#Adorable_Love ?
পর্ব : ১৪
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
পুরো বাড়ি গতকাল থেকেই এলাহীভাবে সাজানো হচ্ছে। কাছের আত্মীয় স্বজনেরা সকাল সকালই চলে এসেছে আমানদের বাড়ি। আর তাদের সবার এক অভিযোগ শুনতে হয়েছে রাজিয়া বেগমকে যে কেনো তার একমাত্র ছেলের বিয়েতে বলা হলো না তাদের। এভাবে চুপিচুপি বিয়ে সেরে শেষকালে ডাকা!? অতঃপর রাজিয়া বেগম নানা রকম বুঝ দিয়ে কাটিয়েছেন ব্যপারখানা। আর যাই হোক, সবাইকে তো আর তার ছেলের সব উদ্ভট সিদ্ধান্তের কথা বলা যায়না। এখন সব মেতে আছে নতুন বউ নিয়ে। সকলেই বউ এর মুখ দেখে কিছুনা কিছু দিয়ে দোয়া করছেন। আর সবার মুখেই ঈশিকার আচার-আচরণ, রুপের বাহবা! আর প্রশংসা করবে না ই বা কেনো? সকলের পা ছুঁয়ে সালাম করা, যেই পারছে টানাটানি করে নিজের কাছে ঠেসে ধরে বসিয়ে গল্প শুরু করছে। ঈশিকা সেগুলো আদর্শ শ্রোতার মতো শুনছে। আর হাসি মুখে উত্তর দিচ্ছে৷ তাই প্রশংসা না করে যায় কোথায়?
সবার মুখে ছেলের বউয়ের প্রশংসা শুনে রাজিয়া বেগমও মনে মনে খানিকটা গর্ব বোধ করলেন।
এদিকে সবার সাথে কথা বললেও ঈশিকার মন পরে আছে অন্য দিকে৷ লম্বু শয়তানটাকে আজকাল কারণে অকারণে বেশিই মিস করছে সে। আজকে আমানকে বিজনেস ক্লায়েন্ট হ্যান্ডেলের জন্য চিটাগং যেতে হয়েছে সকালেই। খুব জরুরি হওয়ায় রাজিয়া বেগম যেতে দিয়েছে নইলে আজকের দিনে কখনই যেতে দিতেন না। তবে সাথে সে কড়া হুকুম জারি করেছে যেনো সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরে।
এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে মেকাপ আর্টিস্টরা চলে আসলো। রাজিয়া বেগম তাদের ঈশিকার ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন নিজে তৈরি হতে। কারণ একটু পরেই সকল গেস্ট আসা শুরু করবে৷ ঈশিকার রেডি হতে হতে সন্ধ্যা প্রায়। পিচ এন্ড গোল্ডেন কম্বিনেশন এর লেহেঙ্গার সাথে গ্রিন এন্ড গোল্ডেন স্টোনের জুয়েলারি।সাথে ভারী সাজ। পুরোই পুতুল পুতুল লাগছে ঈশিকাকে। অবশ্য এই সবকিছুই আমানের পছন্দ অনুযায়ী কেনা হয়েছে। এরমধ্যেই রাজিয়া বেগম আসলেন রুমে। ঈশিকাকে দেখে ঈশিকার বা হাতের কোণে আঙ্গুলে হাল্কা কামড় দিয়ে বললেন,
—-” মাশাল্লাহ! কি মিষ্টি লাগছে আমার মেয়েকে! কারো যেনো নজর না লাগে।”
ঈশিকা উত্তরে হাসলো। তার মা ও সাজলে এই কাজ করতেন নজর কাটানোর জন্য৷ রাজিয়া বেগম বললেন,
—-” চল, নিচে চল।”
ঈশিকা বাধা দিয়ে বললো,
—-” কিন্তু, উনি তো এখনো আসেন নি।”
রাজিয়া বেগম হেসে বললেন,
—-” আমান এসে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। কল করেছিলো তোর শ্বশুর।”
ঈশিকা মাথা নেড়ে নিচে চলে এলো। ঈশিকা সিড়ি থেকে নামা শুরু করে স্টেজে বসা পর্যন্ত ক্যামেরাম্যানরা কোনো পোজ ছাড়াই এলোপাথাড়ি ছবি তুলছে। কিছুক্ষণ সময় পরই দেখলো ঈশিকার মা, বাবা, ভাই সবাই এসে গেছে। তারা আসতেই ঈশিকা উঠে আগে আফসানা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনিও যতই আগে বিয়ে বিয়ে করুক না কেন, এখন মেয়েকে ছাড়া থাকার কষ্টটা খুব বুঝতে পারেন তিনি। এরপর ঈশিকা ইয়ানকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো। তারপর ইফতেখার চৌধুরীর হাত ধরে বললো,
—-” জানো, তোমাদের কত মিস করছিলাম আমি? খুব মনে পরছিলো তোমাদের কথা।”
ইফতেখার চৌধুরী হেসে বললেন,
—-” তাই নাকি? কিন্তু আমরা তো তোকে একদমই মিস করিনি। কি ইয়ান, তাইতো?”
ইয়ানও ইফতেখার চৌধুরীর কথায় সায় দিল। ঈশিকা অভিমানী কন্ঠে বললো,
—-” বাবা…!”
ইফতেখার চৌধুরী হেসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
সিংগেল ফটোসেশান করার সময় ঈশিকা দেখলো রিমি আর নোভা চলে এসেছে। ঈশিকা ওদের কাছে এগিয়ে যেতেই নোভা রিমিকে উদ্দেশ্য করে ঈশিকাকে বললো,
—-” আসতেই চাইছিলো না। জোর করে নিয়ে এসেছি।”
রিমি রাগ মেশানো গলায় বললো,
—-” আসব কেনো? ও কি আমাদের আপন ভাবে নাকি? আপন ভাবলে চুপিচুপি এভাবে আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করতে পারত!?”
ঈশিকা একবার নোভার দিকে তাকিয়ে ফের হেসে রিমির হাত ধরে বললো,
—-” সরি দোস্ত! দেখ আমিতো ফোন করে বললামই হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে। কোনো প্ল্যান ছিল না। না হলে তোদের বলতাম না বল?”
রিমির একই ভাবমূর্তি দেখে ঈশিকা আবার বললো,
—-” তুমি কি চাও? যে এই ভরা আসরে নতুন বউ এভাবে সেজেগুজে কান ধরে উঠবস করুক?”
ঈশিকার এই কথায় রিমি হেসে ফেললো। তারপর ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরলো। ঈশিকা দুষ্টু হেসে রিমিকে বললো,
—-” তা তোমার তোসু বাবু কোথায়? আসবে না?”
রিমি হেসে দিয়ে বললো,
—-“আসছে ওরা…ওইতো এসে গেছে।”
ঈশিকা পাশ ফিরে দেখলো তৌসিফ সাথে শোয়েব ও এসে গেছে। ঈশিকা ভেবেছিলো শোয়েব আসবে না। কিন্তু শোয়েব কে দেখে বেশ স্বাভাবিক ই মনে হলো। তৌসিফ এসে কথা বলার পর শোয়েব এগিয়ে আসলো ঈশিকার কাছে। এসে হেসে বললো,
—–” কংগ্রাচুলেশন দোস্ত! সত্যি তোর বিয়ের নিউজটা পেয়ে খুব সারপ্রাইজড হয়ে গেছিলাম! ভেবেছিলাম মজা করছিস। কিন্তু এখন দেখলাম নাহ, সত্যি!
ঈশিকা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–” থ্যাংক ইউ! আসলে হুট করেই….”
—-” হেই…শোয়েব?”
ঈশিকার কথা শেষ হবার আগেই কেউ একজন কথাটা বলে উঠলো। ঈশিকা পেছন ফিরে দেখলো আমান দাঁড়িয়ে। হোয়াইট ব্লেজার, ব্ল্যাক শার্ট, হোয়াইট প্ল্যান্ট সাথে ওই ধারলো চেহারা! সবমিলিয়ে মাথা ঝিম করা লুক! ঈশিকা এক দফা ক্রাশ খেয়ে নিলো। কিন্তু আমান কখন বাড়ি কখন এলো! আমান এগিয়ে এসে হেসে বললো,
—-” এসেছো তাহলে। আমি কিন্তু ঈশুকে বারবার বলে দিয়েছি অবশ্যই যেনো তোমাকে ইনভাইট করে। হাজার হলেও ওর কাছের বন্ধু তুমি।”
শোয়েব আমানের কথায় জোরপূর্বক মৃদু হাসলো। তারপর আমানকে দেখে একে একে সবাই এগিয়ে আসলো। সবার সাথে কথা বলে এরপর আবারো শুরু হলো ওদের কাপল ফটোসেশান। নানারকম পোজে ছবি তুলছে। ক্লোজ ভাবে দাঁড়ানোর সময় আমান ঈশিকার কানেকানে ফিসফিসিয়ে বললো,
—-” আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছো নাকি? এভাবে সব সময় মার্ডার করা কি ঠিক?”
ঈশিকা আমানের কথায় লজ্জায় নতজানু হয়ে বললো,
—-” বেশ করেছি। মারবও আমি, বাঁচাবোও আমি।”
আমান ঈশিকার কথায় হেসে দিল।
ওদের ভাবভঙ্গি দেখে শোয়েবের কাছে সব পরিষ্কার। সেদিনের আমানের বলা অধিকারের কথা তার কাছে আজ স্পষ্ট। ঈশিকা সত্যি আমানকে ভালবাসে। আর তার এক তরফা ভালবাসা ওদের ভালবাসার কাছে নিতান্তই তুচ্ছ! হ্যাঁ, আমানকে ঈশিকার পাশে দেখে তার রাগ হিয়েছিল ঠিকি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঈশিকা আমানকে পেয়েই খুব খুশি। আর ভালবাসার মানুষ যাতে সারাজীবন সুখী থাকে সেটাই চাইবে সে। আমান আড়চোখে দেখছিল শোয়েব ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। শোয়েবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মুচকি হাসি দিল আমান।
অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হলে যার যার মতো বিদায় নিলো। কিন্তু ঈশিকা জেদ ধরলো মা বাবা ভাইকে আজ যেতে দেবে না। এ বাড়িতেই আজ থাকতে হবে। তারা না মানলে প্রায় কান্না করার উপক্রম। রাজিয়া বেগম, আরমান আহমেদ এবং আমানও সাথে জোর করলেন থাকার জন্য। শেষমেশ বাধ্য হয়েই তারা রয়ে গেলেন।
রাতে ফ্রেস হয়ে খেয়েদেয়ে এসেই বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরলো ঈশিকা। ভীষন ক্লান্ত লাগায় একটু পরেই ঘুমিয়ে পরলো। আমান শ্বশুর আর বাবার সাথে জম্পেশ আড্ডা দিয়ে ঘরে এসে দেখলো ঈশিকা শুয়ে পরেছে৷ আমান বিছানায় গিয়ে জড়িয়ে ধরে ঈশিকাকে ডাকলে দেখলো কোনো হেলদোল নেই। আমান বিড়বিড় করে বললো, ” হায়রে খোদা! কোথায় ভেবেছি এখন রোমান্স করবে তা না! এখন নাক ডেকে তিনি ঘুমাচ্ছে।” তারপর চিন্তা করলো আজকের সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুম আসাটাই স্বাভাবিক। আমান ঈশিকাকে টেনে সোজা করে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো।
.
.
_________________________________________________
এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন। ঈশিকার ভয় ছিল যে বিয়ের পর হয়ত শোয়েবের সাথে ফ্রেন্ডশিপটা কমপ্লিকেটেড হবে। বা সে কখনও সহজ হতে পারবে না। কিন্তু শোয়েব এখন তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করে। তাই ঈশিকাও আগের মতোই শোয়েবের সাথে স্বাভাবিক ভাবে মিশে। অবশ্য এ নিয়ে আমানেরও এখন রেস্ট্রিকশন নেই খুব একটা।
আগে আমান ঈশিকাকে দিনে সহস্রবার কল করে খোঁজ নিত, খেয়াল রাখতো। এখন হয়েছে কাহিনি উলটো৷ আমান যতক্ষন বাইরে থাকে ঈশিকাই বার বার কল করে তাকে। আর আমান একেকবার দুষ্টুমি করে বলে, ” বাহ বাহ! তুমি তো বিয়ের পর দেখছি আমার প্রেমে পরে গেছো! এত্তো কেয়ার! হুম…আ’ম ইম্প্রেজড!” এই কথায় ঈশিকা লজ্জা পেলেও কপট রাগ দেখায়। আর আমান হাসে।
শ্বাশুড়ির সাথে কিচ্ছুক্ষন আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে চলে আসে ঈশিকা। এসেই কাউচে শুয়ে পরে। গেম খেলার জন্য ফোন অন করতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সেই যে আমানের সাথে তোলা প্রথম সেল্ফি টা। ছবিটা দেখেই হেসে ওঠে সে। সেদিন থেকে কিছুদিন পরই হঠাৎ একদিন ভার্সিটি থেকে আসার সময় আমান তার গাড়ি নিয়ে এসে তার সামনে ব্রেক করে। নোভা আর ও কথা বলতে বলতে আসছিলো। আচমকা ঘটনায় চমকে যায় দুজনেই। তারপর আমান নেমে আসে গাড়ি থেকে। প্রথমে ঈশিকার একটু চেনা চেনা লাগলেও পরে ঠিকি চিনতে পারে আমানকে। আমানকে দেখে সে হাই হ্যালো বলার চিন্তা করলেও তার আগেই আমান তার সামনে এসে বলে, “উইল ইউ ম্যারি মি?”
এহন কথায় পুরো হকচকিয়ে যায় সে। এভাবে অল্প চেনা জানা একটা মেয়েকে সোজাসুজি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াটা ভীষন অদ্ভুত লাগে তার কাছে। প্রেমের হলেও মানা যায়। তাই বলে বিয়ে? তখন তার কাছে আমানকে একপ্রকার ফালতুই মনে হয়েছিল। তারপর রাগের বসে নানা রকম কথা শুনিয়ে দেয় আমানকে। কিন্তু তারপর ও ঘুরে ফিরে সেই একই কাহিনি। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে শোয়েবের হেল্প নিয়ে সেইদিন আমানের সামনে বয়ফ্রেন্ড এর নাটক করায়। কিন্তু তবুও আমান তার বাবাকে দিয়ে ওদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব দেয়৷ আর ঈশিকা রাগে জেদে না করে দেয়। কিন্তু ঘটনাচক্রে আমানের রাগ আর ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে সারাজীবন এর জন্য এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরে সে। পুরোনো এসব কথা ভেবেই হেসে উঠলো ঈশিকা।
রাত নয়টায় আমান বাড়িতে আসে। রুমে এসেই দেখে কাউচে ঘুমিয়ে আছে ঈশিকা। ফ্রেস হয়ে এসে নিচে চলে যায় আমান। তারপর খাবার নিয়ে এসে ঈশিকাকে ডাকে।
—-” ঈশু… ওঠো খাবে। কি হলো ওঠো? এই ঈশু….ওঠো না লক্ষীটা…ঈশু…!
—–” উমম…খাব না।”
আমান এবার ধমকের সুরে বললো,
—–” আবার খাবার নিয়ে বাহানা? মাইর চিনো? দ্রুত ওঠো।” ঈশিকা পিটপিট করে চোখ খুলে ভাল করে তাকিয়ে দেখে আমান। ওমনি লাফ দিয়ে উঠে বসে।
—-” আপনি? কখন এলেন? ”
—-” অনেক্ষন আগে। মা খাওয়ার জন্য ডেকে গেছিলো ওঠনি কেন? পৌনে দশটা বাজে।”
ঈশিকা আমতা আমতা করে বললো,
—-” আসলে…আপনি আসলে খাব তাই ভেবে… আর কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম! তাই…
—–” এরপর থেকে লেট করবেনা। খেয়ে নিবে নিজের মতো।”
ঈশিকা চুপ করে বসে রইল৷ মুখে একথা বললেও আমান মনে মনে বেশ খুশি হলো। তারপর ঈশিকাকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে প্লেট নিচে রেখে রুমে এসে দেখলো ঈশিকা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নাক ধরে কিছু করছে। আমান ঈশিকার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
—–” কি দেখছো?”
ঈশিকা আমানের দিকে ঘুরে বললো,
—-” নাক টানছি…”
—-” কিহ?”
—-” হুম। দেখুন, কেমন বোচা…আপনার নাকের মতো এতো চোখা না। তাই টেনে চোখা করার চেষ্টা করছি।”
আমান কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হাসি শুরু করলো। ঈশিকা বিরক্ত হয়ে বললো,
—–” হাসির কি হলো এখানে? ধুর! আপনি একটা আসলেই খারাপ লোক। যান সরুন তো।” বলেই বিছানায় যেতে নিল। ওমনি আমান দুই হাত দিয়ে ঈশিকার পেট আঁকড়ে ধরে আটকে দিল। হাসতে হাসতে বললো,
—-” আরে রাগ করেনা বাবুটা। আচ্ছা আর হাসবো না। আর তোমাকে নাক চোখা করতে কে বলেছে? তুমি এই বোচা নাকেই কিউটের বক্স বুঝেছো?”
ঈশিকা কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে রইলো। আমান আবার বললো,
—-” অবশ্য একটা উপায় আছে। সেটা করলে কাজ হলেও হতে পারে।”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—-” কি?”
—-” আমার নাকের সাথে নাক ঘষো। সাথে একটু একটু চুমু। দেখবে তিরতির করে বাড়ছে নাক।”
হটাৎ ই ঈশিকার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। হেসে দুই হাত দিয়ে আমানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” ও তাই? আচ্ছা করি তাহলে।” বলেই মুখ এগিয়ে নিয়ে আমানের নাকে নাক লাগালো। তারপর হঠাৎ করেই নাকের ডগায় কচ করে কামড় বসিয়ে দিলো। আমান “আহ” চিৎকার দিয়ে ঈশিকাকে ছেড়ে হাত দিয়ে নাক ধরলো।
ঈশিকার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো ওই নাকে কামড় বসানোর। আজ পূরন হয়েও গেলো। হাসতে হাসতে বললো,
—–” সবসময় ধান্দাবাজি করলে এমনি হবে।” বলেই যেই বিছানায় যেতে নেবে অমনি আমান ঈশিকাকে চেপে ধরে ৷ তারপর বললো,
—–” খুব কামড়ানোর শখ না? আজকে তোমার শখ মেটাবো আমি। দেখি তোমাকে কে বাঁচায়।”
ঈশিকা ভয়ে ভয়ে বললো,
—–” আপনিও কি কামড়াবেন জোম্বিদের মতো?”
আমান উত্তর না দিয়ে ঈশিকাকে ধরে বিছানায় ধপ করে শুইয়ে দিয়ে বললো,
—-” উহু! আদর করবো।”
বলেই গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। আমানের খোচাখোচা দাঁড়ির খোচায় ঈশিকার সুড়সুড়ি লাগছে আবার বিঁধছেও। ঈশিকা ছটফট করতে করতে বললো,
—-” আরে…ছাড়ুন…দাঁড়ির খোচা লাগছে তো। উফ! আপনি আসলেই একটা পঁচা লোক! আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো আমি। ছাড়ুন..” বলেই আমনকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
এবার ছটফটানিতে আমান ঈশিকাকে ছেড়ে দিল৷ তারপর বললো,
—-” আচ্ছা ঘুমাও।”
একটু থেমে আবার বললো,
—-” আর শোন, প্রথম বিয়ের দিন আমাকে বলেছিলে না তুমি? তোমার ভার্সিটির অনেকেই তোমাকে আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করে? তাদের নাম বলো তো। ডিটেইল আমি বের করে নেবো।”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—–” কেন?”
—-” কেন আবার? বউ তো ঘরে পাত্তা দেয় না। অন্তত যারা আমাকে ভালোবাসে, যাদের কাছে আমার ভ্যালু আছে। তাদের কাছেই যাওয়া উচিৎ তাইনা?”
ঈশিকা সেদিন ভয়ে কি দিয়ে কি আবল তাবল বলেছিল নিজেও জানে না। কিন্তু কথায় যেনো ঈশিকার মাথায় আগুন ধরে গেলো। কিছুক্ষন ফোস ফোস করে হুট করেই আমানের ওপর চড়ে বসলো।
তারপর আমানের গলা চেপে ধরে বললো,
—-” একদম খুন করে ফেলবো। আমি ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবলে।”
আমান পুরো বিস্ফরিত চোখে তাকিয়ে আছে ঈশিকার এমন রুপ দেখে। পরক্ষনেই আমান ইশিকাকে নিচে ফেলে দিয়ে দুহাত চেপে ধরে উঠে বললো,
—-” কেন? আমিতো পঁচা, খারাপ লোক। আবার আদর চাইলে কামড় দেবে, ঘুম আসবে। আর এখন একথা শুনে মেরে ফেলবে মানে কি?”
ঈশিকা কিছুক্ষন আমানের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে আমানের ঠোঁটে চুমু খেলো। আমান কিছুক্ষন অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে পরে হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো,
—–” এতোদিনেও কিছুই শিখলে না৷ এভাবে চুমু খায়?”
—-” আমি আপনার মতো নির্লজ্জ নাকি? যে শ্বাস আটকে ধরে মেরে ফে…..
তার আগেই আমান ঈশিকার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো গভীর ভাবে। বেশকিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে দু জনেই হাঁপাতে লাগলো। তারপর আমান ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ঈশু?”
—-” হুম?”
—-” ভালোবাসি! বাসোনা?”
ঈশিকা আমানের উঠে এগিয়ে গিয়ে আমানের বুকে মাথা রেখে জাপটে ধরে বললো,
—-” উঁহু! বড্ড বেশিই ভালোবাসি!”
আমান হেসে দুইহাতের আজলে ঈশিকার গাল ধরে কপালে গভীর চুমু এঁকে শক্ত বুকে আঁকড়ে ধরলো।
__________সমাপ্ত__________