আমার তুমি পর্ব-৩২ এবং শেষ পর্ব

0
2056

#আমার_তুমি
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৩২(শেষ পর্ব)
,
,
,
,
,
আকাশঃআমার মায়াবতী কই আমার মায়াবতী কই (পাশে থাকা স্টেন্ড ফেলে দেয়)

আকাশের প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে কেউ ভেবে পাচ্ছেনা তাদের সবার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।আকাশের ধৈর্যর বাধ এবার ভেংগে গেলো হাতে থাকা স্যালাইন নোল খুলে ফেলে টেনে খুলার কারণে রক্ত বেরিয়ে আসে।আরিয়ান আর ঈশান চেয়েও আটকাতে পারছেনা। আকাশের শক্তি যেনো তিন গুন বেরে গেছে।তাকে আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। হঠাৎ করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই আকাশ চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় বুকের বাম পাশ টা জুরিয়ে যায়। আজব এক টানে ছুটে যায় বাহিরে তার কেবিনের পাশের কেবিনেই দুইটা বাচ্চাকে কাচের বক্সে রাখা হয়েছে।

আকাশ ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে। আরিয়ান কাধে হাত রাখতেই আকাশ ঘুরে আরিয়ানের পা জরায় ধরে।আকাশ পাগলের মতো কান্না করছে উপস্থিত সবার চোখে পানি

আকাশঃআমার মায়াবতীকে এনে দে আকাশ আমি আমার মায়াবতীকে চায় আমার মায়াবতীকে এনে দে না রে,,,

আরিয়ানঃতোর মায়াবতী এখন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে। বাচার সম্ভবনা ১০পার্সেন্ট। আমার নরম মনের বোন টা আজকে এতোটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে ২ দিন ধরে বাচার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।
আকাশঃআমি আমার মায়াবতীর কাছে যাবো নিয়ে চল আমাকে আমি আমার মায়াবতীকে দেখবো।
আরিয়ানঃএটা সম্ভব না তুই পারবিনা বোন কে হাজারো মেসিনের ভিরে
আকাশঃআমি আমার মায়াবতীর কাছে যাবো(হঠাৎ ভয়ংকর হয়ে উঠলো আকাশের ক্লান্ত মুখ জোড়া)

আরিয়ান আকাশ কে নিয়ে চলে গেলো নওশিনের কেবিনে ডাক্তার রা নিষেধ করলেও আরিয়ান এর কথায় তারা কিছু বললো না আকাশ এর চোখ দুইটা ভিজে এলো। তার মায়াবতীর মুখটা দুই দিনে কেমন বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে

আকাশ কাপা কাপা পায়ে নওশিনের সামনে আসতেই তার বুকটা মোচর দিয়ে উঠে।নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।

আকাশঃস সু সুইটহার্ট এই সুইটহার্ট গেট আপ উঠো বলছি কি শুয়ে আছো বলোত তাড়াতাড়ি উঠোনা এই ভাবে এতোক্ষন কেউ ঘুমায় তুমি না বলো বেশি ঘুমাতে হয়না এই মায়াবতী উঠো পাখিটা উঠোনা দেখো তোমার সাইকো তোমাকে ডাকছে।তোমার সাইকোকে দেখবা না উঠোনা এই আই নিড ইউ। তোকে ছাড়া আমি চলতে পারিনা তুই জানিস না আমি কতোটা অসহায় তুই বিহীন কেন এমন করছিস শাস্তি দিতে চাস তো উঠনা যতো মারার ইচ্ছা মার তবুও উঠ। আমি জানি আমার দোষ তুই যে শাস্তি দিবি মাথা পেতে নিবো। তবুও তুই উঠ। আমার উচিৎ ছিলো তোর পাশে থাকা আমি থাকিনি আমি পারিনি তোমাকে সেফ রাখতে আজকে আমার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে একটা বার উঠ নারে (নওশিন কে জড়ায় ধরে)

ডাক্তারঃআরে কি করছেন পেশে,,,,
আরিয়ানঃপ্লিজ ডক্টর কিছু বলেন না

আকাশঃপারবোনা আমি বাচতে তোমার কিছু হলে তুমি ছাড়া আমি বড্ড নিঃস্ব হয়ে যাবো। মরণ হবে আমার এই তুমিটা বিহীন ছোয়া বিহীন আকাশ একা আকাশের অস্তিত্ব বহন করে ছোয়া। তুমি না থাকলে কেমনে তোমার হিটলার বাচবে বলো(কান্না করে দিয়ে)

আকাশ নওশিন কে বুকে জরায় ধরে চিৎকার করে কান্না করা শুরু করে দেয়। আকাশের চোখের পানি যেনো থামার নাম ই নিচ্ছেনা পরিবেশ টাও থমকে গেছে মনে হয় সবার চোখে পানি কণা ভেসে উঠলো। হয়তো গড়িয়ে পরবে।

হঠাৎ হাওয়াই সব বদলে দিয়ে গেলো হাসি খুশি পরিবার টাতে নেমে এসেছিলো অন্ধকার আকাশ।।।।।।।।

_________

ডায়রির শেষ পাতায় এইটুকু পরে চোখ মুছে নিলো ছায়া। তন্ন তন্ন করেও খুজে পেলো না অন্য কোন ডায়েরি। হঠাৎ কারো ডাকে চমকে উঠলো ছায়া। সে সামনে তাকায়ে দেখে তার ভাই আসফি দাঁড়ায় আছে।

আসফিঃতুই এখানে কি করছিস বোনু
ছায়াঃআমি মাম্মাম আর বাবাই এর ১৭ তম ওয়েডিং এনিভার্সারির গিফট বানানোর জন্য স্টোর রুমে এসেছিলাম পুরাতন এলব্যাম নিতে সেখানে আমি এটা পেলাম(ডায়েরি আসফির হাতে তুলে দিয়ে)
আসফিঃডায়রি
ছায়াঃহুম

আসফি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ টা পরে নিলো।
আসফিঃএটা তো মনে হচ্ছে
ছায়াঃহাম কিন্তু এর বাকি অংশ
আসফিঃবাবাইকে জিজ্ঞেস করবো
ছায়াঃনাহ মাম্মাম কে

আসফিঃএক কাজ করি দুইজন কেই জিজ্ঞেস করি
ছায়াঃগিড আইডিয়া চল

__

আয়নায় আকাশ নিজের সদ্য গোসল করা বউ এর রুপ দেখছে।আচ্ছা সে শুনেছে মানুষ নাকি দিন দিন বয়স্ক হয় কিন্তু কই তার বউকে দেখে তো তার এটা মনে হয়না তার তো মনে হয় তার বাচ্চার আম্মুটা আরো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে।রুপ দিন দিন কমার জায়গায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আকাশ এর চোখ যায় তার বাচ্চাদের মায়ের কোমরে থাকা কালো তিল টার দিকে সে জানে না কি আছে এই তিলে যে তিল টা তাকে এতোটা টানে। সে আয়নার সামনে দাঁড়ানো এলোকেশির কাছে এসে তার কোমরে হাত দিতে যাবে এমন সময় ছায়া আর আসফি রুমে প্রবেশ করে।

আকাশ বাচ্চাদের দেখে পিছে সরে যায়।আসফি আর ছায়া নিজেদের বাবা মাকে বিছানায় বসায়।

দুইজনে আসফি আর ছায়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকায়।আসফি তার হাতে থাকা ডায়েরিটা তার বাবা মায়ের হাতে দেয়।আসফির আম্মুর চিনতে দেরি৷ হয়না ডায়েরি টা সে হাতে নিয়ে থম মেরে বসে যায়

আসফিঃএই ডায়েরির বাকি অংশ কই বাবাই কি হয়েছিলো সেদিন। মাম্মাম বেচে আছে কি করে

আকাশ দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে।

সেদিন সবাই মনে করেছিলো নওশিন আর বাচবে না কে বা বাচে ১০% চান্স নিয়ে। সবার ধারণা কে অনেকটাই সত্যি করেই দিয়েছিলো যখন আকাশের বাহুডোরে নওশিনের নিশ্বাস ফেলা বন্ধ হয়ে গেছিলো।কিন্তু বলেনা আল্লাহ যাকে রাখে তাকে কে নেয়। আল্লাহ হয়তো চায়নি বিচ্ছেদ আকাশ আর নওশিনের তাই তো সেদিন চমৎকার ভাবে পুনরায় নিশ্বাস নিতে শুরু করেছিলো নওশিন আকাশের বুকে কিন্তু চোখ দুইটা মেলতে পেরেছিলোনা।

আগে থেকেই মাথায় অনেক বার চোট পাওয়াই এবার কার ব্যাথা সহ্য করার ক্ষমতা হারায় ফেলেছিলো তাই তো বেচে থেকেও মরে গেছিলো নিশ্বাস নিচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু আর কোন স্নায়ু কাজ করার ক্ষমতা হারায় ফেলেছিলো।

দীর্ঘ ৭ বছরের প্রচেষ্টার পরে চোখ মেলে তাকায় নওশিন।

_______

আসফিঃআচ্ছা বাবাই ওই যে ডায়রিয়ে লিখা আছে একজন মহিলাও ছিলো কে ছিলেন উনি কি হয়েছে উনার।
আকাশঃমহিলাটি ছিলো তোমার মাম্মাম এর সৎ মা
ছায়াঃউনি এই সব কেন করেছিলেন
আকাশঃটাকার নেশা বড় নেশা টাকা আপন কেউ চেনে না সেখানে নওশিনের পরিবার তো ছিলো উনার কাছে পর। উনি শুধু নিজের সন্তান কে নিয়ে ভেবে গেছিলো তাইতো এই জঘন্য খেলায় নাম লিখায় ছিলো
ছায়াঃতুমি কি করে জেনেছিলা বাবাই
আকাশঃতোমাদের মাম্মাম যখন হস্পিটালে এডমিট ছিলো তখন এসেছিলেন নওরিন বেগম নওশিন কে মেরে ফেলতে একেবারের জন্য।ঈশান দেখে নেয় আর সেখানেই ধস্তাধস্তি করতে যেয়ে আমাকে সুট করতে হয়

আসফিঃআর আসাদ আঙ্কেল উনাকে তো কেবল হাতে সুট করে হয়েছিলো নিশ্চয় উনি পালিয়ে গেছেন উনি কি শাস্তি পাবেন না

আকাশ এই কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলেনা তার ঠোঁটের কোনায় বাকা হাসি ফুটে উঠে।

নওশিনঃঅনেক প্রশ্ন হয়েছে এবার যাও তোমরা রেডি হয়ে নাও মেহমান আসা শুরু হবে

বাচ্চারা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।।। নওশিন ও উঠে ব্যালকনিতে চলে যায়

আকাশঃকি হয়েছে
নওশিনঃকতোদিন উনাকে এইভাবে বন্ধি করে রাখবেন
আকাশঃছেড়ে দিতে বলছো
নওশিনঃনা একেবারে শেষ করে দিতে বলছি
আকাশঃঠিক আছে(নওশিনকে নিজের দিকে ঘুরায়ে ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট ডুবায় দেয়)

______
অন্ধকার রুমে কাতরাছে এক বৃদ্ধ। বয়স বেশি না হলেও তাকে দেখে যে কেউ বলবে ৮০ বছরের উর্ধে লোকটি। পুরো শরীরে পচন ধরেছে গন্ধে রুমটাতে নিশ্বাস নেওয়াও দুষকর হাজারো পোকা মাকড় কামড়ে কামড়ে শরীরে রক্ত শুণ্য করে দিয়েছে।বৃদ্ধ লোকটি পানি বলতেই কেউ এক মগ পানি তার মুখে ছুড়ে মারে

মাস্ক পরে আকাশ রুমের ভিতরে প্রবেশ করে

আকাশঃকেমন আছেন মামা নিশ্চয় ভালো আমিও ভালো আছি।কেমন লাগছেনা মামা বন্ধ জীবন আমার আর আমার প্রিয়তমার ও ঠিক এমনটাই লেগেছিলোনা যখন আমার মায়াবতী নিশ্বাস নিতে পারলেও তার চোখের সামনে ছিলো অন্ধকার সে নড়া চড়ার ক্ষমতা অব্দি হারিয়ে ফেলেছিলো।ঠিক এতোটাই অসহায় ছিলো সে।
আপনার বোনকে তো খুন করতে পারলাম না আর না দিতে পারলাম শাস্তি তাই আপনাকে একটু বেশি দিয়ে দিলাম আরেকটু দিতাম কিন্তু আমার মায়াবতীর না করায় আর দেওয়া হলোনা। সো বাই বাই মামা

আকাশ বের হওয়ার সাথে সাথেই ফ্যাকটারিটা ব্লাস্ট হয়ে গেলো আশেপাশের সমস্ত প্রানী ভয়ে কেপে উঠলো তাইতো গাছ কে শূন্য করে হাওয়াই উড়ে গেলো শত শত পাখি।

_________

আকাশ আর নওশিন সবার ওয়েলকাম করছিলো এর মাঝেই ছোট দুইটা হাত এসে নওশিন কে জড়ায় ধরে পিছন থেকে।নওশিন জানে হাত দুইটার মালিক কে সে পিছনে ফিরে কোলে তুলে নিলো ছোট রাই কে ঈশান আর রামিসার ছোট পরি রাই সাড়ে ৫ বছর। মিষ্টি একটা পরি।
আর আমাদের আসফির জান। আসফি ছায়ার মতোই রাই কে ভালোবাসে।

কিছুক্ষনের মাঝেই সেখানে উপস্থিত হলো নীহারিকা আর নিহান। সাথে আছে তাদের ৮ বছরের ছেলে নুহাশ। আরিয়ান আর আরুও তাদের মেয়েকে নিয়ে আসে।আয়রা আগে এসেই আসফির শার্ট খামচে ধরে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে যায় তার মেয়েটা খালি তার শার্ট ধরেই টানা টানি করে কিসের জন্য সে বুঝেনা আবার ধমক দিলেও খিলখিল করে হাসে।এই ১২ বছরের এই টুকু পিচ্চি আসফিকে জ্বালায় মারে।

____________

সুষ্ট ভাবে অনুষ্টান সম্পূর্ণ হয়।

আকাশ আনমনেই বসে ছিলো।নওশিন এসে চেঞ্জ করে ওর পাশে বসে কিন্তু তবুও আকাশের হেলদোল নেই। নওশিন এবার রেগে আকাশের বুকে কামড় বসায়

আকাশঃসুইটহার্ট।কামড়া কামড়ি স্বভাব কবে শুরু করলা তুমি
নওশিনঃকোন শাকচুন্নির কথা ভাবছিলা(আকাশের উপর চড়ে)

আকাশঃভাবছিলাম কিভাবে তুমি আমার জীবন থেকে আসা শুরু করে ১৭টা বছর কাটানো মহূর্ত
নওশিনঃতোমার আমি হয়ে কাটানোর মহূর্ত
আকাশঃহুম এই ভাবেই থেকো সারাজীবন আমার তুমি হয়ে
নওশিনঃএইভাবে আমাকে বুকে আগলে রেখো
আকাশঃভালোবাসি পাগলীটা
নওশিনঃআমিও ভালোবাসি পাগলট(আকাশের কপালে চুমু দিয়ে)
আকাশ হেসে নওশিন কে নিজের বুক পাজরে জড়িয়ে নিলো।।।।

সমাপ্তি!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে