MR AND MRS WHATEVER পর্ব-১৩

0
1874

#MR AND MRS WHATEVER
পর্ব:13
#লেখিকা-Arshi khan

(বিচ্ছেদের পর্ব।ভাল না লাগলে বকা দিওনা)

আমি সবার খাবার এর ব্যবস্থা করার পর আম্মুর রুমে গেলাম। ওনার অবস্হা তেমন ভাল না।এত্ত অল্প বয়সে স্বামী হাড়ানোর শোক উনি নিতে পারছেন না।আমি ওনার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
আম্মু প্লিজ কান্না করবেন না।মানুষ মরণশীল একদিন না একদিন আমাদের সবার এই মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে।আর আপনি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে নুসরাতকে কে সামলাবে বলুনতো?(আশরাফুল রিতা বেগম এর উদ্দেশ্য)

আমার মেয়েটা কোথায় বাবা ওকে একটু আমার সামনে নিয়ে আস তো একটু দেখি মেয়েটাকে।মেয়েটার একটাই কষ্ট ওর বাবা ওকে কোনদিন ভালোবাসা দেখায়নি।(কান্না করে রিতা বেগম)

ওতো ঘুমাচ্ছে আম্মু। (আশরাফুল)

ঘুমাচ্ছে মানে!(অবাক হয়ে রিতা বেগম)

অনেক কান্না করেছে তো তাই হয়তো ঘুম আসছে।আমাকে বলল আপনার এইখানে আসতে ও একটু ঘুমাবে।(আশরাফুল)

আল্লাহ গো এ তুমি কি করেছ বাবা?আমার মেয়েটা না আবার নিজেকে শেষ করে দেয়।(বলেই দৌড়ে নুসরাত এর রুমে আসলাম রিতা বেগম)

কি বলল উনি এই মাত্র!আমি ও ওনার পেছনে দৌড়ে আসলাম এসে দেখি আম্মু নুসরাত কে ধরে গগন বিধারী চিৎকার করছেন।আমার পা দুটো অসার হয়ে গেল যেন।আমি প্রায় নিজেকে জোর দিয়ে ওর সামনে গেলাম। আম্মুর থেকে ওকে ছাড়িয়ে আমি ওর হাতের পার্স চেক করলাম। ঠিক এইতো আছে।তবে শরীর মনে হচ্ছে স্বাভাবিক এর থেকে একটু ঠান্ডা। আমি কোন কিছু না ভেবেই ওকে কোলে তুলে হসপিটাল এর উদ্দেশ্য দৌড় দিলাম।নিচে নেমে একটা সিএনজি তে উঠে হসপিটাল যাওয়ার জন্য তাড়া দিলাম। ওদের বাড়ির থেকে সামনের একটা হসপিটাল এই ওকে জলদি ভর্তি করালাম।(আশরাফুল মনে মনে)

সন্ধ্যা সাতটা

পেসেন্ট এর গারজিয়ান কে?(নার্স ওটির বাইরে এসে)

জ্বি আমি ।ওর অবস্হা কেমন?(আশরাফুল কান্না সিক্ত নয়নে)

আপনি পেসেন্ট এর কি হোন?(নার্স সন্ধিহান করে)

আমি ওর হাজব্যান্ড। (আশরাফুল )

আপনাকে ডাক্তার উসমান তার কেভিন এ দেখা করতে বলেছে এখনি।(নার্স আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

আচ্ছা যাচ্ছি। তবে বললেন নাতো আমার ওয়াইফ এর কি অবস্হা?(আশরাফুল নার্স এর উদ্দেশ্য)

তা ডাক্তার এর থেকেই জেনে নিবেন। (নার্স বলেই চলে গেল)

আমি ডাক্তার এর কেভিন খুঁজে সেখানে গেলাম।
আপনার স্যার কে বলুন মিসেস নুসরাত এর হাজব্যান্ড এসেছে।(আশরাফুল স্টাফ এর উদ্দেশ্য)

আচ্ছা। (স্টাফ)

কিছুক্ষণ পর

স্যার আপনাকে যেতে বলছে।(স্টাফ আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

আসব ডক্তার ?(আশরাফুল ডাক্তার এর উদ্দেশ্য)

জ্বি আসুন।দাড়িয়ে আছেন কেন বসুন।তাহলে আপনি নুসরাত এর হাজব্যান্ড?(ডাক্তার উসমান)

জ্বি। (আশরাফুল)

ওর সাথে আপনার এরেনজ ম্যারেজ নাকি লাভ ম্যারেজ?(ডাক্তার সন্ধিহান করে)

এরেনজ ম্যারেজ। (আশরাফুল)

আপনার কি ওর প্রতি গভীর ঘৃণা জন্মেছে কোন কারণে?(ডাক্তার একটু রাগি সুরে)

নিশ্চুপ। (মাথা নিচু করে আশরাফুল)

আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দিন।(আরেকটু জোরে চিৎকার করে ডাক্তার)

হুম ছিল।তবে এখন আর নেই।আমি একটা মিথ্যার উপর ভিত্তি করে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।আর আজ তা ক্লিয়ার হয়ে গেছে।এখন আমি জানি ওর কোন দোষ ছিল না।(আশরাফুল অনুতপ্ত হয়ে)

আপনার সবটা ক্লিয়ার করতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে সেটা বুঝতে পেরেছেন?(দাঁতে দাঁত চেপে ডাক্তার)

কিন্ত আমার আর সংসার এর কারণে ও এমনটা করেনি ওর আব্বুর মৃত্যুর কারণে এমন করেছে।(আশরাফুল নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা করে)

মিস্টার আশরাফুল আপনি মিথ্যা বলছেন। আর এটা বুঝতে আমার দেরি লাগেনি কারণ ওর শরীরের প্রতিটা দাগ বলে দিয়েছে ওকে আপনি কত্তটা কষ্ট দিতেন।একটা মানুষ কোনদিন একটা কারণে এমনটা করেনা।তার ব্রেন যখন খুব বেশিই ডিপরেশন ফিল করে তখন এই কাজটা করে।তবে ওর ক্ষেত্রে এই ঘটনা দুইবার ঘটেছে।ও ঠিক কত্তটা ডিপরেশন ফিল করে বুঝতে পারছেন।দুইবছর আগে ও এমন করেছিল তবে সেই সময়ই স্লিপিং পিল না বরং নিজের শরীরকে কষ্ট দিচ্ছিল কোন এক কারণে।পুরো একটা বছর ওর ট্রিটমেন্ট করার পর ও সুস্থ হয়েছিল। অথচ আপনি বিয়ের পর মেয়েটার উপর এত্ত টাই খারাপ আচরণ করেছেন ও নিজেকে আবার শেষ করার কথা ভাবতে বাধ্য হল এবং এমনটা করে ও ফেলল।জদিও সময় মতো নিয়ে আসার কারণে ও এই যাত্রায় বেঁচে ফিরেছে।যাইহোক একটা কথা বলব জদিও আমি ডাক্তার এমন কথা আমার মুখে মানায় না।তাও বলছি ভালোবাসা না থাকলে ওকে ওর মতো ছেড়ে দিন।নাহলে ঘৃণা করে ওকে এমন ভাবে কষ্ট দিয়েন না।আর জদি ভালোবাসা নাও থাকে মায়া ও দ্বায়িত্ব বোধ থেকে ওকে একটু আগলে রাখুন।বেচারি বড্ড ভালোবাসার জন্য কাতরায়।সেই ছোট থেকে যাকে বেশি ভালোবাসতে চেয়েছে সেই ওকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।তাই আপনার কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি আমি এস এ ডাক্তার হয়ে আপনার কাছে একটু ভালোবাসা ভিক্ষা চাইছি ওর জন্য। মেয়েটা বড্ড ভাল এমন একজন মানুষ ও যে কারো মন কে জয় করতে সক্ষম ।শুধু ও যাদের খুব করে চাইতো তাদের বাদে।(ডাক্তার উসমান আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

আমি আমার বেস্ট টাই ট্রাই করব ডাক্তার। ওর ভালোর জন্য দরকার হয় নিজেকে ওর থেকে দূরে সরিয়ে দিব।তাও আমি চাই আমার Mrs Whatever বেঁচে থাকুক হেপি থাকুক। (আশরাফুল কান্না করে)

রাত নয়টা

সকাল থেকেই একটার পর একটা শোক সংবাদ এ মনটা ভীষণ ভারী ভারী লাগছে।আমার Mrs Whatever কিভাবে পারলে এত্ত বড় একটা পদক্ষেপ নিতে?ও এর থেকে বেশি কষ্ট আমি ওকে দিয়েছি। আমি ওর এপ্রোন এর বোতাম সরিয়ে পেটের দিকের ক্ষত টা দেখছি।এখানে একদিন আমি সিগারেট লাগিয়ে দিয়ে ওকে কষ্ট দিয়েছিলাম।ওর এত্ত সুন্দর শরীরের অনেক অংশে কালো দাগ গুলো ও আমার এই দেওয়া।কত্তটা কষ্ট পেলে একটা মানুষ পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করার চিন্তা করতে পারে।ওর ক্ষততে হালকা ঠোঁট ছোয়াতেই ও নড়ে উঠল।আমি ডাক্তার কে ডেকে আনলাম। ও এখন আউট অফ ড্যেনজার আছে।ডাক্তার যাওয়ার পর আমি ওর কেভিন এর বেডে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। ও মুখটা ঘুরিয়ে নিল।
যানো Mrs Whatever তোমাকে যে কষ্ট গুলো আমি দিয়েছি তা সত্যিই আমার মন থেকে ছিল না।আমার মস্তিষ্ক সর্বদাই তোমাকে দোষি ভেবে এসেছে।অথচ তুমি এমন কিছুই করনি।আমি ভিষন ভাবে দুঃখিত এমনটা করার জন্য। মাফ করা যায়না?(আশরাফুল নুসরাত এর গলার মধ্যে মাথা রেখে)

নিশ্চুপ।(নুসরাত)

প্লিজ একবার বল তুমি আমাকে মাফ করেছ।(আশরাফুল নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

নিশ্চুপ ।(নুসরাত)

আমি উঠে দেখি নুসরাত আবার ঘুম। আমি ওর পাশের থেকে উঠে ওয়াশরুম চলে আসলাম। ওর কষ্ট গুলো উপলব্ধি করা আমার পক্ষে সম্ভব না।তবে নিজের প্রতি প্রচুর ঘৃণা হচ্ছে। একটা নিরপরাধ মানুষ কে অকারণে কষ্ট দেওয়ার থেকে জঘন্য আর কিছুই নেই।তাই আমি আজকে এই মুহূর্তেই ডিসিশন নিচ্ছি যে আমি ওকে মুক্ত করে দিব।ওর প্রতি করা অন্যায় এর শাস্তি হিসাবে ওর থেকে দূরে সরে যাব।(আশরাফুল মনে মনে)

আমাকে কেন বাচাঁলে?আমি তো এত্ত কষ্ট সহ্য করে বাঁচতে চাইনা। কেন তুমি আমাকে বাঁচিয়ে তুললে।আবার কষ্ট দেওয়ার জন্য?(মনে মনে নুসরাত)

তিন বছর পর

আম্মু(রিতা) আমি রেডিও স্টেশন যাচ্ছি নিজের খেয়াল রেখ। আর আম্মু (মরিয়ম) তুমি প্লিজ এত্ত দৌড়াদৌড়ি করো না।কে বলেছে তোমাকে এই বয়সে এত্ত কাজ করতে?আমি যা ইনকাম করি তা দিয়ে তো সংসার চলে যায়।তাও তুমি কেন বাড়ির ভেতর কাজ আনো?(রাগি সুরে নুসরাত)

আমার ছেলের দ্বায়িত্ব তো পালন করতে পারব না।তবে আমার মেয়েটার সাথে একটু সহযোগিতা না করলে আমি কেমন মা বল?(মরিয়ম বেগম নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

ঐ লোকটার কথা এই বাড়িতে কেউ বললে আমি আর এইখানে আসব না বলে দিচ্ছি। (নুসরাত রাগি সুরে)

আচ্ছা মা ক্ষমা করে দে ওর নাম আর নিব না।এখন কাজে যা দেরি হয়ে যাচ্ছে। (মরিয়ম বেগম নুসরাত এর মাথায় হাত রেখে)

আচ্ছা গেলাম তোমরা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যেও আমার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই।আমার কাছে লকের চাবি আছে।আমি জলদি ফিরে আসব কেমন।(মুচকি হেসে নুসরাত)

আচ্ছা মা যা।জলদি আসিস।আমার বড্ড চিন্তা হয় তোর জন্য?দিনকাল ভাল না কখন কোথায় কি হয়?আমার খুব ভয় লাগেরে মা।(রিতা বেগম নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

তোমাদের দোয়া ও আল্লাহর ভরসা আছে আমার সাথে।আমার কিছুই হবেনা।এখন তাহলে আসছি।(নুসরাত)

হ্যা আসো।জলদি ফিরে এসো। (রিতা বেগম)

আচ্ছা।
দুইজন এর থেকে বিদায় নিয়ে স্টুডিও এর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। আমার দুইজন মায়ের যত্ন ও দ্বায়িত্ব পূর্ণ করতে পেরে আমি খুব খুশি।আরেকজন নিজের দ্বায়িত্ব কর্তব্য সব ছেড়ে পালিয়েছে। কাপুরুষ একটা।প্রবলেম ফেস করার ভয়ে আমাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে চলে গেছে।কত্তটা নিষ্ঠুর হলে কেউ এমন করে।তবে ওর নামের সব সম্পত্তি আর আম্মু কে ও আমার জন্য রেখে গেছে।।কিন্ত যে আমার না তার সম্পত্তি ও আমার না।তবে আম্মু (মরিয়ম)উনি আমার আরেকটা মা।ওনাকে না রাখার কথা ভাবা ও যে পাপ।উনি ও ওনার ছেলের উপর রাগ। ওনার মতে এমন ছেলে হওয়ার থেকে নিঃসন্তান থাকা ভাল।
স্টুডিও তে শো করে যা টাকা পাই আমাদের ছোট সংসার চলে যায়।কিন্তু তাও আম্মু কাজ করে টুকটাক হাতের কাজ করে। সংসার খরচে হেল্প করে।(নুসরাত মনে মনে)

তিনবছর পর দেশের মাটিতে পা রাখতেই মনটা ভীষণ ফুরফুরে হয়ে গেল ।আমি ফিরে এসেছি Mrs Whatever আমি ফিরে এসেছি।(আশরাফুল মনে মনে)

*********(চলবে)**********

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে