Monday, October 6, 2025







স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৮

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৮
আফসানা মিমি

এভাবে বারবার কেন তাকিয়ে থাকেন শ্রাবণ? আমার ভিতরে যে তোলপাড় হয় সেটা কি বুঝতে পারেন না আপনি? আমি আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে চাই যাতে আপনার আমার মুখ দেখতে না হয়। যতবার আপনি আমার সামনে আসেন অথবা আমার দিকে তাকান ততবারই ঐ কথাটা নিজের অজান্তেই মনে পড়ে যায়। তবে জানেন কি আমার আপনাকে কিছু বলার আছে। সুযোগের অপেক্ষায় আছি শুধুমাত্র। আমার সব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে।

গাড়ি গেটের ভিতর ঢুকার পর আমি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢুকে সোজা উপরে চলে গেলাম। যাতে শ্রাবণের মুখোমুখি না হতে হয়। খারাপ লাগছে অনেক। মনে হচ্ছে শরীর ভেঙে যাচ্ছে। জ্বর আসছে নাকি বুঝতে পারছি না। শুয়ে পড়লাম।

চোখ মেলে দেখি রুম হালকা অন্ধকার। মোবাইলটা নিয়ে দেখি ৫ টা বাজে। এতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি! কেউ ডাক দিল না কেন? শুয়া থেকে উঠতেও কেমন ক্লান্ত লাগছে। কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বর আসছে। হায়রে জ্বর! তুই আসার আর সময় পেলি না? এমন অসময়ে তোর আমার সাথে সাক্ষাত করতে আসতে হলো!

ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। দেখি সবাইই সোফায়
বসা শ্রাবণ বাদে। আন্টি বললো
—ঘুম কেমন হলো ডিয়ার?
—জ্বী আন্টি ভালো কিন্তু আমাকে ডাক দিলেন না কেন কেউ?
—ভাবলাম তুমি ক্লান্ত তাই আর ডিস্টার্ব করিনি।
এখন কেমন লাগছে?
—শরীরটা কেমন যেন করছে।
—কই দেখি!
আন্টি আমার কাছে এসে কপালে হাত দিয়ে আতঙ্কিত হয়ে বললো
—সেকি তোমার তো জ্বর এসেছে! কখন এলো?
—আমি নিজেও জানিনা আন্টি।
—তুমি হালকা নাস্তা করে নাও এখন সানা।
—শ্রাবণ তুই কি এখন ফ্রী আছিস?

পিছনে ফিরে দেখি শ্রাবণ আসছে।
—কেন আম্মু? কোন দরকার?
—হ্যা দ্যাখ না আফসানার জ্বর এসেছে। তুই একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারবি?

আন্টির কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।
—না না আন্টি আমি কোথাও যাব না। আমার জ্বর এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।
—শুনো মেয়ে বেশি কথা বোলো না। ভাইরাসের জ্বর কিন্তু খারাপ। ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ সেবন করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
—আম্মু ও যদি যেতে চায় তাহলে বলো আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।

এটা বলেই শ্রাবণ চলে গেল। এখন আন্টির সাথেও বেশি জোরাজুরি করতে পারবো না। যদি আবার সন্দেহ করে বসে! বোরখা পরে আর হিজাব বেঁধে রেডি হয়ে আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এক পা দুপা করে শ্রাবণের দিকে এগুচ্ছি। বাধ্য হয়ে সামনেই বসতে হলো। পিছনে বসলে আবার বলবে “আমি কারো ড্রাইভার নই”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


আস্তে আস্তে গাড়ি চলছে। কিন্তু আমার ভিতর ঝড় হচ্ছে। দুজনের মধ্যেই পিনপতন নীরবতা চলছে। কারো মুখে কোন রা নেই। নীরবতা ভেঙে শ্রাবণই প্রথম কথা বলে উঠলো
—কেমন আছো মিমি?
জানালার বাইরে দৃষ্টি রেখে নিচুস্বরে বললাম
—ভালো।
—আমার থেকে আড়ালে থাকো কেন তুমি?আর এভাবে মুখ ঢেকে এলে যে!
—কেউ একজন আমার মুখ দর্শন করতে চায় না তাই।
—এভাবে বলছো কেন?
—সত্যি কথাই বলছি।

ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে বাসার পথে রওয়ানা দিলাম। তখন এরপর আর একটাও কথা বলিনি।
—আচ্ছা মিমি তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো?
তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললাম
—রাগ করলে সম্পর্ক লাগে, রাগ করলে অধিকার লাগে। আমার জানামতে আপনি আমার কেউনা তাই রাগ করার প্রশ্নই আসে না। আমার সেই অধিকার নেই। কেউ আমাকে সেই অধিকারটা দেয়নি। বরঞ্চ কেড়ে নিয়েছে কাউকে ভালবাসার অধিকার।

শেষ কথাটা বিড়বিড় করে বলায় শ্রাবণ শুনতে পেল না বোধহয়। বরং কণ্ঠে স্পষ্ট কষ্ট টের পেলাম
—আমি তোমার কেউনা?
—না।

কথাটা বলার সময় বুকটা ফেটে যাচ্ছিল তবুও শক্ত হয়ে বলতে হলো। আমার বলতে ইচ্ছে করছিল
“না আমি আপনার সাথে রাগ করিনি কিন্তু আপনার প্রতি অভিমানের পাহাড় জমে আছে আমার এই বুকে। আপনি যে আমার কতটুকু আপন তা একমাত্র আমিই জানি। আমার মনের কথা বুঝার সাধ্য আপনার নেই। তাই এই প্রশ্নটা করতে পারলেন। কথাটা আমি ইচ্ছে করে বলিনি। বুকে পাথর চাপা দিয়ে বহুকষ্টে বলেছি।”

রাতে বেশি কিছু খেতে পারলাম না। সবকিছু কেমন যেন তেঁতো লাগছে। আন্টি বেশ কিছুক্ষণ বসে আমার মাথায় পানিপট্টি দিয়েছে। এই বাসার প্রত্যেকটা মানুষ এত ভালো কেন? কত যত্ন করে আমার! কত ভালবাসে আমায়! শুধু শ্রাবণটাই যেন কিরকম!

রাত কটা বাজে জানিনা। হঠাৎ কপালে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলাম। যে স্পর্শে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত মায়া ও ভালবাসা। চোখ খুলে হালকা আলোতে দেখতে পেলাম শ্রাবণের মতো কেউ একজন আমার শিয়রে বসে আছে। মতিভ্রম হচ্ছে নাকি? অস্পষ্টস্বরে বললাম

—আপনি এখানে কেন এসেছেন?
—তোমাকে দেখতে এসেছি।
—চলে যান এখান থেকে। আপনি তো আমার মুখও দেখতে চান না। আপনার নাকি ঘেন্না লাগে আমার মুখ দেখতে। তাহলে কেন এসেছেন এখানে? আমি কখন মরবো সেটা দেখার জন্য? বলেই কেঁদে দিলাম।

আমার ডান হাতটা তার হাতের মুছিয়া নিয়ে বললো
—প্লিজ মিমি এসব কথা বলবে না একদম। আর প্লিজ কান্না কোরো না! ভীষণ কষ্ট হয় আমার। সেদিন রাগের মাথায় তোমাকে কতকিছুই না বলে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি অপরাধবোধে ভুগছি।
—ছাড়ুন আমাকে। আমার মত চরিত্রহীনা মেয়েকে
কেন টাচ করছেন? আপনি তো অপবিত্র হয়ে যাবেন।
—এসব বলে আমাকে আর লজ্জা দিওনা। আমি এমনিতেই অনেক লজ্জিত।
—সেদিন একটুও মুখে আঁটকালো না আপনার এসব বলার সময়? মনে হয়নি আমি কতটা কষ্ট পাব!
—তোমাকে বাইরের একটা ছেলের সাথে দেখে
সত্যিই আমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। হিতাহিত
জ্ঞান ছিল না তখন আমার।
—সেদিন এই বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছিলেন!
—একটুও না। বরং যখন বাসায় এসে শুনলাম তুমি নাকি এইমাত্র তোমার ভাইয়ার সাথে চলে গেছো। এটা শুনে আমার পাগলপ্রায় অবস্থা হয়ে গিয়েছিল বিশ্বাস করো! কেন এভাবে একা ফেলে চলে গিয়েছিলে তুমি?
—জানেন আপনাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি আমি। তাই সেদিন আপনার ঐ কথাগুলো শুনে আপনাকে সত্যিই আমার মুখ দেখাতে ইচ্ছে করেনি। মন চায়ছিল তখনই গাড়ির নিচে লাফ দিয়ে নিজের প্রাণটা দিয়ে দেই। বারবার একটা কথাই কানে বাজছিল আপনি আমাকে ঘেন্না করেন। তাই দ্বিতীয়বার আমার আপনাকে আমার মুখ দেখতে হবে না বলেই সেদিনই ভাইয়ার সাথে চলে গিয়েছিলাম।
—পাগলী একটা। আমি বলেছি বলেই তুমি ভেবে নেবে যে আমি তোমাকে ঘৃণা করি! কতটা ভালবাসি সেটা এখনো তুমি বুঝতে পারোনি?
—ইশ! ছাই ভালবাসেন আমাকে আপনি।
—তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?
—যদি আমার একটা আবদার রাখেন তাহলে বিশ্বাস করব।
—কি আবদার?
—আপনার ঐ ঠোঁটের ছোঁয়া চাই আমি।

হতচকিত হয়ে হতভম্ব গলায় বললো
—ক..কি বলো এ..এসব? পা..পাগল হয়ে গেলে তুত্..তুমি! এখন না আগে তুমি সুস্থ হও তারপর তোমার সব আবদারই রাখবো।
—না না না এখনই রাখতে হবে। নাহলে আমি
কান্না করব। এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ….. আপনি আমাকে একটুও ভালবাসেন না আমি বুঝতে পেরেছি।
—আরে আরে লক্ষ্মমীটি কাঁদে না।
—তাহলে আমাকে এখনই একটা চুমু দিবেন।

অতঃপর শ্রাবণ বাধ্য হয়ে যখন কানের পাশ দিয়ে আমার চুলের ভিতর তার দুই হাত রাখছিল, তখন মনে হচ্ছিল যেন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তার নিঃশ্বাস আমার চোখ মুখের ওপর পড়ার পর আমার সারা শরীর কেঁপে কেঁপে অবশ হয়ে আসছিল। আর যেন চোখ মুখ পুড়ে যাচ্ছিল। নিঃশ্বাস ক্রমান্বয়ে ভারী হচ্ছিল আমার। কি এক অন্যরকম অনুভুতি অনুভব করছিলাম বুঝানোর সাধ্য নেই! শ্রাবন যখন আমার জ্বরে পোড়া তপ্ত ওষ্ঠ্যযুগল তার হিমশীতল বরফের ন্যায় ওষ্ঠ্য দ্বারা চেপে ধরলো! তখন আমার পুরো শরীরে যেন কারেন্টের শক খেলে গেল মুহূর্তেই। চোখ দুটো আপনাতেই বন্ধ হয়ে গেল। সেই মুহূর্তটায় আমার মনে হচ্ছিল সুখের চরম সীমায় আমি পৌঁছে গেছি। চোখ থেকে আপনাতেই দু’ফোটা সুখাশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে ঠোঁটের পাশ কেটে চিবুকে গিয়ে থামলো। এমন অপরিসীম সুখের জন্য আমি শ্রাবণের দেওয়া হাজারো কষ্ট সইতে রাজি আছি সদা।

ঘুম ভাঙলো পরেরদিন সকাল সাড়ে নয়টায়। মনে হচ্ছে জ্বরটা আর নেই। শরীর এবং মন দুইটাই বেশ ফুরফুরে লাগছে। হঠাৎ মনে হলো আচ্ছা কাল রাতে কি আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম নাকি! দেখেছি শ্রাবণ আমার রুমে এসেছে। হুম স্বপ্নই হবে হয়তো। বাস্তবে কি আর এটা সম্ভব? কারন সে তো আমাকে দেখতেই পারে না।

ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। আন্টি আমাকে দেখেই বললো
—তোমার শরীর এখন কেমন?
—মনে হচ্ছে জ্বরটা আর নেই।
—না থাকলেই ভালো। এখন আসো নাস্তা করে নাও।
—আঙ্কেল বাসায় নেই আন্টি?
—না, নাস্তা করে একটু বাইরে গেছে।
—আপনারা নাস্তা করেছেন আন্টি?
—হ্যা আমি, তোমার আঙ্কেল আর ফাল্গুনী নাস্তা করেছি। শ্রাবণ এখনো করেনি। এখনো আসছে না কেন কে জানে! নাকি পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে আল্লাহ্ই জানে।

মাত্রই রুটির টুকরাটা মুখে দিতে যাব সেই মুহূর্তেই শ্রাবণের আগমন। আর আসার সময় পেলি না! খাওয়ার শেষে এলে কি এমন হতো? বসবি বস ভালো কথা! একেবারে আমার সামনের চেয়ারটায়ই এসে বসতে হবে তোর? আস্ত বদ একটা!
—এখন কেমন আছো মিমি?
উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
—ভালো।
দেখি মুচকি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার একেকসময় একেক রূপ দেখি। কাল পর্যন্ত দেখেছি কি গম্ভীরই না ছিল সারাক্ষণ! আজ হঠাৎ তার কি হলো? চোখেমুখে যেন হাসি লেগেই আছে। অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে তার চোখে কোন প্রকার রাগ, ঘৃণা দেখতে পাচ্ছি না। কেমন যেন মায়া মায়া দেখতে লাগছে চেহারাটা। হুহ্ তার একেক সময় একেক রূপ! গিরগিটি একটা। একেবারেই পাত্তা দিব না আমি।

নাস্তা করে সোজা উপরে চলে এলাম। এসে ডায়েরিটা নিয়ে ব্যালকনিতে বসলাম। মনের হাজারো জমা কথাগুলো শেয়ার করার একমাত্র সঙ্গী আমার এই একমাত্র ডায়েরিখানা।

“আমার কেন যেন মনে হচ্ছে গতকাল রাতে আমার রুমে শ্রাবণ এসেছিল। কারন সচরাচর তার আশেপাশে থাকলে তার গা থেকে (পারফিউমের) যে স্মেইলটা পাই তা কাল রাতে খুব কাছ থেকে পেয়েছি। এমনকি এখন আমার শরীরেও মনে হচ্ছে গন্ধটা পাচ্ছি। আচ্ছা সত্যিই
কি শ্রাবণ এসেছিল? নাকি জ্বরের ঘোরে আমার হেলুসিনেশন হয়েছিল!”

আপুর সাথে বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎই আপুকে বলে বসলাম
—আপু তুমি কখনো কাউকে ভালবেসেছো?
—হঠাৎ এ প্রশ্ন করছো কেন সানা?
—না মানে জানতে ইচ্ছে করছিল আর কি যে কাউকে ভালবাসলে অনুভূতিটা আসলে কেমন হয়? তুমি বলতে না চায়লে থাক আপু।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
—নাহ সমস্যা নেই বলছি। একজনকে ভালবাসতাম আমি। বাসতাম বলছি কেন? এখনো ভালবাসি।
—কাকে ভালবাসতে আপু?
—আচ্ছা তবে প্রথম থেকে বলছি শুনো। যখন আমি সবেমাত্র কলেজে পা দিয়েছি তখনই এক অগোছালো
তবে ভদ্র, শান্ত, লাজুক এক ছেলের প্রেমে পড়ে গেলাম। মানে একেবারে পা পিছলে হাত পা ভেঙে প্রেমে পড়ে গেলাম। ছেলেটার মেধাশক্তি ছিল প্রখর।
ছেলেটা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়তো। আমি যে লাজুক ছিলাম না তা কিন্তু নয়। লাজলজ্জা সব ভুলে ঐ ছেলেকে সবসময় ফলো করতাম। হয়তো ছেলেটা বুঝতে পেরেছিল যে আমি তাকে ফলো করি। সে আমাকে কখনোই পাত্তা দিত না। এটার জন্য খুব কষ্ট পেতাম মনে মনে। একটা মেয়ের কাছে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে!

তাকে একটা নজর দেখার জন্য কতটা উন্মাদ হয়ে থাকতাম আমারটা আমি ভালো জানি আর জানেন একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা। তাকে না দেখতে পেলে যেমন সারাটাক্ষণ আমার বুকটা পুড়তো, নিঃশ্বাসটা আঁটকে থাকতো! তেমনি তাকে দেখামাত্রই আমার দেহমনে একটা শীতল বাতাস ছুঁয়ে যেত। আর বিড়বিড় করে বলতাম ‘এইতো আমার প্রাণপুরুষ! আমার ভালো থাকার একমাত্র কারন!’ তখন আঁটকে থাকা নিঃশ্বাসটা বেড়িয়ে এসে বুক ধুকপুক ধুকপুক করতো। বুকে হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে রাখতাম। না জানি কেউ আবার আমার হৃদস্পন্দন শুনে ফেলে! জানো হার্টটা এত দ্রুত বিট করতো যেন বুক ফেটে বেড়িয়ে আসবে। আর সারা শরীর যেন অবশ হয়ে আসতো। আর আমাকে সবচেয়ে বেশি এট্রাকশন করতো তার আঁখিযুগল। এতটা মায়া ছিল তার চোখে যে একবার তাকালে চোখ ফেরানো দায় হয়ে যেত। তার সবকিছুর ওপর হাত পা ভেঙে প্রেমে পড়ে গেলাম। বিশেষ করে তার এলোমেলো চুলের ওপর। চুলগুলো কখনোই
দেখিনি অন্যসব মডার্ন ছেলেদের মত জেল লাগিয়ে স্টাইল করে খাঁড়া করে রাখতে। সবসময়ই উস্কোখুস্ক চুলে ভার্সিটি আসতো। ভাবতাম ইশ যদি ঐ চুলগুলো একটিবারের জন্য ছুঁয়ে দিতে পারতাম!

জানো তাকে দেখার পর এবং ভালবাসার পর আর কোন ছেলেই আমার মনে ধরেনি। এমনকি এতবছর দেশের বাইরে থেকে স্টাডি করে এসেছি তবুও কাউকে আর মনে জায়গা দিতে পারিনি। কারন আমার সবটা জুড়েই যে শুধু তার বসবাস! আমার মনটা দখল করে এখনো সে রাজত্ব করছে। তাকে একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি আমি।

কথা বলার শুরুতে যে উচ্ছ্বাসিত ভাবটা ছিল শেষের কথাগুলো বলার সময় খেয়াল করলাম আপু কান্না আঁটকে কথাগুলো বলছে। আচ্ছা এখন কি তাহলে সেই ছেলে আপুকে ভুলে অন্যকারো হাত ধরে চলে গেছে? আপুর মতো মেয়ের সাথে এমনটা করতে পারলো!

—আপু তোমার শেষের কথাগুলো কেমন যেন লাগলো! তবে কি তার সাথে এখন তোমার সম্পর্ক নেই?
—জানো সে খুব ভালবাসতো আমাকে। তখন হয়তোবা আমি বুঝিনি আমার জীবনে তার গুরুত্ব কতখানি। কিন্তু এখন বুঝি সে কি ছিল আমার জীবনে! তখন আমি তাকে একটুও বুঝার চেষ্টা করিনি। তার কথা একটুও ভাবিনি। তাকে একলা ছেড়ে দেশের বাইরে চলে যেতে দুবার ভাবিনি আমি। সে অনেক রিকুয়েস্ট করেছিল আমাকে কিন্তু আমি ততটা পাত্তা দেইনি। সব আমার দোষ, সব। তাকে এখন পর্যন্ত ভুলতে পারিনি
আমি। তাকে ছেড়ে গিয়ে যে ভুল করেছি জানি তার মাশুল দিতে পারবো না আমি।

কথাগুলো বলেই কেঁদে দিল আপু। জিজ্ঞাসা করলাম
—সে এখন কোথায় আপু?
আমাকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে আপু বলল
—সে আছে তার মতো। হয়তো আমাকে ঘৃণা করে এখন।
—এটাও তো হতে পারে যে এখনো সে তোমাকেই ভালবাসে!
—এখনো কেন ভালবাসতে যাবে বলো! আমি তার সাথে যে অন্যায় করেছি তার কখনো ক্ষমা হয় না।
—জানো আপু ভালবাসার প্রথম শর্তই হচ্ছে ক্ষমা করা।
জানো আমার ভাইয়াও একটা মেয়েকে খুব ভালবাসতো। কিন্তু মেয়েটা ভাইয়াকে বুঝলো না
বরং ভাইয়াকে কষ্টের নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে তার কেরিয়ার গড়ার আশায় দূরদেশে পাড়ি দিয়েছে।
কিন্তু ভাইয়া ক্ষমা করে দিয়েছে সেই মেয়েটিকে।
হয়তো এখনো ভালবাসে। কিন্তু জানো ঐ মেয়েটার ওপর আমার অনেক রাগ জমে আছে।

হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে
তাকালো আপু আমার দিকে।

চলবে……..

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ