Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৩+৪

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-৩+৪

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৩য়_পর্ব
..
নিদ্রের সাথে গাড়িতে করে রওনা দেই অফিসের পথে।অফিসে পৌছে নিদ্র গাড়িটা পার্কিং করে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ধমক দিয়ে বলে,
–“চলুন তারাতারি!”
এই বলে তিনি হাটতে শুরু করেন।আমিও তার পিছন পিছন হাটতে শুরু করি।অফিসের দরজায় যেতে দারোয়ান আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।আমি ভালোভাবে লক্ষ করে দেখি,ওমা এটাতো আমার আগের অফিসটার থেকে ৪গুন বড়।

ভিতরে প্রবেশ করতেই শুটকি আকৃতির রুশা নামক ফালতু মেয়েটা এসে নিদ্রের সামনে দাঁড়ায়।তারপর নিদ্রের সাথে হাত মিলিয়ে খানিকটা সন্দেহ চোখে তাকায় আমার দিকে।রুশা এখনো নিদ্রের হাতটা ধরে আছে।নিদ্র এবার নিজ দায়িত্বে নিজের হাতটা সড়িয়ে নেয় রুশার কবল থেকে।নিদ্রের এই কাজ দেখে আমার মনটা বেজায় খুশি হয়।

–“নিদ্র,এইটা ওই মেয়েটা না।যে,নাইট ক্লাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল।”কথাটা নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে রুশা।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”হুম,ওই মেয়েটাই।”

রুশা সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা কড়া গলায় বলে,
–“এখানে কেন এসেছো তুমি?”
আমার কথাটার উত্তর নিদ্রই দিয়ে দেয়।সে রুশার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“ও এখানে জব করবে।রুশা,তুমি তোমার কাজে যাও আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি আমার রুমে।”

রুশা আর কিছু না বলে চুপ করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।তার এরকম তাকানো মোটেও পছন্দ হয় না আমার।আমি তারাতারি নিদ্রের সাথে তার রুমের দিকে রওনা হই।রুশা কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে রওনা হয়।

দরজা ঠেলে আমাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি সম্পুর্ন রুমটা।অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে সব কিছু।নিদ্র নিজে ডেক্সের ওপাশের চেয়ারটাতে বসে,আমাকে তার সামনের চেয়ারটাতে বসতে বলে।আমি তার কথামতো তারাতারি করে বসে পড়ি তার সামনের চেয়ারটাতে।নিদ্র এবার আমার দিকে ঝুঁকে খানিকটা নরম গলায় বলে,

–“যতদিন রুশা আছে ততদিন আপনার কোনো কাজ নেই।রুশা গেলে তার জায়গাটাতে আপনাকে দেয়া হবে।এখন কি করবেন বলেন?”

আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলি,
–“আপনি জানেন!”
নিদ্র এবার ঝোঁকা থেকে উঠে চেয়ারে হেলান দিয়ে রুবিক্স কিউবটা ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলে,
–“আমি বাবাকে বলতে চাইছিলাম যে,পরের মাস থেকে এটেন্ড করতে।কিন্তু তিনিতো আমার কোনো কথাই শুনলেন না।আর মাত্র ১০দিন মাস শেষ হতে।আপনি একটু বুঝিয়ে বলবেন বাবাকে যে,পরের মাস থেকে জয়েন করবেন।অযাথা এখানে এসে বসে থাকার মানে হয়।”

আমি তার কথা শুনে নিজের মুচকি হাসিটা মুখের মধ্যে রেখে বলি,
–“না,আমি আপনার সাথে অফিসে আসবো প্রতিদিন।দরকার হলে আপনি কাজ করবেন আর আমি বসে বসে দেখবো।তবুও আসবো।”

নিদ্র আমার কথাটা শুনে হাল্কা রেগে যায়।সে একটু চিল্লিয়ে বলে,
–“থাকুন তাহলে বসে।আপনার ভালোর জন্য বলছিলাম আর আপনি।থাকুন বসে থাকুন”
এই বলে নিদ্র একটা ফাইল টেনে নিয়ে সেটা দেখায় মনোযোগ দেয়।আমি নিদ্রের রাগটা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়ার জন্য শয়তানি করে বলি,
–“হুম,বসে বসে আমার বরকে দেখবো।”

কথাটা বলেই বুঝতে পারি কতটা ভুল করে ফেলেছি।নিদ্র বেশ রেগে তাকায় আমার দিকে।তারপর খানিকটা কড়া গলায় বলে,
–“ফালতু কথা বলবেন না।আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মা‌নি না।আর এমনিতে আটমাস পর আমাদের ছাড়া-ছাড়ি হবে।সো ডোন্ট কল মি হাসবেন্ড,ওকে।”

নিদ্রের কথা শুনে বুঝতে পারি সে কথাটা শুনে বেশি রাগেনি।উপরে উপরে রাগি ভাব ধরে রাখলেও নিচে বেশি রাগ নেই তার।তাই আমি উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে ঝুঁকে বলি,
–“নট ওকে,আমি আপনাকে বর বলেই ডাকবো।এতে যদি আপনার সমস্যা থাকে তাহলে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পানি খেয়ে আসুন।তবুও আমি আপনাকে বর ডাকবো।আর আপনি আমাকে বউ হিসেবে মানেন না তাতে কি হয়েছে?আমিতো আপনাকে বর হিসেবে মানি।”

নিদ্র রাগে দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দেই।আমার এই হাসিটা তার রাগ ১গুণ থেকে ৩গুণ বাড়িয়ে দেয়।নিদ্র কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে পিয়নকে ডাকে।পিয়ন আসতেই নিদ্র খানিকটা চিল্লিয়ে বলে,

–“কফি নিয়ে আসো!”

পিয়ন দৌড় দেয় কফি আনতে।আমি নিদ্রকে ধরে আস্তে করে বসিয়ে দেই নিজের চেয়ারে।তারপর নিজে গিয়ে বসে পড়ি নিজের চেয়ারে।নিদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।আমি নিদ্রের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে বলি,

–“দেখেন,আপনি আমাকে কেন স্ত্রী হিসেবে মানেন না একটা কারণ বলবেন?”

এমন সময় অনুমতি ছাড়া দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে রুশা।সে সন্দেহ চোখে তাকায় আমার দিকে।তারপর নিদ্রের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায় তার দিকে।নিদ্র মাথা তুলে রুশার দিকে তাকিয়ে রুবিক্স কিউবটা হাতে নেয়।রুশা এসে বসে পড়ে আমার পাশের চেয়ারটাতে।

নিদ্র হাসি মুখে তাকায় রুশার দিকে।রুশা নিদ্রের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে,
–“নিদ্র,আমাকে আজকে বাসায় যেতে হবে।তাই ছুটি লাগতো!”
নিদ্র হাসি মুখে রুশাকে ছুটি দিয়ে দেয়।রুশা আরো একবার আমার দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে।

‌নিদ্র রুশার দেয়া ফাইলটা খুলতে খুলতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“আপনিও কি এখনি বাসা যাবেন?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,না।আমি আমার বরের সাথে এসেছি বরের সাথে যাব।
আমার কথায় নিদ্র প্রচুর রেগে যায় কিন্তু কোনো কথা বলে না।আমি যে দিন দিন নিদ্রের প্রতি দুর্বল‌ হয়ে পড়েছি সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।নিদ্রের প্রতি জন্মাচ্ছে আমার ভালোবাসা।

এমন সময় পিয়ন এসে কফি দিয়ে যায়।নিদ্র এককাপ কফি আনতে বললেও পিয়ন দুইকাপ নিয়ে এসেছে দেখে নিদ্র অবাক হয়।সে অবাক হয়ে পিয়ন রহিম মিয়াকে জিজ্ঞাসা করে,দুইকাপ আনার কারন কি?

রহিম মিয়া তার হলদেটে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হার,আন্নি মোরে এককাপ আইনবার কইছেন কিন্তু মুই দুইকাপ লইয়া আইছি।কারন এইযে হ্যাডামটা আছে না,তার জইন্যে এককাপ আর আন্নের জইন্যে এককাপ।”

রহিম মিয়ার কথা বুঝতে অনেকক্ষন সময় লাগে আমার।নিদ্র রহিম মিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“গর্দভ ওটা হার না স্যার হবে।আর হ্যাডাম নারে ম্যাডাম।যা দুইকাপ আনছোস ভালো করছিস।”

রহিম মিয়া পুনরায় তার হলদেটে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হার মুই তেইলে গেনু।হ্যাডাম গেনু মুই।”
এই বলে রহিম মিয়া রুম থেকে বের হয়ে যায়।রহিম মিয়া বের হইতেই আমি ‌নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“এনার কথা কেমনে বোঝেন।আমার বস হইলে কতদিনে বের করে দিত।”

নিদ্র কফির কাপটাতে চুমু দিতে দিতে বলে,
–“রহিমকে বাবা খুব পছন্দ করে।রহিমও বাবাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।আমারও রহি‌ম মিয়াকে ভালোলাগে।তার কথাগুলো শুনতে মন চায়।তাইতো শুরু থেকে বাবার সবাইকে চেঞ্জ করলেও রহিমকে রেখে দিছে অফিসে।”

এই বলে নিদ্র কফির কাপ রেখে উঠে দাঁড়িয়ে একটু বাহিরে যায়।আমি সাথে সাথে নিদ্রের কাপটা নিজে নিয়ে আমারটা নিদ্রের কাপের জায়গায় রেখে দেই।আমি এখন বেশ বুঝতে পারছি আমি নিদ্রকে সম্পুর্ন মনটা দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু আটমাস পর এই ভালোবাসাটা ছিন্ন হয়ে যাবে ভেবে খুব কষ্ট পাই।

নিদ্র রুমে প্রবেশ করে চেয়ারে বসে পড়ে।কফির কাপটার দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড রেগে যায় সে।হাত দিয়ে তুলে আছাড় মারে কাপটাকে।তারপর রাগি চোখ নিয়ে তাকায় আমার দিকে।একপর্যায়ে চিল্লিয়ে বলে,
–“গেট লষ্ট।বের হন আমার অফিস থেকে।”

হঠাৎ নিদ্রের এরকম রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে পারিনা আমি।নিদ্রের চিৎকার শুনে অফিসের সবাই ‌এসে দাড়িয়েছে দরজার বাহিরে।কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা আমি?এমন সময় একটা কাজ করে ফেলি উজবুকের মতো।আমি নিদ্রের ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিশিয়ে দেই।দরজার বাহিরে দাঁড়ানো সবাই‌ সাথে সাথে সেখান থেকে চলে‌ যায়।নিদ্রের রাগের পরিমাণ চুড়ান্ত পর্যায় ছাড়িয়ে যায়।চোখ-মুখ লালটকটকে রং ধারন করে।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#৪র্থ_পর্ব

নিজেকে অনেক বেহায়া মনে হচ্ছে সাথে কমনসেন্সলেসও।কিভাবে এই কাজটা করতে পারলাম?নিদ্রর তো রেগে যাওয়া ঠিকই আছে।অফিসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নিদ্র আমাকে থাপ্পর মেরে বের করে দেয় রুম থেকে।তারপর সে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্য।আমিও আর সেখানে না থেকে হাটতে শুরু করি।অফিস থেকে বের হওয়ার সময় রহিম মিয়া সামনে এসে এক গাল হেসে বলে,

–“হ্যাডাম,মন খারাপ করিয়েন না।হারের একটু রাগ বেশি।”

আমি রহিম মিয়ার কথায় স্লান একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে আসি অফিস থেকে।হাটতে শুরু করি বাসার উদ্দেশ্যে।নিজেকে বেহায়া ভাবার কারন অনেক আছে।কিন্তু এই মুহুর্তের কারনটা খুবই বাজে।আমি এখনো বুঝতে পারছি না কেন তখন কিসটা করলাম।যদি কাউকে এই কথা বলি তাহলে সবাই পাগল বলবে এটা বুঝতে পারছি।কিন্তু সত্ত্যি আমি বুঝতে পারছি না তখন হঠাৎ করে আমার কি হলো?আজ যদি আমার বিয়েটা নিদ্র এর সাথে না হতো না হলে এই দিনটা দেখতে হতো না।সত্ত্যি আমি নিদ্রের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছি।এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসি।

বাসার সামনে এসে দেখি নিদ্রের গাড়িটা বাহিরে দাঁড় কড়ানো।আমি মাথা নিচু করে ভিতরে প্রবেশ করি।নিচে কেউ নেই দেখে সোজা রওনা হই রু‌মের দিকে।রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পাই দরজাটা লাগানো।হাত দিয়ে বুঝতে পারি শুধু আলগা করে আটকে দেয়।আমি হাত দেয়ার সাথে সাথে খুলে যায় দরজা।আস্তে করে রুমের ভিতরে প্রবেশ করি।রুমের চারদিকে তাকিয়ে নিদ্রকে দেখার চেষ্টা করি।কিন্তু নিদ্র রুমের কোথাও নেই।

আমি ধপ করে বসে পড়ি বিছানার মধ্যে।ঝট করে খুলে যায় ওয়াসরুমের দরজা।হাফপ্যান্ট পড়া অবস্থায় ওয়াসরুম থেকে বের হয় নিদ্র।আমি তার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ নামিয়ে নেই।আর তার প্রতি দুর্বল হওয়া যাবে না।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যাই।নিদ্র আমার দিকে তাকালো কিনা বুঝতে পারছি না।তবে কিছুক্ষন পর আলমারি খোলার আওয়াজ হয়।নিদ্র মনে হয় সেখান থেকে শার্ট বের করছে পড়ার জন্য।

আমার ধারনাই ঠিক।নিদ্র একটা শার্ট বের করে পড়ে ফেলে।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি নিদ্রের যাওয়ার দিকে।যে মানুষটা কালকে রাতে ভালো করে কথা বললো সে আজ কথাই বলছে না।খুব কষ্ট লাগছে।তবে এই ভেবে একটু ভালো লাগে যে,তার সাথে তো আট মাস পর ডিবোর্স হবে।কথা বলুক আর না বলুক আমার কি?তবুও কথা বলার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।যদিও বিরাট ভুল করে ফেলেছি।

আমি আবার ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি।চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।মনের মধ্যে চলে আসে আট মাস পরে কি করবো তার ভাবনা?বাসায় গিয়েও থাকতে পারবো না।বাবা থাকলেও মা অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে গেছে।মাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে ওই বাড়িতে থাকা কঠিন।তাইতো বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে থাকতাম।আট মাস পর কোথায় থাকবো আমি?

এই মুহুর্তে মাথায় চাপ দেয় পুরনো একটা খারাপ অভ্যাস।কোনো কিছু বুঝতে না পারলে হাত কাটা।এটা আমার অনেক দিন আগের অভ্যাস।সামনে একটা ফলকাটা চাকু দেখতে পাই।চাকুটা হাতে নিয়ে আস্তে করে কাটতে শুরু করি হাতটা।চাকু দিয়ে লিখে ফেলি নিদ।র ফলাটা দেয়ার আগেই আমার কাছ থেকে চাকুটা নিয়ে নেয় কেউ একজন।

অবাক হয়ে ‌মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে নিদ্র নামক লোকটা।তার চোখ গুলো দেখে আমার মনটা পুনরায় ভয় পেয়ে যায়।নিদ্র তার হাতটা তুলে বসিয়ে দেয় গালের উপরে।একটু জোড়ে হওয়ায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে আমার।

নিদ্র চাকুটা টেবিলের উপর রেখে কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।এই অবস্থায়ও নিদ্র আমার সাথে কথা বললো না দেখে বুঝতে পারি সে প্রচন্ড রেগে আছে আমার উপর।হয়তো আর কখনো কথা বলবে না।এই মুহুর্তে একটা বাক্স নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে পড়ে আমার সামনে।আমার কাটা হাতটা তার নিজের হাতে তুলে নেয়।তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে ওয়াস করতে শুরু করে হাতটা।মাঝে মাঝে একটু আধটু লাগছে আমার।তবে নিদ্রের মুখটা দেখে সবটা ভুলে যাচ্ছি আমি।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়েই পড়ছে।মনটা বলছে,এই ছেলেটা এত পাষাণ কেন?একবারও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।কথাও বলছে না।সে কি আমার মনটা বুঝতে পারছে না,বুঝতে পারছে না আমার কান্না করার কারণ।

আমি নিদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে।মনটাকে বোঝাতে পারছি না যে আটমাস পর আমরা আলাদা হয়ে যাব।

নিদ্র আমার হাতটা ব্যান্ডেজ করা শেষ করে মুখ তুলে তাকায় আমার দিকে।আমি তারাতারি নিজের চোখটা সড়িয়ে নেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“এসব কি?হাত কাটছেন কেন?”

নিদ্রর কথা শুনে আমি চোখ তুলে তাকাই তার দিকে।কোনো কথা না বলে ঢ্যাপঢ্যাপ করে দেখতে থাকি তাকে।নিদ্র আমার চোখের সামনে একটা আঙ্গুল তুলে ধরে বলে,
–“বাদ দিন।আর এরকম করবেন না।”

এই বলে উঠে দাঁড়ায় নিদ্র।তারপর এয়ারফোন আর মোবাইলটা নিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।আমি এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকি।নিদ্র বের হয়ে গেলে মনটা এক অজানা অনুভূতিতে ভরে যায়।আমি কতটা বেহায়া সেটা বুঝতে পারছি নাহলে এই কয়েকদিনের মধ্যে একটা ছেলের প্রেমে পড়ে যাই।

মুখে-ঠোটে কথা বলতে পছন্দ করি ছোটবেলা থেকেই।তাই সিদ্ধান্ত নেই মনের ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেব নিদ্রকে।রিজেক্ট করবে বুঝতে পারছি,তবুও বলেই দেখি।

মনের কথা বলার জন্য রওনা হই ছাদের দিকে।ছাঁদে গিয়ে প্রথমে চুপ করে একটা ফুল ছিড়ে নেই নিদ্রের বাগান থেকে।তারপর আস্তে আস্তে এগোতে থাকি নিদ্রের দিকে।একপর্যায়ে গিয়ে বসে পড়ি নিদ্রর ঠিক পিছনে।তারপর চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করি মনের কথাগুলো।

সব কথা শেষ হতেই ঘুড়ে দাঁড়ায় নিদ্র।আমি তার দিকে ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলি,আই লাভ ইউ।
নিদ্র আমার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে এমন একটা কাজ করে যা আমি ভাবতেও পারিনি।হায় আল্লাহ..

চলবে..ইনশাআল্লাহ

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ