#Adorable_Love ?
পর্ব : ০২
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
পিটপিট করে চোখ মেললো
ঈশিকা। আধা চোখ মেলতেই আবার চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো। একেবারে কারেন্টের মতো চিলিক দিয়ে উঠছে মাথার ভেতর। তারপর ধীরে সুস্থে উঠে বসলো বিছানায়। জ্ঞানে ফেরার পর কয়েক সেকেন্ডে সময় লাগে বুঝতে যে কোথায় আছে সে। সকালের ঘটনার কথা মনে পরতেই রাগে মাথা দপদপ করে ওঠে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আমান কাউচে আধশোয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। জোর করে তুলে এনে এখন শান্তির ঘুম ঘুমানো হচ্ছে? ঈশিকা দাঁত কিরমির করে বিড়বিড় করে আমানকে কয়েকটা গালি দিলো৷ তখনকার কথা মনে পরতেই আপনা আপনি ঠোঁটে হাত চলে গেলো ঈশিকার। দেখলো ফুলে ব্যাথা হয়ে আছে।
—–” ইশ! কি হাল করেছে আমার ঠোঁটের…ব্যাটা খোক্কস একটা।”
দরজার দিক চোখ যেতেই দেখলো দরজা ভেজানো। লাগানো নেই। একবার দরজার দিকে আবার আমানের দিকে তাকালো। এরপর যেই নেমে পালানোর জন্য দৌড় দিতে যাবে ওমনি পায়ের ব্যাথায় আহ! করে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো।
শরীর ক্লান্ত লাগায় অর্ধেক কাজ কমপ্লিট করে কাউচেই ঘুমিয়ে পরেছিলো আমান। ঈশিকার গলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো তার। পাশ ফিরে দেখলো ঈশিকা ফ্লোরে পা ধরে ফুপিয়ে কাঁদছে। তড়িঘড়ি করে উঠে গেলো ঈশিকার দিকে। একেবারে চোখ ফুলে নাক গাল লাল হয়ে আছে।
——” ঈশু….কি হয়েছে? পায়ে ব্যাথা পেয়েছো? কোথায় দেখি।”
আমান ঈশিকার হাত সরিয়ে দেখলো ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল এর নখ বেকায়দাভাবে বেশ খানিকটা ফেটে কোনা দিয়ে রক্ত পরছে।
—–” ওহ গড! এই অবস্থা হলো কিভাবে?”
ঈশিকা কান্না বন্ধ করে কটমটিয়ে তাকালো আমানের দিকে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
—–” নিজে এই হাল করে এখন বলা হচ্ছে কিভাবে হলো?”
—–” মানে! আমি কি করলাম?”
—–” ওরকম অসুরের শক্তি নিয়ে যখন টেনে আনলেন। হোঁচট খেয়ে ইটের গুতোতেই তো এমন হয়েছে।” বলেই ফের পায়ে হাত দিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিকাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। আচমকা কোলে তোলায় হকচকিয়ে গেলো ঈশিকা। তারপর হাত পা ছুড়তে ছুড়তে বললো,
—–” নামান…নামান বলছি। একদম ধরবেন না আমাকে। পাজি লোক একটা।”
—–” আহ! ঈশু ছটফটানি বন্ধ করো…আবার…ঠিকাছে এই ফেলে দিলাম।” বলেই আমান ঈশিকাকে ফেলে দেওয়ার অ্যাক্টিং করলো।
ওমনি ঈশিকা আতঙ্ককিত গলায় “নাআ..!” বলে তাড়াতাড়ি করে আমানের গলা আঁকড়ে ধরলো দুই হাত দিয়ে। এটা দেখেই আমান মুচকি হাসি দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো ঈশিকাকে।
—-“চুপচাপ বসে থাকবে। নো পাকনামি।” আদেশের সুরে বললো আমান।
তারপর ফাস্ট এইড বক্স এনে দেখলো রক্ত পরা বন্ধ হয়েছে। পায়ে চাপ পরায় রক্ত বের হয়েছিলো। ক্ষত জায়গায় ডেটল পরতেই জ্বলে উঠলো পা। চাপা চিৎকার দিয়ে ঈশিকা পা সরিয়ে নিলেই আমান বললো,
—-” উম…ওয়াশ না করলে ইনফেকশন হয়ে যাবে তো। জ্বলছে? একটু সহ্য করো লক্ষী… দেখি…।” বলেই আবার ঈশিকার পা কাছে টেনে নিলো আমান।
ঈশিকা দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বললো, “আমার নখ এর ইট হত্যা করিয়ে এখন আবার দরদ দেখানো হচ্ছে? বজ্জাত লোক কোথাকার। আহারে…আমার সাধের নখটা!”
—-” এতো বড় নখ রেখেছো কেনো পায়ে? ভুতের মতো। এতো বড় দেখেই তো হোঁচট খেলে।” ঈশিকার দিকে না তাকিয়ে ব্যান্ডেজ করতে করতে বললো আমান।
ব্যাটা শয়তান… নিজে রাগ দেখিয়ে টানা হেঁচড়া করে নখ ফাটিয়ে এখন আবার আমার দোষ দিচ্ছে?! আবার বলে কিনা ভুতের মতো নখ আমার?!
—-” কিহ! আমার ভুতের মতো নখ?”
—-” হ্যাঁ তো। একদম ভুতের…উম না না ভুত্নীর মতো নখ। আর এতো বড় নখ রাখবে না পায়ে। পরিমাণ মতো ছোট করে রাখবে। বা পায়ের টাও কেটে ফেলবে।”
আমানের কথা শুনে রাগে মাথার রগ ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে ঈশিকার। তার এতো শখের নখকে আবার বলে কিনা ভুত্নীর মতো? এতোবড় অপমান তার নখের!!
ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে ঈশিকা গাল ফুলিয়ে বললো,
—-“আমি বাড়ি যাবো।”
—-” তুমি কি রাস্তার ফুটপাতে আছো নাকি? বাড়ির ভেতরেই তো আছো।” উঠে গিয়ে এইড বক্স টেবিলে রাখতে রাখতে বললো আমান।
—-” আমি আমার বাড়ি যাবো। মানে আমার বাবার বাড়ি।”
—-“হুম যাবে তো। তবে এখন না…।” কাছে এসে বসে বললো আমান।
—-” কেনো!!”
—-” কারণ তুমি এখন তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড নোভাদের বাসায় আছো এবং আগামী দু’দিন সেখানেই থাকবে। এরকমই বলা হয়েছে তোমার বাড়িতে।”
—-” কে বলেছে এগুলো!!?”
—-” তোমার ফ্রেন্ড নোভাই বলেছে। মানে আমি বলিয়েছি।” বলে দাঁত বের করে হাসলো আমান।
ঈশিকা যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি দরজায় টোকা পরলো।
—-” সাহাব…
কেয়ারটেকার বাহাদুর এর গলা। আমান বললো,
—-” ভেতরে এসো।”
—– ” সাহাব…ও খানা লিয়ে এচেছি।”
—-“হ্যাঁ…এখানে রেখে যাও।”
বাহাদুর খাবার আর জল দিয়ে চলে গেলো। আমান খাবার খুলে ঈশিকার মুখের সামনে ধরে বললো,
—-” নাও হা করো।”
—-“আমি খাবো না।”
—-“কেনো? আমার কিন্তু ভীষন খিদে পেয়েছে।”
—-” তো আপনি খান..কে না করেছে? আমার খিদে পায়নি।”
—-” দুপুর আড়াইটার কাছাকাছি বাজে। সকালে বাসা থেকে যে কিছু খেয়ে বের হয়নি তা নিশ্চিত। ওই টক জলের সাথে রাস্তার ধুলোবালি মেশানো ফুচকাই পেটে পরেছে শুধু। খিদে পায়না কিভাবে?”
—-” আগে বলুন আপনি কেনো মিথ্যা কথা বলালেন বাড়িতে। আর আমি এখানে থাকবো না। বাড়ি চলে যাবো।”
—-” আমিতো এখন নিয়ে যাবোনা…তো কিভাবে যাবে।”
—-” একাই যাবো।”
—-” এই পা নিয়ে? আর রাস্তা চেনো তুমি?”
ঈশিকা মনে মনে ভাবলো, আসলেই তো এই পা নিয়ে কিভাবে যাবে সে। আর তাছাড়া রাস্তাও তো চেনে না। আসার সময় গাড়ির থেকে বুঝেছে এটা শহরের থেকে দূরে। জনবসতি কম এলাকার। কিছুই তো চেনে না আশেপাশের।
তবু দোমে না গিয়ে ভাব নিয়ে বললো,
—-” চিনিনা তো কি হয়েছে? চিনে নেবো..এই ঈশিকা পারেনা এমন কোনো কাজ নেই বুঝলেন?”
—-” ওরেব্বাবা!! তাই নাকি? আচ্ছা ঠিকাছে যেয়ো। শুনেছি এই এলাকায় মেয়েধরা বের হয়েছে। ফর্সা সুন্দর মেয়ে দেখলেই নাকি মুখ চেপে ধরে বস্তার ভরে নিয়ে যায়। আমাকে তো তোমার ভালোলাগে না সহ্যও হয়না। আমার কাছে থাকতেও আপত্তি। বেশ হলো…তাদের কাছেই থেকো।”
—-” ক্ককি! ছেলেধরা?!!”
—-” আরে না…মেয়েধরা। শুধু মেয়েদের ধরে তো। ছোট চুলের সুন্দর সুন্দর বাচ্চা মেয়ে…একদম ঈশুর মতো।”
এসব শুনে বড় এক ঢোক গিললো ঈশিকা। ছোটবেলা থেকেই এই ছেলেধরাদের ভীষন ভয় পায় সে। তাইতো ছোটবেলায় একা একা বের হতো না বাড়ি থেকে। মা বলতো এরা ধরে নিয়ে নাকি চোখ কিডনি বের করে বেঁচে দেয়। আর এখানে তো একেবারে মেয়েধরা!
আমান ওর চোখ মুখ দেখে মিটিমিটি হাসছে আর মজা নিচ্ছে। বেশ ভয় পেয়েছে মেয়েটা। কিন্তু ঈশিকা ভয় প্রকাশ না করে জোর গলায় বললো,
—-” আপনি মিথ্যে বলছেন। আমাকে ভয় দেখানোর ধান্দা সব।”
—-” তাই নাকি? তোমার আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? বিশ্বাস না হলে কেয়ারটেকার বাহাদুরের কাছে শোনো। ও তো এখানকারই লোক…সব জানে। তাছাড়া টিভির নিউজেও তো এই ঘটনা রটেছিলো দেখো নি?” মুখ সিরিয়াস ভাব করে বললো আমান।
এবার বেশ ভালো মতোই ভয় পেলো ঈশিকা। মিডিয়াতে যেহেতু দেখানো হয়েছে তাহলে নিশ্চয়ই সত্যি ঘটনা।
—-” কি এখনো যাবার ইচ্ছা আছে নাকি একা একা?”
উত্তরে ঈশিকা অসহায় মুখ করে চুপ রইলো। ভেবেছিলো পালাবে কিন্তু এবার তো সে কোনোমতেই একা একা বেরুবার সাহস পাবেনা। আর এই ছেলে যেমন…হাজার বললেও দু’দিন এর আগে জিবনেও বাড়ি দিয়ে আসবে না।
—-” আচ্ছা থাক বলতে হবে না। বুঝেছি আমি। নাও হা করো। খেয়ে আবার মেডিসিন নিতে হবে। নইলে কিন্তু পা এর ব্যাথা কমবে না। আর খালি পেটে মেডিসিন নিয়ে কোনো লাভ নেই।”
—-” না কমলো…খাবো না আমি। বলেছি খিদে নেই আমার।”
—-” শিওর তো?”
—-” হু খুব শিওর।”
—- ” ওকে না খেলে…আমার খুব খিদে তো পেয়েছে বাবা! আমিই খাই।”
মুখে বললেও বেশ খিদে পেয়েছে তা ঈশিকা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু সে আমানের আনা খাবার খাবেনা…কিছুতেই খাবেনা।
বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে আমান। আর ঈশিকা হা করে তার খাওয়া দেখছে। আমানের খাওয়া দেখে ওর খিদে যেনো আরো বেড়ে গেলো। এবার খিদেয় প্রান যায় যায় অবস্থা। মনে মনে বললো,
“ইশ! কি নিষ্ঠুর লোকটা। এই নাকি তার ভালোবাসা? বলেছে খাবে না তো কি? জোর করে কি খাইয়ে দিতে পারতো না? এমনি তো সব কিছুতে জোর খাটাতে পারে খুব৷ ভালোবাসে না কচু! আসলেই ব্যাটা শয়তান। শয়তানের খারা জিলকি হুহ!”
—-” কি? কি দেখো? এবার কি খিদে পেয়েছে?” খাবার চিবাতে চিবাতে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আমান।
ঈশিকা চোখ নামিয়ে নরম গলায় আস্তে করে বললো,
—-“না।”
আমান মুচকি হেসে ফের ঈশিকার সামনে খাবার ধরলে ঈশিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—-” কোনো কথা না।”
এবার আর ঈশিকা না করলো না। চুপচাপ খাবার মুখে নিলো।
আমান হেসে মনে মনে বললো,
“পাগলি একটা!”
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর