#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১৪তম_পর্ব
“হ্যালো গাইস,আজকের পার্টিটার মূল উদ্দেশ্য হয়তো সবাই জানেন না।সবাইকে বলে রাখছি আজকের পার্টিটার মুল উদ্দেশ্য আমাদের ডিবোর্স।”নিদ্র এই কথাটা বলার সাথে সাথে উপস্থিত সব মানুষই অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকায়।নিদ্র সবার তাকানো দেখে মুচকি হেসে বলে,
–“সবাই অবাক হচ্ছেন এই ভেবে,বিবাহের জন্য পার্টি হয়,বাচ্চার ভাতমুখে পার্টি হয় কিন্তু ডিবোর্সের জন্যও পার্টি।হুম,ডিভোর্স পার্টি।আজকের এই পার্টটার মধ্যে দিয়ে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখাবো আমি।বড় বড় করে লেখা থাকবে নিদ্র চৌধুরীর নাম।”
নিদ্রের কথা শুনে এখন তাকে সম্পুর্ন পাগল মনে হচ্ছে আমার।শুধু আমার না,স্টেজের নিচে বসে থাকা কিছু মানুষও যে তাকে পাগল ভাবছে সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা আমার।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।নিদ্রও আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিচ্ছি,তারপর তুমি দেবে।”
আমি কি বলবো উত্তর খুঁজে পাই না।বাবা যে একটা পাগলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে একটু।স্টেজের নিচের মানুষগুলো{২০-২১জন হবে}তারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,
–“ওকে”
নিদ্র এবার একটা কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দেয়।কাগজটার প্রথমেই বড় বড় করে লেখা আছে, ‘ডিভোর্স পেপার’
নামটা দেখে আমি রীতিমতো ভরকে যাই।নিজের অজান্তে চোখের কোণে পানি চলে আসে।সাথে মনের মধ্যে বাসা বাধে একরাশ সন্দেহ।হুম সন্দেহ।আমি বেশ অবাক হয়ে পেপারটার পাতা গুলো ওল্টাতে থাকি আর নিদ্রের দিকে তাকাতে থাকি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আমার সন্দেহের কারণ হলো,আমার সামনে আমার অফিস কলিগের ডিবোর্স হয়েছিল এবং সেই পেপারটা আমি দেখেছিলাম।সেখানে এত বড় বড় করে ডিভোর্স শব্দটা লেখা থাকেনা।আমি এবার বেশ মনোযোগ সহকারে পরতে শুরু করি পেপারগুলো।স্টেজের নিচের মানুষগুলো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
পেপার গুলোতে লেখা আছে,
‘ডিবোর্স পেপার’
**এতদ্বারা জনাবা মিহিমা চৌধুরীকে জানানো যাচ্ছে যে,আজ থেকে নিদ্রের চৌধুরীর সাথে তার সম্পর্ক আরো গভীর হলো।নিদ্র চৌধুরীর সবরকম বায়না,আবদার রাখিতে বাধ্য হইবে মিহিমা চৌধুরী।ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক লেখা ছিল।
শেষ পৃষ্টায় সবার নিচে লেখা ছিল দুজনের স্বাক্ষর।সেখানে নিদ্রের সাইন দেয়া আছে।আমি মাথা তুলে নিদ্রের দিকে তাকাই।তারপর এক এক করে তার বাবা মায়ের দিকে।সবার মুখে চওড়া হাসি বিরাজ করছে।আমার চোখে আনন্দের অশ্রু বইতে শুরু করে।আমি সাথে সাথে সাইন করে দেই পেপারটাতে।স্টেজের নিচের সবাই ভাবে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেল।নিদ্র মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
–“গাইস,আপনারা ভাবছেন আমাদের ডিবোর্স হয়ে গেল কিনা।তাদের সন্দেহ দুর করার জন্য আমি এখন সবার সামনে মিহিকে প্রপোজ করবো।”
নিদ্রের কথা শুনে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।এতটা বেলজ্জ মানুষ কেমনে হয়।নিদ্র ভারিক্কি চাল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে হাটুগেরে বসে পড়ে।আমার দিকে একটা ডায়মন্ডের রিং এগিয়ে ধরে বলে,
–“সারাজীবন আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে রাজি আছো তুমি?”
আমার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে শুরু করে।মুহুর্ত দেরি না করে জড়িয়ে ধরি নিদ্রকে।নিদ্রও আমাকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলে,
–“পাগলি বউ আমার,কান্না করো কেন?”
আমি কোনো কথা না বলে তাকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতেই থাকি।সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টি আমাদের দিকে।অনেকেতো ছবি তুলা নিয়ে ব্যাস্ত।
এই মুহুর্তে স্টেজের নিচ থেকে কেউ একজন একটা ব্যাগ ছুড়ে মারে আমাদের দিকে।ব্যাগ থেকে কিছু ছবি বেড়িয়ে আছে।নিদ্র আমাকে ছাড়িয়ে দিয়ে কৌতুহল নিয়ে ব্যাগটা তুলে নেয়।তারপর ছবি গুলো বের করে দেখতে থাকে এক এক করে।আমি লক্ষ্য করছি,নিদ্র যত ছবিগুলো দেখছে ততই তার চোখ লাল টকটকে রং ধারণ করছে।তার এই অবস্থা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যাই আমি।কি আছে ছবিগুলোতে দেখার জন্য আগ্রহ জন্মায় আমার মধ্যে।
ছবি গুলো দেখা শেষ করে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।তার কাছ থেকে ছবিগুলো নিজের দখলে করে নেই আমি।তারপর এক এক করে ছবিগুলো দেখতে শুরু করি।ও মাই গড,এগুলো কি?আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।কখন এসব হলো?কিভাবে হলো?ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে অনিক আমার উপরে শুয়ে আছে।পরের ছবিটাতে আমি অনিকের গালে চুমু খাচ্ছি।আমি বুঝতে পারছি না এসব কীভাবে হলো?ছবিগুলো দেখে আমার মাথা ঘুড়তে শুরু করে।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না আমি।ঢলে পড়ে যাই পিছনে থাকা চেয়ারটার মধ্যে।
জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিষ্কার করি নিজের রুমে।চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকি দেখি আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে নিদ্র,তার বাবা-মা।সবার চোখের মধ্যেই রাগ স্পষ্ট।আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকাই সবার দিকে।আমার তাকানো দেখে রুম থেকে বের হয়ে যায় নিদ্রের বাবা-মা।নিদ্র ধপ করে বসে পড়ে সোফায়।সে আমার দিকে তাকাচ্ছেনা একবারের জন্যেও।আমি খানিকটা ভয় নিয়ে নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“একটা কথা বলবো শুনবেন?”
আমার এই কথাটা নিদ্রের পুষে রাখা রাগগুলো বের করে আনে।নিদ্র বেশ রেগে সাথে চিল্লিয়ে বলে,
–“কি বলবে তুমি?কি বলবে?ছি আমি ভাবতে পারছি না এসব।তোমরা দুজন যদি এরকমই তাহলে আমাকে মাঝে টানলে কেন?কেন..”
তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি উঠে বসে কান্না শুরু করে দেই।আমার কান্না নিদ্রের রাগ হালকা কমিয়ে দেয়।আমি কান্না করতে করতে বলি,
–“আমার কথাটাতো শুনেন!”
নিদ্র ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
–“কি,বলো?”
আমি এবার নিদ্রকে সব বলে দেই অনিক এসে কিভাবে আমাকে অজ্ঞান করেছিল।যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে কেমন অবস্থায় আবিষ্কার করি সব।আমার কথা শুনে নিদ্রের মধ্যে এক অন্যরকমের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই।নিজের ভাইকে বিশ্বাস করবে নাকি বউকে।তার চেয়ে বড় কথা অনিক কক্সবাজারে আসলো কেমনে।কিন্তু ছবিগুলাও তো এই রুমের মধ্যেই তোলা।নিদ্র বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।কি করবে ভাবতে শুরু করে মনোযোগ সহকারে?
একপর্যায়ে নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তোমার কথা মিথ্যা হলে,এবার আর ডিবোর্স থেকে রক্ষা পাবে না।”
এই বলে নিদ্র সারা রুমটায় কি যেন খুঁজতে থাকে।একপর্যায়ে তার চোখ আটকে যায় কোণের সিসি ক্যামেরাটার দিকে।সে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি একটু চিন্তায় পড়ে যাই এই ভেবে যে,অনিক যদি ম্যানেজারকে টাকা খাইয়ে সেই সময়ের ফুটেজটা ডিলিট করে দেয় তাহলে আমি শেষ।আর না দিলে তো বেশ।বেশ চিন্তায় পড়ে যাই আমি।কি হবে?শেষ হবো না বেশ থাকবো???
চলবে..