আঁধার
১৭.
মাত্র একদিনের ব্যবধানে এতো বড় পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব? আগের সাথে এখনকার স্পর্শের কোনো মিল নেই৷ আগের স্পর্শে তার কামুকতা প্রকাশ পেত। আর এখনকার স্পর্শে প্রকাশিত হচ্ছে কাউকে খুব করে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। দীর্ঘ সময় যাবত তার জন্য অপেক্ষা করেছিল। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে গেছে। এবং তাকে একটু একটু করে নিজের করে নিচ্ছে। স্বযত্নে নিজের মধ্যে তাকে আগলে নিচ্ছে। আমাকে কেউ এভাবে নিজের করে নেয়ার জন্য উতলা হবে, কখনো ভাবিনি। রাসেল আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরলেন।
” আপনার মাঝে পরিবর্তন আসার কারণ কী? ” প্রশ্নটা না করে পারলাম না।
রাসেল আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমি জানিনা। আমার নিজেরই অদ্ভুত লাগছে নিজেকে। আমার পুরো রাস্তা মনে হয়েছে, কখন তোমাকে কাছে পাব! ”
” আমি কখনো ভাবিনি কেউ আমাকে এভাবে দেখবে, এভাবে কাছে পেতে চাইবে। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ”
” আমিও ভাবিনি কারো জন্য এতো বেশি উন্মাদ হবো। ”
” যাক দুজনের ভাবনা এক রকম। ” কথাটা বলে হেসে ফেললাম। আমাকে পাগল ছাগল বলতে বলতে এখন নিজেই পাগল হয়ে বসে আছে।
” এই মেয়ে হাসবা না। খবরদার না। ” রাসেলের বলার ভঙ্গিতে আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম।
” কিন্তু কেনো? হাসলে কী সমস্যা? ”
” হাসলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। তোমার থেকেও তোমার হাসি খুব সুন্দর। এতো বেশি সুন্দরকে নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছা জাগবে। ”
” সমস্যা কোথায়? আমি তো আপনার স্ত্রী তাই না? ”
” তুমি অসুস্থ। এই অবস্থায় তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবেনা। আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বা। পরে সবাই বলবে, জামাই খাইষ্টা। অসুস্থ বউডারেও শান্তি দেয়না। ”
আমি তার গাল টেনে বললাম, ” আপনাকে কেউই দোষারোপ করবে না৷ কারণ সবাই জানে আমিই ভালো না। ”
” কে বলেছে তুমি ভালো না? আমি তো তোমার মধ্যে পাগলামি ছাড়া খারাপ কিছু দেখিনি। ”
রাসেল আমাকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসালেন৷ তারপর আমাকে জাপটে ধরলেন৷ এভাবে সে কখনো ধরে না আমাকে।
” আমি সত্যিই ভালো না। বিয়ের আগে সাত আট জনের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। ” সত্যটা বলা উচিৎ।
” শারীরিক সম্পর্ক ছিল? ”
” না, আমার শারীরিক সম্পর্ক ভালো লাগেনা। আমার যাদের সাথে সম্পর্ক ছিলো। তাদের সাথে ফোনে কথা বলা, চ্যাটিং করা এই অব্দিই আটকে ছিল। ”
” কারো সাথে সামনা-সামনি দেখা করো নাই? ”
” করেছিলাম। কিন্তু সবাই শরীরে হাত দিতে চায়। তাই দেখা করতাম না। আর এজন্যই এই সাত আটটা রিলেশন হয়েছে। ফোনেও হাবিজাবি কথা বললে আমি মেনে নিতাম না। এটাও একটা কারণ রিলেশন না টেকার। ”
” তোমার কি এদের কাউকে খুব পছন্দ ছিলো না? সত্যি করে বলবা। ”
” পছন্দ না হলে রিলেশনে যেতাম নাকি? রিলেশনে যাওয়ার পরে যখন এরা শরীরের দিকে আগানোর চেষ্টা করতো। তখনই পছন্দটা আর থাকতো না। ”
” তুমি কি আমাকেও পছন্দ করো না এই কারণে? ”
” আপনার তো আমার উপর অধিকার আছে। কিন্তু… ”
” মিলা, থেমে গেলে কেনো? বলো প্লিজ। ”
” আপনার স্পর্শে কামুকতা ছিল। ভালোবাসা, ভালোলাগা বা এফেকশন বা অনুভূতি ছিলো না। আমি চাইতাম আগে মানুষটার মনকে স্পর্শ করবো। তারপর তার শরীরকে। ”
” কিন্তু আমি আগে তোমার শরীর স্পর্শ করে বসে আছি। তোমার মনের কাছাকাছিও যেতে পারেনি তাই না? ”
” আমি কারো মনে আগে জায়গা করবো। তারপর তার শরীর। ”
” তুমি কেনো আগে বলোনি? ”
” কারণ কখনো আজকের মতো, এখনকার মতো সিচুয়েশন আসেনি। আজকের মতো আপনাকে আমি আগে কখনো পাইনি। আপনার চাহনিতে, স্পর্শে, নিশ্বাসে আমাকে নিজের করে পাওয়ার আকুলতা খুঁজে পাইনি। আগে কখনো মনে হয়নি আমার দিকে কেউ এতো এফেকশন নিয়েও তাকিয়ে থাকতে পারে। আমার চেহারা আহামরি কিছুই না। তারপরও সব মেয়েই চায়। তার পার্টনার তার দিকে কামুক দৃষ্টিতে না ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাবে। ”
” আমাকে এখন পছন্দ হয়?”
” হ্যাঁ ”
” পুকুর পাড়ে কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে বলোতো? ”
” কারো সাথে না। আমার কোনো এক্স আমার সাথে ছিলো না। ”
” সত্যিই? ” রাসেল আমাকে ছেড়ে দিলেন৷ তার মুখের কাছাকাছি আমার মুখ টেনে এনে প্রশ্নটা করলেন।
” হ্যাঁ ”
” তোমার এই মন, শরীরে শুধু আমার বিচরণ থাকবে। আর কারো না ঠিকাছে? ”
” আপনারই আছে। আর কেউ এই ভাঙাচোরা চেহারার দিকে তাকাবেও না। ”
” কে বলেছে ভাঙাচোরা? ঠিকঠাক ভাবে নিজের যত্ন তো নাও না। ”
” আমার ভালো লাগেনা কিছুই। সবসময় মনে হয় কবে মুক্তি পাবো। কবে শান্তি পাবো। ”
” মুক্তি আর তোমাকে দিচ্ছি না। ভালো লাগেনা কেনো? তোমার বড় কোনো কষ্ট আছে মিলা? আমাকে বলতে পারো। ”
” আজকে না৷ আজকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি আমি। আর এখন ক্লান্ত আরো বেশি লাগছে। ”
” তুমি পুরোপুরি কবে সুস্থ হবে? ”
” কেনো? সুস্থতা দিয়ে কী করবেন? ”
” বলবো না । খুব ক্লান্ত লাগছে। ঢাকা থেকে এসে তোমার কাছেই বসে আছি। ”
” আপনি খাওয়া দাওয়া করেননি? ”
” না, তোমার সাথে খাবো বলে অপেক্ষা করছিলাম। ”
” তাহলে চলুন খেয়ে নেয়া যাক। যদিও আমার খিদে নেই। ”
চলবে…
~ Maria Kabir