Adorable Love পর্ব : ১৩

0
4009

#Adorable_Love ?
পর্ব : ১৩
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই ঈশিকা নিজেকে আমানের বুকে আবিষ্কার করলো। আমান একদম ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। ঈশিকা আমানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো আমানকে। উফ! এই ছেলে দেখতে এত্তো মাশাল্লাহ কেন!! এরপর তার চোখ গেলো আমানের সেই নাকের ডগায় তিল টার দিকে৷ ঈশিকার ইচ্ছে হচ্ছিলো দাঁত দিয়ে কট করে তিলটার ওপর কামড় বসিয়ে দিতে৷ সেদিন যেমন তার ঠোঁটের হাল করেছিলো শয়তান টা। এরপর এই চোখা নাকটা কামড় খেয়ে লাল হয়ে ফুলে কলাগাছ হয়ে যাবে। উফ! দেখতে যা লাগবে না! পুরোই লাল টমেটো!

এসব ভেবেই ঈশিকা একটু শব্দ করে হেসে উঠলো। ঈশিকার হাসিতে আমান কিছুটা নড়ে আধখোলা চোখে আদুরে কন্ঠে বললো,
—–” উম…গুড মর্নিং মাই লেডি! কাল রাতে ভালোমতো ঘুম হয়নি তোমাকে আদর করতে গিয়ে৷ এখন প্লিজ জ্বালাতন করোনা৷ একটু ঘুমাতে দাও৷”
বলেই আবার চোখ বুজলো আমান। আমানের কথা শুনে ঈশিকা কাল রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জা পেয়ে যায়। তারপর বললো,
—-” আচ্ছা ঘুমান। আমাকে ছাড়ুন আমি উঠবো।”
আমান চোখ খুলে ভ্রু কুচকে বললো,
—-” কেনো? উঠতে হবে না এখন। আর একটু ঘুমাও।” বলেই ঈশিকাকে আরো জড়িয়ে চেপে ধরলো আমান।
বাড়ির নতুন বউ এভাবে পরে পরে বেলা অবধি ঘুমাবে? কেমন দেখায়! আর তাছাড়া এখন আর ঘুম ও আসছে না তার। এমন ভাবে আমান চেপে ধরে আছে যে মোচড়ামুচড়ি করেও ছাড়াতে পারছে না। শেষমেশ উপায় না পেয়ে আমানের বুকে জোরসে কামড় বসিয়ে দিলো ঈশিকা। ওমনি আমান ঈশিকাকে ছেড়ে দিয়ে “আহ!” করে উঠে বসলো। সেই সুযোগে ঈশিকা উঠে পরলো বিছানা থেকে আর হাসতে লাগলো। আমান করুন মুখ করে বললো,
—-” ঈশু! কামড় এর বদলে মর্নিং কিস দিয়ে আদর করলেও তো পারতে? উফ!”
—-” এ্যাঁ! শখ কতো? খালি ধান্দাবাজি। বেশ করেছি৷ আরো দেবো। খুব আদর খাওয়ার ইচ্ছা না? তো এটাই আমার আদরের করার স্টাইল।”

বলতে বলতে ঈশিকা দেখলো এবার উলটে আমান ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—-” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আর হাসছেন কেনো?”
—-” দেখছি। তোমাকে শাড়ি ছাড়া এইভাবেও কিন্তু মারাত্মক লাগে!” বলেই চোখ মারলো আমান।
—-” কি অবস্থা?” বলেই ঈশিকা নিজের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো! শুধু পেটিকোট আর ব্লাউজ পরনে তার। শাড়ি কোথায়?! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো শাড়ি বিছানার কোনায় পরে আছে। এরপর আমানের দিকে তাকাতেই আমান দুষ্টু হাসি নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” কি বলেছিলাম না? শাড়ি আর থাকবে না গায়ে।”

ঈশিকা তাড়াতাড়ি শাড়িখানা উঠিয়ে বুকে নিয়ে বাথরুমের দিকে ছুট লাগালো। আমান ঈশিকার কাণ্ড দেখে শব্দ করে হেসে আবার বিছানায় ধপ করে উপুড় হয়ে শুয়ে পরলো।

এবার ঈশিকা বাথরুমে গিয়ে পরলো আরেক ঝামেলায়৷ জামা কাপড় তো কিছুই নিয়ে ঢুকেনি। ফ্রেস হয়ে পরবে কি? ঈশিকা আবার বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। দেখলো আমান আবার ঘুমিয়ে গেছে। এবার ট্রলি খুলেও চিন্তায় পরে গেলো ঈশিকা। কি পরবে? জামা নাকি শাড়ি? বেশিক্ষন শাড়ি পরে থাকলে যে ভীষন আনকম্ফোর্ট ফিল হয়৷ আবার মা ও তো পই পই করে বলে দিয়েছে পরে যা পরার পরবে৷ প্রথম কয়েকদিন যেনো শাড়িই পরে থাকে । অতঃপর মেরজেন্টা রঙা একটা শাড়ি নিয়ে আবার বাথরুমে ঢুকলো।

আগে অনুষ্ঠান গুলোতে মাঝে মাঝে শাড়ি পরার কারণে ঈশিকার একটু আধটু আইডিয়া আছে শাড়ি পরার ব্যাপারে। তাই পরতে গিয়ে বেশি বেগ পেতে হলো না। তবে খুব একটা ভরসাও রাখতে পারছে না। মনে হচ্ছে এই হাটতে গিয়ে পেঁচিয়ে পরে যাবে নয়তো টুপ করে খুলে যাবে। এরপর চুল মুছে ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিলো। তারপর হাতে ক’গোছা চিকন চুড়ি, আর গলায় একটা হাফ নেকলেস পরলো। তারপর চোখে কাজল দিলো আর শেষে কপালে একটা ছোট লাল টিপ পরলো। এরপর আয়নায় নিজেকে দেখেই এক দফা চমকে উঠলো। চেহারার জৌলুশটাই পালটে গেছে। ঈশিকা এক গাল হেসে সব গুছিয়ে রেখে পেছনে ঘুরতেই দেখলো আমান দাঁড়িয়ে আছে। আমানকে দেখে ঈশিকা বললো,
—-” ঘুম হয়ে গেলো?”
আমান এগিয়ে এসে ঈশিকার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” ঘরে বউ থাকলে ঘুম, নাওয়া খাওয়ার কি আর ঠিক থাকে নাকি? সব হারাম এখন আমার!”
উত্তরে ঈশিকা “ঢং” বলে অন্য দিকে ফিরে মুখ ভেংচি দিলো।
আমান হেসে ঈশিকাকে একবার আগাগোড়া দেখে নিয়ে অবাক হয়ে বললো,
—-” ওয়াও! তুমি একা শাড়ি পরেছো? ইশ! ভেবেছিলাম ফিল্মের মতো তুমি শাড়ি পরতে পারবে না সেই সুযোগে আমি পরিয়ে দেবো…তা আর হলো না!”
ঈশিকা ভাব নিয়ে বললো,
—-” হুহ! বলেছি না? এই ঈশিকা পারে না এমন কোনো কাজ নেই।”
আমান অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
—-” ওহ হ্যাঁ তাইতো! ভুলেই গেছিলাম আমি। আপনি তো সুপার ওম্যান! তা আমার যে এখন একটু এনার্জি দরকার?”

আমানের কথায় ঈশিকা পিটপিট করে তাকালো। আমান মুচকি হেসে ঈশিকাকে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে ঈশিকার ঠোঁটের দিকে আগাতেই ঈশিকা বাধা দিয়ে বললো,
—-” এই এখন একদম এইসব না! যান আগে ফ্রেস হয়ে আসুন।” বলে ঠেলে বাথরুমের দিকে পাঠিয়ে দিলো। আমান যেতে যেতে বললো,
—-” ঠিকাছে। পরে বুঝে নেবো সুদে আসলে।”
ঈশিকা হেসে বিড়বিড় করে বললো, ” অসভ্য লোক একটা!”
.
.
_________________________________________________
ঈশিকা ডাইনিং এ গিয়ে দেখলো আরমান আহমেদ বসে পেপার পড়ছেন। আরমান আহমেদ ঈশিকাকে দেখেই হেসে বললো,
—-” গুড মর্নিং ডিয়ার!”
ঈশিকা হেসে বললো,
—-” মর্নিং! মা কোথায় বাবা? ”
—-” সে তার জায়গায়…মানে কিচেনে। তুমি একা এলে? আমান এখনো ওঠেনি? ”
—-” উঠেছে। ফ্রেস হচ্ছে।”
—-” আচ্ছা ঠিকাছে। বসে পরো তুমি। ব্রেকফাস্ট মনে হয় এতোক্ষনে রেডি হয়ে গেছে। ”
—-” না সবাই আসুক। এখন একটু কিচেনে যাই?”
আরমান আহমেদ হেসে বললো,
—-” আচ্ছা যাও।”

ঈশিকা কিচেনের দিকে গেলো। দেখলো রাজিয়া বেগম নিজেই ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। ঈশিকাকে দেখেই বললো,
—-” আরে! উঠে গেছিস আম্মু? আমি এখনি ডাকতে পাঠাতাম তোদের।”
ঈশিকা আমতা আমতা করে বললো,
—–” আমি কি কিছু সাহায্য করবো তোমায়?”
রাজিয়া বেগম হেসে ঈশিকার কাধ ধরে বললো,
—–” কিছুই করতে হবে না। আমি আছিনা? আর যদি খুব মন চায় করতে। তাহলে পরে করবি, এখন না।”
ঈশিকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। রাজিয়া বেগম বললো,
—-” আমান উঠেছে?”
—-” হ্যাঁ। ফ্রেস হচ্ছে। ”
—-” আচ্ছা। শাড়ি পরেছিস? আমিতো ভেবেছি একা পরতেই পারবি না।”
ঈশিকা একথা শুনে বলে উঠলো,
—-” হ্যাঁ। কিন্তু মনে হচ্ছে এই খুলে যাবে। আনইজি লাগছে। ”
রাজিয়া বেগম ঈশিকার কথায় হাসলো। বললো,
—-” আর শাড়ি পরতে হবে না। আগে যেভাবে চলতি এখনেও সেভাবেই চলবি। কেউ কিছুই বলবে না।”
ঈশিকা মনে মনে বললো, ” যাক বাবা! বাঁচা গেলো।”

ব্রেকফাস্ট এর সময় রাজিয়া বেগম ঘোষনার মতো করে সবাইকে জানালেন তিনি ঠিক করেছে আগামী শুক্রবার বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে বৌভাত উপলক্ষে। বিয়েটা ছেলের কথায় আনাড়ি ভাবে হয়েছে কিছু বলেনি। এখন যা হবে সব তার মর্জিতে। এখানে তিনি কোনো কথাই শুনবেন না কারো। শেষমেশ তার সিদ্ধান্তই অটল রইলো। আজ সোমবার মানে হাতে আর চারদিন বাকি। তিনি আরমান আহমেদকে আগে সবাইকে ইনভাইটেশন এর দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। বাকি কাজ তিনি নিজেই তদারকি করে করবেন।
__________________________________________________
সন্ধ্যা সাতটায় অফিস থেকে ফিরলে আমান। যদিও আজকে যাবার ইচ্ছা ছিলো না। তারপরও জরুরি দরকারে যেতে হয়েছে। এসেই দেখলো দুই বউ শাশুড়ীতে মিলে ড্রয়িংরুমে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আমান কিছু না বলেই ঘরে চলে গেলো। ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখলো ঈশিকা বিছানায় বসে মোবাইল চাপছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলে ব্রাশ চালাতে চালাতে আমান বললো,
—–” আড্ডা শেষ?”
—–” হুম। আম্মু ডাকছে। খাবেন চলুন।”
মোবাইলের দিকেই তাকিয়ে বললো ঈশিকা।
ওমনি আমান এসে হুট করে ঈশিকার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিলো। ঈশিকা আতঙ্কভাবে বললো,
—-” উফ! লাস্ট লেভেল ছিলো গেম টার। দিলেন তো বারোটা বাজিয়ে ধুর!
—-” বর রেখে গেম খেলা? এটা রীতিমতো অন্যায়।”
ঈশিকা কিছু বলে ভেংচি কাটলো। আমান বললো,
—-” উফ ঈশু! তোমার ভেংচিতেও আমি ফ্লাট হয়ে যাই।”
ঈশিকা একথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে ফেললো।
তারপর বললো,
—–” হয়েছে। এখন চলুন। আমার খিদে পেয়েছে।”
—–” খিদে পেয়েছে? আগে বলবে তো। আরে আমারো তো পেয়েছে। সারাদিনে একটাও খাওয়া হয়নি।”

বলেই ঈশিকার দিকে ঝুকে গেলো আমান। ঈশিকা আমানের কথা না বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকালো। তারপর আচমকা তার ঠোঁটের ওপর আক্রমণ! পাক্কা ৬ মিনিট পর ছাড়লো আমান। তারপর ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” কি? খিদে মিটেছে? আমার কিন্তু অর্ধেক ও মিটলো না। আর একটু খাই কি বলো? ”
ঈশিকা আমানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কটমটিয়ে বললো,
—-” আপনি…আপনি একটা যাচ্ছেতাই!” বলেই তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিচে। আমান হোহো করে হেসে উঠলো।

খাওয়া দাওয়ার পর রাতে আমান আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে ঈশিকার কোলে রেখে কাউচে বসে কাজ করছিলো আর ঈশিকা আমানের বুকে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে গেম খেলছিলো।
ল্যাপটপ এ চোখ রেখেই হঠাৎ আমান বললো,
—–” রিসিপশন এর দিন তোমার বন্ধুদের ইনভাইট করবে।”
ঈশিকা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মাথা উঁচিয়ে আমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” করবো?”
—-” হুম তাই তো বললাম করবে। এন্ড অবিয়াসলি শোয়েবকে কে তো অবশ্যই আসতে বলবে।”
ঈশিকা সন্দেহের চোখে বললো,
—-” কেনো?”
—-” কেনো মানে? তোমার বন্ধু না? আর তাছাড়াও সেদিন ও তোমার প্রতি আমার কিসের অধিকার জানতে চেয়েছিলো না? সেটা সেদিন নিজের চোখেই দেখে নিবে৷”
ঈশিকা আমানের বুকে থেকে উঠে সোজা হয়ে বসে বললো,
—–” আমার না….সব জানার পর থেকে ওকে খুব ভয় লাগে। কথা বলতেও ইচ্ছা হয়না একদম।”
আমান কিছুক্ষন ঈশিকার দিকে তাকিয়ে থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ঈশিকাকে টেনে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” আমিতো আছি পাগলি! চিন্তা কি?”

ঈশিকাও আমানকে জড়িয়ে ধরলো। এই মুহুর্তে ঈশিকার মনে হচ্ছে আমানের বুকটাই তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের এবং নিরাপদ স্থান।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে