#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গল্পের নামঃ প্রয়োজন পর্বঃ ০১
লেখাঃ তানিয়া তানু
সূর্যের প্রচন্ড শাসনে ধরীত্রীর বক্ষ বিদীর্ণ। হৃদয়ে আগুন জ্বালায় রোদ্র তাপে। সেই আগুনের জ্বলায় তৃষ্ণায় কাঁপে গলা। কিন্তু রাস্তায় পানি খুঁজার থেকে নীরবে হাঁটাই শ্রেয়। তাই তো প্রায় আধা ঘন্টা ধরে আমি হেঁটেই চলেছি পথিকের মতো। গন্তব্য যেন আর শেষ হয় না। এখন খুব করে ইচ্ছা করছে একটা রিক্সায় উঠতে। পা দুটো যেন চলে না আর। কিন্তু রিক্সার স্ট্যান্ডে যাওয়া মানে কতগুলো অল্প বয়সী ছেলেদের বিদঘুটে হাসি দেখা। এর থেকে বরং এই নীরব পরিবেশে হাঁটা আর মাঝে কয়েকটা দোকানপাট দেখাই ভালো। এই তো আর দু কদম ফেললেই পৌছে যাবো বাসায়। কী লাভ এইটুকু পথে রিক্সা ধরা? এই কিছু সময় হাঁটার মাঝেই মনে পড়লো ছাত্রীর মায়ের কান্ড। কি খারাপ মহিলা! ভাবা যায়। মাস পেরিয়ে আজ দশদিন হলো অথচ বলে পরের মাসে টাকা দিবে। এদিকে আবার খরচ করছে বেহিসাবিভাবে। আমাকে দিতে গেলেই টাকার যেন অভাব পড়ে। শুধু কি টাকা! এক ঘন্টার জায়গায় মাঝে দেড় ঘন্টা পড়াই। নাস্তা চা আর নুনতা বিস্কুট ছাড়া কপালে কিছুই জোটে না। আবার বলে, “দীপ্তি দেখো তো মেয়েটা বুঝি এই পাঠটা বুঝে না। একটু সময় নিয়ে ওরে বুঝাও মা।” কি ভাবে এরা আমাকে? রোবট নাকি? কবে থেকে নিলা শাঁকচুন্নি বান্ধুবিকে বলছি একটা টিউশনি খুঁজে দে। কিন্তু যেদিন বললাম সেইদিন থেকেই মেয়েটা লাপাত্তা। লে হালুয়া!
বহুপথ পেরিয়ে এলাম আমি আমার ছোট্ট রাজ্যে। যে রাজ্যে পাচঁ বোনের রাজত্ব। তবে বড় আপা এই রাজ্য থেকে বিদায় হয়েছে। রাজার ঘাড় থেকে এক এক বোঝা নামলেও আরো চার চারটা বোঝা রয়ে গেল। এ নিয়ে রাজার দুশ্চিন্তার ঘুম হয় না। রানীই রাজাকে সব সময় বলে, বলেছিলাম চলো কোনো পীর সাহেবের পড়া পানি খাই। তাইলে নিশ্চয় একটা রাজপুত্র হবে। কিন্তু না তুমি আমায় নিয়ে গেলে না আবার নিজেও গেলে না। এবার ঠেলা সামলাও।
রানীর প্রশ্নে রাজা উত্তরে বলেন, আমি পীরকে বিশ্বাস করি না বিবি। আমি আল্লায় বিশ্বাসী। উনার ফয়সালায় আমার আস্থা আছে। জানি কখনো উনি আমায় নিরাশ করবেন না। তাই তো পাঁচ পাঁচটা মেয়ে হওয়ায় আমি গর্বিত। কারণ আমি পাচঁটা জান্নাত পেয়েছি।”
এই কথা শুনে মা আর তেমন কথা বাড়ান না। কারণ তিনিও আল্লায় বিশ্বাসী।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
আমাদের বাড়িটা একতলা বিশিষ্ট। তবে নিজস্ব হওয়ায় ভাড়ার মতো একটা ঝামেলা থেকে রেহাই পেলাম। এই বাড়িটা আমার দাদার আমলের। তিনি খুব সুন্দর করে এই বাড়ির নকশা আকঁলেও অযত্নে এই বাড়িটি খুবই জঘন্য মনে হয়। দাদার দুই বউ থাকায় আমাদের ভাগে কম অংশই পড়েছিল। বাবাও চেয়েছলিনে দুই-তিন বিয়ে করতে। তবে সেটা মন থেকে কি না সেটা আমাদের কারোর জানা নেই। বাবা প্রায়ই মাকে রাগানোর জন্য বলতেন,
__জানো বিবি, আমার বাবা দুই বিয়ে, তার বাবা চার বিয়ে, আবার তার বাবা আট বিয়ে করেছে। তার বাবা এত বিয়ে করেছে যে জামাই আদর খেতে খেতেই বছর ঘুরতো। কখনো তিনি নিজের বাড়ি থাকেননি। কিন্তু আমার কপাল দেখ, আমি এক বিয়ে করেই বসে আছি। বলো তো আমি কি আমার বংশের অপমান করেনি?
মা এই কথা শুনেই রেগে গিয়ে চট করে বলতেন,
__আহা! তাইনরে মাইয়ারা বিয়া করবার লাইগা এক্কেবারে পাগল। যেই না চেহারা। ঠিক তিন আনার মতো। দেখতে তো গুন্ডা শরীফ খানের মতো লাগে। আর আমায় শাবানার মতো। তাই তো তোমার ছোঁয়া পেলেই বলতে ইচ্ছা হয়, শয়তান তুই আমার দেহ পাবি। কিন্তু মন পাবি না।”
বাবাও গগন বিদায়ী হাসি দিয়ে বলতেন,
___”তুমি শাবানা! হাসালে শায়লা। তুমি যদি শাবানাই হতে তাইলে এতদিন তোমার সেলাই মেশিন দিয়ে বড়লোক হয়ে যেতে। আমাদের অভাবও ঘুচতো। প্রয়োজন মিটতো। কিন্তু তুমি তো অকর্মার ঢেঁকি।”
__”আমি অকর্মার ঢেঁকি হলে তুমি তাহলে ছ্যাকাখোর।”
বাবা জানেন এখন রাগেরবশে মা কিছু অপ্রিয় সত্য বলবেন। যেগুলো শুনলে মাথা নিচু করে দেন। তাই মাকে সামলাতে বলতেন,
__আহ! শায়লা থামো তো।
__আমি কেন থামবো। বিয়ে আগে তুমি তো ছ্যাকা খেয়েছিলে। মনে নেই? ছ্যাকা খেয়ে তো এক্কেবারে দেবদাস হয়ে গিয়েছিলে। আবার ক্যাসেটও বের করেছিলো। বিছানার পাশে রেখে সবসময় গানটা শুনতে। মনে আছে? গানটার লাইনগুলো যেন কী ছিল? ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। গানের লাইনগুলো ছিলো,
“ও প্রিয়া রতনা
তোমার প্রেমে আমি দিওয়ানা
তুমি কেন আমায় বুঝলে না?”
মায়ের এই গান গাওয়ার ধরণ শুনেই চুপ থাকতেন। আমরা বোনেরা হাসিতে লুটোপুটি খেতাম।
আপা তুই এইভাবে বাড়িতে না ঢুকে এইখানে হাসছিলি কেন?
বাবা-মার ঝগড়ার কথা মনে পড়তে আনমনে হাসছিলাম। ছোট বোন স্মৃতির কথায় চেতন ফিরলে বললাম,
__”এমনি”
ও আমার কথায় সন্তুষ্ট হলো না। মুখটা ফ্যাকাসে ধরন এনে বললো,
__”এমনি!”
কথা ঘুড়ানোর জন্য বললাম,
__”কিরে বেবলি? তুই এই মধ্য দুপুরে কই ছিলি?”
ওরে আমরা সবাই স্মৃতি না ডেকে বেবলি ডাকি। কারণ ও ঠিক রাখি বন্ধনের বেবলির মতো। যে বড় হওয়ার সাথে সাথে বুদ্ধিও ছোট হচ্ছে। আমার প্রশ্নের উত্তরে ও বলল,
__”সিরিয়াল দেখতে পড়শি আন্টির বাসায় গিয়েছিলাম।”
__”খেয়েছিস”
__হুম। আপা একটা কথা বলবো?
ও কী এমন বলবে যে তার জন্য অনুমতির প্রয়োজন। তাই কিছুটা আগ্রহের সাথে বললাম,
__হ্যাঁ, বল, কী বলবি?
___আপা আমার না একটা প্রেমিক প্রয়োজন। এনে দিতে পারবি?
চলবে,,,,,,,