবে বললাম,
~মা খেয়েছে?আরিফ জারিফ আপনি খেয়েছেন?
রক্তিম বললো,
~চলো একসাথে খাবো আমরা সবাই।মা বাসা থেকে খাবার পাঠিয়েছে।
আমার হাত ধরে বসা থেকে দাড় করিয়ে টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো।সবাই উপস্থিত কিন্তু আমার বাবা নেই এইটা ভাবতেই বুকটা ধুমরে মুচরে যাচ্ছে আপনজন হারানোর ব্যাথায় এতো কষ্ট।

বাবার মৃত্যুর আজ ১৫দিন। এই ১৫দিন আমি বেশিরভাগ আমার বাসায়ই কাটিয়েছি। কিছুদিন যাবত মায়ের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না হয়তো বাবার শোকে।মায়ের এখন চিন্তাটাও বেড়ে গেছে এই সংসার মায়ের এমন মুখ দেখলেই আমার খুব খারাপ লাগে।হঠাৎ রক্তিম এসে বললো,
~অধরা কী ভাবছো?
আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে বললাম,
~মায়ের কথা ভাবছিলাম।
রক্তিম বললো,
~অধরা তুমি মাকে বলো কোনো টেনশন নিতে মানা আল্লাহ যা ভেবেছে তাই হবে।
আমি বললাম,
~হুম
রক্তিম বললো,
~আজ বাসায় চলে যাবো আমরা।
আমি বললাম,
~হুম আজকে গিয়ে কয়েকদিনপর আবার আসবো।
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলো
আমি জানি রক্তিমও আমার মতো অনেক চিন্তিত কিন্তু আমাকে তা বুঝতে দিচ্ছে না।

চলবে।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে