Monday, October 6, 2025







সুতোয় বাঁধা জীবন পর্ব-১২

#সুতোয়_বাঁধা_জীবন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – বারো

এক আকাশসম বিষাদ, বেদনা, যন্ত্রণা এসে ভর করেছে রুদিতার ওই মায়াবী মুখে। আপনজনদের ছেড়ে যাওয়ার দুঃখে ডুকরে কাঁদছে মন। তবুও কিচ্ছু করার নেই। যেতে হবে। সবাইকে ছেড়ে। বিয়ের পর স্বামীর ভিটাই তো হয় মেয়েদের সুখের ঠিকানা। মা ও ভাই-বোনদের থেকে বিদায় নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নারী জীবনের আরও একটা অধ্যায়কে আঁকড়ে ধরার পথে এগিয়ে গেল রুদিতা। গাড়িতে উঠে বসতেই উমামা তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল

-‘মাম্মাম কাঁদছ কেন? ও মাম্মাম বলো না, কাঁদছ কেন? কেউ বকেছে তোমাকে? মেরেছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার?’

মায়ের এই কান্নার কারণ বাচ্চারা না বুঝলেও, দু’জনে খুব করে মিশে রইল মায়ের সাথে। রুদিতা জবাব না দিয়ে দুটো বাচ্চাকে আঁকড়ে ধরল। বিদায়ের আগে রওনক এসে উষাদকে বলল,

-‘আমার আদরের বোনকে তোমার হাতে তুলে দিলাম, ভাই। দেখে রেখো।’

-‘দোয়া করবেন। যতদিন বাঁচব, আপনার বোনকে সামান্যতম কষ্টও ছুঁতে পারবে না, ইনশা’আল্লাহ্।’

উষাদের স্বীকারোক্তি শোনে হাসিমুখে তাদের বিদায় দিল রওনক। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের এই নাটকীয় রূপ, আচার-আচরণ দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছে নিল রুহামা। গাড়ি বাড়ির সীমানা ত্যাগ করার পরপরই রওনক আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় বসে শর্মীকে বলল,

-‘যাক বাবা। বাঁচা গেল। আপদটাকে বিদায় করতে পারলাম অবশেষে। এবার বাঁচুক নইলে মরুক, আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।’

শর্মী প্রশস্ত হেসে ছেলেমেয়েদের জন্য দই-মিষ্টি সাজিয়ে ওদের দু’জনকে খেতে দিল। ওরা যে যার মতো খুশি মনে মিষ্টান্ন খেতে লাগল। সে স্বামীর পাশে বসে বলল,

-‘এবার রুহামার ব্যবস্থা করো।’

-‘করব, শীঘ্রই করব। চিন্তা করো না।’

শেষকথা রুহামার কানে এলেও আগের কথা আসলো না। তাই সে বুঝতে পারল না কী নিয়ে কথা হচ্ছে। দু’কাপ চা তৈরীর জন্য রান্নাঘরে গিয়ে গ্যাসের চুলা অন করতেই শর্মী ত্যক্তবিরক্ত গলায় তাকে বলল,

-‘এখন কী করছিস্ ওখানে?’

রাগ দেখাতে গিয়েও থেমে গেল রুহামা। বলল,
-‘চা খাব। তোমরা খাবে?’

-‘ওহ্। আচ্ছা দে। তোর ভাইয়াকেও এক কাপ দিস্। দুঃশ্চিন্তায় ঘুম হয় না তার। মাথায় না-কি যন্ত্রণা হচ্ছে!’

রওনক সরু চোখে তাকাল। শর্মী চোখ মেরে আদিখ্যেতা ভরা গলায় বলল,
-‘কী গো বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়? রুমে যাও, ভিকস্ দিয়ে ম্যাসাজ করে দেব। আমারও সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করছে।’

শর্মী যে কী বোঝাতে চাইল এসব নাটকীয় কথাবার্তা দিয়ে, সেসব কথা বোঝার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাল না রুহামা। নিজের মতো করে চা তৈরী করল। চার কাপ চা বানিয়ে দু’কাপ ওদের দু’জনকে দিয়ে আরও দু’কাপ চা নিয়ে মায়ের রুমে এলো। মেয়ে বিদায় দিয়ে আতিকা জাহান সিজদাহ্তে ঝুঁকে পড়েছিলেন। দোয়াদরুদ শেষ করে এখন তাসবীহ্ পাঠ করছেন। মায়ের দিকে চা বাড়িয়ে দিয়ে নিজের জন্য এক কাপ চা নিল রুহামা। পাশে বসে বলল,

-‘তোমার ছেলে বোধহয় নতুন কোনো ফন্দী আঁটছে মা।’

ছেলের এই আচার-ব্যবহারের কথা মনে পড়লে দুঃখে অন্তর ভার হয়ে আসে আতিকা জাহানের। চোখ ভরে উঠে আক্ষেপের অশ্রুতে। এমন ছেলে তিনি কীভাবে জন্ম দিলেন? ঘোর আফসোস নিয়ে বললেন,

-‘ওদের যা ইচ্ছা করুক, তুই কিছু বলিস্ না।’

-‘অন্যায় দেখেও চুপ থাকবে? মামাকে বলছ না কেন এসব?’

-‘ভাইজানের রাগ তোরা জানিস্। এমনসব ঘটনা শুনলে মেয়েকে ত্যাজ্য কর‍তেও দু’বার ভাববেন না তিনি। এসব যদি বলি, ওদের সংসারটা নষ্ট হয়ে যাবে। পিকলু, মৌমি ওদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে।’

-‘তাইবলে এইভাবে চুপ থাকবে?’

-‘ছেলেকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারিনি, দোষতো আমার রে মা। এখন পাড়াপ্রতিবেশী জানিয়ে সম্মান নষ্ট করার কোনো দরকার আছে? যেমন চলছে, চলতে দে। উপরওয়ালা আছেন তো। নিশ্চয়ই একদিন ওদের মনে সুবুদ্ধি উদয় হবে।’

রুহামা চুপ করে রয়। কথা খুঁজে পায় না। মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে আতিকা জাহান ফের বললেন,
-‘তুই চিন্তা করিস্ না। আমি বেঁচে থাকতে তোর ওপর কোনো অন্যায় হতে দেব না।’

-‘আপু কিছু ব্ল্যাংক চেকে সই করে দিয়ে গেছে, বলেছে যদি প্রয়োজন হয়, টাকা তুলে আনতে।’

-‘রেখে দে।’

রুহামা খানিকক্ষণ ভেবেচিন্তে বলল,
-‘আমি পুরো ব্যাপারটা মামার সাথে শেয়ার করতে চাই মা। মামা জানুক, তার মেয়ের স্বভাব। এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না।’

-‘মাথা খারাপ হলো না-কি তোর? কেন এসব বলবি? পিকলু ও মৌমির কথা ভাব একবার।’

-‘ওরা কি রুহানের কথা ভেবেছিল মা? চোর-ডাকাতের হাতে বোনকে তুলে দিয়ে পুরো জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। এতকিছুর পরও যে বেঁচে আছে, এটাই তো যথেষ্ট। তবুও কেন ওদের এই হিংসাত্মক আচরণ?’

-‘আমি আমার নাতি-নাতনীদের ক্ষতি চাই না, রুহামা।’

-‘ক্ষতি তো আমিও চাই না, মা। কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, কোনদিন না আবার তোমাকে আর আমাকে এসবের মাশুল দিতে হয়।’

শর্মী দুয়ারে দাঁড়িয়ে শুনল। হাসল তৃপ্তিভরা হাসি। তার পরবর্তী ভাবনা সম্পর্কে কারও কোনো আইডিয়া নেই। ভেবে শান্তি পাচ্ছে এই যে, জঞ্জাল পরিষ্কার হতে যাচ্ছে শীঘ্রই।

***

বাড়ির প্রবেশপথ দিয়ে মূল ফটকের সামনে এসেই ব্রেক কষল ড্রাইভার। ঝাঁকুনি খেয়ে চারপাশের অন্ধকার দেখতে পেল রুদিতা। গতকালের জ্বর তাকে ভীষণ ভুগিয়েছে। এখনও ভুগাচ্ছে। আবার আজ বিদায়বেলা যথেষ্ট কেঁদেছে। এখন জ্বর নেই তবুও মাথা সোজা রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে তার। কপালে হাত চেপে বাচ্চাদের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকাল। ওরা দু’জনে নেমে উমামা মাকে নামার জন্য ডাকল,

-‘আমরা এসে গেছি মাম্মাম।’

মেয়ের আধমুখের মায়াভরা ডাক শোনে সাহস নিয়ে মাথা বাড়িয়ে নামতে চাইছিল রুদিতা। এরমধ্যেই পা মোচড় খেয়ে বসে পড়ল সিটে। ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে নিচু হয়ে পা ম্যাসাজ করতে লাগল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার এইসব কাজ দেখল উষাদ। বলল,

-‘কী হলো? এসো।’

-‘গোড়ালিতে টান লেগেছে।’

উষাদ কোনো শব্দ করল না। হাত বাড়িয়ে নিজেই নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে পাঁজাকোলে তুলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। বাচ্চারা সোজা বাবা-মাকে অনুসরণ করে ঘরে এলো। আচমকা এই কাণ্ডে রুদিতা প্রথমে অবাক হলো, পরক্ষণেই চারপাশের আগ্রহী কতজোড়া নারীচক্ষু দেখে চট করে মুখ লুকিয়ে ফেলল উষাদের বক্ষস্থলে। মিনমিন স্বরে বলল,

-‘এটা কী হচ্ছে?’

-‘চুপ থাকো। বেশি কথা বলো না।’

-‘বাড়িতে এত মানুষ কেন? দ্বিতীয় বিয়েতে কেউ এভাবে ঢাক-ঢোল পিটায়?’

-‘দূর। কে ঢাক-ঢোল পিঠাচ্ছে? এরা সবাই এই পাড়ার মানুষ। খবর পেয়েছে, তাই এসেছে। সকালে মা পাড়ার সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে। আর বলেছে, আজ আমার ছেলে বউ নিয়ে আসছে। এজন্য সবাই, নতুন বউ দেখতে এসেছে।’

লজ্জায় চুপ হয়ে গেল রুদিতা। উষাদ তাকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে প্রবেশ করল। পায়ের জুতো খুলে বলল,
-‘কোথায় ব্যথা পেয়েছ? বেশি না-কি কম? পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে?’

পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল রুদিতা। কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভব হতেই বসে পড়ল বিছানায়। উমামা ভয়মিশ্রিত গলায় বলল,

-‘মাম্মাম, কী হয়েছে? খুব বেশি ব্যথা হচ্ছে?’

উমামা এত আদুরে স্বরে মাম্মাম ডাকে, রুদিতার মন ভরে যায়। নিজের কষ্টের কথা, ব্যথার কথা ভুলে গিয়ে জবাব দেয়,

-‘খুব সামান্য। সেরে যাবে। তোমরা মাম্মামের পাশে থাকো। তাহলেই মাম্মাম ঠিক হয়ে যাব।’

উষাদ ততক্ষণে ধীরস্থিরভাবে পায়ে ম্যাসাজ করে দিল। বাচ্চাদের সাথে কথা বলার দরুন রুদিতা টেরই পেল না কিছু। হোসনা বেগম ঘরে প্রবেশ করতেই তড়িঘড়ি তাকে কদমবুসি করল রুদিতা। তিনি তার মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন। বললেন,

-‘বাচ্চারা অনেক জ্বালিয়েছে নিশ্চয়ই?’

-‘একদমই নয়, মা। ওরা দু’জন ভীষণ শান্ত।’

-‘বেয়ান আসলেন না যে! আমি ভেবেছিলাম, সবাই আসবে আজ।’

-‘রুহামার তো একটু ব্যস্ততা আছে। পড়াশোনার চাপ। আর মা অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে পারেন না খুব একটা।’

-‘আর তোমার ভাই-ভাবী? তারা তো আসতেই পারত।’

রুদিতা কিছু বলতে পারল না। ভাই-ভাবী ঘাড়ের বোঝা দূর করে ফূর্তিতে আছে। কার দায় পড়েছে এখানে এসে দাওয়াত খাবে? তারা তো দামী রেস্টুরেন্টে জম্পেশ খাওয়া-দাওয়ার প্রোগ্রাম করবে। হোসনা বেগম বাচ্চা দুটোকে নিজের কাছে টেনে এনে উষাদকে বললেন,

-‘তুই একটু বসার ঘরে আয় বাপ। মেহমানদের বিদায় দিই। এরপর তোরাও খেয়ে নিবি। রাত অনেক হয়েছে।’

ছোটো পরিসরের এই ওয়ালিমার আয়োজনে উষাদের মামাবাড়ির লোকজন আর উর্মির শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছেন। পাড়ার চার থেকে পাঁচজন মুরব্বিও আছেন। রাত যেহেতু অনেক হয়েছে, মেহমানদের অকারণ অপেক্ষা করিয়ে রাখা চলে না। সবার খাওয়া-দাওয়ার দিক সামলাতে রুম ছাড়ার আগে রুদিতাকে বলল,

-‘এটা তোমার ঘর, তোমার সংসার। এই সংসারে মানিয়ে নিতে পারবে তো?’

ততক্ষণে বাচ্চাদের নিয়ে রুম ত্যাগ করেছেন হোসনা বেগম। রুদিতা দুরুদুরু বুকে উষাদের কথা শুনল। বুঝল। কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারল না। তার নীরবতায় ভয় পেয়ে গেল উষাদ। বলল,

-‘পারবে না আগলে রাখতে? গোটা সংসারটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে, এই ঘর ও ঘরের প্রত্যেকটা মানুষকে আপন করতে। পারবে না?’

-‘আমি তো সংসার চেয়েছিলাম, কিন্তু সংসার আমায় চায়নি। আমি ঘরমুখো হতে চেয়েছিলাম, অথচ ঘর আমাকে গ্রহণ করেনি। ঘর-সংসার দুটোরই স্বপ্ন দেখেছিলাম, দুর্ভাগ্য; এই দুটোই আমাকে বিতাড়িত করে ছুঁড়ে ফেলেছিল রাস্তায়। কেন বলতে পারেন?’

ছোটো ছোটো চাওয়া পূরণ না হওয়ার এক আক্ষেপ রুদিতাকে দিনদিন পুড়িয়েছে। জীবন তাকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিয়েছে। অথচ পোড়া অতীতের ভয় তার সর্বাঙ্গে মিশে আছে। মুক্তি পাচ্ছে না। নিজেকে সুখী ভাবতেও পারছে না। সারাক্ষণ অদৃশ্য এক ভয় তাকে শেষ করে দিচ্ছে। উষাদ তার এই আহাজারি ভরপুর কণ্ঠ শোনে খানিকটা এগিয়ে একটা হাত শক্ত করে ধরল। বলল,

-‘যদি তুমি চাও, সব হবে। একটু ভরসা করো আমায়।’

-‘প্রথম প্রথম এসব ভালো ভালো কথা সব পুরুষই বলে। কিন্তু পরবর্তীতে খোলস্ ছেড়ে বেরিয়ে এসে জঘন্য রূপটা দেখিয়ে দেয়।’

-‘চিন্তা করো না। যে ভয় তোমাকে সারাক্ষণ কষ্ট দেয়, সেই ভয়কে তোমার সামনে পড়তে দেব না। একটা কথা জেনে রেখো, তোমার স্বামী সব পুরুষের মতো নির্লজ্জ নয়, আবার ভীরু কাপুরুষও নয়।’

উষাদের এই গুরুগম্ভীর কথার মাঝে একটা পুরুষালী দাম্ভিকতা মিশে ছিল। নিজের সিদ্ধান্ত ও কাজে এই পুরুষ সর্বদা সৎ ও সাহসী, এটা সে এতদিনে বুঝে গিয়েছে। তবুও ইফতির স্মৃতি মনে পড়লে, নিজেকে তার নর্দমার এক জঘন্য কীট মনে হয়। বেঁচে থাকা তখন অনর্থক মনে হয়। কিন্তু উষাদের কথায় যে ব্যক্তিত্ববান পুরুষের ছাপ পাওয়া যায়, তাতে যেকোনো নারী মনে সাহস সঞ্চয় করে নিতে পারবে সহজেই। সে-ও খানিকটা সাহস পেল। বলল,

-‘আপনি যদি আমার সাহস হোন, মনের জোর হোন। যদি আমার ভরসা হোন, তাহলে আমি সব পারব। নয়তো আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। জীবনে অনেক কাপুরুষ আমি দেখেছি, কিন্তু দায়িত্ববান পুরুষ দেখিনি।’

উষাদ মুচকি হেসে ভরসায় ন্যায় হাতের বাঁধন মজবুত করে বলল,
-‘ভয় নেই। আমি আছি। থাকব, ইনশা’আল্লাহ্।’

***

মাঝরাতে চোখ মেলে এক অদ্ভুত মুহূর্তের সাক্ষী হলো রুদিতা। নিশ্চিত হওয়ার জন্য চোখে হাত ঢলে আবারও তাকাল। পরক্ষণেই লাফ দিয়ে উঠে বসল। আবছা আলো ভরা কক্ষে একজোড়া মোহময়ী দৃষ্টি তাকে এলোমেলো করে দিল। মনে করার চেষ্টা করল, শেষ কী করেছিল সে। তখন ফ্রেশ হয়ে রুমের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হাঁটছিল। নতুন হওয়ায় রুমের বাইরে যেতে পারছিল না। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাচ্চারা ছুটে এসেছিল তার কাছে। রুহান বলেছিল,

-‘মাম্মাম, আমি ঘুমোব।’

সুযোগ পেয়ে রুহানকে কাছে টেনে নিয়েছিল রুদিতা। অপরিচিত জায়গা বলেই মায়ের কাছে ছুটে এসেছে রুহান। গত দু’দিন ধরে মায়ের কাছেই ঘুমোয়। দু’জনকে বিছানায় নিয়ে গল্প বলার ফাঁকে ফাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল সে। এক সময় তার ক্লান্ত চোখে ঘুম নেমে এসেছিল। কখন যে গভীরঘুমে ঢলে পড়েছিল, খেয়ালই ছিল না তার। এখন এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল রুদিতা। বুক ধড়ফড় ভাবকে সঙ্গী করে উষাদকে দেখল। বলল,

-‘দুঃখিত, আমি আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার এভাবে ঘুমানো উচিত হয়নি। আপনি নিশ্চয়ই রাগ করেছেন আমার এরূপ আচরণে!’

-‘রাগ করব কেন?’

রুদিতা একটু আমতা-আমতা শুরু করল। ঠিক এমনই একটা রাত তার জীবনে আগেও এসেছিল। ক্লান্ত শরীর যখন একটু বিশ্রাম খুঁজতে চাইছিল, তখনই শুরু হয়েছিল ইফতির আক্রমণ। সে ভেবেছিল, আজও এরকম কিছু হবে। কিন্তু হলো উলটো। উষাদ তাকে ছোঁয়নি, তবে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল। সেটুকুই তার মনের ভয়কে দূর করে দিয়েছে নিমিষেই। তবুও নিজেকে দোষমুক্ত করতেই ওভাবে বলেছিল। উষাদের প্রশ্ন তাকে পুরোটাই টালমাটাল করে দিল। সংকোচ, লজ্জা বাড়িয়ে দিল। উত্তর না দিয়ে রুদিতা খানিকটা ইতস্ততভাবে বলল,

-‘ক’টা বাজে?’

-‘শেষরাত। কিছুক্ষণ পর ফজরের আযান হবে।’

নিজের আহাম্মকী, বোকামির জন্য ভীষণ লজ্জায় পড়ল রুদিতা। বলল
-‘নামাজ তো পড়তে পারলাম না। আপনার নামাজ কি শেষ?’

-‘তোমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করছিলাম।’

-‘সেকী, তাহলে ডাকেননি কেন?’

-‘তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, অনেকদিন ঘুমোও না। এভাবে ঘুমোতে দেখে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি।’

ঝটপট উত্তর দিল উষাদ। যেন উত্তর তৈরীই ছিল। রুদিতা রয়েসয়ে বলল,
-‘একটু অপেক্ষা করুন। অযু করে আসছি।’

-‘শরীর খারাপ লাগছে বেশি?’

-‘ঠিক তা নয়। একটু ক্লান্ত ছিলাম, তাই হয়তো। বাচ্চারা কোথায়? দেখছি না যে।’

উমামা ও রুহানকে না দেখে জানতে চাইল রুদিতা। উষাদ বলল,
-‘ওরা মায়ের রুমে আছে।’

-‘কেন?’

প্রশ্ন করে চুপ হয়ে গেল রুদিতা। মনে পড়ল, খাবার টেবিলে হোসনা বেগম হুকুম জারি করেছেন, বাচ্চারা আজ থেকে তার কাছেই থাকবে। মনে পড়াতেই ভীষণ অস্বস্তি শুরু হলো তার। চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। উষাদ বলল,

-‘কেন’র সংজ্ঞা আমি তোমাকে এখুনি বুঝাতে পারব না। যদি বুদ্ধিমতী নারী নও, নিজে থেকে বুঝে নাও।’

-‘আপনি-ই তো বলেছিলেন, উমাকে ছাড়া ঘুম আসে না। ফাঁকা ফাঁকা লাগে।’

-‘হম, বলেছিলাম?’

এইটুকু বলে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল উষাদ। পরমুহূর্তেই শব্দ করে হেসে বলল,
-‘যাও, অযু করে আসো। একসাথে নামাজ পড়ব।’

কিছুটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হলো রুদিতা। অযু করল। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে রুমে এসে দেখল, উষাদ দুটো জায়নামাজ আগেপিছে বিছিয়ে রেখেছে। হাসিমুখে নামাজে দাঁড়াল। নামাজ শেষে দীর্ঘ মোনাজাতের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের জন্য সুখ চাইল। ভাগ্য যেহেতু একসাথে জুড়ে গেছে, তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই আর। নিজেকে ধাতস্থ করতে কিছুসময় জায়নামাজেই বসে রইল রুদিতা। লজ্জা-সংকোচ, মনের ভয় দূরে সরিয়ে জানতে চাইল,

-‘একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’

নিজের জায়নামাজটা ভাঁজ করছিল উষাদ। রুদিতার চিন্তিত মুখের কথা শোনে সেটা রেখে পা গুটিয়ে পাশে বসে বলল,
-‘করো।’

প্রচণ্ড জড়তা ও ভয়কে সঙ্গে নিয়ে রুদিতা বলল,
-‘বিয়ের আগে আপনি আমার অতীত জানতে চাননি? বিয়ের পর হয়তো মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে, এরপর ইফতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ছোট্ট অতীত যদি কোনোভাবে বর্তমানে প্রভাব ফেলে?’

এমন প্রশ্নে খানিকটা এলোমেলো হয়ে গেল উষাদ। মায়ের কাছে ঠিক ততটুকুই সে জানতে চেয়েছিল, যতটা জানলে বিয়ের জন্য সম্মতি জানানো যায়। বাড়তি এমনকিছুই সে জানতে চায়নি, যা অচেনা একটা মেয়ে সম্পর্কে তার মনে বিন্দুমাত্র ভুল ধারণা প্রবেশ করিয়ে দিতে সক্ষম। কাউকে সম্পূর্ণ না জেনে, তার সম্পর্কে ভুল-ঠিক না জেনে অতিরিক্ত ভাবনাকে মনে ঠাঁই দেয়া অধিকতর বাড়াবাড়ি মনে হয় তার। এই কারণে জেনে-বুঝে এই বাড়াবাড়ি সে করতে চায়নি। তাই পজেটিভ দিকটুকু জেনেই সম্মতি দিয়েছিল। মায়ের কথার ওপর ভরসা করেছিল। রুদিতার ভীতিগ্রস্ত চোখমুখ তাকে ভয়ের আভাস দিলেও সে সবটুকু ভয়কে মনে প্রশ্রয় দিল না। তাকেও ভয়মুক্ত রাখতে বলল,

-‘আমি তোমার অতীত নয়, বর্তমান জেনেই সম্মতি জানিয়েছি। অতীতে কী আছে, কতটুকু আছে, সেসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা ছিল না। যদি থাকত, তবে বিয়ের আগেই তোমার ব্যাপারে সমস্ত খবরাখবর নেয়ার আগ্রহ দেখাতাম। আমি শুধু ততটুকুই জেনেছি, যতটা জানা প্রয়োজন মনে হয়েছে। তবে এটা সত্য যে, তোমাকে পুরোপুরি চেনার পর, বোঝার পর, ইফতি সম্পর্কে একটু আগ্রহ জন্মেছিল মনে। ডাক্তারের সামনে সব শোনার পরও মনে হচ্ছিল, আরও কিছু একটা ব্যাপার আছে যা তুমি গোপন করছ। এই কারণেই জানতে চাইছিলাম। তবে এখন আর চাইব না। একটা ছোট্ট প্রশ্ন তোমার মনে অস্বস্তি জন্ম দিক, তা কোনোভাবেই চাই না। আমি তোমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, আমার জন্য এইটুকু সত্যই যথেষ্ট।’

রুদিতা ভয়ে ভয়ে বলল,
-‘যদি কোনোদিন মনে হয়, এই বিয়েতে সম্মতি জানিয়ে ভুল করেছেন। তখন কী করবেন?’

-‘যাই করি, তোমার অসম্মান হোক এমনকিছুই আমি করব না রাহা। আমার কাছে সম্পর্ক মানে, বিশ্বাস। আমি তোমার বর্তমানটা বিশ্বাস করি। এ-ও জানি, তুমি এই সম্পর্কটাকে শ্রদ্ধা করো। অতীত নিয়ে মনে আর কোনো ভয় ও সংকোচ রেখো না। ফেলে আসা দিন পিছনেই থাক, আমরা সামনের দিকে এগোই। আজকের এই বর্তমান থেকে আমরা সুন্দর ভবিষ্যৎ সাজিয়ে নেব।’

কথা শেষে, ঝটপট উঠে দাঁড়াল উষাদ। কাবার্ডের কাছে গেল। লক খুলে চারকোণা একটা প্যাকেট বের করল। মূলত এইসব প্যাকেটে শপিংমলে বেনারসি রাখা হয়। রুদিতার ধারণা হলো, সেরকম কিছুই হবে। কিন্তু না। অবাক হলো, যখন দেখল প্যাকেট খুলে উষাদ তারজন্য চমৎকার একটা কুরআন শরীফ, জায়নামাজ, তাসবীহ্ রাখছে। বিস্ময়ে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেল রুদিতা। আলগোছে জায়নামাজটা তুলে নিল নিজের হাতে। বাসর রাতে স্বামী তার স্ত্রীকে হীরে-জহরত দিতে শোনেছে, দামী-দামী প্রসাধনী দিতে শোনেছে, কিন্তু নিজ অভিজ্ঞতায় দেখল, এসব ছাড়াও চমৎকার উপহার হচ্ছে উষাদের দেয়া এই অমূল্য উপহার। এই দিনটাও আসার ছিল, তার জীবনে? তা-ও এইভাবে! উষাদ বলল,

-‘পছন্দ হয়েছে?’

কণ্ঠে একরাশ ভালো লাগা, মুগ্ধতা জড়িয়ে রুদিতা বলল,
-‘ভীষণ। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার এগুলো। আমি কখনও ভাবতে পারিনি, কেউ এরকম কিছু উপহার দিতে পারে। আপনাকে ধন্যবাদ দিলেও কম পড়বে বোধহয়।’

-‘শুধু ধন্যবাদ, কিছু না?’

কথাটা মজার ছলে বলেছিল উষাদ। রুদিতা তো ভয়ে কেঁপে উঠল। ইফতির কথা, আচার-আচরণ সব মনে পড়ল। সেই রাত, সেই সময়, সবটাই তাকে দিশেহারা করে তুলল নিমিষেই। ঢোক গিলে জানতে চাইল,

-‘আর কী?’

-‘হাসি? একটু হাসতে পারো না? আসার পর থেকে দেখছি, চোখেমুখে অমাবস্যার আঁধার নামিয়ে রেখেছ। আমার প্রতি একটু সদয় হও এবার। একটু হাসো প্লিজ।’

চাইলেও আর হাসি আটকে রাখতে পারল না রুদিতা। ঠোঁট প্রসারিত করে সুখের হাসিতে মুখ ভরিয়ে তুলল। উষাদ সেই হাসি দেখে ডুবে ডুবে ভাসতে লাগল। হাস্যজ্বল মায়াবী রমণীর দিকে তাকিয়ে অনুরোধসূচক একটা বাক্য শুনাল,

-‘উইল য়্যু বি মাই, বেস্টফ্রেন্ড?’

উষাদের এই কথায় ভীষণরকম চমকাল রুদিতা। বিয়ের প্রথম রাতে কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়? এমন সংজ্ঞা ও সম্পর্ক নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই মনে। সে শুধু জানে, পুরুষের কাছে নারীদের মন বলতে কিচ্ছু নেই। হাসি মুছে গিয়ে আবারও তার চেহারায় ফুটে উঠল একরাশ বিস্ময়। উষাদ তার বিস্ময়কর ভাব দূর করতে বলল,

-‘বন্ধুত্ব এমন এক সম্পর্ক যেখানে বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসা সবকিছু লুকিয়ে আছে। সম্পর্ক মজবুত রাখতে সবার প্রথমেই দু’জনের মনে দু’জনকে ঘিরে কোনো ভয়ভীতি জন্ম নেয়ার আগে, বিশ্বাসটা পাকাপোক্ত হওয়া জরুরী। এই বিশ্বাসের ওপর ভর দিয়েই সম্পর্ক এগোনো সহজ হবে। তখন তুমি নিজেই বুঝবে, সব পুরুষ সমান নয়। কিছু পুরুষ হয়, নারীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত আশ্রয়। এখন বলো, বন্ধু হবে আমার?’

নির্ভরতার হাত বাড়াল উষাদ। রুদিতা একপলক সেই হাতের দিকে তাকাল। আবার উষাদের গভীরচোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করল। কয়েক সেকেন্ড পর, উষাদ উপরনিচ মাথা নেড়ে বলল,

-‘হবে না?’

সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে নিজের ডানহাতটা উষাদের হাতে রাখল। এই প্রথমই স্বেচ্ছায় উষাদকে স্পর্শ করল রুদিতা। হাতটা কেঁপে কেঁপে উঠল। কম্পনরত হাত মুঠোবন্দী করল উষাদ। মৃদুস্পর্শে অধর ছুঁলো হাতের তালুতে। বলল,

-‘আমি এই দুটোহাত সারাজীবন এইভাবেই আগলে রাখার চেষ্টা করব, ইনশা’আল্লাহ।’

টালমাটাল দেহখানি এতক্ষণ খুব কষ্টে আটকে রেখেছিল রুদিতা। এইটুকু স্পর্শের পর আর পারল না। শরীরের সবটুকু শক্তি হারিয়ে যেতে লাগল তার। হাতের সাথে সাথে এখন সারা শরীর কাঁপছে। চোখ বন্ধ করে গভীর করে শ্বাস টেনে ভারী হওয়া নিঃশ্বাসটা অতি সন্তর্পণে আড়াল করে নিতে চাইল। মনে মনে অন্তহীন প্রার্থনায় ডুব দিল। তার এই রুক্ষশুষ্ক মুখখানি দেখে দেখে ভয় পেল উষাদ। জানতে চাইল,

-‘তুমি ঠিক আছো?’

আগের দিন যেহেতু জ্বর ছিল, উষাদের মনে হলো আজও বোধহয় জ্বর এসেছে। কপাল ছুঁয়ে জ্বরের মাত্রা চেক করল। সব স্বাভাবিক বুঝতে পেরে, অর্ধাঙ্গিনীর ভয় দূর করতেই হাত বাড়িয়ে তাকে আগলে নিয়ে, ভরসায় ন্যায় জড়িয়ে রেখে বলল,

-‘জীবন একটাই। বাঁচতে হবে। পিছনের অধ্যায়টাকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকলে চলবে, বলো?’

ডুকরে কেঁদে উঠল রুদিতা। উষাদ বাঁধা দিল না। কাঁদতে দিল। নিঃশব্দে জড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। মাথার উপরিভাগে অধর ছুঁইয়ে ধীরকণ্ঠে বলল,

-‘এসো, ঘুমোবে। তোমার ঘুম দরকার। এভাবে কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে যদি নির্ঘুম রাত কাটাও, আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে।’

***

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ