Adorable Love পর্ব : ০৬

0
4398

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৬
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
ঈশিকা কিচেন কেবিনেটের ওপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে আপেলে কামড় বসাচ্ছে। আর আমান ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।সকাল থেকেই মেয়েটা আমানের পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে। ঘরে একা রেখে আমান কিচেনে আসতে চাইলে জোর করেই কিচেনে এসেছে। অবশ্য কারণখানা আমান যদিও বুঝেছে কিন্তু কিছু বলছে না। কালকের ঘটনা শুনলে ভারি লজ্জা পাবে। হয়তো বিশ্বাস ই করবে না…উলটে হয়তো তাকেই মিথ্যাবাদী বানিয়ে দেবে। যে মেয়ে!!

ঈশিকা আপেল খেতে খেতে আড়চোখে আমানকে দেখছে।
আমান তা খেয়াল করে ডিম ভাজতে ভাজতে বললো,
—-” কি দেখছো হুম?”
—-” দেখছি না…ভাবছি।”
—-” কি?” ঈশিকার দিকে তাকিয়ে।
—-” এই যে…আপনি বিজনেসম্যান না হয়ে বাবুর্চি হলে আপনাকে বেশ মানাতো।” বলেই হুহু করে হেসে উঠলো ঈশিকা।

আমান হা হয়ে তাকিয়ে আছে ঈশিকার দিকে। কে বলবে এই মেয়ে কাল রাতে অমন খারাপ স্বপ্ন দেখে কেঁপে ঝুপে অস্থির হয়েছে। অথচ এখন দিব্যি বিচ্ছুপনা করছে। মাথার ভেতর খালি বিটলেমি বুদ্ধি গিরগির করে।

—-” ঈশু…শেফ বললেও শুনতে ভালো লাগতো। কিন্তু বাবুর্চি! কেমন শোনায়! আর তোমার ভাগ্য কতো ভালো একবার ভেবে দেখেছো? তোমার বর তোমাকে রেধে খাওয়াচ্ছে! যেটা সব মেয়েরই এক্সপেক্টেশন। ”
—-” হুহ! ভালো হয়েছে…আর আপনার সাথে যা মানাবে তাই তো বলবো নাকি?” বলেই আবার হাসতে লাগলো।

আমান ভেবেছিলো ঈশিকাকে আর ভয় দেখবো না। কিন্তু এর দস্যিপনা কমাতে হবে। খালি তাকে হেনস্তা করা? ভালোবাসে বলে কি গোটা মাথা বেচে দেবে নাকি? মনে মনে বললো দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।

—-” কাল রাতে তো বেশ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছিলে। খবর জানো কি? তারা কিন্তু এসেছিলো তোমাকে নিতে।” ভ্রু নাচিয়ে বললো আমান।
—-” কারা?” আপেল খেতে খেতে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো ঈশিকা।
—” ওইযে…যারা কথা না শুনলে ঘাড় মটকে দেয়।”

ইশিকার চাবানো বন্ধ হয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে বললো,
—-” এএইই…এতো মিথ্যা বলেন কেন আপনি? কই আমিতো দেখলাম না। ”
—-” আরে মিথ্যা বলবো কেনো? সত্যি এসেছিলো। চুপিচুপি দেখেছি আমি। আর তুমি দেখবে কিভাবে? যে হারে ঘুমাচ্ছিলে! তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে মনে হয়। কিন্তু আমাকে দেখে আর সাহস পায়নি নেওয়ার। আমাকে তো কাছে থাকতেই দিচ্ছিলে না।এবার দেখলেতো আমার জন্যই বেঁচে গেলে।”

ঈশিকা কিছু বলছে না। চোখ মুখ কুচকে বার বার ঢোক গিলছে। আর আমান বেশ মজা পাচ্ছে। আমান বললো,
—” কি হলো চুপ কেনো? ভয় পেলে নাকি?”
—-” আব আব..না তো আমি ভয় পাবো কেনো? এই ঈশিকা কাউকে ভয় পায় না বুঝেছেন?” ভাব নিয়ে।
—-” ওরেব্বাস! তাই নাকি? বেশ বেশ! তবে আমার কিন্তু একটু ভয় ই লাগছিলো। একেকটার যে চেহারা!!” বলে প্লেটে খাবার নিয়ে ঈশিকার মুখের সামনে ধরলো।

—-” কি হলো নাও।”
—-” আমার না এখানে একদম ভালোলাগছে না। বাড়ি যাবো। প্লিজ নিয়ে চলুন না।” কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো ঈশিকা।
—-” আচ্ছা কাল….
—-” আজকেই…প্রমিস আপনার সব কথা শুনবো। তাও আজকেই প্লিজ বাড়ি নিয়ে চলুন প্লিজ!”

ঈশিকার মুখখানা দেখে আমানের খুব মায়া হলো। বুঝলো এখানে ঈশিকা কম্ফোর্ট ফিল করছে না। হেসে বললো,
—-” আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে। আজকেই নিয়ে যাবো। এখন খাও।”
ঈশিকা মুখে হাসি টেনে খাবার মুখে নিলো। আমান তো শুধু ঈশিকাকে ওর সাথে ইজি হওয়ার জন্য এ দু’দিন এখানে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে মেয়েটার ভয়ার্ত চেহারা দেখতে বেশ লাগে তার। কেমন চোখ বড় বড় করে ঢোক গেলে। দেখলেই চটকে খেয়ে ফেলতে মন চায়। তাইতো সে ভয় দেখিয়ে মজা পায়। তবে যদি জানে মিথ্যে মিথ্যে ভয় দেখিয়েছে তাহলে কি যে করবে!! নাকের ডগায় যে রাগ!!!
.
.
.
আমান ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর ঈশিকাকে দেখছে। সিটে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আচ্ছা সব মেয়েকেই কি ঘুমন্ত অবস্থায় এতো মিষ্টি লাগে? এই যে এখন যেমন তার বাচ্চা বউটাকে লাগছে। হঠাৎ ই আমানের মনে পরে গেলো ঈশিকাকে প্রথম দেখার কথা। ডুব দিলো অতীতে….
.
.
.
.
সেদিন কোম্পানির এক নিউ ক্লায়েন্ট নাহিদ খানের ছেলের বিয়ের ইনভাইটেশন এ গিয়েছিলো সে। আরমান আহমেদ ছেলেকে বিজনেসের সব বুঝিয়ে দিয়ে সকল কার্য থেকে অবসর নিয়েছেন বিধায় আমানকেই একা হাতে সবটা সামলাতে হয়। সেখানে গিয়ে সবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পর একটা ফোন কল আসলে ড্রিংক হাতে পুল সাইডের দিকে চলে যায় আমান। ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ ই চোখ চলে যায় বা দিকে। একটু দূরে একটা মেয়ে কয়েকটা পিচ্চিকে নিয়ে ফানুশ ওড়াচ্ছে। পরনে বেবি পিংক আর গোল্ডেন কম্বিনেশন এর লেহেঙ্গা। ছোট চুলগুলো মাঝখানে সিঁথী করে ছাড়া। সাথে মিষ্টি সাজ। মেয়েটা কিছু একটা বলে খিলখিলয়ে গা দুলিয়ে হাসছে আর পিচ্চিগুলোর হাত ধরিয়ে ফানুশগুলো এক এক করে ওড়াচ্ছে। হাসির সাথে তাল মিলিয়ে চুল গায়ের গয়না গুলোও দুলছে। আমান এক ধ্যান এ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার গতিবিধি কেনো যেনো খুব আকর্ষিত আর মুগ্ধ করছিলো তাকে। হঠাৎ ই ধ্যান ভাঙে ফোন কলের কারো কন্ঠের আওয়াজে। তারপর চোখ ফিরিয়ে অন্য দিক ঘুরে কথা সেরে কল কেটে আবার তাকাতে দেখে মেয়েটা সেখানে নেই। আশেপাশে তাকিয়েও খুঁজে পেলো না।

তারপর মৃদু হেসে চলে আসে গার্ডেন সাইডে। কিছুক্ষন পরে হঠাৎ এক মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠলো….
—-“এক্সকিউজ মি!”
আমান ঘুরে তাকিয়ে দেখলো ফানুশ ওড়াচ্ছিল সেই মেয়েটা। এবার খুব কাছ থেকে মেয়েটাকে দেখতে পেলো আমান। ফর্সা গোলগাল চেহারার সাথে হাল্কা বোঁচা নাক, চকচকে চোখ জোড়ার সাথে মুখে মিষ্টি হাসি। চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা ভাব। সারামুখে যেনো এক অদ্ভুদ স্নিগ্ধতা ছেয়ে আছে।

আমান স্বাভাবিক ভাবে বললো,
—-” ইয়েস?”
—-” ইফ ইউ ডোন্ট মাইড… আমি কি আপনার সাথে একটা সেল্ফি তুলতে পারি?” হাসি হাসি মুখ করে।
—-” আমার সাথে?”
মেয়েটা পেছনে ঘুরে সামনে তাকিয়ে বললো,
—-” অ্যাকচুয়েলি…এটা একটা হার জিতের ব্যাপার। তাই প্লিজ না করবেন না। জাস্ট একটা সেল্ফি হলেই চলবে।”
আমান ভ্রু কুচকে বললো,
—-” মানে? ঠিক বুঝলাম না।”
এবার মাথাটা নিচু করে ফিসফিস বললো,
—-” মানে হলো ওইযে আমার বন্ধুরা। ওরা আমার সাথে বাজি ধরেছে। যদি আপনার সাথে সেল্ফি তুলতে পারি তাহলে কালকে ওরা আমাকে ট্রিট দেবে। আর না পারলে ওই খাদক গুলোকে আমার টাকায় খাওয়াতে হবে।”

আমান দেখলো একটু দূরে কয়েকটা ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আবার বললো,
—-” তাই প্লিজ আমার টাকা গুলো রক্ষা করে দিন। প্লিজ!” অনুরোধের সুরে।

মেয়েটার বাচ্চামি কথার ভাব দেখে আমানের হাসি পেয়ে গেলো। কোনোমতে হাসি আটকিয়ে বললো,
—-” ওকে…নিন।”
মেয়েটা জয়ের হাসি হেসে সেল্ফি নিলো। তারপর বললো,
—-” থ্যাংক ইউ…বাই দ্য ওয়ে আমি ঈশিকা…ঈশিকা চৌধুরী।”
—-” আমান আহমেদ।”
—-” আপনি নাহিদ আংকেলের…..? ”
—-” বিজনেস ক্লায়েন্ট ।”
—-” ওহ আচ্ছা! আমি নোভা মানে নাহিদ আংকেলের ভাতিজির ফ্রেন্ড।”
—-” ওহ! নাইস টু মিট ইউ।” হাল্কা হেসে।
—-” সেইম হেয়ার…তো এখন আসি? সেল্ফিটা দেখাতে হবে ওদের।” খুশিতে টগবগিয়ে বললো ঈশিকা।
—-” শিওর..।”

ঈশিকা প্রায় ছুটে চলে গেলো। আমান ঈশিকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে আনমনে হাসলো।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে