হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ . পর্ব -৭

0
915

হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
পর্ব -৭
.
পরদিন পড়ন্ত বিকেল..
কন্টেইনারে বসে রাফি এবং পিকাচু পরবর্তী কার্যক্রমের ছক আঁকতে থাকে। টিমের অন্য সবাই মদ আর গানবাজনা নিয়ে মেতে ছিলো, তাদের আর কাজ কি, গ্রুপ লিডারের কাছ থেকে ফাইনাল প্লান গিলে নিলেই হয়ে গেল।
রাফি তাই আপাতদৃষ্টিতে টিমের কারো কর্মকাণ্ডে নাক গলাতে চাইলো না।
পিকাচু – জাহাজ সিংগাপুরের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করার আগে তোমাদের জাহাজ থেকে নেমে পড়তে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারে যতক্ষণ থাকা যাবে ততক্ষণ কোন দেশের আইন তোমাদের উপর প্রযোজ্য নয়। টিম লিডার একটা সী প্লেন নিয়ে এখানে অপেক্ষা করবে।
পিকাচু মনিটরে একটা জিপিএস লোকেশন পিনপয়েন্ট করলো যেটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায়। রাফি ততটা ইতস্ততঃ হলো না তবে পিকাচুর এই ভেংগেচুরে রাশিয়া যাওয়ার পথ বাছার কারনটা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেল।
রাফি – পিকাচু, এমন দূর্গম এবং বিপদজনক পথে না গিয়ে আমরা অন্য কোন পথেও তো রাশিয়া যেতে পারতাম, এই পথটাই কেন?
পিকাচু – জাহাজে তোমার সফরসঙ্গী যারাই আছে তারা সবাই দুনিয়ার মোষ্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্টে এদের কেসের ট্রায়াল এখনো চলছে। বলতে পারো এরা সবাই ফেরারী আসামী। এয়ারপোর্ট দিয়ে যাওয়াটা যথেষ্ট রিস্কি। পিকাচু ডিজিটাল সার্ভার থেকে হয়তো তাদের ট্রেস মুছে ফেলতে পারবে কিন্তু দূর্ঘটনাবসত যদি কোন অফিসার বা এয়ারপোর্ট পুলিস তাদের একজনকে চিনে ফেলে এবং এরেষ্ট করে তাহলে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে। সমুদ্রপথ সেইদিক থেকে নিরাপদ। খুবই কম নজরদারীতে পার হয়ে যাওয়া সম্ভব।
রাফি পিকাচুর যুক্তি অগ্রাহ্য করতে পারে না তবে বেছে বেছে এমন আন্তর্জাতিক ক্রিমিনালদের কেন প্রয়োজন ছিল মিশনে নেয়ার! আরো লো প্রোফাইলের মার্সেনারী কি ছিল না! পিকাচু যে কোন মিশনের জন্য হাই প্রোফাইল কোনকিছুই চ্যুজ করে না অতিরিক্ত এক্সপোজারের জন্য। সেখানে পুরো একটা টিম!!!! রাফির মাথা ঝিম খেয়ে এলো।
একটু মুক্ত হাওয়ায় দম নেয়ার আশায় কন্টেইনার থেকে বাইরে বের হয়ে এলো রাফি। বিশাল কন্টেইনারবাহী কার্গো শীপের একদম সামনে রেলিং ধরে দাঁড়ালো রাফি। সূর্যটা দিগন্তে অস্ত যেতে লাগলো।
এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না সমুদ্রপাড় থেকে। বিমুগ্ধ রাফি যেন কিছুক্ষণের জন্য কল্পনায় ডুবে গেলো; এমন স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় তোহাকে বাম বুকে আলতোভাবে আগলে ধরে সূর্যোদয় দেখাটা এক স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরী করতো রাফির হৃদপিণ্ডে। সেই সাথে তোহার দুরন্ত চুলগুলোর এলোমেলো উড়াউড়ি, বুকে কান পেতে হৃদপিণ্ডের গল্প শোনা, ঠোঁটের কোনায় আনমনে লেগে থাকা একফোঁটা কফিকে নিজের ঠোঁটে তুলে নেয়া, কানের কাছে ভালোবাসি বলে গালে ছোট্ট চুমু ছুঁইয়ে পালিয়ে যাওয়ার মত ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্তগুলো জড়িয়ে আছে এমন সন্ধ্যায়। মাঝ সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মত অনুভূতিগুলো আঁছড়ে পড়ে রাফির মনের কোঠরে। হঠাৎ বুকের বা পাশে হাত দিলো রাফি। বিড়বিড় করে বললো “আসছি আমি, আর তো মাত্র কটা দিন।” যেন কথাগুলো তোহাকেই জানালো রাফি।
(ভাংগা ভাংগা ইংরেজী ভাষায়) “এমন সময় উদাশ মনে সূর্যাস্ত দেখা প্রেমিক পুরুষের লক্ষন।”
হঠাৎ উদাসী মন থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসে রাফি। পাশে তাকিয়ে দেখে কখন যেন রিদওয়ানস্কি এসে খানিকটা দূরে দাড়িয়ে আনমনা রাফিকে পর্যবেক্ষণ করছে। কিছুটা এগিয়ে এসে রাফির পাশে দাড়িয়ে পকেট থেকে একটা চুরুট বের করলো RQ। চুরুটে আগুন লাগিয়ে লম্বা টান দিয়ে আবারো বলতে শুরু করে RQ,
RQ – ( ভাংগা ভাংগা ইংরেজীতে) কি করতে এসেছো এখানে? কোথায় যাচ্ছো? কেনই বা যাচ্ছো?
রাফি কানে হাত দিলো, বাইরে আসার সময় পিকাচুর সাথে কানেক্ট থাকার ইয়ারবট টা খুলে রেখে এসেছে সে।
রাফি – (ইংরেজীতে) চুড়ান্ত মিটিং পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, সব জানতে পারবেন।
RQ – (অট্টহাসি দিয়ে) (ভাংগা ইংরেজীতে) আমি মিশনের কথা বলছি না, আমি আপনার কথা বলছি।
আয়েশী ধূমপায়ীর মত ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে
RQ – আপনার বাছাই করা টিমে একমাত্র আপনিই ব্যতিক্রম। আপনাকে দেখলে খুনি বলে তো মনে হয় না। এমন প্রফেশনাল খুনিদের সাথে আপনার যাত্রার কারন কি?
রাফি এমনিতেই স্বাস নেবার উদ্দেশ্যেই কন্টেইনার থেকে বাইরে এসেছিলো কিন্তু রিদওয়ানস্কির একের পর এক প্রশ্ন করার উৎসাহ দেখে আর কথা ঘোরাতে চায় নি রাফি,
চুড়ান্ত মিটিং এ সব বিস্তারিত জানানো হবে বলে জবাব মিটিয়ে সেখান থেকে আবার কন্টেইনারের দিকে পা বাড়ায় রাফি।
কন্টেইনারে এসে রাফি পিকাচুর সাথে কানেক্ট হয়।
পিকাচু – বর্তমান গতিবেগ হিসেবে ৪ ঘন্টার ভেতর জাহাজ ড্রপজোনে পৌছাবে। সবাইকে তৈরী হবার এলার্ট দেয়া হয়েছে। টিম লিডার ড্রপজোনে অপেক্ষা করবে।
রাফি – আমি তো তৈরী ই।
পিকাচু – good luck.
……..
টিমের সবাই জাহাজের লোয়ার ডেক এর ইমার্জেন্সি এক্সিটের সামনে দাড়িয়ে আছে। পিকাচু দরজা খোলার সময় কাউন্টডাউন শুরু করলে সবাই সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে যায় আর রাফি অনভিজ্ঞ হওয়ায় একজন রাফিকে বুঝিয়ে দিলো কিভাবে নামতে হবে।
নামার পদ্ধতি শুনে রাফির চোখ কপালে উঠলো, এক্সিট ডোর খোলার পর মাত্র ১৫ সেকেন্ডের ভেতর টিমের সবাইকে ঝাপ দিতে হবে। রাফি দেখলো কেউ ই লাইফ জ্যাকেট পরা নেই, তার উপর রাতের ঠান্ডা পানিতে কিভাবে ঝাপ দেয়া সম্ভব! জাহাজের লোয়ার ডেক হিসাব করলেও প্রায় ২৫-৩০ ফুট উপর থেকে ঝাঁপ! কোনমতে মনে সাহস যোগায় রাফি । পিকাচুর কাউন্টডাউন শেষ হবার সাথে সাথে দরজা অটোমেটিক খুলে যায় আর এক একজন করে ঝাপাতে শুরু করে। রাফি চোখের ঝলকে উঁকি দিয়ে বাইরের ঘুটঘুটে অন্ধকার আর সমুদ্রের গর্জন আন্দাজ করে নিলো।
পিকাচু – jump now.
রাফি শক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে দরজা দিয়ে ঝাপ দেয়….
কিন্তু পরোক্ষনেই রাফি বুঝতে পারে যে সে পানিতে পড়ছে না, কোন শক্ত এবং ঢালু কোন স্টিল প্লেটের উপর বসে পড়েছে এবং স্লাইড করে নীচে নেমে যাচ্ছে। চোখ খুলে ব্যপারটা বুঝতে চাইলো কিন্তু দ্রুতবেগে স্লাইড করায় আর কিছু আন্দাজ করতে পারে না রাফি, চারিদিকে গুমোট অন্ধকার আর শীতল বাতাশের ঝাপটায় রাফি আবারো চোখ বন্ধ করে ফেলে। বেশ কয়েক সেকেন্ড স্লাইড করার পর হঠাৎ নরম কিছুর উপর আছড়ে পরে রাফি। সাথে সাথে কেউ একজন টেনে তুলে ফেলে রাফিকে। ঘটনার আকস্মিকতায় রাফি হতভম্ব হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ততক্ষণে রাফিকে ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয় কেউ। রাফি চোখ খুলে দেখে টিমের সবাই রাফির ভয়ার্ত চেহারা দেখে মজা নিচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাফি। আসপাশে তাকিয়ে ধারনা করতে পারে যে এটা বেশ অাধুনিক মোডিফাইড ক্রুজার শীপ। এতক্ষন যে স্লাইডে করে রাফি নীচে নেমেছিল সেটা টেলিস্কোপের মত গুছিয়ে যাচ্ছে।
-“Welcome guys”
হঠাৎ একটা মেয়েলী কন্ঠে সম্ভাষণ পায় রাফি ও তার দল। কন্ঠটি বেশ চেনা চেনা লাগলো রাফির, পেছনে ঘুরে দেখতে পায় কেউ একজন এগিয়ে আসছে শীপের অন্ধকার কেবিন থেকে। অবয়ব দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে সে একটা মেয়ে। কেবিন থেকে হাই বুটের আওয়াজ তুলে বেরিয়ে আসা মেয়েটার চেহারায় আবছা আলো পড়ে, রাফি এক ঝলকে সেই আবছা আলোয় ফুটে ওঠা চেহারাটা দেখে যারপরনাই চমকে ওঠে।
– This is your team leader.
সম্পূর্ণ আলোয় ফুটে ওঠা চেহারা দেখে রাফি কোনভাবেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না, এ কিভাবে সম্ভব।
.

বি.দ্র. বিলম্ব এবং সংক্ষিপ্ত হওয়ায় দুঃখিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে