My_Mafia_Boss পর্ব-৩৫
Writer:Tabassum Riana
খুব সকাল ভোরে রোয়েনের ঘুমভাঙ্গে।রুহীকে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলো রোয়েন।মায়াবতীকে আবার ও বুকে জড়িয়ে গালে চুমু খায় রোয়েন।রুহী কিছুটা কেঁপে উঠতেই ওকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে উঠে পড়ে রোয়েন।জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে রোয়েন।কালো লম্বা কোট কালো প্যান্ট আর সান গ্লাস পরে নেয়।রুহীর কাছে আবার ও ফিরে আসে রোয়েন।মায়াবতীকে ঘুমে ও কতো সুন্দর লাগে।এতো মায়া পায় কই এই মেয়ে?প্রথমদিন থেকেই মায়াজালে আটকে ফেলেছে রোয়েনকে।যতো দিন যায় ততোই এই জাল রোয়েনকে গভীর ভাবে আটকাচ্ছে। রুহীর গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে উঠে পড়ে রোয়েন।নিচে নেমে কাজের লোক গুলোকে ডাকলো। সবাই এসে রোয়েনের সামনে হাজির হলো।আমার আসার আগ পর্যন্ত ও যেন কোথা ও না যায়।বাগানে ও যেতে দিবেনা কেউ ওকে? কাজের লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে রোয়েন।জি স্যার নিশ্চিন্ত থাকুন বলে উঠে বয়স্ক রহিম চাচা।ওকে রোয়েন বেরিয়ে এলো।
ঘুমভাঙ্গতেই পাশে হাতড়াচ্ছে রুহী।চোখ এখনো খুলেনি ও।পাশে খালি দেখে চোখ খুলে রুহী।রোয়েন কে না পেয়ে চারপাশে তাকাতে থাকে ও।লাফ দিয়ে উঠে বসে রুহী।এই যে শুনছেন কই আপনি?রুহী ডাকতে থাকে।কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রুহী।এ রুম ওরুম করে পুরো ঘরে রোয়েনকে খুঁজতে থাকে।ব্যার্থ হৃদয়ে রুমে চলে আসে রুহী।কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেছে ও।”কাউকে শেষ করতে যাবো”কাল রোয়েনের বলা কথাটা মনে পড়ে যায় রুহীর।বুকটা কেঁপে উঠে রুহীর।কই গেছেন ওনি?কাকে শেষ করবেন?আল্লাহ রক্ষা করো ওনাকে।ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে রুহী।ম্যাম স্যার বলেছেন ওনি আসার আগ পর্যন্ত আপনি কোথাও যেতে পারবেননা কাজের লোকটি রুহীকে বলে উঠলো।রুহী মাথা নিচু করে ঝাঁকায়। আপনি বসুন আপনার নাস্তা নিয়ে আসছি কাজের লোকটি বলে উঠলো।এখন খাবোনা।ওনি আসলে খাবো রুহী বলে উঠে।না ম্যাম স্যার আপনাকে খেয়ে নিতে বলেছে।স্যার আসলেই খাবো বলে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে রুহী।ও জানে রোয়েন কিছু খায়নি এখনো।আরমান আহমেদ রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে গোঙ্গাচ্ছেন।ওনার গলা বেয়ে রক্ত ঝড়ছে।রোয়েন ছুড়ি হাতে আরমান আহমেদের সামনে বসে আছে।কেমন বাবা আপনি?নিজের মেয়ের ওপর ও মায়া হলো না?মেরে ফেলেছিলেন বোনটাকে চিৎকার করে বলতে থাকে রোয়েন।আরমান আহমেদ কিছু বলতে পারছেন না।আমার এ অবস্থার জন্য আপনি দায়ী আরমান আহমেদ।আপনার কারনে আজ আমি মাফিয়া।আর আপনার সাহস কি করে হলো রুহীকে সুট করার?
You deserve this Arman ahmedচিৎকার করে বলছিলো রোয়েন)।কথা গুলো বলার সময় রোয়েনের চোখ ছলছল করছিলো।
মা বোনের চিৎকার ওর কানে ভেসে আসছিলো।আরমান আহমেদ মরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে রোয়েন।আরমান আহমেদের মৃত্যুর পরপরই বেরিয়ে আসে।ডার্ক গ্রুপের আস্তানায় গিয়ে ৫,৬জনকে মেরেছে ও।রক্তমাখা হাত দুটো বারবার দেখছে ও।নিজের বাপকে খুন করে এসেছে।সে তো বাবা ছিলোনা।কোন যোগ্যতা নেই তার বাবা হবার।রুহী রুম থেকে নিচে নেমে এলো।রোয়েন এখনো এলো না।কি চলছিলো ওর মনে,?ভাবতে থাকে রুহী।একেএকটা সেকেন্ড ওর কাছে ঘন্টা মনে হচ্ছে।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।রুহী দৌড়ে দরজা খুলে দিলো।রোয়েন ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।
রোয়েন একটু ভিতরে ঢুকে রুহীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।রুহী দেরিনা করে রোয়েন কে জড়িয়ে ধরেছে।রোয়েন রুহীর চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে সরিয়ে দিলো। ওনাদের সমাদর করো গম্ভীর গলায় বল উপরে চলে গেল রোয়েন।রুহীর মামা মামী দাঁড়িয়ে আছে।
মামী মুখ ভেঁংচিয়ে রেখেছে(কতো ঢং আসার সাথে জড়িয়ে ধরা।বিয়ে তো করেই নাই।)মামীর দিকে একনজর তাকিয়ে রুহী বলল মামা ভিতরে আসেন।হ্যারে মা আসছি।আনিলা চলো আফজাল সাহেব আনিলা বেগমের হাত ধরে বললেন।ওদের সোফায় নিয়ে বসালো রুহী।অবন্তী আপু কেমন আছে?ভালো মা আফজাল হেসে বললেন।
রুহী!!!!রোয়েন চিৎকার করে উপর থেকে ডাকছে।আ আমি আসছি বলে উপরে দৌড়ে আসে রুহী।রোয়েনের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।গায়ের কালো কোটটার বোতাম খুলতে থাকে রোয়েন।এ এ এ ক কক কি ক কক করছেন আ আপ আপনি? মাথা নিচু করে পিছাতে পিছাতে জিজ্ঞেস করলো রুহী।রুহীর এক হাত ধরে টান দিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো রোয়েন।রুহীর চোখ রাঙ্গিয়ে ধমক দিয়ে বলল এমন করছো কেন?মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে রুহী।
রোয়েন কোট খুলে রুহীর হাতে ধরিয়ে দেয়।এটা তুমি ধুয়ে নিবা।অন্য কারোর হাতে যেন না পড়ে রাগী গলায় বলল রোয়েন।
রুহী কোটটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে পানিতে ভিজিয়ে দিতেই পুরো পানি লাল হয়ে গেলো।চিৎকার করে উঠতেই পিছন থেকে মুখ চেঁপে ধরলো রোয়েন শশশশশ একদম চুপ থাকো রোয়েন দাঁতে দাঁত চেপে বলল।রুহী পানির দিকে তাকিয়ে আড় চোখে রোয়েনকে দেখার চেষ্টা করলো।রোয়েন হাত সরিয়ে নিলো রুহীর মুখ থেকে।এ এগ এগুলো কি?রোয়েনের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রুহী।রুহীর দিকে রাগী চোখে তাকালো রোয়েন বুঝতে পারছো না কি?মাথা হালকা ঝাঁকিয়ে নিচে তাকালো রুহী।রোয়েন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেল।রুহী কোটা ধুয়ে বারান্দায় শুকোতে দিলো।
রোয়েন নিচে নেমে এলো রুহী কে নিয়ে।কাজের লোকগুলোকে খাবার বানাতে বলল রোয়েন।সোফায় বসে আফজাল সাহেবের সাথে গল্প শুরু করলো রোয়েন।ওদের কথা শুনে রুহী বুঝতে পারলো ওদের বিয়ে পর্যন্ত ওনারা এখানেই থাকবেন।
আনিলা বেগম গেস্ট রুমে চলে গেলেন।এভাবে বেশ কয়েকদিন কেঁটে গেল।কাল রোয়েন রুহীর বিয়ে। পুরো বাড়ি খুবই সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।অবন্তী আর নুহাশ এসেছে।অবন্তীকে দেখে রুহীর সেকি কান্না। দুইবোন একে অপরকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছে।রোয়েন রুমে বসে রুহীর অপেক্ষা করছে।মেয়েটা এখনো এলো না কেন?রুহীর নম্বর বের করে কল দিলো রোয়েন।রুহী অবন্তীর সাথে গল্প করছিলো। ফোন বেজে উঠায় রুহী হাতে নেয় ফোন। রোয়েনের নম্বর দেখে অর্ধেক মেহেদী রাঙ্গানো হাত নিয়ে দৌড়ে উপরে চলে আসে রুহী।
রুহীকে দেখে রোয়েনের রাগ সাত আসমানে উঠে গেল।কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি জানো? চিৎকার করে উঠে রোয়েন।মাথা নিচু করে হাত দেখায় রোয়েনকে।আজ রুহী কমলা রংএর একটি লেহেঙ্গা পরেছে।লম্বা চুল গুলো কে বেনী করে একপাশে ফেলে রেখেছে। মায়াবতী কে এ রং এ এতো সুন্দর লাগবে জানলে রোয়েন এ মুহূর্তে ওর মায়াবতী সামনে বসিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দেখতো।রুহীর গালে আলতো করে চুমু দেয় রোয়েন।
রুহী হাত উপরে উঠিয়ে রেখেছে।রোয়েন কিছুক্ষন পর সরে এলো।যাও পুরো লাগিয়ে রুমে চলে এসো জলদি।মাথা নিচু করে চলে যায় রুহী।অবন্তী রুহীর দুহাত পায়ে মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছে।রোয়েন লাইট অফ করে শুয়ে ফোনে কি যেন ঘাঁটাঘাঁটি করছে।কিছুক্ষণ পর রুহী রুমে প্রবেশ করেছে।
চলবে