#অন্ধকার_পল্লী
Part:৮
#Tabassum_Riana
,
, আফিন অবনীকে এক ঝলক দেখলো পর্দার ফাঁকে।ভেজা চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।লাল একটি স্যালোয়ার কামিজ পরে আছে অবনী।সাদা উড়না টা আকাশে উড়ছে।গোসলের পর যদি কাউকে এতো সুন্দর লাগে তাহলে সেটা শুধুই অবনী।ওর রুপের মোহনীয়তা বড়ই গভীর।আফসানা আছে নাহলে অবনীকে ছুঁয়ে দিতে পারতো আফিন।অবনী এসে আফসানাকে বলল ওনাকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে আয়।বলে আর দাঁড়ালো না অবনী চলে এলো সেখান থেকে।আফসানা আফিনের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল চলুন।আফিন আফসানার সাথে উঠে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে পড়লো।রহমত সাহেব আফিনের পাশে এসে বসলো।আফিন কে ভীষন আদরে খাওয়ালেন রহমত সাহেব একদম নিজের ছেলের মতো।খাবার শেষে চা পান করে উঠে পড়লো আফিন।রহমত সাহেব কে বলে উঠলো আঙ্কেল আজ আসি।দুদিন পর আমার আমেরিকা যেতে হবে।
আমেরিকা যাবা।ভালো,তা কয়দিন থাকবা বাবা?প্রশ্ন করে উঠলেন রহমত সাহেব।পাঁচ দিন পর আঙ্কেল বলে উঠলো আফিন।
,
,
,
,
অবনী মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনছিলো।দম বন্ধ হয়ে আসছিলো অবনীর।কেউ যেন ওর গলা চেপে ধরে রেখেছে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর।আফিনের দিকে আর তাকাতে পারলোনা অবনী। আফিনের দিকে তাকালে অবনীর চোখের পানি বাঁধা মানবেনা।সবার থেকে বিদায় নিয়ে অবনীর দিকে তাকায় আফিন।আসি? বলে উঠলো আফিন।অবনী মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।অবনীর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রহমত সাহেবের দিকে তাকালো আফিন। আঙ্কেল আসি?বলে উঠলো আফিন।জি বাবা আবার এসো।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।আফিন বেরিয়ে গেলো।খাটে বসে আছে অবনী।কেন এমন লাগছে ওর?আফিনের চলে যাওয়াটা কেন ওকে এতো কষ্ট দিচ্ছে?ভালো মতো শ্বাস নিতে পারছেনা অবনী।মাথাটা ভার ভার লাগছে।খাটে শরীর এলিয়ে দিলো অবনী।
সন্ধ্যায় অবনী পড়তে বসেছে। ওর সামনে আফিন ভিডিও কলে ওকে দেখছে।ঘন্টাখানেক পর্যন্ত আফিন অবনীকে দেখছে আর কথা বলছে কিন্তু অবনী এ পর্যন্ত একটাবার ও আফিনের দিকে তাকায়নি।হালকা পাতলা কথার উত্তর দিয়ে গেছে।কিছুক্ষন এসব সহ্য করার পর আফিন ভ্রু কুঁচকে অবনীর দিকে তাকালো।কি প্রবলেম তোমার?ভারি গলায় প্রশ্ন করলো আফিন।বইয়ের দিকে তাকিয়ে অবনী বলতে লাগলো কোন প্রবলেম নেই।আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে অবনী।লুক এট মি!রাগী গলায় বলল আফিন।অবনী বইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে।অবনী লুক এট মি!!!।আজ আসার সময় ও কোন কথা বললা না?কেন?ধমক দিয়ে বলল আফিন।ভালো লাগছিলো না।মাথা ব্যাথা করছিলো।মাথা নিচু করে বলল অবনী।
,
,
,
,
,
আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে?তাকাচ্ছোনা কেন আমার দিকে?রাগী গলায়,প্রশ্ন করলো আফিন।এবার অবনী কেঁদেই দিলো।হুঁ হুঁ করে কাঁদতে লাগলো অবনী।অবনীর কান্না দেখে আফিনের মাথা খারাপ হবার যোগাড়।অবনী বলো কি হয়েছে?ঐ ছেলে গুলো কিছু করেনি তো?বলো অবনী?প্লিজ চুপ থেকোনা ড্যম ইট আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।জাস্ট সে হোয়াট হ্যাপেনড?আপনি আমেরিকায় যাবেন বলেননি কেন আমাকে?কাঁদতে কাঁদতে বলল অবনী।আফিন এবার চরম ঝটকা খেলো।ওর জন্য কাঁদছিলো অবনী?ভাবতেই মনটা ভরে গেলো আফিনের্।আরে মাত্র পাঁচদিনের জন্যইতো?চলে আসবো তো।বলে উঠলো আফিন।না গেলে হয় না?কেঁদে প্রশ্ন করলো অবনী।আমাকে ছাড়া এ কাজ টা হবেনা।বলে উঠলো আফিন।যে কয়দিন আছি তুমি আমার সাথে কাঁটাবা।দুদিন আছি আর মাত্র।এই দুটোদিন আমার সাথে থাকবা ওকে?অবনীকে বলল আফিন।চোখ মুছে নিলো অবনী।কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল সত্যি?হুম!!! বলে উঠলো আফিন।মুচকি হেসে আফিনের দিকে তাকালো অবনী।খাবার টা কেমন হয়েছিলো?প্রশ্ন করলো অবনী।
মুরগীর কারিটা অসাম ছিলো।আর ইলিশের ঝাল কারিটা অসাধারন।ভর্তা ছিলো না একটা?গ্রিন কালার বলতে লাগলো আফিন।আফিনের গ্রীন ভর্তার কথা শুনে হেসে বলতে লাগলো অবনী।আরে পাগল ওটা সীম আর ইলিশ মাছের ভর্তা ছিলোওহ ইয়াপ সীম আর ইলিশ মাছ।বাট সব কিছুই জোস ছিলো।অবনীর দিকে তাকিয়ে নেশা ধরানো কন্ঠে বলতে লাগলো আফিন।আফিনের এই কন্ঠের পাগল অবনী।একটা শব্দই অবনীর শিউরে উঠার জন্য যথেষ্ট।
,
,
,
,
,
অবনী আর কিছু বলতে পারছেনা।নিষ্পলক ভাবে আফিনকে দেখছে অবনী।আফিন অবনীকে দেখছে মন ভরে।এই দেখার তো কোন শেষ নেই।এভাবে কিছুসময় চলে গেলো।হঠাৎ আফসানা অবনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।দেখে ফেলেছি হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলল আফসানা। আফসানার কথায় ভয় পেয়ে গেলো অবনী।অবনীর গলা জড়িয়ে আফসানা হাসতে লাগলো।অাফিন ও হাসছে।অবনী অবাক চোখে আফসানা আর আফিনকে দেখছে।আফসানা এবার বলল দেখেছো জিজু আপির চেহারা দেখার মতো হয়েছে।বলেই হাসতে লাগলো আফসানা।এবার অবনীর ঘোর কাঁটলো।জ জিজু কে জিজু?অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।ঐ যে স্মার্ট ড্যাসিং ভাইয়াটা।বলে উঠলো আফসানা।চুপ থাক বেশি বুঝিস কোন জিজু টিজু না।বলে উঠলো অবনী।এভাবে হাসি রসের মাঝেই রাতটা কেঁটে গেলো অবনীদের।সকালে আফিনের কলে ঘুম ভাঙ্গলো অবনীর।ঘুমঘুম চোখে আফিনের কল রিসিভ করলো অবনী।হ্যালো!!!!!ঘুমন্ত গলায় বলল অবনী।
ঘুম এখন ও ভাঙ্গেনি?বলে উঠলো অাফিন।
উমম মাত্র উঠলাম।বসতে বসতে বলল অবনী।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি আধঘন্টার মাঝেই আসছি।বলেই কল কেঁটে দিলো আফিন।খোপা করা চুল গুলো খুলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো অবনী।
,
,
,
,
,
অবনীকে কলেজে দিয়ে অফিসে চলে গেলো আফিন।ক্লাশের পুরোটা সময় আফিনকে ভাবতে ভাবতেই কেঁটে গেলো অবনীর।আর আফিন তো কাজে মন বসাতে পারছিলোনা।অবনীর কান্নার দৃশ্য আফিনের চোখজোড়ার সামনে ভেসে উঠলো।আফিনের গাড়ি দেখতেই অবনী দৌড়ে এলো।আফিন দরজা খুলে দিতেই অবনী ঢুকে বসে পড়লো আফিনের পাশের সিটে।অাফিন দুটো বড় চকোলেট বক্স অবনীর দিকে এগিয়ে দিলো।একটা তোমার আরেকটা আফসানার।চকলেট দেখে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা অবনী।আফিনের কোটের কলার ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো অবনী।তার আফিনের গালে চুমো একেঁ দিয়ে সরে এলো অবনী।অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে রেখেছে অবনী।বুক ভীষন জোরে কাঁপছে।ভাবছিলাম আমেরিকায় পাঁচটাদিন কি করে কাঁটাবো?বাট এখন আর চিন্তে নেই এই চুমো টা দিয়ে কাঁটিয়ে দিবো।চুমু এতো মিষ্টি হয় জানতামনা।অবনীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো আফিন।অবনী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।আফিন অবনীকে দেখলো। রোদের কারনেই হোক আর লজ্জায় হোক ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে এসেছে। আফিন মুখ বাড়িয়ে অবনীর গালে গলায় ঠোঁট বুলিয়ে সরে এলো।অবনী অবাক চোখে আফিনকে দেখছে।এবার সামনে তাকালো অবনী।আফিন মুচকি হেসে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।অবনী খেয়াল করলো গাড়িটা অন্য একটা গলিতে ঢুকে পড়লো।আরে কই যাচ্ছেন আপনি?চেঁচিয়ে উঠলো অবনী।আফিন ফোন বের করে অবনীর দিকে ধরলো ড্রাইভিং এর মাঝেই।তোমার বাবাকে ফোন দাও।বলে উঠলো আফিন।কেন?অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অবনী।ওনাকে বলো তুমি তোমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছো দুদিনের জন্য।বলে উঠলো আফিন।
,
,
,
,
না মা মানে?কাঁপা গলায় বলল অবনী।আমার সাথে দুদিন থাকার কথা আছে তোমার।গম্ভীর গলায় বলল অাফিন।আফিনের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রহমত সাহেবকে কল দিলো অবনী।
হ্যালো!!!অপর পাশ থেকে বললেন রহমত সাহেব।
হ্যা বাবা।আমি অবনী।
এটা কার নম্বর মা?বলে উঠলেন রহমত সাহেব।
বাবা এটা অন্তরার ভাইয়ের নম্বর।বলেই জিভ কাঁটলো অবনী।
হ্যা বুঝলাম।তা তুই কই অবনী?জিজ্ঞেস করলেন রহমত সাহেব।
বাবা অবনীর বাসায় দুদিন থাকতে বলছে।আমরা গ্রুপস্টাডি করবো।বলে আফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো অবনী।এতো মিথ্যা বাবার সাথে কখনোই বলেনি ও।আচ্ছা মা জলদি এসে পড়বি।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।ওকে বলেই কল কাঁটলো অবনী।আফিনের গাড়িটা একটা বাংলোর সামনে থামলো।তবে নতুন একটি বাড়ি।পুরো গাছ দিয়ে ঘেরাও করা।বিভিন্ন ফুল গাছে ভরে আছে বাংলোর আশপাশ।এটা কার বাড়ি আফিনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।আমার ফার্ম হাউস এটা বলে একটু হাসলো আফিন।
চলবে