Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৮+৯

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৮+৯

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব

অফিসের মধ্যে প্রবেশ করতেই‌ সবাই‌ আমাদের দিকে পার্টি স্প্রে নিক্ষেপ করতে শুরু করে।মুহুর্তে মধ্যে দুজনকে ভর্তি করে দেয় স্প্রে করে।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।নিদ্রের ঠোঁটের কোণে এক প্রকার অন্যরকম হাসি বিরাজ করছে।এই মুহুর্তে তার হাসির কারনটা বুঝে উঠতে পারছি না আমি।এবার আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় শুটকি আকৃতির মেয়ে রুশা।তার অবস্থা আমাদের চেয়ে আরো বেশি শোচনীয়।তার সমস্ত শরীর ভর্তি স্প্রের গোল্লগুলো দিয়ে।আমি এবার চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকাই।উপস্থিত সবার মনোভাবটা একটু আন্দাজ করার চেষ্টা করি।

এই মুহুর্তে নিদ্র রুশার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।আমার এই ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে না।বুঝতে পারছি না আমি যদি নিদ্রকে ভালো নাই বাসি তাহলে সে কি করে করুক এতে আমার কি?কিন্তু আমার ভালো লাগছে না কেন?তারমানে কি আমি নিদ্রকে ভালোবাসি!ধুর।

নিদ্র রুশার হাত ধরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“হেই গাইস,আজকে আমি তোমাদের একটা সংবাদ দিতে চলেছি।এতে অনেকে মনে মনে খুশিও হবে আবার অনেকে কষ্টও পাবে।তার মধ্যে একজন আপনি মিসেস.মিহিমা।”

নিদ্রের কথার আগা কিংবা মাথা কিছুই বুঝতে পারি না আমি।নিদ্র কি এমন কথা বলতে চলেছে যে আমি খুব কষ্ট পাব।তার মানে কি নিদ্র রুশাকে ভালোবাসার কথা বলবে।না না কি ভাবছি এসব?
নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“গাইস,আজকে মিস.রুশা আমাদের অফিস থেকে চলে যাচ্ছে।যারা যারা রুশাকে ভালোবাসতেন তাদের জন্যে কষ্টের আর যারা যারা রুশাকে ভালোবাসতেন না তাদের জন্য আনন্দের।আর মিসেস.মিহি আপনিতো রুশাকে পছন্দ করতেন তাইনা।তাহলে নিশ্চয় আপনারও কষ্ট হচ্ছে?”

নিদ্রের কথা শুনে আমি রুশার দিকে তাকাই।রুশা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি মুচকি হেসে বলি,
–“হুম,অনেক মিস করবো তোমাকে।”
রুশাও এবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।নিদ্র এবার দৃঢ় গলায় ঘোষণা করে,
–“গাইস,আজকে অফিসে কোনো কাজ হবে না।আমরা কেক কাটবো তারপর রুশাকে বিদায় জানিয়ে যে যার মতো চলে যাব।”

সবাই নিদ্রের কথাতে রাজি হয়ে যায়।এই মুহুর্তে হাসি মুখে কেক নিয়ে ভিতরে আসে রহিম মিয়া।কেকটা রুশার সামনের টেবিলটাতে রেখে হলদে দাঁতগুলো বের করে বলে,
–“হ্যাডাম হেকটা কাইটা লন।”
রুশা তার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।তারপর আমাকে এগিয়ে আসতে বলে।আমি এগিয়ে গেলে নিদ্রও‌ এগিয়ে আসে।তারপর রুশা কেক কাটতে শুরু করে।তার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি ও নিদ্র।রুশা কেক কেটে প্রথমে নিদ্রকে খাইয়ে দেয়।নিদ্র তারপর তাকে খাইয়ে দেয়।এরপর রুশা আমাকে খাওয়ায়।আমি তাকে খাইয়ে দেই।তারপর এক এক করে বাকি সবাইকে কেক খাওয়ায় রুশা।

এই মুহুর্তে অফিসে প্রবেশ করে নিদ্রের বাবা হালিম চৌধুরী।রহিম মিয়া দৌড়ে যায় তার কাছে।তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম করতে ধরলে তিনি রহিম মিয়াকে তুলে দাঁড় করিয়ে দেন।তারপর হাসি মুখে বলেন,
–“কি খবর রহিম?কেমন আছো?”

খুশিতে বের হয়ে পড়ে রহিম মিয়ার হলদেটে দাঁত গুলো।সে হালিম চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“হার ভালাই আছি।আন্নি কেমন আছেন?”
হালিম চৌধুরি হাসি মুখে বলে,ভালো।এবার তিনি এগিয়ে যান রুশার সামনে।রুশা তাকে সালাম দেয়।তিনি সালামের জবাব দিয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“যা করার তারাতারি কর,আমার একটু অন্য জায়গায় যেতে হবে।”

নিদ্র এবার রহিম মিয়াকে জিনিসটা নিয়ে আসতে বলে।রহিম মিয়া হাসতে হাসতে রওনা হয়ে পড়েন।নিদ্রের বাবা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলে,
–“বউমা কেমন কাটালে বাবার বাড়িতে?”
আমি মুচকি হেসে বলি,
–“একটা দিনও ভালোভাবে থাকতে পারলাম না বাবা।আমি পৌঁছার কিছুক্ষন পরই ওনি হাজির।আর আজকে তো ভয় দেখিয়ে নিয়ে এলেন।বললেন আজ না আসলে চাকরী শেষ।”

আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে হালিম চৌধুরী।তারপর আস্তে করে বলে,
–“ভালোই করেছে,তোমাকে ছাড়া বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।”

জোরে জোরে মিউজিক বাজানোর কারনে আমাদের দুজনের কোনো‌ কথাই অন্য কেউ শুনতে পারে না।রহিম মিয়া দুহাতে ধরে বিশাল একটা বাক্স নিয়ে আসে।বাক্সটা রঙ্গিন পেপার দিয়ে মোড়ানো রয়েছে।নিদ্র এবার তার বাবাকে বলে,গিফ্টটা রুশার হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সবাই তাকে বিদায় জানাবে।

ছেলের কথা মতো হালিম সাহেব গিফ্টটা তুলে দেন রুশার হাতে।তারপর এক এক করে সবাই তাকে বিদায় জানায়।হালিম সাহেব ওই মুহুর্তে ওখান থেকে চলে যান।বাকি সব কাজ শেষ করে দুপুরের মধ্যেই‌ বাসার পথে রওনা হই আমি আর নিদ্র।দুজনে ঘেমে একাকার হয়ে আছি।মুখে-চুলে জড়ি লেগে একাকার হয়ে আছে।গাড়ি চালাতে চালাতে নিদ্র হাসিমুখে বলে,

–“বিকেলে পার্কে যেতে চাই,যাবে!”
আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলি,
–“না।”

আমার ‘না’ উত্তর শুনে যে নিদ্রের মধ্যে বিন্দুমাত্রও প্রতিক্রিয়া হয়নি সেটা বেশ বুঝতে পারছি।নিদ্র হাসি মুখে গাড়ি চালাতে থাকে।একপর্যায়ে রাস্তার পাশের একটা আইসক্রিমের দোকান চোখে পড়ে আমার।আমি ‌নিদ্রকে গাড়ি থামাতে বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।নিদ্র বেশ কড়া গলায় বলে,সাবধানে যেতে।

আমি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পড়ি সেখানে।নিদ্র গাড়িটা সাইট করতে যায়।এই মুহুর্তে আমার চোখ আটকে যায় একটা দৃশ্যের দিকে।এ আমি কি দেখছি?সেই লোকটা,মানে পাগল লোকটা।

ফ্লাসব্যাক..

“মিহি মা ড্রেসিনের উপরের কয়েনটা নিয়ে গিয়ে দিয়ে আয় তো ফকির টাকে”
রান্নাঘর থেকে বেশ বড় গলায় বলে আমার আম্মু।আমি আম্মুর কথা অনুযায়ী ভিক্ষা দিতে গেলে এই লোকটা পাগলের মতো ব্যবহার শুরু করে আমার সাথে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লোকটা আমাদের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ভয় পাচ্ছে।

আমি অবাক হয়ে লোকটাকে দেখি।লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বেশ ভয়-ভীতি নিয়ে বলে,
–“সাবধান,কালকে এই বাড়ির একজন মারা যাবে।কালকে,”এই বলে সে ভিক্ষা না নিয়ে পালিয়ে যায়।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে পাগল ভেবে সেই চিন্তা মাথা থেকে উড়িয়ে দেই।কিন্তু পরেরদিনই আমার মা মারা যায়।তখনই বুঝেছিলাম ওনি পাগল নন ।

বর্তমান..

নিদ্র গাড়ি সাইট করে এসে দাঁড়ায় আমার সামনে।আমি সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি।লোকটাও এবার আমার দিকে তাকায়।আমি তাকে দাঁড়াতে বললে সে দৌড়ে পালায়।আমি সেই ব্যাপারটা নিয়ে না ভেবে আইসক্রিম ওয়ালার দিকে রওনা হই।আমার পাশে যে নিদ্র আছে সেটা ভুলে যাই আমি।আমি‌ রাস্তা পার হতে ধরলে নিদ্র পিছন থেকে খুব জোড়ে একটা চিল্লান দেয়।আমি ঘুড়ে তাকালে দেখতে পাই একটা ট্রাক এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমার শরিরের সব অঙ্গ-প্রতঙ্গ থরথর করে কাঁপতে থাকে।এই মুহুর্তে তাকিয়ে দেখি নিদ্র দৌড়ে আসছে আমার দিকে।ট্রাকটাও অনেক কাছে চলে এসেছে আমার।আমি অনেক নড়ার চেষ্টা করছি কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ ‌আমাকে ধরে রেখেছে।আমি ভয়ে চোখটা বন্ধ করে নেই।অপেক্ষা করতে থাকি কখন ট্রাকটা পিশিয়ে দিয়ে চলে যায়।

চলবে..

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৯ম_পর্ব

আমি চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করছি কখন ট্রাকটা এসে পিশিয়ে দেয় আমাকে।একসময় খুব কাছে ট্রাকের হর্ন শোনা যায়।আমার হার্টবিট মুহুর্তের মধ্যে বেড়ে যায় কয়েকগুণ।মনের মধ্যে চলে আসে মৃত্যুর চিন্তা।সেই চিন্তাকে ঠেলে দিতে কেউ‌ আমাকে নিয়ে লাফ দেয়।সাথে সাথে চোখ খুলে দেখি নিদ্র আমাকে‌ নিয়ে লাফ দিয়েছে।ওই মুহুর্তে পাশ দিয়ে চলে গেল ট্রাকটা।নিদ্র একাধারে বকতেই আছে আমাকে।আমি ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে চেয়ে আছি।একপর্যায়ে অনুভব করি পায়ের মধ্যে প্রচুর ব্যাথা করছে।নিদ্র আমাকে তুলে দাঁড় করালে আমি হাটতে ব্যার্থ হই।বুঝতে পারি বেশ ভালোই আঘাত পেয়েছি।

আমি চিন্তায় পড়ে যাই কি করবো এই ভেবে?নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুহুর্তে মধ্যে কোলে তুলে নেয় আমাকে।ওই‌ মুহুর্তে ওখানকার সব লোকের নজর চলে আসে আমার দিকে।অনেকে মোবাইল বের করে ফটো তুলতে শুরু করে।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।নিদ্র আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে চলে যায়।

আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি নিদ্র কোথায় যাচ্ছে?তো দেখি যে,নিদ্র আইসক্রিমের দোকানটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।তারপর প্রায় ১০ কিংবা ১২টা হবে,এরকম আইসক্রিম কিনে নেয়।বেশিদূরে না হওয়ার কারনে দেখা যাচ্ছে সবকিছু।নিদ্র আসতে ধরলে তার সামনে এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে।আমি আরো আগ্রহ নিয়ে তাকাই নিদ্রের দিকে।মেয়েটা নিদ্রকে হেসে হেসে কি যেন বলছে?নিদ্রও‌ তার জবাব হেসে হেসে দিচ্ছে।এই মুহুর্তে আমার প্রচুর রাগ হয়।কিন্তু আমি তো ‌নিদ্রকে ভালোবাসিনা তাহলে রাগ হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না?

নিদ্র এবার মেয়েটার পাশ কাটিয়ে চলে‌ আসে গাড়ির কাছে।গাড়িতে উঠে আমার হাতে ধড়িয়ে দেয় আইসক্রিমগুলো।আমি গুণে দেখি ১০টা আইসক্রিম।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“এতগুলো আইসক্রিম কেন?”
নিদ্র গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,
–“আমরা এখন মেডিকেল যাচ্ছি।আগে তোমার পা দেখাবো ডাক্তারকে।তারপর ঔষুধ নিয়ে বাসা যাব।ততক্ষন তুমি বসে বসে আইসক্রিম খাও।”

আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে আইসক্রিমগুলোর দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমার পায়ের ব্যাথা আস্তে আস্তে বাড়তেছে।এখন প্রচুর ব্যাথা করছে।মনে হয় ভেঙ্গে গেছে।”
আমার কথাটা শুনে নিদ্র তার বাম হাতটা দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে আর ডান হাত দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।তারপর শান্ত গলায় বলে,
–“এসব অলুক্ষোণে কথা যেন দ্বিতীয়বার না শুনি।”

আমি মাথা ‌নেড়ে হা বলি।তারপর আইসক্রিম খাওয়ায় মনোযোগ দেই।আস্তে আস্তে পায়ের ব্যাথা বেড়ে দ্বিগুন হচ্ছে।একপর্যায়ে আমরা এসে পৌঁছাই একটা মেডিকেলের সামনে।নিদ্র আমাকে কোলে তুলে নেয়।আমি তার দিকে রাগি চোখে তাকালে সে বলে,
–“হাটতে পারবে না,এটা ছাড়া উপায় নেই।”

আমি ভালো করে ভেবে দেখি তার কথা ১৬আনা ঠিক।তাই আর রাগ না হয়ে চুপ করে থাকি।নিদ্র আমাকে নিয়ে প্রবেশ করে এক ডাক্তারের চেম্বারে।ডাক্তারের কথামতো শুইয়ে দেয় আমাকে বেডের উপরে।ডাক্তার একটু চেক করে কিছু পরিক্ষা দেয় করার জন্য।তারপর সেই রিপোর্ট গুলো এনে তাকে দেখাতে বলে।

নিদ্র আমাকে নিয়ে সব পরিক্ষা করে এবং রিপোর্ট নিয়ে এসে ডাক্তারকে দেখায়।ডাক্তার রিপোর্টগুলো দেখে বলে,
–“ভাঙ্গেনি,তবে হাড় ফেটে গেছে।”
নিদ্র ডাক্তারের দিকে ঝুঁকে বলে,
–“এখন কি করতে হবে?”

ডাক্তার উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
–“আমি কাজগুলো করে দিচ্ছি,আপনি শুধু ঠিকমতো ঔষুধ খাওয়াবেন আর যত্ন করবেন।খেয়াল রাখবেন যাতে কোনো ‌মতেই তার পায়ে চাপ না পড়ে।”

নিদ্র মাথা ঝাঁকিয়ে হা বোধক উত্তর দেয়।ডাক্তার এসে আমার পায়ের মধ্যে প্লাটার করে দেয়।তার উপর ব্যান্ডেজ করে।সবশেষে নিদ্র তার বিল পরিশোধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে বের হয়ে আসে।আসার সময় তাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল।আমি অতশত না ভেবে তাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করি,
–“আপনি কি কোনো কারনে চিন্তিত?”

নিদ্র আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গাড়িতে উঠে বসতে বসতে বলে,
–“তোমার শরিরের যে অবস্থা গোসল না করে থাকা যাবেনা।কিন্তু কিভাবে গোসল করবে?”
চিন্তাটা আমার মাথায়ও ধরে এবার।সত্ত্যিতো কিভাবে গোসল করবো?

নিদ্র মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।আমি একদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি একটা বিষয় দ্রুত সম্পাদন করতে চাচ্ছি।তোমার কি মত?”
আমি ভ্রু-কুঁচকে বলি,
–“কোন বিষয়টা?”
নিদ্র হাসি মুখে বলে,
–“আমাদের ডিবোর্সের।দেখ,ভালোবাসা ছাড়া সংসার করা খুব কঠিন।কখ‌নও এক তরফের ভালোবাসায় সংসার হয় না।প্রথমে তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে ঠিকই কিন্তু কোন কার‌নে আমি ভালোবাসতে পারিনি।কিন্তু এখন তুমি আমাকে ভালোবাসো না।এভাবে থেকে দুজনেরই কষ্ট হচ্ছে।তার চেয়ে আলাদা হওয়াই ভালো না কি বলো?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না?বেশ ভালোভাবে ‌নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি কথাটা সে আসলেই বলছে না শয়তানি করে বলছে।কিন্তু তার মুখে সয়তানির কোনো‌ চিহ্ন দেখত পাইনা আমি।আমি তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হা বলি কিন্তু মুখ ফুটে কোনো কথা বলি না।নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,

–“চুক্তিপত্রটা আমরা দুজনে মানি না তাই না?তাহলে আট মাস পর কেন কয়েকদিন পরই হয়ে যাক ডিবোর্সটা।আমি সব ব্যবস্থা করছি।”

আমি পুনরায় মাথা নাড়িয়ে হা বোধক উত্তর দেই।মনটা প্রচুর খারাপ হয়ে যায়।নিদ্র না আমাকে ভালোবাসে তাহলে ডিবোর্সের কথা বলতেছে কেন?আমি কি ভুল করলাম তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে?নানা রকম চিন্তা এসে ভিড় করতে থাকে মনের মধ্যে।নিদ্র আবার বলে ওঠে,

–“আমি আমাদের ডিবোর্স নিয়ে চমৎকার একটা প্লান করেছি।আমরা ডিবোর্স পেপারে সাইন করবো‌ একটা পার্টি করে।পার্টিটা হবে কক্সবাজারে।কেমন হবে বলো তো?”

আমি এবার কথা না বলে থাকতে পারি না।বেশ রেগেই বলি,
–“ডিবোর্স কেউ ইচ্ছা করে বা মজা করে দেয় নাকি।এটাতো দুঃখের কথা সুখের নয়।”
নিদ্র আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলে।পরবর্তি আর কো‌নো কথা বলে না নিদ্র।

একপর্যায়ে গাড়ি এসে থামে বাসার সামনে।নিদ্র নিজে নেমে আমাকে না নিয়ে চলে যায়।আমি তাকে ডাকতে গিয়েও ডাকি না।মনের মধ্যে শত অভিমান জমে যায়।বাপরে,আমাকে রেখেই চলে গেল।আমি চুপ করে একপা খুঁড়িয়ে নামার চেষ্টা করি।এই মুহুর্তে আমার গালে একটা থাপ্পড় পরে।অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকাই সেই ব্যাক্তিটার দিকে।নিদ্র রেগে বলে,

–“একা নামতে যাচ্ছিলে কেন?পড়ে গেল কি হবে?আসলেই তোমার কমনচেন্স নেই।”
এই বলে আমাকে কোলে তুলে নেয়।বাসায় প্রবেশ করে নিচে কেউ না থাকায় কোনো প্রকার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না আমাকে।নিদ্র আমাকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।এবার চিন্তা দেখা দেয় গোসল করা নিয়ে।নিদ্র বলে,
–“আমি তোমাকে বাথট্যাবে বসিয়ে দিয়ে আসছি,তুমি গোসল সেড়ে নাও।আমি আর বেশি কিছু করতে পারবো না।কারন কয়েকদিন পরই আমাদের ডিবোর্স।”

চলবে..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ