স্বপ্ন ?পর্ব-১/২/৩
#অনামিকা_সিকদার_মুন
.
.
—কে তুমি?
পলকহীন ভাবে সামনে বসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো নিঝুম । কিন্তু কোনো উত্তর দিল না মেয়েটি । শুধু মুচকি হাসলো । “ইসস এমন হাসছে কেন মেয়েটা? ওমন মাতাল করা হাসি দিয়ে যে নেশা ধরাচ্ছে এই মেয়ে, সেটা কি সে নিজেও জানে?” মনে মনে বললো নিঝুম ।
—হ্যাঁ, জানি তো ।
হঠাৎ মেয়েটার এই কথা বলায় বেশ হকচকিয়ে উঠলো নিঝুম । কি বললো এই মেয়ে । নিঝুম মেয়েটির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
—জানি তো মানে? কি জানো?
—আমার মাতাল করা হাসিতে তোমার নেশা ধরে যাচ্ছে ।
একথা বলে খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়েটি । এবার নিঝুম শুধু অবাক না রীতিমত থতমত খেয়ে গেলো । এই মেয়ে কি মাইন্ড রিডার নাকি???
—অন্য কারো ক্ষেত্রে না শুধু তোমার মাইন্ড রিডার ।
বলে মেয়েটি নিঝুমের হাতের উপর হাত রাখে । নিঝুম মূর্তির মতো বসে আছে । এবার আর মনে মনেও কিছু ভাবতে পারছে না নিঝুম । ওর ভাবনা শূণ্য হয়ে গেছে ।
হঠাৎ মেয়েটি নিঝুমের হাত ছেড়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পড়ে । নিঝুমের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে নিঝুমের দু’হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,
—নিঝুম শোনো…
নিঝুম কোনো কথা না বলে উঠে দাড়িয়ে পড়ে । সাথে মেয়েটির হাত ধরে ওকে ও টেনে দাড় করায় । নিঝুম কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই আচমকা মেয়েটি নিঝুমের ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেয় ।
হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে নিঝুম । এই শীতের মধ্যেও দরদর করে ঘামছে । হাত পা কাঁপছে ওর । ঘড়িতে ঠিক পাঁচটা দশ বাজে । সেই স্বপ্ন, আবার সেই একই স্বপ্ন দেখলো নিঝুম । আজকে থেকে না । দু’বছর ধরে এই একই স্বপ্ন প্রতিনিয়ত এই একই সময়ে দেখে নিঝুম । কিন্তু এমন স্বপ্নর কোনো মানে খুঁজে পায় না ও । আর প্রতিবারই এই স্বপ্ন দেখার পর কেমন জানি অস্থির লাগে ওর । নিজেকে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে শান্ত করলো নিঝুম । তারপর উঠে পড়লো বিছানা থেকে । কারণ এখন আর শত চেষ্টা করলেও ওর ঘুম আসবে না । তাই উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে আসে । টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে বেলকনিতে গিয়ে ইজিচেয়ার টায় বসে পড়ে । আর নিত্যদিনের মতো খুঁজতে শুরু করে এই অদ্ভুত স্বপ্নের অর্থ । জানে খুঁজে পাবে না । কারণ এই দু’বছর ধরে খুঁজেও কোনো উত্তর পায় নি । তবুও ব্যর্থ চেষ্টা চালায় । কেন এই স্বপ্ন সে বার বার দেখে? স্বপ্নের এই অচেনা মেয়েই বা কে? মেয়েটি কেন ওর এত কাছে আসে? কেন ঐ মেয়েটার জন্য এত টান অনুভব করে ও? মনে মনে কেন খুঁজে বেড়ায় ঐ মেয়েকে?
এমন আরো হাজারটা কেন ওর মাথায় ঘুরপাক খায় । কিন্তু এই কেনর কোনো উত্তর পায় না নিঝুম । আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নি । ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে পার করে দেয় কয়েক ঘন্টা । কোনো অজানা কারণেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে নিঝুমের ভেতর থেকে । ঘড়ির কাটায় যখন আটটা বাজতে যাচ্ছে তখন বেলকনি থেকে রুমে আসে নিঝুম । রেডি হয়ে অফিস যেতে হবে তাই ।
.
—আপি… এই নিশি আপি…. আরে উঠ না ।
সাড়ে আটটা বাজে । সেই সকাল সাতটা থেকে নিশিকে ডেকে যাচ্ছে অনু । কিন্তু নিশির উঠার কোনো নাম গন্ধ নেই । অনু ডাকলেই অন্যপাশ ফিরে কম্বল মুড়ি দিয়ে আবার ঘুমুচ্ছে নিশি । এদিকে অনুর প্রোগ্রাম শুরু হতে মাত্র একঘন্টা বাকি । নিশি উঠার পর রেডি হতে অনেক সময় নিবে । তার যদি রাস্তায় জ্যামে পড়ে তাহলে তো হলোই । তখন টাইমলি সেখানে পৌঁছানো তো দূরের কথা দুপুরেও পৌঁছাতে পারবে কিনা সন্দেহ ।
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বেড সাইড টেবিলে রাখা পানির গ্লাসে থাকা পানি নিশির মুখে ছুড়ে মারলো অনু । ঘুম থেকে উঠানোর পুরানো এক পদ্ধতি এটা । সেটা অবলম্বন করতেই কাজ হয়ে গেল । শোয়া থেকে এক লাফে উঠে পড়লো নিশি ।
.
.
.
চলবে??
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_২
.
.
.
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বেড সাইড টেবিলে রাখা পানির গ্লাসে থাকা পানি নিশির মুখে ছুড়ে মারলো অনু । ঘুম থেকে উঠানোর পুরানো এক পদ্ধতি এটা । সেটা অবলম্বন করতেই কাজ হয়ে গেল । শোয়া থেকে এক লাফে উঠে পড়লো নিশি । সাথে ছোট একটা চিৎকার ফ্রি। নিশির চিৎকার থামাতে অনু নিশির মুখ চেপে ধরে। কিন্তু নিশি উম উম শব্দ থেমে নেই । অনু রাগ হয়ে ধমক দেয় নিশিকে,
—আপিইইইই চিল্লাছিস কেন?? প্রবলেম কি তোর ??
নিশি ইশারায় অনুকে ওর মুখ ছাড়তে বললো। অনু নিশির মুখ ছেড়ে একটু দূরে সরে দাড়ালো । মুখ ছাড়তেই নিশি চোখ ছোট ছোট করে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,
—এই তুই সত্যিই আমার বোন তো??
অনু তেড়ি চোখে নিশির দিকে তাকাতেই নিশি বলে,
—আপন বোন হয়ে বোনের সাথে শত্রুতা করছিস?? আমি তোর জন্য একদিনও শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। আমার সাথে এমন করিস কেন রে??
নিশি ওর মুখটা বাচ্চাদের মতো বানিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ন্যাকা কান্না করতে শুরু করে । অনু নিশিকে ভেঙ্গিয়ে বলে,
—আমার সাথে এমন কেন করিস রেএএএ???? ওই ওই তুই যে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলি ভার্সিটি যেত কে?? হ্যাঁ?? তুই নাহয় প্রোগ্রামে নাচে হেরে গেলে তোর প্রবলেম নেই। কিন্তু আমার গানে ফার্স্ট হতে হবে।
—তো যাবি ভার্সিটি এত তাড়া কিসের??
নিশি একথা বলে আবার শুয়ে পড়তে যাচ্ছিলো তখন অনু পানির জার হাতে নিয়ে বললো,
—একটু আগে তো খালি মুখে পানি দিয়েছি এবার কিন্তু পুরো গায়ে পানি ঢেলে দিবো বললাম ।
নিশি ভয়ে আর না শুয়ে বসে রইলো। বললো,
—আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি?? না তো?? তাহলে তুই ঢেলে দিতে চাচ্ছিস কেন?? একটু ঢেলে দিতে হবে না।
অনু এবার আর কোনো কথা বললো না। সোজা নিশির মাথায় পানি ঢেলে দিলো। আর নিশি ব্যাঙের মতো একটা লাফ মেরে বিছানা থেকে নেমে পড়লো ।
—আপি তুই আমার বড় কিন্তু এমন করিস যেন তুই আমার ছোট বোন । আর আমি তোর বড় বোন । তোকে ঘুম থেকে উঠানো, খাইয়ে দেয়া সব আমার করতে হয়। যেগুলো তোর করার কথা সেগুলো আমার করতে হয়। কবে বড় হবি তুই।
এগুলো বলতে বলতে অনু রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। নিশি চুপ করে বসে আছে। এখন সত্যিই মন খারাপ হয়ে গেছে ওর। বাচ্চাদের মতো চোখে পানি ছলছল করছে। অনু বকা দিলেই ওর ভীষণ কান্না পায়। যাবে না ও ভার্সিটিতে? ।
অনু চলে যেয়েও আবার দরজায় একটু উঁকি দিয়ে বললো,
—কেউ যদি নিজে হাতে খেতে না চায় তাহলে জলদি যেন ফ্রেশ হয়ে খেতে আসে । নাহলে আমি একাই ভার্সিটি চলে যাব।
অনু এই কথা বলেই দরজা থেকে সরে গেল। আর নিশি একটা লাফ মেরে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। কারণ ওর কাছে নিজের হাতে খাবার খাওয়া সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ। এখন না গেলে যদি সত্যি অনু খাইয়ে না দেয় তাহলে আজ সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে নিশির। ওদিকে দরজার আড়ালে দাড়ানো অনু নিশিকে এভাবে নামতে দেখে হেসে ফেললো। এগুলো আজ নতুন না । ওদের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই নিশি কেমন জানি হয়ে যায়। হাসিখুশি দুষ্টমিতে মেতে থাকা চঞ্চল দু’বোনই কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। অনু নিজেকে সামলে নিতে পেরেছিল। তবে আগের মতো চাঞ্চল্য ভাবটা হারিয়ে গিয়েছে ওর মাঝ থেকে। চঞ্চলতার জায়গায় গম্ভীরতা বিরাজ করেছিল অনুর মাঝে। কিন্তু নিশি!!! ও নিজেকে সামলে নিতে পারে নি। উল্টো এত পরিমাণ শক্ পেয়েছিল ওর বাবার মৃত্যুতে যে একমাস কারো সাথে কথাই বলেনি। তখন অনুই নিশির পাশে থেকে নিশিকে আবার স্বাভাবিক করে তোলে। এরপর থেকে নিশির মধ্যে বাচ্চামো স্বভাবটা একটু বেশিই।
নিশি, অনু আর ওদের মা এই নিয়েই ওদের পরিবার। যদিও আগে জয়ন ফ্যামেলিতে চাচাদের সাথে থাকত। কিন্তু ওদের বাবা মারা যাওয়ার পর চাচারা ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারপর চাচাদের থেকে আলাদা হয়ে যায় ওরা। নিশি, অনুর মা স্কুল টিচারের জব করে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আর সংসার চালাতো। কিন্তু এতে একটা না একটা অভাব যেন থেকেই যেত। পুরোপুরি ভাবে মিটত না। নিশি আর অনু ভার্সিটিতে উঠার পর দু’জনেই পার্ট টাইম জব নেয়। নিজেদের খরচ নিজেরাই চালায়। সাথে মা-কেও হেল্প করার ট্রাই করে।
নিশি আর অনু দু’জনেই এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পরে। যদিও নিশি অনুর দু’বছরের বড় কিন্তু নিশি মাঝখানে পড়াশোনায় একবছর গ্যাপ যাওয়ায় দু’জনই এখন সেম ইয়ারে পড়ে।
অনু কেবলমাত্র মুখে এক লোমকা খাবার তুলছিল তখনই হুরমুর করে নিশি এসে অনুর হাত টান দিয়ে নিজে খাবারটা খেয়ে নেয়।
—আপিইইইই
অনু কান্নার ভান করলো। কিন্তু নিশি কোনো পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো খাবার চিবুচ্ছে। মুখের খাবার শেষ করে আবার হা করলো নিশি । এবার অনু নিশিকে পাত্তা না প্লেট নিয়ে অন্যদিকে ফিরে নিজে খেতে লাগলো। এটা দেখে নিশি অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো। অনু না দেখার মতো ভান করে রইলো।
—অনু…….. দে না বোন এমন করিস কেন?? আজ নিজের হাতে খেতে পারি না বলে ।
অনু চুপচাপ নিশির সামনে খাবারের লোকমা তুলে ধরলো। নিশি বড় একটা হাসি দিয়ে অনুর হাতে খাওয়া শুরু করে। হঠাৎ নিশির মাথায় দুষ্টমি এক বুদ্ধি আসে। অনু খাবার মুখে তুলে দেওয়ার সময় নিশি অনুর আঙ্গুলে কামড় দিল। অনু চিৎকার দিয়ে উঠে। আর নিশি উঠে দৌড়ে দেয়। কারণ এখন এখানে থাকা মানেই বিপদ । যাওয়ার সময় বলে যায়,
—জলদি নিচে আসিস। নাহলে আজকেও পৌঁছাতে লেট হয়ে যাবে।
আর অনু তো পারছে না নিজের কপাল চাপড়াতে।
বাকি কাজগুলো সেরে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অনু। নিশি নিচে গিয়ে আগে থেকেই রিকশা ঠিক করে রেখেছিল। অনু আসতেই দু’জনে মিলে রিকশায় উঠে পড়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। প্রায় ভার্সিটির কাছাকাছি পৌঁছুতেই পিছন থেকে একটা গাড়ি নিশিদের রিকশায় ধাক্কা দেয়। অনু……
.
.
.
চলবে???
(বি.দ্র. আজকের পর্ব বড় করে দিয়েছি। ?
প্রতিদিন গল্প দিতে একটু প্রবলেম হয়?। তাই একদিন পর পর দিব। আর চেষ্টা করবো প্রতিদিন দেওয়ার। ☺
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন । )
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩
.
.
.
প্রায় ভার্সিটির কাছাকাছি পৌঁছুতেই পিছন থেকে একটা গাড়ি নিশিদের রিকশায় ধাক্কা দেয় । অনু একটু বেখেয়ালি ভাবে বসে ছিল । তাই রিকশায় ধাক্কা লাগতেই অনু রিকশা থেকে পড়ে যায় । নিশি “অনুওওও” বলে চিৎকার করে উঠে । তড়িঘড়ি করে রিকশা থেকে নেমে অনুর কাছে গিয়ে অনুকে তুলে দাড় করায় নিশি । অনুর হাত ছিলে গেছে । এটা দেখেই নিশির চরম রাগ উঠে যায় । নিশি অনুকে এক সাইডে দাড় করিয়ে রেখে যেই গাড়ি ওদের রিকশাকে ধাক্কা দিয়েছে সেই গাড়ির কাছে গিয়ে জানালার কাঁচে টোকা দেয় । কিন্তু ভেতর থেকে কোনো রেসপন্স পেল না । এবার নিশির মেজাজ আরও চটে গেল । এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে আবার কোনো রেসপন্স না করে ভাব নিচ্ছে । রাগে নিশির মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে । কি করবে রাগে ওর মাথা কাজ করছে না । এর মধ্যেই গাড়ির ভেতর থেকে একটা ছেলে বেরিয়ে আসে । নিশি ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলালো । স্কাই ব্লু কালারের শার্ট, হোয়াইট ব্লেজার, হোয়াইট প্যান্ট, চুলগুলো স্পাইক করা । চোখে ব্লাক সানগ্লাস । নিশির জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণে ছোটখাট একটা স্টোক করতো । কিন্তু অন্য কেউ আর নিশি তো এক না । নিশি তো নিশি-ই। ছেলেটা নিশিকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই নিশি বলে উঠল,
—চোখে ব্লাক সানগ্লাস লাগিয়ে গাড়ি চালান বলেই এমন এক্সিডেন্ট হয়। চোখে যখন এতই কানা তাহলে ড্রাইভ করতে যান কেন??
নিশি রাগে ফেটে পড়ছে যেন। ছেলেটা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে নিশির দিকে তাকিয়ে বললো,
—এক্সকিউস মি?? আসলে…..
—হোয়াট এক্সকিউস মি?? হ্যাঁ?? দেখে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারেন না তো গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হন কেন?? সো অফ করতে??
ছেলেটা আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু নিশি আবারও তার মুখের কথা কেড়ে নেয়। কিছু বলতেই দিচ্ছে না। নিজেই বলে যাচ্ছে শুধু। এবার ঐ ছেলেটিও ক্ষেপে গেলো। একটু জোড়ে গলায় বললো,
—বেশ করেছি। আপনার উপর দিয়ে গাড়ি তুলে দেওয়া উচিত ছিল। ননসেন্স জানি কোথাকার।
—ওই ওই কি বললেন আপনি??? আপনি ননসেন্স। একে তো নিজে ভুল করেছেন তার উপর মাফ না চেয়ে জোড় গলায় কথা বলছেন?? ইডিয়ট জানি কোথাকার!
প্রায় অনেক মানুষ জড় হয়ে গেছে নিশির চিল্লাপাল্লা শুনে। নিশির রাগ সম্পর্কে অনু ভালো করেই অবগত। এখন যেভাবে নিশি ক্ষেপেছে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। অনু দৌড়ে গিয়ে নিশিকে টেনে ধরে।
—আপি অনেক হয়েছে চল।
—আরেহ কি হয়েছে??
নিশি অনুর হাত দেখিয়ে বলে,
—নিজের হাতের দিকে দেখ। কতখানি ছিলে গেছে। সব এই লোকের জন্য।
নিশি ঐ ছেলেটার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো। আর অনু নিশিকে থামানোর চেষ্টা করছে । এদিকে ঐ ছেলেটা অনুর দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে। নিশি কি বলছে সেদিকে খেয়াল যেন একদমই নেই। হঠাৎ কারো ধাক্কায় ছেলেটার হুস আসে। তাকিয়ে দেখে ঐ ধানি লঙ্কা মেয়েটা মানে নিশি ওকে ধাক্কা দিয়েছে। আর বলছে,
—ওই তোর সাহস তো কম না। একটু আগে তোর জন্য আমার বোন ব্যাথা পাইল। সরি না বইলা আবার আমার বইনের দিকে ড্যাবড্যাব কইরা তাকাইয়া আছোস??? তোর চোখ তুইলা ফেলমু আমি। শালা শয়তান, বেত্তমিজ, বিখাওয পোলা জানি কোনকার।
নিশি বেশি ক্ষেপে গেলে এরকম ভাবে কথা বলে। আর নিশির এই টাইপ ভাষা আর গালি শুনে পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে ছেলেটা। এসব আবার কেমন ভাষা! বাকহীন হয়ে শুধু তাকিয়ে আছে নিশির দিকে ।
অনু নিশির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো । নিশি যাবে না বলছে আর একের পর এক বকা দিয়ে যাচ্ছে ওই ছেলেকে ।
নিশিকে নিয়ে যাওয়ার সময় অনু পিছন দিকে ফিরে ইশারায় ঐ ছেলেটাকে সরি বলে । অনু যখন সরি বলছিল তখন চোখ দুটো একটু ছোট ছোট করে এক হাত দিয়ে কানে ধরে ফেসটা বাচ্চাদের মতো করে ফেলে । তখন অনেক কিউট লাগছিল অনুকে । সেটা দেখে ঐ ছেলেটা মুচকি হাসে উঠে ।
হঠাৎ নিশি অনুর হাত ছাড়িয়ে একটা দৌড় লাগায় । অনু চমকে পিছন থেকে ফিরে নিশির দিকে তাকাতেই দেখে নিশি ওর হাত ছেড়ে দৌড়ে সামনে গিয়ে নিচে ঝুঁকে মাটি থেকে কি যেন তুলছে । নিশি সোজা হয়ে দাড়াতেই দেখে ওর হাতে মাঝারি সাইজের একটা ইট/পাথর জাতীয় কিছু ।
—ওহ্ নো…….আপিইইইই স্টওওওপ…..
অনু দৌড়ে নিশিকে ধরতে গেল থামানোর জন্য । কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো লাভ হলো না । কারণ তার আগেই নিশি পাথরটা ঐ ছেলের গাড়ির দিকে ছুড়ে মারে । আর নিশির নিশানাও একদম পার্ফেক্ট ভাবে গিয়ে লাগে গাড়ির জানালার কাঁচে । তারপর আর কি??? ঠাসস করে একটা আওয়াজ হয়ে গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে পড়ে । নিশি এমন একটা ভাব নিলো যে সে জিতে গেছে । বিজয়ীর একটা হাসি দিয়ে দু’হাত ঝাড়লো । আর অনু তো নিশির কাজে দেখে হাত দিয়ে নিজের কপালে বারি দিল । তারপর আবার পিছনে ফিরে তাকালো ঐ ছেলের দিকে । ছেলেটার চেহারা দেখে ঠিক বোঝা গেল না সে রেগে আছে কিনা । আর এত কিছু দেখার টাইমও নেই । অনু নিশির হাত একটা দৌড় লাগায় । একদম ভার্সিটির গেইটের ভিতরে চলে যায়।
আর ছেলেটা অনুর যাবার পানে তাকিয়ে রইলো । হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে ওঠায় সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে বললো,
—আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি…..
.
.
.
চলবে??
(বি.দ্র. প্রতিশোধ গল্পটায় অনেক রেসপন্স পেয়েছি আমি। তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ। তেমনি ভালোবাসি গল্পটাও। কিন্তু এই গল্পটাতে তেমন কোনো রেসপন্স পাই নি পাঠকদের। গল্পটা কি খারাপ হচ্ছে??? যদি হয় তাহলে সেটা জানাবেন তো?? ভালো হোক বা খারাপ সেটা না জানালে বুঝবো কিভাবে যে আমার লিখার কোথায় ভুল আছে বা আর্দাস প্রবলেম। ভালো হোক বা খারাপ জানাবেন প্লিজ ।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন । )
.