#অন্ধকার_পল্লী
Part:18
#Tabassum_Riana
,
,
,
বাবার সাথে কথা বলার সময় অবনীর চোখ জোড়া আফিনকে খুঁজছিলো।আফিনক
ে খুঁজতে খুঁজতে কিছুক্ষনের মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে অবনী।চোখের সামনে নির্যাতনের দৃশ্য গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।খুব ভয় হচ্ছে অবনীর।ওদের অট্টহাসি ওর বুকের ভেতর সব যেন ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে।পুরো শরীর ঘেমে ভিজে যাচ্ছে অবনীর।চিৎকার করতে নিবে ঠিক তখনই কেউ খুব শক্ত করে জাপটে ধরলো অবনীকে।সেই মাতাল করা ঘ্রান,সে পরিচিত মাতাল করা নিশ্বাস যা অবনীর শিউরে উঠার জন্য যথেষ্ট, সেই পরিচিত বুক যেখানে অবনী শান্তি খুঁজে পায়। এতো গুলো পরিচিত অনুভূতি পাওয়ার পর চোখ বুজে রাখতে পারেনি অবনী।চোখ খুললে মনে হচ্ছিলো সেই নরপশুদের মুখ দেখতে পাবে কিন্তু স্পর্শগুলো অবনীকে চোখ খুলতে বাধ্য করলো।পিটপিট করে আধো চোখ খুলে অবনী।ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুঁটে উঠে অবনীর।আফিন ততক্ষনে ওর ঠোঁটজোড়া অবনীর গালে কপালে ঠোঁটে বুলাতে লাগলো।অবনী ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে আফিনের উষ্ণ স্পর্শগুলোকে উপভোগ করছিলো।অাফিন শব্দ করে অবনীর ঠোঁটে দুতিনটে চুমু দিয়ে একটু সরে এলো।অবনী এখনো আফিনের গলা জড়িয়ে আছে দুহাতে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,জলপরী!!!চোখ খুলো। মায়াভরা কন্ঠে ডাকলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,খুব কষ্টে চোখ খুলল অবনী।আফিন হালকা হেসে ওর দিকে চেয়ে আছে।অবনী ও একটু হাসলো স্বাধীনতার হাসি দিলো।
,
,
,
,
স্যুপ নিয়ে এলাম।বলেই থেমে গেলেন রহমত সাহেব।অবনীর থেকে সরে এসে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আফিন।রহমত সাহেব স্যুপের বাটিটাকে টেবিলের ওপর রেখে মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ালো।মামনি এখন কেমন লাগছে?মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন রহমত সাহেব।জি বাবা একটু ভালো একটু অসুস্থ গলায় বলল অবনী।আফসানা কল দিয়েছিলো।তোর মা কথা বলবে তোর সাথে।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।কল দাও ওকে।বলে উঠলো অবনী।রহমত সাহেব আফসানার নম্বরে কল দিলো।
,,,,,,,,,,,,,,,,,, হ্যালো বাবা আপি কই?মা কথা বলবে।অপর পাশ থেকে বলল আফসানা।
,,,,,,,,,, হুম ধর।কথাটা বলে অবনীর কানে ফোন রাখলেন রহমত সাহেব।মা আর বোনের সাথে বেশ অনেকক্ষণ কেঁদে কেঁদে কথা বলল অবনী।
আঙ্কেল রাত তো অনেক হচ্ছে।আপনি বাসায় যান।আফসানা আর আন্টি একা বাসায়।ইসলাম সাহেব ছেলের প্রতিশোধ নিতে আন্টি আর আফসানাকে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।একনাগাড়ে কথা গুলো বলে থামলো আফিন।হ্যা বাবা ঠিক বলেছো।অবনীর সাথে কে থাকবে?মেয়ের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বললেন রহমত সাহেব।
আঙ্কেল ডোন্ট ওয়ারি।আমি আছি।রহমত সাহেবের হাতে হাত রেখে বলল আফিন।
আচ্ছা বাবা তুমি যেহেতু আছো তাহলে আর চিন্তা নাই আমার।কাল আমি আফসানা আর ওর মাকে আনার চেষ্টা করবো।মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল রহমত সাহেব।
,
,
,
,
মাথা ঝাঁকালো অবনী।আসি!!বলে বেরিয়ে গেলেন রহমত সাহেব।আফিন বাথরুম থেকে পানি এনে রুমাল ভিজিয়ে অবনীর মুখটা মুছে দিলো।পুড়া জায়গা গুলোয় চেপে চেপে মুছে দিয়েছে আফিন।অবনীকে স্যুপ টুকু খাইয়ে দিয়ে নিজেও একটু খেয়ে নিলো আফিন।অবনীর বেডের পাশের টুলে বসে বেশ কিছুক্ষন গল্প করলো আফিন আর অবনী।পুরোটা সময় অবনীর হাত আফিনের দুুইহাতের ভাজে ছিলো।
গল্প শেষে আফিন বলে উঠলো অবনী অনেক রাত হলো ঘুমাও।একা একা ঘুম হবেনা।প্লিজ আপনি ও এখানে এসে শুয়ে পড়ুন।বলে একটু সরে গেলো অবনী।আফিন অবনীর পাশে শুয়ে ওর মাথা টা নিজের বুকে নিয়ে নিলো।পরদিন দুপুরে রহমত সাহেব আমেনা বেগম আফসানা কে নিয়ে এলো হাসপাতালে।মায়ের সাথে বেশকিছুক্ষন আবেগঘন মুহূর্ত কাঁটলো অবনীর।আফসানাও বোনকে ধরে খুব কেঁদেছে।এভাবে ৭দিন চলে গেলো।অবনীকে রিলিজ দেয়া হলো আজ।আফিন থেকে বিদায় নিয়ে ঘরে যাবার জন্য রওনা হলো অবনী আর রহমত সাহেব।বাসার কাছে আসতেই আশেপাশের সবাই অবনীকে ভ্রু কুঁচকে দেখতে লাগলো।
আরে আরে দেখ এ অবনী না?
হ এটাই তো অবনী।হুনছিলাম পতিতা পল্লীত নিয়া গেছিলো।কে জানি কয়জনের লগে রাত কাডাইছে।ছিঃ ছিঃ কতো বেশরম মাইয়া আবার ফিরা আইছে।এই এলাকায় এই অবনী বেশি দিন থাকলে আমগোর মাইয়ারা নষ্ট অইয়া যাইবো।
ছিঃ ছিঃ আশপাশ থেকে এই কথা গুলো অবনীর কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিলো।চোখ জোড়া ভিজে আসছে অবনীর।রহমত সাহেব দ্রুত মেয়েকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।
,
,
,
,
বাসায় আসার পর থেকে কোন কিছুই ভালো লাগছেনা আফিনের।বুকখানা ভীষন খালি খালি লাগছে।কি যেন চলে গেছে খুব দূরে।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো আফিন।ফোন হাতে নিয়ে অবনীর নম্বরে কল দিলো।
ঘরে এসে দৌড়ে রুমে চলে গেলো অবনী।জন্ম থেকে এই এলাকায় একটু একটু করে বড় হয়েছে ওরা দুবোন।সবার ভালাবাসার মাঝেই থেকেছে ওরা।আর আজ খারাপ হয়ে গেলো সবার চোখে।ও কি সত্যি নোংরা হয়ে গেছে?আফিন তো বলছিলো ও এখনো আফিনের জলপরী তাহলে ওরা লেন এমন বলছে?কিছু ভাবতে পারছেনা অবনী।চোখ ফেঁটে কান্না আসতে চাইছে।বারান্দার রেলিং ধরে কাঁদতে লাগলো অবনী।ফোনে কল আসছে সেই কতক্ষন ধরে।চোখ মুছে কানে ফোন রাখলো অবনী।
উফ কি হলো মেয়েটার?ফোন ধরে না কেন?বলে উঠলো আফিন।আবার কল দিতেই ফোন ওয়েটিং অবনীর।পরে আবার কল করতেই অবনীর নম্বর বন্ধ পেলে আফিন।কি হলো ফোন বন্ধ করলো কেন?কিছুটা বিরক্ত হলো আফিন।রহমত সাহেবের নম্বরে কল দিলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,, হ্যালো আঙ্কেল বলে উঠলো আফিন
,,,,,,,,,,,,,,,, জি বাবা বলো।অপরপাশ থেকে বললেন রহমত সাহেব।
,,,,,,,,,,,,,,,, অবনী কই?ওকে কল দিচ্ছি। ফোন অফ আসছে।বলে উঠলো আফিন।
,,,,,,,,,,,,,,,,ও ঘরে আসার পর রুম থেকে আর বের হয়নি।ঘুমোচ্ছে মনে হয়।বলে উঠলেন রহমত সাহেব
,,,,,,,,,,,,,,,, ওহ।আচ্ছা ঠিক আছে আঙ্কেল রাখি তাহলে।আল্লাহ হাফেজ।বলে উঠলো অাফিন।ফোন কেঁটে বিছানার ওপর রেখে দিলো।সেদিন আর কল দিয়ে অবনীকে পেলো না আফিন।
,
,
,
,
সেদিন সারারাত আর ঘুমোতে পারলোনা আফিন।পরদিন অফিস থেকে ছুটে গেলো অবনীর কাছে।কাল থেকে এখন ও পর্যন্ত রুম থেকে বের হয়নি অবনী।খালি খাবারের সময় রুমে বসে খেয়েছে।আফিন অবনীর দরজা অনেক নক করলো।ভিতর থেকে অবনী বলছিলো প্লিজ আফিন চলে যান একটু একা থাকতে দিন।আফিন আর কিছু বলতে পারলোনা।রহমত সাহেবকে বলে চলে গেলো।এভাবে অনেক দিন এসেছে কিন্তু অবনীর সাথে কথা হয়নি ওর।