Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"MR AND MRS WHATEVERMR AND MRS WHATEVER পর্ব-১৫(শেষ পর্ব)

MR AND MRS WHATEVER পর্ব-১৫(শেষ পর্ব)

#MR AND MRS WHATEVER
পর্ব:শেষ পর্ব
#লেখিকা-Arshi khan

(আগের পর্বে অনেকেই বলেছেন আমি ইসলামের কথা মানি নাই।স্বামী ডিভোর্স এর কথা মুখ দিয়ে বললেই ডিভোর্স হয়।আমি লেখিকা বলে যা খুশি লিখব এটা মানা পসিবল না।এমন অনেক কমেন্ট এই পাইছি। আচ্ছা এখন একটা কথা বলি গল্প পুরো না পড়ে মন্তব্য করা,অকারণে ইসলামকে টানা,মুসলিম হয়ে তার নিয়ম জানি কি জানিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা তোমাদের একদম উচিত হয়নি।এমন একটা কমেন্ট পেলে হয়তো আমি এসব কথা তুলতাম না।তবে অনেকেই বলেছ বিধায় কথা গুলো বলা।একটা কথা বলি গল্প হয়তো রিয়েল লাইফ থেকে নিয়েই লেখা হয়।আর তার মধ্যেই উল্টা পাল্টা দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই এটা ও মানলাম।তবে একটা গল্প পুরো না পড়ে আমি মুসলিম হয়ে নিয়ম মানি নাই এমন কথা বলার ও অধিকার আমি কাউকে দেয়নি।গল্পতে ভুল হলে দেখাবা ঠিক আছে কিন্ত কারো ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত না।সেটা যেই হোক না কেন।কাউকে কটু কথা বলার আগে একশ বার ভাবা উচিত মনে রাখবেন। আর আমার কথা গুলো বলার একটাই কারণ আমিতো ছোট লেখিকা ভুল হলে বুঝাবেন কিন্ত ভুলেও আমার ধর্ম, পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলবেন না,আর না আমি বলব।গল্প লেখা ও পড়া বিনোদন এর জন্য তাকে সিরিয়াস ভাবে নিয়ে কটু কথা বলবেননা।এত্ত গুলো কথা বললাম কারো খারাপ লাগলে ক্ষমা করে দিবেন।)

গেটের বাইরে বসে কয়েকস বার ঢাকার পর ও গেট খুলেনি।আমি হতাশ হয়ে ডাইনিং এ এসে বসে পড়লাম ।কিছুক্ষণ পর আম্মু (রিতা)আসলেন আর আমার পাশে বসলেন।
কিছু বলবেন আম্মু?(আশরাফুল রিতা বেগম এর উদ্দেশ্য)

আসলে বাবা তোমার আম্মুর সাথে কথা বলে আসলাম। উনি একজন হজুরকে কল করেছেন আর তোমাদের ব্যাপার এ কথা বলেছেন।(রিতা বেগম আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

কোন ব্যাপার এ?(ব্রু কুচকে আশরাফুল)

তোমার আর নুসরাত এর ব্যাপার এ।আসলে শরিয়ত মোতাবেক তোমাদের এখন ডিভোর্স হয়ে গেছে।পেপার এ না হলেও।(রিতা বেগম চিন্তিত কন্ঠে)

মানে?(অবাক হয়ে আশরাফুল)

আসলে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী কে রাগের মাথায় ও জদি তালাক বলে থাকে তাহলে ডিভোর্স হয়ে যায়।আর তুমি নুসরাত কে মুখে ও কলমে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছিলে। আর তিনবছর কোন যোগাযোগ না করার কারণে তোমাদের ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক হয়ে গেছে।এখন তোমার নুসরাত এর উপর স্বামী রূপে কোন অধিকার এই নেই।(রিতা বেগম কান্না সিক্ত নয়নে)

তাহলে আমি ওকে আবার বিয়ে করে আমার স্ত্রী বানাব।(আশরাফুল জোর গলায়)

সেটা সম্ভব নয় আশরাফুল। (মরিয়ম বেগম গম্ভীর কন্ঠে)

কেন আম্মু প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর আমি ওকে ভালোবাসি আর আমি চাই ওর সাথে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত থাকতে।(অনুনয়ের সুরে আশরাফুল)

তাহলে তোমাকে নুসরাত এর অন্য যায়গাতে বিয়ে দিতে হবে এবং সেখান থেকে ডিভোর্স দেওয়ার পর তোমার সাথে আবার বিয়ে পড়াতে হবে।এটাকে বলে হিললা বিয়ে।(মরিয়ম বেগম আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

(জদি কোন স্বামী রাগের বশে ভুল বসত স্ত্রী কে তালাক দিয়ে দেয়।এবং পরবর্তি তে তাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে ইসলামের মতে স্ত্রী এর অন্য জায়গাতে বিয়ে পড়িয়ে সেখান থেকে ডিভোর্স দেওয়ার পর আবার বিয়ে করার নিয়ম আছে।আর এই বিয়েটাকে বলে হিললা বিয়ে।এই বিয়েতে স্ত্রী ও সেকেন্ড স্বামীর মতামত ও ডিভোর্স এর মতামত এ পুরোপুরিই থাকতে হবে।কিন্ত দ্বিতীয়তম স্বামী জদি বলে আমি ডিভোর্স দিবনা এতে করে প্রথম স্বামীর কোন অধিকার থাকবে না স্ত্রী এর উপর। তাই সর্বদাই রাগের মাথায় কোন কথা বলার আগে হাজার বার ভাবতে হবে)

অন্য কোন উপায় নেই?(অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আশরাফুল)

একটা কথা বলব তোমাকে ভালোর জন্য বলি নুসরাত এর লাইফে তুমি আর এসোনা।আমি আমার মেয়েটাকে এত্তটা নিচে নামাতে চাইনা।সেই ছোট থেকেই নাকি ও কষ্ট সহ্য করে এসেছে আর বিয়ের পর ও অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।আমি চাইনা তোমার জন্য ও নিজেকে নিচু ভাবুক।তুমি নাহয় তোমার আলাদা জগত গরে তুলো ।আর মেয়েটার জন্য আমরা আছি।(মরিয়ম বেগম কান্না সিক্ত নয়নে)

আমি যে ওকে ভালোবাসি আম্মু। (আশরাফুল মরিয়ম বেগম এর কাছে বসে)

কিন্ত ও তোমাকে আর ভালোবাসে না।আসলে ও যেই সময় তোমার শূন্যতা অনুভব করেছে সেই সময়ই তোমার প্রয়োজন সব চেয়ে বেশি ছিল। কিন্ত এখন ও নিজের সবটা ঠিক করে আগে বাড়তে চাইছে এখন নাহয় তুমিও নিজের মতো আগে বাড়।আমি চাইনা ও ওর নিজের self respect খুইয়ে তোমার মতো মানুষের সাথে থাকুন। একটা কথা কি জানো কিছুক্ষণ আগেও আমি ভাবছিলাম তুমি আর ও সুখি হোও।কিন্ত হজুর এর কথা শুনে মনে হল আর যাইহোক আমি আমার মেয়েটার লাইফ এ অতীত ফেরানোর জন্য অন্য কাউকে মাঝে আনতে চাইনা।আর না ও চাইবে।তুমি প্লিজ নিজের রাস্তায় ফিরে যাও যেখানের থেকে তুমি এসেছিলে।(অনেক কষ্টে কান্না লুকিয়ে মরিয়ম বেগম)

আমি চুপচাপ সবটা শুনলাম। তারপর আস্তে করে উঠে রুম থেকে বের হয়ে ছাদের দিকে অগ্রসর হলাম। ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে ঐ চাঁদ টার দিকে তাকিয়েই রইলাম কিছুক্ষণ।
ও চাঁদ তুমি কি বোঝ আমার কষ্ট! তুমিতো যানো আমি ওকে কত্তটা ভালোবাসি।ওর কথা সবাই ভাবল।ওকে কষ্টে রেখে চলে যাওয়া ও দেখল।কিন্ত আমার কথা তো কেউ ভাবল না।কেন চলে গেছিলাম ওকে রেখে তা কেউ খোঁজ ও নিল না?আচ্ছা আম্মু যে বলল ও কষ্টে বড় হয়েছে আমি কি সুখে বড় হয়েছি?ওর পাশে ওর আব্বু না থাকলেও ওর আম্মু ছিল। কিন্ত আমার আব্বুর বিয়ে করে নেওয়ার পর তোমার চাকরীর জন্য তুমি ওতো আমাকে সময় দিতে না আম্মু।হ্যা মানছি আমার ভরণ পোষণ এর জন্য তুমি কষ্ট করেছ কিন্ত আমিতো জানতাম তুমি কোনদিন আমাকে আর আব্বুকে ভালোবাসনি।আমার জন্ম টা ছিল অনাকাঙ্খিত। হ্যা আমি জানি আম্মু তুমি চাওনি আমাকে।আব্বুও হাপিয়ে উঠেছিল তোমার ভালোবাসা পাওয়ার আশা।তাইতো সে নিজের ভালোবাসা খুঁজে চলে গেছিল। হ্যা তুমি খারাপ মা না তবে আর দশটা মায়ের মতো ও না।ছোট বেলার থেকেই ভালোবাসা হিন বড় হয়েছি। ছোট আদরের ভাইটার মৃত্যুর জন্য নুসরাত কে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্ত ওকে কষ্ট দেওয়ার পর নিজেকে ও কষ্ট দিতে ভুলতাম না আমি।কারণ খুব ভালোবাসতাম তো তাই।তাহলে কিভাবে ওর মৃত্যুর কারণ আমি হতাম বল।ওযে ডিপরেশন এ ছিল তা তো ডাক্তার আমাকে বলেছিল। আমি চাইনি ও আবার আমাকে দেখে মৃত্যুর পথ টা বেছে নিক।আমি কারো ভালোবাসা না পেলেও কাউকে ভালোবাসার পর তার মৃত্যুর কারণ কিভাবে হতাম বল চাঁদ!এই তিনটা বছর কত্তটা কষ্টে কেটেছে তা শুধু আমি এই জানি আর আমার আল্লাহ জানে।গত ছয়মাস আগেই জানতে পারলাম আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত ।ছয়মাস মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ফিরে এসেছিলাম যেকয়দিন বাঁচব ভালোবাসার মানুষটির সাথেই নাহয় বাঁচব। কিন্ত না তা আর হবেনা।পরশু যখন জানতে পারলাম ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছে সেইদিন এই ডিসিশন নিলাম ফিরে আসার।কিন্ত আমি বেঁচে থাকতে আমার ভালোবাসাকে কিভাবে অন্য কারো সাথে বিয়ে করার কথা ভাবতে পারি।এর থেকে নাহয় আবার চলে যাব কোন অজানায়।আমার আম্মু আর আমার ভালোবাসা নাহয় আমাকে ঘৃণা করে এই জীবন পার করুক।খুব শখ ছিল নুসরাত এর কোলে মাথা রেখে ওর হাতের পানি পান করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব তা হবে বলে মনে হয়না।কারণ আমার যে বেশি সময় নেই।(আশরাফুল মনে মনে চোখের পানি মুছে )

আমি ফ্রেস হয়ে আর বের হইনি। রুমে বসে অনেকক্ষন ভাবছিলাম কেন ও ফিরে আসল?ভেবে ভেবে কিছুই পেলাম না তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙ্গল সকালের সোনালী রোদের আলোর।উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম। হঠাৎই আশরাফুল কে দেখে অবাক এই লাগল ও আসল কোথার থেকে?উপস কালকেই তো ও এসেছে ঘুমের মধ্যেই ভুলে গেছি ব্যাপার টা।এখন নিশ্চয়ই আবার আমাকে এসে ধরবে ও ধরার আগে আমি দৌড়ে চলে যাই নাহয়। যেই ভাবা সেই কাজ দৌড়ে রুমে এসে গেট লক করতে যাব ও এসে গেট ধরে বসল।
হাত সরাও নাহলে হাতের উপর দিয়ে গেট লক করে দিব।(চিৎকার করেই নুসরাত)

আমি প্রমিস করছি তোমাকে টাস করবনা।আমার লাগেজ এর থেকে কিছু নেওয়ার আছে একটু লাগেজটা বের করে দিবে প্লিজ। (অনেক শান্ত সুরে আশরাফুল)

মিথ্যা কথা বলে রুমে ঢুকতে চাইছ।আমি বোকা না তোমার ফাদে পা ফেলব না আমি আর।(নুসরাত জোর দিয়ে গেট লক করার ট্রাই করে)

তুমি আর আমার স্ত্রী না নুসরাত তাই তোমাকে আমি টাস করব না।প্লিজ লাগেজ টা দাও আমার খুব আর্জেন্ট কিছু নেওয়ার আছে ।(অনুনয়ের সুরে আশরাফুল)

আমি অবাক হয়ে গেলাম ওর কথায় এ কি শুনলাম আমি ও তারমানে ডিভোর্স টা সত্যি মেনে নিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে গেট ছেড়ে দাড়ালাম। ও গেট খুলে এমন ভাবে রুমে ঢুকল যেন আমার সাথে টাস না লাগে। আর ও অবাক করা বিষয় ঘটল হলো ও রুমে ঢুকে লাগেজ খুলে তার থেকে তিনটা প্যাকেট বের করে লাগেজ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমার কেন জানি ওর যাওয়ার পথটা খুব আকর্ষণ করল আমিও ওর পেছনে পেছনে চলে আসলাম। ও ডাইনিং এ গিয়ে একটা গ্লাসে পানি নিয়ে কিসের জানি ঔষধ খেতে লাগল। প্রায় আটটা ঔষধ খাওয়ার পর ও মাথা ধরে ডাইনিং টেবিল এ বসে পড়ল।কিছুক্ষণ পর মাথাটা টেবিল এ রেখে চোখ বন্ধ করে নিল। আমি কেন এখানে দাড়িয়ে ওর কান্ড দেখছি তা আমার নিজের এই বোধগম্য হল না।তাও কেন জানি এখানে দাড়িয়ে থাকতে খুব করে মন চাচ্ছে। (নুসরাত মনে মনে)

আমার দিকে তাকিয়ে থেকেনা নিজেকে সামলাতে পারবনা।দয়া করে আমার জন্য একটু খাবার এনে দিবে কাল দুপুর থেকে না খেয়ে আছি।(হঠাৎই উঠে নুসরাত এর উদ্দেশ্য আশরাফুল)

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ওর এমন কথা শুনে।যতদিন এই ছিল ও আমার সাথে দেখেছি সর্বদাই খাবার কে ও খুব প্রাধান্য দিত।আমাকে কোনদিন খাওয়ার জন্য কষ্ট দেয়নি।কষ্ট দিলেও সর্বদাই খাবার সময় আমাকে সব ভাল খাবার দিতে বলতো আম্মুকে। আর ও কিছুক্ষণ পর পর এই খাবার এর জন্য বায়না করতো।ভাবতাম বুঝি জ্বালাতন করার জন্য এমন করতো।কিন্ত আম্মু একদিন বলেছিল ওর খাবার খাওয়া পছন্দের তালিকার মধ্যেই সর্ব প্রথম। ঝড় তুফান হোক লাইফে খাবার টাইমলি খাওয়া চাই এই চাই।আর সেই মানুষ কিনা কালকের দুপুর থেকে না খাওয়া।আমি জলদি রান্নাঘরে গেলাম ফ্রিজ থেকে আপেল ধুয়ে কেটে নিলাম, পাউরুটি আর বাটার দিয়ে টোস্ট করে এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম এসে দেখি টেবিলের উপর মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে আর জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।আমি খাবার গুলো ওর পাশে রেখে হাঁটা দিলাম। কারণ ওর সামনে আর থাকা পসিবল না কখন কি করে বলা যায়না।(নুসরাত মনে মনে)

নুসরাত শোন। (আশরাফুল একি ভাবে শুয়ে)

জ্বি। (নুসরাত পেছনে তাকিয়ে দাড়িয়ে)

আমিতো এসব খেতে পারব না।আমাকে একটু স্যুপ বানিয়ে দিবে।(আশরাফুল আস্তে করে)

তুমি কি চাইছ টা কি?কিছুক্ষণ আগেই তো বললে আমি তোমার স্ত্রী না তাহলে অর্ডার দিচ্ছ কোন অধিকার এ।(নুসরাত রাগি সুরে)

সরি।
আমি আর কিছুই বললাম না ওকে ।আমি একটু টোস্ট খেতেই দাঁত এ ব্যাথা করতে লাগল। গত কয়েকমাস স্যুপ ছাড়া কিছুই খেতে পারিনা।শরীর টা দূর্বল তো আর শক্ত কিছু খেলে মনে হয় দাঁত ও মুখ ব্যাথা করবে।তাই হল।আর কালকের থেকে ঔষধ না খাওয়ার কারণে,ঘুম না আসার কারণে না খেয়ে থাকার কারণে শরীর আরো বেশি নিস্তেজ লাগছে।আমি টোস্ট টা রেখে এক গ্লাস পানি খেয়ে চা ঠান্ডা হাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। দুধচা আমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এখন কিছু করার নেই। বেচারীকে কষ্ট দেওয়ার কোন অধিকার নেই যে আমার। ও চলে গেছে রুমে কিছুক্ষণ আগে।চা ঠান্ডা হতেই এক চুমুক এ পুরোটা খেয়ে নিলাম। তারপর আবার এক গ্লাস পানি খেলাম।কিন্ত বিপত্তি ঘটল অন্য যায়গায় না খাওয়ার কারণে আর চা খাওয়ার কারণ এ পেট গুলিয়ে সব বেরিয়ে আসার যোগার।আমি ডাইনিং এর ওয়াশরুমে জোরে কল ছেড়ে দিলাম তারপর বমির সাথে রক্ত বমি ও করতে লাগলাম। পরশু কেমো দেওয়ার পর থেকে কিছু খেলে রক্ত বমি হচ্ছে। খাবার খুব প্রিয় বলে এটাও শেষে কেড়ে নিলা।সব প্রিয় জিনিস এই হাতছাড়া হয়েছে।এটা আরকি বড় বিষয়।ওয়াশরুম ভালো মত ফ্রেস করে আমি ও ফ্রেস হলাম মাথা ভিষন ভাবে ঘুরাচ্ছে সাথে শরীরে ও যন্ত্রনা হচ্ছে। এখানে থাকা যাচ্ছে না আর।আমার এমন অবস্হা দেখলে সিমপিথি দেখানোর জন্য হলে আম্মু আর নুসরাত আমাকে দেখে রাখবে ওদের কাছে রাখবে।কিন্ত আমার চাইনা কারো সিমপিথি।আমি ডাইনিং এ এসে লাগেজ থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে আসলাম। তারপর আম্মুর রুমে গেলাম।
আম্মু একটু আসি?(আশরাফুল গেটের বাইরে থেকে মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

হ্যা আসো।(বই সাইট টেবিল এ রেখে মরিয়ম বেগম)

আমি চলে যাচ্ছি এখনি। তোমার সাথে একটা কথা বলতে আসলাম। (আশরাফুল মরিয়ম বেগম এর পাশে বসে)

কোথায় যাবে!(অভিমানের সুরে মরিয়ম বেগম)

যেখানে চলে গিয়েছিলাম সেখানেই।যা বলতে আসা আমার রুমে ও সরি নুসরাত এর রুমে তিনটা প্যাকেট আছে ও নিজে কোনদিন তা ধরবেনা আমি জানি।কিন্ত আমার একটা শেষ ইচ্ছা ওকে বল একটা প্যাকেট ওর জন্য ও ভবিষ্যত এ কোনদিন কারো জন্য বউ সাজলে যেন ঐ প্যাকেট এর দেওয়া জিনিস গুলো পড়ে বউ সাজে। আমার স্বপ্ন তো অপূর্ণ থাকল ওকে দেখার অন্য কেউ নাহয় ওকে অপসরীর সাজে দেখার সুযোগ পাক।আর বাকি দুইটা প্যাকেট আমার দুইজন আম্মুর জন্য এনেছি। আমি গেলে ওগুলো গিয়ে দেখ।এইটা অন্তত না করোনা।এখন আমি উঠি।(আশরাফুল দাড়িয়ে)

সত্যি চলে যাবে?(কান্না সিক্ত নয়ণে মরিয়ম বেগম)

হুম।
বলেই বেড়িয়ে আসলাম। মায়া ত্যাগ করার জন্য আমার সত্যি চলে যেতে হবে।শেষ সময়টা ও আমার কপালে সুখ সইলনা।এবার আমি গেলাম আরেক আম্মুর কাছে।
আসব আম্মু?(আশরাফুল রিতা বেগম এর উদ্দেশ্য)

হ্যা বাবা এস এখানে বস।(রিতা বেগম আশরাফুল এর দিকে তাকিয়ে)

বসার সময় নেই।একটু কথা বলার জন্য আসলাম। আম্মু আমি চলে যাচ্ছি কেন যাচ্ছি বলতে পারলাম না।তবে আমি আপনার মেয়েটার যোগ্য না ।তাই না থাকা এই ভাল।যাওয়ার আগে একটা ছোট্ট অনুরোধ করতে আসলাম। প্লিজ অনুরোধ টা রাখবেন!(অনুনয়ের সুরে আশরাফুল)

হ্যা বাবা বল।(রিতা বেগম কান্না করে)

আম্মুকে আপনি মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েন। ওনার জন্য নুসরাত আর আপনি আব্বু (মামুন জামান)এর ভালোবাসা পাননি তাই মনের চিলেকোঠার যে অভিমান আছে তাকে ছুড়ে ফেলে দিন।আর নুসরাত কে ভাল দেখে কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েন। দিনশেষে ওর পাশে আর কেউ যে নেই ।সে শূন্যতা পূর্ণ করার দ্বায়িত্ব যে আপনার। আর আপনার মেয়েটার ভাল আপনার থেকে আর কেউ ভাল বুঝবেনা।(আশরাফুল কান্না করে)

তুমি যেওনা বাবা আমরা কোন না কোন ভাবে তোমাদের আবার এক করে দেওয়ার চেষ্টা করব।কয়েকটা দিন সময় দাও
(রিতা বেগম আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

দয়া করে আবার মায়ায় জরাবেন না আম্মু।
বলে এই রুম থেকেও বেরিয়ে আসলাম। ডাইনিং রুমে আসতেই দেখি নুসরাত টেবিলের খাবার গুলোর দিকে তাকিয়েই আছে।আর বিরবির করে কিছু বলছে।আমাকে দেখে রাগি লুক দিল তারপর প্লেট কাপ ও বাটি নিয়ে রান্নাঘরের ভেতরে চলে গেল। আমি ছোট্ট একটা চিরকুট টেবিল এর উপর রেখে আমার হাতের ঘড়িটা চিরকুট এ চাপা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। (আশরাফুল)

আমি রান্নাঘরের থেকে স্যুপ বানিয়ে এনে টেবিল এ রাখতেই দেখি টেবিল এর উপর একটা হাতঘড়ি আর তার নিচে একটা ছোট কাগজ। মেন গেট টা খোলা আর গেটের সামনে আম্মু(মরিয়ম) দাড়িয়ে আছে।আমি কাগজটা হাতে নিয়ে চেয়ারে বসে পড়লাম। সেখানে লেখা ছিল।
*অনেক সাধনার পর পাওয়া জিনিসের মূল্য দিতে পারিনি বিধায় আজ আবার হাড় মেনে চলে যাচ্ছি।নিজের জীবন টাকে সুন্দর মতো গুছিয়ে নিও।আমি আর ফিরব না তোমার জন্য। আমি প্রবাসে আমার অফিস কলিগ মায়া কে বিয়ে করে নিব।তুমিও নিজের মতো লাইফ টা ইনজয় করতে পারো।বলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না তাই এভাবে আবার পালিয়ে আসলাম তোমার Mr Whatever উপস সরি কাপুরুষ। *
আমার রাগে মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজে ছিড়ি।এই কাপুরুষ টার জন্য আমি আবার কষ্ট করে খাবার বানাতে গেছিলাম ।আমি বাটি নিয়ে খাবার গুলো বেসিন এ ফেলে দিলাম। (নুসরাত মনে মনে)

দুইমাস পর

ডাক্তার প্লিজ আমাকে মেরে ফেলুন আমার এই কস্ট আর সহ্য হচ্ছে না।(অনুনয়ের সুরে আশরাফুল)

প্লিজ আপনি এমন ভাবে বলবেননা।আমরা ডাক্তার রা কোনদিন ও চাইনা একজন কে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে।আমরা আমাদের সবটা দিয়ে আপনাকে আরো কিছুদিন বাঁচানোর চেষ্টা করব আল্লাহর রহমতে।প্লিজ আপনি আশা হাড়াবেন না।(ডাক্তার আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

ডাক্তার আপনি তো পেসেন্ট এর ভালোর জন্য সব করতে পারেন আমার জন্য ছোট একটা আবদার রাখতে পারবেন প্লিজ!(অনুনয়ের সুরে আশরাফুল)

জ্বি বলুন।(ডাক্তার আশরাফুল এর পাশে বসে)

দশবছর পর।

নুসু আমার ঘড়ি কোথায়?মানিব্যাগ টা ও পাচ্ছি না।এই নুসু। (চিৎকার করে তুতান)

কি হল আপনার এমন ষাড়ের মত চিৎকার করছেন কেন?তাবাসুম জেগে যাবেতো।এইযে টেবিল এর উপর এই সব।না খুজে ওনার চিৎকার করে বাড়ি মাথায় না তুললে পেটের ভাত হজম হয়না।(রাগি সুরে নুসরাত সব এগিয়ে তুতান এর উদ্দেশ্য)

আরে নুসু জান রাগ করো কেন?তোমার কাজের চাপ সব সময়ই থাকে তাই তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য একটু বাহানা করি তুমি কেন বোঝা?(তুতান নুসরাত কে জড়িয়ে)

আহ ডাক্তার আপনার কবে বুদ্ধি হবে বলেনতো মেয়েটার সামনেই শুরু করে দেন।(নুসরাত বিরক্তির সুরে তুতান এর উদ্দেশ্য)

ওতো ঘুমিয়ে আছে।এমন করো কেন একটু পর হসপিটাল যাব আসতে রাত হবে। সারাদিন তোমার এই মুখটা না দেখে থাকা খুব কষ্টের বোঝ তুমি?(তুতান নুসরাত এর গালে হাত রেখেই)

হুম বুঝলাম। কিন্ত আমি অনেক কাজ করার লোক এখন আমার কাজ করার ফিলিংস হচ্ছে হোক আমি আপনাকে কষ্ট দেওয়ার এই লোক।ওকে বায় বায়।(বলেই ওনাকে রেখে রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হলাম নুসরাত)

পাগলি একটা।
এরপর আমি হসপিটাল এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম। হসপিটাল এর পাশের কবর স্থান এ গিয়ে কিছুক্ষণ একটা কবরের সামনে দাড়িয়ে থাকা আমার রোজকার রুটিন। তাই সর্বদাই কাজের অনেক চাপ থাকলেও আমি কবরের সামনে আগেই যাবোই তারপর সব কাজ।
আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন ভাইয়া। আশা করি আল্লাহ আপনাকে কবরের সকল আযাব থেকে রক্ষা করেছে।যানেন আজকে কি হয়েছে।তারপর প্রতিদিন এর মত আজকের সকালের সব ঘটনা বলতে থাকলাম।(তুতান মনে মনে)

নুসরাতের লাইফ এ ঐ কাপুরুষ ছিল না সবার অনুরোধ এ।কিন্ত তুতান কে এনে ওর লাইফে হ্যাপি এন্ডিং আনার চেষ্টা করেছি।তবে সবার কাছে একটা প্রশ্ন তোমাদের মতে আশরাফুল কি?

***************(সমাপ্ত)**************

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ