অনুভূতির সংমিশ্রণ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব সাত
?
নিধি যখন নিচে নামে তখন দেখে ইমরেত খুব আয়েশ করে যমরাজ লুকে সবার সাথে খোশ গল্প শুনতে বিজি আছে।।
“আস্ত দানব!!ঠোট টা কত ব্যাথা করছে এখনো!!”নিধি অসহায়ের সাথে বিড়বিড় করলো।।
স্মৃতি নিধির ঠোটের দিকে নজর গেলে,দেখে নিধির ঠোট অনেক ফুলা।।
ইমরেতের দিকে তাকিয়ে বুঝলো এই কিছু একটা করেছে..দুই ভাই একি,মানুষজন বুঝে না।।
মেহবুব মাহিকে কোল থেকে নামিয়ে,স্মৃতির উদাম পেটে হাত দেয় সবার আড়ালে..স্মৃতি শিউরে উঠেও নিজেকে সামলে নিলো,মেহবুবের দিকে রেগে তাকালেও..মেহবুবের কোন ভাবান্তর নেয় মনে হচ্ছে সে কিছুই করে না..স্মৃতি হালকা করে হাত উঠিয়ে সবার মনোযোগের আড়ালে মেহবুবের পেটে দিলো কনুই দিয়ে ধাক্কা।।
মেহবুব আউচ বলতে যেয়েও, মুখেই রেখে দিলো ব্যাথাটা কারন সামনে সবাই আছে।।
নিধি তার মায়ের পাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছে,ইমরেত তার সামনের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে কফি খাচ্ছে আর নিধির দিকে মগ্ন হয়ে আছে..নিধি আড়চোখে তাকালেও বুঝতে দিচ্ছে না ইমরেতকে কিন্তু ইমরেত নিধির আড়চোখে দেখাটাকে বুঝতে পেরে বাকা হাসি দেয়।।
নিধির বাবা মাকে আর বলতে পারলো না যে তাদের সাথে যেতে চায়,যখনি তার মাকে সে কিছু বলতে চাইছে তখনি ইমরেত তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাচ্ছে..বেচারা নিধি না গিলতে পারছে ইমরেতকে না হজম করতে পারছে।।
এদিকে স্মৃতি ইমরেতকে সবার আড়ালে হাসতে হাসতে নিয়ে যায়।।
“যার জন্য এতো আমার গম্ভীরমুখো দেবর ডেসপেরেট হয়ে আছে,তাকে সারাজীবন তোমার করার জন্য তার বাবা মা তোমার ভাইকে কথা দিয়ে দিয়েছে” স্মৃতি ইমরেত কে জানালো।।
“উনারা কথা না দিলেও,আর স্মৃতি না চাইলেও আমি ঠিকি ওর প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পর তুলে নিয়ে নিয়ে যেয়ে বিয়ে করতাম” ইমরেত সোজা স্টাইলে বাকা জবাব।।
“দুই ভাই একি??তোমার ভাইয়ের মতো হইলে বেচারী নিধির কপালে কি যে আছে” স্মৃতি জানালো ঠাট্টা সুরে।।
“ওর কপাল ভালো আছে,এরকম ডাবল রোলে (ডাক্তার+বিজনেসম্যান) পাচ্ছে হ্যান্ডসাম জামাইকে” ইমরেত নাক ফুলিয়ে বললো।।
স্মৃতি হেসে তাদের কাছে রওনা দিলো।।
আর ইমরেত ও খুশি স্মৃতির বাবা মা সবকিছুই জানে আর কথাও দিয়েছে সে নিধি তার হবে।।
নিধির বাবার সরকারি যেই কাজ আটকে ছিলো ইমরেত তার লোক দিয়ে ফাইল আইনিভাবে নিয়ে আসছে,সমস্যার সমাধান ও হয়ে গিয়েছে..সন্ধ্যার দিকে নিধির বাবা মা সবাই চলে গেলো,এমনিতে নিধির বাবা মাকে এতোদিন পর দেখতে পেয়েছে..জমিদারের ছেলের জন্য দেখতে যেতে পারে না গ্রামে..কান্নাকাটি করে বিদায় দিয়ে নিধি য়ার বাবা মাকে,নিধি নিজের চোখ ফুলিয়ে ফেলছে।।
ইমরেত ইশারাতে না করেছে কাঁদতে কিন্তু নিধির যতবারই ইমরেতের দিকে তাকিয়েছে ততবারই আরো জোরে কেদেছে।।
মাহি বারবার এসে চোখ মুছে দিচ্ছে..”ও ফুপি,তুমি কেদে দিলে আমিও কাদবো” সে জানায়।।
মাহির এমন কথা শুনে নিধি মাহির সামনে না কাদলেও,রুমে যেয়ে ঠিকই কাদছে।।
স্মৃতি রাতের খাবারের জন্য ডাকলে,দেখে কাদার জন্য মাথা ভার হয়ে গেছে এখন আর উঠতে পারে না সে।।
“আমি খাবো না ভাবীপু(ভাবী+আপু,নিধি ভালোবেসে ডাকে)..তোমরা খেয়ে ঘুমাও” নিধির মাথা ধরে বললো।।
স্মৃতি নিচে এসে ইমরেতকে জানালো,ইমরেত জানায় তারা খেয়ে নিয়ে ঘুমায় যেতে..নিধিকে উনি খাওয়াবে।।
ইমরেত অফিসের কিছু কাজ সেরে,হসপিটালের কিছু খোজ নিয়ে..খাবার নিয়ে নিধির রুমে গেলো..নিধির রুমে যেয়ে ইমরেতের শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা..নিধির পরনে প্লাজো হাটু অব্দি উঠে আছে আর টিশার্টও উঠে আছে হালকা,ফর্সা পেটে দেখা যাচ্ছে..চুলগুলো এলোমেলো.. কান্নার কারনে চোখে হালকা,আর নাকটা অসম্ভব লাল হয়ে আছে নিধির।।
“আই হ্যাভ টু কন্ট্রোল মাইসেল্ফ!!” নিজে নিজে বিড়বিড় করছে ইমরেত..কিন্তু যখনি নিধির দিকে তাকাচ্ছে সব আউলে যাচ্ছে।।
দুই তিনটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে নিধিকে ডাকলো ইমরেত।।
“এই নিধি উঠো??খাও খেয়ে মেডিসিন নিয়ে অফ যাও!!” ইমরেত ধীরেধীরে বললো।।
নিধি ঘুমের বিভোর আর মাথাব্যথায় ক্লান্ত থাকার কারনে,ইমরেতের ডাকে সাড়া না দিয়ে পিঠ উল্টে দিলো।।
পিঠ থেকে টিশার্ট টা আরেকটু উঠে গেছে,ইমরেতের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম,এই মেয়ের দিকে হুশ নাই ঘুমানোর সময়..বিয়ের পর একে ত আমার সাথে বদ্ধ ভাবে বেধে রাখতে হবে রাতে কিংবা যখন ঘুমাবে।।
ইমরেতের আর কন্ট্রোল হচ্ছে না,চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যেয়েও পারছে না..সে একটা একটা করে পা ফেকে নিধির কাছে গেলো..নিধির পিঠের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে,চোখ আটকে গেলো কোমড়ে থাকা লাল তিলে..ব্যস এইটুকু ছিলো কন্ট্রোললেস কেড়ে নেয়ার জন্য ইমরেতের।।
নিধি উপুর হয়ে শুয়ে ছিলো,ধীর পায়ে ইমরেত যেয়ে নিধির পাশে বসলো..মাদকতা চোখে নিয়ে নিধির তিলের দিকে সে তাকিয়ে রয়েছে..সে যখন একটু ছুয়ে দিলো নিধির লাল তিলটার উপর আঙ্গুল দিয়ে তখন মনে হয় নিধি ঘুমের মধ্যে কেপে উঠলো।।
নিধির কোমরের কাছে ইমরেতের ঠোট নিয়ে বেশ কয়েকটা চুমু দিয়ে আর লাল তিলটাকে আরো রক্তাক্ত করে দিলো সাথে তিলের আশেপাশের জায়গাটাকেও।।
“না খেয়ে ঘুমানোর শাস্তি+আমার ভালোবাসা” বাকা হেসে ইমরেত কথাগুলো বলে,নিধির গায়ের উপর চাদর দিয়ে বেরিয়ে গেলো..নিধির খেলো না দেখে নিজেও খেলো না।।
সকালবেলা,
যেহেতু আজ শুক্রবার সবাই বাসা থাকবে..নিধির ঘুম ভাঙলো বেলা ৯টা..নিজেকে ফ্রেশ করবে আপাতত সে,যেহেতু না খেয়ে ঘুমিয়েছে সে নাড়িভুড়ি খাওয়ার জন্য পেট থেকে এখন খাও খাও করছে।।
নিধির মাথাটা হালকা ভার হয়ে থাকলেও,ঘুমানোর ফলে ফ্রেশ লাগছে..পাশে টি টেবিলে চোখ গেলো নিধির..সুন্দর ব্ল্যাক কালারের র্যাপিং পেপারের মোড়ানো কিছু একটা উপরে লিখা “স্মৃতি”
নিধি এক্সাইটেড হয়ে তাড়াতাড়ি করে খুলতে যেয়ে র্যাপিং পেপারের ধারে আঙ্গুল কেটে ফেলেছে,”আহ”বলেও রক্ত বেরুচ্ছে দেখে..সেদিকে মাথা ব্যাথা নেয়,মুখে নিয়ে আঙ্গুলটাকে চুষে নিয়ে..পুরো কভারটা খুলে দেখলো আইফোন এলিভেন ম্যাক্স..নিধির মুখটা এতোবড় হয়ে গেছে।।
খুশিতে নেচে দিলো ফোন পেয়ে কিছুক্ষন নেচে দিলো নিধি।।
ফোন বেডে রেখে নিধি গেলো ফ্রেশ হতে,এতোক্ষন নিধির রুমে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়ে দেখছিলো ইমরেত তার ল্যাপটপের দ্বারা।।
নিধির এরকম বাচ্চামি দেখেই সে চার বছর আগে ঘায়েল হয়ে তার প্রেমে পরেছিলো,মুচকি হাসিতে ইমরেতকে দারুন লাগে যদি নিধি দেখতো।।
নিধি ওয়াশরুমে যেয়ে দেখলো,জামা চেঞ্জ করার সময় কোমরের জায়গাতে তিলের অংশটুক কেমন কালসিটে ভাবে লাল হয়েছে..মনে হচ্ছে কেও ওই জায়গাটা ইচ্ছেমতো খুচাইছে..কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে যখন হদিশ পেলো না নিধি তখন,পাত্তা না দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো সে।।
নিধি নিচে যেয়ে দেখলো স্মৃতি কিচেনে আজ রান্না করছে,আজকে তাহলে ভাইয়া কিছু আবদার করেছে এইজন্য ভাবীপু সকাল সকাল আসছে।।
“থ্যাংকিউউউউউউউ” স্মৃতিকে পিছন থেকে ধরে নিধি বললো..আচমকা ধরাতে স্মৃতি ভয় পেলেও নিধির বাচ্চামো দেখে হেসে দিলো।।
“তা কিসের জন্য থ্যাংকিউ শুনি?” স্মৃতি জিজ্ঞেস করলো।।
“এই যে ফোন নিধি হাতে থাকা ফোন দেখালো” নিধির বললো।।
স্মৃতি বুঝলো ইমরেত দিয়েছে তার নাম করে,গতকালই ত জানালো সে যে নিধিকে ফোন দিবে।।
“তুমি কিভাবে জানলে ভাবীপু যে আমার ফোন ভেঙ্গে গিয়েছে??”নিধি ঠোট উল্টে জিজ্ঞেস করলো।।
” আমাকে তুই ম্যাজিশিয়ান ডাকিস না??আমি আমার ম্যাজিক দিয়ে জেনে ফেলেছি?”স্মৃতি হেসে বললো।।
নিধিও ফিক করে হেসে স্মৃতিকে ধরলো।।
নিধি স্মৃতিকে হেল্প করলো কিচেনে,ডাইনিং খাবার সাজালো..সবাই খেতে আসছে নিচে..ইমরেত নিধির দিকে তাকালো যেমন নিধিকে প্রফুল্ল দেখাচ্ছে মনে হয় কাল কেদেছে ও।।
সবাই যখন খেতে বসলো,নিধি আড়চোখে ইমরেতের দিকে তাকিয়ে ফোনটা লুকিয়ে ফেললো..না জানি এই যমরাজ এই ফোনটাও খেয়ে দেয়..ইমরেত খেয়াল করলেও,মনে মনে হাসলো সে।।
নিধি মাহিকে কোলে নিয়ে নাস্তা খেতে বসলো।।
লিভিংরুম,
খাওয়া শেষে সবাই লিভিংরুমে আড্ডা দিচ্ছে,নিধি মাহির সাথে খেলাতে ব্যস্ত..ইমরেত নিধিকে দেখতে ব্যস্ত আর মেহবুব স্মৃতিকে জ্বালাতে ব্যস্ত।।
এমন সময় এক ফ্যামিলি তাদের লিভিংরুমের এরিয়াতে উপস্থিত হয়..গার্ড এসে জানালো যখন ইমরেতকে তখন সে পারমিশন করে আসার জন্য।।
ধনাঢ্য পরিবার থেকে এসেছে তা বুঝালো তাদের গেটাপ দেখে..নিধি উঠে চলে গেলো মাহিকে নিয়ে।।
সবাই নিজেদের মতো কুশলাদি করলো,ইমরেত বসে নিজের ফোন গুতাচ্ছে।।
“আসলে যেইজন্য আমরা এসছি সেইটা বলি এখন” ভদ্রলোক জানালো।।
“জি অবশ্যই বলুন” মেহবুব বললো।।
“আসলে যে মেয়েটিকে এখান থেকে উঠে গেলো তাকে আমার ছেলে কলেজে রাস্তা পার হওয়ার সময় দেখছে..ইন ফ্যাক্ট বিয়ে করার জন্য এক প্রকার অস্থির হয়ে গেছে..তাই ও মেয়ের জন্য আমার ছেলের বিয়ের প্রস্তাব এনেছি..আমার ছেলে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু ওর জরুরি বাইরে যাওয়া লাগবে এইজন্য আসতে পারে নি” ভদ্রলোক জানালো।।
নিধিকে মিন করাতেই করতেই ইমরেত তখনই চোখ তুলে তাকিয়েছিলো,যখন পুরো কথা শুনলো তখন রেগে আগুন হয়ে গেছে..চোখ টাও লাল হয়ে গেছে।।
মেহবুব আর স্মৃতি একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে আর ইমরেতের দিকে তাকাচ্ছে।।
চলবে?