অনুভূতির সংমিশ্রণ পর্ব আট

0
2392

অনুভূতির সংমিশ্রণ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব আট

?

লিভিংরুম,

ইমরেতের হাতমুঠো করে বসে আছে কপালে ভর দিয়ে,মেজাজ তার সপ্তমে উঠে আছে।।

“স্টপ ইট!!” চিল্লিয়ে বললো ইমরেত।।

ভদ্রলোকের বউ ইমরেতের এমন ধমক শুনে ভয়ে,লাফিয়ে সোফার উপর পা তুলে উঠে বসে গেছে।।

স্মৃতি ও ভয়ে পেয়ে গেছে..মেহবুব জানতো এমনকিছু হবে,সে তার ভাইকে বললো,

“রিল্যাক্স ছোট??ঠান্ডা মাথায় কথা বল?” মেহবুবের শান্ত জবাব।।

“কিভানে শান্ত হয়ে উত্তর দিব??উনারা কাকে নিয়ে কথা বলছেন??কার জন্য প্রস্তাব এনেছেন??” দাতমুখ খিচে জবাব দিলো ইমরেত।।

“আই নো বাট দে আর নট এওয়ের অফ দিস ভাই?” মেহবুব উত্তর দিলো।।

“আই ডোন্ট কেয়ার,প্লিজ সে দেম টু লিভ ফ্রম হেয়ার” আরো চিল্লিয়ে বললো ইমরেত।।

“ওগো এই ছেলে কি পাগল হয়ে গেছে??এমন চিল্লিয়ে উঠছে কেন একটু পর পর” ভদ্রলোকের বউ জিজ্ঞেস করছে তার স্বামীকে।।

“আহা!!চুপ করো ত!!” ভদ্রলোকে বিরক্তিকর সুরে বলল।।

স্মৃতি এসেও ইমরেতকে শান্তনা দিচ্ছে যে চুপ করছে।।

“এই আপনারা এখনো বসে আছেন??উঠেন যান এখান থেকে” ইমরেত চিল্লিয়ে বলছে।।

এমন চিল্লাফাল্লা শুনে মাহিকে ঘরে বসিয়ে আসলো কার্টুনের চ্যানেল দিয়ে,আর নিজে নেমে আসলো নিচে।।

নিধিকে নিচে দেখে ইমরেত মনে হচ্ছে আরো ক্ষেপে গেছে।।

“এই তুমি নিচে নামছো কিজন্য??পা বেশি বড় হয়ে গেছে?সৌন্দর্য দেখাও সবাইরে” ইমরেত নিধির কাছে এসে জোরে জোরে কথাগুলো বললো।।

“আরে এই লোক পাগল হয়ে গেলো নাকি??আমি আবার কি করলাম?” মনে মনে ভাবছে নিধি।।

“নিধি তুই উপরে যা বোন” স্মৃতি এসে বললো।।

“কি হয়েছে বলবা ত??এমন করছো ক্যান সবাই তোমরা??” নিধি অবাক হয়ে বললো।।

“তোমার সবকিছু এতো জানার শখ কেন??যেতে বলছে যেতে পারছো না?নাকি নিজে যে সুন্দরি এইটা নেচে গেয়ে সবাইকে দেখাতে হবে??একটা কথা কারো শুনো না?যত বড় হচ্ছো তত বেশি বুদ্ধি হাটুর কাছে যাচ্ছে,এতো বেয়াদব কেন তুমি??কলেজে কি পড়তে যাও নাকি ছেলেদের নিজের রুও দেখাত্ব যাও যে বাসায় প্রস্তাব আসে তোমার জন্য??” ইমরেত চিল্লিয়ে বলছে।।

“আচ্ছা পাগলের ফ্যামিলিতে ছেলে আমার মেয়ে পছন্দ করলো” ভদ্রমহিলা বিরক্তিসুরে বললো।।

“ইউ শাট ইউর মাউথ..আমার বাসায়, আমার বউয়ের জন্য প্রস্তাব আনেন?আপনার সাহস ত কম না?বেরোন এখান থেকে,আউট!!” ইমরেত তাদের দিকে ঘুরে জোরে চিল্লিয়ে বললো।।

ভদ্রলোক তার বউকে নিয়ে সুরসুর করে বেরিয়ে গেল।।

“আর তুমি??ছেলেদের সাথে এতো মেলামেশা কেনো??নিজে যে মেয়ে সেইটা কি ভুলে যাও?কতবার না করেছি মিশতে বলো কতবার??আসলে আমারই ভুল হয়েছে এমন অল্পবয়স্কে মেয়েকে আমি ভালোবেসেছি!!মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই..ঢ্যাং ঢ্যাং করে নিচে নেমে চলে এসেছে..আরে সামান্য ত নিজের বুদ্ধি কাজ লাগাও” ইমরেত নিধি বাহু ধরে কথা গুলো বলছে।।

নিধির চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পরছে,এতোগুলা কথা সে প্রথম শুনলো ইমরেতের থেকে..হ্যা সে জানে ইমরেত তাকে দেখতে পারে না,কিন্তু তার মনে তাকে নিয়ে এতো তিক্ততা..ছেলেবন্ধু কই তার??যে দুইটার সাথে কথস বলে তাদের অলরেডি গফ আছে,দুইজনকে ভাই হিসেবে দেখে..যারা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ত এখানে তার কি দোষ..মানছে সে একটু কম বুদ্ধির মেয়ে তাই বলে এতো কথা শুনাবে তাকে??কয়দিন আগে সে না প্রেম নিবেদন করলো??তাকে নিয়ে সেও কিছু কিছু ভাবতে শুরু করেছিলো??সব কি মোহ ছিলো??নিধি মনে হচ্ছে আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না।।

“ইমরেত কুল ডাউন..অনেক বলে ফেলেছো??” স্মৃতি আরকিছু বলতে যাবে য়ার আগে ইমরেত বাধা দিলো।।

“ওকে বলো আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে,আমি নিতে পারছি না ওকে আর” ইমরেত কড়াভাবে বললো।।

স্মৃতির বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে আছে যে রাগের শিকার হয়ে ইমরেত নিধিকে যতকথা শুনালো এর ফল না তাকে পস্তাতে হয়।।

নিধি মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরছে ইমরেতের এই বিহেভিয়ার দেখে,নিজেকে সামলে নিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে কিন্তু পা টাও মনে হচ্ছে,ধীর পায়ে রুমে যেয়ে মাহিকে তার মা ডাকছে বলে,ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো।।

নিধির বুক ফেটে কান্না আসছে..এরকম বকা কখনক কোনদিন খায় নি সে..কি দোষ ছিলো তার??সে ত জানতো না তার বিয়ের প্রস্তাব আসছে..সে জানলে কি নিচে নামতো..বাবা মাকে তার খুব মনে পরছে,বালিশ আকড়ে ধরে কেদেই যাচ্ছে।।

স্মৃতি পিছন পিছন এসে দরজা নক করে রেসপন্স পায় নি..টেনশনে তার জান ও শুকিয়ে যাচ্ছে,কি থেকে কি হয়ে গেলো আজকে।।

অপরদিকে ইমরেত নিজের রুমে এসে নিজেকে লক করে বসে আছে,ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেই যাচ্ছে তারপরেও ক্ষান্ত হয় না সে।।

“সাহস কি করে হলো আমার নিধির জন্য বিয়ে আনার!!নিধির উপর শুধু আমার এই ইমরেত চৌধুরীর অধিকার..নিধি শুধু আমার..সবকয়টাকে শেষ করে দিব যে আমার নিধিকে কেড়ে নেয়ার জন্য আসবে” হাতে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস ভেঙে বললো।।

যখন ইমরেত একটু শান্ত হলো তখন তার টনক নড়লো নিধির সাথে ক্রোধের বশে কি বিশ্রি বিহেভিয়ার করেছে..মনে পরেতেই তার মাথাটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে।।

তাৎক্ষণিকভাবে ইমরেত নিজের রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে পরলো,নিধির রুমের উদ্দেশ্য।।

নিধির রুমে দরজা ধাক্কিয়ে চলে যাচ্ছে,কিন্তু নিধি দরজা খুলে না..(আরে বড়লোকের ফুয়া জানোস না তুই তোদের সব ঘরের রুমে সাউন্ডপ্রুভ করে রাখছোস)।।

স্মৃতি এমন দরজাতে বাড়ি দেয়ার আওয়াজ শুনে,মাহিকে বুকে থেকে নামিয়ে মেহবুবের কোলে দিলো যেন ওকে দেখে।।

স্মৃতি ছুটলো নিধির ঘরের দিক যেহেতু আওয়াজটা ওইখান থেকে আসছে।।

“কি করছো কি এখন তুমি” স্মৃতি এসে ইমরেত কে জিজ্ঞেস করলো।।

“দেখো না ভাবী নিধি দরজা খুলছে না..এই নিধি দরজা খুলো(দিলো আরেকটা বারি)” ইমরেত জানালো।।

“ও খুলবে না,আর ও না করেছে যেন কেও বিরক্ত না করে..তুমি ত চেয়েছিলেন যেন ও তোমার সামনে না আসে ত?” স্মৃতি বললো

“ভাবী প্লিজ!!তুমিও জানো আমি রাগের মধ্যে বলেছি!!রাগ উঠলে হুশ থাকে না..আর ও বললেই হলো??দরজা খুলবে না??এই খুলো!! লাসটবার বলছি..তখন না হয় রেগে বলেছি,এখন কিন্তু সত্যি সত্যি তোমার কানের নিচে চটকনা পরবে একটা” ইমরেত চিল্লিয়ে বলছে।।

“কাম উইথ মি”ইমরেতের হাত ধরে স্মৃতি টেনে নিয়ে গেলো ডাইনিং এ।।

ইমরেতের সামনে পানির গ্লাস ধরলো স্মৃতি, ইশারায় জানালো পানিটা খেতে হবে এখন তাতে।।

ইমরেত পানিটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে খতম করে ফেললো।।

” লিসেন টু মি কেয়ারফুলি ভাই!!তুমি আজ যা ওকে বলেছো অন্যকোন মেয়ে হলে কিন্তু এখনি বাড়ি ছেড়ে চলে যেতো কিন্তু ও আছে কারন,ওর মা বাবা আমাদের উপর অনেক ভরসা করে তাকে এখানে পাঠিয়েছে..সে চায় না তার বাবা মায়ের কাছে আমরা ছোট হই…আর তুমি যা বলেছো আজকে,তাতে তুমি নিজেও জানো নিধির মতো মেয়ে এই আমাদের জেনারেশনে পাওয়া খুব দুষ্কর…নিধির চালচলন যেমন সোজা সরল তেমনি নিধির মনটাও পানির মতো স্বচ্ছ..নিধিকে আমার ছোটবোন আর কলিজাও ভাবি আমার কারন আমার নিজের কোন বোন নেয়..তুমি যখন নিধিকে এইসব বলছিলে মনে হচ্ছিলো তোমারে গালে একটা থাপ্পড় দেয়..কিন্তু দি নাই কেনো জানো??নিধিকে যেমন বোন ভাবি,তোমাকেও আমি ভাই ভাবি কারন আমার ভাই নেয়..নিধিকে যতটা ভালোবাসি, আমি তোমাকেও আমার ভাই হিসেবে ততটায় ভালোবাসি..তাই তোমাকে বোন হিসেবে আমার শাষন করতে বাধা নেয়..তুমি নিজেও বুঝতে পারছো এখন রাগের বশে কথা গুলো যা বলেছো তা ভুল..রাগের বশে আমরাব অনেকটা হিংস্র হয়ে যায়..তুম ত এমন ছিলে না..আমি জানি যতটুক তোমাকে দেখেছি আর চিনেছি আর বুঝেছি যে তুমি তোমার এইসবের প্রতি কন্ট্রোল রাখো তবে আজ কেন এরকম হলো??জানি নিধিকে নিয়ে তুমি অতিরিক্ত সিরিয়াস, অতিরিক্ত ভালোবাসা ও তুমি তাকে কিন্তু তুমি আজ বলেছো ওকে তাতে তোমার জন্য ওর মনে একটা দাগ কেটে গেছে..সে অনেক কষ্ট পেয়েছে ইমরেত”স্মৃতি কথাগুলো বললো।।

“আই নো দ্যাট আই হার্ট হার এ লট..বাট শি অলসো হ্যাভ টু হুয়াই আই সো ম্যাড এবাউট হার দ্যাট টাইম” ইমরেত মাথা নিচু করে বললো।।

“সবাই সবকিছু বুঝে না ভাই..তুমি যতটা ম্যাচিউর ও ততটা না..ওর নরম মনে অনেক আঘাত পেয়েছে তোমার এই বিহেভিয়ারে ” স্মৃতি বললো।।

“আমি ওকে মানিয়ে আসি ” ইমরেত উঠতে গেলে,স্মৃতি বসালো ওকে আবার।।

“এখন না,আজ এমনে ধকল গেছে ওর উপর..সময় দেও??” স্মৃতি বললো।।

“ওকে ছাড়া আমার দমবন্ধ হয়ে আসে ভাবী..ওকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নেয়াটাও দায়..আমি ত ওকে পাগলের মতো চাই,ওকে অনেকবেশি ভালোবাসি ফেলেছি সেই চার বছর থেকে…ওকে আমি কারো সাথে দেখা ত দূরে থাক আমি ভাবতেও পারবো না..নিধি সবসময় উল্টাপাল্টা ডিসিশন নেয়,এই যেমন কয়দিন আগে হোস্টেল খুজছিলো..আজকের আমার বিহেভিয়ার দেখে যদি অন্যকিছু করে,ও যদি আমারে ছেড়ে যেতে চায় আমি ওকে খুন করে ফেলবো একদম”ইমরেত স্মৃতি কে কথাগুলো রাগে বলে উপরে চলে গেলো,নিজের রুমে এসে ধড়াস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।।

স্মৃতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে এগোলো,সে জানে ইমরেত রাগী যতটুক তার চেয়ে অধিকতর ভালোবাসে বেশি নিধিকে।।

মেহবুব ও তাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিলো..যখন তার বিয়ের কথা অন্যকারো সাথে চলছিলো..মেহবুব স্মৃতির উপর যতটা দূর্বল,স্মৃতি ও ততটায় দূর্বল..মেহবুবের শ্বাসের রাজত্ব করে যদি স্মৃতি, তাহলে স্মৃতি মনে রাজত্ব করে মেহবুব..এরকম পাগলামি ভালোবাসা দেখে স্মৃতি মেহবুবের ভালোবাসা জ্বালে পরেছিলো।।

ঘরে এসে স্মৃতি মেহবুবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলো,দরজা লক করে এসে..মাহিকে সাইডে দিয়ে কোলবালিশ দিলো যেন পরে না যায়,আর তার পাশে স্মৃতি পাশে মেহবুব গভীর ঘুমে মগ্ন..মেহবুবের বুকে মাথা দিয়ে কিছুক্ষন বুকের ঢিপঢিপ শব্দ শুনলো সে,হ্যা এখানে স্মৃতির বসববাস..মেহবুবের ঠোটে স্মৃতির একটু চুমু খেলো..মাথার চুলগুলোতে হাত বুলাতে শুরু করলো স্মৃতি..মেহবুব ঘুমের মধ্যে স্মৃতি পেটে হাত দিয়ে পা উঠিয়ে দিলো তার উপর,স্মৃতির গলাতে মেহবুবের মুখ..আর ঘুমের ঘোরে ঘনঘন নিঃশ্বাস পরছে স্মৃতির গলাতে..স্মৃতি ও আরেকটু জাপটে ধরলো মেহবুবকে।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে