আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৫+৬

0
2887

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৫ম_পর্ব

আমার এতক্ষন থেকে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনে নিদ্র রাগার বদলে হো হো করে হেসে ওঠে।তার হাসির কারনটা বোঝার চেষ্টা করি আমি।নিদ্র তার কান থেকে এয়ারফোনটা খুলে আমার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে নেয়।তারপর হাসতে হাসতে গোলাপটা মাটিতে ফেলে দেয়।আমি বুঝতে পারি তার উত্তর কি?লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখটা।আমি উঠে দাঁড়িয়ে নিচে নামার জন্য প্রস্তুত হই।এই মুহুর্তে আমার হাতটা টেনে ধরে নিদ্র।বেশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই আমি।নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,

–“ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে বলে এই না যে ভালোবেসে ফেলেছি।একটা মেয়ে কিভাবে এত বেহায়া হয়?আপনার ফ্যামিলি প্রবলেম আছে।মনে রাখবেন আট মাস পর ডিবোর্স।”

আমি তার কথা শুনে কোনো উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।সিদ্ধান্ত নেই কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ি যাব।অনুমতি নেয়ার জন্য নিদ্রের বাবার রুমে গেলে তিনি অনুমতি দিয়ে দেন।নিদ্রকে আমার সাথে নিতে বললে আমি না করে দেই।এতে বেশ অবাক হন তিনি।অবশেষে ড্রাইভারকে আদেশ দেন আমাকে রেখে আসতে।

তার কথা মতো নিদ্রকে না জানিয়ে রওনা হয়ে যাই বাসার উদ্দেশ্য।ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে সুর্য ডুবতে শুরু করে।চোখে পানি,বুকে একরাশ অভিমান নিয়ে চলেছি বাসার উদ্দেশ্যে।একপর্যায়ে সিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ি।ড্রাইভার আমাকে জাগিয়ে দেয় বাসার সামনে এসে।আমি গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করি।আমাকে একা দেখে খানিকটা অবাক হন আমার বাবা।আ‌মি তার দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যাই।

রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।বাবা বাহিরে থেকে ডাকতে শুরু করে।আ‌মি খানিকটা চিল্লিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলি,
–“বাবা,আমি একটু পরে বের হচ্ছি।”
বাবা আর কোনো কথা না বলে চলে যায়।আমি উপুর হয়ে বালিশে মাথা গুজে শুয়ে থাকি।চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে শুরু করে বিপুল পরিমাণে।কি ভুল করেছি আমি?কি ভুল করেছি?তাকে নিয়ে সংসার সাজাতে চেয়েছি।তার জন্যেই এত বেয়াহা হয়েছি।তার জন্যেই নিজের অবস্থা থেকে নিচে নেমেছি।শুধুমাত্র তাকে ভালোবাসি বলে।কিন্তু এটা ভাবিনি যে একপক্ষের ভালোবাসা দিয়ে কোনো কিছু হয় না।একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম শুধু।একটু,এতটুকু ভালোবাসাও কি দেয়া যায় না?

এই মুহুর্তে মাকে খুব মনে পড়ছে।মায়ের শান্তনা গুলো।সত্ত্যি মা যে আমার জীবনে কি ছিল সেটা এখন বুঝতে পারছি?চিৎকার করে মাকে ডাকতে চাচ্ছে এই বেয়াহা মনটা।মনে হচ্ছে কেউ নিরবে আমার ‌মাথায় হাত বোলাচ্ছে।মাথা তুলে তাকাই মাথার দিকে।মাকে দেখতে পাই সেখানে।তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,

–“পাগলি মেয়ে,মায়েরা সব স‌ময় সন্তানের পাশে থাকে।সন্তানের সব কাজ কর্মে তাদের সঙ্গে থাকে মায়েরা।মা জাতি এমন এক জাতি,যারা সন্তানকে ছাড়া কোথাও থেকে শান্তি পায় না।মা জাতি একটু বেয়াহা হয় রে।সন্তানের জন্যে তারা সব করতে পারে।আমি সব সময় তোর সাথে আছি আমার পাগলি মেয়ে।কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।খবরদার,নিজেকে কখনো বেয়াহা বলবি না?”

এই বলে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যান তিনি।আমি বালিশে মাথা গুজে নিরবে কাঁদতে থাকি।মনে হচ্ছে মা সত্ত্যি সত্ত্যি এসেছিল।তার কথাগুলো এখনো কানে বাজতেছে।তিনি বলে গেলেন,”পাগলি মেয়ে,মায়েরা সব স‌ময় সন্তানের পাশে থাকে।সন্তানের সব কাজ কর্মে তাদের সঙ্গে থাকে মায়েরা।মা জাতি এমন এক জাতি,যারা সন্তানকে ছাড়া কোথাও থেকে শান্তি পায় না।মা জাতি একটু বেয়াহা হয় রে।সন্তানের জন্যে তারা সব করতে পারে।আমি সব সময় তোর সাথে আছি আমার পাগলি মেয়ে।কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।খবরদার,নিজেকে কখনো বেয়াহা বলবি না?”

আমি এবার উঠে বসে পড়ি।মায়ের কথাটা মনে করি,কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।হুম আর কান্না করবো না।সামনের বিপদটা তাড়ানোর চেষ্টাই করবো।এর জন্য ভালো হতে হলে ভালো হবো,বেয়াহা হতে হলে বেয়াহা হব।চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়াই আমি।ব্যাগ থেকে সুন্দর একটা শাড়ি বের করে শাওয়ার নেয়ার জন্য ওয়াসরুমে প্রবেশ করি।

ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে বসে পড়ি আয়নার সামনে।আজ মনের মতো সাজবো।মা মারা যাওয়ার পর কখনো সাজিনি আমি।কিন্তু আজ সাজবো।নিজের এত বড় পরিবর্তন দেখে নিজেই অবাক হই।সবশেষে চোখে কাজল দিয়ে উঠে দাঁড়াই আমি।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিঁখুত ভাবে দেখতে শুরু করি।সত্ত্যি অনেক সুন্দর লাগছে আজকে আমাকে।

আমি দরজা খুলে বের হই রুম থেকে।বাবা সোফার মধ্যে বসে আছে কপালে হাত দিয়ে।আমি গিয়ে বাবার সামনের সোফাটায় বসতে বসতে বলি,
–“বাবা,তুমি কি কোনো কারণে চিন্তিত?”

হঠাৎ আমার কথা শুনে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায় বাবা।আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে বেশ অবাক হয়েছেন তিনি সেটা বুঝতে পারছি।আমি উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলি,
–“চা খাবে না কফি।”

বাবা এবার সোফায় হেলাম দিয়ে তার মুখের হাসিটা বজায় রেখে বলে,
–“চা”
আমি কিচেনে যাই যা তৈরি করতে।কিচেনে চা তৈরি করতে করতে একটু আঘাত লাগে ক্ষত স্থানটায়।গোসলের সময় ব্যান্ডেজটা খোলার পর আর ব্যান্ডেজ করা হয়নি এখনো।আমি চা তৈরি করে নিয়ে গিয়ে বাবার সামনে বসে পড়ি।সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি চা খেতে খেতে বাবাকে জানাবো ডিবোর্সের কথাটা।পরক্ষনে আবার ভাবি তিনি খুব কষ্ট পাবেন।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেই যা হবার আমার উপর দিয়েই হোক,বাবাকে কষ্ট দেয়ার মানে নেই।আমিই বেয়াহা হব,আমি পার্সোনালিটি হীন হবো,তবুও বাবার যেন কোনো কষ্ট না হয়।

আমি একটা কাপে চা ঢেলে এগিয়ে দেই বাবার দিকে।বাবা হাসি মুখে চায়ের কাপটা নিয়ে খেতে শুরু করে।আমিও একটা কাপে চা নিয়ে খেতে শুরু করি।খাওয়ার সময় বাবার সাথে না বিষয়ে অনেক কথা হয়।পরিশেষে জানতে পারি,আজকে বুয়া আসবে না।সো,আমাকেই রান্না করতে হবে।

বাবা বাজারের পথে রওনা হয়ে পড়েন ব্যাগ নিয়ে।আমি ছাঁদে যাই আমার লাগানো গাছ গুলো দেখতে।রাতের বেলা ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই বললেই চলে।তবুও আজকে আসলাম।বাবা বের হয়ে রিকশা ডেকে তাতে চড়ে বসেন।রিকশাওয়ালা চলতে শুরু করে।আমি উপর থেকে সব দেখছিলাম।এমন সময় ‌একটা কার এসে থামে আমাদের বাড়ির সামনে।কারটা যে নিদ্রের সেটা বুঝতে পারছি।কিন্তু এতো রাতে নিদ্র কেন সেটা বুঝতে পারছি না।

নিদ্র গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে প্রবেশ করে।আমি তারাতারি করে নিচে নামতে শুরু করি।একপর্যায়ে সোফার ঘরে এসে দেখি নিদ্র সোফার উপরে পড়ে আছে।আমি তার কাছে যেতেই একটা বাজে গন্ধ পাই।সে যে ড্রিঙ্ক করেছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার।সে এখন অচেতন হয়ে পড়ে আছে।

দ্রুত ভাবনা চলছে আমার মাথায়।নিদ্রকে এই অবস্থায় দেখলে বাবা খুব কষ্ট পাবেন।তার একমাত্র মেয়ের জামাই কিনা রাত-দুপুরে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে শশুর বাড়ি আসে।এটা প্রত্যেকটা শশুরের জন্যই কষ্টের।আমি তারাতারি করে নিদ্রকে দাঁড় করাই।নিদ্র আমার কাধে মাথা দিয়ে এলোমেলো পা ফেলতে থাকে।অনেক কষ্ট করে তাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসি আমি।এখন একটাই চিন্তা গাড়িটা কোথায় রাখবো।

এর মধ্যে এসে উপস্থিত হন বাবা।তিনি গাড়িটা দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করে,
–“জামাই এসেছে?কোথায় ডাক?”
আমি আমতা আমতা করে বলি,
–“বাবা,ওনার খুব মাথা ব্যাথা করতেছে,তাই এসেই ঘুমিয়ে গেছে।কাল সকালে দেখা করিও।”

বাবা আর কোনো কথা না বলে বাজারের ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে চলে যান।সেদিনের মতো খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে আসি আমি।নিদ্রকে বিছানায় রেখে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ি মেঝেতে।যখনই চোখে ঘুমটা আসবে আসবে ভাব ঠিক তখনই নিজের ঘাড়ে কারো নিখুঁত ছোয়া পাই আমি।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৬ষ্ট_পর্ব

ধীরে ধীরে নিশ্বাসের বাতাসটা আরো প্রখর হতে থাকে আমার ঘাড়ের কাছে।আমি পিছনে তাকানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হই।আমাকে পিছন থেকে খুব জোড়ে ধরে রেখেছে নিদ্র।একপর্যায়ে সে আমার ঘাড়ের মধ্যে এলো-পাতারি চুমু খেতে শুরু করে।দুহাত দিয়ে কোলে তুলে নেয় আ‌মাকে তারপর শুইয়ে দেয় বিছানার মধ্যে।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি আদিলগ্ন থেকে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল এসে দাড়াচ্ছেই ওই ব্যার্থতা।

নিদ্র এবার আমার উপরে উঠে হাতদুটো দুদিকে করে চিপে ধরে।তারপর মুখ আস্তে আস্তে এগিয়ে আনে আমার মুখের দিকে।একপর্যায়ে তার ঠোট দিয়ে আমার ঠোটটা ছুঁইয়ে দেয়।আমার শরিরের মধ্যে এক অজানা অনুভূতির শিহরণ বয়ে যায়।আমি আমার মাথাটা কাত করে ফেলি যাতে নিদ্র আর কিস করতে না পারে।এবার নিদ্র তার একহাত দিয়ে টেনে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

–“অযাথা বিরক্ত করছো আমাকে,আমার কাজ আমাকে করতে দাও!”

তার কথা শুনে মাথায় রাগ উঠে যায় আমার।শয়তান পোলা আমারে থাপ্পড় মাইরা আবার আসছে ভাব জমাইতে।কিন্তু নিদ্র হঠাৎ আপনি থেকে তুমিতে চলে আসলো কেন বুঝতে পারছি না?পরবর্তিতে আবার ভাবলাম সে তো এখন মাতাল তাই হয়তো ভুলভাল বলছে।কালকে মাতাল থেকে ভালো হলে বলবে,
আপনি ইচ্ছা করে আমার সাথে এসব করেছেন।যাতে আমি আপনাকে ডিবোর্স দিতে না পারি।কিন্তু আপনার ধারনা ভুল,আমি আপনাকে ডিবোর্স দেবোই দেব।

সুতরাং আমি ভাবতে থাকি এখন কি করা যায়?এখনকার কথাটা নয় পরবর্তির কথা ভাবতে হবে।এদিকে নিদ্র একাধারে আমার উপর রোমান্টিক অত্যাচার করেই চলেছে।আমি ভাবছি এখন তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করলে পরবর্তিতে বিশাল প্রবলেম হবে।যথারীতি আট মাস পর আমাদের ডিবোর্স হলে বাচ্চাটার কি হবে?

এবার নিদ্র আমার ঠোটের সাথে তার ঠোট মিশিয়ে দেয়।আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকি কিভাবে এখন নিজেকে রক্ষা করবো?অনেক বার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও নিদ্রের শক্ত হাতের সাথে পেরে উঠিনি।এবার অন্য বুদ্ধি বের করতে হবে সেটাও ভাবছি।কিন্তু কি বুদ্ধি?

আমি এবার হঠাৎ করেই নিদ্রকে নিচে শুইয়ে দিয়ে উঠে পড়ি।নিদ্র কিছুক্ষন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর মাথা নিচু করে বলে,
–“তুমি ভাবছো আমি এখন মাতাল,তোমার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করলে ডিবোর্সের পর বাচ্চাটার কি হবে?আজকে আমি নিজে শারিরিক সম্পর্ক করে,কাল সকালে উঠে ঠিকই চলে যাব তোমাকে দোষারোপ করে।এসবই ভাবছো তাই না?”

আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।সে ঠিক আমার মনের কথাগুলো বলছে।আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিরবে মাথা নাড়াই।নিদ্র এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসি-মুখে বলে,
–“আমি এখন মাতাল নই,আমি সম্পুর্ন ঠিক আছি।”

তার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকাই তার দিকে।তারমানে এতক্ষন সে ইচ্ছা করেই এসব করছিল।কিন্তু সে তো আমাকে পছন্দ করে না,তাহলে এসব কেন করছিল?
নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“এখন তুমি ভাবছো,আমি তো তোমাকে পছন্দ করি না তাহলে এসব কেন করছি?তাহলে শোন,আমি এখন তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি।”

এই বলে নিদ্র এসে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়ে।তারপর পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে আমার দিকে এগিয়ে ধরে বলে,
–“সত্ত্যি এতদিন আমি তোমাকে নিয়ে যা যা ভেবেছি তা ভুলই ভেবেছি।আমি ভেবেছিলাম কিভাবে এতো তারাতারি কারো প্রেমে পড়ে যেতে পারে কেউ?কিন্তু আজ বুঝলাম তুমি ঠিকই ছিলে।এতদিন তোমাকে বেহায়া ভেবেছিলাম।আসলে আমি তখন বুঝিনি ভালোবাসা কি জিনিস?তুমি আমাকে ভালোবেসে ছিলে।কিন্তু আমি তখন সেটা অনুভব করতে পারিনি।আজ বুঝতে পারছি।তুমি যখন চলে আসলে আমি রুমে আসতেই রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে।কিছুক্ষন থাকার পর নিজেকে খুব একা মনে হয়।ঠিক তখনই বুঝতে পারি তোমার কষ্টটা।আমি যেমন তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না,তেমনি তুমিও ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও তাকে ছুতে পারছিলে না।তোমার বেহায়া হওয়ার কারন বুঝতে পারছিলাম তখন।শেষ কথা আমি এখন তোমাকে অনেক ভালোবাসি,নিজের থেকেও বেশি।আই লাভ ইউ।”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি নিদ্রের দিকে।কয়েকঘন্টার মধ্যে একটা মানুষের মধ্যে এতটা পরিবর্তন কেমনে সম্ভব সেটা বুঝতে পারছি না।নিদ্র হাটুগেড়ে আমার সামনে বসে আছে রিংটা এগিয়ে ধরে।আমার মাথায় অন্য ভাবনা চলছে।এটা যদি নিদ্রের একটা প্লান হয়ে থাকে আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার বা আমার সাথে সম্পর্ক করার,তাহলে আমার সেই ফাঁদে পা দেয়া উচিত হবে না।আর আমি ভুলে যাচ্ছি কেন একটা সময় আমিও তাকে ভালোবাসতাম কিন্তু সে আমাকে অপমান করেছিল।আমি তাকে অপমান করবো না কিন্তু তার এই প্রস্তাবে রাজিও না।

এসব ভাবার পর আমি নিদ্রের হাত থেকে আংটিটা নিয়ে তার হাতেই আবার দিয়ে দেই।তারপর নিজের মুখে রহস্যময়ী একটা হাসি নিয়ে এসে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“ভালোবাসা এতটা সোজা না মি.নিদ্র।মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে ভালোবাসা বোঝা যায় না।আমি‌ একটা সময় আপনাকে ভালোবাসতাম তখন আপনি আমাকে অপমান করতেন।এখন আমি চাইলে আপনাকে অপমান করতে পারি কিন্তু করবো না।আপনি কি ভালোবাসা মানে কি জানেন মি.নিদ্র?কয়েকঘন্টা নিজেকে একা মনে করা মানে ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা হলো…”

এবার নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে থামিয়ে দেয়।আমি অবাক হয়ে তাকাই তার দিকে।নিদ্র তার হাটু ঝাড়তে ঝাড়তে আমাকে বলে,
–“আমাকে ভালোবাসা মানে কি বোঝাচ্ছো।আমাকে,এই নিদ্র চৌধুরীকে।ওকে ডান,ভালোবাসা কাকে বলে,কত প্রকার ও কি কি,এবং তাদের নাতি-পুতি সহ সব কিছু তোমাকে বুঝিয়ে দেব আজকে।সাথে ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও বলে দেব।”

এই বলে নিদ্র আমাকে ধরে ফেলে।নিজের অবস্থা যে ভালো পর্যায়ে না সেটা ঢেড় আন্দাজ করতে পারছি আমি।নিদ্র আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আজকে মেয়ে বলে আপনার মতো শক্তি নাই।আপনার শক্তি আছে দেখে আ‌মার উপর জোড় খাটাচ্ছেন।এর জন্য দাবি থাকবেন।”

নিদ্র তার ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো বের করে হাসি দিয়ে বলে,
–“শক্তি আর বুদ্ধিটাই তো আমার অহংকার।”
আমি তার এই কথাটার মানে বুঝতে পারি না।এই মুহুর্তের নিদ্রের মোবাইলে একটা ফোন আসে।নিদ্র মোবাইলটা বের করে পকেট থেকে।আমি তার মোবাইলের নাম্বারটা দেখে চমকে উঠি।ইংরেজীতে বড় বড় করে লেখা আছে,’Baby Kh’

দ্রুত ভাবনা চলতে শুরু করে আমার মগজে।নিদ্র অন্য একজনকে ভালোবাসে।তাহলে এতক্ষন আমার সাথে নাটক করছিল।তাতে কি আমিতো এখন আর তাকে ভালোবাসিনা।সে জাহান্নামে যাক।নিদ্র ফোনটা কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকায়।তার চাহনি আএার রাগ বাড়িয়ে দেয় প্রচুর।আমি রাগি গলায় চিল্লিয়ে বলি,

–“ভালোবাসেন একজনকে সম্পর্ক করেন আরেকজনের সাথে।চরিত্রহীন লম্পট।ধুর হন।”

আমার কথা শুনে নিদ্র প্রচুর রেগে যায়।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে