Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-১+২

আবদ্ধ তোমার মধ্যে পর্ব-১+২

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#১য়_পর্ব

বধু বেশে বরের ছোট ভাইয়ের বাসর ঘরে বসে আছি আমি।আমার সামনে ডিবোর্স পেপার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার বর্তমান বর মি.নিদ্র।তিনি ডিবোর্স পেপারটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বেশ শান্ত গলায় বলেন,
–“আপনার মতো নিচু ক্লাসের মানুষ এই জন্মে দেখিনি।কিভাবে নিজের বরের ছোট ভাইকে বিয়ে করতে পারলেন?যাই হোক,ডিবোর্স পেপারটাতে আর চুক্তিপত্রটাতে একটা সাইন দিন”


আমি মিহিমা।সবাই আদর করে মিহি বলে ডাকে।গ্রামের মেয়ে শহরে এসে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করি।কাল সকালে
বাবা হঠাৎ ফোন করে বলেন,

–“মিহি মা,আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি।তুই আজকেই চলে আয়।ছেলে খুব বড় পরিবারের।”
বাবার মুখের উপর কোনো‌ কথা বলতে না পেরে সব গুছিয়ে চলে যাই গ্রামে।বাড়িতে গিয়ে শুনতে পারি আজকেই বিয়ে।সবাই আমাকে হলুদ মাখাতে শুরু করে।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ৭টা বাজলেও বরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।বাবা বেশ চিন্তিত হয়ে ঘটক আতাবুলকে ফোন করে।তার কিছুক্ষন পরই কয়েকটা গাড়ি আসে।গাড়ি থেকে নেমে একজন বৃদ্ধা বাবার কানে কানে কি যেন বলে?বাবা এসে আমাকে রেডি হতে বলে।সাথে এও বলে,বিয়েটা যার সাথে ঠিক হয়েছিল তার সাথে হচ্ছেনা।হচ্ছে তার ছোট ভাইয়ের সাথে।

তখন লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায় আমার।বান্ধবীরা ফিস ফিস করে নানা কথা বলতে শুরু করে।একপর্যায়ে বিয়ে শেষ হয়।বিয়ে পড়ানোর শেষ হলে আমার বরের ছোট সরি মি.নিদ্র একাই ড্রাইভ করে চলে আসেন আমাদের বাসা থেকে।পরবর্তিতে আমার শশুর-শাশুড়ী আমাকে নিয়ে আসে তাদের বাড়িতে।

“আপনার ইচ্ছা হলে চুক্তিপত্রটা পড়ে দেখতে পারেন!” কথাটা বেশ শান্ত স্বরে বলে নিদ্র।আমি তার দিকে তাকিয়ে স্লান হেসে বলি,
–“পড়ার দরকার নেই।কি আর লেখা থাকবে,সর্বোচ্চ আমার জীবন নিতে পারবেন।আর কি?”এই বলে আমি চুক্তিপত্রটাতে সাইন করে দেই।

ডিবোর্স পেপারটাতে সাইন করতে ধরলে নিদ্র আমাকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বলে,
–“এখনি সাইন করার দরকার নেই।চুক্তি অনুযায়ী আপনি ৮মাস আমার স্ত্রী।যদি সাইন করে দেন তবুও ডিবোর্স হবে না এত তারাতারি।আর ডিবোর্স পেপারে সাইন থাকলে এই চুক্তিপত্রটা আর কাজে লাগবে না।পরে সাইন করিয়েন।”

আমি নিরবে তার কথায় সম্মতি জ্ঞাপন করি।তিনি আমার হাত থেকে কলমটা নিয়ে গ্লাসের মধ্যে ফেলে দেন।তারপর সেটা বাম হাত দিয়ে তুলে নিয়ে টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর নিজের পকেটে ঢোকান।

তার এরকম ব্যবহারে আমি খুব লজ্জা পাই।হাতটা নিজের চোখের সামনে নিয়ে এসে বোঝার চেষ্টা করি কতটা নোংরা এই হাতটা।তিনি সোফায় বসে পড়েন ধপ করে।আমি তার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করি,
–“আমি কোথায় ঘুমাবো?”

আমার এই কথাটা তার রাগকে দ্বিগুণ করে দেয়।তিনি অগ্নিচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“মেঝেতে ঘুমাবেন।এত দামী বেড আপনাদের জন্য নয়।”

তার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে নেই‌ আমি।মাথা নিচু করে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে শাড়িতে পা পেচিয়ে যায় আমার।সোফাটা সামনে থাকে ফলস্বরুপ ওনার গায়ে গিয়ে পড়ি আমি।চোখ তুলে তার দিকে তাকাতেই দেখতে পাই তার রক্তিম চোখ।তিনি এক ঝটকা দিয়ে আমাকে ফেলে দেন তার উপর থেকে।

খানিকটা উড়ে মেঝেতে পড়ে যাই আমি।হাতের কনুতে ব্যাথা পাই প্রচুর পরিমাণে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করে নোনাজল।ব্যাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে অশ্রুশিক্ত চোখে তাকাই তার দিকে।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নিজের চোখটা ফিরিয়ে নেন।আমি মেঝেতে শুয়ে পড়ি বালিশ বিহিন অবস্থায়।

ঘুম নামক বস্তুটা কিছুতেই ধরা দিচ্ছেনা আমার চোখে।দেবেই বা কি করে,অনবরত এরকম পানি পরতে থাকলে কি আর ঘুম ধরা দেয়?আমি চোখ দিয়ে পানি ফেলছি আর ভাবছি,যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল,তার সাথে বিয়ে হলে নিশ্চয় এত কষ্ট পেতে হতোনা আমাকে।তিনি সোফায় বসে হাত দিয়ে কপাল চিপে ধরে বসে আছেন।আমি তার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলি,

–“পাশে আমার অফিস।আমি কি কালকে অফিসে যেতে পারবো?”

আমার কথা শুনে চোখ তুলে আমার দিকে তাকান মি.নিদ্র।তারপর বেশ কড়া গলায় বলে,
–“এজ ইউর উইস,আই ডোন্ট টক আব্যাউট ইট।”

আমি আর কোনো কথা না বলে ওই অবস্থায় শুয়ে থাকি।এখন বুঝতে পারছি বেহায়ার মতো কথা বলাটা আমার ঠিক হয়নি।নিজেকে শক্ত করার প্রবল চেষ্টা করে চলেছি।একসময় ঘুমিয়ে পড়ি আমি।সেই ঘুমেই কেটে যায় রাতটা।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে আটটা বাজে।ও মাই গড,অফিসের সময় পার হতে চলেছে।তারাতারি উঠে একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে প্রবেশ করি।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন মি.নিদ্র।আমি ফ্রেস হয়ে এসে তড়িঘড়ি করে রেডি হতে শুরু করি।আজকে অফিসে জরুরী একটা মিটিং আছে অন্য কোম্পানির সাথে।আজকে এই মিটিংটাতে সফল হতে পারলে আমার প্রমোশন হবে,না হলে বাদ দিয়ে দেবে।তারাতারি রেডি হয়ে নিচে নেমে আসি আমি।মি.নিদ্র অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ‌নিচে ‌নেমে আসেন।

নিচে নেমে এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে পাই আমি।যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাকে বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছেন আমার শশুর।লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক দৃষ্টিতে।এমন সময় আমার পাশে এসে দাঁড়ায় মি.নিদ্র।লোকটা কোনো‌ কথা না বলে চুপচাপ বের হয়ে যায় বাসা থেকে।

সবাই বসে পড়ে নাস্তার টেবিলে।আমি আর নিদ্র পাশাপাশি বসে পড়ি।তখন থেকেই একটা বিষয় লক্ষ করছি,নিদ্র আমার দিকে তাকাচ্ছে ঘনঘন।তবে কিছুটা অবাক হয়ে।তিনি নিশ্চয় ভাবছেন,কালকের ভিতু মেয়েটা কিভাবে আজকে এত চালু হয়ে গেল।

বিয়ের পরেরদিন অফিসে যেতে দিতে প্রচুর আপত্তি আমার শশুর বাড়ির লোকের।তাদের বোঝানোটা আমার পক্ষে অনেকটা কঠিনই ছিল।তবে শেষ পর্যন্ত তাদের বুঝিয়ে রওনা হই আমি।আমার সাথে বের হন মি.‌নিদ্র।তিনি গাড়ি নিয়ে চলে যান আর আমি রিকশায় বসে পড়ি।

অফিসে এসে জানতে পারি যে মিটিং এখনো শুরু হয়নি তবে যাদের সাথে মিটিং হবে তারা চলে এসেছে।আমি তড়িঘড়ি করে বসের সাথে মিটিং রুমে প্রবেশ করি।সেখা‌নে প্রবেশ করে বেশ চমকে উঠি আমি।মি.নিদ্র বসে আছেন সেখানে।তার পাশে বসে আছে শুটকি আকৃতির একটা মেয়ে।মেয়েটা বেশ চেপে বসেছে ‌নিদ্রের সাথে।তিনিও বেশ হেসেহেসে তার সাথে কথা বলছেন।

নিদ্রও যে আমাকে দেখে অবাক হয়েছে সেটা বুঝতে পারি আমি।সাথে এটাও বুঝতে পারি,আমার চাকরীটা আজকে চলে যাবে।
কিছুক্ষন পর সত্ত্যি হয়ে যায় ভাবনাটা।মি.নিদ্র মুখের উপর ডিলটা ক্যান্সেল করে চলে যায় সেই শুটকি মেয়েটাকে নিয়ে।ফলস্বরুপ বস আমাকে বের করে দেয় অফিস থেকে।আমি বসকে নানা ভাবে বোঝার চেষ্টা করলেও প্রতিবার ব্যার্থ হই।শেষ পর্যন্ত চাকরীটা চলে যায় আমার।মাথার উপর‌ আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।আট মাস পর ডিবোর্স তখন কি হবে আমার?

নিজের অজান্তেই চোখের কোণে নোনাজল জমে যায়।এক বুক কষ্ট নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এলোমেলো পা ফেলে চলতে শুরু করি আমি।এই মুহুর্তে আমার পাশ দিয়ে চলে যায় নিদ্রের গাড়ি।গাড়ির মধ্যে নিদ্র আর সেই মেয়েটা বেশ হাসাহাসি করছে।আমি এলোমেলো পা ফেলে চলতে শুরু করি।মাথাটা খুব ঘুড়ছে,সাথে সমস্ত পৃথিবীটাও ঘুরছে মনে হচ্ছে।বহু কষ্টে ব্যাগটা চেক করে দেখি কত টাকা আছে?

সিদ্ধান্ত নেই আজকে নাইট ক্লাবে যাব।আমার এই সিদ্ধান্তটা যে মোটেও ঠিক ছিলনা সেটা ঢেড় বুঝতে পারছি।তবুও মনটাকে ঠিক করার জন্য রওনা হয়ে পড়ি নাইট ক্লাবের উদ্দেশ্য।
আগে থেকে এখানে থাকায় বেশ কিছু জায়গা চেনা ছিল।তাই নাইট ক্লাব খুঁজে বের করতে অসুবিধা হয় না আমার।

ক্লাবের সামনে নিদ্রের গাড়িটা দেখে বুঝতে পারি তারাও এখানে এসেছে।আমি ভিতরে প্রবেশ করে একটা টেবিলে বসে পড়ি।আমার ঠিক সামনের টেবিলটাতে বসে আছে নিদ্র আর সেই মেয়েটা।নিদ্র আমাকে দেখে বেশ অবাক হয়।দুজন দুজনের দিকে তাকানোর ফলে চোখাচোখি হয়ে যায় নিজেদের মধ্যে।আমি স্লান একটা হাসি দিয়ে চোখটা সড়িয়ে নিয়ে একটা ওয়েটারকে বলি বিয়ার দিতে।

ওয়েটার বিয়ার দিলে কয়েকগ্লাস খাবার পর মাথাটা ঝিম-ঝিম করতে শুরু করে।সামনের সব কিছু ঘোলা হতে শুরু করে।এমন সময় আমার সামনে এসে বসে একটা ছেলে।আমি বহু কষ্টে চোখ খোলা রেখে তাকাই নিদ্রের দিকে।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো।

ছেলেটা হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি কি আপনার সাথে ড্যান্স করতে পারি?”

উজবুকটার কথায় আমার রাগ উঠে যায় সপ্তম আসমানে।হাত তুলে কষে একটা থাপ্পর মারি তার গালে।ছেলেটা অবাক হয়ে আমার থাপ্পর মারার কারন বোঝার চেষ্টা করছে।আমি এবার বেশ জোরে বলি,

–“আমি অন্য সবার মতো না যে,ঘরে স্বামী রেখে এসে অন্য পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করবো।মনটা খারাপ তাই এসেছি।দুর হ আমার সামন থেকে।”

ছেলেটা আমার সামন থেকে চলে যায়।সামনের টেবিলে বসায় আমার সব কথা শুনতে পায় নিদ্র।আমি তার দিকে না তাকিয়ে টেবিলে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ি।

যখন ঘুম থেকে উঠি,দেখি আমি বসে আছি নিদ্রর গাড়িতে।আমার পাশে বসে গাড়ি চালাচ্ছে নিদ্র।জানালা খোলা থাকার কারনে বাতাস এসে উঠিয়ে দিচ্ছে তার চুলগুলোকে।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।

একপর্যায়ে তিনি গাড়ি‌ এনে থামান বাড়ি সামনে।আমাকে কাধে করে নিয়ে হাটতে শুরু করেন তিনি।ভাগ্যটা ভালো থাকার কারণে নিচে কেউ ছিলনা।নিদ্র আমাকে নিয়ে ‌রুমে যায় চুপ করে।রুমে যেতে আমি ‌নিদ্রকে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার উপরে উঠে পড়ি।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিদ্র।আমার নেশার ভাব যে এখনো কাটেনি সেটা বেশ বুঝতে পারছেন তিনি।

আমি একপর্যায়ে নিজের ঠোঁটটা মিশিয়ে দেই তার ঠোটের সাথে।তিনি আমাকে ঝটকা দিয়ে সড়িয়ে দেন।তারপরেও আমার মনের ভাব পাল্টে না।এবার বেশ শক্ত করে তাকে ধরে কিস করতে শুরু করি।তিনি অনেক চেষ্টা করেও আমাকে সড়াতে পারেন না।এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়।

নিদ্র আমাকে ঝটকা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে দরজা খুলতে যায়।দরজা খোলার সাথে সাথে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্রের বড় ভাই,যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।নিদ্র বড়ভাইকে জড়িয়ে ধরে।আমি নেশালো ভাব নিয়ে কান্ডগুলো দেখছি।নিদ্র এবার তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“ভাইয়া,তোর বউকে তোর কাছে দিয়ে গেলাম।কি করে সামলাস সামলা।”

এই বলে নিদ্র বের হয়ে যায় রুম থেকে।সেই লোকটা আস্তে আস্তে আমার দিকে‌ এগিয়ে আসেন।কিছুক্ষন আগে নেশায় আশক্ত থাকা মেয়েটার নেশা কেটে যায় অনেকখানি।বুঝতে পারি লোকটা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমার দিকে এগোচ্ছে।কিন্তু এনার সাথে তো আমার বিয়ে হয়নি।এই লোকটার সাথে কিছু হলে সেটা ঠিক হবেনা।আমি কি করবো বুঝতে পারি ‌না?কষ্টে বুকটা ফেটে যেতে শুরু করে।আমার বর কিভাবে পারলো তার ভাইয়ের কাছে আমাকে ফেলে যেতে?আট মাস পর তো আলাদা হবোই আমরা।এদিকে লোকটা খুব কাছে চলে এসেছে।কি করবো ভাবছি আমি?লোকটার হাত থেকে কি নিজেকে রক্ষা করতে পারবো?নিজের সত্তিত্বকে পারবো আগলে রাখতে?এক পর্যায়ে লোকটা আমার কাছে চলে আসে।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

#আবদ্ধ_তোমার_মধ্যে
#নিয়াজ_মুকিত
#২য়_পর্ব

কোনো স্বামী কখনো এভাবে নিজের বউকে ভাইয়ের কাছে ফেলে যেতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না।এদিকে লোকটা আমার পাশে‌ চলে আসে।এমন সময় খট করে খুলে যায় দরজ।লোকটা সাথে সাথে পিছনে তাকায় অনেকটা ভয় নিয়ে।নিদ্র তারাতারি এসে দাঁড়ায় আমার আর লোকটার মাঝে।সে তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে খানিকটা নিচু গলায় বলে,

–“অনিক ভাইয়া,তুই এখান থেকে চলে যা।বাবা আসতেছে আমার রুমে।বুঝলাম না কিভাবে টের পেল?”

নিদ্রের দিকে এবার বেশ খানিকটা সন্দেহ নিয়ে তাকায় অনিক।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটু জোড় গলায় বলে,
–“আমাকে তাড়ানোর বুদ্ধি করেছিস নিদ্র।রক্ষা করতে চাইছিস তোর বউকে।তুই মনে রাখিস,এই মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা ছিল।”

নিদ্র শান্ত চোখে তাকায় অনিকের দিকে।তারপর পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকায়।তারপর আবার সামনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“তাহলে বিয়ে না করে পালালে কেন?”

নিদ্রের এমন প্রশ্নে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অনিক।সে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
–“নিদ্র,তুই জানিস আমি রুহিকে ভালোবাসি।আজ রুহিও আমাকে ছেড়ে চলে গেল..”
“তাই এখন বউয়ের দাবি নিয়ে এসেছো!” অনিকের বাকি কথাটা শেষ করে দেয় নিদ্র।সে অনিকের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,

–“শোনো,তুমি পালিয়ে যাওয়ার কারনে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।বিয়ে হয়েছে মানে সে আমার ওয়াইফ।যদিও ৮মাস পর আমাদের ডিবোর্স হবে,তবুও এখনতো সে আমার বউ।আর তুমি ভাবলে কি করে আমার বউকে আমি তোমার হাতে তুলে দেব এত সহজে।তোমাকে পরিক্ষা করলাম ভাইয়া,ছি.।আই হেট ইউর মাইন্ড।বাবা তোমাকে ত্যাজ্য করেছে।কারন তোমার মতো ছেলে বাবার চাই না।যে একটা মেয়ের জন্য নিজের বাবা-মাকে খুন করার প্লান করে,সেরকম ছেলে কো‌নো বাবা-মা চায় না।আমিও আজ থেকে তোমাকে ত্যাজ্য করলাম ভাই হিসেবে।বের হও নাহলে বাবাকে ডাকবো।”

বাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় অনিক।সে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে চুপ‌ করে বের হয়ে যায়।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে সোফায় বসে পড়ে।আমি তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

–“নেশা কেটে গেছে আপনার।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলি,
–“যে অবস্থায় ফেলে ‌গেছেন,আরো নেশা থাকে।নেশা বাপ বাপ করে পালিয়ে গেছে।”
নিদ্র আমার কথায় শুধু মুচকি একটা হাসি দেয় কোনো ‌বলে না।আমি মেঝেতে শোয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।এমন সময় নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“বিছানাটা বড় আছে,চাইলে এক সাইটে থাকতে পারেন।তবে মাঝে কোল বালিশটা রাখতে হবে।লাইট অফ করা যাবেনা।”

তার কথায় আমি এক আলাদা প্রশান্তি খুঁজে পাই।সাথে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে,আচ্ছা আমি কি তাকে স্বামী হিসেবে চাই?কেন তার সাথে শোয়ার কথায় মনটা এত খুশি হলো?তবে কি তার প্রতি আমার অনুভূতি জন্মেছে?

এতশত না ভেবে আমি অনেকটা খুশি হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।কোল বালিশটা মাঝে রেখে তার দিকে চোখ করে শুয়ে থাকি।নিদ্র সোফা থেকে উঠে আমার পাশে শুয়ে পড়ে।এখন দুইজনে একই বিছানায় শুধু মাত্র কোল বালিশটা দিয়ে বর্ডার দেয়া।আমি বেহায়ার মতো নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।নিদ্র আমার এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে নিজেও আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে থাকে।

প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে?প্রতিযোগিতায় নিঃসন্দেহ জয় লাভ করে নিদ্র।তার এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সড়িয়ে নিতে বাধ্য হই আমি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

–“আপনার চাকরীটা চলে গেছে তাইনা?”

তার কথার উত্তরে আমি শুধু নিরবে মাথা নাড়াই কোনো কথা বলি না।সে মুখ দিয়ে এক অদ্ভুত ধরনের শব্দ করে।তারপর মুচকি হেসে বলে,
–“আপনাদের সাথে ডিলটা করলে আমাদের অনেক লস হতো।তাই আর ডিলটা করিনি।তার উপর রুশারও আপত্তি ছিল ডিলটা নিয়ে।তাই মুখের উপরই না বলে দিয়ে চলে আসি।”

আমি এবার নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমার চাকরীটা তো গেল।চাকরী খুঁজতে হবে এখন আবার।আচ্ছা ওই শুটকি আকৃতির বেয়াদপ মেয়েটার নাম কি রুশা?”

নিদ্র মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হুম।সে আমার পি.এ।অবশ্য এই মাস শেষ হলেই সে আমেরিকা চলে যাবে তার বরের কাছে।তখন পদটা ফাঁকা হয়ে যাবে।নতুন কোন মেয়েকে আনতে হবে আবার।”

আমি নিদ্রের মুচকি হাসিটার উপর বেশ বড়সড় ভাবে ক্রাশিত হই।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।আমার এরকম তাকানো দেখে নিদ্র উল্টো দিকে ঘুড়ে সুয়ে পড়ে।তারপর আর এদিকে না তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।তার সাথে ঘুমিয়ে পড়ি আমিও।

পরেরদিন সকাল বেলা উঠে নিজেকে ঠিক জায়গায় আবিষ্কার করলেও নিদ্র তার জায়গায় দেখতে পাইনা।খানিকটা কৌতুহল নিয়ে চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকাই।একপর্যায়ে চোখ আটকে যায় ওয়াসরুমের দরজার সামনে।ওয়াও😍

সদ্য গোসল শেষ করে বের হয়েছে নিদ্র।পরনে হাফ প্যান্ট আর এক গেঞ্জি।মাথার চুল গুলো ভালো করে না মোছার কারনে চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে হালকা হালকা।সেই সাথে তার লাল টকটকে ঠোটটা তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারছিনা।

নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সোফায় বসে পড়ে।তার এই মুচকি হাসিটাই আমার মনটা কেড়ে নেওয়ার জন্য যতেষ্ট-এর থেকেও বেশি।আমি বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকি তার দিকে।নিদ্র সোফায় বসে ল্যপটপটা কোলে বসিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে শুরু করে।

আমি বিছানা থেকে উঠে বিছানা গোছাতে শুরু করি।আমি বারবার নিদ্রের দিকে তাকালেও সে একবারও আমার দিকে তাকায়নি।আমি ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হই।এমন সময় কাজের মেয়ে ফুলি এসে খবর দেয়,ব্রেকফাষ্ট করার জন্য নিচে ডাকছে সবাই।

নিদ্র হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পড়া অবস্থায় ল্যাপটপটা কোল থেকে নামিয়ে রেখে বের হয়ে যায় রুম থেকে।আমি অবাক হয়ে তার পিছন পিছন বের হই রুম থেকে।

সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে।আমরা দুজন গিয়ে পাশাপাশি বসে পড়ি।নিদ্র খাবার তুলে নিয়ে খেতে শুরু করে।আমিও তার দেখাদেখি খাবার তুলে নিয়ে খেতে শুরু করি।প্রথমের দিকে সবাই চুপ থাকলেও মধ্যবর্তি সময়ে আমার শশুর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“বউমা,তুমি আজকে অফিসে যাবে না!”

আমি মাথা নিচু করে বলি,
–“বাবা,আমার চাকরীটা চলে গেছে।এখন আরেকটা চাকরী খুঁজতে হবে।”
আমার এই কথাটা মনে হয় পছন্দ হয়নি আমার শাশুড়ির।তিনি খানিকটা রেগে বলেন,
–“আমাদের এত বড় একটা অফিস থাকতে তোমাকে কেন চাকরী খুঁজতে হবে।তুমি আজ থেকে নিদ্রের সাথে অফিসে যাবে।নিদ্র,বউমাকে অফিসে নিয়ে যাবি।”

নিদ্র এবার মাথা তুলে এর এই কথার প্রতিবাদ করতে শুরু করে।সে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে,যে অফিসে এই মুহুর্তে কোনো পদ ফাঁকা নেই।কিন্তু আমার অবুঝ শশুর-শাশুড়ি কড়া গলায় জানিয়ে দেন,পদ না থাকলে পদ বানিয়ে নিবি।তবুও তোকে অফিসে নিয়ে যেতেই হবে।

শেষ পর্যন্ত নিদ্র খাবার শেষ না করেই উঠে পড়ে।আমি নিদ্রের সাথে অফিসে যাব কথাটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।মনে মনে এত খুশি হয়েছি যা বলে বোঝানো কঠিন।কিন্তু কেন খুশি হলাম আমি?আর ৮মাস পরতো আমরা দুজন আলাদা হয়ে যাব।এই কথাটা ভেবে মনটা খানিকটা খারাপ হয়ে যায়।

সেদিনের মতো নিদ্রের গাড়িতে করে অফিসে যাই আমি।প্রথমদিন অফিসে গিয়েই এরকম কিছু করে ফেলবো সেটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি।নিদ্র আমাকে সামনে বসিয়ে রেখে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখ দিয়ে আগুনের ফিরকি ঝড়ছে।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ