Adorable Love পর্ব : ০৯ + ১০

0
4026

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৯ + ১০
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললেন আফসানা চৌধুরী। খুলেই দেখলেন নোভা বেশ শাড়ি পরে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। নোভা হাসি মুখে বললো,
—-” আন্টি…ঈশি কোথায়?”
—-” সে তো ঘরে…তা তুমি এতো সেজেগুজে যে? কোথাও কোনো প্রোগ্রাম আছে নাকি? ”
—-” হ্যাঁ… কেনো ঈশি বলেনি? আজকে তো রিমির বার্থডে।”
—-” না তো…আচ্ছা ভেতরে এসো।”
নোভা ভেতরে ঢুকেই বললো,
—–” ও ফোন ধরছে না কেনো আন্টি? কতোবার ফোন দিলাম!”
—–” তাই নাকি? কিজানি…মেয়ের কি হলো! সেই পরশু ভার্সিটি থেকে আসলেই দেখলাম মনমরা। কাল রাতেও না খেয়ে শুয়ে পরলো। আমি, ওর বাবা কতো ডাকলাম উঠলো না। আবার দুপুরেও দেই মেই করে খেয়ে সেই যে ঘরে বসে আছে। যাও তো মা…দেখো তো কি হলো মেয়ের। আমি জিজ্ঞেস করলে তো কিছুই বললো না।”

নোভা আর কিছু না বলে ঈশিকার ঘরের দিকে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো ঈশিকা জানালার গ্রিলে দুই হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
—-” ঈশি…ঈশিই..”
নোভার ডাকে চমকে পেছনে তাকালো ঈশিকা।
—-” কিরে..?এখনো রেডি হসনি কেনো?” ঈশিকার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো নোভা।
—-” কেনো?” মলিন গলায় বললো ঈশিকা।
—-” কেনো মানে! আজকে রিমির বার্থডে ভুলে গেছিস? আমি, তৌসিফ, শোয়েব কতোবার ফোন দিয়েছি তোকে দেখেছিস? ধরলি না কেনো? আজকে তোর খবর করবে রিমি দেখিস। কিরে? বসে পরলি কেনো? ওঠ…রেডি হ।”
—-” না গেলে হয়না?” নোভার দিকে তাকিয়ে করুন চোখে বললো ঈশিকা।
—-” মানে কি? দেখ এমনি কালকে রাতে তুই রিমিকে কল করে উইশ করসনি। আবার এখনো পর্যন্ত ফেসবুকে একটা টাইমলাইন ও করিসনি বলে ক্ষেপে আছে তোর ওপর। তাই রাগে আর নিজে থেকে কল করেনি তোকে। এখন তুই না গেলে কিন্তু ওর রাগ ভাঙানো খুব কঠিন হয়ে যাবে।”
ঈশিকা শব্দ করে একটা কাঁপা শ্বাস ফেলে বললো,
—-” ভালো লাগছে না দোস্ত! তুই যা। আমি রিমিকে পরে বুঝিয়ে বলবো।” বলেই নিচের দিকে তাকালো ঈশিকা।
—-” ঈশি? কি হয়েছে তোর? এতো ডেস্পারেট লাগছে কেনো? বল কি হয়েছে?” ঈশিকার পাশে বিছানায় বসে বললো নোভা। ঈশিকা নোভার দিকে তাকিয়ে ভেজা কন্ঠে বললো,
—-” দুবাই গেছে সে বিজনেসের জন্য৷ পরশু থেকে এখন অবধি একটা কল ও করেনি। একটা বার ও আমার খোঁজ নেয় নি।”
—-” মানে? কার কথা বলছিস?”
—-” আমান…” ক্ষীন কন্ঠে বললো ঈশিকা।
নোভা কিছুক্ষণ ঈশিকার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখে হাসি এনে বললো,
—-” আরে…হতেই পারে কাজের ব্যস্ততার জন্য করে উঠতে পারেনি। তো তুই কল কর। কল করে খুব ঝেড়ে দে।”
ঈশিকা অভিমানী কন্ঠে বললো,
—-” কেনো? আমি কেনো করবো? তার কি হয়েছে? এমনি তো রাত দিন সমানে কল করে মাথা খারাপ করিয়ে দেয়। এখন বিদেশ গিয়ে কি এমন কাজ করছে সে? যে একবেলা ফোন করার সময় ও তার কাছে নেই। ”
নোভা ঈশিকার কথা শুনে ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,
—-” বাব্বা! কি অভিমান! কি প্রেম! আচ্ছা না করলি। কিন্তু তুই ই তো বললি ভাইয়া বিজনেসের জন্য দেশের বাইরে গেছে। দেখ এতবড় বিজনেস কিন্তু ভাইয়া একাই সবটা সামলায়। তাই হয়তো কাজের চাপে সময় হয়নি খোঁজ নেওয়ার। এমনি তো কত কেয়ার করে তর বল? ”
ঈশিকাকে চুপ থাকতে দেখে নোভা ঈশিকার হাত ধরে বললো,
—-” দেখ একা ঘরে বসে থাকলে এখন আরো মন খারাপ হবে। ভাইয়া আসলেই খুব করে বকে দিস। দরকার হলে ধরে মারিস। তাও আর বসে না থেকে এখন চল। ওখানে গেলে সবার সাথে দেখা হলে মন ভালো হয়ে যাবে।”
ঈশিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নোভা বাধা দিয়ে বললো,
—-” কোনো কথা না…যদি এখন না করিস তাহলে ভাব্বো বর পেয়ে এখন বন্ধুদের কোনো ভ্যালু নেই তোমার কাছে।” মুখ গোমড়া করে বললো নোভা। ঈশিকা নোভার হাতে থাপ্পর দিয়ে বললো,
—-” ফাজিল! পারিস তো খালি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে না?”
নোভা দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
—-” হুম পারিতো! এখন কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
—-” কিন্তু রিমির জন্য তো কোনো গিফট কেনা হয়নি!” চিন্তিত হয়ে বললো ঈশিকা।
—-” আমিও তো এখনো কিনি নি। যাওয়ার সময় একাবারে কিনে নিয়ে যাবো। তো কোন শাড়ি পরছিস?”
—-” শাড়ি পরতেই হবে?” করুন মুখ করে বললো ঈশিকা।
—-” ইয়েস! আমি পরেছি সো তোমারও পরতে হবে। এখন কথা কম বলে তৈরি হও। সন্ধ্যা হতে কিন্তু বেশি দেরি নেই। নে নে ওঠ!” তাড়া দিয়ে বললো নোভা।

ঈশিকা কিছুটা অনিচ্ছা থাকা সত্বেও তৈরি হলো। আর মনে মনে ভাবলো, ” শয়তান টাকে তো আর ধরে মারা যাবে না। সেই সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই তার। তবে এর থেকেও মোক্ষম কাজ সে করবে৷ সামনে আসলে একটা কথাও বলবে না সে। উহ! বিয়ে করে এখন সব পাট চুকে গেছে না? আসুক কথা বলতে…খুব রাগ দেখাবে খুউব!
.
.
__________________________________________________
ঈশিকাদের রিমিদের বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা লেগে গেলো প্রায়। গিয়ে দেখলো শহরের কিছু বেশ নামি দামি বিজনেসম্যানরা ইনভাইটেড আছে সেখানে। কারণ রিমির বাবাও সেই তালিকারই একজন।

রিমির রাগ ভাঙাতে হাজারবার সরি বলে কান পর্যন্ত ধরতে হলো ঈশিকার৷ শোয়েব আর তৌসিফ ওদের আগেই চলে গিয়েছিলো। ঈশিকা যাওয়ার পর থেকে শোয়েবের দৃষ্টি শুধু ঈশিকার দিকেই ছিলো। এই দিয়ে দুইবার ঈশিকাকে শাড়িতে দেখলো সে। এর আগে দেখেছিলো ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে। আজ লাল আর কালো কম্বিনেশন এর জর্জেট শাড়িতে ঈশিকাকে ভীষন সুন্দর লাগছে। এই মেয়েকে যতবারই দেখে ততবারই অদ্ভুত মায়ায় পরে যায় সে।

বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে কথা বলে ঈশিকার মন খারাপটা একদম চলে গেছে৷ নোভা ঈশিকাকে নিয়ে সেল্ফি তুলছিলো এমন সময় শোয়েব এগিয়ে আসলো ঈশিকার কাছে।
—-” ঈশি?”
শোয়েবের দিকে ঘুরে তাকিয়ে ঈশিকা বললো,
—-” হ্যাঁ? কিছু বলবি?”
—-” তোকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে।”
ঈশিকা হেসে বললো,
—-” থ্যাংক ইউ দোস্ত!”
শোয়েব হেসে বললো,
—-” শুধু থ্যাংকস এ কাজ হবে না।”
—-” তো আর কি? প্লিজ এখন এটা বলিস না যে একটু প্রশংসা করার জন্য আবার ট্রিট চাই তোর।” বলেই হাসলো ঈশিকা।
শোয়েব হেসে বললো,
—-” না ট্রিট চাই না। একটা ছোট্ট গিফট চাই। তবে কথা দিতে হবে যা চাইবো তাই দিবি।”
ঈশিকা কিছু ভেবে বললো,
—-” উম…আচ্ছা। বল কি চাই?”
—-” এখন না। সবকিছুরই উপযুক্ত সময় আছে। সময় হলে চেয়ে নেবো আমি।” মৃদু হেসে বললো শোয়েব। ঈশিকা শোয়েবের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। কনফিউজড মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে শোয়েব হেসে দিয়ে বললো,
—-” আরে এমন কিছু চাইবো না যা দিতে তোর ফকির হওয়া লাগে। সো প্যারা নিস না।”
শোয়েবের কথা শুনে হেসে ফেললো ঈশিকা। তারপর হঠাৎ ঈশিকা শুনতে পায় চিরচেনা একজনের গলার আওয়াজ৷ বা সাইডে তাকিয়ে তার চোখ আটকে যায় মানুষটার ওপর। ঈশিকা অস্ফুটস্বরে বললো,
—-” আমান!”
আমানও এতোক্ষন আড়চোখে ঈশিকাকেই দেখছিলো আর রিমির বাবার সাথে ড্রিংক হাতে দাঁড়িয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলো। ঈশিকা তাকাতেই আমান কথার মাঝেই তার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। ঠিক তখনই নোভা আমানকে দেখে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আস্তে করে বললো,
—-” ভাইয়া এখানে কিভাবে? তুই না বললি দেশের বাইরে?”

ঈশিকা নোভার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রিমিকে ডাক দিলো। রিমি বাকি সবার সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলো। ঈশিকার ডাকে এগিয়ে আসলে ঈশিকা আমানকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
—-” উনি এখানে কেনো? তুই ইনভাইট করেছিস?”
রিমি ঈশিকার দৃষ্টি অনুসরণ করে বললো,
—-” কে?”
তখন নোভা ফোড়ন কেটে বললো,
—-” আরে…আমান ভাইয়া মানে আমান আহমেদ।”
রিমি আমানের দিকে তাকিয়ে তারপর বললো,
—-” আরে উনিই তো সেই না? যার সাথে তুই সেল্ফি তুলেছিলি বাজি ধরে? কিন্তু আমিতো করিনি…হয়তো বাবা করেছে। বিজনেস ক্লায়েন্ট হবে হয়তো। কেনো?”
ইশিকা রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” না কিছুনা…এমনি।”
ঈশিকা আর আমানের দিকে তাকালো না। নোভা বলেছিলো একবার আমানের সাথে কথা বলতে কিন্তু সে ” প্রয়োজন নেই” বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এখন সে আমানকে ইগনোর করবে। উচিত শিক্ষা দেবে তাকে কথা না বলে। শোয়েব এতোক্ষন ওদের কথা চুপচাপ শুনছিলো কিছু বলছিলো না। কিন্তু আমানকে দেখেই ওর মুখের হাসি উড়ে গেলো।
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

#Adorable_Love ?
পর্ব : ১০
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
কিছুক্ষন পর খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ হলো। এরমধ্যে যদিও নোভা গিয়ে আমানের সাথে কথা বলেছিলো। কিন্তু তখনও ঈশিকা আমানের সাথে কথা তো দূর পুরোদমে ইগনোর করছিলো। আমানও কিছু বলছিলো না শুধু ঈশিকার হাবভাব দেখছিলো মিটিমিটি হাসছিলো। কারণ সে খুব বুঝতে পারছিলো ঈশিকা ভীষন রাগ করেছে আর রাগের কারণ টাও তার কাছে স্পষ্ট। এরপর রিমি কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলো। তারপর ঈশিকাকে খাইয়ে দুষ্টুমি করে গালে মাখিয়ে দিতে গেলে ভুলবশত ঈশিকার শাড়িতে খানিকটা কেক পরে যায়। সেটা পরিষ্কার করতে ঈশিকা ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।

শাড়িতে লেগে থাকা কেক পরিষ্কার করে টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে আসতে নিলে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে যায় ঈশিকার। মাথা নিচু করে হাটার কারণে দেখতে পায়নি সামনের ব্যাক্তিকে। চকিতে ধাক্কা লাগা ব্যক্তিটির দিকে তাকালো ঈশিকা। দেখলো আর কেউ না আমান দাঁড়িয়ে তার সামনে। একদম খুব কাছে। মৃদু হাসি মুখ করে পকেটে হাত দিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশিকা অল্প সময় আমানের দিকে তাকিয়ে থেকে ফের মুখ কঠিন করে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আমান পেছন থেকে তার হাত ধরে ফেলে। ঈশিকা ভেবেছিলো কথা বলবে না আমানের সাথে। কিন্তু হাত মোচড়ামুচড়ি করলেও আমান হাত ছাড়ছিলো না। শেষ মেশ বাধ্য হয়েই পেছনে না তাকিয়েই ঈশিকা বললো,
—–” হাত ছাড়ুন…”
আমান অমনি হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে ঈশিকাকে আবার নিজের কাছে নিয়ে এলো। কোমড় জড়িয়ে ধরলো ঈশিকার। ঈশিকা আমানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফের চোখ সরিয়ে নিলো। আমান হেসে বললো,
—-” রাগ করেছো আমার ওপর?”
ঈশিকা আমানের কথায় সরু চোখে তার দিকে বললো,
—-” রাগ? রাগ করবো কেনো? আমি কারো ওপর রাগ করিনি। আর কি এমন করেছেন যে রাগ করবো? তাছাড়া আমি আপনার কিছু হই নাকি যে আপনার ওপর রাগ করার রাইট থাকবে আমার।”
আমান ফের হেসে ঈশিকার কোমড় ছেড়ে দিয়ে গালে দুই হাত দিয়ে বললো,
—-” সরি সুইটহার্ট… তোমার ফ্রেন্ডের বার্থডের ইনভাইটেশন আমি সেদিনি পেয়েছিলাম। তাই দ্রুত কাজ সেরে আজ বিকেলেই দেশে চলে এসেছি । জাস্ট তোমাকে সারপ্রাইজ দিতেই এ দু’দিন যোগাযোগ করিনি। আর তাছাড়াও তোমাকেও একটু আমাকে মিস করার ফিলিংস টা বোঝালাম। যেমন আমি বুঝি প্রতিনিয়ত।”
ঈশিকা মনে মনে বললো, “হুহ! খুব মহান করেছে। একেবারে উদ্ধার করেছে আমাকে।” কিন্তু মুখে অভিমানী কন্ঠে বললো,
—-” আমি কারো কাছে কোনো প্রকার এক্সকিউজ শুনতে চাইনি। আর যে যা খুশি করুক। তাতে আমার কি? আমি কাউকে মিস টিস করিনি একদম।”
আমান এবার ঈশিকার গাল ছেড়ে শব্দ করে হেসে ফেললো। তারপর বললো,
—-” তাই? তবে আমি একটা জিনিস খুব মিস করেছি। আর
আমার এখন এটা চাই ই চাই।”
বলেই আমান ঈশিকার ঠোঁটের দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। ঈশিকা বড়বড় চোখ করে আমানের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট ছুইছুই ঠিক তখনই কেউ একজন ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। ঈশিকা আর আমান চমকে গেলো। তারপর ঈশিকা তড়িঘড়ি করে চলে আসলো সেখান থেকে।

ঈশিকা আসতেই শোয়েব বললো,
—-” ঈশি তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।”
—-” হ্যাঁ বল।”
—-” এখানে না। বাইরে চল একটু।”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে বললো,
—-” এখানে কি সমস্যা? এখানেই বল।”
—-” এখানে অনেক আওয়াজ প্লিজ বাইরে চল।”
ঈশিকা এদিক ওদিক তাকিয়ে আমানকে না দেখে বললো,
—-” ঠিক আছে চল।”

বাইরে গিয়ে গার্ডেন এ হাটতে হাটতে ঈশিকা বললো,
—-” বল কি বলবি?”
শোয়েব আমতা আমতা করে বললো,
—-” না মানে…কিভাবে যে বলি…ভয় লাগছে।”
ঈশিকা হাটা থামিয়ে অবাক হয়ে বললো,
—–” আমাকে কিছু বলতে তোর ভয় লাগছে? লাইক সিরিয়াসলি!”
—–” না মানে…কোনোদিন তো কাউকে বলিনি তো। এই প্রথম তাই আর কি…”
ঈশিকা ভ্রু কুচকে হেসে বললো,
—-” তাই নাকি? আচ্ছা এখন একটু সাহস করে বলে ফেল।”
শোয়েব আচমকা ঈশিকার ডান হাতটা দুই হাত দিয়ে ধরে ফেললো। ঈশিকা এতে খুবই অবাক হয়ে গেলো। তারপর শোয়েব ঈশিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আমি তোর কাছে সেসময় বলেছিলাম না সময় হলে আমি আমার গিফট চেয়ে নেবো? আমার মনে হয় এর থেকে উপযুক্ত সময় আর হতে পারে না। ”
তারপর একটা দম নিয়ে শোয়েব বললো,
—-” ঈশি…আমি তোকে….

—-” ঈশিকা…
শোয়েবের কথায় বাধা দিয়ে কেউ একজন ঈশিকাকে ডেকে উঠলো। ঈশিকা আর শোয়েব দুজনেই পাশ ফিরে তাকালো। দেখলো আমান দাঁড়িয়ে আছে। হাত শক্ত মুঠো করে। তখনও শোয়েব ঈশিকার হাত ধরে ছিলো। আমান বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো ঈশিকার দিকে। ঈশিকা তো আমানের চেহারা দেখে ভয়ে প্রায় শেষ। এদিকে শোয়েবও হাত ছাড়ছিলোনা। আমানই এসে শোয়েবকে কঠিন গলায় বললো,
—-” ওর হাতটা ছাড়ো।”
আমানকে দেখে শোয়েব ঈশিকার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে জোর গলায় বললো,
—–” কেনো? আপনার কি প্রবলেম তাতে?”
আমান এবার রাগে শোয়েবের হাত ধরে ঈশিকার হাত টা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো। তারপর ঈশিকার হাত ধরে শোয়েবের দিকে কঠিন ভাবে তাকিয়ে তর্জনী উঁচু করে বললো,
—-” ফারদার…আমি যেনো তোমাকে ঈশিকার আশে পাশে না দেখি। নইলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। মাইন্ড ইট!”
শোয়েবও জোর গলায় বললো,
—–” কি করবেন আপনি আমার? আর ঈশিকা আপনার কে যে এতো অধিকার দেখাচ্ছেন? ও তো বলেইছে ও আপনাকে ভালোবাসে না। ওর হাত ছাড়ুন।”
আমান এবার হেসে দিয়ে বললো,
—–” এই আমান আহমেদ তোমার ঠিক কি কি করতে পারে তা তোমার ধারনার বাহিরে। আর ও আমাকে ভালোবাসে কি বাসেনা সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আর কি বলছিলে? কিসের অধিকার? সেটা ওর কাছ থেকেই শুনে নিয়ো যে ওর ওপর আমার কিসের অধিকার।”
বলেই ঈশিকার হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে গেলো আমান। শোয়েব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের চলে যাওয়ার দিকে। আর ভাবছে কোন অধিকারের জোরে আমান এই কথাগুলো বলে গেলো। তবে কি ঈশিকাও আমানকে ভালোবাসে!”

আমান শক্ত করে ধরায় ঈশিকা হাতে ব্যাথা পাচ্ছে সাথে আমানের রাগের পরিমাণও বুঝতে পারছে। তাই কিছু বলারও সাহস পাচ্ছে না।
ঈশিকা কিছু একটা বলতে যাবে তখনই গাড়ির ডোর খুলে আমান ঈশিকাকে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে ফুল স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিলো। একবারো ঈশিকার দিকে তাকাচ্ছে আমান। শক্ত চোখ মুখে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। ঈশিকা কিছুক্ষণ পর কিছুটা সাহস করেই বলে ফেললো,
—–” আপনি এতো রাগ করছেন কেনো? বিশ্বাস করুন সেদিন ও আমার কথায় আপনাকে মিথ্যে বলেছিলো। সত্যি ও শুধু আমার বন্ধু। এর বেশি কিছুই না।”

আমান এবার হঠাৎ জোরে ব্রেক করে গাড়ি থামালো। তারপর ঈশিকাকে এক টানে নিজের কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। ঈশিকা এবারও কিছু বলার সাহস পেলো না। কিছুক্ষন পর হুট করেই আমান ঈশিকাকে ছেড়ে দূরে সরিয়ে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। আমানের এমন ব্যাবহারে ঈশিকার চোখে জল এসে গেলো।

কিছু সময় পর সিটে মাথা এলানো অবস্থাতেই আমান শান্ত গলায় বললো,
—-” আজকেই বাড়িতে গিয়ে তোমার বাবাকে বলবে আমাকে তুমি বিয়ে করতে চাও।”
ঈশিকা আমানের দিকে তাকালো। আমান আবার বললো,
—–” আমি চাই শরীয়ত মতে দুই পরিবারের উপস্থিতি এবং সম্মতিতে আমাদের বিয়েটা হোক।”
ঈশিকা এবারো কিছু বললো না। আমান চোখ খুলে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” সেদিন তুমি যতই মিথ্যে কাহিনি সাজিয়ে আমার সামনে বলো না কেনো। সেদিন আমি শোয়েবের চোখে তোমার জন্য ওর সত্যি কারের ভালোবাসা দেখেছিলাম৷ তোমাকে যখন ও আমার সামনে ভালোবাসার কথা গুলো বলছিলো তখনই ওর মুখ, কথার ধরন দেখে বুঝেছিলাম ওগুলো ওর মনের কথা। তোমার প্রতি ওর ট্রু ফিলিংস।”
ঈশিকা অবাক হয়ে বললো,
—-” কি বলছেন এগুলো আপনি! ও তো শুধুই আমার বন্ধু। তার বেশি কিছুই না। ওকে কোনোদিনও আমি সেভাবে দেখিনি।”
—-” তুমি না দেখলেও ও দেখেছে। আর তুমি বোকা বলে বুঝতে পারো নি। যা আমি সেদিনি বুঝেছিলাম। আর আজকেও তখন ও তোমাকে সরাসরি ওর মনের কথা গুলো বলতে চেয়েছিলো।”

তারপর ঈশিকার গালে এক হাত রেখে আমান আবার বললো,
—-” তোমাকে আমি হারাতে চাই না ঈশু। কোনোভাবেই না। এমন হলে মরে যাবো আমি সত্যি মরে যাবো।”
ঈশিকা এবার কান্না কন্ঠে আমানের মুখে হাত দিয়ে বললো,
—-” এমন কথা বলবেন না প্লিজ! আমি সত্যি বুঝতে পারিনি শোয়েব আমার সম্পর্কে এমন কিছু ভাবে। তাহলে আমি অনেক আগেই ওর সাথে কথা বলে ক্লিয়ার হয়ে যেতাম।”

আমান এবার ঈশিকার হাতের তালুতে চুমু খেয়ে এক টানে ঈশিকাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। কেউ আর কিছু বললো না। এভাবে চুপচাপ থেকে বেশকিছুক্ষন পর ঈশিকাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রাইভ করে ঈশিকাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো ঈশিকাকে।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে