গল্পঃ বাজির প্রেম ২ পর্ব : ১

0
2363

গল্পঃ বাজির প্রেম ২ পর্ব : ১

লেখকঃ তৌহিদুল ইসলাম

মোবাইল টা সাইলেন্ট করা ছিল । রাতে শোবার আগে যখন ফোনটা হাতে নিলাম দেখি ৮৩ টা মিস কল ।
একটা নম্বর থেকে না অনেক গুলো নম্বর থেকে । পরিচিত অপরিচিত ।
কি এমন দরকার হল আমাকে কে জানে ? আগে কাকে ফোন করবো তাই ভাবছি এমন সময় মিজান এসে ঢুকল ঘরে ।
“ফোন ধরিস না ক্যান ?”
“ আরে সাইলেন্ট ছিল । বুঝতে পারি নি । কি হয়েছে । এতো বার ফোন দিছিস ক্যান ?”
“ মুক্তা সুইসাইড করেছে ।“
“ মানে ?” বুকের মধ্যে কেউ যেন কেউ আস্তো একটা চুরি ঢুকিয়ে দিল ।
“ মানে করার ট্রাই করেছে । হাসপাতালে আছে । তোকে বার বার দেখতে চাইছে ।“
“মানে এখনও মরে নি ।“
“ তৌহিদ এমন ভাবে বলিস না প্লিজ ।“
“ কেন বলব না ? আর তুই আমার কাছে কেন এসেছিস ? ও আমার কে ? ও বাঁচল কি মরল তাতে আমার কি যায় আছে ?”
“ তৌহিদ প্লিজ এতো জেদ ধরিস না । তুই কি ওকে ভালবাসতিস না ?”
“ হ্যা । বাসতাম । আর বাসতাম বলেই আজ ওকে ঘৃনা করি । তুই তো জানিস ও আমার সাথে কি করেছে ।“
মিজান কিছু বলল না । মোবাইল বের করে কি যেন করল । তারপর আমার দিকে মোবাইলটা দিয়ে বলল “এটা দেখ ।“
“ কি এটা ?”
“ মুক্তা শেষ ফেসবুক স্টাটাস ।“
আমি নিলাম । ওটাতে লেখা “আই এম সরি তৌহিদ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও ।“
আমি মোবাইলটা ওকে ফিরিয়ে দিলাম । আমার কোন ভাবান্তর হতে না দেখে মিজান বলল “তুই কি বেচারীকে এখনও ক্ষমা করবি না ।“
“ কোন দিনও না । আর তুইতো আমাকে ওর আসল চেহারার কথা বলেছিলি ।“
“ বলেছিলাম । কিন্তু ও বদলেছে ।“
“ ও বদলেছে কিন্তু আমি বদলাই নি ।“
“ ও যদি আজ মরে যায় ?”
“ মরবে না । ওমন মেয়েরা এতো সহজে মরে না । আর আগেই বলেছি ও বাঁচল বা মরলো আমার তাতে কিছু যায় আসে না । তুই এখন যা । তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না ।“
অনিচ্ছা সত্তেও মিজান চলে গেল ।
আমি লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু শুয়ে পড়লেই কি আর ঘুম আসে ? আমার মনের ভিতর তোলপাড় চলছে । মুক্তাকে নিয় তোলপাড় । যতই মুখে আমি জেদ দেখাই মনের ভিতর ওকে নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলছেই । কি করব আমি ? ও আমার সাথে যাই করুক না কেন ভাল তো বাসি ওকে ।
এতোখন মুক্তা বলছি যে তার পুরা নাম । মাহামুদা আক্তার মুক্তা । আমাদের ক্লাসের সব থেকে স্মার্ট মেয়ে । সব থেকে সুন্দর মেয়ে । আর সব থেকে অহংকারী মেয়ে । ওরিয়েনটেশনের প্রথম দিন মুক্তা নিজের উপস্থিতি আর গুরুত্ব খুব ভাল করে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে ছিল । উপরের ক্লাসের ভাইয়ারা তো ছিলোই আমাদের ক্লাসের মোটামুটি সবাই মুক্তার উপর ফিদা ছিল । এবং সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেও ছিলাম । ও যখন ক্লাসে আসতো যেন এক ঝড়ো বাতাস মনের মধ্য বয়ে যাচ্ছে । যথন ওর সাথে দেখা হত মনের ঘরে যেন হাজারো বেহালা বেজে চলত । কিন্তু ওকে পাবার স্বপ্ন ওর সাথে বন্ধুত্ব করা এমন কি ওর সাথে কথা বলার কথাও ভাবতাম না কোন দিন ।
কিভাবে ভাবতাম ? ও হল একটা পারফেক্ট মেয়ে । সবার মনের রানী আর আমি ক্ষুদ্র প্রজা । আমি ত ক্ষ্যাত মার্কা একটা ছেলে । ওর ধারে কাছে যাবার প্রশ্নই আসে না । আমি যেতামও না । এভাবেই চলে যাচ্ছিল জীবন ।
কিন্তু একদিনের কথা । আমি ক্লাস শেষে হলের দিকে যাচ্ছি ।
এমন সময় পেছন থেকে ডাক “তৌহিদ একটু দাড়াবে ?”
কণ্ঠ শুনে মনে হল দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো ।
মুক্তার মুখে নিজের নাম যে শুনবো এটা আমি কোন দিন আশাই করি নি । আমি দাড়ালাম ।
“ হাই ।“
এতো টাই নার্ভাস হয়ে পড়লাম যে হ্যালো টাও বলতে পারলাম না । কোন রকম একটু হাসার চেষ্টা করলাম । মুক্তা খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে বলল “ তোমার সাথে কিছু কথা বলতে পারি ?”
“ বল ।“
“ একচুয়ালী কথা না, অভিযোগ । তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আছে ।“
“ অভিযোগ ?” আমি অবাক হই ।
“তুমি আমাকে এড়িয়ে চল কেন ?”
কিছুই বলতে পারলাম না । বোকার মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া । তাছাড়া আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে মুক্তা আমার সাথে কথা বলেছে ।
সেইদিন রাতে ঘুম তো আর আসেই না । কত কিছুই না মনের জানালায় উকি মারে । মন ছুয়ে যায় কত অজানা রঙে । তারপর আসতে আসতে মুক্তার সাথে যোগাযোগ বেড়ে যায় । মোবাইলে কথা হতে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ।
পড়ব পড়ব না করেও আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই । জীবন যেন এক নতুন পথে চলতে থাকে । যে পথে কেবল মুক্তা ছাড়া আর কিছুই নেই ।
আমি ভাসতে থাকি নতুন স্বপ্নে । কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গতে সময় লাগে না । আমার ও লাগলো না ।
যে দিন আমি ঠিক করেছি যে ওকে বলব সেদিন সব যেন কেমন অন্যরকম হয়ে যায় । সকালবেলা ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই নাস্তা খাচ্ছি এমন সময় মিজান কে আসতে দেখলাম । ওর মুখ থমথমে ।
আমি বললাম “ কি হয়েছে ?”
“ তোর সাথে কথা আছে ।“
“ বল ।“
‘ এখানে না । আয় আমার সাথে ।“
বলে এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে গেল ওর রুমে । নাস্তাও ঠিক মত শেষ করতে দিল না । আমরা মুখো মুখি বসলাম ।
“ তোকে একটা কথা জিঞ্জেস করবো সরাসরি উত্তর দিবি ।“
আমি বললাম “আচ্ছা দিবো । কি হল এমন ?”
“ তুই কি আজকে মুক্তা কে প্রোপোস করার কথা ভাবছিস ?”
আমি খানিকটা চমকালাম । ইতস্তর করে বললাম “তুই কিভাবে জানিস ?”
“ শুধু আমি না পুরা ভার্সিটির সবাই জানে এটা । তুই কি বুঝতে পারছিস না মুক্তা তোকে নিয়ে খেলা করছে । তোর কি মনে হয় ও তোর সাথে মিশছে কেন ? তোর কোন আইডিয়া আছে ?”
আমি কোন কথা বলতে পারি না । সত্যি তো আমার তো কিছুই নেই যে ও আমার সাথে মিশবে ।
মিজান বলল “মুক্তা ওর বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরেছে যে তোকে ওর প্রেমে ফেলবে । তারপর সবার সামনে তোকে হেয় করবে । আজ সবাই রেডি হয়ে আছে মজা দেখার জন্য ।“
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মানুষ এমনটা কেমন করে করে ? কারো ইমোশন নিয়ে কিভাবে খেলে ? এসব ভাবতে ভাবতে

মুক্তা ভাই এসেছিল ।
ভেবেছিলাম মুক্তাকে দেখতে যাবো না । কিছুতেই যাবো না । কিন্তু না গিয়ে পারলামও না ।এমন ভাবে অনুরোধ করতে লাগলো । আমি না করতে পারলাম না কিছুতেই । আর না যাওয়াটা অমানবিক হত ।
ওর অবস্থা নাকি খুব ক্রিটিক্যাল । দুএক বার নাকি চেতনা এসেছিল । বার বার নাকি আমার নাম নিয়েছে !
গাড়ি চলছে হাসপাতালের দিকে আর আমি ভাবছি মুক্তার কথা ।

সেদিন মিজানের কাছ থেকে সব শোনার পর আমার সব কিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেছিল । আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন আমি আর এই পৃথিবীতে নাই । একজন মানুষ আর একজনের সাথে এমনটা কেমন করে করতে পারে ? আমার মনটা কি একটা বাজির সমান ? এতোই ক্ষুদ্র আমি ?
তবুও ভার্সিটিতে গেলাম । মুক্তা যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল ।
ওর সামনে যখন দাড়ালাম তখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এত সুন্দর একজন মানুষ আমার সাথে এমন একটা ঘৃন্য খেলা খেলতে পারে ।
মুক্তা আমাকে বলল “এতো দেরী হল কেন ? আমি কতক্ষন ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি ।”
তারপর হেসে বলল “তুমি যেন কি আমাকে বলবে আজ ?”
আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম না । তারপর বললাম “কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ সরি”
মুক্তাকে একটু চমকাতে দেখলাম । ও মনে হয় আমার কাছ থেকে এটা আশা করে নি ।
“সরি আমি বুঝতে পারলাম না তুমি কি বললে ?”
আমি বললাম “তুমি তোমার বান্ধবীদের সাথে কত টাকা বাজি ধরেছো ?”
“ বাজি ?”
“ হ্যা । বাজি । আমাকে প্রেমে ফেলানোর বাজি । আমাকে নিয়ে খেলা করার বাজি ।“
কিছুক্ষন মুক্তা কোন কথা বলতে পারলো না ।
“শোন তৌহিদ তুমি যেমন টা ভাবছো তেমন না । আই ক্যান এক্সপ্লেইন ।“
“ আমি কোন ব্যাখ্যা শুনতে চাইছি না । আমি শুধু জানতে চাই তুমি বেট ধরেছিলে কি না?”
মুক্তা কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । তারপর মাথা ঝাকালো ।
কি জানি হয়ে গেল আমার ! মাথা যেন আগুন ধরে গেল। কষে একটা চড় মেড়ে,,,,,,

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে