Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতেশ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-৩৭+৩৮

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-৩৭+৩৮

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৭ (পর্দা ফাঁ*স)
প্রায় আধঘণ্টা পর আর্শি স্বাভাবিক হলে প্রথমেই শ্রাবণকে কল করে। মিসেস আশালতা মেয়ের চিন্তায় অস্থির। কী হয়েছে কিছুই জানেন না তিনি। এখন আবার শ্রাবণকে কল করতে দেখে আরও ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি শুধাচ্ছেন,
“কী হয়েছে, আমাকে সত্যি করে বলতো?”

আর্শি জবাব দিবে কী? শ্রাবণ নেটে নেই বলে কল রিসিভ হচ্ছে না। এতে তার মা*থায় চিন্তার পা*হাড় চ*ড়েছে। আর্শি তার মাকে বলে,
“পরে বলব। তুমি যাও প্লিজ। এখন আমি ওসব ব্যাখ্যা করার অবস্থা নেই। তুমি নাহয় আরুর থেকে জেনে নিও। প্লিজ মা।”

রিয়াজউদ্দীন নিজ স্ত্রীকে ইশারা করলেন উঠে আসতে। মিসেস আশালতা চিন্তিত হয়েই উঠে আসলেন। আর্শি বারবার লাগাতার শ্রাবণকে কল করে যাচ্ছে। আবার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। রাগে ফোন মেঝেতে আ*ছড়ে ফেলতে নিয়েও থেমে গেলো। ফের কল লাগালো।

ওদিকে শ্রাবণকে তার রুমমেট হসপিটালে নিয়ে এসেছে। বেশ কয়েকদিন যাবত শ্রাবণ খাওয়া-দাওয়ায় চরম অনিয়ম করছিল। তারউপর বিগত দুইদিন যাবত পানি ও কড়া কফি ছাড়া কিচ্ছুটি দাঁ*তে কা*টেনি। আজ সকালে শ্রাবণ পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা ও বমি করলে গ্রিণ তাকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। ডাক্তার বলেছেন, ফুড পয়*জনিং হয়েছে। এখন স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। গ্রিণ ভাবলো শ্রাবণের পরিবারের কাউকে তো জানানো দরকার। তাই সে শ্রাবণকে বলে কাউকে জানাতে। কিন্তু শ্রাবণ রাজি হচ্ছিলো না। অতঃপর গ্রিণ একপ্রকার জোড় করেই শ্রাবণকে দিয়ে ফোনের লক খুলিয়ে নেয়। তখনি পরপর ৩০+ কলের নোটিফিকেশন আসে “Brishti” লেখা আইডি থেকে। গ্রিণ অবাক হয়ে বলে,

“সাবন, বৃষ্টি ট্রাইড টু কন্টাক্ট ইউ। সি মেইড এবাউট থার্টি এটেম্প্টেস।

শ্রাবণ হকচকিয়ে তাকায়। গ্রিণের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে দেখে সত্যি আর্শি তাকে ত্রিশ বারের বেশি কল করেছে। সে দ্রুত কল ব্যাক করে। আর্শি ফোন হাতে নিয়ে পায়চারি করছিল আর মনে মনে দোয়া করছিল যেন শ্রাবণের খারাপ কিছু না হয়। আচমকা শ্রাবণের কল আসাতে তাড়াহুড়ো করে কল করতে গিয়ে কে*টে ফেলে। অতঃপর নিজের উপরই বিরক্তি প্রকাশ করে ফের কল করে। আর্মি ভিডিও কল দিয়েছিল, কিন্তু শ্রাবণ নিজের ক্যামেরা অফ করে কল রিসিভ করেছে। আর্শি উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন ছুঁ*ড়ে,

“আপনি ঠিক আছেন? কল ধরছিলেন না কেন? কোথায় আপনি? ক্যামেরা অন করুন, আমি দেখব আপনাকে।”

শ্রাবণ অবাক হয়। তবে আর্শি তাকে ভুল বুঝেনি? সে বলে,
“আমি ঠিক আছি। অফিসে আছি বলে কল রিসিভ করতে পারিনি।”

পাশে দাঁড়ানো গ্রিণ কয়েকটা শব্দ শুনে বুঝেছে শ্রাবণ কথা এড়াচ্ছে। গ্রিণ কিছু বলতে চাইলে শ্রাবণ ইশারায় মানা করে। মিউট করে বলে,
“প্লিজ ডোন্ট টেল হার। সি ইজ প্রেগন্যান্ট। ”

অতঃপর গ্রিণ চুপ করে যায়। এদিকে আর্শি শ্রাবণকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে শ্রাবণ হতভম্ব হয়ে যায়। এতো ষ*ড়য*ন্ত্র তাদের বিরুদ্ধে। মানুষ হিং*সার ও লো*ভের বশবর্তী হয়ে এতোটাও নিচে নামতে পারে! শ্রাবণ চোখ বুজে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। আমি কানাডার পু*লিশকে জানাব। সাথে ইরিনাকেও। শার্লক এতো জঘন্যতম কাজে তার উডবি ওয়াইফকে টেনেছে, এটা ইরিনার জানতে হবে। প্রমানগুলো আমাকে দাও।”

আর্শি তাই করলো। আর্শি ফের বলল,
“এসব শুরু হয়েছে আমার কারণেই। আমাকেই শেষ করতে হবে। নাহিদ যদি নিজে আমাকে দেখাতে চায়, আমি দেখব। নিজ চোখের সামনে তার নাটক দেখব। নিজে তাকে ইটালির পু*লিশে দিব। মান*সিক ভাবে বি*কার*গ্রস্ত এক লোক সে। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এসব করতে পারে না।”

“তুমি এসবে যেও না। ও যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে দেয়? যেও না এসবে।”

“কিছু করতে পারবে না। ওর ক্ষমতা নেই সামনাসামনি কিছু করার। ও একটা ক্রা*উয়া*র্ড! পিঠ পিছে ছু*ড়ি থুপে।”

শ্রাবণ আবারও নিষেধ করতে কিছু বলবে তখন নার্স কেবিনে প্রবেশ করতেই শ্রাবণ তাড়াহুড়ো করে আর্শিকে বলে,
“তুমি সাবধানে থাকো প্লিজ। আমি ইটালিতে জব নিয়ে চলে আসব। ততোদিন কষ্ট করে হলেও নিজের খেয়াল রাখো। এখন রাখছি। একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে।”

“হু”

অতঃপর শ্রাবণ কল কে*টে দেয়। নার্স স্যা*লাইনটা শেষের দিকে হওয়াতে খুলে দেয়।

________

দেখতে দেখতে আরও দুটোদিন পেরিয়ে গেছে। শ্রাবণ ইরিনাকে সত্যটা জানিয়েছে। সব দেখিয়েছে। ইরিনা পাথর দৃষ্টিতে সব দেখে মলিন হেসে বলে,
“হোয়াই অলওয়েজ মি? আই অলওয়েজ ড্রিম টু হ্যাভ সামওয়ান হু উড লাভ মি, কেয়ার এবাউট মি।”

শ্রাবণ বিপরীতে কিছু বলল না। সে ইরিনাকে নিজের মতো থাকতে দিয়ে কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেলো। আজ নাহিদ আর্শিকে একটা ক্যাফেতে দেখা করতে বলেছে। নাহিদ আর্শির ভার্সিটিতে এসেছিল। সেখানেই এসে একটু সময় করে যেন দেখা করে তার অনুরোধ করেছিল। আর্শিও রাজি হয়েছে বিকেলে দেখা করার। শ্রাবণ ঘড়িতে সময় দেখলো কানাডায় এখন বেলা দশটা বাজে। তার মানে ইটালিতে এখন বিকেল। তাই শ্রাবণ কানাডার পু*লিশকে ইনফর্ম করতে যায়।

কফিশপে মুখোমুখি বসে আছে নাহিদ ও আর্শি। কফিশপটা মোটামোটি ফাঁকা। হ্যারি ও পিটার ছদ্মবেশে এসেছে। খানিক দূর থেকে নাহিদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। লিসা ও সোহারা পু*লিশে ইনফর্ম করতে গিয়েছে।
নাহিদ দুই কাপ কফি অর্ডার করে হাসি মুখে আর্শিকে জিজ্ঞাসা করে,

“কেমন আছো?”

প্রত্যুত্তরে আর্শিও হাসিমুখে জবাব দেয়
“আলহামদুলিল্লাহ!”

“আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না, আমি কেমন আছি? ”

“প্রয়োজন বোধ করছি না। কী কারণে ডেকেছেন, সেটা বলেন।”

নাহিদ বাঁকা হেসে বলে,
“এখনো আমার প্রতি এত রাগ? খুব বেশি ভালোবেসেছিলে বুঝি আমাকে?”

এবার আর্শি রেগে উঠে দাঁড়ায়। আর বলে,
“আপনি এসব ফা*লতু আলাপ করতে বুঝি আমায় ডেকেছেন? আপনি বলেছিলেন খুব ইম্পোর্ট্যান্ট কথা আছে। যেটা না জানলে নাকি আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে! এই সেই ইম্পোর্ট্যান্ট কথা?”

নাহিদ আয়েশি স্বরে বলে,
“রেগে যাচ্ছ কেন? বসো কথা তো শুরুই করিনি। একেবারে কি শুরু করা যায়? আগে একটু…”

আর্শি থামায় নাহিদকে। বলে,
“যেটা বলতে এসেছেন, শুধু সেটা বলেন। তার বাহিরে ফা*লতু আলাপ আমার সাথে করবেন না। আপনার হাতে হয়তো অজস্র সময় আছে, কিন্তু আমার হাতে নেই।”

“আচ্ছা বলছি! বলছি! কিছু দেখাবো তোমাকে।”

এই বলে নাহিদ নিজের ফোন বের করে একটা ভিডিও আর্শিকে দেখতে দেয়। আর্শি জানতো এমনটাই হবে। সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে কয়েক সেকেন্ড দেখে ফোনের স্ক্রিণ বন্ধ করে। অতঃপর বলে,
“বাহ! বেশ ভালো এডিট করেছেন তো? অবশ্য আমি শুনেছিলাম, আ*র্টিফিশি*য়াল ইন্টে*লিজে*ন্টসের মাধ্যমে ফে*ক ভিডিও ও রি*য়েল ভিডিওর মধ্যে পার্থক্য খোঁজা, খালি চোখে সম্ভব না! এখন তো তার প্রমাণও পেলাম! ”

বলেই আর্শি হাসলো। নাহিদ চমকে ওঠার মতো তাকায়। সে হড়বড়িয়ে বলে,
“মানে কী বলতে চাইছো তুমি? এটা ফে*ক ভিডিও হতে যাবে কেন? এটা রি*য়েল ভিডিও। তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে চি*ট করেছে!”

নাহিদের শেষোক্ত কথাটা শুনে আর্শি খানিক উচ্চস্বরেই হেসে ফেলল। অতঃপর বলল,
“রিয়েলি! ওকে মেনে নিলাম যে শ্রাবণ আমার সাথে চি*ট করছে। তো আপনি বাংলাদেশে বসে, কানাডার এই ভিডিওটা কিভাবে পেলেন? মানে কোনো সোর্স তো থাকবে। তাই না? আপনার স্পা*ই কে? কার মাধ্যমে আমার হাজবেন্ডের খুঁটিনাটি সব খবরা-খবর রাখছেন?”

নাহিদ থতমত খেয়ে যায়। কথার খেই হারিয়ে ফেলছে সে। আর্শি যে তাকে দেখার পরেও বিশ্বাস করবে না এটা তার ধারণাতেও ছিল না। এই শীতল পরিবেশেও তার ঘাম ঝরছে। সে টিসু দিয়ে মুছে নিয়ে বলে,
“যেভাবে জেনেছি! সত্যটা তোমাকে জানানো উচিত ছিল, তাই তোমাকে জানিয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি কারো উপকার করাটাও ঠিক না।”

আর্শি বাঁকা হেসে বলে,
“ঠিক বলেছেন। যেচে কারো উপকার করতে যাবেন না। আমাকে নিয়ে বেশি ভাববেন না। আপনি বিয়ে করেছেন, সুখে থাকুন না। আমাকে নিয়ে ভাবার কী দরকার ছিল? যেহেতু কষ্ট করে আমাকে নিয়ে ভেবেই ফেলেছেন, তাহলে এর ভো*গান্তিটাও তো আপনাকে পোহাতে হবে! তাই না?”

এই বলে আর্শি লিসাকে কল করে। অতঃপর লিসা সোহা ও মোনা পু*লিশ নিয়ে ক্যাফের ভেতরে প্রবেশ করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৮
নাহিদ ক্যাফের ভেতরে পু*লিশ ঢুকতে দেখে আরও ঘাবড়ে যায়। সে উঠে দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত স্বরে বলতে থাকে,
“পু*লিশ! পু*লিশ কেন? তুমি ঠিক করছো না, আর্শি! আমি তোমার ভালোর জন্যই এসেছিলাম। তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না। আমি তোমাকে… তোমাকে…”

থেমে থেমে কিছু খুঁজছে। পেছনের টেবিলে সাজিয়ে রাখা কাঁ*টাচামচ দেখে সেখান থেকে খপ করে নিয়ে আর্শিকে আঘা*ত করার প্রয়াস করে। কিছুটা সক্ষমও হয় তাতে। আর্শি নিজেকে বাঁচাতে সামনে হাত আনলে আর্শির ডান হাতের তালুকে কাঁ*টাচা-মচ গেঁথে যায়! আর্শি ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলে পাশের টেবিল থেকে হ্যারি ও পিটার ছুটে আসে। পিটার আর্শির হাতে পানি ঢালছে। নাহিদ আরেকটা কাঁ*টাচা*মচ উঠাতে গেলে হ্যারি গিয়ে তাকে ধরে। নাহিদ অদ্ভুত ভাবে হাসছে আর বলছে,

“আমি ভালো নেই, তুই কেন ভালো থাকবি? তোকে মে*রে তারপর আমি জে*লে যাব!”

এমন অদ্ভুত ধরণের কথা ক্রমাগত বলেই যাচ্ছে। পু*লিশ এসে নাহিদকে নিয়ে যায়। লিসা ক্যাফের ওয়েটারকে বলে ফার্স্টএইড বক্স আনিয়ে আর্শির হাতে ঔষুধ লাগিয়ে দেয়।

অপরদিকে কানাডার পু*লিশ, শার্লককে গ্রে*ফতার করেছে। শার্লকের সামনে দাঁড়িয়ে ইরিনা ঘৃণামিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
“আই লাভড ইউ। বাট ইউ লাইড টু মি। ইউ হ্যাভ ব্রোকেন মাই ফেইথ। ইউ হার্ট মাই সেল্ফরেসপেক্ট। সো ইউ ডিজার্ভ দিস।”

বলেই শার্লককে একটা থা*প্পড় দিলো। মহিলা পু*লিশ এসে ইরিনাকে আটকায়। অতঃপর তারা শার্লককে নিয়ে যায়। অতঃপর ইরিনা সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে।

শ্রাবণ টরেন্টোর একটা পার্কে বসে আছে। বরফে আচ্ছাদিত প্রায়। ডিসেম্বর থেকে কানাডায় শীতকাল শুরু। বছরের বেশিরভাগ সময়ই কানাডায় বরফে আচ্ছাদিত থাকে। এই ঠান্ডার মধ্যেও সে একটা বেঞ্চিতে বসা। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন বছরের শুরুতেই কানাডাকে বিদায় জানাবে। এটা নিয়ে কিছুক্ষণ আগেই বসের সাথে কথা বলে এসেছে। যদিও বস তাকে পুনরায় বিবেচনা করতে বলেছেন। এই নিরব পরিবেশে হুট করেই জাগতিক মন খারাপেরা ভীড় করলো শ্রাবণের মনের আঙিনায়। এই মন খারাপ ভালো করার জন্য শ্রাবণ আর্শিকে কল করলো। আর্শিকে তখন মিসেস আশালতা খাইয়ে দিচ্ছিলেন। আর্শি কল রিসিভ করে। শ্রাবণ প্রথমেই বলে,

“তুমি ঠিক আছো?”

আর্শি হাতের ব্যাপারটা শ্রাবণকে জানাতে চাইলো না। নয়তো চিন্তা করবে। তাই বলল,
“হু। আপনার কণ্ঠস্বর বিষণ্ণ লাগছে, শ্রাবণ।”

মিসেস আশালতা মেয়ের পাশ থেকে উঠে গেলেন। শ্রাবণ বলল,
“তুমি কীভাবে বুঝলে?”

আর্শি মৃদু হেসে বলে,
“কারণ আপনি প্রাণোচ্ছল। আপনার কণ্ঠস্বরের অস্বাভাবিকতা আমায় ভাবায়। এইযে কিছুদিন আগেই, আমার থেকে লুকাতে কতো কিছু বলে ভুলাতে চাইলেন। পারলেন কী?”

শ্রাবণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আমাদের সাথে শ*ত্রু*তার জেরে অন্যরা কেন কষ্ট পায়?

আর্শি নিরব শুনলো। শ্রাবণ ফের বলল,

“শার্লককে যখন পু*লিশ নিয়ে যাচ্ছিলো তখন আমি ওর বাড়িতে যাইনি, রাস্তার অপজিটে আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলাম। শার্লককে নিয়ে যাওয়ার পর ইরিনা রাস্তার ধারের বেঞ্চে বসে অনেকক্ষণ কাঁদলো। মেয়েটার তো সত্যি কেউ নেই। আমাদের জন্য মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।”

আর্শি এবারেও প্রত্যুত্তর করতে পারলো না। দুই পক্ষেই নিরব হাওয়া বইছে। কিছুক্ষণ পর শ্রাবণ আবার বলে,
“আমি নতুন বছরের শুরুতেই তোমার কাছে চলে আসব।”

আর্শি বলল,
“আমার মনে হয় আমার একবারের জন্য কানাডায় আসা উচিত। আপনি এখনি আসবেন না। আমি সামনের মাসে আসব।”

শ্রাবণ কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
“তুমি এই অবস্থায় জার্নি করবে? ইটস নট সেফ।”

“ডাক্তারের পারমিশন নিয়েই আসব। তাছাড়া আমার রিসার্চও প্রায় শেষের দিকে। মা-বাবাও চলে যাবে সামনের মাসে।”
(প্রেগনেন্সিতে ট্রাভেল করা ঠিক না। করলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চেকআপ করিয়ে নিতে হবে।)

শ্রাবণ বলল,
“আমাদের একসাথে পথচলার এই মাত্র স্বল্প সময়ের মধ্যে কতোকিছু হয়ে গেলো। আমরা তো এমনটা চাইনি।”

“না চাইলেও অনেককিছু হয়, শ্রাবণ। শ্রাবণ, একটা আবদার করব, রাখবেন?”

“আবদার কেনো বলছো? তুমি রাণী, তুমি হুকুম করবে।”

হাসলো আর্শি। অতঃপর বলল,
“সামনেই পূর্ণিমারাত। আপনি গভীররাতে আমাকে ফোন করে ঘুম থেকে উঠিয়ে গিটার বাজিয়ে শোনাবেন। আমি রাগ করব, ফের মুগ্ধ হয়ে আপনার সুরের তাল শুনব।”

“এই আবদার তো তুমি আমার তরফ থেকে করে ফেললে।”

আর্শি ভণিতা করে বলল,
“উম.. তা ঠিক বলেছেন!”
অতঃপর দুজনেই হেসে ফেলল।

________

বাংলাদেশে নাহিদের খবরটা পৌঁছানো মাত্রই মিসেস নেহা কাঁদতে কাঁদতে আফসোস করছেন। মিস্টার হাসান পাথরের ন্যায় অনুভূতি শূণ্য হয়ে বসে আছেন। আশিকও চুপ করে আছে। তখন মুশফিকা এসে বলে,
“কাল সকালে আমি চলে যাব। আমাকে নাহিদ এখানে নিজের খারাপ উদ্দেশ্যের জন্য কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করে এনেছিল। আর এক মাস পর সেটার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।”

মিসেস নেহা কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“তুমি কেন আমাদেরকে আগে এসব জানালে না? আমরা তো ভেবেছিলাম, নাহিদ তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। নাহিদ নিজেকে শুধরে নিয়েছে। আমাদেরকে যদি তুমি আগে জানাতে, তাহলে আজকের এই দিনটা আমাদেরকে দেখতে হতো না।”

তখন মিস্টার হাসান বলে ওঠেন,
“মুশফিকার জন্য এই দিনটা দেখতে হচ্ছে! এটা তুমি কিভাবে বলতে পারো? তুমি নিজের দোষে এটা দেখছো! ছেলেকে যদি ছোটো থাকতে শা*স*ন করতে, তাহলে সে মানু*ষ তৈরি হতো। এমন প*শু তৈরি হতো না। আর এখন তো তোমার ছেলে তো মা*নসিক ভারসাম্য হারিয়েছে! পু*লিশ কী বলল? সে নাকি মাঝ রাস্তায় নিজেকেই গু*লি করে দিয়েছে! এসব কেন হয়েছে জানো, কোনো কিছুতে না শুনতে না পারার অভ্যাস নেই বলে। যা চেয়েছে সাথে সাথে হাজির করেছ।”

স্বামীর কথা শুনে মিসেস নেহা ফের কাঁদতে লাগলেন। মুশফিকাও সেখানে দাঁড়ালো না। উপরে উঠে চলে গেলো। অতঃপর নিজেকে রুম বন্দি করে দুঃখবিলাস করতে মশগুল।
এদিকে আরিয়া বুঝতে পারছে না, মিসেস নেহাকে কী বলবে? মিসেস নেহা কি তাকে দোষারোপ করবে? এই দোটানায় পড়ে সে একা বসে আছে। আশিক রুমে আসলে আরিয়া অস্থির হয়ে বলতে শুরু করে,
“খালামণি কী আমাকে ভুল বুঝবে? আমরা তো চেয়েছিলাম, পুরাতন সব ভুলে থাকতে কিন্তু নাহিদই তো…”

“তুমি অত ভেবো না। খালুজান আছেন খালামণির সাথে। একমাত্র ছেলে তাই খালামণি একটু বেশি ভালবাসেন। তুমি এসব চিন্তা করে নিজের শরীর খারাপ করো না। ”

আরিয়া চুপ করে বসলো। সে নিজেও মা হতে চলেছে, একটা মায়ের কাছে সন্তান কী সেটা তো সেও বুঝে। মায়ের কাছে তার সন্তান সবসময় প্রিয়। সেই সন্তান খারাপ হোক বা ভালো।

____

দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। সময়গুলো যেন যান্ত্রিক ভাবেই পেরোচ্ছে। বছর শেষ হতে আর দুই দিন বাকি। রিয়াজউদ্দীন ও মিসেস আশালতা ব্যাগপত্র গুছানো শুরু করেছেন। আর্শিও ডাক্তারের অ্যাপোয়েনমেন্ট নিয়ে চেকআপ করিয়েছে। বেবি হেলদি আছে। কোনো কম্পলিকেশন নেই। ডাক্তারের কাছে ট্রাভেলের বিষয়টা বললে ডাক্তার সতর্ক করেন। এই সময় ট্রাভেলে রিস্ক আছে সেটাও জানান। আর্শি তাও সেই রিস্ক নিতে চায়। তার ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেষ হবে।(বাংলাদেশে যেমন প্রাইভেট ভার্সিটির সেমিস্টার ফাইনাল ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে শেষ হয় তেমনটা মিলিয়ে লিখেছি।) তারপর রিসার্চের ডাটা এন্ট্রি ও ডিসকাশন লেখা বাকি থাকবে। তাই ছুটি কাটাতে আর্শির সাথে আর্শির ফ্রেন্ডসরাও যাবে। শুধু লিসা ও সোহা বাদে। মোনা, হ্যারি ও পিটার যাবে। সাথে হ্যারির ছোটোবোনও যাবে বলে জানিয়েছে।

আজ পূর্ণিমারাত। আকাশে থালার মতো রূপালী চাঁদ। চন্দ্রমা আজ তার পূর্ণরূপে বিরাজমান। এক প্রণয়াসক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফোনের দুই পাশে বসে দুজন চন্দ্রবিলাশ করছে। একজনের হাতে গিটার। আরেকজনের হাতে আইসক্রিম! গিটারের ঝংকারে আর্শি ব্যালকনিতে বসে বিস্তর আকাশে চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে এক কাল্পনিক মূহুর্তের কল্পনায় ব্যাস্ত। হুট করে শ্রাবণ গিটার বাজানো থামিয়ে বলে,
“এবার ঘুমাও।”

আর্শি জেদ ধরে বলে,
“উঁহু না।”
“কয়টা বাজে ওখানে সেই খেয়াল আছে?”

“মাত্র দুইটা বাজতে বারো মিনিট বাকি।”

“তোমার তো পরশু পরীক্ষা। কালও রাত জাগবে। তারপর শরীর খারাপ করবে।”

“করবে না। আমার পড়া প্রায় কম্পলিট।”

“তুমি দিন দিন জিদ্দি হয়ে যাচ্ছ!”

“এটা আপনার বাচ্চার জেদ। আপনার বাচ্চা বলে কথা! সে না ঘুমালে আমি কীভাবে ঘুমাব বলেন?”

শ্রাবণ মাথায় হাত দিয়ে বসে। অতঃপর বলে,
“আইসক্রিম খাওয়া থামাও, ঘুমিয়ে যাও। এখানে বসে থাকলে সারারাতেও ঘুমাতে পারবে না।”

“আমার ভালো লাগছে। নাকি আপনার ঘুম পেয়েছে? হুহ?”

“আমি কিন্তু আন্টিকে কল করব!”

আর্শি বিরক্ত হয়ে বলে,
“থাক! আমি ঘুমাচ্ছি! এমন করেন কেন? আম্মু ২ তারিখে চলে যাবে, আর আপনি এখন আমাকে বকা খাওয়াতে চান? পরীক্ষাটা শেষ হোক! তারপর এসে নিই। তখন আপনাকে এতো জ্বা*লাব যে ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে যাবেন! হুহ্!”

তারপর আর্শি কল কেটে দিয়ে শ্রাবণকে ব*কতে ব*কতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ