#আমার তুমি
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১
অচেনা একটা ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলাম আমি।কয়েক মহূর্তের মধ্যে জীবন টা যেনো উলোট পালোট হয়ে গেলো।
যেনো কোন ঘোরে আটকে গেছি আমি।মুখ দিয়ে একটা টু শব্দও বের হচ্ছেনা। যেনো কেউ মুখ টা আটকে দিয়েছে।চোখ ঘুরিয়ে একবার আশেপাশে চোখ বুলালাম। সবাই যেনো বিয়েটা করায়ে হাফ ছেড়ে বেচে ছে।দূরে দাঁড়িয়ে আছে আমার মা।চোখে পানি তো নাই বরং ঠোঁটে তার হাসি। হয়তো বোঝা দূর হলো বলে।
একবার নিজের পাশে তাকালাম যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ মুখে কাঠিন্য একটা ভাব। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যেটা হয়েছে সেটা সে মানতে নারাজ।
তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিলাম। যেখানে নিজের পরিবার আমাকে তাড়াতে পেরে খুশি সেখানে কিনা অন্য কোন ছেলে আমাকে বিয়ে করে খুশি হবে সেটা ভাবা টাও যে আমার জন্য পাপ সেটা আমার বুঝা হয়ে গেছে।
হঠাৎ হাতে টান পরায় সচল হলাম। লোকটা আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে দেখার জন্য মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম সে নিজের বিশাল গাড়ির দিকে এগুছে।
গাড়ির ডোর ওপেন করেয় সজোরে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ফেলে দিলো।দিয়ে নিজেও গাড়িতে বসে পরলো।
——-
গাড়ি টা নিজের গতিতে চলছে।এতোক্ষন পর্যন্ত গাড়িতে থাকা দুইটা মানব ই নিশ্চুপ। আমি এখনো তার মুখ থেকে একটা বার্তাও শুনিনি। শুধু বিয়ের সময় যখন না না করে বাকিদের বুঝাচ্ছিলো তখন শুনেছিলাম সেটাই প্রথম ছিলো।আমি নিজের মাথাটা একটু বের করে চোখ বন্ধ করে নিলাম আর ভাবতে লাগলাম পুরোনো সৃতি।
—-
এতোক্ষন যার কথা শুনছিলেন সে ছিলো নওশিন। নওশিন ছোয়া খান।সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছোট মেয়ে মায়া দিয়ে ভরপুর।কিন্তু তার এ মায়া তার পরিবারের চোখে পরে না। হয়তো পরতো যদি তার নিজের মা বেচে থাকতো।তাহলে সে হতো এই খান বাড়ির জান। আদরের রাজকন্যা।। (পরিবার সম্পর্কে গল্পে পেয়ে যাবেন)
আজকে নওশিন তার বিয়ে ছিলো।কারো আদরের না হলেও লোক দেখানোর জন্য জমজমাট আয়োজন করেছিলো তারা।আর সে দাওয়াতে এসেছিলো আকাশ চৌধুরী। নাহিদ খান(নওশিন এর বাবা)এর বিজন্যাস পার্টনার হওয়াই তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিলো।
বিজনেস মিটিং এর জন্য রাজশাহী গেছিলো আকাশ সেখান থেকে বাই রোড ঢাকাই এসেছিলো সে। ওতো দূর থেকে ড্রাইভ করে আসায় ক্লান্ত হয়ে যায়। বাসার কাজের লোক কে গেস্টরুম দেখাতে বললে সে নওশিন এর রুমের পাশের টা হাতের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে চলে যায় কিন্তু আকাশ ভুল করে ঢুকে যায় নওশিনের রুমে। আর কিছু না ভেবেই ঘুমিয়ে পরে সে।
কিছুক্ষন পরেই নওশিনের বিয়ে হওয়াই সে যায় সাওয়ার নিতে। সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখে অজনা একটা ছেলে তার রুমে শুয়ে আছে।কৌতুহল বশত নওশিন দেখতে যায় ছেলেটা কে এমন সময় ছেলের পরিবার থেকে বউ সাজানোর জিনিস নিয়ে কয়েকজন মেয়ে প্রবেশ করে রুমে। আর ওদের এক রুমে দেখে কিছু না ভেবে জিজ্ঞেস করে চিল্লা চিল্লি শুরু করে দেয়। সবাই ওর চিৎকারে ছুটে আসে।।
আধুনিক যুগ হলেও গ্রামের মানুষের মন মানষিকতা এখনো বদলায় নি তারা কোন কিছু না ভেবেই নওশিন কে যা না তাই শুনাতে লেগে যায়।এর মাঝে আকাশ এর ও ঘুম ভেংগে যায়। সব শুনে তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। সে সবাইকে বুঝাতে লেগে যায় এরই মাঝে বর এর কানে কথা গুলো পৌঁছে যায় আর তারা বিয়ে ভেংগে দেয়।
এইদিকে গ্রামের লোকেরা জোর করে আকাশ এর সাথে নওশিনের বিয়ে দিয়ে দেয়,,,,,
———-
সিট বেল্ট না পরার কারনে ব্রেক কষায় নওশিন খানিকটা সামনের দিকে ঝুকে পরে।ভাবনা থেকে বের হয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে আকাশ নাই। নওশিন গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখে এটা একটা ব্রীজ।
রাত অনুমানিক ১১ টা বা ১২ টা বাজে।পুরো ব্রীজ অন্ধকারে ডুবে আছে।নওশিন অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা সামনে দিকে এগুতেই দেখতে পায় সিগারেট এর আগুন।নওশিন এর বুঝতে বাকি নেয় তার সদ্য বিয়ে করা বর এখানে নিজের রাগ কমানোর জন্য নিকোটিনের ধোয়ার আশ্রয় নিচ্ছে।
নওশিন অন্ধকারের মধ্যেই আকাশ এর দিকে এগিয়ে গেলো।আর তার থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে দাড়ালো আকাশ খেয়াল করলেও কিছুই বললোনা
নওশিনঃআমাকে ক্ষমা করবেন। আমার জন্য আপনার সাজানো জীবন টা হয়তো নষ্ট হয়ে গেলো।আমি ওদের বুঝিয়েছিলাম কিন্তু,,,,
নওশিন কে পুরো কথা টা বলতে না দিয়েই ধমকে উঠলো আকাশ
আকাশঃচুপ একদম চুপ আর একটা কথাও যেনো না বের হয়। কি বুঝাতে চান এগুলো বলে হ্যা যে আপনি কতো ভালো সব দোষ নিজের ঘারে নিচ্ছেন।এই ভোলা ভালা হওয়ার নাটক একদম আমার সামনে করতে আসবেন না। জাস্ট গেট লস্ট (চিৎকার দিয়ে)
নওশিন ভয়ে কেপে উঠে।সে মনে করে আকাশ তাকে চলে যেতে বলে আসলে যে আকাশ তাকে গাড়িতে বসার জন্য বলছে সেটা সে বুঝতে পারেনা। সে অন্ধকার ব্রীজ দিয়ে হাটা শুরু করে।
কোথায় যাবে সে জানেনা। এই রাস্তার কিছুই তার চিনা নেই।সবসময় কলেজ থেকে বাসা। বাসা থেকে কলেজ এই টুকুই তার যাতায়াত এর রাস্তা।
আকাশ সিগারেট এর শেষ ধোয়া নিজের ভিতরে নিয়ে সেটা ব্রীজের উপর ফেলে পা দিয়ে আগুন টা নিভিয়ে দেয়।গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে যেয়ে তার মনে পরে নওশিন এর কথা।
আকাশঃওহ শিট।(স্টেরিং এ বাড়ি দিয়ে)এই ইস্টুপিট মেয়েটাকে আমি গাড়িতে বসতে বললাম আর এই মেয়েটা না জানে কই চলে গেছে।এই সব জ্বলাতন আর ভালো লাগেনা। ধুর
আকাশ গাড়ি থেকে বের হয়ে কিছু দূর হাটতেই নুপুরের আওয়াজ পায়।আওয়াজ টা এতোটাই তীব্র ছিলো যে তাত বুঝতে বাকি থাকেনা কেউ তার দিকে দৌড়ে আসছে আর হলো টাও তাই।
নওশিন দৌড়ে এসে আকাশ কে জরায় ধরলো শক্ত করে।আকাশ এর কেনো যেনো অদ্ভুদ একটা অনুভূতি হলো।কেমন জানি একটা শান্তি পেলো মনে হচ্ছে।তার মাথায় থাকা সমস্ত রাগ যেনো এক নিমিষেই দূর হয়ে গেলো।
এদিকে নওশিন ভয়ের চোটে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আকাশ কে আকড়ে ধরে রেখেছে।নওশিনের হাতের নক আকাশ এর বুকে গেথে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে কারো খেয়াল নেই।
হঠাৎ করে কুকুর এর আওয়াজ এ আকাশ এর ঘোর ভাংগে নওশিন তো ভয়ে এবার চিৎকার দিয়ে উঠে
আকাশ অবাক হয়ে যায় এতো বড় মেয়ে কুকুর দেখে বাচ্চাদের মতো করে লাফাচ্ছে।
আকাশ কুকুর গুলো কে তারিয়ে দেয়। নওশিন তখন ও আকাশ এর হাত আকড়ে ধরে রেখেছে।
আকাশঃছেলেদের কাছে আসার ভালোই একটা উপায়।
নওশিনঃমা মানে,
আকাশঃএমন ভাবে বলছেন যেনো কিছু জানেন ই না। এই যে কুকুর চলে গেছে তবুও আমার হাত ছাড়ার নাম ই নাই বাহ।
নওশিনঃ———
আকাশ নওশিনকে চুপ থাকতে দেখে আর কিছু না বলে গাড়ির দিকে হাটা দেয়।নওশিন হাত ছেড়ে দিলেও এবার আকাশ ছাড়ে নি বরং নওশিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গাড়ির দিকে যায়
নওশিনঃআজায়রা পাবলিক। প্রথমে নিজেই কথা শুনায় আবার নিজে আমার হাত ধরে।
(ভেংচি কেটে বিরবির করে বলে উঠে)
নওশিন বিরবির করে বললেও আকাশ ঠিক শুনতে পায়। কিন্তু কিছু বলেনা তার কেন জানি হাসি পায়। আকাশ নিজের উপর অবাক হয়ে যায়।।।
———-
গাড়ি পৌছে যায় একটা বিল্ডিং এর সামনে নওশিন গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখে,,,,,,,,
চলবে!!!!