#অন্ধকার_পল্লী
Part:১২
#Tabassum_Riana
,
,
,
,
অবনীকে পৌছে দিয়ে কিছুক্ষন পর রহমত সাহেবের বাসায় লাগেজ ব্যাগ সমেত চলে এলো।রহমত সাহেব বেশ যত্ন আত্তি করলেন আফিনের একদম নিজের ছেলের মতো।রাতের খাবার খেতে বসেছে সবাই।খাবার টেবিলে অবনীর পাশে বসে পড়লো আফিন।খাবারের মাঝেই অবনীর বাম হাত ধরে ফেলল আফিন।অবনী কাশতে শুরু করলো।মেয়ের কাশি দেখে রহমত সাহেব মাথা তুলে তাকালেন।কিরে মা?পানি খেয়ে নেয়।অবনী চেয়ে ও পানি খেতে পারছেনা।মাথা ঝাঁকিয়ে অবনী বলল আমি ঠিক আছি।আফিন অবনীর হাত ছেড়ে দিলো।অবনী আফিনের দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।একগ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।আফিন রহমত সাহেবের সাথে কথা বলার ফাঁকে অবনীর পায়ের ওপর পা রাখলো।অবনী বিষম খেলো।আফসানা অবনীর দিকে অবাক চোখে তাকালো।আফসানার দিকে তাকিয়ে অবনী খাওয়ায় মন দিলো।আফিনের পা অবনীর পায়ে স্লাইড করছে।খাবার সেড়ে আফিন বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।তবে চোখ দুটো অবনীকেই খুঁজছে।খাটের ওপর বসে আছে অবনী।ওর ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কেমন অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে আছে অবনী।কিছুক্ষন পর পর আফসানা আর মা এটা ওটা বলে যাচ্ছে কিন্তু ওর কানে কিছুই যাচ্ছেনা।ঘন্টা খানিক পর আফসানা অবনীর সামনে এসে দাঁড়ালো।আপি আফিন ভাইয়া চলে যাচ্ছে বলে উঠলো আফসানা।আফসানার কথা শুনে অবনী উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আফিন যে রুমটায় ছিলো সেদিকে এগুতেই কে যেন অবনীর হাত টেনে একটা খালি রুমে নিয়ে এলো।অবনী বড় চোখ করে আফিনের দিকে চেয়ে আছে।কি হলো আমাকে এনে নিজেই হারিয়ে গেলে?গম্ভীর গলায় বলল আফিন।না মানে এমনি একটু ব্যাস্ত ছিলাম।মাথা নিচু করে বলল অবনী।হুম!! বড় একটি নিশ্বাস নিয়ে বলল আফিন।শুনো আমার বডিগার্ডরা প্রতিনিয়ত তোমার সাথে থাকবে।কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।অবনীর দুগালে হাত রেখে বলল আফিন।অবনীর চোখ জোড়া ভিজে গেছে।আফিন সত্যিই চলে যাবে?ভাবতেই বুকের এককোনে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে অবনীর।আর তোমার সাথে ভিডিও কলে কথা হবে সবসময়।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে এবং আঙ্কেল আন্টির খেয়াল রাখবে।ওকে?একনাগাড়ে কথা গুলো বলল আফিন।অবনী আফিনের কাঁধে মাথা রাখলো।চোখ জোড়া বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অবনীর।
,
,
,
,
অবনীর মুখ তুলে ধরে আফিন দুহাতে।অবনীর চোখ জোড়া মুছে দিয়ে ওর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে বেরিয়ে গেলো আফিন।এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় ঠিকহলো রহমত সাহেব যাবেন আফিনের সাথে।আফসানা আর মায়ের সাথে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো আফিন।অবনী সিড়ি পর্যন্ত দৌড়ে এলো আফিনের পিছু পিছু।অশ্রু আর বাঁধা মানলো না অবনীর।আফিন চোখের আড়াল হতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো অবনী।এভাবে বেশ কয়েকদিন চলে গেলো।অবনী ঘর থেকে দুইদিন বের হয়নি।কারন আফিন তো এখন আর নেই ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।অবশ্য এ কয়দিন ভিডিও কলে কথা হয়েছে।আফিন কথা বললে ও অবনী কথা বলতে পারতোনা।গলাভেঙ্গে আসতে চাইতো ওর।চোখজোড়া ভিজে আসতে চাইতো।তিনদিন পর আজ বের হলো অবনী।বাহিরে বের হতেই মনে হলো মুক্ত বাতাস ওর হৃদয়টাকে ছুঁয়ে দিয়েছে।একটু আগাতেই আফিনের বডিগার্ডরা অবনীর সামনে এসে দাঁড়ালো। ম্যাম আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে যতোদিন পর্যন্ত স্যার না আসে।লোকটা মাথা নিচু করে বলে উঠলো।ঠিক আছে চলুন। বলে উঠলো অবনী।বডিগার্ডদের সাথে কলেজে চলে এলো অবনী।অবনীকে কলেজে দেখে অন্তরা দৌড়ে এলো।এতোদিন আসিস নাই কেন?প্রশ্ন করলো অন্তরা।
এমনিই ভালো লাগছিলো না।কিছুটা মন খারাপ করে বলল অবনী।কিছু কি হয়েছে অবনী?প্রশ্ন করে উঠলো অন্তরা।
ওনি চলে গেছে।ভাঙ্গা গলায় বলল অবনী।
কই গেলো? প্রশ্ন করে উঠে অন্তরা।
আমেরিকা পাঁচদিনের জন্য।নাক টানতে টানতে বলল অবনী।
বাহ!! বাহ!!পাঁচদিনের অনুপস্থিতি ও সহ্য হচ্ছে না।দুষ্টামি করে বলল অন্তরা।
কথা বলতে বলতে ক্লাশে চলে গেলো অবনী আর অন্তরা।
,
,
,
,
অফিসে বসে ওয়ালপেপারে জলপরীর ছবিটা বারবার দেখছে আফিন।কবে আবার দেখা পাবে এই জলপরীর?আফিনের যে আর ভালো লাগছেনা জলপরীকে ছাড়া।প্রত্যেকটা ঘন্টাকে বছরের মতো মনে হচ্ছে ওর।ভাইবারে ঢুকে অবনীকে অনলাইন পেয়ে মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো আফিনের।কল করার কিছুক্ষন পর রিসিভ হলো।ক্লাশে লেকচারের শব্দ পাচ্ছে আফিন।
হ্যালো!!!!অপরপাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো অবনী।
ক্লাশে অনলাইন হয়ে আছো কেন?বলে উঠলো আফিন।
নেট অফ করতে মনে নেই।ফিসফিস করে বলল অবনী।
মিস ইউ।নেশা ধরানো কন্ঠে বলে উঠলো আফিন।
গলা ধরে আসতে চায় অবনীর।কোনমতো নিজেকে সামলে নিলো অবনী।কে ক কেমন আছেন?ফিসফিসিয়ে বলল অবনী।
ভালো।ক্লাশ করো,রাতে কথা হবে।বলে উঠলো আফিন।
অবনী ফোন কেঁটে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো মোবাইলটাকে।
অন্তরা অবনীর দিকে দুষ্টমির হাসি দিয়ে ক্লাশে মনযোগ দিলো।
ক্লাশ শেষে বেরিয়ে পড়লো অবনী আর অন্তরা।রাফসান এসে অন্তরাকে নিয়ে গেলো।অবনী বাসের জন্য অপেক্ষা করছে।
,
,
,
,
রাতে আফিন খাটে বসে ভাইবারে অবনীর আইডি চেক করলো।এসময় অনলাইন থাকে অবনী।কিন্তু আজ অবনীকে অনলাইন পেলোনা আফিন।বড় একটা নিশ্বাস নিলো আফিন।ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে অবনীর নম্বরে কল দিলো আফিন।ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।আফিনের বুক যেন ধুক করে উঠলো।পরক্ষনেই আফিনের মনে হলো হয়ত ফোনে চার্জ নেই।ল্যাপটপের ওয়ালপেপারে অবনীর কালো শাড়ী পরা ছবিটাকে দেখে সারারাত কাঁটিয়ে দিলো অাফিন।
কয়েক ঘন্টা আগে
বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে অবনী।হঠাৎ সামনে একটা মাইক্রোবাস এসে চোখের পলকে অবনীর মুখে রুমাল চেপে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো।চিৎকার করার ও সুযোগ পেলোনা অবনী।
চলবে