অনুভূতির সংমিশ্রণ পর্ব চার

0
2317

অনুভূতির সংমিশ্রণ?

তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)

পর্ব চার

?

স্মৃতি মাত্র গোসল সেরে বের হলো..কাল রাত থেকে মেয়ের দেখা পায় নি সে..তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে খুজছে মাহিকে..মাহিকে পেলো স্মৃতি গার্ডেনে মাটি খেলা অবস্থায়..পুরো জামাতে মাটি ভরিয়ে দিয়েছে..ওকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো গোসল করানোর জন্য।।

এদিকে মেহবুব স্মৃতিকে খুজেই যাচ্ছে কিন্তু ডাক দিয়েও পায় না।।

স্মৃতি মাহিকে গোসল করে নিয়ে আসছে কোলে করে..মা মেয়ের খুনশুটি দেখতে মেহবুবের অনেক ভালো লাগছে..টুপ করে স্মৃতির কোমড় জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে।।

স্মৃতি একটু কেপে উঠায় বললো,

“মাথাটা গেছে নাকি?বাচ্চা সামনে”

“ত?” মেহবুব ভ্রু কুচকে দুজনকে আবার জাপটে ধরলো।।

গাড়ি চলছে অজানা রাস্তায়..ধুকপুক করছে নিধির মন..কিছু বলতে গেলেই ইমরেত চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে..এমন লুক দেখে ভয়ে তার জান এতো টুক হয়ে গেছে।।

“ভাইয়া?” একটু ঢোক গিলে নিধি ডাকলো ইমরেতকে।।

ইমরেত গাড়ি থামালো জোরে ব্রেক কষে..রক্তিম চোখ নিয়ে তাকালো নিধির দিকে।।

নিধি ইমরেতের ওই চোখগুলো দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললো।।

“কেন যে হাতে ধরে নিজের কপালে নিজে ফাটাতে যায় সে” মনে মনে ভাবছে নিধি।।

ইমরেত ঝুকে আসে নিধির দিকে..এমন কাছে আসা ইমরেতের নিধি কেমন যেন একটু ভড়কে যায় তবে ইমরেতের শরীর খুব সুন্দর একটা ঘ্রান আসছে মনে হচ্ছে নিধির আজ খেয়ে ফেলি ঘ্রান সহ মানুষটাকে।।

“ছিঃ ছিঃ!! কি সব ভাবছে সে” মনে মনে নিজেকে উগান্ডা বলে গালি নিধি।।

চোখে তুলে তাকাতে যাবে দেখে ইমরেতের চোখগুলো কেমন ঘোলা আর লাল হয়ে আছে..ঠোট দুটো শুষ্ক হয়ে আছে..চুলগুলো এলোমেলো আর সামনের কপালে কিছু চুল তার..কেমন লাগছে যেন ঠিক ভয়ংকর ই লাগছে তার কাছে এখন মানুষটাকে বর্তমানে।।

“ভাই”নিধি ভাইয়া ডাকটা সম্পূর্ন বলার আগে ইমরেতে তার দুই হাত দিয়ে নিধির মুখটা সামনে এনে নিজের ঠোটের সাথে ঠীট মিলিয়ে দিলো..এমন এট্যাক করা নিধি হজম করতে না পেরে চোখগুলো ডিমের মতো বড়বড় করে দিয়েছে।।

ইমরেতের এক হাত নিধির কোমরে চলে গিয়েছে আরেক হাত নিধির চুলটা শক্ত করে ধরে আছে..নিধি মনে হচ্ছে হাওয়াতে ভাসছে,শরীরটা প্যারালাইজড লাগছে তার কাছে..নিয়ন্ত্রণ নাই তার শরীর তার কাছে..এরকম কেন লাগছে??এরকম ইমরেত ভাইয়া করলো ক্যান??উনি ত আমারে দেখতেই পারে না??তাহলে এরকমকরে চুমু খাচ্ছে ক্যান??বিভিন্ন প্রশ্ন নিধি মনে ঘুরপাক খাচ্ছে..ওর অপরপাশে তার ঠোটের উপর নিজের ঠোট বিলীন করে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এই দিনটার জন্য সে অপেক্ষায় ছিলো??

অনেক্ষন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ইমরেতের সরে আসার নাম নেয়..নিধির মনে হচ্ছে ঠোট মনে হয় আর নাই..একটু সরে আসতে চাইলে,ইমরেত নিধির উপর উঠে পরে গাড়ির সিটের সাথে চেপে ধরে..নিজের মতো করে চুমু খেয়ে যাচ্ছে।।

বেশকিছুক্ষন পর ইমরেতের ঠোটের যুগলবন্দী থেকে নিধি মুক্তি পেলো..নিধির আগে ঠোটে হাত দিচ্ছে তার ঠোট আছে নাকি গায়েব হয়ে গেছে..হাত দিয়ে দেখলো আছে কিন্তু জ্বলছে খুব।।

ইমরেতে গাড়ির সিটে হেলান দিলো মাথা উপরের দিকে তুলে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে নিধিও তাই।।

ইমরেত চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে উঠলো,

“এইভাবে আমার ভিতর অধিকার আমি কখনো কাওকে দেয় নি..কিন্তু তুমি যখন থেকে লাইফে আসছো আমার, আমার ভিতরটাকে প্রতিনিয়ত পুড়িয়ে ছাড়খার করছো??এর উত্তর আছে তোমার কাছে?”

নিধি এই কথা শুনে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে ইমরেতের দিকে.. কথাগুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।।

ইমরেত আবারো বলা শুরু করলো।।

“আমি ত চাই নি তোমাকে ভালোবাসতে??কেনো বাধ্য করলে আমার বাসায় এসে আমাকে তোমার মাতাল করা প্রেমে ফেলতে???বলো কেনো করলে?” চিৎকার দিয়ে বললো ইমরেত।।

একে ত ইমরেতের কথা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, দ্বিতীয়ত ইমরেত ভাইয়া যে তাকে ভালোবাসে এইটা শুনে মনে হচ্ছে কেও তাকে দশ তালা থেকে ফেলে দিয়েছে।।

ইমরেত নিধির কাছে এসে তার ঠোটে হাত বুলালো বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে..নিধি এমন ছোয়াতে একটু কেপে গিয়ে সরে আসলো।।

“খুব জ্বলছে তাই না বেবি?” ইমরেত ঘোর লাগা কন্ঠে বলছে।।

বেবি শুনে মনে হচ্ছে নিধি ঝটকা খাইছে,মনে হচ্ছে উড়াধুরা কাদতে পারলে হতো।।

ঠোট টাকে একটু চেপে ধরলো ইমরেত..জ্বলছে এমনিতে তার উপর চেপে ধরাতে,নিধি আসলে একটু ব্যাথা পেয়েছে।।

“এই জ্বলা ব্যাথা সহ্য করে নাও..আমি এতোদিন সহ্য করে এসেছি নাও ইউর টার্ন..যে দহনে আমি পুড়েছি বা পুড়ছি এখন আমার এই আক্রমণ গুলো দিয়ে তোমাকে মারবো”ইমরেত কথাগুলো বলে ফোনে কাকে কল দিলো।।

” কাজ হয়েছে?” ইমরেত জিজ্ঞেস করলো তার গার্ড কে
…..

“গুড জব” বলে ফোন কেটে দিলো ইমরেত।।

আবারো নিধির দিকে তাকালো সে চুপচাপ বসে আছে..প্রশ্ন অনেক চলছে তার মনে কিন্তু জিজ্ঞেস করার সাহস সে পাচ্ছে না।।

“ছোট মাথাতে এতো চাপ নিও না?চাপ নিতে এতোই ইচ্ছা হইলে আমাকে নাও..আমাকে নিয়ে ভাবো বাট ডোন্ট ইউ থিংক সেখানে আমার জায়গাতে ভুল করে অন্য কারো বিচরণ হোক?আর ভাইয়া ডাকার এই বোকামি টা নেক্সট টাইম করবানা..আদারওয়াইজ এর থেকে রেজাল্ট খারাপ করে দিব তোমার..আর জাস্ট কেবল ত শুরু তোমার কাছে এইসব..আমার অনুভূতির সংমিশ্রণ গুলো তুমি এখন থেকে টের পাবে ” বাকা হেসে গাড়ি চালালো ইমরেত।।

“আল্লাহ সব ছেড়ে মানুষ রুপি ডাক্তার দানব আমার উপরে আছাড় খেয়ে পরলো” নিধি নিজের মনে কথাগুলো বলছে।।

বাড়ি পৌছালো তারা দুজন..ইমরেত গাড়ি থেকে নেমে টেনে নিধিকে নামালো।।

নিধি এক প্রকার রোবটের মতো ইমরেতের সাথে হাটছে..হাত ছুটাতে চাইলে,ইমরতের এক ধমক..

“সাহস দেখানোর ভুল করো না?”

মাহি দেখছে তার ছোটচাচ্চু কিভাবে তার নিধি ফুপিকে উপরে নিয়ে যাচ্ছে,সে তখন লিভিংরুমে রঙ পেন্সিল দিয়ে কাগজ কলমে কি আঁকছিলো।।

নিধির রুমে এসে নিধিকে সামনে দাড় করালো আয়নার সামনে ইমরেত।।

“এই যে এখানে তোমার অবস্থান..আর এখানেই থাকতে হবে তোমাকে..কানে গেছে??না গেলে ঢুকিয়ে নাও..হোস্টেলের সিট খুজা কিংবা অন্য জায়গাতে শিফট হওয়ার কথা মাথা থেকে বের করে ফেলো..আর মাইন্ড ইট আমার কথা খেলাপি করলে আমার নেক্সট অপারেশনের শিকার তুমি হবে?ইউ নো দ্যাট আই এম বেস্ট ইন দিস?” ইমরেত কিছু ত্যাড়া করে কথা গুলো বললো।।

“আর সব সো কলড ছেলে বন্ধুদের সাথে মিশা বন্ধ..আর কারো পাশে যদি বসতে দেখি অবস্থা খারাপ করতে জিরো সেকেন্ড ভাববো না আমি” ইমরেত কথাগুলো বলা শেষে নিধির বাম হাতে একটা কামড় দিয়ে চলে গেলো।।

নিধি হাত চেপে ধরে বললো,”আস্ত একটা সার্জার ডাক্তার রাক্ষস”

ইমরেত দরজা থেকে হালকা মুখ বের করে বললো,”অনলি ফর ইউ বেবি”

নিধি মুখে হাত দিলো সাথে সাথে..ইমরেত চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে