আজব প্রেমের কাহিনী part : 20

0
2000

আজব প্রেমের কাহিনী
part : 20
writer : Mohona

.

মেরিন দেখলো নীড়ের পিঠে গুলি লেগেছে। মেরিন নীড় বলে চিৎকার করে উঠলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো ১জনের হাতে gun… তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে নীড়কে হসপিটালে নিয়ে গেলো। ডক্টররা নীড়ের চিকিৎসা শুরু করলো। মেরিন চোখ বন্ধ করে ঘটনা দেখে নিলো। ভীষষষন রেগে নীলের কাছে গেলো।

.

নীল: এসে গেছো সুন্দরী… আমি মানুষকে ধংব্স না করতে পারলেও মানুষ তো মানুষকে ঠিকই ধংব্স করতে পারবে। তাইনা….
বলেই নীল মেরিনের চোখের দিকে তাকালো। আর মেরিনের চোখ দেখে নীল ভয়ে আতকে উঠলো। কারন মেরিনের মায়াবী গোলাপী চোখ ভয়ংকর লাল চোখে পরিনত হয়েছে।
মেরিন: তুই আমার কলিজাতে হাত দিয়েছিস। আফসোস তোর কলিজাটা আমি বের করতে পারবোনা। তবে আজ তোকে আমি এমন শাস্তি দিবো যে তুই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবিনা….
নীল:??। আমি নীল পরীরাজ্যের রাজা…. আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা নেই….
মেরিন: তোরও ১টা পতীব্রতা স্ত্রীর ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা নেই।
বলেই মেরিন নীলের ওপর আক্রমন করে নীলের সব শক্তি নিজের মধ্যে নিয়ে নিলো। অার অনন্তকালের জন্য নীলকে পাতালপুরীতে পাঠিয়ে দিলো।

.

৩০মিনিট পর….
মেরিন OT এর দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছে। তখন চৌধুরী পরিবার হাজির হলো। মেরিনকে দেখে রেগে গেলো।
নীলিমা: তুমি? আমার ছেলের জীবনের সুখ নিয়ে তোমার সাধ মেটেনি যে এখন আমার ছেলের জীবন নিতে উঠে পরে লেগেছো…. ??।
মেরিন: মাম…
নীলিমা: খবরদার তোমার ওই নোংরা মুখ দিয়ে আমাকে মামনি বলবেনা। নিহাল ওকে চলে যেতে বলো। আমার ওকে সহ্য হচ্ছেনা….
সবাই মেরিনকে দুরদুর করে তারিয়ে দিলো। মেরিন এবার অদৃশ্য হয়ে OTতে ঢুকলো।

.

নীড়ের অবস্থা দেখে কাদতে লাগলো। কিছুক্ষনপর মেরিন বুঝতে পারলো যে নীড়ের অবস্থা খুব খারাপ। ডক্টররা বলাবলি করছে। গুলিটা ফুসফুসকে ছুয়ে গেছে।
মেরিন: না না… আহমার নীড়ের কোনো কিছু হতে পারেনা….. আমি কিছু হতে দিবোনা।
মেরিন নিজের সমস্ত শক্তি জরো করলো নীড়কে সুস্থ করার জন্য। যেই নীড়ের ওপর প্রয়োগ করবে তখনই কবির এসে হাজির হলো।
কবির: দারাও মেরিন…. শক্তি প্রয়োগ করোনা…
মেরিন: বাবা আমাকে প্রয়োগ করতে দাও .. আমার নীড়ের কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো বাবা…..
কবির: বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা। কিন্তু আমরা যে অপারগ। বাচা-মরা নিয়ন্ত্রনকারী যে স্বয়ং আল্লাহ। আমরা জানিনা নীড়ের ভবিষৎ ভাগ্যে কি আছে? আমরা যে প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করতে পারিনা….
মেরিন: মানিনা আমি কোনো নিয়ম। আমি কেবল জানি আমার নীড়কে… আর কিচ্ছু জানিনা আমি….. আমি প্রয়োগ করবোই….
কবির: দারাও মেরিন…. তুমি প্রয়োগ করতেই পারো কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হতে পারে…. আমাদের শক্তি যে সীমাবদ্ধ….
মেরিন: মিথ্যা বলছো….
কবির: তুমি আমার মেয়ে।ভালো করেই জানো আমি কখনোই মিথ্যা বলিনা।
মেরিন:…..
কবির: নীড়কে বাচানোর শক্তি যে আমাদের নেই…..
মেরিন: শক্তি নেই…..

কবির: না নেই….
মেরিন: তাহলে যে শক্তি আছে তা কি কেবল দেখানো….
কবির: ….
মেরিন: যেখানে নীড় নেই সেখানে কিছু নেই…. দেখি শক্তি দিয়ে কি করা যায়। যে শক্তি আমার নীড়কে বাচাতে পারবেনা সে শক্তি ধংব্স করবো। আমি ধংব্স লীলা চালাবো। যতোক্ষন আমার কাছে শক্তি আছে ততোক্ষন আমি ধংব্সলীলা চালাবো।
বলেই মেরিন উধাও হয়ে গেলো।

.

পৃথিবী-পরীরাজ্য সর্বত্র ও ধংব্সলীলা শুরু করলো। ওকে থামানো অসম্ভব হয়ে গেলো। তারমধ্যে ওর মাঝে এখন নীলের শক্তিও আছে। কবির বুঝে গেলো যে যদি আজকে নীড়ের কিছু হয়ে যায় তবে অনেক কিছুই হতে পারে। তাই কবির নিজের সকল জ্ঞানীদের নিয়ে নীড়কে বাচানোর উপায় বের করতে লাগলো। আর যে উপায় পেলো তা সত্যি অবাক করার মতো। মেরিন ওর কাজে ব্যাস্ত। তখন কবির গেলো।

.

কবির: থামো মেরিন…..
মেরিন যেন শুনতেই পেলোনা।
কবির: নীড়কে বাচানোর উপায় পেয়েছি….
সাথে সাথে মেরিন থেমে গেলো।
মেরিন: সত্যি….???…
কবির: হামম।
কিন্তু….
মেরিন: কিন্তু কি….
কবির: নীড়কে বাচাতে হলে তোমাকে বলিদান দিতে হবে…..
মেরিন: জীবন দিয়ে দিবো…..
কবির: জীবন দিতে হবেনা…. তারথেকেও বেশি….
মেরিন: বলো না….
কবির: নীড়কে বাচাতে হলে তোমাকে তোমার সব শক্তি দিতে হবে।যার মানে তোমাকে পরী থেকে মানুষ হতে হবে…. পরী জগতের সাথে সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। কখনো আর পরীরাজ্যে পাও রাখতে পারবেনা….. আজীবন এই পৃথিবীতে থাকতে হবে….. এই উপায় টুকুও পাওয়া যেতো না। কিন্তু তুমি পরী…. আর নীড়ের স্ত্রী। তাই এই উপায় পাওয়া গেছে….. তুমি থামবে না বলে উপায় বের করেছি….
মেরিন: উপায় যখন পেয়েছি তখন এটা প্রয়োগ করতে হবে…. চলো….
কবির: না…. আমি এটা হতে দিতে পারিনা….. তুমি আমার মেয়ে। আর বাবা হয়ে আমি তোমাকে আগুনের কুপে ঝাপ দিতে, দিতে পারিনা…… তুমি মানুষ হলে….. কি ভাবে থাকবে….
শশুড় বাড়িতেও যাওয়ার উপায় নেই।
মেরিন: তোমাকে অতো কিছু ভাবতে হবেনা… আমার নীড়কে বাচাও…..
কবির: কাকে আমার নীড় আমার নীড় বলছো? সে কি আর এখন তোমার নীড় আছে? সে তো তোমাকে ঘৃণা করে…..
মেরিন: যদি সে আমাকে ঘৃণা করতো তবে আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজে মরতে বসতো না……

কনিকা: যাকে বাচাতে চাইছো তার জীবনে কি আর কখনো তোমার ঠায় হবে… সে তো তোমার মুখও কখনো দেখতে চায়না…
তারা: ওই মানুষের কথা ভেবে নিজের জীবনকে বাজি ধরছিস তুই…
মেরিন: হ্যা ধরছি….. আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা…. আমার কাছে নীড় সবার আগে….
মেরিন নিজের সকল শক্তি বিসর্জন দিয়ে নীড়ের জীবন বাচালো…..

.

মেরিন কবিরের শক্তিতে অদৃশ্য হয়ে ICU তে ঢুকলো।
মেরিন: আমি থাকি আর না থাকি আপনি ঠিক থাকুন…. আমার পরী হয়ে বেচে থাকার চেয়ে আপনার সহী সলামত থাকা অনেক দরকার…. কারন আপনি মেরিনের নীড়…. আপনি আমার জীবন নীড়… আপনি তো আর আমার মুখ কখনো দেখবেন না… আমারও আর দেখা হবেনা আপনার মুখ খানা… যদি আপনাকে দেখতে এসে ভুল করে আমাকে আপনি দেখে ফেলেন তবে…. না না… এমন হতে পারেনা…. ভালো থাকবেন নীড়….
বলেই
মেরিন নীড়ের চোখে মুখে ভালোবাসার পরশ দিয়ে শেষবারের মতো নীড়কে দেখে বেরিয়ে এলো। আর কখনো হয়তো নীড়ের মুখ খানা দেখতে পারবেনা। নীড়ের সামনেও আসতে পারবেনা। নীড় যে বলেছে যে ওর সামনে গেলে মরা মুখ দেখবে….

.

মেরিন হাতের আংটি টা খুলে কবিরকে দিলো।
কবির: এটা দিচ্ছো কেন?
মেরিন: এটা পরীরাজ্যের magical ring… যেটা আমাকে এতোদিন সকল বিপদ থেকে মুক্ত রেখেছে। এখন এটার ওপর আমার কোনো অধিকার নেই।
কবির-কনিকা-তারা অবাক চোখে মেরিনকে দেখছে। এই মেরিন যে ওদের কাছে অচেনা অজানা…..
কবির: তুমি ব্যাতিক্রম ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলে…. যে কারনে তোমার ভবিষৎ দেখার ক্ষমতা কারও হয়নি….তোমার ভাগ্যের ফারা কাটানোর জন্য তোমাকে এই পৃথিবীতে নিক্ষেপ করলাম …. ভাবিনি আমার মেয়ের এমন ভাগ্যও আমাকে দেখতে হবে……
কবির কনিকা এটা জানেনা যে মেরিন সকল শক্তি দিয়ে নীড়কে বাচানোর আগে মেরিন আরো ১টা জাদু করেছে। যেন কোনো মায়া শক্তি ওকে খুজেও না পায়…..

.

১৫দিনপর….
নীড় সম্পুর্ন সুস্থ…. সবাইকে হাজারবার জিজ্ঞেস করেছে মেরিন ঠিক আছে কিনা… কিন্তু কেউ মেরিনের খবর দিতে পারেনি…..
নীড়: জানিনা তুমি ঠিক আছো কিনা? আচ্ছা রাতই আবার কিছু করেনি তো? damn it… আগে কেন ভাবিনি….
যদি সত্যি ও আমার মেরিনের কিছু করে থাকে তবে আজই পৃথিবীতে ওর শেষ দিন….
নীড় রেগে মেগে নিচে নামলো। নেমেই রাতের চুলের মুঠি ধরে দার করিয়ে ঠাস করে ১টা থাপ্পর মারলো।
সবাই:??।
নীড়: মেরিন কোথায়? কি করেছিস ওর সাথে?
রাত: আআমি কি করে জানবো যে ও কোথায়?

প্রনয়: কি হয়েছে নীড়?
নীড়: জানোনা ভাইয়া আজকে আমার এই অবস্থার জন্য ওই দায়ী…. ও shooter hire করেছিলো মেরিনকে মেরে ফেলার জন্য…. আমি সময়মতো না গেলে হয়তো মেরিন….???।
রাত: মরে যেতো মেয়ে… ভালো হতো…
নীড় রাতের কথাটা শুনে ওর গলা চেপে ধরে
বলল: আমার মেরিনকে মারবি তোর এতো সাহস?
সবাই নীড়কে অনেক কষ্টে ছাড়ালো। নীড় রাতকে পুলিশে ধরিয়ে দিলো।
নীলিমা: এটা কি করলি তুই…. ওই মেয়েটার জন্য তুই নিজের হবু বউকে arrest করালি….
নীড়: অন্যায় অন্যায়ই হয়…. মেরিন যেমনই হোক ওকে আমি ভালোবাসি। ওর সব মিথ্যা হলেও আমার ভালোবাসা সত্য। এখন ওকে ঘৃণা করি এর মানে এটা না যে ওর ক্ষতি কামনা করবো। আমি কখনোই চাইবোনা যে মেরিনের কোনো ক্ষতি হোক…. ও যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক…
আ..
তখনই ১জন delivery boy এলো। ১টা property paper দিয়ে চলে গেলো। নীড় paperটা পড়ে অবাক হলো। কারন ও দেখলো যে মেরিনের সেই company টা নীড়ের নামে transfer করেদেয়া….
আর ১টা চিঠিও পেলো।

যেটাতে লেখা: ভালো থাকবেন & all the best for your new life…..

.

৩মাসপর…
আজকে নীড়ের বিয়ে… আচল নামের ১টা মেয়ের সাথে…
অনেক কষ্টে নীড় নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে।
তবে যেদিন থেকে নীড়-আচলের বিয়ে ঠিক হয়েছে সেদিন থেকে তুফানি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর আজকের বৃষ্টি তো যেন ইতিহাসের সেরা বৃষ্টি…
দিনেরবেলাই রাতে চেয়ে বেশি অন্ধকার হয়ে আছে। সবাই ভীষন চিন্তিত এমনটা ঘটার কারনে। ঠিক করলো মোবাইলেই বিয়ে করানো হবে…. কাজী নীড়কে কবুল বলতে বলল। নীড় চোখ বন্ধ করে মেরিনের সাথে কাবিন পরানোর সময়টাকে মনে করলো। মেরিন ১দমে ৩বার কবুল বলে দিয়েছিলো। যেটা দেখে সবাই হা হা করে হেসেছিলো।

কাজী সাহেব: বলুন কবুল….
অনেক চাপে পরে নীড়
বলল: ক….
তখনই ওখানে কবির-কনিকা-তারা হাজির হলো। সবাই বেশ অবাক হলো। এই বৃষ্টির মধ্যে ওরা কিভাবে এলো?

.

নিহাল: একি ? আপনারা?
কবির: চৌধুরী পরিবারের সাথে আলাদাভাবে আমাদের কিছু কথা আছে…
দাদুভাই: কিন্তু আপনাদের সাথে আমাদের কোনো কথা নেই…..
কবির: অনুরোধ করছি….
দীদা: যান তো আপনারা… দাদুভাই কবুল বলো….
কবির: কথা
যখন শুনবেনই না তখন আর কি করার….
বলেই তুরি বাজিয়ে চৌধুরী পরিবার ছারা বাকীদের friz করে দিলো।
সবাই:?।

.

কবির: আমরা পরীরাজ্য থেকে এসেছি… আমি মহারাজ কবির ও হলো মহারানী কনিকা। ও হলো বড় রাজকুমারী তারা….
নীড়: তারমানে… ??
কবির: আমার মেয়ে কখনোই মিথ্যা বলেনা…. ও অনেক দুষ্টু । অবঝু । কিন্তু সত্যবাদী। সারা পরীরাজ্যে no .. not just পরীরাজ্যে…. সারা পরীজগতে মেরিনের মতো সত্যবাদী পরী ২য় কেউ নেই…..
ও আমার ছোটো মেয়ে , রাজকুমারী মেরিন…. পরীরাজ্যের সবথেকে দুষ্টু পরী…. যার জাদু কখনোই ঠিক হতোনা। সবসময় ভুল হতো…. যে কখনো কোনো নিয়ম মেনে চলেনি….
যে নাতো বাস্তবতা বুঝতো আর না বোঝার কখনো চেষ্টা করেছে….
যাকে বকে, শাস্তি দিয়েও mature বানাতে পারিনি…. তাকে নীড়ের ভালোবাসা একদম পাল্টে দিয়েছে…..
নীড়: তাহলে সেদিন……
কবির: দেখাচ্ছি…..
বলেই কবির TVএর মতো কিছু এনে সবাই কে সব সত্যটা দেখালো। যেটা দেখে সবার আফসোস হতে লাগলো।

.

নীড় হাটু গেরে ধপ করে বসে পরলো…
নীড়: ও কতোবার বলেছে…. আমি… ??….
কবির: কান্না করোনা। হ্যা ভালোবেসে বিশ্বাস করা উচিত ছিলো। কিন্তু নীলের সেই মায়া সত্যি এরিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলোনা…. আর কান্না করেই বা কি হবে….
নীড়: বববলুন না কোথায় নীড়ের মেরিন….?
কবির: জানিনা…..
সবাই: মানে?
তারা: আমি বলছি…..
তারা সব বলল। মেরিনের শক্তি বিসর্জন দেয়ার…… আর এরপর থেকে মেরিনকে না খুজে পাওয়ার কথা….

.

নীড় স্তব্ধ।
নিহাল: তাহলে আপনি শক্তি দিয়ে মেরিনকে বের করছেন না কেন?
কবির: কারন নীড় মেরিনের মুখ দেখতে চায়না…. নীড় মেরিনকে বলেছে যে মেরিন ওর মুখ নীড়কে দেখালে ও নীড়ের মরা মুখ দেখবে….
তাই হয়তো মেরিন নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে……

.

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে