Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"ছায়া মানবছায়া মানব পর্ব-৭৪+৭৫+৭৬

ছায়া মানব পর্ব-৭৪+৭৫+৭৬

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৭৪.
আরিশ হ্যারির সামনে এসেই দাঁত কপাটি এক করে বলল,’ একটু আগে তুমি কি বলেছিলে?’

হ্যারি থমথম খেয়ে যায়। সে মজার চলেই বলে ফেলেছে, এতে কোনো সমস্যা হবে বলে তার জানা ছিল না। কোনোরকমে বলল,’ জীজু, আমিতো মজা করছিলাম। আপনি সিরিয়াসলি নেবেন না। এটা একটা এক্সি’ডেন্ট ছিল। তাই মজার চলেই বলেছি।’

এর‌ই মাঝে আরিশের মামাতো ভাই এসে তাকে নিয়ে চলে যায়। হ্যারি বুকে থু থু দিয়ে বলে,’ বাব্বাহ! জোর বাঁচা বেঁচে গেছি।’

হ্যারি অহনার সাথে দেখা করতে যায়। কথা বলার মাঝখানেই আদ্রিতা এবং লাবণী আসে। হ্যারিকে অহনার কাছে দেখে আদ্রিতার রাগ বেড়ে যায়। তেড়ে এসে বলে,’ তুমি এখানে কি করছ, তোমাকে কে বলেছে পুতুল ভাবীর কাছে আসতে? তুমি আবার কিছু চুরি করতে আসনিতো?’

হ্যারি আদ্রিতাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। সাজার পর তার সৌন্দর্য কয়েক গুন বেড়ে গেছে। হ্যারি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে থুতনিতে হাত বুলিয়ে বলল,’ ছেহ, কি ময়দা মেখে এসেছ। আজকে যদি কোনো শাক’চুন্নী তোমাকে দেখে তাহলে নিজের চেহারাই ভুলে যাবে। কেমন উদ্ভট লাগছে তোমাকে। এসব ধুয়ে আসো, না হয় সবাই ভূত ভেবে তোমার জন্য ওঝা ডেকে আনবে।’

আদ্রিতা তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়িয়ে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে হ্যারির গলা চেপে ধরে,
‘ আমাকে ভূতের মত লাগছে তাই না? তোমাকে মনে হয় রাজকুমার লাগছে? পুরো টিকটিকির মত লাগছে তোমাকে। নিজেকে একবার আয়নায় দেখো।’

অহনা শাসিত কন্ঠে বলে,’ এবার থেমে যাও তোমরা। এভাবে ঝগড়া করলে কখনো সমস্যা সমাধান করা যায় না।’

হ্যারি আর আদ্রিতা থামতে নারাজ। এবার তারা অহনাকে একে একে বিচার দিচ্ছে। দুজনেই নিজের কথায় অটুট। তাদের ভাষ্যমতে অপরাধী অপরপক্ষ। অহনা বলল, ভাব করে নিতে। তারা অনিচ্ছুক। এটা নিয়েও ঝগড়া বাঁধিয়ে দিল।

লাবণী অহনাকে বলল,’ তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।’

অহনা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,’ আমি জানি। এটাই বলবে তো, আমি যেন আরিশকে বুঝাই?’

‘ আমি কি করব বলো? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি কখনোই আরিশের সাথে তোমাকে মেনে নিতে পারব না।’

‘ভয় পেয়ো না। কালকে দেখবে কি হয়! জাস্ট ওয়েট এন্ড সি! দেখবে সব ঠিক তোমার মনের মত হয়েছে। তবে পরিবারের সবাই একটু কষ্ট পাবে। কিন্তু কয়দিন পর ঠিক হয়ে যাবে।’

‘ কি করবে তুমি?’

‘ আমি বলেছিলাম না,‌ আমার বয়ফ্রেন্ড আছে, সে কালকে আমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যাবে। আর সে সময় সবাই উপায় না পেয়ে তোমার সাথেই বিয়েটা দিতে চাইবে?’

‘ তুমি এত সিউর কি করে, আমার সাথেই সবাই বিয়ে দিতে চাইবে?’

‘ আচ্ছা, বুঝোনি তাই না? আমি বুঝিয়ে বলছি, তোমাদের মধ্যে তো তুমি ছাড়া আর কোনো বোন নেই তাই না? যাকে তাকে অন্তত তারা বিপদের সময় আরিশের জন্য বেছে নেবে না। একমাত্র অপশন তখন তুমি থাকবে। সবাই তখন তোমাকেই বিয়ের জন্য জোর করবে। তখন তুমি প্রথম একটু নাকোচ করে পরে রাজি হয়ে যাবে। সাথে সাথে রাজি হলে আবার সবাই অন্যকিছু ভাবতে পারে।’

‘ এটা ভালো আইডিয়া। তবে আমার ভয় হচ্ছে, যদি সব প্ল্যান মত না হয়?’

‘, আশা করি এমনটা হবে না। আমার মাহতিমের প্রতি বিশ্বাস আছে। সে আমার জন্য সব করতে পারবে। এটাও সম্ভব করে দেখাবে।’

‘ ওহ আচ্ছা, তার মানে তোমার বয়ফ্রেন্ডের নাম মাহতিম?’

‘ হু!’

‘ আমি তাকে দেখতে চাই। কে সেই ব্যক্তি, যে তোমাকে পেয়ে যাবে?’

অহনা আদ্রিতা আর হ্যারিকে লক্ষ্য করল। দেখল তারা এখনো ঝগড়া করতেই ব্যস্ত। তাই সে ছবির এলবামটা এনে দেখালো লাবণীকে। লাবণী উচ্ছাসিত হয়ে বলল,’ ওয়াও, তোমাদের জুটি অনেক সুন্দর। আশা করি পূর্ণতা পাবে।’

অহনা হ্যারির কাছে যায়। অনেক কষ্ট করে তাদের ঝগড়া থামায়। দুজনেই হাঁফিয়ে গেছেন ঝগড়া করে। আর একটু হলে একজন খু’ন হয়ে যেত। বাইরে থেকে সবাই আদ্রিতা, লাবণীকে বলছে অহনাকে নিয়ে যেতে।

অহনা সবাইকে বলল,’ আমার একটু কাজ আছে। তোমরা বাইরে যাও, দুই মিনিটের মধ্যে আমি বাইরে যাব।’

সবাই বেরিয়ে যেতেই অহনা মাহতিমকে বলল,’ তুমি কি অনুষ্ঠানে থাকবে?’

‘ আমার যাওয়া ঠিক হবে না। আশা করি আরিশের সাথে আজকের মুহুর্তটা অনেকটা ভালো কাটবে তোমার।’

‘ এসব‌ কি বলছ? আমাকে রাগিয়ে দেবে না।’ অহনা আরেকবার জড়িয়ে ধরল মাহতিমকে।
‘ তোমায় ছাড়া আর কারো কথা চিন্তা করলেও যেন আমার দম আটকে আসে। তোমার সাথেই আমার সব মুহুর্ত ভালো কাটে। আমরা যখন এখান থেকে চলে যাব। তখন সমুদ্রের পাড়ে একটা বাড়ি করব। আমাদের দুজনের ঐ ছোট্ট বাড়িতে বিয়ে হবে। বরপক্ষ, কনেপক্ষে মানুষ থাকবে কিনা জানি না। তবে সমুদ্রের শুভ্র আভা, নীলাকাশ, সমস্ত সমীরণ, পাখপাখালি, থাকবে অগণিত। তারা আমাদের সঙ্গী হবে নতুন জীবনের। আর একটা কথা, আমি কিন্তু সাদাময় সবকিছুতেই বিয়ে করব। আমাদের বেড হতে পোশাক পর্যন্ত সব সাদাময় হবে। তারপর কত সময় কেটে যাবে, একে অপরের ছায়া হয়ে থাকব সুখে দুঃখে। আমাদের অনেকগুলো বাচ্চা হবে। তাদের নিয়ে সময়টা আরো মুখরিত হবে। তখন আমি আর তুমি….’

মাহতিম অহনাকে থামিয়ে দেয়,’ এত স্বপ্ন যদি সত্যি না হয়, কষ্ট পাবে?’

‘ উঁহু! এমন কথা বলোনা। আমি সহ্য করতে পারব না সেটা।’

মাহতিমের চোখ লাল হয়ে আছে। কান্না পাচ্ছে তার। নিজেকে সামলে নিয়ে একখানা চিরকুট দিল অহনাকে। অহনা হাতে নিয়েই সেটা খুলতে চাইলে মাহতিম বাঁধা দিয়ে বলে,’ উঁহু! এখন না। এটা তুমি অবসরে খুলবে। কাল দেখো এই লেখা।’

‘ কি আছে এটায়?’

‘ তখন‌ই না হয় দেখো। এখন খুলোনা।’

অহনার মাহতিমকে ছেড়ে দেয়। হাতে হাত রেখে আরেকবার আলিঙ্গন করে চলে যায়।

আরিশ হলুদ পাঞ্জাবী পরেছে। লাবণী এক দৃষ্টিতে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। সে নিজেকে কল্পনায় নিয়ে গিয়েছে। যেখানে সে আর আরিশ একসাথে বসে আছে। তাদের হলুদের পর্ব চলছে। কত খুশি লাবণী। সবাই তাদের হলুদ ছোঁয়াচ্ছে। লাবণী এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখতে না পেরে আরিশকে কাছে টেনে নেয়। মৃদু স্বরে বলল,’ আমার সবচেয়ে প্রিয় তুমি। পেয়ে গেলাম খুব সহজে।’

বলেই তার ঠোঁটে আকৃষ্ট হয়ে চুমু খেতে গেলেই আদ্রিতা নিজের মুখে হাত দিয়ে নেয়,’ কি করছ আপু? তুমি কি এখন আমাকে চুমু খাবে নাকি?’

লাবণী আরিশের জায়গায় আদ্রিতাকে দেখে দূরে সরে যায়। কিছুটা দূরে তাকায়ে দেখে আরিশ সবার সাথে কুশল বিনিময় করছে।

লাবণী লজ্জা পেয়ে যায়। আরিশ ভেবে একটু আগে আদ্রিতাকে চুমু খেতে যাচ্ছিল। নিজের মাথায় নিজের চাপড় দেয়। আদ্রিতা ওকে সূক্ষ নজরে পরখ করে বলল,’ কি হয়েছে তোমার? তুমি কি আমাকে ভাইয়া ভেবেছিলে নাকি?’

‘ না মানে! দেখ পেছনে হ্যারি দাঁড়িয়ে আছে।’

এটা বলেই লাবণী চলে যায়। আদ্রিতা তার পেছনে কাউকেই দেখতে পেল না।

অহনা আরিশকে একসাথে বসানো হয়। দুপাশে দুজন মেয়ে মেহেদী লাগিয়ে দেবে। আরিশ অনেক খুশি। সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তার ভেতর চিন্তার ছিটে ফোঁটাও নেই। সে অনেক উপভোগ করছে পুরো সময়টা। যদিও চোখ জোড়া স্থির রয়েছে অহনার দিকে। কয়েকজন এসে মজা নিয়ে গেল। আরিশের এমন তাকিয়ে থাকা দেখে অহনা ঢোক গিলে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,’ এটা সত্যি না। আপনি এত কি দেখছেন?’

‘ তোমাকে!… না মানে, তোমার শাড়িটা।’

অহনা নিজেকে দেখে,’ কোথায় কি? আমার শাড়ি একদম ঠিক আছে।’

আরিশ লজ্জা পেয়ে যায়। কি বলতে কি বলে ফেলেছে। সেতো আর বলতে পারছে না যে, সে অহনাকে দেখছে। অহনা আর কিছু না বলে মেহেদীর দিকে মনোযোগ দেয়।আরিশের বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা শুরু হয়েছে। অহনা ঠিক তার সাথে বসে আছে হলুদে আবৃত হয়ে। এমন দৃশ্য যে পুরুষ দেখেছে, সেই জানে সময়টা কতটা মোহনীয়।

অহনা পাশেই মাহতিমকে দেখতে পায়। এটা নিঃশ্বাসেই যেন দেখে শেষ করে দেবে। চোখ ছলছল করছে মাহতিমের। নিজের ভালোবাসাকে অন্যের সাথে দেখছে সে। একটু পর অহনার রাঙা হাতকে আরো রাঙানো হবে। সেই রাঙা হাতে থাকবে আরিশের নাম।
অহনা ছটফট করছে উঠে যেতে। কিন্তু পারছে না। নিয়মগুলো তাকে মানতেই হবে। এখন বাঁধা দিলে সমস্যা হবে।

আরিশের হাতে অহনার নাম লেখা হলো। আদ্রিতা এসে বলল,’ আমার মনে হয় ভাইয়া আর পুতুল ভাবীর হাতে এক‌ই মেহেদী লাগানো উচিত, কম্বিনেশন করে।’

আদ্রিতা দুজনের হাত কাছাকাছি এনে বলল,’ তোমরা একে অপরের হাত ধরে, একসাথে মেহেদীর ডিজাইন থাকলে সুন্দর দেখা যাবে।’

আরিশ দেখল অহনার মুখ গোমরা। সে চায় না এটা করতে। আরিশ অহনার মনের অবস্থা বুঝতে পারে। তাই বলল,’ আমি কম্বিনেশন পছন্দ করি না‌। তাই আলাদা দেওয়াটাই ব্যাটার হবে।’

‘ কিন্তু ভাইয়া…’

‘ আর কোনো কিন্তু না। আমি যা বলছি তাই শেষ কথা।’

আদ্রিতা রেগেমেগে চলে যায়। একটা বুদ্ধি দিল, সেটাও আরিশ কানে নিল না। অহনা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলে।

আরিশের হাতে অহনার নাম লেখা হলো। কিন্তু অহনার হাতে লিখতে গেলেই সে বাঁধা দিয়ে বলল,’ নাম লিখলে ডিজাইন খারাপ হয়। তাই লিখতে হবে না।’

মেয়েটি অহনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,’ না আপু! বিয়েতে কনের হাতে বরের নাম লিখতে হয়। তবে সেটা আপনার ইচ্ছা।’

অহনা বুদ্ধি করে বলল,’ আমার বরের নাম আমি নিজে লিখব, তুমি জায়গা খালি রাখো।’

রুমিকে মতি জোর করে অনেকটা ওয়াইন খাইয়ে দিল। বেচারি শরবত ভেবে খেয়ে নিল। ওদের সময়টা খুব মিষ্টি ছিল। এক পর্যায়ে রুমি চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে। অবস্থা বেহাল দেখে মতি ওকে ঘরে নিয়ে যায়।

চলবে….

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৭৫.
অহনা কিছুটা বিরতি নিয়ে আড়ালে যায়। হাতে তার মেহেদী। মাহতিমের পাশে এসে দাঁড়ায়। দু হাতের মেহেদী দেখিয়ে বলল,’ দেখো, কত সুন্দর লাগছে। এখন এই হাতে তোমার নাম লিখব। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে গেলে মেহেদী দেওয়ার সময় পাব না। তাই এখন দিয়ে নিই।’

মাহতিম নির্বিকার তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। হাস্যোজ্জ্বল অহনার দীপ্তিমান হাসি দেখে সে নিজের মনকে থামিয়ে রাখতে পারল না। দেয়ালে আ’ঘাত করে। অহনা ঠোঁট উল্টে বলে,’‌ উমম! আমার হাতে তোমার নামটা তুমিই লিখে দাও।’

মাহতিম নাকোচ করে,
‘ আমি পারব না। তোমার হাতে আরিশের নাম লেখা উচিত ছিল।’

‘‌ কি বলো এসব? তুমিতো দেখছি নিজের ব‌উকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চাও।’

কথাটা শুনে মাহতিমের বুকটা ধ্বক করে উঠল। ঝাঁঝালো এক শব্দ কানে আসছে। বার বার কানে বাজছে,’ সময় ফুরিয়ে এসেছে, হাতে বিন্দুমাত্র সময় নেই, কার্য হাসিল করো আর ফিরে যাও।’

শব্দগুলোর প্রতিধ্বনিতে মাহতিমের শরীর বিষিয়ে উঠতে থাকে। কান চেপে ধরে। অহনা মাহতিমকে এমন করতে দেখে আস্তে করে ঘরে নিয়ে যায়। লোক সমাগম থেকে দূরে কিছুটা সুস্থ অনুভব করে সে। অহনার হাত দু’টো জড়িয়ে ধরে। ভীষণ হাঁসফাঁস লাগছে তার। দম আটকে আসছে। হারিয়ে ফেলার এক তীব্র ব্যথা অনুভব করছে। বুক আঁকড়ে ধরেছে না পাওয়ার উচ্ছ্বাস। মাহতিমের নাকের পাটা লাল হতে থাকে। শীতে কেমন জমে যাচ্ছে। অহনার হাত দুটো নিজের মুখের কাছে নিয়ে বলল,’ আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো, আমি তোমাকে নিয়ে চলে যাব। খুব দূরে চলে যাব। খুব শান্তিতে থাকব আমরা দুজন।’

‘ ঠিক আছে, কিন্তু তুমি এখন বিশ্রাম নাও। শরীর খারাপ করছে তোমার। জ্বর এসেছে মনে হয়।’

এত কষ্টের মাঝেও মাহতিম হাসে,’ পাগলি মেয়ে। আমি মানুষ ন‌ই যে জ্বর আসবে।’

অহনা কোনো কথা না শুনে মাহতিমকে খাটে শুইয়ে দেয়। লেপ মুড়ি দিয়ে থাকে মাহতিম। বাচ্চাদের মতো অহনার হাত আঁকড়ে ধরেছে। শীতে সে জমে যাচ্ছে। অহনা বুঝতে পারছে না কি করবে। উঠে যেতে চাইলেই মাহতিম বাঁধা দেয়,’ উঁহু! যেও না তুমি। আমার কাছেই থাকো। তোমায় দেখলেই আমি সুস্থ হয়ে যাব।’

‘ আমি আছি, তোমার কাছেই আছি। কোথাও যাব না।’ অহনা আলতো করে মাহতিমের কপালে চুমু খায়। পাশেই হাত ধরে বসে থাকে‌। একটু পর পর কপালে হাত দিয়ে দেখছে।

রুমি বলেছিল সে কখনো ওয়াইন খায়নি। তাই ওকে অভ্যাস করানোর জন্য মতি জোর করে খাইয়েছিল। কিন্তু বুঝতে পারেনি হিতে বিপরীত হতে পারে। রুমি নেশা সহ্য করতে পারেনি। রিয়্যাকশন বেশি হয়ে গেছে। মতি ওকে খাটে শুইয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে কি করবে? বোধ বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে। নিজের ঘরে নিয়ে আসলো রুমিকে। এখন যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে উল্টা পাল্টা ভাববে। দোষটা মতি নিজেকেই দেয়। সে যদি জোর করে না খাওয়াতো তাহলে এমনটা ঘটতো না কখনোই। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
দেখতে পায় টেবিলের নিচে বিয়ার রাখা। আরিশ তাকে খেতে না করে তাই লুকিয়ে খায়। এই মুহূর্তে এটা দেখে তার লোভ হয়। মাথাটাও ধরে আছে, তাই অনেকটা খেয়ে নেয়। শরীরের ভার ছেড়ে দেয় তার। নেশালো হয়ে যায়। চোখে মুখে তৃপ্তি লেগে থাকে। খেয়াল করল খাটের উপর রুমিকে। এপাশ ওপাশ করছে সে। মাথা তুলতে পারছে না। ভারী হয়ে গেছে খুব।

মতির লোভ হয় রুমির প্রতি। সোনালী লেহেঙ্গায় রুমিকে দেখে সে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মেদহীন উদরের দিকে নজর যায় তার। উন্মুক্ত হয়ে আছে। আরো আকর্ষণ অনুভব করে সে। ক্রমশ এগিয়ে যায় রুমির দিকে। হঠাৎ তার বিবেক নড়ে ওঠে। কি করতে যাচ্ছে সে। নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

খাটের এক পাশে বসতেই তার চোখ আবারো রুমির দিকে স্থির হয়ে যায়। নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। বারবার তার উন্মুক্ত উদরের দিকে চোখ যাচ্ছে। অধরের স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করছে‌। নিজেকে সে একদম রুমির কাছে নিয়ে যায়। শরীরের ঘ্রাণ নিতে থাকে। এক পর্যায়ে নিজেকে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করে রুমির মাঝে। নেশালো রুমি নিজের অজান্তেই ভুল করে বসে। সাক্ষী শুধু নিভু নিভু ড্রিম লাইট।

আরিশ অনেকক্ষণ অহনাকে না দেখে উঠে আসে‌। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। বারান্দা পেরুতেই তার চাচা আলীমান ডেকে বলল,’ আরিশ, মতিকে দেখছি না, কোথায় সে?’

‘ ঘরে আছে হয়তো। অনেকক্ষণ দেখিনি আমিও।’

‘ আমার একটু কাজ ছিল বাইরে যেতে হবে। ওকে দেখলে বলে দিস ফুলগুলো যেন ঠিক সময়ে নিয়ে আসে। আমার আর সময় হয়ে উঠছে না।’

আলীমান চলে যেতেই আরিশ অহনার কাছে না গিয়ে মতির ঘরের দিকে র‌ওনা দেয়। মতিকে তার কাজটা বুঝিয়ে দিয়েই না হয় অহনার সাথে দেখা করবে।

আদ্রিতা মেহেদী দিতেই ব্যস্ত ছিল। এমন সময় হুড়মুড় করে গায়ের উপর এসে পড়ল হ্যারি। সমস্ত মেহেদী তার গালে লেপ্টে গেল। আদ্রিতা পুরো গায়ের শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠে। হকচকিয়ে উঠে হ্যারি।
ফুলের গোছা হাতে নিয়ে সে আসছিল। কোন কুক্ষণে পা আটকে পড়ে গেল। পড়ল তো পড়ল, আর কোনো জায়গা না পেয়ে একদম আদ্রিতার কোলে।

রাগে গজগজ করতে থাকে আদ্রিতা। হ্যারি কেটে পড়ার ধান্ধা করছে। এবারের মত বেঁচে যাওয়ার ফরিয়াদ করছে আল্লাহর কাছে,’ ওহ আল্লাহ্! এবারের মত বাঁচিয়ে দাও, আর কখনো এমন শাক’চুন্নীর মুখোমুখি হব না‌।’

আদ্রিতা রেগেমেগে দুহাতের সব মেহেদী আরেক দফা হ্যারির গালে লেপে দেয়,’ নষ্ট করেছ না আমার মেহেদী মাখা হাতটা। এবার দেখো কেমন লাগে! তোমার মুখ‌ও রঙিন করে দিলাম।’

বলেই ঠোঁট বাঁকা করে চলে গেল আদ্রিতা। সবাই হ্যারিকে দেখে হাসছে। ভুল করে হলেও কেমন সবার হাসির পাত্র হয়ে গেল। মুখটা জ্বলছে খুব। মুখে কখনো মেহেদী শ্যুট করে না।

হ্যারি থমথমে মুখে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অপমানে তার শরীর রি রি করে। চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তৎক্ষণাৎ মনে হলো অহনা রাগ করবে তার উপর। তাই এই সিদ্ধান্ত বদলালো। কিন্তু এই আদ্রিতার থেকে দূরে থাকবে বলে ঠিক করল।

আরিশ মতির ঘরে যেতেই অবাক হয়ে যায়। আচমকা এমন কিছু দেখবে সে ভাবতে পারেনি। চোখ লাল হয়ে আসে তার‌। তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়িয়ে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে ধমকের সুরে মতিকে ডাক দেয়,’ এসব কি হচ্ছে এখানে?’

হকচকিয়ে উঠে মতি। নিজেকে কাপড়ে মুড়িয়ে সাথে সাথে লাফিয়ে আসে আরিশের দিকে। কথা বন্ধ হয়ে গেছে‌ তার। কি বলে কি বোঝাবে বুঝতে পারছে না।

আরিশ কষে একটা থা’প্পর বসিয়ে দেয় মতির গালে। চার আঙুল বসে যায় তার শক্তপোক্ত গালে।

‘ ভাই, তুমি আমাকে মারলে?’

‘ তোকে তো আমি..’

আরিশ কলার চেপে ধরে মতির,’ কি করছিলি তুই? আমার মাথা ঘুরছে, এসব কি… আমি কিছু ভাবছে পারছি না।’

‘ ভাই, আমার কথাটা শুনো একবার। আমি সবটা বুঝিয়ে বলছি।’

আরিশ পুনরায় থা’প্পর মারে মতিকে,’ আমাকে এখন কি বুঝাবি তুই? অহনা এসব জানতে পারলে কি করবে ভেবে দেখেছিস?’

রুমির জ্ঞান ফিরে আসে। নিজেকে অন্য এক অবস্থায় আবিষ্কার করে চিৎকার করে উঠে। কোনোমতে সামলে নেয়। আরিশ ওর কাছে গিয়ে বলল,’ তুমি শান্ত হ‌‌ও, আমি দেখছি বিষয়টা। দয়া করে শান্ত হ‌‌ও।’

মতি কিছু বলার আগেই আরিশ বলল,’ তোকে পুলিশে দেব। আর সুযোগ দেব না। আজ যে অন্যায় করেছিস সেটা সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ।’

মতি আরিশের পা জড়িয়ে ধরে,’ না ভাই, এটা করো না। আমি সজ্ঞানে কিছু করিনি। এতে না আমার সম্পূর্ণ দোষ আছে না রুমির।’

‘ দোষ নেই তোর? ওকে এই ঘরে এনেছে কে?’

‘ বাইরে ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি তাই আমি নিজের ঘরে নিয়ে এসেছিলাম ওকে।’

‘ ঘরে এনেই তার অসহায়তার সুযোগ নিলি? তুই একটা অমানুষ, কখনো মানুষ হবি না। এমন অমানুষের একটাই শাস্তি, জেলে পচে মরবি, আমি আর দয়া করব না।’

মতি কান্না করে দেয়,’ আমি ওকে ভালোবাসি ভাই, আমি বুঝতে পারিনি, কি থেকে কি হয়ে গেল।’

আরিশ আরেক দফা অবাকের পর্যায়ে পৌঁছে। রুমি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছে না। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে হতেই হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে। কত‌বড় ভুলটাই না করে বসল। আর কিছু ভাবতে পারছে না, অসহায়ের মত কান্না করছে।

আরিশ মতিকে বলল,’ নিজেকে বাঁচাতে এবার মিথ্যে বলছিস? এবার মেয়েটার ইমোশন নিয়েই খেলার ইচ্ছে হলো নাকি।’

‘ না ভাই, তুমি ওকে জিজ্ঞেস করো। ও নিশ্চয় আমাকে ভালোবাসে। যা হয়েছে ভুল করেছি, আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’

‘ ও কি তোকে বিয়ে করতে চাইবে?’

আরিশ রুমির কাছে যায়,’ মতি যা বলছে সত্যি? তোমরা একে অপরকে পছন্দ করো?’

রুমি একবার আরিশের দিকে তাকায় আরেকবার মতির দিকে। মতি অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে রুমির দিকে। রুমির একটা উত্তর‌ই সব ঠিক করে দেবে। যদি তারা একে অপরকে আগে থেকেই পছন্দ করে থাকে তাহলে এই ভুলটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারা যদি একে অপরকে মেনে নেয় তাহলে সামান্য ভুলটা আর গাঢ় হবে না।

রুমি কিছু বলার আগেই দরজায় মোড়লকে দেখতে পায়। মোড়ল মতির সাথে কথা বলতে এসেছিল। এসেই আরিশ আর মতির সব কথোপকথন শুনে নিল।
মোড়ল লোকটা একদম ঠান্ডা মস্তিষ্কের। ঠান্ডা মাথায় সব সমাধান করতে পছন্দ করেন তিনি। কখনো তাকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়নি। এখনো তিনি সুস্থ মস্তিষ্কে থেকে ঘরের ভেতর কদম ফেলেন। মতির হৃদ কাঁপতে থাকে। আরিশকে সে যতটা না ভয় পায় মোড়লকে আরো বেশি পায়।

মোড়ল এগিয়ে এসেই আরিশকে বলল,’ ওকে বলে দে, আজকের পর যেন এই বাড়ির ত্রিসীমানায় না দেখি। এমন কুলা’ঙ্গার ছেলে আমার চাই না।’

চলবে….

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৭৬.
মাহতিম অনেকটা সুস্থ বোধ করে। চোখের অন্ধকার ছায়াটা চলে গেছে। অনেকটা তাজা মনে হচ্ছে নিজেকে। উঠতে চাইলে অহনা বাঁধা দিয়ে আরো কিছুটা সময় শুইয়ে রাখে।

মতি মোড়লের পা জড়িয়ে ধরে,’ বাবা, আমি রুমিকে ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই। আপত্তি করবেন না দয়া করে।’

মোড়লের রাগ গলে আসে। তিনি রুমির মতামত জানতে চায়। শেষ পর্যন্ত রুমি মত দিয়ে দেয়। রুমির পরিবারকে ডাকা হয়।
মোড়ল বাইরে গিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে দেয় আরিশ এবং মতির বিয়ে এক‌ই দিনেই হবে। একদিনে দুই ভাইয়ের বিয়ে। সবাই এমন সিদ্ধান্তের কারণ জিজ্ঞেস করলে উনি এড়িয়ে গিয়ে বলল,’ ছেলে মেয়েরা একে অপরকে ভালোবাসে, আমি চাই সেটা পূর্ণতা পাক। বড়রা মেনে না নিলে বাচ্চারা ভুল করে বসে। আমি চাই না মতি কোনো ভুল করুক, তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম। আশা করি কারো কোনো আপত্তি থাকবে না।’

রুমির পরিবার সহজেই রাজি হয়ে যায়। যদিও সময়টা ঠিক না তবুও রুমি কাকুতি মিনতি করে ঠিক করে নেয়।

অহনা বেড়িয়ে আসে। মাহতিম সুস্থ থাকায় সেও আসে। হলুদ ছোঁয়ানোর অনুষ্ঠান শুরু হয়। একসাথে আরিশ-অহনা এবং মতি-রুমির।

পরদিন সকালে অহনা এবং রুমিকে একসাথে গোসল করানো হয়। অহনার মনোযোগ ছিল মাহতিমের দিকে। সে একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। অহনাকে গোসল শেষে পরিপাটি করার জন্য নিজের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। রুমিকেও অহনার ঘরে এনে রাখা হয়।

অহনা চুপি চুপি রুমির কাছে সত্যি জানতে চায়। কেন মোড়ল হঠাৎ তাদের বিয়ের ঘোষণা করে, এমন কি করেছিল তারা?

রুমি কিছু বলতে চায় না। মুখ ভার করে থাকে। মতির প্রতি তার আলাদা একটা ঘৃণা জন্ম নিয়েছে তবুও সে নিজের কথা ভেবেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। যদি পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হয় তাহলে তার সম্মানে আ’ঘাত লাগবে তাই সহজেই রাজি হয়ে যায়। কিছুটা বিশ্বাস আছে মতির উপর, যদি সে ভালো হয়ে যায়।

অহনা জোর করার পর রুমি সব সত্যিটা বলে দিল। অহনা রেগে যায়,’ এত কিছু ঘটে গেল, আর তুই ঢ্যাংঢ্যাং করে রাজী হয়ে গেলি?’

অহনা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গেছে। তার রাগান্বিত উক্তি শুনে সবাই সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। রুমি অহনাকে শান্ত করার জন্য বলল,’, দোষ আমারো ছিল। আমিও দোষ করেছি। আমি তার প্রতি দুর্বল ছিলাম।’

‘ কিই? এতকিছূ ঘটে গেল, আর আমি এখন জানতে পারলাম। আমাকে তুই কখনো কিছু বলিসনি। কেন?’

‘ কি বলতাম আমি? আমি নিজেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। এর‌ই মাঝে এই বিষয়টা ঘটে গেল। আমি নিজের এবং আমার পরিবারের সম্মান বাঁচাতে রাজি হয়ে গেছি। তবে আমার বিশ্বাস মতি ঠিক হয়ে যাবে। এইটুকু বিশ্বাস আমি করতেই পারি।’

মতি এবং আরিশ অহনার ঘরে প্রবেশ করে। বরকে বিয়ের আগে এভাবে ব‌উয়ের কাছে আসতে দেখে মহিলারা হাসাহাসি করে।
একজন বলল,’ আরিশ, আর কিছুক্ষণতো অপেক্ষা করতে পারতে। তর সইছে না নাকি?’

মুখে আঁচল গুঁজে আবারো হেসে উঠে। মূলত সে আসতে চায়নি। মতি এসেছে রুমির সাথে দেখা করবে বলে। কাল থেকে রুমি তার সাথে একটাও কথা বলেনি। একদম সুযোগ পাচ্ছে না। তাই এভাবে কথা বলতে এলো। সঙ্গে আরিশকে নিয়ে এসেছে, যেন কেউ বাঁধা না দেয়।

আরিশ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ আপনারা যদি একটু বাইরে যেতেন তাহলে ভালো হতো।’

তন্দ্রা উঠে এসে আরিশের কান ধরে বলল,’ তাই বুঝি বাপধন?‌ এখনো বিয়ে হয়নি এখনই আমাদের বের করে ব‌উয়ের সাথে আলাদা কথা বলতে চাও?’

‘ না চাচি, এমন কোনো ব্যাপার না। তবে কিছু কথা বিয়ের আগেই সেরে নেওয়া ভালো, না হয় পরে আফসোস থেকে যায়।’

‘ আচ্ছা, ঠিক আছে।’

তন্দ্রা সকল মহিলাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। আরিশ অহনাকে বলল,’ তুমি বারান্দায় চলে আসো, ওদের একাই কথা বলতে দাও। বিয়ের আগে বোঝাপড়া করে নিক, না হয় প্রথম দিন থেকেই অশান্তি লেগে থাকবে।’

অহনা মাথা নাড়িয়ে আরিশের সাথে বারান্দায় চলে আসে। পশ্চিমে বারান্দাটা। অহনা দূরে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরিশ‌ও কোনো কথা না বলে যতদূর চোখ যায় দেখতে থাকে।

মৃদু বাতাস ব‌ইছে। সকালের এই স্নিগ্ধ বাতাস মনের আরিশের গহীনে কড়া নাড়ে। সে অহনার দিকে তাকায়। অহনার চোখে মুখে লাবণ্য ছড়িয়ে রয়েছে। সদ্য গোসল করে আসায় তার ভেজা চুলের আকর্ষণটা আরো বেশি। আরিশ মুগ্ধ নয়নে দেখে। বেহায়া মন তার, দেখেও সাধ মিটে না। বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে এক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে।

মতি কোনো কিছু না ভেবেই রুমির হাতজোড়া চেপে ধরে কেঁদে উঠে,’ এভাবে মুখ ফিরিয়ে থাকবে না। আমার খুব কষ্ট হয়। আমি সত্যি খুব খারাপ ছেলে, আমি তোমার সাথেও অন্যায় করলাম। কিন্তু এটাকে তুমি অন্যায় হিসেবে ধরে নিও না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমাকে তুমি হাজারটা শাস্তি দাও আমি মাথা পেতে নেব কিন্তু ইগনোর করোনা। আমার সহ্য হয়না। তোমার চোখে আমি নিজের জন্য অনেক ভালোবাসা দেখেছি, সারাজীবন সেটাই দেখতে চাই। রাগ করে থেকো না আমার উপর।’

রুমি হাত ছাড়িয়ে নিতেই মতি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,’ এবার বলো, তুমি কি আমাকে অনুভব করতে পারছো না? তোমার মনে কি আমার জন্য কোনো ফিলিংস আসছে না? আমি জানতে চাই, বলো!’

‘ ছাড়ুন আমাকে আর চলে যান।’

‘ তুমি শান্ত হয়ে একবার অনুভব করো আমাকে। শুধু একবার।‌ আমার ছোঁয়া তোমার খারাপ লাগবে না। কারণ ভালোবাসার ছোঁয়া কখনো খারাপ হয়না।’

রুমি চোখ বন্ধ করে নেয়। দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে শীতল মাটিতে। সকল রাগ তার পানি হয়ে গেছে। বেহায়া ভালোবাসা সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেয়, এটা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। রুমিও জড়িয়ে ধরে শক্ত করে,
‘ আপনাকে আমি বিশ্বাস করি কি করে? আপনিতো নিজেকে সামলাতেই পারেন না। পরবর্তীতে আবার কোনো মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবেন না, সেটা কি করে বিশ্বাস করি আমি?’

মতি দৃঢ় কন্ঠে জবাব দেয়,’ জীবনে আর কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাব না। যদি তাকাই তাহলে আমাকে মে’রে দিও বা পাবনা রেখে এসো। আমি প্রমাণ পত্রে সিগনেচার করে দেব। আমার কথার দাম আমি দেব। জীবনে বহু অন্যায় করেছি। জেনে না জেনে হাজার জনকে কষ্ট দিয়েছে, আর দেব না। আর একবার সুযোগ দিয়ে দেখো, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো হাজবেন্ড হয়ে দেখাব। তোমার বরকে দেখে সবাই হিংসে করবে দেখে নিও।’

” সত্যিতো!’

‘ এক হাজারবার সত্যি। আমি এতদিন মিথ্যের পেছনে ঘুরে বুঝেছি সত্যিটা কেমন হয়।’

‘ এবার থেকে সত্যিকারের ভালোবাসবেন?’

‘সবসময়।’

মাহতিম অহনার পাশে এসে দাঁড়ায়। অহনা আরিশের দিকে এক নজর তাকিয়ে মাহতিমকে বলল,’‌ আমার ভয় হচ্ছে, তুমি কি সত্যি আজ আমাকে নিয়ে যাবে? আমি তোমার কোনো ভাবগতি দেখছি না।’

মাহতিম মৃদু হাসে,’ একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি, তুমি, আমাদের সবার সুখের সন্ধানের সমাপ্তি ঘটবে।’

‘ আমি তোমার বাঁকা কথা বুঝি না। আমাকে বলো, তুমি কি ইভিল স্পিরিটের ব্যবহার করেছ?’

আরিশ অহনাকে বলল,’ হ্যাঁ। চিন্তা করো না।’

মাহতিম আরিশের চোখে করুণাভরে তাকায়। ভেতরটায় কতটা দহন হচ্ছে তা হয়তো কেউ টের পাচ্ছে না। আরিশ মাহতিমের কাঁধে হাত রেখে বলল,’ আমি যাই।’

অহনা অগ্নিশর্মা হয়ে মাহতিমকে বলে,’‌ আমি খেয়াল করে দেখছি, তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছ না। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একবার বলো সত্যিটা কি? আমার ভীষণ হাঁসফাঁস লাগছে।’

মাহতিম চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নেয়। অহনার হাতজোড়া আলিঙ্কন করে বলল,’ তোমার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় এই বুঝি ভস্ম হয়ে যাব।’

‘ কেন তোমার এমন মনে হয়?’

মাহতিম কথা ঘুরিয়ে বলল,’ ভেজা চুলে তোমাকে কতটা সুন্দর লাগে, তুমি কি সেটা কখনো খেয়াল করেছ?’

অহনা কিছু বলল না। বেশ বুঝতে পেরেছে মাহতিম কথা ঘুরাচ্ছে। মাহতিম আবার বলল,’ কখনো কি ভেবে দেখেছ তোমাকে এমন শুভ্রতায় দেখে আমার হৃদয়ে কতটা তোলপাড় হয়?‌ তুমি আন্দাজ করতেও পারবে না আমার অনুভূতি সব।’

অহনা দু হাতে জড়িয়ে ধরে মাহতিমকে,’ আমি বুঝতে পারছি, তুমি কথা ঘুরাচ্ছ। এসব বলে লাভ নেই। তুমি কি সত্যি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে? আমি কিন্তু সব রেডি করে রেখেছি। একটু পর তুমি আমাকে নিয়ে যাবে। আমরা দূরে কোথাও চলে যাব। কেউ দেখতে পাবে না।’

‘ হুম আমার আহি, খুব দূরে চলে যাব। কেউ চাইলেও আর খুঁজে পাবে না। জানো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি!’

‘ আমি জানি। আর বলতে হবে না।’

‘ যদি কখনো ভুল বুঝো? তবুও বলব ভালোবাসি!’

‘ আমিও, ভীষণ ভালোবাসি!’

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ