হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ৮

0
1185

হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ৮
জামিয়া পারভীন তানি

সাইমা রেডি হচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। সজীব এর দুষ্টুমি গুলো ভালো করে উপভোগ করে সে। কিন্তু প্রকাশ করে রাগের মাধ্যমে। সেই জন্যই তো সাইমা সজীবের গালে আরেকটা চুমু দেওয়ার ভান করে কামড়ে দিয়েছে।

সজীব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার গালের দিকে তাকাচ্ছে আর সাইমা কে মনে মনে বকাবকি করছে। একটা মেয়ে এতো বিচ্ছু হয় কিভাবে! একেবারে গালের মাঝখানে ই কামড়াতে হবে? অফিসে এখন যাবেই বা কিভাবে! উফফ আজ আবার ইমপরটেন্ট মিটিং ও আছে।

দুজন মিলে দুই রুম থেকে একসাথে নামে, সিড়ি র কাছে এসে দুজনের দেখা হয়। সজীব সাইমার পোশাক দেখে অবাক হয়ে যায়। কালো বোরকা পড়ে চোখ মুখ ঢেকে বেরিয়ে যাচ্ছে কোথাও। সজীব সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে,
• “ এতো সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছো?”
• “ কই এতো সকাল? ৯ টা বাজে। ”
• “ সে যইটাই বাজুক, তুমি এভাবে কোথায় যাচ্ছো?”
• “ অফিসে। ”
• “ বারে! তোমরাই তো পেপারে, ফেসবুকে, নিউজে ছবি বের করে আমাকে ভাইরাল করে দিতে চেয়েছিলে! তাই নিজেকে আড়ালে রাখতে এই পরিধান বেছে নিয়েছিলাম। ”
• “ তুমি এতো খারাপ আগে যে কেনো বুঝিনি সাইমা। ”
• “ বুঝতে পারলে এই দিন দেখতে হতো না। ”
• “ সে যাই হোক, বাইরে যাবেনা। ”
• “ আর আমার চাকুরী? ”
• “ দেখো সাইমা! অফিসের টাইমে ঝগড়া করো না। আমার কি টাকার অভাব? যে তোমাকে চাকুরী করতে হবে? সব চেয়ে বড় কথা তুমি শিক্ষিত। আর সেই শিক্ষা তোমার মেয়েকে দাও। যদি আদর্শ মা হতে চাও তো!”
• “ তুমি কি বুঝাতে চাও, আমি মেয়ের খেয়াল রাখি না? তাহলে ও এতো যত্নে ছিলো কিভাবে এতদিন আমার কাছে? ”
• “ কিভাবে আবার? কাজের মেয়ের কাছে ওকে রেখে চলে যেতে আর শিক্ষা টা কাজের মেয়ের মতো ই পেয়েছে। ”
• “ স্নেহার কি এমন আচরণ দেখলে? যে ওর সম্পর্কে এতো খারাপ কথা বলছো? ”
• “ ও আড়াই বছর বয়সে কি এমন পড়াশোনা শিখেছে শুনি?”
• “ ওহহহ আচ্ছা! তা অফিস থেকে ফিরে তোমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তাহলে। ”
• “ তোমাকে অফিসে যেতে না করেছি আমি।”
• “ বাধা দিয়ে লাভ নেই, আমি যাবোই। ”

বলে সাইমা দরজার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। তখন সজীব সাইমার হাত ধরে একটানে বোরকার হিজাব খুলে দেয়। একটা পিনে সাইমার নাকের উপর লম্বা আঁচড় পড়ে। সাইমা উহহ করে চিৎকার করে উঠে। সুপ্তি, রেহান সবাই নেমে আসে।

রেহান একটু রেগে গিয়ে বলে,
• “ রোজ রোজ এই নাটক দেখতে ভালো লাগেনা ভাবী। জব টা ছেড়ে দিলে কি হয় বলেন তো!”
• “ কি আবার হবে? ক্ষতি সজীবের ই হবে। ”
• “ মানে?” সজীব জিজ্ঞেস করে।
• “ কারণ আমি এতদিন তোমার একটা কোম্পানি তেই জব করে আসছি। ”
• “ What? ”
• “ Yes baby.”
• “ মুখ সামলে কথা বলো , এখানে আমার বোন , বোনজামাই ও আছে।”

রেহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
• “ সাইমা ভাবী আপনার অফিসে আমার মাধ্যমে ই ঢুকেছিলো। সেদিন এক বিধবা মেয়ের কথা বলে চাকরি খুঁজে চেয়েছিলাম আপনার কাছে। আপনি নিজেই এই জব দিয়েছিলেন। আপনার অফিসে অনেক কর্মচারী তাই সবার নাম খেয়াল করেন না! সেইজন্যই এতদিন বুঝতেই পারেন নি আসল কাহিনী। ”
• “ আমার খেয়ে আমাকে ই বোকা বানাচ্ছে সবাই । Strange indeed !”

সাইমা নিজের ঘরে চলে আসে, সজীব নিজের বোকামির জন্য রাগে গজগজ করতে করতে অফিসের দিকে রওনা দেয়।

°°°

আফিয়া শিম্মির সব কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। এভাবে একটা ছেলে একটা মেয়ে একসাথে থাকা উচিৎ ও নয়। তখন শিম্মি এসে বলে,

• “ আপু ব্রেকফাস্ট করেছেন? ”
• “ হুমম। ”
• “ আপনার ভাই খায়নি, চলুন না আবার দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিবেন। ”
• “ রান্না কে করেছে? তুমি? ”
• “ জ্বি।”
• “ বুয়ার কাজ টাও শুরু করে দিয়েছো? তা আলিফ কে এটা সেটা খাইয়ে নিজের করে পেতে চাচ্ছো নাকি?”
• “ এসব কি বলছো আপু? ” আলিফ পাশ থেকে জোরে করে চিল্লিয়ে উঠে।
• “ যেই বোনের দোয়ায় তুই এখন সুস্থ সেই বোন কে তুই গলা খাঁকারি দিয়ে কথা বলছিস?”
• “ হ্যাঁ আপু, তুমি যতই যা করোনা কেনো? এখানে শিম্মির কোনো অপরাধ নেই। তাই ওকে উল্টোপাল্টা কিছু বলার আগে আরেকবার ভাবো, ও পঙ্গু, আমি যাওয়ার আগে ওকে তালা মেরে যাই, সব বাজার আমি করি। ও কিভাবে কিছু মেশাবে খাবারে। ”

আফিয়া চুপ হয়ে যায়, শিম্মি ও চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে হুইলচেয়ার ঠেলে ঠেলে । আলিফ শিম্মির চেয়ার ঠেলে খাবার ঘরে নিয়ে আসে।

• “ আমার বোনের কথায় কিছু ই মনে করবেন না প্লিজ। ” আলিফ শিম্মি কে বলে।
• “ না কিছু মনে করিনি। খেয়ে নিন এখন। ”
• “ আপনি নিজেও তো খান নি। ঠিক মতো না খেলে ওষুধ খাবেন কিভাবে? ” এই কথাটা একটু জোরে করে বলে।
• “ আপনার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

আলিফ কিছু বলার আগে আফিয়া এসে বলে,
• “ দেখি কি রান্না করেছো? দাও আমিও খাই তোমাদের সাথে। ”
• “ জ্বি বসুন আপু।”

আফিয়া কে আগে ভুনা খিচুড়ি আর মুরগির মাংস তুলে দেয়, এরপর আলিফের প্লেটেও তুলে দেয়। তখন আলিফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
• “৯:৩০ বেজে গেছে, অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন। অফিসে খেয়ে নিবো। ” বলে আলিফ উঠে চলে আসে।
আলিফ বুঝতে পেরেছে আফিয়া আসার আগেই শিম্মি রান্না করেছে। অবশ্যই তিনজনের সমান রান্না করে নি। শুধু শুধু অযুহাত দিয়ে বাইরে চলে আসে সে।

আফিয়া অবাক হয়ে আলিফের চলে যাওয়া দেখে। একটু পর শিম্মির উদ্দেশ্যে বলে,
• “ এখন খেতে পারো, ভাইটা কে না খাইয়ে নিজে খেয়ে নিও কেমন। ”
আফিয়া পুরোপুরি না খেয়ে খাবারে পানি ঢেলে উঠে পড়ে। শিম্মির খুব কষ্ট হচ্ছে আফিয়ার এমন আচরণে। তবুও কিছু বলেনি শিম্মি। নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করে শিম্মি।
• “ ওরে ঢং! নিজের সংসার খুইয়ে এখন আমার ভাইয়ের কপাল পুড়াতে এসেছো। লজ্জা করে না বেহায়া মেয়ে! ”
শিম্মি কিছুই বলছেনা দেখে আফিয়া আবার বলে,
• “ লজ্জা থাকলে এখানে একদিন ও থাকতে না! তা শরীর দেখিয়ে ভাইটা কে জাদু করে রেখেছো নাকি?”
• “ আপুউউউ! ” দুই কানে হাত দিয়ে জোরে করে বলে উঠে।
• “ কেন চিল্লাচ্ছিস রে বেহায়া মেয়ে? লজ্জা থাকলে বেরিয়ে যা এখুনি। ”

°°°
মিটিং এর পরে সজীব বের হবার সময় একজন সটাফ সজীব কে ডাকে।
• “ এক্সকিউজ মি স্যার। ”
সজীব পিছনে ঘুরে তাকাতেই মেয়েটা বলে,
• “ স্যার আপনার গালে কি হয়েছে? ”

সজীবের প্রচুর রাগ উঠে যায়। রাগ কোনো রকম কন্ট্রোল করে বলে,
• “ আমার মেয়ে খেলার সময় কামড়ে দিয়েছে। ”
• “ আড়াই বছরের বাচ্চার এতগুলো দাঁত?”

সজীব বুঝতে পারে মেয়ে স্টাফ গুলো এখন এটা নিয়ে হাসাহাসি করবে। তাই বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে চলে আসে ওখান থেকে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে