(96 একটা রোমান্টিক তামিল মুভি)
একজন ভদ্রমহিলাকে চিনতাম যিনি বিয়ের ১৯ বছর পরও প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যান।বিষয়টা তার স্বামী জানেন এবং মেনে নিয়েছেন।গল্পটা প্রথম থেকেই বলি,
সুমী আন্টি (ছদ্ম নাম) যখন প্রেম করতেন উনার বয়স কুড়ি, ছেলেটার ২২। অনাথ ছেলে,পাশের বাসায় সাবলেট থেকে পড়াশোনা করত।সুমী আন্টি অঙ্ক বুঝতে যেতেন,সেই থেকে পরিচয় তারপর প্রেম। বনেদি পরিবারের আদরের সন্তান। ৪০ বছর বয়সেও আন্টির টকটকে ফর্সা রঙ, দুগালে লালচে আভা।ঘন কালো চুলে লম্বা বেনুনী গাঁথেন।সহজেই আন্দাজ করা যায় তরুনী বয়সে কতটা রুপসী ছিলেন। বাবা রাজি হলেন না, ছেলে বেকার।কিছুতেই যখন বিয়ে আটকাতে পারছিলেন তখন সুমী আন্টি বিয়েতে রাজি হলেন এক শর্তে,
-বাবা আমি আপনার কথায় রাজি কিন্তু ওর সাথে মাসে একদিন কথা বলব, আপনি কিংবা ঐ পরিবার আপত্তি করতে পারবে না।
বাবা ভেবেছিলেন অল্পবয়স্কা মেয়ের খেয়াল। বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। হল না। মাসে একদিন সে সত্যি ফোন করে, সুমী আন্টি কথা বলেন। কিছুদিন পর স্বামীর নজরে আসে, যোগাযোগ বন্ধ হয়৷ স্বামী বেচারা দেখলেন,
তার বিবাহিতা স্ত্রী মাসের শেষের দিন গুলোতে হিস্টিরিয়া রোগীর মত আচরণ করেছর। শরীর প্রচণ্ড জ্বর, কিছুতেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তিনিই ফোন করলেন।সামনে বসে স্ত্রীর ফোনালাপ শুনলেন,
-কেমন আছ?
-ভালো।
-তুমি?
-ভালো।
ভদ্রলোক অবাক হয়ে দেখতে পারলেন সামান্য দুচার মিনিট কথায় তার স্ত্রী প্রাণশক্তি ফিরে পায়।সুমী আন্টি এখনও ফোন ইউজ করেন না, ফেসবুকে অ্যাক্টিভ নন। দুই সন্তানের জননী হাসিমুখে সংসারের হেঁসেল সামলান।শুধু মাসের নির্দিষ্ট দিনে স্বামীর কাছ থেকে ফোন চেয়ে নেন।জিজ্ঞেস করেছিলাম,
-আন্টি, এ আঙ্কেল বিয়ে করেছেন?
-না। ও স্কলারশীপ পেয়ে জার্মানী চলে গেছিল সেখানেই স্থায়ীভাবে থাকা হয়।
-দেশে আসেন না?
-আসবে। সামনের আগস্টে।
-দেখা করবেন?
-দূর থেকে এক পলক দেখা আসব। কাছে যাব না। সঙ্কোচ হয়।
বলতে বলতে এই মধ্যবয়সেও সুমী আন্টির চোখমুখে সজীবতা খেলা করে।
লোকে বলে প্রেম যতটা দেয় তারচেয়ে অনেক বেশি কিছু কেড়ে নেয়। কুড়ি বছর আগের অপরিণত প্রেম আজও সুমী আন্টিকে বেঁচে থাকার উৎস যুগিয়ে যাচ্ছে।
আমার এক বন্ধু আছে ওর গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে গেছে আড়াই বছর আগে। ও বান্ধবীর বিয়ের দিন ফোন করে বলে,
– আয় সেলিব্রেট করি। হারামজাদী ঘাড় থেকে নেমে উদ্ধার করছে। সিগারেট খেও না, এটা করো না ওটা করো না। বাল! আমি কি ওর বাপের পয়সায় চলি।
ছয় মাস না ঘুরতে বন্ধুর নতুন গার্লফ্রেন্ড হল।ওর টাইমলাইন কাপল ছবির ছড়াছড়ি। ১৯ শে জুন ও মেসেজ করে,
-দোস্ত তুই কই?
-বাড়ি। তোদের এলাকায় অ্যানিকে সাথে নিয়ে ঘুরতে আসছিলাম।তুই বের হবি?
-না।
ফুট।
সেদিন রাতে ওর ফোন। খুব কাঁদছে।
-দোস্ত, আমি ওকে খুব মিস করছি। কাকে?
-দিয়াকে।
-তোর না গার্লফ্রেন্ড আছে।
-কিন্তু সেরকম ফিলিংস আসে না।
-তাহলে প্রেম করিস না।
ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
-শো অফ।আমার কি মনে হয় জানিস?
-কি?
-আমি যেমন ওদের কাপল ছবি দেখে কষ্ট পাই ও ছবি দেখে তাই পায়।
-দুর।
-তুই বুঝতে পারছিস না, দিয়াও আমাকে দূর থেকে খুব মিস করছে, ভালোবাসছে। তাই তো ও আমার মাথা থেকে বের হচ্ছে না। এটা এক প্রকার টেলিপ্যাথি।
আমার সেই বন্ধুটি পরিচিত শহর, পরিবার ছেড়ে চিটাগাং জব করে।ওর প্রাক্তনের শ্বশুরবাড়ি।জিজ্ঞেস করেছিলাম,
-দিয়ার সাথে দেখা হয়?
-উহু। ফোন করেছিলাম রিসিভ করে না।
-তাহলে ওখানে একলা পরে আছিস কেন?
-তাতে কি হয়েছে? আমরা এক শহরে বাস করি,প্রতিবেশী যাকে বলে।
ওর চোখমুখে তৃপ্তির হাসি।
সম্ভবত প্রত্যেকের জীবনে একটা 96 এর গল্প থাকে।অযত্নে, অনাদরে গল্পের উপর বাস্তবতার ধুলা জন্মায়। বিষণ্ন মুহূর্তে সকলের অগোচরে ধুলার চাদর সরিয়ে স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে। স্বপ্ন দেখে 96 এর মত একটা রাতের, অ্যালবামে আরো কিছু স্মৃতি জমুক।
#হাবিবা সরকার হিলা
(96 একটা রোমান্টিক তামিল মুভি)