_Gangstar পর্বঃ02
লেখা_রওনাক_ইফাত_জিনিয়া
.
.
.
.
একটা ঘটনা আমার জীবনটাকে শেষ করে দিল।এতক্ষনে নিশ্চয় আমার নিখোঁজ হওয়ার খবরটা চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।এমনিতেই একজনের জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়েটা করতে হচ্ছিল আর এখনতো সেই বিয়েটাও হয়ত ভেঙ্গে গিয়েছে কিন্তু কে করল আমার সাথে এমন?যার এসব করার একটা সম্ভাবনা ছিল সে তো জানেইনা আজ আমার বিয়ে হতে যাচ্ছিল তবে আমার সাথে এমন করে কার লাভ?কেন সে আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিল?কি হতে যাচ্ছে এখন আমার সাথে?না।মাথায় এতগুলো প্রশ্ন অথচ একটার উত্তরও খুঁজে পাচ্ছিনা।আমাকে যেভাবেই হোক আজ রাতের মধ্যেই বাসায় যেতে হবে নয়ত অনেককিছুই শেষ হয়ে যাবে।যেভাবেই হোক আমি আমার জন্য বাবা-মাকে অসম্মানিত হতে দিবনা।কিন্তু কিভাবে আমি এখান থেকে বের হব?কিছুই মাথায় আসছেনা।ফ্লোরে বসে এসব ভাবছিলাম আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।আমি যে এই রুম থেকে বের হব তার কোন উপায়ও নেই কারন দরজাটা বাহির থেকে বন্ধ ছিল।
হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ হল।কেউ একজন ভিতরে প্রবেশ করল।আমি পিছনে তাকাতেই যাকে দেখলাম সত্যি আমি তাকে দেখার জন্য একদম তৈরী ছিলামনা আর সে এখানে কিভাবে?
আমিঃ আপনি?আপনি এখানে?তারমানে এসবকিছু আপনার কাজ?আপনিই আমাকে কিডন্যাপ করিয়েছেন?এতকিছুর পরও আপনার স্বাদ মিটেনি এখন আমার জীবনটা একেবারে শেষ করতে উঠে পরে লেগেছেন?কেন করলেন এসব কি ক্ষতি করেছিলাম আমি?কেন আমার জীবনটা শেষ করে দিলেন?
রাতুলঃ হ্যাঁ আমি।সত্যি আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইনি।তোমাকে আর তোমার পরিবারকে তো অনেক বুঝিয়েছিলাম কিন্তু কোন কাজ হলনা দেখে বাধ্য হয়ে আমাকে একাজ করতে হল।তবে তুমি চিন্তা করনা তোমার কোন ক্ষতি হবেনা এখানে তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পার।
আমিঃ ক্ষতি করবেননা?আর কি বাকি আছে ক্ষতি করার বলতে পারেন?আপনার জন্য এতক্ষনে হয়ত আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে আর বাবা-মা কেও নিশ্চয় এতক্ষনে অনেক অপমানের স্বীকার হতে হয়েছে।
(কথাগুলো বলছিলাম আর চোখ থেকে পানি পড়েই যাচ্ছিল)
রাতুলঃ নীলা দয়াকরে তুমি কেঁদোনা।খুব কষ্ট হয় আমার তোমাকে কাঁদতে দেখলে।বিশ্বাস কর আমি শুধু চেয়েছি তোমার বিয়েটা যেন ভেঙ্গে যায় আর তুমি আমি ছাড়া অন্যকারো হয়ে না যাও।এখন তুমি তোমার মত পড়াশুনা কর পরে আমাদের বিয়ে হবে আর আমি তোমাকে একদম বিরক্ত করবনা।তুমি যা চাও তাই আমি করব শুধু আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ের কথা ভেবোনা।তুমি শুধু আমার নীলা।আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
আমিঃ (চোখের পানি মুছে বললাম)
আপনি আমাকে খুব ভালবাসেন তাই না?
রাতুলঃ হুম নিজের থেকেও বেশি।তুমি চিন্তা করোনা কালকেই আমি তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসব।সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি আগের মত আবার তোমার পড়াশুনা শুরু করবে তারপর তুমি আরো বড় হলে পরে আমাদের বিয়ে হবে।
আমিঃ আমার একটা উপকার করতে পারবেন?
রাতুলঃ শুধু একবার তুমি বলে দেখ।
আমিঃ আমি এখন বাবা-মার সামনে আমার এই মুখ দেখাতে পারবনা আর না পারব আমার জন্য তাদেরকে মানুষ যে কথা বলবে তা মেনে নিতে তাই সবথেকে ভাল আমাকে আপনি মেরে ফেলুন।আমি আমার এই জীবন আর চাইনা।আমি বাঁচতে চাইনা।দয়াকরে আমার এই উপকারটা করুন।
(আমি এতক্ষন দাড়িয়ে থাকলেও এখন ফ্লোরে বসে কাঁদছিলাম।আমাকে কাঁদতে দেখে রাতুল কাছে এল আমার গাল তার দুহাত দিয়ে ধরে চোখের পানি মুছিয়ে দিল)
রাতুলঃ এসব তুমি কি বলছ নীলা তোমার কিছু হলে আমিও যে শেষ হয়ে যাব তা কি তুমি জাননা?বলছিতো আমার শুধু এই বিয়েটা ভাঙ্গা উদ্দেশ্য ছিল যা পূরণ হয়েছে।কালই তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসব সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমিঃ আমি সত্যি বলছি দয়াকরে আমাকে মেরে ফেলুন।
(কথাগুলো বলছিলাম আর কাঁদছিলাম তখন রাতুল আমার আরো কাছে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল)
রাতুলঃ প্লিজ এভাবে কান্না করনা তোমার এই কান্না আমার একদম সহ্য হয়না।তোমার এই কান্না আমাকে উলট-পালট করে রেখে দেয় নীলা।
(রাতুল আমার মুখটা তার দুহাত দিয়ে ধরে তার মুখের একদম কাছে নিয়ে গিয়ে বলল)
রাতুলঃ আমার দিকে তাকাও নীলা।না এভাবে না একদম আমার চোখে চোখ রেখে তাকাও।হুম ঠিক এভাবে।আচ্ছা নীলা মানুষের চোখ নাকি কখন মিথ্যা বলেনা তবে কেন তুমি আমার চোখ দেখে বুঝতে পারনা আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি?যদি কখন ভাল করে আমার এই দুচোখ দেখতে তবে বুঝতে পারবে আমি তোমাকে তোমার বাবা-মা আর ভাইয়ের থেকে কোন অংশেই কম ভালবাসিনা।এই পর্যন্ত আমি যা কিছুই করেছি সব শুধু তোমাকে পাবার জন্য।
আমার চোখের দিকে এভাবে তাকিয়ে তোমার কেমন লাগছে তা আমি জানিনা তবে আমি তোমার প্রেমে আরও বেশিকরে মগ্ন হয়ে যাচ্ছি।
(আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম রাতুল আমার ঠোটে হাত দিয়ে বলল)
রাতুলঃ কিছু বলোনা নীলা আজ আমাকে বলতে দাও।তুমি জানো নীলা আমি কবে থেকেই তোমার এই চোখ দুটোর প্রেমে পড়েছি।তোমার চোখে অন্যরকম একটা মায়া আছে যা আমাকে তোমার প্রতি টানে আমি না চাইতেও বেশিকরে সে মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।আমি তোমা…
(বাক্যটা সম্পূর্ণ না করে হঠাৎই রাতুল আমার ঠোটে ওর ঠোট দুটো মিলিত করে।আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠল।জীবনে এই প্রথম কোন পুরুষ আমাকে এভাবে স্পর্শ করলো আর আমার এতটা কাছে আসল।শরীরে অন্যরকম এক অনুভূতির সৃষ্টি হল।জানিনা তা কি শিহরণ ছিল নাকি রাগের প্রভাব? আমি কি করব না করব তা ভেবে পাচ্ছিলামনা।আসলে এমনকিছু ঘটতে পারে তা আমি স্বপ্নেও হয়ত কখনও ভাবিনি।কিছুটা ঘোরে চলে গিয়েছিলাম।যখন ঘোর কাটল তখনও আমাদের চোট একত্রেই ছিল।আমি তাকে সরানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তার মাঝে সরার কোন লক্ষণই ছিলনা।মনে হচ্ছে সে নেশাগ্রস্থ তাই বাধ্য হয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে রাতুলকে সরিয়ে দিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম।বললাম)
আমিঃ ছি!আপনি এতটা নিচ আমি ভাবতে পারিনি।আপনি নাকি আমাকে ভালবাসেন এই আপনার ভালবাসা?ছি!এতটা জঘন্য আপনি আমি কল্পনাও করিনি।আমি কিভাবে…
(আরকিছু বলতে পারিনি কান্নার জন্য শুধু কাঁদছিলাম।রাতুলও কিছুটা ঘোরে ছিল তারপর উঠে দাঁড়াল আর আমার হাত ধরে বলল)
রাতুলঃ তুমি বিশ্বাস কর নীলা আমি এমন কিছু করতে চাইনি আসলে তোমার চোখে চোখ রেখে আমি নেশাগ্রস্থ হয়ে গেছিলাম।নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলাম।কি করছিলাম নিজেই বুঝতে পারিনি।দয়াকরে আমাকে বিশ্বাস করে আমাকে ক্ষমা করে দাও।আচ্ছা বলত কি করলে তুমি আমায় বিশ্বাস করবে?
আমিঃ বিশ্বাস?আপনি আমার হাত ছাড়ুন বলছি আর আমি আপনাকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করিনা।আপনার মত নিচু লোককে আমি কখনই বিশ্বাস করিনা।আরেকবার আমার গায়ে হাত দিলে আমি যে কি করব তা আমি নিজেই জানিনা এই বলে দিলাম।আপনি কিভাবে আমার সাথে এমন…
(আমি কাঁদছিলাম দেখে রাতুল আমার চোখের পানি মুছে দেয়ার জন্য আমার গালে হাত রাখতেই আমি তার হাতটা সরিয়ে দিলাম আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তারে চড় দেয়া শুরু করলাম।একটা নয় দুটা নয় আমি অনবরত তার দুগালে আমার দুহাত দিয়ে চড় দিচ্ছিলাম।সে আমার সামনেই বসা ইচ্ছা করলেই আমাকে আটকাতে পারত কিন্তু সে একবারও আমাকে আটকানোর চেষ্ঠা করলনা।কয়েকটা চড় দেয়ার পর আমি নিজেই ওর শার্টের কলার ধরে কেঁদে বললাম)
আমিঃ আমার কি দোষছিল কে করলেন আমার সাথে এমন?কেন আমার জীবনটা নষ্ট করলেন?কেন?
রাতুলঃ আমি তোমাকে ভালবাসি নীলা নিজের থেকেও বেশি।কিন্তু আমি এক স্বার্থপর প্রেমিক তাইতো তোমাকে নিজের করে পাবার জন্যে এতকিছু করেছি।কি করব বল?সবাইতো এক না।আমিও স্বার্থহীন হতে পারিনি আর না তোমাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারি তাইতো তোমাকে নিজের করার জন্য এসব করেছি।দয়াকরে একবার আমাকে বুঝার চেষ্টা কর,ঘৃণা নয় ভালবাসার চেষ্টা কর তবেই বুঝতে পারবে তুমি আমাকে যতটা খারাপ ভাবো আমি ততটাও খারাপনা।
আমিঃ আমি কখনই আপনাকে ভালবাসতে পারবনা।
রাতুলঃ ঠিক আছে ভালবাসতে না পার শুধু আমার পাশে থেকো কখনও আমার থেকে দূরে যেওনা।
(চলবে)
.
.
.
Rownak Ifat Xenia