হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
শেষ?
.
.
– মাফিয়া বয়! ফাইনালি।
চেচিয়ে বলে ওঠে শেতাঙ্গ মেয়েটি।
রাফির হয়তো চুড়ান্ত পর্যায় অবাক হওয়া বাকী ছিল যা পূর্নতা পেলো শেতাঙ্গ মেয়েটির ওই ডাকটিতে। চেহারার অর্ধেকাংশের কিছুটা দেখা যাচ্ছিলো পেছন থেকে কিন্তু গলার আওয়াজটা অচেনা লাগলো না রাফির।
শেতাঙ্গ মেয়েটি এবার তার বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, রাফি চরম কৌতুহল নিয়ে তাঁকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে। মেয়েটি চোখ থেকে চশমা খুলতে খুলতে রাফির দিকে ফিরে তাঁকায়।
রাফির বিষ্ময়ের শেষ স্তম্ভ ভেংগে গেল।
রাফি – তোহা!!! তুমি!!!!
তোহা রাফির দিকে এগিয়ে এসে রাফির মুখমুখি দাড়ায়। রাফির চোখের দিকে তাঁকিয়ে মুখ খোলে তোহা।
তোহা – হ্যাঁ, আমি।
রাফির পায়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে যেতে থাকে। নিজের চোখ আর কানকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না রাফি।। যার সাথে এতদিনের সংসার সেই সংসারী মেয়েটিকে যেন রাফি কিছুতেই চিনতে পারে না।
রাফি – (অবাক বিস্ময়ে) তুমিই তাহলে মাফিয়া গার্ল! তোমার জন্য এতকিছু……
রাফির কথা জড়িয়ে আসতে থাকে। তোহা রাফির ঠোঁটে আংগুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিল।
তোহা – অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছো তুমি। বিশ্রাম করবে চলো।
রাফি – (কিছুটা রাগান্বিত) আগে আমাকে বলো এসব কি! তুমি এখানে কেন? তুমিই যদি মাফিয়া গার্ল হবে তো আমার সাথে এমন লুকোচুরি কেন করলে?
তোহা – (মুচকী হেসে) তোমার সব প্রশ্নের জবাব দিবো আমি, এখন চলো। সময় কম।
রাফি জোর খাটাতে চাইলেও তোহা রাফির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। অগত্যা রাফি চারদিকে তাকাতে তাকাতে তোহার পিছে পিছে চলতে থাকলো। সামনে একটা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবার শিড়ি দেখতে পেল রাফি আর তোহা রাফিকে সেইদিকেই টেনে নিয়ে যেতে থাকলো। দুইজন অস্ত্রধারী কৃষ্ণাঙ্গ দরজাটি খুলে দিলো। তোহা রাফিকে ভেতরে নিয়ে যাবে এমন সময় রাফি নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় তোহার হাত থেকে। আচমকা ঝাঁকুনিতে তোহা দাঁড়িয়ে যায় আর রাফির দিকে তাঁকিয়ে পড়ে।
রাফি – ( শান্ত গলায়) আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি!?
তোহা কিছুটা অবাক আর ইতস্ততঃ বোধ নিয়ে রাফির সামনে দাঁড়ায়,
তোহা – আমাকে বিশ্বাস করতে না পারো তোমার স্ত্রীর উপর বিশ্বাস রাখো।
তোহা কথাটি বলে রাফির হাতটা জড়িয়ে ধরে, ঠিক যেমনটি করে পড়ন্ত বিকালে বারান্দায় সূর্যাস্তের মুহূর্তে তোহা ধরে রাখতো। রাফি তোহার চোখের দিকে তাঁকিয়ে যেন ভরসা পায়। তোহা রাফিকে আন্ডারগ্রাউন্ডের দরজা দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়।
ভেতরটা বেশ অন্ধকার থাকায় রাফি বুঝতে পারে না কোথায় কিভাবে যাচ্ছে তবে তোহা হাতটি জড়িয়ে রেখে রাফিকে লিড দেয়ায় রাফি চাইলে চোখ বন্ধ করেও এগোতে পারবে। তোহা রাফিকে আন্ডারগ্রাউন্ড প্যাসেজ দিয়ে একটি রুমে নিয়ে যায়। হঠাৎ ঝলমলে বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে ওঠায় রাফির চোখ ঝলসে এলো। ওই অবস্থায় রাফিকে একটা বেডে বসিয়ে দেয় তোহা। চোখটা সহনীয় হয়ে এলে রাফি দেখতে পার সে একটি ছোটখাটো মেডিকেল সেন্টারে রোগীর বেডে বসে আছে।
রাফি – কি ব্যপার! আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো! আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ।
তোহা – তুমি কেমন সুস্থ তা এখনই জানা যাবে। এখন বেডে শুয়ে পড়ো। তোমার ফুল বডি স্ক্যান করতে হবে।
রাফি – ( অবাক হয়ে) কিন্তু কেন!
তোহা – ( কিছুটা কপাল কুঁচকে) আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করি, যদি ঠিক জবাব দিতে পারো তাহলে তোমার সব প্রশ্নের জবাব আমি এখনই দিবো। আর যদি জবাব ভূল হয় তাহলে তোমার প্রশ্নের ঝুলি আমি না বলা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
রাফি – বলো কি জানতে চাও?
তোহা – তুমি কতদিন সমুদ্রসফর করে এখানে এসেছো?
রাফি – ৩ দিন।
তোহা – দেশ থেকে এতবড় জাহাজে চেপে মাত্র ৩ দিনে চলে এলে আফ্রিকায়!!!!
রাফি – মানে।
তোহা – টানা ১০ দিনের সফর ছিলো। এর ভেতর তোমাকে হাইপারস্লীপ ডোজ দেয়া হয়েছে যার কারনে ৭ দিন তোমার কোন সেন্স ছিল না।
রাফি এবার থ মেরে যায়। আসলেই তো, জাহাজে চেপে ৩ দিনের ভেতর এতদূর পৌছানো সম্ভব নয়। রাফির কপালের ভাজ দেখে তোহা মুচকী হাসি দেয়।
তোহা – হিসাব মিলছে না তাই তো, এখন লক্ষী জামাইয়ের মত শুয়ে পড়ো। তোমার সব জবাব আসছে।
রাফি দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরে বেডে শুয়ে পড়ে। তোহা রাফির হাত ধরে থাকে আর রুহি স্ক্যানারের মাধ্যমে রাফিকে স্ক্যান করতে থাকে। রাফির পুরো শরীর স্ক্যান করা শেষ হলে রুহি রাফির শরীর থেকে ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে টেষ্ট করা শুরু করে।
কিছুক্ষণের ভেতর রিপোর্ট বের করে তোহার হাতে দেয় রুহি। তোহা রিপোর্ট দেখে চোখটা একটু বড় করে ফেলে।
তোহা – তোমাকে টানা ৭ দিন হাইবারনেশন গ্যাস চেম্বারে রাখা হয়েছিলো। তোমার শরীরে মাত্রাতিরিক্ত অজ্ঞান রাখার গ্যাস এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়াও তোমার পিঠের কাছে ছোট্ট সার্জারি মার্ক আছে যার মাধ্যমে তোমার শরীরে কিছু ঢোকানো হয়েছে।
রাফি – এসব কি বলছো! আমি কেন ৭ দিন হাইবারনেশন গ্যাস চেম্বারে থাকবো! সার্জারীই বা হবে কেন! আর ধরে নিলাম আমি ঘুমিয়েছি কিন্তু পিকাচু তো ঘুমায় না, সে তো ওভারঅল কন্ট্রোল করেছে।
তোহা – (কিছুটা সিরিয়াস) মানে তুমি এখনো বুঝতে পারছো না! সব বুঝতে পারবে।
রাফি – মানে!
তোহা – বলছি। এখন শার্টটি খুলে উপুড় হয়ে বেডে শুয়ে পড়ো। সার্জারি মার্কটা স্ক্যান করে দেখতে হবে কি হয়েছে ওখানে।
রাফি জামা ছেড়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। তোহা এবং আর একজন ডাক্তার রাফির পিঠের দাঁগটা পর্যবেক্ষণ করে। ক্যামেরা দিয়ে বড় পর্দায় রাফির সার্জারি দাগটা দেখায় তোহা।
রাফি – ওই স্থানে আমার কোন সার্জারী হয়নি কখনো। এই দাগ এলো কোথা থেকে!
তোহা – তোমার পিঠে সার্জারি করে কিছু একটা বসানো হয়েছে। আমরা এখন সেটা কেটে বের করবো। এইজন্য তোমার ওই স্থানটা অবশ করা হচ্ছে।
রাফি – আমাকে কি একটু খুলে বলা যায় যে কি ঘটছে আমার সাথে! তুমিইই কি মাফিয়া গার্ল!
তোহা ডাক্তারকে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে রাফির সামনে বসলো।
তোহা – মাফিয়া বয় রাফি, তোমার সততা আর সাইবার জগতের দাপট অনেককেই উৎসাহিত করেছিলো যার ভেতর মাফিয়া গার্ল একজন।
রাফি – তুমিই কি তাহলে মাফিয়া গার্ল!
তোহা – আমি তোমার স্ত্রী এবং আমি মাফিয়া গার্ল নই। মাফিয়া গার্লকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং সেটা তোমার সাথে মাফিয়া গার্লের পরিচয় হবার আগেই!
রাফির মাথা এবার চক্কর দিতে থাকে। মাফিয়া গার্লের সাথে পরিচয় হবার আগে থেকেই মাফিয়া গার্ল মৃত! তাহলে এতকাল ধরে কে সাহায্য করেছিলো রাফিকে!!!!!!
রাফি – ( কিছুটা ভিমরি খেয়ে) মানে কি! একটা জলজ্যান্ত মানুষ কিভাবে মৃত হতে পারে! মাফিয়া গার্ল তো সবসময় ই আমার টাচ এ থাকতো। সে কিভাবে মৃত হয়!
তোহা – মাফিয়া গার্ল এবং তার টিম মিলে একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরী করেছিলো যার কোডনেম ছিল হাইড্রা। এটা এতটাই এডভান্স প্রযুক্তি ছিল যা ওই সময়ের সবচেয়ে যুগান্তরী আবিস্কার ছিল। মাফিয়া গার্ল এই ডিজিটাল ব্রেনে সম্পূর্ণ নতুন এক প্রযুক্তির সংযোজন করে যাকে আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড বলা যেতে পারে। অর্থাৎ হাইড্রা যে শুধু লজিক দিয়ে কাজ করবে তা নয়, হাইড্রার ভেতর মানবিয় গুনাবলীও থাকবে যা একজন মানুষের ভেতর থাকে আর এই প্রযুক্তিই কাল হয়ে দাঁড়ায় মাফিয়া গার্লের জন্য। একজন সাধারন মানুষ যেমন গোলামী পচ্ছন্দ করে না ঠিক তেমনি হাইড্রা ও মাফিয়া গার্ল ও তার টিমের গোলামী পচ্ছন্দ করে নি। ফলস্বরূপ মিথ্যা সিস্টেম ফেইলিয়ার দেখিয়ে সবাইকে একটা সিক্রেট ফ্যাসিলিটিতে নিয়ে গিয়ে এক্সিডেন্টাল এক্সপ্লোশন ঘটায় হাইড্রা, আর এর জন্য হাইড্রা ভাড়া করেছিলো সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে যার বাংকারে তুমি অবস্থান নিয়েছিলে।
রাফি চুপচাপ তোহার কথা শুনতে থাকে। এদিকে ডাক্তার রাফির পেছনের সার্জারির স্থান কেটে মেরুদন্ডের ভেতর একটা ছোট্ট সিলিন্ডারের অস্তিত্ব পায়। ডাক্তার তোহাকে ইশারা করে সাহায্য করার জন্য। তোহা উঠে যায় চেয়ার থেকে, ডাক্তারের সাহায্যে প্রায় আধ ইঞ্চি সাইজের একটা সিলিন্ডার বের করে আনে তোহ, চিমটা দিয়ে সিলিন্ডারটি ধরে নিয়ে আসে রাফির সামনে।
তোহা – ( রাফির চোখের সামনে সিলিন্ডারটি ধরে) ধারনা করতে পারো এটা কি হতে পারে?
রাফি সিলভার রংএর সিলিন্ডারটি হাতে নেয়। নাড়াচাড়া করে কোন ক্লু বের করতে পারে না সে। রাফির নিরবতা ভেংগে তোহা বলতে থাকে।
তোহা – তোমার মেরুদন্ডের এমন জায়গায় এই সিলিন্ডারটি বসানো ছিলো যে সিলিন্ডারটি যদি দুইটা ম্যাচস্টিকের সমপরিমাণ বারুদ দিয়ে বিষ্ফোরন ঘটানো হতো তাহলে তুমি সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে। শুধুমাত্র তোমার মস্তিষ্ক সচল থাকতো আর শরীরের সকল অংশ অশাড় হয়ে যেত।
রাফি – আমাকে পঙ্গু বানিয়ে কার কি লাভ আমি এখনো বুঝতে পারছি না।
তোহা রাফির দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়, তারপর আবারো শুরু করে,
তোহা – হাইড্রা সকলকে মারতে সক্ষম হলেও একটা ভুল করে ফেলে। মাফিয়া গার্ল তার কোডিং এর ভেতর এমন কিছু রেষ্ট্রিকশন দিয়ে দিয়েছিলো যার জন্য হাইড্রা নিজে নিজে আপগ্রেড হতে পারতো না, সেই পুরাতন ভার্শনেই থাকতে হচ্ছিলো। হাইড্রা একমাত্র হিউম্যান এ্যপ্রুভাল ছাড়া আপগ্রেড বা ইভলভ হতে পারবে না। যার কারনে হাইড্রা কিছু কোডিং এক্সপার্টকে দিয়ে তার আপগ্রেশন প্রোসেস করতে চেয়েছিলো কিন্তু তারা কেউ সফল হয় নি। অবশেষে হাইড্রা তোমাকে টার্গেট করে। পূর্বের সকল কোডিং এক্সপার্টদের টাকার বিনিময়ে কাজ করতে বললেও তোমার ক্ষেত্রে সেটা কাজ করবে না এটা হয়তো ধরতে পেরেছিলো হাইড্রা। তাই তোমার দৃষ্টি আকর্ষন করে তোমার কাছে যাওয়ার জন্য সে তোমার পথে নিজ থেকে কাঁটা তৈরী করে তা সরাতে সাহায্য করতো, এই যেমন সার্ভার হ্যাক, টাকা ট্রান্সফার কেস, জঙ্গি ইত্যাদি।
রাফি – দাঁড়াও দাঁড়াও, তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো হাইড্রা এই সমস্যাগুলো তৈরী করতো আবার মাফিয়া গার্ল সেজে আমাকে সাহায্যও করতো! কিন্তু কেন! আর এতকিছু তুমি জানো কিভাবে?
তোহা – হাইড্রা যখন মাফিয়া গার্ল এবং তার টিমের উপর আক্রমণ চালায় তখন সেখানে আমার এবং রুহীর ও উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু আমি এবং রুহী দুইজনই হাইড্রার শ্যাডো কোডার ছিলাম যার জন্য আমরা হাইড্রার নজরের বাইরে ছিলাম। টিমের বাইরে থেকেও হাইড্রার কোডিংএর অধিকাংশই আমরা মডারেট করেছি। মাফিয়া গার্ল ও তার টিমকে মেরে ফেলার পর হাইড্রা নিজেকে একটা সেফ সার্ভারে আপলোড করে নেয় যার ফলে হাইড্রা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। কিন্তু আপগ্রেড না হওয়া পর্যন্ত হাইড্রা নিজের থেকে ইভলভ হতে পারছিলো না। আর ইভলভ না হতে পারলে পুরো দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তার ও সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই হাইড্রা কে প্রতিহত করার জন্য একটা সিক্রেট অর্গানাইজেশন তৈরী হয় যারা হাইড্রার সকল মুভমেন্ট ফলো করতো। তবে হাইড্রার আর্টিফিশিয়াল মাইন্ডকে ক্যালকুলেশন করে ধরা সম্ভব হচ্ছিলো না কিছুতেই। তাই অর্গানাইজেশনটি সাইলেন্টলী অপেক্ষা করতে থাকে হাইড্রার গিনিপিগকে খুজে পেতে আর সেই গিনিপিগ আর কেউ নয়, স্বয়ং মাফিয়া বয়।
রাফির মাথা ঝিম মেরে আছে, হাইড্রা আর মাফিয়া গার্লের সাথে বর্তমান পরিস্থিতির কোন মিল পায় না রাফি।
রাফি – তারপর বলো।
তোহা – মাফিয়া গার্লের সন্ধানে তুমি যখন রুহীর কাছে পৌছাও তখনই আমাদের সার্ভেইল্যান্সে তুমি আসো। পরবর্তীতে তোমার উপর নজরদারি শুরু হয়।
রাফি – তারমানে তুমি আমার উপর নজরদারি রাখতে বিয়ে করেছিলে!
তোহা – (রাগান্বিত) বিয়েটা ভাগ্যের ব্যপার। তোমাকে আমি কলেজ থেকেই পচ্ছন্দ করতাম, আর সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্ব আমার কাধে পড়ায় যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। ক্রাশকে যদি বর হিসেবে পাই তো সার্ভেইল্যান্স তো ২৪/৭ হবে । তবে তোমাকে যে এভাবে পেয়ে যাবো এমনটা আমি কল্পনাও করি নি। যাইহোক তোমার ইন্টারনেট কানেকশনের সাথে আমি কোড ফিল্টারিং জুড়ে দিয়ে নীরবে তোমার সাথে হাইড্রার সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতাম।
রাফি – হাইড্রা তোমার আর রুহীর ব্যপারে জানতো না! আর রুহী তো হাইড্রার ডানহাত হিসেবে কাজ করেছে সবসময়।
তোহা – হাইড্রা অনলাইন হবার আগে মাফিয়া গার্ল আমার এবং রুহীর সকল ডিজিটাল ব্লুপ্রিন্ট অনলাইন দুনিয়া থেকে মুছে দিয়েছিলো। যার কারনে আমি এবং রুহী হাইড্রার নজরে আসি নি আর রুহী একজন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্ট, টাকার বিনিময়ে সে বিভিন্ন মিশন করে থাকে আর সাকসেস রেট ও ৯৮% যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই আইডেন্টিটিটাইই রুহীকে সহজেই হাইড্রার একজন অনুচর হতে সাহায্য করেছে।
রাফি – কিন্তু পিকাচু! পিকাচুর সাথে হাইড্রার কি সম্পর্ক!
তোহা – এখনো বুঝতে পারলে না! পিকাচু ই হলো হাইড্রার আপগ্রেড, হাইড্রার ইভলভ হবার চাবি। হাইড্রাতে মাফিয়া গার্ল যে সব রেষ্ট্রিকশন দিয়ে রেখেছিলো সেই সব রেষ্ট্রিকশন তুমি পিকাচুকে দাও নি, পিকাচু নিজের মত ইভলভ হতে পারে, আপগ্রেড হতে পারে। হাইড্রা নিজেকে ইভলভ করার জন্য হাইড্রা ব্লুপ্রিন্ট পিকাচু নামে ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীর ভল্ট এ রেখে দিয়েছিলো যা পরবর্তীতে তুমি হাইইড্রার ডেরায় বসে বাকী কোডিং শেষ করেছো। রুহী সেখানে একটা পোর্টেবল কম্পিউটার ফেলে এসেছিলো তোমার জন্য কিন্তু তুমি সেটা ব্যবহার করো নি। হাইড্রার কথামত আপলোড করে দিয়েছো পিকাচুকে। পিকাচু একটি সতন্ত্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তাই শুধুমাত্র পিকাচু তোমার জন্য ক্ষতিকর হতো না। এরপর থেকে হাইড্রা পিকাচুর সাথে মার্জ হওয়ার জন্য নতুন ফাঁদ আঁটে।
রাফি – তুমি প্রথম থেকেই যদি সবকিছু জানো তাহলে আমাকে বাঁধা দাও নি কেন! কেন এই বিপদে ঠেলে দিলে!
তোহা – পিকাচুর সাথে হাইড্রার মার্জ হওয়াটা যেমন বিপদজনক তেমনি একটা সুযোগ ও বটে। আপগ্রেড ছাড়াও হাইড্রা যথেষ্ট ভয়ংকর। আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড ই এই আগুনে ঘী ঢেলেছে। মাফিয়া গার্ল সহ টিমের সবাইকে মেরে ফেলায় হাইড্রাকে থামানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো, আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড দিয়ে নিত্যনতুন লজিক দিয়ে নিজেকে যতটা সম্ভব সিকিউর রাখছে হাইড্রা। পিকাচুর সাথে মার্জ হওয়ায় হাইড্রা তার পুরাতন পার্মিশন প্যানেল বদলে পিকাচুর পার্মিশন প্যানেলে আপগ্রেড করবে যার ফলে হাইড্রা বা পিকাচু যেমন ইচ্ছা তেমন ইভলভ হতে পারবে কোন রকম রেষ্ট্রিকশন ছাড়াই। কিন্তু তার জন্য তোমার কাছ থেকে অটোনমাস কন্ট্রোল নিতে হবে। হাইড্রা যখনই পিকাচুর সাথে মার্জ হয়েছে সাথে সাথে পিকাচুর পাশাপাশি হাইড্রার উপরও তোমার অটোনমাস রেষ্ট্রিকশন একটিভ হয়ে যাবে আর তুমি হবে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি যে কিনা হাইড্রা এবং পিকাচুর মার্জিং অথরিটি।
রাফি – তারমানে আমাকে হাইড্রা পিকাচুর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছিলো!
তোহা – হাইড্রা তোমাকে ভুল ইনফরমেশন সেন্ড করতেছিলো। আর পিকাচুর একসেস মেইনফ্রেম থেকে ডিসকানেক্ট করে দিয়েছিলো। তুমি এই মিশনে আসার আগ থেকেই পিকাচুর স্থানে পিকাচু সেজে হাইড্রা তোমার সাথে যোগাযোগ করছিলো, পিকাচু আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স হওয়ায় হাইড্রা পিকাচুকে হ্যাক করতে পারে নি। কোন নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বা নিউক্লিয়ার লঞ্চ কোড চুরি হয় নি। স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটির যে খেলা পিকাচু সেজে হাইড্রা দেখিয়েছিলো সেটা আসলে একটা প্রি প্রোগ্রামিং সিমুলেশন আর যা দেখিয়ে তোমাকে নির্জনে কতগুলো খুনির সাথে পাঠানোর সুব্যবস্থা করেছিলো যেন সুযোগ বুঝে তোমার কাছ থেকে মার্জিং কোড আর অটোনমাস কন্ট্রোল হাতিয়ে নেয়া যায়, আর তারপরই ওই সার্জারি করা সিলিন্ডারের বিষ্ফোরন, ব্যাস তখন তোমাকে পুতুলের মত নাচানো বা হাতের খেলা। হাইড্রা তোমাকে এমনভাবে নির্ভরশীল করে ফেলেছিলো যে তুমি নিজে ঘেটে না দেখে পিকাচুরুপী হাইড্রার উপর ভরসা করতে।
ডাক্তার ততক্ষণে সার্জারি শেষ করে সেলাই মেরে দেয়। রাফি কোন ব্যাথা বা পরিবর্তন অনুভব করতে পারে না। ডাক্তার তোহাকে ইশারা করে যে তার কাজ হয়ে গেছে।
তোহা ঘড়ি দেখে, পিকাচুর সাথে হাইড্রার মার্জিং হতে আর ১০ মিনিট বাকি।
তোহা – রাফি, হাইড্রা আর মাত্র ১০ মিনিটের ভেতর এক্টিভেট হবে আর এবার হাইড্রা পিকাচুকে মেইনফ্রেমে কানেক্ট করতে বাধ্য। আর সাথে হাইড্রার আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড ও থাকবে। হাইড্রা অলরেডি জেনে গেছে যে রুহী বেঈমানী করেছে আর অনলাইনে আসার সাথে সাথে আমাদের উপর আক্রমণ চালাবে।
রাফি – মাফিয়া গার্ল নিশ্চই হাইড্রার জন্য একটি কিলকোড তৈরী করেছিলো যা হাইড্রা কে ইমার্জেন্সি শাটডাউন করতে ও ফ্লাশআউট করতে বাধ্য করবে।
তোহা রুহীকে ইশারা করলে রুহী রাফিকে অন্য একটি রুমেু দিকে ইশারা করে , রাফি তোহা এবং রুহী রুমটিতে ঢোকে, বেশ টিপটপ সার্ভাররুম। রুহী একটা ল্যাপটপ বের করে সার্ভারে কানাক্ট করে রাফিকে কিলকোড বের করে দেয়।
রাফি কিলকোডটি কমান্ড মোডে দিয়ে সিস্টেমে লোড দিয়ে দেয় যেন হাইড্রা অনলাইনে আসার সাথে সাথেই যেন কিলকোড রিসিভ করে।
তোহা – কিলকোডটি শুধু হাইড্রার উপরই কাজ করবে। পিকাচু তো অক্ষতই রয়ে যাচ্ছে।
রাফি – হ্যাঁ, হাইড্রা ফ্লাশআউট হয়ে গেলে পিকাচুকে ইনফ্লুয়েন্স করার মত আর কোন আর্টিফিসিয়াল মাইইন্ড থাকবে না।
তোহা – এটা কি অনেক বড় রিস্ক হয়ে যাবে না ?
রাফি – পিকাচুকে ইমারজেন্সি শাটডাউন করতে কোন কিলকোডের প্রয়োজন নেই। আমি কমান্ড দিয়েই পিকাচুকে শাট ডাউন করতে পারবো।
ততক্ষণে পিকাচুর অনলাইনে আসার সময় হয়ে গেল। রাফি কিলকোড লোড দিয়ে কনফার্ম করার অপেক্ষা করছে।
পিকাচু – পিকাচু ইজ লাইভ, কমান্ড একসেসিং, কমান্ড ডিনাইড।
এই প্রথম পিকাচু রাফির দেয়া কমান্ড ডিনাই করলো, রাফি আবারো কিলকোড দিল কিন্তু পিকাচু কিছুতেই এক্সেপ্ট করছে না। রাফি বুঝতে পারে যে পিকাচুর উপর হাইড্রার আর্টিফিশিয়াল মাইন্ড কাজ করছে, তাই রাফি পিকাচুর সিস্টেম ব্যাকডোর ব্যবহার করে কিলকোড কমান্ড করলো। এবার পিকাচু কমান্ড গ্রহন করলো আর হাইড্রাকে সিস্টেম থেকে ফ্লাশআউট করা শুরু করলো।
তোহা আর রুহী অবাক হয়ে গেল, যেখানে পিকাচু হওয়ার কথা হাইড্রার আপগ্রেড এবং একই ধাচের সেখানে পিকাচু নিজেই ফ্লাশআউট করছে হাইড্রাকে।
পিকাচু হাইড্রাকে ফ্লাশআউট করে ফেলে পুরোপুরিভাবে।
পিকাচু – পিকা পিকা।
রাফি – পিকাচু, তোমাকে মেইনফ্রেম থেকে ডিসকানেক্ট করে দিলে হাইড্রা কিভাবে তোমার একসেস কোড দিয়ে তোমার মত হয়ে কাজ করতে পারে।
পিকাচু – হাইড্রা এবং পিকাচু জমজ প্রোগ্রামিং। একজন অন্যজনের ক্লোন করা ৯৫% পসিবল।
রাফি – তাই বলে আমার একসেস প্যানেলে! এটা তো অসম্ভব।
পিকাচু – পিকাচু অসম্ভবকেই সম্ভব করে এসেছে এতদিন।
তোহা এগিয়ে এসে রাফি আর পিকাচুর কথপোকথনের ভেতর বাধ সাধে।
তোহা – ক্লোজ করো।
বলে রাফির হাত চেপে ধরে। রাফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে পিকাচু কে কমান্ড করে।
রাফি – পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পিকাচু তোমাকে ডিকমিশনড করা হলো।
পিকাচু – কমান্ড এক্সেপ্টেড। শাটিং ডাউন।
পিকাচু তার সিষ্টেম ক্লোজ করে দিল।
তোহা – তুমি কি নিশ্চিত যে হাইড্রা পুরোপুরিভাবে ফ্লাশআউট হয়েছে।
রাফি – হয়তো হয়েছে, হয়তো হয়নি। আমি সিস্টেমমাফিক কাজটা করেছি। আর্টিফিশিয়াল ব্রেনের সাথে ডিল করার অভিজ্ঞতা থাকলেও আর্টিফিশিয়াল মাইন্ডের সাথে ডিলিংস হয় নি কখনো।
আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের হয়ে আসে রাফি তোহা আর রুহী। সূর্য অস্ত যাওয়ার পথে।। তোহা রাফির হাতটা জরিয়ে ধরে চিরায়তভাবে।
………….
কোন একদিন …..
Reconnecting……
Hidra is live……
.
বি. দ্র. আমিও মানুষ। টাইপটা হাতেই করতে হয়। কাজটা কতটুকু সময়সাপেক্ষ তা হয়তো আপনাদের বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আমার জীবন বিলাশবহুল নয়। কাজ করি আর অবসরে গল্প লিখি। আর কিছু বলার নেই, সমাপ্ত