#MR AND MRS WHATEVER
পর্ব:14
#লেখিকা-Arshi khan
এই অমানুষটার আমার বাড়িতে কোন জায়গা হবে না আপা ওকে বেরিয়ে যেতে বলুন।(চিৎকার করে মরিয়ম বেগম)
একি বলছেন আপা আপনি? ছেলেটা এত্ত বছর পর বাড়ি এসেছে আর আপনি ওকে বের করে দিতে চাইছেন!এটা তো ওর ও বাড়ি ওর এখানে থাকার পুরো অধিকার আছে।(রিতা বেগম আশরাফুল এর পাশে দাড়িয়ে)
ওর কোন অধিকার নেই এই বাড়ির উপর। ও যেদিন আমার মেয়েটাকে একলা করে চলে গেছে কাপুরুষ এর মতো সেইদিন থেকেই আমার জন্য ও মারা গেছে।আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগে ওকে আমি জন্ম দিয়েছিলাম।আর ওর এত্ত সাহস আসল কোথার থেকে তিন বছর পর এসে নুসরাত এর খবর নেয়।ওর মনে নেই তিনবছর আগে ও ডিভোর্স পেপার দিয়ে চলে গেছিল। আর এত্ত দিন পর এসে ও জিজ্ঞেস করে কোন অধিকার এ ওর বউ কোথায়?ওকে বের করে দিন আপা।ওকে বের করে দিন।(চিৎকার করে মরিয়ম বেগম)
ও আপনার ছেলে আপা আপনি এই যদি ওকে দূরে সরিয়ে দেন কিভাবে হবে!আর তাছাড়া নুসরাত তো ডিভোর্স পেপার এ সই করেনি তাই ওদের ডিভোর্স টাও হয়নি।আপনি ওকে ক্ষমা করে দিন আপা।আর ওর এবং নুসরাত এর একসাথে থাকা খুব জরুরি।কারণ আমার মেয়ে এ জীবনে বিয়ে করবে না বলেছে।আর এত্ত ছোট বয়সে জীবনের সমাপ্তি টা খুব কষ্টকর হবে তা অবশ্যই আপনি বুজতে পারছেন।প্লিজ আপা নুসরাত এর কথা ভেবে হলেও আপনি ওকে বের করবেন না প্লিজ!(রিতা বেগম অনুনয়ের সুরে মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)
এত্তক্ষণ যাবত আমি আমার আম্মু আর শাশুরী আম্মুর কথা গুলো খুব মনোযোগ ও শান্ত ভাবে শুনছিলাম। এখানে আমার বলার কোন অধিকার আসলেই নেই।আমিতো আরও ভেবেছিলাম শাশুরী আম্মু ও আমাকে ঝাড়ু পেটা করে ঘর ছাড়া করবে।অথচ উনি উল্টো আম্মুর সাথে মন কষাকষি করছে আমাকে রাখার জন্য। হঠাৎই আম্মু উঠে তার রুমে গিয়ে গেট লাগিয়ে দিলেন সজোরে। আমি শাশুরী আম্মুর হাত দুটো ধরে ওনার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।
আপনি খুব ভাল আম্মু। আপনার মতো মানুষ হয়না।আপনার মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার পর ও আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আরেকটা সুযোগ দিতে চাইছেন এটা আমার সব চেয়ে বড় পাওয়া। তবে আজ আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি মরণের আগ পর্যন্ত আমি নুসরাত এর হাত ছাড়ব না।(আশরাফুল রিতা বেগম এর উদ্দেশ্য)
আচ্ছা বাবা দোয়া রইল তোমাদের জন্য। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম করো।নুসরাত আসতে আরো এক ঘন্টা লাগবে।(রিতা বেগম চোখের জল মুছে)
জ্বি আম্মু।
তারপর আমি আমার রুমে আসলাম। কি সুন্দর সাজানো গোছানো দেখেই মনটা ভরে গেল।আমি লাগেজ থেকে আমার টাওয়াল আর একটা টাওজার নিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেলাম।এত্তটা জার্নি করার পর শাওয়ার নেওয়াটাই বেটার তাই শাওয়ার নিয়ে এই বের হলাম।বাইরে এসে আমি বারান্দার একটা চেয়ার এ গিয়ে বসলাম। আর ভাবতে থাকলাম তিনবছর আগের নুসরাত এর প্রতি আমার করা অন্যায় এর কথা গুলো।(আশরাফুল মনে মনে)
শো শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। এত্ত রাতেও ঢাকার রাস্তায় এত্ত জ্যাম কি বলব।স্কুটি থাকার কারণে সাইট কেটে আসতে পেরেছি তাও থেমে থেমে।নাহলে রিক্সা হলে বসেই থাকতে হতো।বাড়িতে এসে গেট এর লক খুললাম কিন্তু আম্মু মনে হয় ভুলে সিটকানি ও লাগিয়েছে। এখন আবার তাদের জাগাতে হবে।আমি কলিং বেল চেপে দাড়িয়েই আছি খোলার নাম নেই। প্রায় তিনবার কলিং বেল দেওয়ার পর গেট টা খুলল।
ঘুমিয়ে পড়েছিলা নাকি?(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)
না।(মনমরা কন্ঠে মরিয়ম বেগম)
মন খারাপ কেন তোমার আম্মু?(নুসরাত মরিয়ম বেগম কে জড়িয়ে)
নাতো আমি ঠিক আছি।(মরিয়ম বেগম হাসার চেষ্টা করে)
না তুমি ঠিক থাকলে আমাকে দেখেই একটা হাসি দিতে। আজকে তা দাওনি। কি হয়েছে বল না?(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)
তুই রুমে যা ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।(বলেই মরিয়ম বেগম চলে গেল)
হঠাৎই কি হল রে বাবা।দুই বেয়াইন এর ঝগড়া লাগল নাকি?এই দুইজন কে নিয়ে আর পারি না।বাচ্চাদের মত খালি ঝগড়াই করে।যাই ফ্রেস হয়ে আসি।তারপর নাহয় আম্মুর কি হল দেখা যাবে।আমি রুমে ঢুকে দেখি একটা লাগেজ রুমের মধ্যে।এটা আবার কার তাও আমার রুমে কেন?
আম্মু ও আম্মু কোথায় তুমি?আজিব কোথায় গেল সব?(রুমের থেকে বের হয়ে নুসরাত)
আমার হঠাৎই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।নুসরাত এই মাত্র চিৎকার করতে করতে রুম থেমে বের হল মনে হয়।আমি জলদি উঠে রুমে এসে ডাইনিং রুমে চলে আসলাম ওর পেছনে।ওকে দেখে এত্তদিনের অশান্ত মনটা একেবারে শান্ত হয়ে গেল। ও গিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলছে।আমাকে এখন ও খেয়াল করেনি।(আশরাফুল মনে মনে)
আম্মু আমার রুমে লাগেজ টা কার?(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)
কেন জানিস না?(মরিয়ম বেগম পেছনে তাকিয়ে)
কিভাবে যানব?কেউকি এসেছে?(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)
হ্যা একটা অমানুষ এসেছে।(মরিয়ম বেগম দাঁতে দাঁত চেপে পেছনে তাকিয়ে)
আমার মাথা ঘুরে উঠল এই কথা শুনে।আমি চাইনা ঐ লোকটার সামনা সামনি হতে।আম্মু আমার পেছনে তাকিয়ে কথা বলছে তারমানে ও পেছনেই আছে।আমি ওর মুখ ও দর্শন করতে চাইনা।যখন ওর প্রয়োজন ছিল ও আমাকে কাপুরুষ এর মতো একলা করে চলে গেছে।আর আজ তিনবছর পনের দিন পর ও কেন এসেছে আবার?আমাকে কষ্ট দিতে নিশ্চিত।আমি পেছনে না তাকিয়ে সোজা হাটা দিলাম মেন গেটের দিকে।আমি ওর মুখটাও দেখতে চাইনা।(নুসরাত মনে মনে)
ওকে মেন গেটের দিকে যেতে দেখেই বুঝতে পারলাম ও এখন এই বাড়ির থেকে বেরিয়ে যাবে।কিন্ত আমার যে ওকে খুব প্রয়োজন।যে কটাদিন বাঁচব ওর সাথে থেকেই বাঁচাতে চাই।আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত ধরলাম। ও পেছনে না ঘুরে হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে আবার হাঁটা দিল। এইবার লাজলজ্জা ভুলে আম্মুর সামনেই ওকে পেছনের থেকে জড়িয়ে ধরলাম আটকে রাখার জন্য। ও আমার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে ব্যস্ত। আমার হাতে নখের আচড় ও কাটছে কিন্ত আমার সেইদিকে কোন ক্রক্ষেপ নেই।ওকে এত্ত দিন পর আলিঙ্গন করতে পেরে মনটা ঠান্ডা হয়ে গেল।
প্লিজ একটা কথা শুনো!(অনুনয়ের সুরে আশরাফুল)
ছাড় আমাকে।কোন অধিকার এ টাস করেছ তুমি আমাকে ?(আশরাফুল এর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চিৎকার করে নুসরাত)
তুমি আমার ওয়াইফ সেই অধিকার এ।(আশরাফুল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
ও হ্যালো তিনবছর আগে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।তাই আমার উপর তোমার কোন অধিকার এই নেই।আর কোন সাহসে তুমি এখানে এসেছ?(নুসরাত চিৎকার করে)
আমার সাহস বরাবর এই একটু বেশি তা তুমি জানো তাইনা Mrs Whatever। আচ্ছা ঝগড়া শেষ হলে চল তোমার সাথে অনেক important কথা আছে।(আশরাফুল নুসরাত এর হাত ধরে)
তোমার সাহস এর পরোয়া করিনা আর আমি।হাতটা ছাড়।(দাঁতে দাঁত চেপে নুসরাত)
আমার ওয়াইফ এর হাত তার পারমিশন নিয়ে ধরতে হবে বুঝি?(মজা করে আশরাফুল)
আমার মেজাজ ভিষন গরম হয়ে গেল তাই ওর থেকে হাত ছাড়িয়ে ওর গালে একটা সজোরে থাপ্পর মারতে চাইলাম কিন্ত ও আমার হাতটা ধরে টেনে ওর সাথে জড়িয়ে ধরল।
ছাড় আমাকে।(চিৎকার করে নুসরাত)
আম্মু তুমি দাড়িয়ে কি দেখছ প্লিজ একটু রুমে যাওনা।(আশরাফুল মরিয়ম বেগম এর দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে)
হঠাৎই ছেলের মুখে এমন কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। আমিও চাই নুসরাত আর আশরাফুল সুখি হোক।ভুল শুধরে যদি ওরা হেপি হয় তাতে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবেনা।যতোই মুখে বকি না কেন ছেলেটাতো আমারি। (মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে রুমে চলে আসলাম মরিয়ম বেগম)
কি বউ এমন করো কেন?এত্তদিন পর আসলাম একটু আদর করবে তানা থাপ্পর মারতে হাত উঠানো হচ্ছে। কি লজ্জা কি লজ্জা?শেষে কিনা RJ NUSRAT স্বামীকে অত্যাচার করছে।(আশরাফুল মজা করে)
আমাকে ছাড়তে বলছি।(নুসরাত নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে)
আচ্ছা একটু আগে কি যানি বলছিলা ডিভোর্স হয়ে গেছে কখন কিভাবে কোথায় হল বলতো?তুমি সাইন করনি পেপার এ তাই ডিভোর্স ও হয়নি।আর পেপার তো জমা করা হয়নি কোর্ট এ তাই এখনও আমরা #MR_AND_MRS_WHATEVER এই আছি বুঝলেন ।আর একটা কথা তুমি হয়তো এত্তদিনে আমাকে অনেক বকেছ মনে মনে।এখন থেকে সামনে আছি তাই সামনের থেকে বকা দিও।আর ঝগড়া করার কোন এনার্জি পাচ্ছি না প্লিজ ফ্রেস হয়ে খেতে দাও ।তারপর দুইজন একসাথে খাব কেমন!(আশরাফুল নুসরাত এর চুল ঠিক করতে করতে)
তোর এনার্জি এর গুষ্টি কিলাই।কাপুরুষ লোক বিয়ের পর অত্যাচার করার সময় তোর মনে ছিল না আমি তোর ওয়াইফ, আমার যখন খুব করে তোর দরকার ছিল তখন তোর মনে ছিল না আমি তোর ওয়াইফ। এখন কিভাবে মনে পড়ল এত্তদিন পর?আমার তোর মতো কাপুরুষ স্বামী চাইনা।(আশরাফুল এর উদ্দেশ্য নুসরাত চিৎকার করে)
কুল ডাউন বেবি এত্ত জোরে চিৎকার করলে গলা ভেঙ্গে যাবেতো।কালকে তারপর ভাঙ্গা গলায় শো করবে কিভাবে?এর থেকে এক কাজ করো ফ্রেস হয়ে আস মাথা তে একটু পানি ঢেলে আইসো মাথাটা ঠান্ডা হয়ে যাবে একেবারে।(নুসরাত এর মাথায় হাত রেখে আশরাফুল)
আমার মাথা ঠান্ডা নিয়ে তোর টেনশন করতে হবেনা।ধরবিনা বলছিতো কানে কথা যায় না।
বলেই ওর হাত সরিয়ে রুমে এসে গেট লক করে দিলাম।ওকে দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। ও কেন আবার আসল আমার লাইফে কেন?(নুসরাত খাটে বসে মাথায় হাত দিয়ে)
আরে বউ গেটটা খুলো। এই বউ টা আমার বেবিটা গেটটা খোল না আমি একটু তোমার সাথে কথা বলব।এই বউ গেট খুলবা নাকি ভাঙ্গব?(আশরাফুল গেটে বারি মেরে)
*************(চলবে)**********