What a হাসবেন্ড পর্ব-৮+৯+১০

0
1066

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৮
.
❝ আসমা মে যেসে বাদাল হো রাহে হে
হাম ধিরে ধিরে ধিরে পাগাল হো রাহে হে
মে তো মারজানা হায়য়য়য়য়য়……. ❞

দরজা লাগায় আয়নার সামনে দাঁড়ায় নাচতেছি আর গাইতেছি। মনটা কেন জানি খালি নাচি নাচি করতেছে। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই পাগ’ল হয়ে যাবো। আম্মু আইসা একটু পর পর দরজা ধাক্কায় যাচ্ছে। আমি আমার মতো নাচতেছি। এইতো একটু আগেও ধাক্কায় গেসে সাথে থ্রেড ও দিয়ে গেছে। তাতে কী আমি আমার মতো নাচতেছি, এখন আমি বড় হইছি আমার বিয়ে হইছে আম্মু এখনো আমাকে থ্রেড দিতেছে ভাবা যায়? তাও আমারই জামাইয়ের সামনে। শ্বশুর বাড়ি গেলে সে যদি আম্মুর এইগুলো কপি করে আমাকে থ্রেড তখন! তখন কী করবো আমি?

-‘ মুন তুই দরজা খুলবি? নাকি আমি জামাইকে বলবো তোকে এখনি নিয়ে যেতে ‘

-‘🙂’

শেষ পর্যন্ত দরজা খুলে দিলাম। রুমে ঢুকেই আম্মু বলল, ‘ কী করিস?’
-‘ পাগলু ডান্স দেখবা?’
-‘ বেশি কথা না বলে আমাকে সাহায্য কর। আয় ‘
কথাটা বলেই চলে গেলো। আমি চুল বেধে রান্নাঘরে গেলাম। আসার সময় দেখলাম উনি খুবই সিরিয়াস হয়ে আব্বুর সাথে কথা বলতেছে। আব্বুও শুনতেছে।
.
আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,’ কী কাজ করবো বলো?’
আম্মু বলল, ‘ কিছু করা লাগবে না। আমার কাছে দাড়াঁয় থাক। আগে তো হু’দাই এসে আম্মু আম্মু করতি এখন রুমে ঘাপটি মে’রে বসে আছিস কেন?’
আমি কিছু বললাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

___________________________

সোফার মধ্যে থম মে’রে বসে আছি। আম্মু রান্নাঘরে কী জানি করতেছে৷ আব্বু ঘুমায়, আর উনি আমার পাশে বসে আছে। সবকিছু কেমন যেন শান্ত। আমি একটার পর একটা টিভির চ্যানেল পালটাচ্ছি, কোনো চ্যানেলে ভালো কিছু হচ্ছে না। সব মিলিয়ে খুব বিরক্ত লাগতেছে। শেষে টিভি বন্ধ করে দিলাম।
উনি মোবাইলে কী যেন করতেছে। উঁকি দিয়ে দেখি ছবি ইডিট করতেছে। আমাদের বিয়ের ছবি।
আমি ভদ্র বাচ্চার মতো দাড়াঁয় আছি আর উনি কোন এক ছেলে সাথে যেন কথা বলতেছে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো, ছবিটাও সুন্দর ছিলো, শুধু উনি যদি একটু আমার মতো ভদ্রতা বজায় রাখতো তাহলে আর ছবির বারোটা বাজতো না। আমি বললাম, ‘আমাকে রেখে আশেপাশের সবকিছু কে’টে দেন, আপনাকেও সরিয়ে দেন ‘
উনি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভাবছি আমাদের নতুন বাসার দরজা থেকে শুরু করে বাথরুমের জানালা পর্যন্ত সবকিছুতে শুধু তেলাপোকার ছবি থাকবে। বালিশের কভারে তেলাপোকা, চাদরে তেলাপোকা, পর্দায় তেলাপোকা, এমনকি ঘরের ফার্নিচারগুলোতেও তেলাপোকা ডিজাইন করবো। কেমন হবে? ‘

-‘ থাক! 😒, কাউকে সরানো লাগবে না। আপনাকে রেখে আমাকেই বরং সরিয়ে দিন। ‘
কথাটা বলে সোজা হয়ে বসে পড়লাম। ছবি দেখার শখ আমার মিটে গেছে, আর দেখতে চাই না।
হঠাৎ ই উনি ফিসফিস করে বললেন, ‘ ওই বয়াম টা যে চু’রি করছো এইটা তোমার আম্মুকে বলি?’
-‘ আমি মোটেও চু’রি করিনি ‘
-‘ ওকে, তাহলে তো আম্মু কে বলতেই পারি। ‘
কথাটা বলেই উনি দাড়ালেন। আমি ওনার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলাম। বললাম, ‘ সমস্যা কী?’
উনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। এরপর বললেন, ‘ আছে একটা বড় সমস্যা। ‘
-‘ সেটা কী?’
উনি কিছু বলল না। মোবাইল রেখে চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন। আমি তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এরপর উনি আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘ মুন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাওনি কেন?’
-‘ নিরামিষ, গুরুগম্ভীর, রসকষ ছাড়া একটা মানুষকে কে বিয়ে করতে চাইবে?’
-‘ আমি মোটেও নিরামিষ না ‘
-‘ হুম, জানি। আপনি ঝগড়া’ইট্টা ‘
-‘ ভাবছিলাম তোমার আম্মুকে কিছু বলবো না এখন দেখছি বলতেই হচ্ছে ‘
-‘ না থাক। বসেন। আপনি ঝগড়াই”ট্টা না আমিই ঝগড়াই”ট্টা ‘
-‘ গুড ‘
-‘ যত্তসব ‘
-‘ আচ্ছা, শোনো আমার কাছে না একটা দারুণ প্ল্যান আছে ‘
-‘ কী প্ল্যান? তেলাপোকা ডিজাইনের প্লেট বাটি কিনবেন? 😒’
-‘ আরে না।’
-‘ তাহলে? ‘
-‘ তোমার ওই বয়ামের সকল রহস্য আমি জেনে গেছি ‘
-‘ জানি, এখন ওইগুলো কী সবাইকে শোনাবেন?’
-‘ না। ভাবছি এইগুলো সত্যি সত্যিই করবো ‘
-‘ কীভাবে?’
-‘ লিখেছো তো তুমি তাহলে তুমিই বলো ‘
-‘ আমি তো ওইগুলো আমার ভবিষ্যৎ বয়ফ্রেন্ডের কথা ভেবে লিখেছিলাম, এখন ওইগুলো দিয়ে কী হবে? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে ‘
-‘ তাতে কী? আমরা নিজেরা কিন্তু বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড হতে পারি। যেমন ধরো তুমি লিখেছো প্রতিদিন বাহিরে যাওয়ার সময় একটা ছেলে তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়ায় থাকবে, তোমার দিকে তাকায় থাকবে, এরপর একদিন প্রোপোজ করে মনের কথা বলবে। বাস্তবে এমন হলে কেমন হয়? ‘
-‘ একদম ফাটাফাটি ‘
-‘ আমার সাথে তাহলে বাসায় চলো কাল থেকেই মিশন শুরু হবে ‘
-‘ কেন? আমি এখানেই থাকবো। আপনি আমাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ায় থাকবেন ‘
-‘ আচ্ছা ঠিকাছে, আমি তাহলে চলে যাই ‘
-‘ হুম, যান ‘
-‘ গিয়ে তোমার বয়ামের সবগুলো কাগজ পড়বো ‘
-‘ আরেএ আরেএএ বয়াম বলবেন না? ডিব্বা বলেন ডিব্বা 😊’
-‘ আচ্ছা ডিব্বাই ‘
.
.
.
সকালবেলা,,,,,,
ফোন হাতে নিয়ে হাটতেছি আর ওনার জন্য অপেক্ষা করতেছি। কে জানতো এই ডিব্বা আমার জামাই কে প্রেমিক পুরুষ বানিয়ে দিবে। ভাবা যায়? সে হবে আমার বয়ফ্রেন্ড 🤭।
বারান্দায় গিয়ে দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে আছে। তারাতাড়ি করে গলায় ওরনা পেছিয়ে বের হয়ে গেলাম। বের হওয়ার সময় শুনলাম আম্মু জিজ্ঞেস করছিলো কোথায় যাচ্ছি। আমি শুধু সময় নাই বলে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লাম। নিচে এসে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে আসতে দেখে ফোনে কী যেন করলো, এরপর আমাকে ইশারায় ফোন চেক করতে বলল। দেখলাম উনি লিখেছেন, ‘ কী করবো এখন?’
আমি লিখলাম, ‘ আমি এখন ভাব নিয়ে বের হবো আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন। আমি আপনার দিকে একবার তাকাবো এরপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যাবো ‘
উনি লিখলেন, ‘ ওকে ‘
আমি এরপর কাধে ব্যাগ নিয়ে ভাব নিয়ে বের হলাম। দেখলাম উনি তাকায় আছে। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে আসলাম। কিছুদূর এসে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম উনি আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি তারাতাড়ি করে মেসেজ পাঠালাম, ‘ এই আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমার পেছন পেছন আসুন। আপনি জানেন না?পছন্দ করলে পেছন পেছন আসতে হয় ‘
উনি লিখলেন, ‘ ওহ আচ্ছা আচ্ছা৷ আসতেছি দাঁড়াও। ‘
এরপর আমি হাটতে লাগলাম। কোথায় যাচ্ছি? কিছুই জানি না। আন্তাজে খালি হাটতেছি। হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে কেউ হাটছে। তাকিয়ে দেখলাম উনি। আমি রাগ হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো এখন কী করা উচিৎ বুঝতেছে না। আমি মেসেজ পাঠালাম।

-‘ আমার এতো কাছে কেন হাটছেন? দূরে হাটেন। ছেলেরা কোনো মেয়েকে পছন্দ করলে পাশাপাশি রাস্তা দিয়ে কখনো হাটে না। দূরে থাকে। পেছন পেছন আসে’

উনি লিখলেন, ‘ ওও আচ্ছা! সরি আমি বুঝতে পারিনি। দাড়াও পেছনে যাচ্ছি ‘
.
.
চলবে 🙂

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৯+১০
-‘ আর কতক্ষণ ঘুরবে এভাবে? ‘
ওনার মেসেজ দেখে আমি রিপ্লাই দিলাম, ‘আজ বিকেল পর্যন্ত ‘
উনি লিখলেন,’ আজকের মতো এখানেই থাক আবার কালকে তোমার পেছন পেছন ঘুরবো ‘
আমি কিছুক্ষণ ভেবে লিখলাম, ‘ আচ্ছা ‘
এরপর আমি বাসায় আসলাম। আম্মু আমাকে দেখে বলল,’ কোথায় গিয়েছিলি?’
-‘ ট্রেনিং করাতে ‘
-‘ কীসের ট্রেনিং? ‘
আমি হাতমুখ ধুতে ধুতে বললাম,
-‘ সিক্রেট বলা যাবে না ‘
.
মেসেজ টোন বেজে উঠতেই আমি রুমে চলে আসলাম। দেখলাম ওনার মেসেজ।
-‘ আর কতদিন আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো?’
-‘ সারাজীবন!’
-‘ কীহহহ’
-‘ হ্যাঁ, ‘
-‘ আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকানোর কথা বলছি ‘
-‘ ওহ, বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবেন মাত্র একমাস’
-‘ কীহহ! মুন তুমি কী সিরিয়াস? ‘
-‘ হ্যাঁ, অবশ্যই ‘
-‘ এতদিন খালি শুধু তাকিয়েই থাকবো? ‘
-‘ হ্যাঁ, এরপর একটা বাচ্চাকে ধরে আমার জন্য চিঠি পাঠাবেন। কয়েকদিন চিঠি দিবেন। আমি চিঠি ডাস্টবিনে ফেলে দিবো। এরপর আপনি আবারও চিঠি দিবেন। এরপর মাঝেমধ্যে আমার জন্য চকলেট কিনবেন। বাসার সামনে রেখে যাবেন। ভালোবাসা দিবসে ফুল কিনে দিয়ে যাবেন। এরপর একদিন সামনাসামনি প্রোপজ করবেন। আমি আপনাকে রিজেক্ট করে দিবো। এরপর আপনি আমার পিছনে শুধু ঘুরতেই থাকবেন। আমি অনেকদিন পর আপনাকে এক্সেপ্ট করবো। ‘
-‘ আচ্ছা এরপর শেষ তো?’
-‘ শেষ মানে? এরপরই তো শুরু। আপনার সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিবো। তিন চারমাস লাগিয়ে রিলেশন করবো। এরপর পালিয়ে বিয়ে করবো ‘
-‘ কিন্তু আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে ‘
-‘ তাতে কী? আবার করবো। কাজী অফিসে গিয়ে। শোনেন আমি না কোনোদিন কাজী অফিসে যাই নাই। আমাকে সেখানে নিয়ে যাবেন ঠিকাছে?’
অনেকক্ষণ পর উনি লিখলেন, ‘ আচ্ছা নিয়ে যাবো ‘
আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। ওনাকে বাই বলে নাচতে লাগলাম। আমার যে কী খুশি লাগতেছে তা বলে বোঝাতে পারবো না। খাটের উপর লাফাইতেছি। ইচ্ছে করতেছে ছাদ থেকে লা’ফ দিই। ইসস! খুশিতে মনে হয় আমি ম’রেই যাবো।

________________________

কানে হেডফোন গুঁজে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। হাতে চায়ের কাপ, সব মিলিয়ে এক অসাধারণ অনুভূতি ☺️। কিন্তু সবসময় আমার অনুভূতির বারোটা বাজানোর কিছু না কিছু হয়ই। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম একটা আননোন নাম্বার। এ আবার কোন হুলা লতির মূলা? সব থাকতে আমাকেই কেন কল করছে? এই নাম্বার থেকে দুই তিনদিন যাবত মেসেজ কল এসেই যাচ্ছে। আমি চিনি না তাই কল কেটে দিতাম। এখনও আমি কলটা কে’টেই দিলাম। এরপর আবার বেজে উঠলো। আমি কে’টে দিলাম। এরপর আবার!
আমি রিসিভ করে কিছু বলবো তার আগেই ওপাশ থেকে কেউ ব্যস্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
-‘ মুন কী হয়েছে তোমার? কতগুলো কল করলাম একটাও রিসিভ করলে না। ‘
ওনার কন্ঠ শুনে কিছুটা শান্ত হলাম। আমি কিছু বলবো তার আগেই মনে পড়লো কিছুদিন আগের কথা।
আমি ওনার নাম্বার আমার ফোন থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। কেননা যখনই আমি ওনার নামটা দেখি তখন চেনা চেনা লাগে। একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমাকে পছন্দ করে এই সমস্ত অনুভুতি পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করতে চেয়েছিলাম, তাই ওনার নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছিলাম। আর আমি অপরিচিত নাম্বার কখনো রিসিভ করি না, তাই এইটাও করিনি। আমি সরল মনে ওনাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। উনি রেগে বলে দিলো এইসব এক্টিং ফ্যাক্টিং আর করবেন না আমাকে আজই নিয়ে যাবেন। ওনার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি তারাতাড়ি করে বললাম, ‘ আমি আপনার সাথে কিছুতেই যাবো না। আমাকে এখনো প্রোপজ করেন নি। আমরা রিলেশনশিপে যাই নি। এখনই কীসের শ্বশুরবাড়ি? আমি যাবো না। ‘
-‘ আমি আসতেছি এক্ষুনি ‘
-‘ আপনামে ঘরেই ঢুকতে দিবো না। বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। মানুষজন দেখবে আর মজা নিবে যে জামাইকে বউ ঘরে ঢুকতে দেয় না। ‘
-‘ থাপ্পড় দিবো, চিনো আমাকে? ‘
-‘ না, চিনি না। কে আপনি? ‘
-‘ গালে জোরে একটা পড়লে তখন সব চিনে যাবে ‘
-‘ দেখুন, এইসব বলে কাজ হবে না। আমি যাবো না। ‘
-‘ আমি এসে পড়ছি৷ ‘
-‘ আপনাকে যেন কেউ এই বাড়িতে ঢুকতে না দেয় আমি সেই ব্যবস্থা করছি ‘
-‘ তোমার কোনো ধারণা আছে যে আমি কী পরিমাণ টেনশন করেছি? সব করলাম। রোদে দাঁড়িয়ে থাকলাম আর শেষে আমার বউই আমাকে চিনে না। তোমার এইসব বান্দ’রামি আর চলবে না। ‘
-‘ চলবে! সারাজীবন চলবে। আপনি আমাকে এইভাবে বলতে পারেন না। আপনি বলেছিলেন আমার বয়ফ্রেন্ড হবেন। আমাকে কথা দিয়েছিলেন।’
-‘ ফিরিয়ে নিলাম সব ‘
-‘ না আমি মানি না ‘
-‘ এই মেয়ে তুমি আসবা নাকি আমি তোমার আম্মুকে বলবো’
-‘ যাকে ইচ্ছা তাকে বলেন। আমি কিছুতেই যাবো না। আমি যেটা বলি সেটা করি। যাবো না মানে যাবো না’
-‘ বস্তায় ভরে নিয়ে যাবো। ‘
-‘ বস্তা কে’টে আমি পালিয়ে যাবো ‘
-‘ বে’য়াদব ‘
-‘ সেম টু ইউ🤭 ‘
-‘ 😒 তুমি নিচে আসবা?’
-‘ দেখেন আপনি আমার ডিব্বা দেখে নিয়েছেন, এখন সব পূরণ করতে হবে। ‘
-‘ যদি না করি? ‘
-‘ আগামী দু’বছরেও যাবো না আপনাদের বাসায়’
-‘ এতো সাহস! আমাকে ভয় দেখাও? ‘
-‘ না। সত্যিটা বলছি। আমি যেটা বলি সেটা কিন্তু করি। আম্মুর থেকে এই ডিব্বা কীভাবে নিয়েছিলাম জানেন তো। তাই আমার সাহসকে চেলেঞ্জ করবেন না ‘
-‘ ঠিকাছে! সময় আরও কমাও ‘
-‘ না। ‘
-‘ পিলিস ‘
-‘ ঠিকাছে আমি আব্বুকে গিয়ে বলবো তোমার সাধের ছেলের বউ আমার কথা শুনে না ‘
-‘ আমার মানসম্মান এভাবে আপনি ন’ষ্ট করে দিবেন? ‘
-‘ আর তেলাপোকা ডিজাইনের ফ্ল্যাটের কথা মনে আছে? ‘
-‘ 😒’
-‘ কমাও সময় ‘
-‘ ঠিকাছে ১৫ দিন ঘুরবেন আমার পেছনে ‘
-‘ আরও কমাও ‘
-‘ ১০ দিন? ‘
-‘ আরও ‘
-‘ ৩ দিন তো চলে গেছে আর মাত্র ৭ দিন ঘুরবেন ‘
-‘ না একসপ্তাহ ‘
-‘ ঠিকাছে ‘
-‘ এক সপ্তাহের ৩ দিন চলে গেছে তাই আর ৪ দিন ‘
-‘ এটা ঠিক না, ওইগুলো ছেড়ে দিন ‘
-‘ কোনো ছাড়াছাড়ি নাই। এরপর চিঠি দেওয়া, প্রোপজ করা,এক্সেপ্ট করা রিলেশনে যাওয়া ওইগুলোরও সময় কমাও ‘
-‘ কতবড় ডা’কা’ইত আপনি ‘
-‘ তারাতাড়ি বলো ‘
-‘ ঠিকাছে! ৫ দিন চিঠি দিবেন, এরপর প্রোপজ করবেন, এরপর কয়েক সপ্তাহ পর আমি এক্সেপ্ট করবো, এরপর রিলেশনে যাবো, এরপর তিন চারদিন পর পালিয়ে বিয়ে করবো ‘
-‘ আচ্ছা এবার আমার কথা শুনো, আমি একদিন চিঠি দিবো, পরেরদিন বিকেলে প্রোপজ করবো, দশ মিনিট পর এক্সেপ্ট করবা তখন থেকেই রিলেশন শুরু হবে, দুই দিন পর পালিয়ে বিয়ে করবো, কাজী অফিস থেকে আমার সাথে বাসায় যাবে ‘
-‘ না, হবে না। এতো কম সময়ে আমার ফিলিংস আসবে না। আর কাজী অফিস থেকেই বাসায় গেলে এটা কেমন? হলো না তো কিছু! ভালো লাগবে না। আমি ভেবেছিলাম কাজী অফিস থেকে আপনি আমি বাসায় আসবো আব্বু, আম্মুর পা ধরে বসে থাকবো তারা যতক্ষণ পর্যন্ত না মেনে নেয় ততক্ষন পর্যন্ত ছাড়বো না।’
-‘ আমাদের মেনে নিয়েই তো বিয়ে দিলো। এইসব তুমি করবা?পাগ’ল হয়ে গেছো?’
-‘ পিলিস, আপনি এতো সময় কমালেন এখন এইটা করতে পারবেন না? ‘
-‘ আচ্ছা দেখা যাক! এখন বাই ‘
-‘ বাই, আপনি চলে যান। বাড়ির কাছে আসবেন না, বাসার সামনে দাড়াবেন না। আম্মু আমাকে অনেক বকেছে, মেরে’ছেও। আমার মা আমাকে কখনো মা’রে নি। আমার সেই মা আপনার জন্য আমাকে মে’রেছে। আমার বাবা আমার সাথে কথা বলে না, শুধু আপনার জন্য। শুধুই আপনার জন্য । আপনি আমার পিছু না ছাড়লে মা আমায় অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমার সাথে এমন করবেন না। ‘
-‘ আবার এক্টিং 😒’
-‘ 😁’

___________________

নির্জন মাঠে দাঁড়িয়ে উনি হৃদয় খানের ” বলনা তুই বল না ” গান গাইতেছে আর আমি বেক্কেলের মতো দাঁড়ায় আছি। আমি কিছুই বুঝতেছি না উনি কী পাগ’ল টাগ’ল হয়ে গেলো? আমি অসহায় ভাবে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি অন্য এক সুর তুললেন, ‘”আকাশ কুসুম ভাবিস নায়া,,
সব দিয়েছি তোকেই আমার
চাহনে তোর পাগল হয়ে যাইইইই ওওও “‘

আমি এইবার অন্য দিকে তাকালাম, ভাবাভাবিও বাদ দিয়ে দিলাম। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে, আমি এই দুনিয়ায় আছি নাকি মঙ্গলগ্রহে চলে গেছি কিছুই বুঝতে পারছি না। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি এবার অন্য এক গান ধরলেন,
” চোখ মেললে দেখি তোমাকে…
চোখ বুঝলে পাই আরও কাছে……
এর বেশি ভালোবাসা আমি দিতে চাই তোমায়
যতবেশি ভালোবাসা এই পৃথিবীতে আছেএএএ
ভালোবাসি বড় ভালোবাসি
এর বেশি ভালোবাসা যায় না……
ও আমার প্রান পাখি ময়না…… “‘

আমি চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম। ওনার হয়েছে টা কী? এইসব করার মানে কী? উনি আমার কাছে এসে চোখে চোখ রেখে গাইতে লাগলেন,,
“‘ আমি তোমাকে আরও কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরও কাছে থেকে
যদি জানতে চাও, তবে
ভালোবাসা দাও, ভালোবাসা নাও
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও ( চিল্লিয়ে) “‘

আমি এইবার ভরকে গেলাম। সারাজীবন মানুষদের ভরকে দিয়ে শেষে নিজেই এখন হাসব্যান্ডের সামনে ভরকে যাচ্ছি। উনি কীসব বলছেন। আমার লজ্জা লাগছে নাকি হাসি পাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। উনি ” ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও “বলতে বলতে আমার কাছে আসছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। হায় রেএ! এখানে তো আর দেয়াল নেই যে আমি পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে যাবো, এটা শুধু খোলা একটা মাঠ। একদম নির্জন! এখানে আমি আর উনি শুধু দাঁড়িয়ে আছি। উনি আমার কাছে আসছেন, আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। উনি তারাতাড়ি হেটে আসছেন, আমি তারাতাড়ি পিছিয়ে যাচ্ছি। এমন করতে করতে একটা সময় আমি বুঝলাম উনি পাগ’ল হয়ে গেছেন। আমি উল্টোদিকে ফিরে দিলাম দৌড়! দৌড়াতে দৌড়াতে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম উনিও আমার পেছনে দৌড়ে আসছেন। আমি আরও জোরে দৌড় দিলাম। উনি দৌড়াতে দৌড়াতেও ওই গানটা গাইছেন। আমার সত্যি বলতে প্রচুর ভয় করছে। আমার জান নিয়ে দৌড়াচ্ছি যেদিকে দু’চোখ যায়। চোখ বন্ধ করে শুধু দৌড়াচ্ছি, আমাকে ওনার কাছ থেকে পালাতে হবে। উনি পাগল হয়ে গেছে। আম্মুকে গিয়ে বলতে হবে যে তোমার সাধের মেয়ের জামাই পাগ’ল হয়ে গিয়েছেন। উরাধুরা দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ করেই কিছুতে পা বেজে পড়ে গেলাম। উনিও আমার মতো উরাধুরা দৌড়াচ্ছিলেন তাই উনিও পড়ে গেলেন আমার উপর। ভেবেছিলাম এবার থেমে যাবেন কিন্তু না! উনি আমাকে অবাক করলেন। উপুর হয়ে আমি পড়েছিলাম আর উনি আমার উপর যাতে করে ওনার মুখ আমার চুলে। উনি প্রচুর খুতখুতে স্বভাবের, আমার চুল ওনার নাকে মুখে গিয়েছে ভেবেছিলাম উনি বিরক্ত হয়ে বলবেন, ‘ চুল বেধে আসতে পারো নি?’
কিন্তু না! উনি আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে গাইতে লাগলেন,
“‘ডুবে ডুবে ভালোবাসি,,,,,,,
তুমি না বাসলেও আমি বাসি “‘

আমি প্রচুর লজ্জা পেলাম। হায় রেএএ! এই নিরামিষ ছেলে আমাকে হঠাৎ হঠাৎ যে কী লজ্জা দিয়ে ফেলে। সত্যিই! আমার মতো একটা মেয়েকে উনি এইসব সামান্য কথা বলে কী ভয়ং””কর লজ্জা যে দিয়ে ফেলে 😐। ইসসস! এমন লজ্জা আমি জীবনে পাইনি। উনি এখনো গাইতেই আছেন। আজ আমাকে উনি মে’রেই ফেলবে উনি। একদম মে’রে ভূত বানিয়ে দিবেন। ভূত বানিয়েও বোধহয় লজ্জা দিবেন। এইখান থেকে যাওয়ার পর আর জীবনেও আমি ওনার সামনে আসবো না। উনি কী করলেন এইটা 🤦‍♀️!
আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আবার দৌড় দিলাম। আসার সময় শুনছিলাম উনি আমাকে ডাকছিলেন। আমি শুনেও শুনিনি, ইচ্ছা থাকলেও তাকাইনি।
.
.
তারাতাড়ি বাসায় এসে আমি শুয়ে পড়লাম। ঘুমানোর চেষ্টা করলাম,কিন্তু কিছুতেই আমার ঘুম আসছে না। উনি আজ আমায় কী লজ্জাটাই না দিলো। ভাগ্যিস আমার দিকে তাকান নি। তাকালে সেখানেই ম’রে যেতাম। গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছি তখনই ফোনে টুং টাং শব্দ হলো। দেখলাম ওনার মেসেজ। এখন ওনার মেসেজ সিন করতেও লজ্জা লাগবে আমার। চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে এরপর সিন করলাম এতে একটু লজ্জা কম লাগতেছে। দেখলাম উনি লিখেছেন, “‘ তৈরি থেকো কালই আমরা বিয়ে করবো “‘
বিয়ে করবো আবারও কথাটা আমিই ওনাকে বলেছিলাম। কিন্তু এখন মেসেজ দেখে কেন যেন আমার আরও লজ্জা লাগলো। এমন লজ্জা আমার বিয়ের রাতেও লাগে নি। এবার আমি লজ্জায় মনে হয় সত্যি সত্যিই ম’রে গেলাম। একদম সত্যি! 😐 পাক্কা!

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে