মন ফড়িং ♥ ৪.

0
3803
মন ফড়িং ♥
৪.
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই……
মোবাইলের স্পিকার মান্না দের বিখ্যাত গানে মুখরিত হচ্ছে। নাজমুল সাহেব বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে গান টা শুনছেন। মানুষ ভারী আজব স্বভাবের। কষ্টের সময়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা না করে আরো বেশি কষ্ট পেতে চায়। ছ্যাকা খাওয়ার পর, স্যাড সং বেশি শুনে মানুষ। কলেজ জীবনের মূহুর্ত গুলো ভাবতে নাজমুল সাহেবের ভালো লাগে। ওই সময়টাতেই সে জীবনের শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত গুলো কাটিয়েছেন। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে ছিলো ৭ জন। তিন জন মেয়ে চার জন ছেলে। মেয়ে তিন জনের সাথে একেবারেই কোনো যোগাযোগ নেই। তবে তিন জনের মধ্যে রাশা আর নীপা নাকি বেশ ভালোই আছে কিন্তু মায়া মেয়েটা নাকি আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যার পেছনের কারণ নাকি পরোকীয়া! তবে সে পুরোপুরি সঠিক তথ্য জানেন না। পরোকীয়ার ব্যপারটা মিথ্যেও হতে পারে। মায়া ওইসময়ের কলেজে সবথেকে ভদ্র মেয়ে ছিলো। কোনোদিন কোনো ছেলে ওর ভদ্রতার জন্য একটা বাজে শব্দ ওকে বলার সাহস পায়নি। মাঝেমধ্যে তো আমি নিজেই ভয় পেতাম কথা বলার সময়। কোন সময় কী বলে বসবো বেচারি রাগ করে বসবে। ৬ জন খোলামেলা মনের মানুষের সাথে ১ জন বদ্ধ মনের মানুষের ফ্রেন্ডশিপটা উদ্ভট লাগলেও মোটেও উদ্ভট ছিলোনা। ও আমাদের সাথে আঠার মতো লেগে থাকতো আর আমরাও কখনো ওকে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবতামও না।
বাকি চারজনের তিনজন বাংলাদেশে আর চার নম্বর জন নাজমুল সাহেব তো প্রবাসে নিজেকে গুম করেছেন।
দেশে গিয়ে একবার সবার সাথে দেখা করার স্বাদ জাগে প্রায়ই কিন্তু স্বাদ পূরণ করা আর হয়না।
নিদ্রকে জোড় করে পাঠানোর পিছনের কারণ টা নিদ্র নিজেও জানে। রশিদের বাসায় বেশ ভালোই ছিলো তার ছেলে। খারাপ কিছু ঘটলে রশিদ নিজেই বলতো।তবে রশিদকে যে নিদ্র খুব জ্বালিয়েছে ব্যাপারটা রশিদ মুখে না বললেও কথাবার্তায় কিছুটা বুঝতে পেরেছেন।
গরম চায়ে চুমুক দেয়ার পর অদ্রির টক ঢেকুর ওঠা বন্ধ হলো। কাথা সেলাই বন্ধ রেখে চা শেষ করে বিছানা ছেড়ে নেমে জানালা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জানালা খোলার সাথে সাথে এক ঝাপটা ঠান্ডা বাতাস রুমের ভিতর ঢুকে পরলো। হঠাৎ করে এরকম ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় অদ্রির ভালো লাগলেও হালকা শীত অনুভব হলো। বর্ষামৌসুম এখনো শেষ হয়নি শীতকাল আসার কথা নয়। বৃষ্টির কারণেও এরকম ঠান্ডা বাতাসের উদ্ভব হয়। জানালা খোলা রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের মেঘ জমাট বাধা  দেখলো অদ্রি। জমাট বাধছে আর ঘন কালো হচ্ছে। মেঘ গুলো যখন আলাদা ছিলো তখনও এতো কালো ছিলোনা। একটার সাথে একটা যুক্ত হচ্ছে আর কালো রঙের ঘনত্ব বাড়ছে। মেঘ জমাট  বাধার পরে কালো হতে থাকবে একসময় ভারী ঘন কালো মেঘ গুলো বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে হালকা হবে। খুব ছোটোবেলার বিজ্ঞান বইগুলোতে সে বৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া পড়েছিলো। পানিচক্র বলতে কী বুঝো? পানিচক্র কী? আলোচনা করো! এই প্রশ্নের উত্তর দিতে তার বেশ মজা লাগতো। খুব সম্ভব ৪র্থ বা  ৫ম শ্রেণীর বইতে পানিচক্র বিষয়ক চ্যাপ্টার আছে।
অদ্রির মনে হলো তার পেট ফুলে উঠছে। পেটের মধ্যে কেমন যেন শব্দও হচ্ছে। গা গুলিয়ে আসছে। কেমন বিশ্রী ঢেকুর তুলার পর অদ্রি বমি করতে শুরু করলো। অদ্রির মনে হচ্ছে তার নাভির কাছ থেকে একটা চিনচিন ব্যথা পাক খেয়ে ঠিক বুকের দিকে উঠে আসছে। বমির সাথে তার পাকস্থলীও মনে হয় বের হয়ে আসবে।
– হ্যালো নাম্মি?
ফোনের ওপাশ থেকে নাম্মি হাসি হাসি স্বরে বলল
– হ্যালো।
– কাজটা কি এখনো আছে?
নাম্মি হেসে বলল
– অবশ্যই মিস্টার নিড্র ফ্রেন্ড।
– আমি কীভাবে যোগাযোগ করবো?
– ঠিকানা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি চলে যেও সকাল ১০ টার মধ্যে। আর আমার কথা বললেই হবে। দেনাপাওনা ঠিক করে নিও।
– থ্যাংকস।
নিম্মি হেসে বলল
– নো থ্যাংকস প্লিজ।তুমি আগামীকাল সকালে পৌঁছে যেও। এখন রাখি ব্যস্ত আছি।
নিদ্র ফোন টা বিছানার উপর ফেলে দিয়ে হেসে ফেললো। নিম্মি কখনোই ব্যস্ত থাকেনা তারপরও ফোনে কথা বলার ২-১ মিনিটের মাথায় বলবে
– এখন রাখি ব্যস্ত আছি।
বাবার সকল সম্পত্তি পেয়ে এখন বেশ আরামে দিন কাটায়। কিন্তু এক সময় ১ ডলারের জন্য সে রেস্টুরেন্টে গাধার মতো খেটেছে। নিজের বার্থডে তে পর্যন্ত এক পিচ কেক খাওয়ার ডলার জোগাড় করতে পারেনি। কিন্তু মেয়েটার ক্যারেক্টার অন্যসব মেয়েদের মতোনা। বাঙালি দের মতো ক্যারেক্টার। সতীত্ব নষ্ট হতে দেয়নি। দেখতে বেশ সুন্দর অফারও কম পায়নি। মোটা ডলারের লোভ খুদা পেটে কজন ব্রিটিশ সামলাতে পারে?
কে বলবে একসময় না খেয়ে থাকা মেয়েটা এখন পায়ের উপর পা রেখে পেট পুরে খাবার খায়? অতিত কজনই বা জানতে চায়?
অদ্রি কি ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাকে তার অতীত জানিয়েছে? যাতে আমি তার পিছু ছেড়ে দেই?
ধুর, সবকিছুতে এই মেয়েটা ভাগ বসায়। নিম্মির চিন্তার মাঝেও সে হাজির হয়। নিজের উপরই নিদ্রের বিরক্ত লাগলো।
তার বাবা কদিন ধরে এলকোহল খাচ্ছে। না করতে গেলে অভিমানের সুরে বলে
– তোর মাও শান্তি দিলোনা তুইও দিলি না। পড়াশোনা করতে বললাম করলি না। এখন কর রংমিস্ত্রীর কাজ, করবি মানুষের প্লেট ধোয়ার কাজ।
– নিজের প্লেট তো এমনিতেই ধোই। সেখানে প্লেট ধুয়ে কয়েকটা ডলার আসলে সমস্যা কী?
– তোর নজর আর চিন্তা নিচেই নামলো।
– নিচে নামাই ভালো, বেশি উপরে উঠলে ভেঙে পরার সম্ভাবনা থাকে।
– আমার ছেলে হয়ে তুই ওসব কাজ করবি? তবে আমি মোটেও আমার সম্পত্তির ভাগ দিবোনা।
– না দাও।
এই পর্যায়ে এসে তার বাবা বেশ উত্তেজিত হয়ে বোতল সুদ্ধ এলকোহল মানে বাঙালির ভাষায় মদ গিলে খায়। তারপর অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। নিদ্র প্রথম যেদিন এরকম অকথ্য গালাগালি তার বাবার মুখ থেকে শুনেছিলো, সেদিন সে বিশ্বাসই করতে পারেনি, তার বাবা এরকম গালিও দিতে পারে!
এখন অবশ্য সহ্য হয়ে গেছে। বুড়ো বয়সে এরকম নাকি সবারই হয়, তার বাবারও হয়েছে।
চলবে…….!
© Maria Kabir